প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Wednesday, June 27, 2012

বাঘের পালকি চড়া | উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী


বাঘ কিনা মামা আর শিয়াল কিনা ভাগ্নে, তাই দুজনের মধ্যে বড্ড ভাব।
শিয়াল একদিন বাঘকে নিমন্ত্রণ করল, কিন্ত তার জন্যে খাবার কিছু তয়ের করল না! বাঘ যখন খেতে এল, তখন তাকে বললে, ‘মামা, একটু বস। আর দু-চারজনকে নিমন্ত্রণ করেছি, তাদের ডেকে নিয়ে আসি।’
এই বলে শিয়াল চলে গেল, আর সে রাত্রে ফিরল না। বাঘ সারারাত বসে থেকে, সকালবেলা শিয়ালকে বকতে-বকতে বাড়ি চলে গেল।
তারপর একদিন বাঘ শিয়ালকে নিমন্ত্রণ করল। শিয়াল এলে তাকে খেতে দিল মস্ত-মস্ত মোটা-মোটা হাড়। তার এক-একটা লোহার মত শক্ত। শিয়াল বেচারার চারটে দাঁত ভেঙ্গে গেল, তবু সেই হাড়ের একটুও সে চিবিয়ে ভাঙ্গতে পারল না। বাঘ ঐরকম হাড় খেতেই খুব ভালবাসে। সে মনের সুখে পেট ভরে হাড় চিবিয়ে খেলে, আর বললে, ‘কি ভাগ্নে, পেট ভরল তো?’
শিয়াল হাসতে হাসতে বললে, ‘হ্যাঁ মামা, আমার বাড়িতে তোমার যেমন পেট ভরেছিল, তোমার বাড়িতেও আমার তেমনি পেট ভরেছে।’ মনে-মনে কিন্ত তার ভয়ানক রাগ হল, আর সে বললে, ‘যদি বাঘমামাকে জব্দ করতে পারি, তবে দেশে ফিরব, নইলে আর দেশে ফিরব না।’
এই মনে করে শিয়াল সে-দেশ ছেড়ে আর এক দেশে চলে গেল। সে নতুন দেশে অনেক আখের তে ছিল। শিয়াল সেই আখের ক্ষেতে থাকত আর খুব করে আখ খেত। যা খেতে পারত না, ভেঙ্গে রেখে দিত।
চাষীরা বললে, ‘ভালো রে ভালো, এমন করে আমাদের আখ কোন দুষ্টু শিয়াল ভেঙ্গে রেখে দেয়? বেটাকে এর সাজা দিতে হবে।’
বলে তারা ক্ষেতের পাশে এক খোঁয়ার তয়ের করল।
কাঠ দিয়ে ছোট্ট ঘরের মতন খোঁয়ার তয়ের করতে হয়। তার ভিতরে কোন জন্ত ঢুকলে তার দরজা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। তাতেই সে জন্ত খোঁয়াড়ের ভিতর আটকা পড়ে।
চাষীরা যখন খোঁয়াড় তয়ের করছে, শিয়াল তখন হাসছে আর বলছে ‘আমার জন্যে, না মামার জন্যে? এমন সুন্দর ঘরে মামা থাকলেই ভালো হয়।’
তার পরদিনই সে বাঘকে গিয়ে বললে, ‘মামা, একটি বড় নিমন্ত্রণ তো এসেছে। রাজার ছেলের বিয়ে, সেখানে আমি গান গাইব, আর তুমি বাজাবে। আর খাব যা, তার তো কথাই নেই! তারা পালকি পাঠিয়েছে, যাবে মামা?’
বাঘ বললে, ‘তা আর যাব না! এমন নিমন্ত্রণটা কি ছাড়তে আছে! আবার তারা পালকিও পাঠিয়েছে!’
শিয়াল বললে, ‘সে কি যে-সে পালকি? এমন পালকিতে আর চড়নি মামা।’ এমনি কথাবার্তা বলে দুজনে সেই আখের ক্ষেতের ধারে এল, যেখানে সেই খোঁয়াড় রয়েছে। খোঁয়াড় দেখে বাঘ বললে, ‘খালি পালকি পাঠিয়েছে, বেয়ারা পাঠায়নি যে?’
শিয়াল বললে, ‘আমরা উঠে বসলেই বেয়ারা আসবে এখন।’
বাঘ বললে, ‘পালকির যে ডাণ্ডা নেই, বেয়ারারা কি করে বইবে?’
শিয়াল বললে, ‘ডাণ্ডা তারা সঙ্গে আনবে।’
একথা শুনে বাঘ যেই খোঁয়াড়ের ভিতর ঢুকেছে, অমনি ধরাস করে তার দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন শিয়াল বললে, ‘মামা, দরজাটা বন্ধ করে দিলে আমি ঢুকব কি করে?’
বাঘ বললে, ‘তোমার ঢুকে কাজ নেই এবারের নিমন্ত্রণটা আমিই খাইগে।’
শিয়াল বললে, ‘বেশ কথা মামা! খুব ভালো করে পেট ভরে নিমন্ত্রণ খেও। কম খেও না যেন!’ এই বলে শিয়াল হাসতে-হাসতে তার দেশে চলে গেল।
তারপর চাষীরা এসে দেখল যে বাঘমশাই খোঁয়াড়ের ভিতর বসে আছেন। তখন তারা কি খুশি যে হল, কি বলব!
তারা সকলকে ডেকে বললে, ‘আন খন্তা, আন বল্লম,আন যে যা পারিস! খোঁয়াড়ে বাঘ পড়েছে। আয় তোরা কে কোথায় আছিস।’
অমনি সকলে ছুটে এসে বাঘকে মেরে শেষ করল।

হারানো ঐতিহ্য : পালকি | জহির রহমান


চিরায়ত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি আর চোখে পড়ছে না। পালকিও কোন কোন খানদানি বাড়িতে অচল হয়ে পড়ে আছে। কিংবা মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের স্থানু সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই কিনু গোয়ালার গলি ঘুরে মাঠ প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সাথে সাথে এ গাঁও থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে-বর কিংবা মান্যগণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম প্রহর গুনছে। 
ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভূপেন হাজারিকার মাদল মাদক তানে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে, পালকি চলে ঃ আদুল গায়ে যাচ্ছে কারা — যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে।
রবি ঠাকুরের ’বীরপুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় লড়ে না ডাকাতের সাথে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারেন না , ভাগ্যে খোকা ছিল তাঁর সাথে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিটিকে আর বলে না, এ কটা দিন থাক না দিদি , কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনাও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর।
পালকি বহরের আর সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত – উভয় ইন্দোভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সাথে ফরাসি থেকেও। সংস্কৃতে পলাঙ্কিকা।
পল্লীকবি জসিমউদ্দীন তাঁর স্মৃতিকথায় এ গাঁও থেকে ওগাঁওয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত প্রায় এ পালকি এখন নানা জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।
এককালে নদীনালা কম এরকম কিছু জেলা যেমন যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ফরিদপুর, মাদারিপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ৫০’ -৬০’-এ দশকেও অনেক পালকি চোখে পড়তো। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে নব বরবধূ আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা করে নেয় ছৈওয়াল নকশী গরু গাড়ি। আর আধুনিকোত্তর এই যুগে জায়াগা দখল করে নিয়েছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। হালে লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে কার আর মাইক্রোবাস। এ যানের রমরমা ব্যবসাও একই কারণে জমে উঠেছে।
ছড়ায় বলা হয়েছে বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! না সোনার বরনীকন্যা এখন আর পালকির বদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলে সাজানো ফুলেল এয়ারকন্ডিশন্ড কারে।

Tuesday, June 19, 2012

বর্ষা | শাহাদাত হোসাইন সাদিক

টিনের চালে পড়া বৃষ্টির শব্দ যে নুপূরের শব্দের মত কানে বাজে...

টিপ টিপ বৃষ্টি! রোদের লুকোচুরি খেলা। মেঘেদের ছুটে চলা। সবুজ সজীবতায় চারদিক। টিনের চালায় ঝুমঝুমাঝুম বৃষ্টি। এরই নাম বর্ষা। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রধান তিন ঋতুর মধ্যে বর্ষা অন্যতম। রঙিন বৈশাখ শেষে আম, কাঁঠালের জ্যৈষ্ঠ মাস। এ মাসে রুক্ষতা ছুঁয়ে থাকে প্রকৃতিতে। এক্কেবারে কাঠফাটা রোদ্দুর। এসব থেকে মুক্তি মিলে বর্ষায়। বর্ষা বাংলাদেশের আনন্দ- বেদনার এক ঋতু। টানা বর্ষণের পর পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জেগে উঠে। বর্ষার আগমনে তাই বাংলার রূপ বদলে যায়। এসময় আকাশে সারাক্ষণ চলে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা। সাধারণতঃ আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। কিন্তু আমাদের দেশে বর্ষার আগমন অনেকটা আগেই ঘটে থাকে। কোন কোন সময় জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে আশ্বিণ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সে হিসেবে বর্ষা বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঋতু। অনেক সময় দেখা যায় শরৎকেও পেরিয়ে যায় বর্ষা। বর্ষার আগমনে মানুষ, জীব- জন্তু, গাছপালা, পশু- পাখি সব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। নদী- নালা, খাল- বিল পানিতে ভরে যায়। ফোটে কদম, কেয়া ফুলসহ আরো নানা ফুল। গাছে গাছে সবুজ পাতা আর নানা ফুলের সমারোহ। উর্বর হয়ে উঠে ফসলের ক্ষেত। সব মিলিয়ে প্রকৃতি এক অফুরান্ত সৌন্দর্যের উৎস হয়ে মানুষের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে।
বর্ষা মজার একটা ঋতু। বর্ষা ঘিরে আমাদের আছে নানারকম স্মৃতি। শহরে বর্ষা মানে ফ্ল্যাট বাড়ির বারান্দা। আবার সেটাও মা বাবার চোখকে উপেক্ষা করে। ঠান্ডা লাগবে তাই আগলে রাখেন তাদের। দুষ্টুমিটাও ঠিক হয়ে উঠে না।
কিন্তু গ্রামটা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। মেঠো পথ, কদমাক্ত রাস্তা। রাস্তার দু’পাশে ধান ক্ষেত। কৃষকরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গরু নিয়ে ছোটেন ক্ষেতে। হাল চাষ করেন। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও খেঁজুর কিংবা সুপারি ডাল বেড়ে ঝরে পড়ে পানির ফোটা। অন্যরকম একটা দৃশ্য। নদীর দু’কূল ছাপিয়ে বর্ষার পানি গ্রামে প্রবেশ করে। তখন গ্রাম গুলোকে মনে হয় নদীর বুকে জেগে উঠা একটা দ্বীপ। বর্ষায় পল্লীর দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব! বর্ষা উপলক্ষে গ্রামে হয় নানারকম অনুষ্ঠান। পালা বা জারির আসর বসে। পিঠা বানিয়ে সবাই আনন্দ করে খায়। অনুষ্ঠান ছাড়াও ঘরে ঘরে বর্ষার আড্ডা জমে। সবাই মিলে নানা আয়োজন করে থাকে। বর্ষার বিলে শান্ত পানিতে রাতের চিত্রটা দারুন। দূরের আকাশে তারার মেলা। তাদের ছায়া এসে পড়ে বিলের পানিতে। অথবা চাঁদের আলো। মায়াবী জোছনা। হালকা আলোয় আলোকিত গ্রামীণ চিত্রটা মনে রাখার মত। সুবহানাল্লাহ! কি সুন্দর আমাদের বাংলাদেশ। আল্লাহর অশেষ নিয়ামত। বর্ষায় প্রকৃতি সজীব সতেজ থাকে। পাখির ডাক কম থাকে, কিন্তু মাছে মাছে ভরে থাকে খাল-বিল। জেলেরা সুমদ্রে ছুটে যান ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে। চলে যান গভীর থেকে গভীরে। কোন সতর্ক সঙ্কেত তাদের আটকাতে পারে না। শহরের ফুটপাতের মানুষগুলো সন্ধ্যা নামলে অপেক্ষা করতে থাকে। কখন বৃষ্টি থামবে। বৃষ্টি না থামলে যে তারা ঘুমহীন রাত কাটাতে হবে। গ্রামের গরীব মানুষদের অবস্থাও অনেকটা এরকম। টাকার অভাবে ঘরে ভাল চাল দিতে পারে না। শণ কিংবা খড়ের তৈরি চাল। বৃষ্টি এলে খড় ডিঙ্গিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে। বাহিরে বৃষ্টি যদি হয় এক ঘন্টা, ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ে আরো এক ঘন্টা। ঘুমহীন ভাবে কাটাতে হয় রাত।
বৃষ্টির পানিতে পল্লীর রাস্তাঘাট কাঁদায় ভরে উঠে। কোথাও বা ডুবে যায় পানির নিচে। চলাচলে হয় অসুবিধা। তখন গরীব দিন মজুরদের দুর্দশা বেড়ে যায়। কাজ না থাকায় তাদের দুঃখের সীমা থাকে না।
তবুও আল্লাহর দুনিয়ার নিয়মমত বর্ষা আসে। আবহাওয়া বদলায়। বরফ গলে যাচ্ছে। তার প্রভাব এসে পড়ছে আমাদের মত গরীব দেশে। এখন বর্ষাকালে রোদ হয়। ক্ষরা থাকে। আবার দেখা যায় চৈত্র মাসেও বৃষ্টি হয়। ঋতুর যত পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, বর্ষা আসে অন্য রকম আনন্দ- কষ্ট নিয়ে। বৃষ্টির শব্দ, ব্যাঙের সঙ্গীত, জেলের ছুটে চলা, কৃষকের ব্যস্ততা আছে আগের মত। এখন অবশ্য অনেক কিছু বদলেছে। গ্রামে লেগেছে নগরের হাওয়া। পাকা বাড়ি হচ্ছে। পাকা রাস্তা হচ্ছে। তবুও কিছু আনন্দ থেকেই যায়। সবাই মিলে মিশে আনন্দে মাতেন।
আনন্দ ভরে থাকুক আমাদের সারাজীবন। আনন্দে কাটুক বাংলাদেশের মানুষের জীবন। 

