প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Friday, April 29, 2011

সমঅধিকারের খোটা: একটি পর্যালোচনা

জ ব্যাংকে ডিপোজিট জমা দিতে গিয়ে যখন লাইনে ছিলাম তখন কাউন্টারে ছিলো ম্যাডাম।তখন পাশের কাউন্টারে যখন চারজন জমা দেওয়া শেষ হয়ে গেলে ও ম্যাডাম সে সময়ে জমা নিলো মাত্র একজনের, তাই বললাম ম্যাডাম খালিতো সমান অধিকার চান, পাশের স্যার তো চারজনের টা জমা নিয়ে নিলো আর আপনি এখনও একটা শেষ করতে পারলেন না?তখন তিনি মুচকি হেসে মাথা নীচু করে টাকা গুনতে লাগলেন। প্রকৃতি আমাদের যে ক্ষমতা দিয়েছে তা অতিক্রম করা মানুষের পক্ষে সম্ভব না।"

এধরনের আরও কিছু ঘটনা আরো বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। প্রায়ই দেখি বাসে মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে পুরুষরা বসে থাকেন এবং মহিলারা এলে তাদের সহজে সিট ছেড়ে দিতে চাননা। অনেকে চেচামেচি জুড়ে দেন, নানা কথা বলেন। চেচামেচি করা লোকগুলোকে একটি কমন যু্ক্তি দিতে দেখি তা হলো: সমঅধিকারের কথা বলে আবার আসন সংরক্ষিত কেন? অন্য আরেকদিন একটি ব্যাংকে গিয়েছি। সেখানে সবাই লাইন ধরে ছিল। একজন মহিলা বলল তার বাচ্চা আছে তাকে যেন প্রায়োরিটি দিয়ে একটু আগে সুযোগ দেয়া হয়। এতে অনেকে খুব ক্ষিপ্ত হয়ে নানান কথা বলতে লাগল যার মধ্যে অনেকেই সমঅধিকারের প্রসঙ্গ টেনে আনল। শেষে মহিলাটি অপমানিত হয়ে আজকে আর কাজটি করবেইনা বলে বের হয়ে গেল।

দেখা যাচেছ মহিলাগুলো অযাচিতভাবেই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশ্চাত্যের অনুকরণে সমাজের একটি অংশ সমঅধিকারের কথা বলে থাকেন। এ ব্যাপারটি যে সব মহিলারাই ইন্টেলেকচুয়ালি বুঝেন বা এর সাথে সবাই যে একমত বা সবাই যে এ আন্দোলনের সাথে সক্রিয়, তা নয়। সেজন্য পাবলিকলি এভাবে "সমঅধিকারের খোটা" দেওয়াটা কতটুকু যুক্তি সংগত?

আসলে পাশ্চাত্যের অনুকরণে 'সমঅধিকার' শব্দটি আমদানী করা হয়েছে। সমঅধিকারের মানে যদি আমরা বুঝি স্কেল দিয়ে মেপে মেপে সব জায়গায় সমান সমান করতে হবে, তাহলে বলতে হবে এটা বড় ভ্রান্তি। বরং সমাজের নৈতিক ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বলা যায় অনেক ক্ষেত্রেই মহিলাদের বেশি প্রাপ্য আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের বেশি প্রাপ্য। এজন্যে এটি আসলে হবে "প্রাপ্য-অধিকার" বা বলা যায় "ফেয়ার ট্রিটমেন্ট"। এ জিনিসটিই ইসলামে সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করার নীতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্যে ইসলামের ফ্রেমওয়র্কের মধ্যে থাকলেই আলটিমেটলি সবাই সমান অধিকার পাবে। এবং অধিকার সমান করতে হলে অনেক জায়গাতেই মহিলাদের প্রেফারেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট লাগবে। যেমন বাসে মহিলারা কুরুচিপূর্ণ পুরুষদের হাতে নাজেহাল হবার সম্ভাবনা আছে বিধায় বাসে তাদের সংরক্ষিত সিট রাখতে হবে (বর্তমানে যা আছে তার চেয়েও বেশী থাকা উচিত)। আবার একইভাবে কোথাউ লাইন মেইনটেইন করতে হলেও মহিলাদের আলাদা লাইন বা প্রেফারেন্স পাওয়া উচিত (যেহেতু মহিলাদের সন্তান ধারন ও লালন পালনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হয়)। এক্ষেত্রে "সম-অধিকারের" উসিলা তুলে খোটা দিয়ে নারীদেরকে বিব্রত করা উচিত নয়।

কিছু পুরুষ আবার আছেন "প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা", ব্রেইনের সাইজ ইত্যাদি আলোচনার অবতারণা করে "পুরুষরা শ্রেষ্ঠ" বা বেশী "ক্ষমতাবান", এধরণের উপসংহারে পৌছে বেশ আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। আলেমদের মধ্যেও এক অংশ (অনেক সময় সুরা নিসার(৩)-৩৪ নম্বর আয়াতের উদ্বৃত্তি দিয়ে) পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের স্তব স্তুতিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। প্রথমত: যদি পুরুষরা শ্রেষ্ঠ হয়েও থাকে তাহলে বলতে হবে তারা নিকৃষ্ট। কেননা তারাই নারীদের বেশী নির্যাতন করছে এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার দিচ্ছেনা। দ্বিতীয়ত: যেসব যুক্তির ভিত্তিতে অনেকে পুরুষদের তথাকথিত "শ্রেষ্ঠ" বলছে, আল্লাহর কাছে তা কোনো যুক্তি নয়। ৪৯:১৩ (সুরা হুজুরাতের ১৩) নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেই দিয়েছেন তার কাছে মর্যাদার ভিত্তি নারী বা পুরুষ হওয়া নয় বরং তাকওয়া। (অর্থাৎ মানুষ হিসেবে তারা সমান) তৃতীয়ত: পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব কোন আলোচ্য বিষয় নয়। পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারিরীক পার্থক্য রয়েছে। অনেক দিক থেকে পুরুষ ইফিশিয়েন্ট হলেও অনেক কাজ পুরুষরা একবোরেই করতে সক্ষম নয় (যেমন সন্তান ধারণ) বলে তাদেরকে ইফিশিয়েন্সি স্কেলে নেগেটিভ মার্ক দেয়া যায়। আসল কথা হলো নারী-পুরষ কোন যুদ্ধে অবতীর্ণ নয় যে তাদের কাউকে অপরের চেয়ে ছোট করতে হবে। মূল বিষয় হলো ফেয়ার ট্রিটমেন্ট দেয়া। সমাজে মানুষ হিসেবে যাতে পুরুষ ও নারী তাদের প্রাপ্য অধিকার পায়, ফেয়ার ট্রিটমেন্ট পায়, কোন ধরনের ডিসক্রিমিনেশন-এর স্বীকার না হয় - এটা নিশ্চিত করাই আমাদের করণীয়। নারীরা যুগ যুগ ধরে নানাভাবে অধিকার থেকে বিঞ্চত এ দিকটিই মূল ভাববার বিষয়।

আগেই বলেছি, ফেয়ার ট্রিটমেন্ট বলতে পাশ্চাত্যপ্রেমী অনেকে বুঝছেন যে স্কেল ফিতা দিয়ে সব জায়গায় এক্কেবারে সমান সমান অধিকার দেয়া। আসলে এটা মোটেও সঠিক নয়। কারণ "ফেয়ার ট্রিটমেন্ট" বা প্রাপ্য অধিকার দিতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু স্কেল ফিতা দিয়ে মাপা "সম-অধিকারের" কথা যদি বলেন তাহলে এটা পাবার কথা না। যারা কোরআন সংশোধনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলছেন তারা কিন্তু কৌশলে নারীদের মোহরানা, ভরণপোষণ - এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নারীদের ঠকাতে চাচেছন। এজন্য বলা যায় যারা কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন তারা আসলে নারী-অধিকারের স্বার্থে সেটা করছেননা, না বুঝে-না জেনে করছেন অথবা ইসলামকে খাটো করা, ধর্ম সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি করার জন্য করছেন। কোরআনের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই নারীর অধিকার ও স্বার্থ সবচেয়ে বেশী সংরক্ষণ করা সম্ভব।

নারীর মর্যাদা, মানুষ হিসেবে সমাজে নারীর অবস্থান, নারী অধিকারের স্বরূপ সম্পর্কে ইসলামপন্থী ও আলেমসমাজের একাংশ, পাশ্চাত্যপন্থী, প্রগতিবাদী, মেইল শভিনিস্ট সকলেরই মনোভাব পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করি।

মে দিবসের ডাক ।। আমিনুল ইসলাম মামুন

মে দিবসের ডাক এসেছে
মে দিবসের ডাক
আমরা যারা শ্রমিক আছি
শতক হাজার লাখ। ঘামের দামে কিনবো সবে
নিজের অধিকার
মে দিবসে রক্ত কণা
জাগে বারে বার।