মাসিক কিশোর সাহিত্য জুলাই/২০১১ প্রকাশিত

Thursday, June 14, 2012

স্পর্শ | নির্জন আহমেদ অরণ্য


একদিন আমি তোমায় ছোবো
কোন বাঁধাই সেদিন আমায়
পরাজিত করতে পারবেনা
আমাকে আটকে রাখতে পারবেনা
কোনো শক্তি, তোমার কাছে আসতে ।
সেদিন আমি তোমায় প্রান ভরে ভালোবাসবো
কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতাও আমাকে দমাতে পারবেনা
আমার ভালোবাসাকে কাঁচের মতো করে
চুর্ণবিচুর্ণ করতে দেবোনা কাউকে আর ,
আমার হৃদয়ে জমে থাকা সবটুকু প্রেম আমি
ঢেলে দেবো তোমার চরন তলে
আমায় কেউ বাঁধা দিওনা সেদিন ভালোবাসতে ।
যদি সেদিন আকাশে মেঘের সমাগম হয়
থেকে থেকে গর্জে ওঠে বিজলি ধ্বনি
ভেবেছো আমি ভয় পাবো ,ঘরে বসে থাকবো
না......
না আমি ভয় পাবোনা তোমার কাছে আসতে
বৃষ্টি ঝরবে ..? ঝরুক না....!
বিজলি পরবে ...? পরুক না...!
অথবা ঝরবে পাথর শীলা , আমি ভয় করিনা
এতো ভয় পেলে কি বলো পারতাম তোমায় ভালোবাসতে ?
যদি তোমাকে স্পর্ষ করতে আমাকে পারি দিতে হয়
উত্তাল সমুদ্র ছোটো ডিঙি নাও বেয়ে
আমি বাইবো সে নাও শক্ত হাতে হাল ধরে...
যদি পারি দিতে হয় তপ্ত মরু নগ্ন দুটি পায়ে
আমি পারি জমাবো তপ্ত মরু বুকে হাঁসি মুখে....
শুধু আর কটা দিন তুমি থেকো অপেক্ষায়
পাথর বুকে ধরে আমার পথ চেয়ে....
বলো যে জন ভালোবেসে হয়েছে ভিখারী
সে কি আর প্রিয়ার কাছে না এসে থাকতে পারে... ?

যেদিন চলে গেলে | জহির রহমান


মৃদ্যু হেসে যেদিন তুমি
সরিয়ে নিলে হাত
সেদিন থেকে স্বপ্নবিহিন
শূ্ণ্য কাল রাত
সেদিন থেকে ছন্নছাড়া
বিষন্ন সব ভোর
শূণ্য নদী মলিন আকাশ
নিশ্চুপ নিঃশোর
সেদিন থেকে ছায়ার সাথে
বন্ধ হলো কথা
কেন তুমি দিয়ে গেলে
হিয়া পূর্ণ ব্যাথা
যেদিন থেকে চলে গেলে
হাঁটি হাঁটি পায়
চেনাজানা সুরগুলো আর
বাজেনা যে হায় ।।

২২/০২/২০১১

অশ্রুসিক্ত বারতা | জহির রহমান


সান্তনার কোন ভাষা আমার জানা নেই
কষ্টে প্রাণ কাতর হলে
আপনার মাঝেই ডুব দেই
শরীরে জমিয়ে উঠে ক্লান্তির এক সমুদ্র
বরফ ফোঁটার মত গলে পড়ে অশ্রু
হৃদয়ের কোকড়ানো কান্নার শব্দ
ভেসে যায় নাকো দূরে
কেহ জানেনাতো
কিসে খাচ্ছে আমায় তিলে তিলে
তোমার দেওয়া কষ্ট গুলো
বুকের পাজঁর ভেঙ্গে দিচ্ছে বারেবার
তোমার দেওয়া স্মৃতি গুলো
থমকে দাঁড়ায়, ভাবায় আবার।

২২ ফেব্রুয়ারী ২০১১ইং

ভাবছি তোমায় | জহির রহমান


তোমাকে ভাবছি আমি
ভাবছি তোমায় বসে
এমনি দিনে এলে তুমি
ভালবাসা ছড়িয়ে।

লিখছি যখন তোমায় নিয়ে
গাইছি যখন গান
পূবাল হাওয়া এসে আমার
ভরছে মনপ্রাণ।

ভালবাসি ভালবাসি
শুনালে যত গান
সেই সুর বাতাসে ভাসে
ছড়িয়ে সুরও তাল।

ভাবছি বসে তোমায় আমি
ভাবছি নিরবধি
আসবে কখন কাছে আবার
বলবে ভালবাসি।

১৯/০২/২০১১

আসিফুল হুদা


স্বনামধন্য কার্টুনিস্ট আসিফুল হুদা ১৯৫৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম এএফএম শামসুল হুদা, মা মরহুম হাজেরা বেগম। পৈতৃক নিবাস নরসিংদী শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দীতে। ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ শেষে কার্টুন আঁকায় আত্মনিয়োগ করেন। অদ্যাবধি পেশাদারী কার্টুনিস্ট হিসেবে এঁকেছেন দেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাময়িকীতে। ফিচার, গ্যাগ, স্ট্রিপ, বিজ্ঞাপনী, পকেট ও সম্পাদকীয় কার্টুন এঁকে যাচ্ছেন অদ্যাবধি। একজন কার্টুনিস্টের হাতে অনেক ধরনের কার্টুনের প্রকাশ অনেকটা বিরল। তার আঁকা কার্টুনের সংখ্যা ৬ হাজারেরও অধিক। বহুমাত্রিকতা ও সংখ্যাধিক্য বিবেচনায় তিনি এখন অগ্রগণ্য কার্টুনিস্ট। তার বিগত ৩০ বছরের অবিরাম কার্টুন আঁকা তাকে এবং কার্টুন নামক বিষয়টিকে পাঠক সমাজের কাছে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদার আসন এনে দিয়েছে। কার্টুনকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার বিরামহীন অবদান অনস্বীকার্য। 

বাবা-মা বৃদ্ধ হলে তাঁদের প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত | সালেহ আহমদ


আজকে যারা মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান কালকে তারাই হবে সন্তানের মাতা-পিতা। সুতরাং আজকের অবাধ্য সন্তান কালকে কখনও বাধ্য, অনুগত ও সৎ সন্তান নিজেদের জন্য কামনা করতে পারে না। আজকের অধিকাংশ সন্তানই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে জ্ঞান আহরণ করছে। ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষমতা অর্জন করছে; তথাপি দেখা যায় তারা তাদের মাতা-পিতার প্রতি যথার্থ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় দেখা যায় বৃদ্ধ মাতা-পিতার জন্য সরকারি আশ্রম খোলা হয়েছে। মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের অনীহা অযত্ন ও ভালোবাসার অভাবে ওই দেশের সরকার বৃদ্ধদের জন্য এরকম আশ্রম খুলতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এরকম আশ্রম রয়েছে। আমাদের দেশেও দেখা যায় অনেক ছেলে বিয়ে করার পর মাতা-পিতাকে ফেলে নিজের সংসার নিয়ে আলাদা বসবাস করছে। কোন মুসলমান সন্তানের আচরণ এমন হতে পারে না! অথচ আমরা মুসলমান হয়েও এরকম আচরণ করছি। মাতা-পিতার অবাধ্য হচ্ছি, তাদের অযত্ন অবহেলা করছি। শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে মাতা-পিতাকে সাহায্য করলেই তাদের প্রতি দায়িত্ব সম্পন্ন হয় না। এখন আমরা পবিত্র কোরআনের আলোকে এ বিষয়ের ওপর আলোচনা করব।
সুরা বনি ইসরাইলে ২৪নং আয়াতে আল্লাহপাক নির্দেশ দিচ্ছেন,
‘তোমাদের পিতা-মাতা বার্ধক্যে পৌঁছলে তাদের প্রতি সদাচরণ করবে। (এমনকি) তাদের উদ্দেশ্যে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত করবে না। তাদের ধমক দেবে না বরং কথা বলবে আদবের সঙ্গে বিনয়, নম্র ও অনুকম্পিত থেকে। তাদের জন্যে আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর এভাবে, ওহে আমার প্রতিপালক তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর সেভাবে যেভাবে তারা শিশু ও শৈশবে আমাদেরকে লালন পালন করেছেন।’ মাতা-পিতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা, তাদের হুকুম মান্য করা, তাদের যত্ন করা, তাদের ভালোবাসা, তাদের প্রতি শোকর ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ইত্যাদি বিষয়কে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ফরজ করে দিয়েছেন। (দেখুন- আনকাবুত- ৮, আহ্কাফ-১৫, বাকারা- ৮৩, নিসা- ৩৬, আনয়াম- ১৫১, লুকমান - ১৪, মরিয়ম- ১২, ১৩, ১৪, ৩০, ৩১, ৩২ ইত্যাদি)। পবিত্র কোরআন দৃষ্টে নবীদের (আ.) জীবনীতে দেখা যায় তাঁরা তাঁদের মাতা-পিতার অনুগত এবং বাধ্য ছিলেন এবং তাদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পাদন করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মাতা-পিতার আদব, সম্মান এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করাকে প্রতিটি মুসলমানের এবাদতের সঙ্গে শামিল করে ফরজ করে দিয়েছেন। যেমন সুরা লোকমানের ১৪নং আয়াতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সঙ্গে মাতা-পিতার শুকরিয়া আদায় করাকেও আল্লাহতালা ফরজ ঘোষণা করেছেন। মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ না হলে শত এবাদত করেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া যায় না একথা পবিত্র কোরআন এবং হাদিস শরিফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মাতা-পিতা যদি কাফের মুশরিকও হয় তবুও আল্লাহপাক এ দায়িত্ব থেকে কোন মুসলমান তথা মানব সন্তানকে রেহাই দেননি। যেমন কুরতুবি এ বিষয়ের সমর্থনে বোখারির একটি হাদিস উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- হজরত আসমা (রা.) রাসূলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, আমার জননী মুশরিকা। তিনি আমাকে দেখতে আসেন। তাকে আদর-আপ্যায়ন করা জায়েজ হবে কি? প্রিয়নবী (সা.) বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার মাকে আদর-যত্ন করবে। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে নির্দেশ আছে, পিতা-মাতা যদি তোমাদের কাফের হতে আদেশ করে তা তোমাদের পালন করা জায়েজ নয়। তবে দুনিয়াবি যাবতীয় সদ্ব্যবহার তাদের সঙ্গে বজায় রাখবে। জেহাদে অংশগ্রহণ করার চেয়েও মাতা-পিতার সেবাযত্নে অংশগ্রহণ করা উত্তম। বুখারিতে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এক ব্যক্তি জেহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন, তোমার ঘরে কি তোমার মাতা-পিতা আছে? সে বলল, জি হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি তোমার মাতা-পিতার সেবাযত্ন করেই জেহাদে অংশগ্রহণ কর। সুলতানুল আরেফিন হজরত বায়েজিদ বোস্তামির (রা.) মাতৃভক্তির কথা আমরা অনেকেই জানি, এক রাতে জননী নিদ্রারত অবস্থায় পানি চাইলে বায়েজিদ দেখলেন ঘরে পানি নেই। তিনি কলসি নিয়ে ঝরনায় পানি আনতে গেলেন। এসে দেখলেন মা জননী ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পানির পাত্র নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। কখন মা জননী আবার পানি চাইবেন এবং তৎক্ষণাৎ তাকে পানি দিতে হবে। এভাবে সারারাত দাঁড়িয়ে রইলেন। সকাল হলে মা জননী দেখলেন তার আদরের সন্তান তার শিয়রে পানি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছেলের মাতৃভক্তির কথা মাতার জানতে আর বাকি রইল না। হাত তুলে পুত্রের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। আল্লাহপাক মায়ের দোয়া কবুল করলেন। বায়েজিদ হয়ে গেলেন জগৎ বিখ্যাত অলি আল্লাহ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথাও আমরা জানি। তিনি মায়ের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সাঁতরিয়ে উত্তাল নদী উত্তরণ করে মায়ের কাছে হাজির হয়েছিলেন। আমাদের সন্তানদের এসব দৃষ্টান্ত স্মরণ রাখা উচিত। এভাবেই একজন মানুষ আদর্শ মানুষ হতে পারে।