মে দিবসের ডাক এসেছে
গড়তে প্রতিরোধ
রক্তচোষা মালিকগুলোর
জাগিয়ে তোল বোধ।

Sunday, April 24, 2011

তোমার প্রতীক্ষায় ।। জহির রহমান


জানালা খুলে বসে আছি
তোমার প্রতিক্ষায়,
তোমার জন্য চাঁদ মামা,
জোসনা ছড়ায়,
মিটি মিটি জোনাকীরা
পাহারা বসায়।আসবে তুমি মৃদু্ পায়ে
গোলাপ, জুঁই, বেলী চুঁযে,
গন্ধরাজও সুবাস ছড়ায়
বড্ড বেশি তোমায় ভাবায়;
ঝিঁঝিঁরা সব ডাক থামিয়ে
তুমি আসার প্রহর গুনে,
আসবে তুমি আঁধার ঠেলে
প্রকৃতি ব্যস্ত আয়োজনে...
২৪.৪.২০১১

তুমি আমি ।। জহির রহমান

আমি উড়ি ডানা মেলে
মেঘের ঐ বেলাতে
তুমি হও রামধনু
সুবিশাল ঐ আসমানে
আমি রোপি ফুলের চারা
আমার করা বাগানে
তুমি করো পায়তারী
বিকেলের শেষ আলোতে
আমি বিলাই তোমার নামে
ভালোবাসা সবখানে।
২২/০৪/২০১১

Sunday, April 10, 2011

সুখে রাখার জন্যে

স্বপ্ন যখন হারিয়ে যাবে মিথ্যে সুখের মেলায়
কষ্টগুলো ভাসিয়ে দিও, কালো মেঘেরে ভেলায়
যতন করে রেখে দেব স্বপ্ন ভাঙ্গার সুখ,
সুখে রাখার জন্যে তোমায় আমি যে উন্মুখ।

তোমায় আর বাঁধা দিচ্ছিনা ।। জহির রহমান

তুমি আমার থেকে দূরে সরতে চেয়েছ
আর বাঁধা দিচ্ছিনা,
তুমি আমায় দূরে ঠেলেতে চেয়েছ
আর মানা করছিনা,
তুমি আমার কে আবার
আমিই বা তোমার কে
এটা প্রশ্নই থেকে যাক,কি চেয়েছ আর কি পেয়েছ
জানিনা কিছুই আমি
শুধু জানি ভালবাসতে চেয়েছি
বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়েছি
ধরতে তোমার হাত।
তুমি হারাতে চাচ্ছো হারাও
তুমি পালাতে চাচ্ছো পালাও
তবে ক্ষমা করো আমায়
কারণ তোমায় আটকিয়ে ছিলাম
হিয়ার মাঝে বেঁধে ছিলাম
আমার ভালোবাসায়।
তোমার স্বপ্ন গুলো সত্যি হোক
এটাই কামনা করি
অশ্রু আসুক দু'চোখ ভরে
তবু না হোক তোমার ক্ষতি।
ভাল থেকো সুখে থেকো
এই কামনা মোর,
কাল সকালে রবি উঠবে
কেটে যাবে সব ঘোর।
০৯/০৪/২০১১