Tuesday, June 12, 2012

কাশফুল (ছবি)

রাখাল ছেলে | জসীম উদ্দিন


রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে বারেক ফিরে চাও
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?

ঐ যে দূরে মাঠের পারে সবুজ ঘেরা গাঁ
কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা৷
সেথায় আছে ছোট্টো কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া
সাঁঝ আকাশে ছড়িয়ে পড়া আবীর রঙে নাওয়া৷
সেই ঘরেতে একেলা বসে ডাকছে আমার মা
সেথায় যাবো ও ভাই এবার আমায় ছাড়ো না৷

রাখাল ছেলে রাখাল ছেলে আবার কোথায় ধাও?
পুব আকাশে ছাড়লো সবে রঙীন মেঘের নাও৷

ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশিরঝরা ঘাসে
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে৷
চলতে পথে মটরশুঁটি জড়িয়ে দুখান পা
বলছে যেন গাঁয়ের রাখাল একটু খেলে যা।

এই করিনু পণ | গোলাম মোস্তফা

 
এই করিনু পণ
মোরা এই করিনু পণ
ফুলের মতো গড়ব মোরা
মোদের এই জীবন।
হাসব মোরা সহজ সুখে
গন্ধ রবে লুকিয়ে বুকে
মোদের কাছে এলে সবার
জুড়িয়ে যাবে মন।

নদী যেমন দুই কূলে তার
বিলিয়ে চলে জল,
ফুটিয়ে তোলে সবার তরে
শস্য, ফুল ও ফল।
তেমনি করে মোরাও সবে
পরের ভাল করব ভবে
মোদের সেবায় উঠবে হেসে
এই ধরণীতল।
সূর্য যেমন নিখিল ধরায়
করে কিরণ দান,
আঁধার দূরে যায় পালিয়ে
জাগে পাখির গান।
তেমনি মোদের জ্ঞানের আলো
দূর করিবে সকল কালো
উঠবে জেগে ঘুমিয়ে আছে
যে সব নীরব প্রাণ।

Sunday, June 10, 2012

নাসির উদ্দিন হোজ্জার কৌতুক | ৪ |


লবণ আর তুলো
হোজ্জা নতুন করে লবণের ব্যবসা শুরু করলেন। তো একদিন সে গাধার পিঠে লবণের বস্তা তুলে বাজারের পথ ধরলেন। গাধাসহ পথে নদী পার হলেন। ওমা, পাড়ে ওঠে দেখেন নদীর পানিতে ধুয়ে লবণের বস্তা পুরো ফাঁকা! মহা বিরক্ত হলেন হোজ্জা। অন্যদিকে পিঠের ভার কমে যওয়ায় খুব খুশি তার গাধা।
ক'দিন পরে গাধার পিঠে বস্তাসহ হোজ্জা ফের সেই নদী পার হলেন। তবে এবার বস্তায় লবণ নেননি তিনি, নিলেন তুলা। নদী পার হয়ে গাধার পা টলমল শুরু করে দিলো। হোজ্জা গাধার কানে কানে বললেন, 'কী, ভেবেছিলে এবারও পানি দিয়ে গেলে বস্তার সব ধুয়ে ওজন কমে যাবে, না?'

হারিয়ে গেলো ঘুম
এমনিতেই ভয়কাতুরে হোজ্জা। তো এক মধ্যরাতে ভয়টয় ভুলে রাস্তা দিয়ে একা একা হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। গার্ড তাকে দেখে কাছে গেলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, 'এতো রাতে রাস্তায় একাকী কী করছেন হোজ্জা?'
হোজ্জা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, 'আমার ঘুম হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজতে বের হয়েছি ভাই!'
 
তুমি না তোমার ভাই
দুই যমজ ভাই থাকে হোজ্জার গ্রামে। একদিন কোত্থেকে এসে হোজ্জা শুনলেন, যমজ ভাইদের একজন মারা গেছে। প্রতিবেশী সেই পরিবারটিকে সমবেদনা জানাতে বের হলেন তিনি। একটু এগিয়ে যেতে না যেতেই সেই যমজভাইদের এক ভাইকে দেখে হোজ্জা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের মধ্যে কোনজন মারা গেছে_ তুমি না তোমার ভাই?'
 
আপনার ওষুধ আপনিই খান
হোজ্জার স্মৃতিশক্তি কমে যেতে চলেছে; বিষয়টা বুঝতে পেরে তিনি গেলেন হেকিমের কাছে। হেকিম স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ওষুধ দিলেন হোজ্জাকে। কয়েক মাস ঠিকঠাক থাকার পর ফের ওষুধ আনতে গেলেন হেকিমের কাছে। হেকিম তাকে দেখে বললেন, 'গতবার তোমাকে কী ওষুধ দিয়েছিলাম, সেটা একেবারেই মনে করতে পারছি না।'
'মনে করতে না পারলে আপনার ওষুধ আপনি নিজেই খান।' এই বলে হোজ্জা বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।
 
কুর্তার ভেতর আমিও ছিলাম
এক প্রতিবেশী গভীর রাতে হোজ্জার বাসা থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনলো। পরদিন তাদের দেখা হলে প্রতিবেশী লোকটা হোজ্জাকে বললো, 'ভাই, গত রাতে আপনার বাসা থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেলাম। কি পড়লো বলুন তো?'
হোজ্জা বললেন, 'আর বলবেন না ভাই, আজকাল আমার স্ত্রী শুধু শুধুই রাগ করে। কাল রাতেও সে রাগ করে আমার কুর্তাটা উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।'
প্রতিবেশী লোকটা অবাক হয়ে বললে, 'আরে ভাই, কুর্তা ফেললে কী এতো শব্দ হয়?'
হোজ্জা এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে কাউকে না দেখে বললেন, 'ভাই, কুর্তার ভেতর আমিও ছিলাম!'

======================
নাসির উদ্দিন হোজ্জার কৌতুক | ৩ | পড়ুন
======================


দর্জি পাখি টুনটুনি | দীপক দেবনাথ

 
টুনটুনি পাখিদের দর্জি পাখি বলা হয়। তারা গাছের পাতা ঠোঙার মতো মুড়ে তার পাশে সুতা বা গাছের আঁশ দিয়ে সুন্দরভাবে সেলাই করে এবং সেই ঠোঙার মধ্যে পালক বা তুলা বিছিয়ে ডিম পাড়ে। দর্জির মতো পাতা সেলাই করে বলে তাদের দর্জি পাখি বলা হয়। কাপড় সেলাই করতে হলে আমাদের সুই সুতা ইত্যাদির দরকার হয়, কিন্তু টুনটুনিদের সেসব কিছু জোগাড় করতে হয় না। তাদের ঠোঁট সুইয়ের কাজ করে এবং গাছের ছালের আঁশ জোগাড় করে তারা সুতার কাজ চালায়। এই পাখিরা কেমন করে সেলাই করার বিদ্যা শিখল_ তা ভাবলে অবাক হতে হয়। টুনটুনি পাখিদের আমরা সবাই দেখেছি। আকারে এরা চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট। তাদের পিঠের রং কিছুটা খয়েরি, কিন্তু মাথা সাধারণত ধূসর। পেটের তলার পালক সাদাটে। লেজ খুব লম্বা নয়, কিন্তু ডিম পাড়ার সময় পুরুষ পাখিদের লেজের মাঝের দুটি পালক হঠাৎ লম্বা হয়ে যায়। তাই সে সময় পুরুষ পাখিদের লেজ লম্বা দেখা যায়। টুনটুনিরা একসঙ্গে তিন-চারটা করে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে সাদা, সাদার উপর লালের ছিটেফোঁটাও আছে। বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত টুঁই টুঁই শব্দ করে এই চঞ্চল পাখিটি ঝোঁপ-জঙ্গলে ক্রমাগত লাফালাফি করে। পাখিগুলো ছোট; কিন্তু তাদের গলার স্বর নিতান্ত ছোট নয়। যখন টুনটুনিরা গাছের ডালে লাফালাফি করে ডাকতে থাকে, তখন অনেক দূর থেকে শোনা যায় সেই আওয়াজ

টুনটুনি | আতোয়ার রহমান


টুনটুনিরে টুনটুনি, তুই উঠানে আয় এখ্খুনি
একটুখানি নাচ দেখি তোর, একটুখানি গান শুনি।
আয় বেঁধে পায় কুঁচের নূপুর বাউরি পাতার বোল নিয়ে।
মৌরি ফুলের টিপ পরে আয় ঝুমকো লতায় দোল দিয়ে।
মা রেখেছেন তিলের নাড়ু, খুকু দেবে ঝুনঝুনি,
খোকন দেবে লাল গামছা, নাচ দিখি তুই টুনটুনি।

মাঠ মানে ছুট | কার্তিক ঘোষ


মাঠ মানে কি মজাই শুধু মাঠ মানে কি ছুটি-
মাঠ মানে কি অথৈ খুশির অগাধ লুটোপুটি !
মাঠ মানে কি হল্লা শুধুই মাঠ মানে কি হাসি-
মাঠ মানে কি ঘুম তাড়ানো মন হারানো বাঁশি !
মাঠ মানে কি নিকেল করা বিকেল আসা দিন ,
মাঠ মানে কি নাচনা পায়ের বাজনা তাধিন ধিন !
মাঠ মানে তো সবুজ প্রাণের শাশ্বত এক দীপ-
মাঠ মানে ছুট এগিয়ে যাবার-পিপির পিপির পিপ।

ছুট মানে কি ছোটাই শুধু ছুট মানে কি আশা-
ছুট মানে কি শক্ত পায়ের পোক্ত কোন ভাষা।
ছুট মানে কি সাহস শুধু ছুট মানে কি বাঁচা ,
ছুট মানে কি ছোট্ট পাখির আগল ভাঙা খাঁচা !
ছুট মানে কি ছুটন্ত আর ফুটন্ত সব প্রাণে-
সাতটি সবুজ সমুদ্দুরের ঢেউকে ডেকে আনে !
ছুট মানে তো জীবন এবং ছুট মানে যে সোনা-
ছুট মানে কি ছুটেই দেখ- আর কিছু বলবো না।

Saturday, June 9, 2012

নাসির উদ্দিন হোজ্জার কৌতুক | ৩ |


আমি বাড়ি নেই
বাজারে চায়ের দোকানে বসে বেশ রসিয়ে কথা বলছেন হোজ্জা। একপর্যায়ে তিনি গর্ব করে বলেন, 'জানেন, আমি অনেক অতিথিপরায়ণ।'
কথাটা শুনে দোকানে বসা চতুর লোকটা বললো, 'তা হোজ্জা সাহেব, আজ দুপুরে তো তাহলে আপনার বাড়িতে আমরা খেতেই পারি।'
হোজ্জা রাজি হয়ে তখনই তাদের খাওয়াতে নিজের বাড়ির পথ ধরলেন। বাড়ির সামনে এসে বললেন, 'আমি আগে বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে খাবার রেডি করতে বলি। তারপর আপনারা একে একে আসুন।'
হোজ্জার স্ত্রী কথাটা শোনার পর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, 'এসব পাগলামি ছাড়া তোমার মাথায় আর কিছু কাজ করে না? ঘরে নিজেদের খাবার নেই, তিনি আবার রাজ্যের মেহমান ডেকে এনেছেন! যাও, ওদের ফিরে যেতে বলো।'
'তা আমি পারবো না বাপু। আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার তো একটা সুনাম আছে।' _মিনমিন করে বললেন হোজ্জা। তার স্ত্রী বললেন, 'বেশ, তুমি তাহলে উপরের ঘরে গিয়ে বসো, আমি বরং তাদের বলি যে, তুমি বাড়ি নেই।'
এদিকে অনেক সময় কেটে গেলো। অতিথিরা কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ি এসে ঘরের দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। আর বলতে লাগলো, 'আমাদের ঘরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।' হোজ্জার স্ত্রী তখন দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন এবং অতিথিদের বললেন, 'হোজ্জা বাড়ি নেই!'
তারা বললো, 'সেকি! সে তো আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে বাড়িতে ঢুকেছে। আর আমরা তো বাড়ির সামনে থেকে দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাকে তো বের হতেও দেখিনি।'
তার স্ত্রী এবার চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু চুপ থাকতে পারলেন না হোজ্জা নিজে। তিনি উপর থেকে মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে বললেন, 'সামনের দরজা বন্ধ থাকলে কী? আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে পারি না?'
 
দ্বিতীয় প্রশ্ন বলুন
বাজারে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে হোজ্জা তার গায়ে একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন। তাতে লেখা_ 'যে কোনো বিষয়ে দুটি প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ টাকা।'
একজন হাটুরে সবার আগে দৌড়ে হোজ্জার ঘরে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে তার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে বললেন, 'দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ টাকা, একটু বেশি নয় কী?'
'হ্যাঁ, তা ঠিকই বলেছেন। এবার আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি বলুন?'
 

দোয়েল এবং প্রজাপতিটা রাগ করেছিলো | আবেদীন জনী


এক খুকির নাম টুসটুসি। খুব পুচ্চি খুকি। কেবল অ আ ক খ পড়ে। তার একটা বর্ণমালার বই আছে। বইটা খুব সুন্দর। পাতায় পাতায় রঙিন বর্ণমালা। রঙিন রঙিন ছবি। প্রজাপতির ছবি। পাখির ছবি। ফুলের ছবি। হাঁসের ছবি। গাছের ছবি। মাছের ছবি। আরও অনেক অনেক ছবি। জানালার পাশে বসে টুসটুসি বর্ণমালার বই পড়ে। প্রতিদিন। সকাল-বিকেল।
জানালার ওপাশেই একটি গোলাপের গাছ। গাছে সবুজ পাতা। পাতার ফাঁকে ফাঁকে টুকটুকে লাল ফুল। বাতাসে দোল খায়। মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সেই গন্ধ জানালা দিয়ে এসে টুসটুসিকে ছুঁয়ে যায়। টুসটুসি পড়ে আর পাতার দিকে তাকায়। ফুলের দিকে তাকায়। কখনও কোনো কারণে যদি ওর মন খারাপ হয়, তাহলে ফুল-পাতার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক চোখে। সঙ্গে সঙ্গে মনটা ভালো হয়ে যায় তার। এরপর মন রাখে বর্ণমালার বইয়ে। লেখার খাতায়।
একটা দোয়েল পাখি উড়ে এসে গোলাপ গাছে বসে। পাখা নাড়ে আর গান গায়। কিচমিচ, কিচিরমিচির। টুসটুসি অবাক হয়। এতো সুন্দর পাখি। মন ভোলানি তার গানের সুর। কিচমিচ, কিচিরমিচির। দোয়েলটার সঙ্গে ওর একসময় বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও পড়তে বসলেই কোথা থেকে যেন পাখিটা উড়ে আসে। এসেই গান জুড়ে দেয়। টুসটুসি গান শোনে আর বইয়ের পাতা ওল্টায়।
হঠাৎ একদিন টুসটুসি দেখলো কি_ গোলাপ গাছের পাতায় একটা প্রজাপতি। হায়, হায়, কী সুন্দর ডানা! কী অপরূপ! রূপ তো নয়, যেন রঙের কারখানা। টুসটুসি ওটা দেখা মাত্রই চিনে ফেলে। ওটা প্রজাপতি। চেনার কারণ হলো, ওর বর্ণমালার বইয়েও ঠিক একই রকম একটা ছবি আছে। ছবির নিচে লেখা প-তে প্রজাপতি। ও দোয়েল পাখি দেখে যতোটা অবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবাক হলো প্রজাপতি দেখে। এমন জাদুমাখা রূপ যেন আর কারও নেই।
প্রজাপতিটাও গোলাপ গাছের পাতায় বসে থাকে। ফুলেও বসে। আর নাড়াচাড়া করে কোমল ডানা দুটি। মাঝে মধ্যে কোথায় যেন চলে যায় উড়তে উড়তে। একটু পর আবার আসে। টুসটুসি পড়তে বসলেই দোয়েলটা আসে। প্রজাপতিও আসে। ওরা হয়তো টুসটুসিকে ভীষণ ভালোবাসে। টুসটুসি তো মিষ্টি সুরে বর্ণমালা পড়ে। পড়া শুনতেও বুঝি ওরা খুব মজা পায়।
দোয়েল, প্রজাপতি ও টুসটুসি_ এই তিনজন এখন একে অপরের বন্ধু। কীভাবে এমন নিবিড় বন্ধুত্ব হলো, টুসটুসি ভেবে পায় না। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, দোয়েলের শিস না শুনলে, প্রজাপতির রূপ-ডানা দেখতে না পারলে ওর পড়ালেখাই হবে না।
কিন্তু একদিন একটা ঘটনা ঘটলো। টুসটুসির বাবা কেটে ফেললো গোলাপ গাছটা। কারণ ওই গাছটার জন্য নাকি জানালা দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে না। টুসটুসি তো খুবই আদরের মেয়ে। টাটকা বাতাস না পেলে ওর মন ভালো থাকবে কী করে! মন ভালো না থাকলে তো পড়ালেখাও ভালো হবে না। ওকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। পড়ালেখা করে আলোয় আলোয় বড় হবে ও। মানুষ হবে। অনেক বড় মানুষ। ও যাতে ঠিকমতো আলো-বাতাস পায়, পড়ালেখায় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্যই কেটে ফেলা হয়েছে গাছটি।
যে জন্য গাছ কাটা হলো, ঘটলো তার উল্টো। টুসটুসির এখন মন ভালো থাকে না একটুও। বইয়ের পাতায়, লেখায় মন বসে না। গোলাপ গাছটা কাটার পর থেকে দোয়েলটাও আসে না। প্রজাপতিটাও না। আসবে যে, বসবে কোথায়? দোয়েলটা এখন হয়তো দূরের কোনো গাছে বসে শিস কাটে। প্রজাপতিও চলে গেছে অন্য কোথাও। অন্য কোনো ফুল বাগানে। টুসটুসির এখন দোয়েল ও প্রজাপতির সঙ্গে কথা বলা হয় না। তাকিয়ে থাকা হয় না লাল লাল ফুলের দিকে। তাহলে ওর মন ভালো থাকবে কেমন করে? মন ভালো না থাকলে পড়তেও ইচ্ছা হয় না। ওর মনে পড়ে দোয়েলের কথা। প্রজাপতির কথা। লাল লাল গোলাপ ফুলের কথা। টুসটুসি শুধু শুধু জানালার পাশে পড়ার টেবিলে বই-খাতা-কলম নিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকে। পড়তে চেষ্টা করে। মুখস্থ হয় না। একসময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। মা এসে বলেন, 'তোমার কী হয়েছে মামণি? তুমি কাঁদছো কেন?'
_আমার গোলাপ গাছটা চাই মা। বাবা যে গাছ কেটে ফেলেছে; সেই গাছ। লাল লাল ফুল চাই। দোয়েল বন্ধু চাই। চাই প্রজাপতি বন্ধু।
_কেটে ফেলেছে তো কী হয়েছে? আজই একটা গোলাপ চারা জানালার পাশে রোপণ করে দেবো। সেটা বড় হলে আবারও ফুল ফুটবে। দোয়েল আসবে। প্রজাপতি আসবে।
_বড় হতে তো অনেক দিন লাগবে। আমি যে এক্ষুনি চাই। না হলে দোয়েল বন্ধুটা আসবে না। আসবে না প্রজাপতি। গোলাপের গাছ না পেলে আমি কথা বলবো না। খাবো না। পড়বো না। ইশকুলে যাবো না।
টুসটুসির মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারটা ওর বাবাও জেনে গেলেন। তিনিও বুঝতে পারলেন যে, গোলাপ গাছটা কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এখন কী করে মেয়ের মন ভালো করা যায়, সেই চিন্তা করতে লাগলেন তিনি। তারপর খুঁজে পেলেন সমস্যা সমাধানের উপায়। নার্সারি থেকে কিনে আনলেন গোলাপের টব। টবের গাছে থোকা থোকা লাল ফুল। আগে যেখানে গাছটি ছিলো, ঠিক সেই জায়গায় টবটি বসিয়ে দিলেন।
গোলাপ গাছ ফিরে পেয়ে টুসটুসির মন খুশিতে এক্কেবারে টইটম্বুর। সেদিন বিকেলেই জানালার পাশে পড়তে বসলো টুসটুসি। তারপর পাতার দিকে তাকালো। ফুলের দিকে তাকালো। দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো পাতার সবুজ আর রাঙা ফুলের সৌন্দর্য দেখে। এখন দোয়েল এবং প্রজাপতির জন্য অপেক্ষা করছে ও। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে শিস কাটতে কাটতে উড়ে এলো দোয়েল। উড়ে এলো প্রজাপতি। গোলাপ গাছে বসলো ওরা। টুসটুসির মনটাও তখন আনন্দে দোয়েল হয়ে উঠলো। প্রজাপতি হয়ে উড়তে লাগলো।
টুসটুসি দোয়েল ও প্রজাপতিকে বললো, 'গোলাপ গাছটা কেটে ফেলেছিলো বলে তোমরা খুব রাগ করছিলে, তাই না?'
দোয়েল কিচমিচ, কিচিরমিচির শব্দে বললো, 'হ্যাঁ, খুব রাগ করেছিলাম।' প্রজাপতি পাখা নেড়ে সে কথাই বুঝিয়ে দিলো।
_এবার রাগ ভেঙেছে তো? আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন আসবে। আসবে কিন্তু!
দোয়েল শিস কেটে বলল, 'আসবো বন্ধু, আসবো।'
প্রজাপতি পাখা ঝাঁকিয়ে বললো, আসবো বন্ধু, আবার আসবো।' 