Thursday, April 7, 2011

 গদ্যকার্টুন : প্রিয় পাঠক, একটু হাসুন ।। আনিসুর রহমান

একজন অন্ধ বালক। নিউইয়র্কের একটা রাস্তার ধারে একটা সুন্দর ভবনের বাইরের সিঁড়িতে রোদের মধ্যে বসে আছে। তার হাতে তার হ্যাটটা উল্টো করে ধরা। তার আরেক হাতে একটা শক্ত কাগজের টুকরায় লেখা, ‘আমি অন্ধ, আমাকে সাহায্য করুন, প্লিজ।’ তার টুপিতে অল্প কয়টা পয়সা পড়েছে। লোকজন আসছে, যাচ্ছে। বেশির ভাগই তাকে সাহায্য না করেই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। একজন লোক কিন্তু ছেলেটার পাশে দাঁড়ালেন। তিনি পকেট থেকে খুচরা পয়সা বের করে ছেলেটার টুপিতে রাখলেন। দেখলেন, ছেলেটা খুব কম পয়সাই এ পর্যন্ত অর্জন করতে পেরেছে।
তিনি ছেলেটার হাতের কার্ডটার দিকে তাকালেন। দেখলেন লেখা, ‘আমি অন্ধ, আমাকে সাহায্য করুন, প্লিজ।’ তিনি তখন ওই কাগজটা ছেলেটার হাত থেকে নিলেন। কাগজের উল্টো পিঠে তিনি নতুন দুটো বাক্য লিখলেন। তারপর ছেলেটার হাতে সেই কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলেটা লক্ষ করল, এরপর দ্রুত তার টুপিতে টাকা-পয়সা পড়ছে। খুব শিগগির ছেলেটার টুপি ভরে গেল। বিকেলবেলা। অন্ধ ছেলেটা টের পেল, সেই লোকটার পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, যে কিনা তার সাইনবোর্ডটার কথা বদলে দিয়েছিল। সেই ভদ্রলোকও তার ওই কীর্তির ফলটা কী দাঁড়াল, তা দেখতে এসেছেন। এসে দেখলেন, হ্যাঁ, তার নতুন বাণীতে কাজ হয়েছে। ছেলেটার টুপি টাকায় গেছে ভরে। অন্ধ ছেলেটা বলল, ‘আপনি কি সেই ভদ্রলোক, যিনি আমার হাতের কার্ডের লেখা বদলে দিয়েছিলেন?’
‘হ্যাঁ। আমি সেই লোক।’
‘আচ্ছা, আপনি কী করলেন যে আমার টুপি ভরে উঠল?’
‘আমি কিছুই করিনি। শুধু সত্যটা প্রকাশ করেছি।’
‘মানে কী?’
‘মানে কিছুই না। তোমার কার্ডে যা লেখা ছিল, সেটাই আমি একটু অন্যভাবে প্রকাশ করেছিলাম। আমি লিখেছিলাম, ‘আজকের দিনটা খুব সুন্দর। কিন্তু আমি তা দেখতে পাচ্ছি না।’
‘তাতেই এত পয়সা এল?’ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছেলেটা বিস্মিত!
‘হ্যাঁ। তোমার কথাটা ছিল, তুমি অন্ধ। আমিও তা-ই লিখেছি। কিন্তু অন্য রকম করে। আমি লিখেছি যে আজকের দিনটা সুন্দর, কিন্তু তুমি তা দেখতে পাচ্ছ না। এতে নতুন কী যুক্ত হলো? এক. আমরা ব্যাপারটা শুরু করলাম ইতিবাচকভাবে। আজকের দিনটা সুন্দর, এই সুন্দর কথাটা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করছি, যাঁরা জানছেন, তাঁদেরও মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। তারপরের কথাটা তোমারই কথা যে তুমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তুমি এটা দেখতে পাচ্ছ না। তাতে যাঁরা এটা পড়ছেন, তাঁরা বুঝতে পারলেন, তাঁরা কত সৌভাগ্যবান। আমাদের প্রত্যেকেরই নিশ্চয়ই এক শ কারণ আছে মন ভার করে থাকার। কিন্তু ভেবে দেখো, এক হাজারটা কারণ আমাদের প্রত্যেকের আছে, মনটা ভালো রাখার। আমরা প্রত্যেকেই কত সৌভাগ্যবান। শোনো, অতীতের দিকে তাকাবে, কোনো দুঃখবোধ ছাড়াই। বর্তমানকে গ্রহণ করবে সাহসিকতার সঙ্গে। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে।’
ইন্টারনেটের এই গল্পটার শেষে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো, কাউকে হাসতে দেখা। তার চেয়েও ভালো লাগবে, যদি আমি জানতে পারি, আমার কারণেই একজনের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
আসলেই তো, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারার চেয়ে সুখকর কাজ আর কী আছে! আমাদের চারপাশের বাস্তবতাকে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারি, আবার ইতিবাচক দৃষ্টিতেও দেখতে পারি। ইতিবাচকভাবে দেখাই ভালো।
তবে, বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ও রাজনীতিতে যা ঘটছে, তার মধ্যে থেকে ইতিবাচক উপাদান বের করে মুখটাকে হাসি হাসি করে রাখা সত্যি কঠিন। জাতীয় সংসদে মাননীয় সংসদ সদস্যরা যে ভাষায় পরস্পরকে আক্রমণ করছেন, তা নিয়ে স্বয়ং স্পিকার চিন্তিত। সংসদের বাইরেও পরস্পরবিরোধী নেতারা যে ভাষায় পরস্পরকে আক্রমণ করে চলেছেন, তাতে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