সূত্র : সমকাল

Friday, June 8, 2012

আকাঙ্খা | আবুল হাসান


তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে ।

তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে ।

তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে ।

তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর ।

আযান | কায়কোবাদ


কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

পাছে লোকে কিছু বলে | কামিনী রায়


করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে -
পাছে লোকে কিছু বলে।
আড়ালে আড়ালে থাকি
নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ নাহি চলে
পাছে লোকে কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদবুদ মত
উঠে চিন্তা শুভ্র কত,
মিশে যায় হৃদয়ের তলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি
সযতনে শুকায়ে রাখি;-
নিরমল নয়নের জলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
একটি স্নেহের কথা
প্রশমিতে পারে ব্যথা -
চলে যাই উপেক্ষার ছলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
মহৎ উদ্দেশ্য যবে,
এক সাথে মিলে সবে,
পারি না মিলিতে সেই দলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।
বিধাতা দেছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ;
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।

তাহারেই পড়ে মনে | সুফিয়া কামাল


“হে কবি! নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
“দখিন দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? -শুনি নাই,রাখিনি সন্ধান।”

কহিলাম “ওগো কবি, রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।”
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে-
“নাই হ’ল, না হোক এবারে-
আমার গাহিতে গান! বসন্তরে আনিতে ধরিয়া-
রহেনি,সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাল্গুন স্মরিয়া।”

কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
কহিল সে পরম হেলায়-
“বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটে নি শাখে? পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নি সে অর্ঘ্য বিরচন?”

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরি আসি-
“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”

গাধার কান | রোকনুজ্জামান খান

একটা দড়ির দুদিক থেকে টানছে দুদল ছেলে
তাই না দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে জবর মজার খেলা
এমন খেলা খেলেই সবাই কাটিয়ে দেব বেলা।
কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়? ঘাবড়ে গেল মাথা
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা।
নেইকো দড়ি বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা
লেজে লেজে ধরব টেনে হবে দড়ির বাবা।
যেইনা বলা দুদল বানর দুদিক থেকে বসে
একের লেজটি ধরল টেনে জোরসে চেপে কষে।
বনের গাধা দাঁড়ায় মাঝে উঁচিয়ে দু’টি কান
বলে, আমার দুদিক থেকে কান ধরে দে টান
কান ধরে এই মাথা নিবি আপন দলে টেনে
জিতবি তবে এই খেলাতে, রাখিস সবাই জেনে।
অমনি দুদল হেঁইয়ো টানে- গাধার বিপদ ভারি
কান ছিঁড়ে সব হুমড়ি খেয়ে পড়ল সারি সারি
সাঙ্গ হল দড়ির খেলা বানররা সব হাসে
কান হারিয়ে গাধা শুধুই চোখের জলে ভাসে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক | সুভাষ মুখোপাধ্যায়


ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে -
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে -
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।

গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।

লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল -

ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !

তারপর দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।

পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের দিকনির্দেশনা | মুহাম্মদ আমিনুল হক

বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ চলছে। প্রত্যেক বছর পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চলছে অনেক প্রোগ্রাম। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক দেশই এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে আছেন ভবিষ্যত্ বিপর্যয়ের কথা ভেবে। ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সাগরের তলদেশে ব্যতিক্রমধর্মী মন্ত্রিসভার বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা যদি কোরআন-হাদিস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই পরিবেশ সংরক্ষণকে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চৌদ্দশ’ বছর আগে এ ব্যাপারে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে তা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
পরিবেশ কী : পরিবেশ হলো কোনো স্থান বা অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যার মধ্যে বসবাস করে মানুষ জীবনধারণ করে। অর্থাত্, পরিবেশ বলতে একটি এলাকার সামগ্রিক প্রাকৃতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থানকে বোঝায়, যার মধ্যে বসবাস করে ওই স্থানের জনগণ জীবিকা নির্বাহ করে। জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, জলাশয়, বনভূমি, ভূমির উর্বরতা, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং সরকার, রাজনীতি, জাতি, ধর্ম, জনসংখ্যা, শিক্ষাদীক্ষা, প্রভৃতি অপ্রাকৃতিক অবস্থা নিয়ে গঠিত হয় কোনো স্থানের পরিবেশ। আমরা এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
ইসলামে পরিবেশের গুরুত্ব : ইসলাম পরিবেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মিসরের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ তানতাবী তাঁর এক বইতে লিখেছেন যে, আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের মধ্যে পাঁচ শতবার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য উত্সাহিত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে বলেছেন, এই পৃথিবী তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা একে আবাদ কর। তিনি বলেন : ‘তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন এবং তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন’ (সুরা হুদ : ৬১)। পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ হতে পারে; মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে পারে। আর পরিবেশ যখন সংরক্ষণ করা হবে না তখন এই দুনিয়া বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
জলবায়ু : পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে পানি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ষাটটি আয়াতে পানির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : ‘সারা পৃথিবীর যত বস্তু সবগুলো আমি তৈরি করেছি পানি হতে’ (সুরা আল আম্বিয়া : ৩০)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। তাই পানি আমাদের জীবনে মহামূল্যবান সম্পদ। বর্তমান বিজ্ঞান কোরআনের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্লাটাপ্লাজম থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি। আর প্লাটাপ্লাজমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন একটি উপাদান যাতে রয়েছে কিছুটা আর্দ্রতা ও কিছুটা পানি। পানি একটি মৌলিক উপাদান। এই উপাদানকে সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বলেছেন।
পাহাড়-পর্বত : আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে পাহাড়-পর্বতের কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বত সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন : ‘আর পাহাড়কে আমি পেরেক হিসেবে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা আন নাবা : ৭)।
পাহাড়-পর্বত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জমিনকে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচানোর জন্যই এই পাহাড়ের সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালা গোটা দুনিয়াকে হেফাজতের জন্য যেখানে যতটুকু পাহাড় তৈরি করা দরকার সেখানে ততটুকু তৈরি করেছেন। বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পাহাড় কাটাকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করছেন। সব দেশেই পাহাড়-পর্বত কাটা নিষিদ্ধ।
গাছপালা : গাছপালা ও বনজঙ্গল আমাদের জীবনে আল্লাহর বড় দান। আল্লাহতায়ালা এগুলো দান করে আমাদের জীবনকে ধন্য করেছেন। গাছপালা, বনজঙ্গল, তরুলতা ও উদ্ভিদ মানুষের জীবনের বড় অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন এগুলো ছাড়া কল্পনা করা যায় না। প্রাণীকূল অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। আর এ অক্সিজেনের সম্পূর্ণটাই আসে গাছপালা থেকে। গাছ ছাড়া মানুষের জীবন তাই অর্থহীন। মানুষের পরম বন্ধু এ গাছ সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুল (স.) আমাদেরকে বৃক্ষরোপণ ও এর যত্ন নিতে বলেছেন।
জীববৈচিত্র্য : আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পাখ-পাখালী, পশু, হিংস্র জন্তু, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যেই এলাকার জন্য যতটুকু বিষাক্ত জন্তু সৃষ্টি করা প্রয়োজন আল্লাহ ততটুকুই সৃষ্টি করেছেন। এরা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। এজন্য নবী (স.) বিষাক্ত সাপকেও বিনা কারণে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অতএব, আমরা যদি পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা মানতে পারি তাহলে আমাদেরই কল্যাণ হবে। অন্যথায় আমরা নিজেরাই আমাদের মরণ ডেকে আনব। আমাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পতিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