‘অতিরিক্ত কথা এবং কাজ বিপদ ডাকিয়া আনে’—রংপুর জিলা স্কুলে আজহার স্যার কোনো ছাত্রকে দুষ্টুমি বা বকাবাজি করতে দেখলে দুই হাত দিয়ে একই সঙ্গে তার দুই গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে এই উপদেশ দান করতেন। তাঁর এই উপদেশ ভোলা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। আজহার স্যার বলতেন, নীরবতা হীরণ্ময়। আমাদের মুখ একটা, কান দুটো, আমাদের কথা বলা উচিত কম, শোনা উচিত বেশি বেশি। অন্যকে ছোট করে নিজেকে বড় করা যায় না। অন্যকে বড় করতে পারলে, বড়কে সম্মান করতে পারলে, প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মানশীল হতে পারলে নিজেরই সম্মান বাড়ে। কাকের কর্কশ স্বর বিষ লাগে কানে, কোকিল অখিল প্রিয় সুমধুর গানে।
বলছিলাম, মানুষের মুখে হাসি ফোটানো হলো মহত্তম কর্ম। আমার উচিত এখন একটা কৌতুক বলে আপনার মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা। চড় নিয়েই বলি। দুজন লোক রাস্তা খুঁড়ছে আর তাদের সর্দার গাছের নিচে বসে আছে। একজন পথিক শ্রমিক দুজনকে বলল, ‘তোমরা কষ্ট করে কাজ করছ, আর ও গাছের নিচে আরাম করছে, কারণ কী।’
একজন শ্রমিক বলল, ‘জানি না। আচ্ছা, সরদারকে জিজ্ঞেস করে আসি।’ সে সরদারের কাছে গিয়ে বলল, ‘সরদার, আমরা কাজ করছি আর আপনি বসে আছেন। কারণ কী।’ সরদার বলল, ‘কারণ বুদ্ধি। আমার বুদ্ধি আছে, তোমাদের নাই।’
‘কী রকম?’
‘আচ্ছা, আমি এই গাছে হাত রাখছি। তুমি গায়ের জোরে আমার হাতে চড় মারো।’ শ্রমিকটি চড় মারার আগেই সরদার হাত সরিয়ে নিল। ব্যথাক্লিষ্ট শ্রমিক ফিরে গিয়ে পথিককে বলল, ‘সরদার আরাম করছেন, কারণটা হলো বুদ্ধি।’
পথিক বিস্মিত। ‘কী রকম?’
শ্রমিকটি বলল, ‘আমি আমার মুখে হাত রাখছি। আপনি এখন গায়ের জোরে আমার হাতে একটা চড় বসান।’
আমরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পাথরের ওপরে হাত রেখে বলতে পারি, গায়ের জোরে চড় মারো। কিন্তু মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি না থাকলে কিন্তু আমরা নিজেদের নাকে হাত রেখে বলে ফেলতে পারি, গায়ের জোরে ঘুষি মারেন।
শাসকদের বুদ্ধিমান হতে হয়। প্রেসিডেন্ট বুশ যখন ব্রিটেনে যান, তখন রানিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা দেশ চালান কীভাবে?’ রানি উত্তর দেন, ‘বুদ্ধি দিয়ে।’ ‘কী রকম?’ রানি টনি ব্লেয়ারকে ডেকে বলেন, ‘আচ্ছা টনি, বলো তো, একটা লোক, সে তোমার মায়ের ছেলে, সে তোমার বাবার ছেলে, তোমার আর কোনো ভাইবোন নাই, লোকটা কে?’ টনি উত্তর দেন, ‘আমি।’ রানি বলেন, ‘দেখলা বুশ, টনির কী রকম বুদ্ধি। ও বুদ্ধি দিয়েই দেশ চালায়।’
বুশ দেশে ফিরে গিয়ে মন্ত্রীদের ডেকে বলেন, ‘বলো, একটা লোক, সে তোমার মায়ের ছেলে, সে তোমার বাবার ছেলে, তোমার আর কোনো ভাইবোন নাই, লোকটা কে?’ কেউ উত্তর দিতে পারেন না। তখন কলিন পাওয়েল সেখানে আসেন। বুশ তাঁকে একই প্রশ্ন করেন। ‘একটা লোক, সে তোমার মায়ের ছেলে, সে তোমার বাবার ছেলে, তোমার আর কোনো ভাইবোন নাই, লোকটা কে?’ কলিন পাওয়েল বলেন, ‘আমি’।
বুশ বলেন, ‘হয় নাই। সঠিক উত্তর হবে, টনি ব্লেয়ার।’
শাসকদের মাথায় বুদ্ধি থাকতে হয়! আর, বুদ্ধিমানেরা কথা বলেন কম!
প্রিয় পাঠক, একটু হাসুন। আজ একটা সুন্দর দিন। আর আমাদের দেশেও বহু কিছু আছে ইতিবাচক, যেসবের কথা ভেবে আমরা একটা দিন সুন্দরভাবে শুরু করতে পারি। যেমন ধরুন, আমরা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আটটা খেলা আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই আয়োজন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সেটাই বা কম কী!
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