সুত্র : আমার দেশ

ইখলাস : সৎকর্মেরর প্রাণ | কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

প্রতিটি কাজের ধারণা অথবা আদেশ অথবা প্রারম্ভ প্রক্রিয়া যেখান থেকেই আসুক না কেন, সিদ্ধান্ত নিতে হয় ব্যক্তিকেই। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে এ নিয়ে ভাবতে হয়, ভালো-মন্দ ফলাফলেরও একটা অগ্রিম রূপ দেখে নেয় মনে মনে। এঁকে নেয় কর্মনীতি ও কর্মপন্থার রূপরেখা। তবে সবকিছুই নির্ভর করে এমন এক মৌলিক গুণের ওপর, যার নাম নিয়ত বা সংকল্প অথবা ইচ্ছা। এই নিয়ত বা ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতেই মোড় নেয় কাজের ধরন, গতি, ধারা এবং ফলাফল। ভালো ও মন্দ কাজের শুরুটা মূলত নিয়তের দ্বারাই হয় এবং ইচ্ছার প্রভাবেই বিভাজিত হয়।
ইখলাস বলতে যা বোঝায় তা হলো ইচ্ছার স্বচ্ছতা বা একনিষ্ঠতা। পৃথিবীর যে কোনো আদর্শে, যে কোনো কাজে—চাই তা ভালো হোক কিংবা মন্দ, ইখলাসই পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের দোরগোড়ায়। দোরগোড়ায় এ জন্য যে, অনেক ক্ষেত্রে কোনো কার্যের সফলতা ভাগ্যে না থাকলে সঠিক ইখলাস ও কর্মতত্পরতা সত্ত্বেও ব্যক্তি ব্যর্থ হয়। এটা একান্তই তাকদিরের বিষয়। কিন্তু ব্যক্তির উচিত যে কর্ম সাধন করার ইচ্ছা বা নিয়ত করেছে, তাতে পরিপূর্ণ আন্তরিক হওয়া, বিশুদ্ধতা পোষণ করা। আর সত্ কার্যাবলীর ক্ষেত্রে তো এর কোনো বিকল্প নেই। কেননা, সত্ কাজ আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার প্রধান শর্তই হলো নিয়তের বিশুদ্ধতা। আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সব কাজের প্রতিফল কেবল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়ত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত দুনিয়া হাসিল করা কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হবে, তার হিজরত সে লক্ষ্যেই নিবেদিত হবে। [বুখারি : ১/২(১), মুসলিম : ৬/৪৮(১৯০৭)] পবিত্র কোরআনে ইখলাস সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যথা—বলো, ‘তোমরা কি আমাদের সঙ্গে আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করছ অথচ তিনি আমাদের রব ও তোমাদের রব? আর আমাদের জন্য রয়েছে আমাদের আমলগুলো এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমলগুলো এবং আমরা তাঁর জন্যই একনিষ্ঠ। ( সূরা বাকারা : ১৩৯ ) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন—জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত—আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না। (সূরা আয-যুমার : ৩) ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না। (১৪৫) তবে যারা তাওবা করে নিজদের শুধরে নেয়, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্য নিজেদের দীনকে খালেস করে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে। আর অচিরেই আল্লাহ মুমিনদের মহাপুরস্কার দান করবেন। (১৪৬) ( সূরা আন-নিসা : ১৪৫-১৪৬)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন—‘তুমি কি দেখনি যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। আর যখন ঢেউ তাদের ছায়ার মতো আচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তারা একনিষ্ঠ অবস্থায় আনুগত্যভরে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদের উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তাদের কেউ কেউ (ঈমান ও কুফরির) মধ্যপথে থাকে। আর বিশ্বাসঘাতক ও কাফির ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না। (সূরা লুকমান : ৩১-৩২)
কর্মের সঙ্গে ইখলাসের সংযোজন যে কত বড় মহা সাফল্য এনে দিতে পারে মুমিনের ইহ ও পরজীবনে, তা নিম্নের হাদিস থেকে অনুধাবন করা যাবে : ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : (রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেন, আল্লাহ্ ভালো এবং মন্দ লিখে দিয়েছেন, তারপর তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব, যে কেউ কোনো সত্কাজের ইচ্ছা করে তা না করলেও আল্লাহ তাকে পূর্ণ কাজের সওয়াব দেবেন। আর যদি সে সত্ কাজের ইচ্ছা করে এবং বাস্তবে তা করেও ফেলে, আল্লাহ্ তার জন্য দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত; এমনকি এর চেয়েও অধিক সওয়াব লিখে দেন। আর যে কেউ কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর যদি তা না করে, তবে আল্লাহ্ তার বিনিময়ে তাকে পূর্ণ কাজের সওয়াব দেন। পক্ষান্তরে যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করে এবং কাজটা করেই ফেলে, তাহলে আল্লাহ্ তার জন্য একটি মাত্র গোনাহ্ লেখেন।) [বুখারি : ৬৪৯১, মুসলিম : ১৩১]
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন—একটি সেনাদল কাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আক্রমণ চালাতে যাবে। তারা যখন সমতলভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদের সামনের ও পেছনের সব লোকসহ ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। হজরত আয়েশা (রা) জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রাসুল! কীভাবে আগের ও পরের সব লোকসহ তাদের ধসিয়ে দেয়া হবে? যখন তাদের মধ্যে অনেক শহরবাসী থাকবে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাদের সঙ্গে শামিল হবে না? রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আগের ও পরের সব লোককেই ভূমিতে ধসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর লোকদের নিয়ত অনুসারে তাদের পুনরুত্থিত করা হবে। [বুখারি : ৩/৮৬(২১১৮) ও মুসলিম : ৮/১৬৮ (২৮৮৪)] এখানে শব্দাবলী শুধু বুখারি থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে শরিক হলাম, তখন তিনি বলেন, মদিনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর কর এবং যে উপত্যকা অতিক্রম কর, সেখানেই তারা তোমাদের সঙ্গে থাকে। রোগ-ব্যাধি তাদের আটকে রেখেছে। (মুসলিম) অন্য বর্ণনা মতে, তারা সওয়াবে তোমাদের সঙ্গেই শরিক থাকবে। ইমাম বুখারি এই হাদিসটি হজরত আনাস (রা.) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন : আমরা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি বলেন : আমরা মদিনায় আমাদের পেছনে এমন কিছু লোক রেখে গিয়েছিলাম, আমরা যে গিরিপথ এবং যে ময়দানই অতিক্রম করেছি, তারা (যেন) আমাদের সঙ্গেই ছিল। এক ধরনের ওজর তাদের আটকে রেখেছে।
হজরত আবু ইসহাক সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্ আস (রা.) বর্ণনা করেন : “আমি বিদায় হজের বছরে খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজখবর নিতে এলেন। আমি নিবেদন করলাম : হে আল্লাহর রাসুল! আমার রোগের তীব্রতা আপনি লক্ষ্য করছেন। আমি অনেক ধন-মালের অধিকারী। কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী শুধু আমার মেয়েই। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করে দিতে পারি? রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘না’। আমি নিবেদন করলাম : ‘তাহলে অর্ধেক পরিমাণ (দান করে দেই)? তিনি বলেন : না। আমি আবার নিবেদন করলাম, ‘তাহলে এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দেই)? তিনি বলেন : ‘হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পার।’ অবশ্য এটাও অনেক বেশি অথবা বড়। তোমাদের উত্তরাধিকারীদের একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় না রেখে তাদের বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়াই শ্রেয়, যেন তাদের মানুষের সামনে হাত পাততে না হয়। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দেবে, তার সবকিছুরই সওয়াব (প্রতিদান) তোমাকে দেয়া হবে। এরপর আমি (বর্ণনাকারী আবু ইসহাক) বললাম : হে আল্লাহর রাসুল! আমার সঙ্গী-সাথীদের (মদিনায়) চলে যাওয়ার পর আমি কি পেছনে (মক্কায়) থেকে যাব? তিনি বললেন: পেছনে থেকে গেলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করবে, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বেড়ে যাবে। আশা করা যায়, তুমি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে কিছু লোক তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অন্য কিছু লোক তোমার দ্বারা কষ্ট পাবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবিদের হিজরত পূর্ণ করে দাও এবং তাদের ব্যর্থতার কবল থেকে রক্ষা কর।” তবে সা’দ ইবনে খাওলা যথার্থই কৃপার পাত্র। মক্কায় তার মৃত্যু ঘটলে রাসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন যে, তিনি হিজরতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন। [বুখারি : ১/২২(৫৬) ও মুসলিম : ৫/৭১(১৬২৮)(৫)]
ভালো কাজ কমবেশি সব মানুষই করে থাকে। যারা দুনিয়ার জীবনকেই একমাত্র জীবন মনে করে, মৃত্যুকেই মানবের নিঃশেষ বলে বিশ্বাস করে কিংবা সত্য দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, তাদের সত্কর্মের ফলাফল কোনো না কোনোভাবে আল্লাহ্ দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। কেননা, আখেরাতে প্রতিদান পেতে হলে শর্ত হলো সত্কর্মের সঙ্গে ঈমানের সংযুক্তি। অতএব, যারা সত্কর্ম শুধু জনকল্যাণ, সততার বহিঃপ্রকাশ কিংবা একান্ত নিজস্ব প্রয়োজনে সম্পাদন করে থাকে তারা পার্থিবতায় যা পায় একজন ঈমানদার ব্যক্তিও তা থেকে বঞ্চিত হন না। পার্থক্য হলো মুমিন ব্যক্তি তার ঈমানের দাবি হিসেবে, তার প্রভুর আদেশ হিসেবে এবং তার আখিরাতের পুঁজির অতিরিক্ত কিছু হিসেব করেই সত্কর্মের নিয়ত বা ইচ্ছা করে থাকে। তাই উভয়ের কর্ম এক হলেও প্রতিদানের পার্থক্য ব্যাপক। তদুপরি মুমিনদের মধ্য থেকে কেউ যদি সত্কর্মের জন্য অসত্ নিয়ত বা ইচ্ছা পোষণ না করে, কপটতা করে, কূটকৌশল সম্পাদনের জন্যই সত্কর্ম করে কিংবা ইত্যকার যাবতীয় ইখলাস পরিপন্থী ইচ্ছার ফলে সত্কর্ম সম্পাদন করে, তবে তার এই সত্কর্ম দুনিয়ার উদ্দেশ্য সফল করতে পারলেও আখেরাতে তা কোনোই কাজে আসবে না; বরং অসত্ উদ্দেশ্যে সাধিত সত্কর্মই তার জন্য পাপ বয়ে আনবে ও জাহান্নামের কারণ হয়ে যাবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক

সূত্র : আমার দেশ

দহন | জাকিয়া সুলতানা

চৌধুরী মিনহা প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় উঠে ফজরের নামাজ পড়ে হালকা কিছু খেয়ে বিছানায় যান, আর ওঠেন আটটার দিকে। কিন্তু আজ তার কি যে হলো, বিছানায়ও যেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে বারান্দায় বসে আছেন। কাজের মেয়েটা সাধারণত সাতটায় উঠে নাশতা তৈরি করে তাকে জাগায়, কিন্তু আজ কাজের মেয়েটি উঠেই দেখে ম্যাডাম বারান্দায় বসা। ওতো এক রকম দৌড়ে গিয়েই—খালাম্মা আপনি আজ এত তাড়াতাড়ি উঠেছেন, আমি তো নাশতা তৈরি করতে পারিনি।
অসুবিধে নেই, মর্জিনা তুমি তোমার কাজ সেরে আমাকে একই টাইমে নাশতা দেবে। আমার শরীরটা তেমন ভালো নেই। তাই এখানে বসে আছি। তুমি আমাকে পত্রিকাটা এনে দাও।
সকাল থেকেই চৌধুরী মিনহার মনটা ভালো নেই। নিজের জীবনের অনেক কিছুরই না পাওয়ার বেদনা তাকে কুরে কুরে খেয়েছে সারাটি জীবন। এখন মধ্যবয়সে এসে মনে হচ্ছে জীবনে অনেক ভুলই করেছি, কিন্তু শোধরাবার সময় যে আর নেই। কিন্তু না পাওয়ার বেদনা যে কতটা প্রখর, তা আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন তিনি। কিন্তু সময় হারিয়ে সে উপলব্ধির তো কোনো অর্থই নেই। কিন্তু মেয়েটা? মেয়েটাও কী আমার মতোই সেই একই পথে হাঁটছে? কীভাবে বোঝাই ওকে? ও ছাড়া যে আমার জীবনে আর কিছুই নেই অবশিষ্ট।
আশির দশকে চৌধুরী মিনহার বিয়ে হয়েছিল ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সালেহ আহমেদের সঙ্গে। উচ্চ বংশের ছেলে সালেহ আহমেদ। বাবার অগাধ সম্পদ না থাকলেও একজন ভালো মানুষ হিসেবে সমাজে সর্বজনপ্রিয়। কিন্তু এ বিয়েতে মত ছিল না তার। কারণ কলেজ জীবনে ভালোবেসেছিলেন রেদোয়ান নামের এক যুবককে। রেদোয়ান ছিলেন এক পুলিশ অফিসারের ছেলে, আর সেখানেই আপত্তি ছিল মিনহার রক্ষণশীল বাবার। কোনোভাবেই বুঝতে চাননি মেয়েকে। তার একই কথা, ঘুষখোরের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে নয়! যে বাবাকে দেশের সবাই এক নামে চেনে, যিনি জ্ঞানের ভাণ্ডার বলে পরিচিত; সেই বাবাকে বোঝানোর সাধ্যি কার? আর তার মেয়ে হয়ে যে একজনকে পছন্দ করেছে, সেটাই অনেক আশ্চর্যের ব্যাপার! শিক্ষানুরাগী হাতেম আলী, যিনি জীবনে শুধু মানুষকে দিয়েই গেছেন। কিন্তু নিজের মেয়ের জন্য কিছুই করতে পারলেন না। একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন। গরিবদের জন্য বিনা বেতনে পড়ানো থেকে শুরু করে কার পাশে তিনি ছিলেন না? ছিল তার নিজের হাতে গড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, এতিমখানা। যার দান-অনুদানের খবর মানুষের মুখে মুখে। বিদ্বান এই মানুষটির জীবনে এতটা কষ্ট আসবে, তা কেউ কল্পনাও করেনি কখনো। এতটাই আবেগি আর মুডি তার কন্যাটি যে... যখন শুনলেন তার বাবা এ বিয়েতে কিছুতেই মত দেবেন না, তখন সবকিছু শুধু মুখ বুজেই সহ্য করে গেছেন। বাবার সামাজিক অবস্থান আর মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে বাবার মতের বিরোধিতা করেননি, দু’পায়ে দলেছেন নিজের ভালোবাসাকে।
বাবা যেখানে পাত্র পছন্দ করেছেন সেখানেই বিয়েতে মত দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশোধ নিয়েছেন নিজের উপর। আর সেই প্রতিশোধের আগুনে জ্বলেছেন একজন নিষ্পাপ আবু সালেহ উদ্দীন। শুধু জ্বলাই নয়, তিনি ছারখার হয়েছেন জীবনে। কিন্তু মিনহার প্রতিশোধের আগুনে তিনি কেন জ্বলবেন? এমন কথাটাও বলার মতো ইচ্ছে তার জাগেনি কখনও। ভাগ্যকেই বরণ করে কাটিয়ে দিয়েছেন একটি জীবন। মুখ বুজে মিনহার সব ধরনের অত্যাচার তিনি সহ্য করেছেন। এমন একজন ব্যক্তিত্বের মেয়ের পাণি তিনি গ্রহণ করেছেন যে, ঘরের বাইরে এ নিয়ে বলার মতো মানসিকতাও তার কাজ করেনি কখনও। এক সময়ের উচ্ছল বন্ধুবত্সল আবু সালেহ বিয়ের পর কেমন যেন একা একা থাকতে ভালোবাসতেন। অফিসে দু’একজন কলিগ এ নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা অনেকদিন করেছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে শেয়ার তিনি করেননি, শুধু একবুক জ্বালা নীরবে সয়েছেন। যখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, তখন একদিন অপ্রাপ্ত বয়সে হার্ট অ্যাটাকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করলেন। মিনহার সঙ্গে স্মৃতি বলতে রেখে গেছেন মেয়ে বকুলকে। মরার সময় শুধু বলে গেছেন, আমার মেয়েটাকে তুমি কষ্ট দিও না।
কিন্তু সে কথা রাখতে পারলেন না মিনহা। যখন জানলেন তার মেয়েটিও একজনকে পছন্দ করে, তখন যেন আকাশ ভেঙে তার মাথায় পড়ল। কারণ, প্রেম-ভালোবাসা তো তার অভিধানে নেই। ওখানে জীবনে কোনো কম্প্রোমাইজ তিনি করতে পারবেন না। ও জিনিসটি যে তার জীবন থেকে মরে গেছে অনেক আগেই। তাই বলে কী তার একমাত্র আদরের সন্তানটিকে নিজের মতো করেই কষ্ট দেবেন? নাকি মেয়ের পছন্দকেই প্রাধান্য দেবেন, তাই নিয়ে ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে মিনহা চৌধুরীর।
সালেহ সাহেব মারা যাওয়ার পর কলেজ শিক্ষক মা আর বুয়েট পড়ুয়া একমাত্র মেয়ের জীবন মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো অবস্থা হলো, যখন তিনি জানলেন তার মেয়েটি তারই মতো একই ভুল করতে যাচ্ছে। মেনে নিতে পারলেন না তিনি কিছুতেই। তাই প্রথমে মেয়েকে শোধরাবার চেষ্টা করলেন। একদম মায়ের কাজটিই বকুল করল। শুধু বলল, মা তুমি নিশ্চিত থাক, আমি তোমার অবাধ্য হয়ে কিছু করব না। তুমি যা চাও তাই হবে। তুমি আমাকে নিয়ে একদম ভেবো না। কিন্তু বকুল যে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তা তার রাশভারি মা কী করে বুঝবে? কারণ বকুল আর তার মায়ের সম্পর্কটা ছিল এক রকম দূরত্বেরই। জীবনে মেয়ের সঙ্গে কখনও প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতেন না তিনি। সব সময় একটা মাস্টার মাস্টার ভাব। কিন্তু সবকিছু জানার পরেও মিনহা চৌধুরী বোঝার চেষ্টা করেননি কখনও বকুলের হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যে ভালোবাসার জন্য তার জীবনটা এভাবে ছারখার হয়ে গেল, সেখানে বকুলের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়াটা ছিল তার অতি প্রয়োজন। কিন্তু তিনি করলেন তার উল্টোটি। বকুল ভালো করেই জানে, ওর একরোখা ধরনের মায়ের অনুমতি পাওয়া হয়তো কখনোই সম্ভব না। যে এক কথা দু’বার বলে না, তার কাছে তো কোনো কিছু ভিক্ষা চেয়েও লাভ নেই। তাই বলে তো আর জীবন থেমে থাকবে না। হয়তো এখন হাঁটতে হবে উল্টোপথে। তাই বকুল পাথরে বুক বেঁধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্তত পড়াশোনাটা তো ঠিকমত করতে হবে।
বকুল কীভাবে সাকিবকে বোঝাবে যে ওর মাকে দ্বিতীয়বার কষ্ট দেয়া ওর পক্ষে সম্ভব না। তাই যেভাবেই হোক সাকিবকে ভুলতে হবে। আস্তে আস্তে দূরত্ব সৃষ্টি করতে লাগল বকুল। যেখানে ঘুমকাতুরে সাকিবের ঘুম ভাঙত বকুলের ফোনে, সেখানে আজ দু’দিন গত হতে চলল বকুল ফোন করছে না। বড্ড চিন্তায় পড়ে গেল সাকিব। কী হয়েছে ওর, ফোন করছে না কেন? কোনো রকম অসুখ করল না তো? সাকিব ফোন করে, বকুল ধরে না; আবার ফোন করে সে। না, সে ধরে না। তৃতীয়বার বলে, সাকিব আমার শীররটা তেমন ভালো নেই, কালকে তোমার সঙ্গে ক্যাম্পাসে দেখা হবে। সাকিব চিন্তায় পড়ে যায়, কী এমন অপরাধ করলাম আমি। আমার জানা মতে আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। তাহলে কেন ও এমন করছে। সারাটি দিন-রাত খুব কষ্টে যায় সাকিবের। কিন্তু কোনো সমাধান খুঁজে পায় না সে। সামনে পরীক্ষা, এক মুহূর্তও সময় অপচয় করা চলবে না। তাই আবার মনোযোগী হয় পড়াশোনায়। পরের দিন ক্যাম্পাসে দেখা বকুলের সঙ্গে। কিন্তু কী বলবে ও? হয়তো পরীক্ষার জন্যই ও এমনটি করছে।
—কী হয়েছে বকুল? কোনো সমস্যা?
—না, তেমন কিছু নয়।
—তবে?
আসলে আমার শরীরটা তেমন ভালো নেই, আর সামনে তো পরীক্ষা। আমি ভাবছি আমরা কিছুদিন দেখা-সাক্ষাত্ বা কোনো রকম ফোন করব না।
সাকিব শুধু হুম বলে ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।
আড়ালে মুখ বুজে কিছুক্ষণ কেঁদে নেয় বকুল। হয়তো আর কোনোদিনই একপথে আর সাকিবের সঙ্গে হাঁটা হবে না। হয়তো কোনো ফুচকার দোকানে একই প্লেটে আর ফুচকা খাওয়া হবে না, বা লাইব্রেরিতে একসঙ্গে বসে আর কোনোদিন ক্লাসওয়ার্ক করা হবে না। হয়তো একটি রিকশায় হুড খোলা রেখে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে আর ভেজা হবে না। এ আমি কী করলাম! সাকিব আমাকে কতটা ভালোবাসে তাতো আমি জানি, আমাকে না পেলে ওর হয়তো বড় ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট হবে। কিন্তু মা? আমি কাকে বেছে নেব? সামনে আমার দুটি পথ খোলা—এক সাকিবকে গ্রহণ করা, না হয় মায়ের কথা মেনে নেয়া। না, মাকে আমি কষ্ট দিতে পারব না। এগুলো ভাবলে আমি দুর্বল হয়ে পড়ব সাকিবের প্রতি। আমাকে এগুলো আর ভাবা চলবে না। আমার পথ এখন সাকিবের উল্টোদিকে। বিদায় সাকিব! বিদায়! ভালো থেকো।
বকুলের মায়ের জীবনের সবকিছুই একদিন বকুল তার ডায়রি পড়ে জেনে নেয়। কিন্তু মায়ের এমন কষ্টের জীবনে বকুল আর কষ্ট দিতে চায়নি বলেই ভুলতে চাচ্ছে সাকিবকে। কিন্তু তা কেমন করে সম্ভব? যাকে তার মনপ্রাণ সব দিয়ে বসেছে, তাকে বাকি জীবনে ভুলে থাকা কীভাবে সম্ভব? আর মাকেই বা কীভাবে কষ্ট দেবে বুঝতে পারে না বকুল। তাই ভাবতে থাকে আমাকে এমন আবেগি হলে চলবে না। যেভাবেই হোক আমাকে শক্ত হতেই হবে।
একদিন ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে বকুল দেখতে পেল লন্ডনের একটি স্থাপত্য সংস্থা কিছু লোক নিয়োগ দেবে। এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবে না। তাই দ্রুত আবেদন করতে হবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। এত দ্রুত যে সবকিছু হয়ে যাবে, বকুল ভাবতেও পারেনি। তাই তো পরীক্ষার রেজাল্ট হতে না হতেই হাতের নাগালেই চাকরি। বকুল গোপনে তার পাসপোর্ট, যাবতীয় কাগজপত্র রেডি করে ফেলল। এক মাসের মধ্যেই সবকিছু হয়ে গেল। দু’দিন বাদেই বকুলের ফ্লাইট। তাই এখন শুধু বিদায় জানানোর পালা। মাকে তাই লেখা তার চিঠি—

মামণি,
আমি চলে যাচ্ছি; না সাকিবের সঙ্গে নয়, আমার কর্মস্থলে। কী তুমি অবাক হচ্ছো যে তোমার ভীতু মেয়েটা এতকিছু কীভাবে পারল? হ্যাঁ মা আমাকে পারতে হয়েছে। তুমি চেয়েছিলে আমি জীবনে একজন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার হই। আর বাবা চেয়েছিলেন আমি ডাক্তার হই, কিন্তু এখানেও তুমি বাবার চাওয়াকে কোনো পাত্তা দাওনি। তুমি যা চেয়েছ, তাই হয়েছে। তুমি আমাকে বুয়েটে ভর্তি করানোর জন্য কী না করেছ। কিন্তু দেখ মা তোমার ইচ্ছেটাকে সৃষ্টিকর্তা কতটা তাড়াতাড়িই না গ্রহণ করেছে? পাস করতে না করতেই আমার চাকরিটা হয়ে গেল। হয়তো বিদেশে তুমি যেতে দিতে চাইতে না, তাই তোমাকে কিছু না জানিয়েই সবকিছু করতে হয়েছে আমাকে। সরি মা, এছাড়া যে আমার কোনো উপায় ছিল না। একমাত্র বিদেশই পারে তোমার-আমার ভাঙন থেকে দূরে রাখতে। কারণ একই ছাদের নিচে থেকে হয়তো তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অটুট রাখা সম্ভব হতো না। যেমনটা হয়েছিলে তোমার সঙ্গে নানা ভাইয়ের। তাই চলে গেলাম দূরে, বহুদূরে। তোমার-আমার সম্পর্কটা এখন আরও বেশি গভীর হবে, তুমি দেখো মা, সকাল-দুপুর-সন্ধ্যে তোমার খবর আমি নেব। যেটা তোমার কাছাকাছি থেকেও হয়তো সম্ভব হতো না। কারণ আমি ছাড়া যে এ দুনিয়ায় তোমার আর কিছু নেই।
মা, সারাটি জীবন তুমি ঝরেপড়া বকুল কুড়িয়ে তোমার মনের মানুষটির জন্য মালা গেঁথেছিলে। আর তাকে না পেয়ে আমার নিষ্পাপ বাবার জীবনটা তুমি নষ্ট করে দিয়েছ। কী দোষ ছিল আমার বাবার, বলতে পার? তাকে তুমি কোনোদিন স্বামীর মর্যাদা দাওনি। একই ছাদের নিচে বাস করে স্বামী-স্ত্রীর যে কী সম্পর্ক, তা তোমরা অনুভব করনি কখনও। মাঝখানে অকালে আমাকে হতে হয়েছে এতিম। কেন তোমার না পাওয়া ভালোবাসার বলি আমাদের বাবা-মেয়েকে হতে হয়েছে, বলতে পার কি? মা, সাকিব আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে অযোগ্য ছিল না। কিন্তু তোমার ওই যে ভালোবাসাকে ঘৃণা করা, যেটাকে তুমি মনে কর অর্থহীন, তোমার কাছে সেই অর্থহীন ভালোবাসাটাই আজ আমাকে এত দূরে ঠেলে দিয়েছে, কিন্তু একটি বারও তুমি এর বিপরীত দিকটা ভেবে দেখলে না মা। ভুল যদি কেউ করে থাকে করেছে তোমার বাবা, আর তার মাসুল কেন আমার বাবা বা আমি দিলাম? জানি তুমি আজ আমার কোনো প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারবে না। আর তাই আমি আমার জীবনে আমার বাবার মতো কোনো নিষ্পাপ লোককে ঠকাতে চাই না বলেই আমার এ সিদ্ধান্ত। মা, তুমি তোমার জীবনের সব আবেগ দিয়ে আমার নাম রেখেছ বকুল। আর এ নামটিই হয়তো তোমাকে আমার খুব কাছে রাখবে মা, তুমি ভালো থেকো। দোয়া যদি নাও কর, অন্তত বদ-দোয়া কর না। মা, এছাড়া যে আমার আর কোনো উপায় ছিল না। হ
ইতি তোমার
ঝরাবকুল
 