সূত্র : প্রথম আলো...

Saturday, April 2, 2011

হায়েনা ।। নিজাম কুতবী

একবার একটি হায়েনার ইচ্ছে হয়েছিল মানুষের সঙ্গে বসবাস করতে। হায়েনাটি মানুষের মত করে মানুষের রূপে মানুষের শহরে বসবাস পাততে চেয়েছিল। হায়েনাটি সেই উদ্দেশ্যে পাতাল পুরি থেকে হাজার মাইল পথ-ঘাট-নদী মাঠ পেরিয়ে হাজির হলো একটি মানুষের শহরে।এই শহরে এসে সে দেখতে পেলো, কিছু মানুষ একজন মানুষের পদার্পনের অপেক্ষা করছে। লোকটির আগমনের বার্তায় ফুলের পাঁপড়ি ছিটাচ্ছে তার পদপ্রান্তে। ঠিক এমুহুর্তে হাজির হলো একটি লাল মোটর কার। চারদিক থেকে চারজন ছুটে এসে দরজা খুলে দিল। লাল মোট গাড়ি থেকে বের হলো লাল পোশাকে আচ্ছাদিত একটা লাল মানুষ। হায়েনাটির মনে হলো, মানুষটির পরনে কোন কাপড় নেই। তার কোন হৃদয়ও নেই। হয়ত মানুষটি কোন দিন সূর্যের আলো দেখেনি। জোøারাতও তার নজর কাড়েনি। চাঁদের আলোয় ভেজেনি তার শরীর। মানুষটি হেঁটে হেঁটে একটি বিরাট অট্টালিকায় প্রবেশ করলো যা আকাশ ছুঁয়েছে। মানুষটা একটা উঁচু আসনে বসলো যা মানুষের হাড় আর খুলি দিয়ে তৈরী।

আরো একটু পরে হায়েনাটি একটা রোমহর্ষক দৃশ্য দেখল। অট্টালিকার ভেতর একটা খুঁটিতে একজন মানুষ বাঁধা আর পাশেই রাম-দা হাতে দাঁড়িয়ে আছে আর একটা মানুষ। মানুষটা রাম-দার এক কোঁপে বাঁধা লোকটার একটা হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। আকাশ বাতাস কেঁপে উঠলো তার আর্তচিৎকারে। কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে লাল মানুষটা তা কামড়াতে শুরু করল। হায়েনাটি ভয়ার্ত চোখে দৃশ্যটি দেখে নিজের মনে বলে উঠল, “আমার অনেকদিন মাংস খাওয়া হয়নি, আর এখানে মানুষ মানুষের মাংস খাচ্ছে…।”
হায়েনাটি অস্থির হয়ে ছুঁটতে লাগল। ছুঁটতে ছুঁটতে থমকে দাঁড়ালো মাঝপথে-কতগুলো মানুষ একজন লম্বা চুলের মানুষকে রাস্তা দিয়ে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। লম্বা চুলের মানুষটার বসন আলগা হয়ে পড়েছে। কালো পিচের রাস্তায় বয়ে গেছে রক্তের চোপ। লম্বা চুলের মানুষটার আর্তনাদ ঢেকে গেলো মানুষগুলোর আদিম উল্লাসে। হায়েনাটির প্রাণ হাঁসহাঁস করতে লাগল। সে প্রাণপণে ছুঁটতে লাগল। তার চোখে বিস্ময় ও প্রশ্নের চিহ্ন। শহরের শেষ প্রান্তে এসে হায়েনাটি নিজের দাঁত দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল। এবং একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমার স্বজাতি অনেক উত্তম ছিল। এসব দানব মানুষদের র্কীতিকলাপ দেখে বেঁচে থাকতে লজ্জা হচ্ছে…। তাই কবর খুঁড়ছি।”

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