সূত্র : আমার দেশ

একটি সকাল | শাহনাজ পারভীন


কী যে এক ভালো লাগায় ভরে আছে মন
তা আমি বোঝাতে পারব না কখনো এমন
কী যে এক সূক্ষ্ম অনুভূতিতে ছুঁয়ে আছে হৃদয়
লেখা আর হয় না তা কখনোই জানি

জানি তুমি হাত মেললেই একই সাথে ফুটে গেল সমস্ত ফুলের পাপড়ি
তুমি হাসলেই হেসে উঠল পরিপূর্ণ সূর্যটা পূর্ব দিগন্তে
তুমি হাঁটলেই সমস্ত শক্তি ভর করল আমার উপর
তুমি ভালবাসলেই নিঃস্ব এই আমি হয়ে উঠি মুহূর্তেই রত্নাকর
তুমি তাকালেই পৃথিবীর সমস্ত ডুবুরির প্রথম আকর্ষণ হয়ে উঠি রোজ

আমাদের সুখের ভেতর আমাদের দুখের ভেতর
আমাদের অনন্য অদম্য গল্পের ভেতর
আপাদমস্তক আন্দোলিত করে ওঠে যখন তখন
আদি সৃষ্টির অন্তরালে অতন্দ্র প্রহরীর মত অনন্য শুভ্রতাকে
টেনে আনি খুব কাছাকাছি
যেমন ফুল থেকে ঘ্রাণের
দেহ থেকে প্রাণের এবং
মন থেকে মাধুরীর মত পাশাপাশি

সূত্র : আমার দেশ

Wednesday, June 6, 2012

বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নে | উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী


শিয়াল ভাবে,`বাঘমামা, দাড়াঁও তোমাকে দেখাচ্ছি!' এখন সে আর নরহরি দাসের ভয় তার পুরোনো গর্তে যায় না, সে একটা নতুন গর্ত খুজে বার করেছে।
সেই গর্তের কাছে একটা কুয়ো ছিল।
একদিন শিয়াল নদির ধারে একটা মাদুর দেখতে পেয়ে, সেটাকে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে, সেই কুয়োর মুখের উপর তাকে বেশ করে বিছিয়ে বাঘকে গিয়ে বললে,'মামা, আমার নতুন বাড়ি দেখতে গেলে না?' শুনে বাঘ তখুনি তার নতুন বাড়ি দেখতে এল। শিয়াল তাকে সেই কুয়োর মুখে বিছানো মাদুরটা দেখিয়ে বললে, `মামা, একটু বস, জলখাবার খাবে।'
জলখাবারের কথা শুনে বাঘ ভরি খুশি হয়ে, লাফিয়ে সেই মাদুরের উপর বসতে গেল, আর অমনি সে কুয়োর ভিতরে পড়ে গেল। তখন শিয়াল বললে, `মামা, খুব করে জল খাও, একটুও রেখ না যেন!'
সেই কুয়োর ভিতরে কিন্তু বেশি জল ছিল না, তাই বাঘ তাতে ডুবে মারা যায়নি। সে আগে খুবই ভয় পেয়েছিল, কিন্তু শেষে অনেক কষ্টে উঠে এল। উঠেই সে বললে, `কোথায় গেলি রে শিয়ালের বাচ্চা? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।' কিন্তু শিয়াল তার আগেই পালিয়ে গিয়েছিল, তাকে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেল না।
তারপর থেকে বাঘের ভয়ে শিয়াল তার বাড়িতেও আসতে পারে না, খাবার খুঁজতেও যেতে পারে না। দুর থেকে দেখতে পেলেই বাঘ তাকে মারতে আসে। বেচারা না-খেয়ে না-খেয়ে শেষে আধমরা হয়ে গেল।
তখন সে ভাবলে, `এমন হলে তো মরেই যাব। তার চেয়ে বাঘ মামার কাছে যাই না কেন? দেখি যদি তাকে খুশি করতে পারি।'
এই মনে করে সে বাঘের সাথে দেখা করতে গেল। বাঘের বাড়ি থেকে অনেক দুরে থাকতেই সে নমস্কার করছে আর বলছে, `মামা, মামা!'
শুনে বাঘ আশ্চর্য হয়ে বললে, `তাই তো, শিয়াল যে!'
শিয়াল অমনি ছুটে এসে, তার পায়ের ধুলো নিয়ে বললে, `মামা, আমাকে খুঁজতে গিয়ে তোমার বড় কষ্ট হচ্ছিল, দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। মামা, আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি তাই এসেছি। আর কষ্ট করে খুঁজতে হবে না, ঘরে বসেই আমাকে মার।'
শিয়ালের কথায় বাঘ তো ভারি থতমত খেয়ে গেল। সে তাকে মারলে না, খালি ধমকিয়ে বললে, `হতভাগা পাজি, আমাকে কুয়োয় ফেলে দিয়েছিলি কেন?'
শিয়াল জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বললে, `রাম-রাম। তোমাকে আমি কুয়োয় ফেলতে পারি? সেখানকার মাটি বড্ড নরম ছিল, তার উপর তুমি লাফিয়ে পড়েছিলে, তাই গর্ত হয়ে গিয়েছিল। তোমার মত বীর কি মামা আর কেউ আছে?'
তা শুনে বোকা বাঘ হেসে বললে, `হ্যাঁ-হ্যাঁ ভাগ্নে সে কথা ঠিক। আমি তখন বুঝ্তে পারিনি।'
এমনি করে তাদের আবার ভাব হয়ে গেল।
তারপর একদিন শিয়াল নদীর ধারে গিয়ে দেখল যে, বিশ হাত লম্বা একটা কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোয়াচ্ছে। তখন সে তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে বাঘকে বললে, `মামা, মামা একটা নৌকা কিনেছি, দেখবে এসো।'
বোকা বাঘ এসে সেই কুমিরটাকে সত্যি-সত্যি নৌকা মনে করে লাফিয়ে তার উপর উঠতে গেল, আর অমনি কুমির তাকে কামড়ে ধরে জলে গিয়ে নামল।
তা দেখে শিয়াল নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল।

টুনটুনি আর রাজার কথা | উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী


রাজার বাগানের কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজার সিন্দুকের টাকা রোদে শুকোতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তার একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল।
টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এসে রেখে দিলে, আর ভাবলে, `ঈস্! আমি কত বড়োলোক হয়ে গেছি। রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরে সেই ধন আছে!' তারপর থেকে সে কেবলি এই কথাই ভাবে, আর বলে---
রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরে সে ধন আছে!
রাজা সভায় বসে সে কথা শুনতে পেয়ে জিগগেস করলেন, `হ্যাঁরে! পাখিটা কি বলছে রে?'
সকলে হাত জোড় করে বললে, `মহারাজ, পাখি বলছে, `আপনার ঘরে যে ধন আছে, ওর ঘরেও নাকি সেই ধন আছে!' শুনে রাজা খিল্‌খিল্ করে হেসে বললেন, `দেখ তো ওর বাসায় কি আছে।'
তারা দেখে এসে বললে, `মহারাজ, বাসায় একটি টাকা আছে।'
শুনে রাজা বললেন, `সে তো আমারই টাকা, নিয়ে আয় সেটা।'
তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা থেকে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা আর কি করে, সে মনের দূঃখে বলতে লাগল---
রাজা বড় ধনে কাতর
টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর!
শুনে রাজা আবার হেসে বললেন, `পাখিটা বড় ঠ্যাঁটা রে! যা, ওর টাকা ওকে ফিরিয়ে দিয়ে আয়।'
টাকা ফিরে পেয়ে টুনির বড় আনন্দ হয়েছে। তখন সে বলছে---
রাজা ভারি ভয় পেল
টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল
রাজা জিগগেস করলেন, `আবার কি বলছে রে?'
সভার লোকেরা বললে, `বলছে মহারাজ নাকি বড্ড ভয় পেয়েছেন, তাই ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।'
শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, `কি এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে ভেজে খাই!'
যেই বলা অমনি লোক গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে! রাজা তাকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, `এই ভেজে আজ আমাকে খেতে দিতে হবে!'
বলে তো রাজা চলে এসেছেন, আর রানিরা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।
একজন বললেন, `কি সুন্দর পাখি! আমার হাতে দাও তে একবার দেখি।' বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা দেখে আবার আর একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি ফস্কে উড়ে পালাল!
কি সর্ব্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রক্ষা থাকবে ন!
এমনি করে তারা দুঃখ করছেন, এমন সময় একটা ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থ্প-থ্প করে যাচ্ছে। সাত রানী তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, `চুপ-চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে! এইটেকে ভেজে দি, আর রাজামশায় খেয়ে ভাববেন টুনটুনিই খেয়েছেন।'
সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে দিলে তিনি ভারি খুশি হলেন।
তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, `এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।'
অমনি টুনি বলছে---
বড় মজা, বড় মজা,
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!
শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন! তখন তিনি থুতু ফেলেন, ওয়াক তোলেন, মুখ ধোন, আর কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, `সাত রানীর নাক কেটে ফেল।'
অমনি জল্লাদ গিয়ে সাত রানীর নাক কেটে ফেললে।
তা দেখে টুনটুনি বললে---
এক টুনিতে টুনটুনাল
সাত রানীর নাক কাটাল!
তখ্ন রাজা বললেন, `আন বেটাকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!'
টুনটুনিকে ধরে আনলে।
রাজা বললেন, `আন জল!'
জল এল। রাজা মুখ ভরে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেললেন।
সবাই বলে, `এবার পাখি জব্দ!'
বলতে বলতেই রাজামশাই ভোক্ করে একটা ঢেকুর তুললেন।
সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই ঢেকুরের সঙ্গে বেরিয়ে এসে উড়ে পালাল।
রাজা বললেন, `গেল, গেল! ধর, ধর!' অমনি দুশো লোক ছুটে গিয়ে আবার বেচারাকে ধরে আনল।
তারপর আবার জল নিয়ে এল, আর সিপাই এসে তলোয়ার নিয়ে রাজামশায়ের কাছে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে।
এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন, যাতে টুনটুনি আর বেরুতে না পারে। সে বেচারা পেটের ভেতর গিয়ে ভয়ানক ছটপট করতে লাগল!
খানিক বাদে রাজামশাই নাক সিঁটকিয়ে বললেন, `ওয়াক!' অমনি টুনটুনিকে সুদ্ধ তার পেটের ভিতরেও সকল জিনিস বেরিয়ে এল।
সবাই বললে, `সিপাই, সিপাই! মারো, মারো! পালালো!'
সিপাই তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে গিয়ে পড়্ল।
রাজামশাই তো ভয়ানক চ্যাঁচালেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক চ্যাঁচাতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচাল।
টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল---
নাক কাটা রাজা রে
দেখ তো কেমন সাজা রে!
বলেই সে উড়ে সে দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এসে দেখল, খালি বাসা পড়ে আছে।

Monday, June 4, 2012

পথহারা | কাজী নজরুল ইসলাম

বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে,
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে,
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে;
পথের পথিক পথেই বসে থাকে,
জানে না সে কে তাহারে চাবে।
উদাস পথিক ভাবে।

বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে,
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি,
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি,
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি,
একলা থাকার গানখানি সে গাবে -
উদাস পথিক ভাবে।

হঠাৎ তাহার পথের রেখা হারায়
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়,
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায়
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে
উদাস পথিক ভাবে।

Friday, June 1, 2012

কোন দেশেতে | সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত



কোন্‌ দেশেতে তরুলতা
সকল দেশের চাইতে শ্যামল?
কোন্‌ দেশেতে চল্‌তে গেলেই
দল্‌তে হয় রে দূর্বা কোমল?
কোথায় ফলে সোনার ফসল,
সোনার কমল ফোটে রে ?
সে আমাদের বাংলাদেশ,
আমাদেরই বাংলা রে!

কোথায় ডাকে দোয়েল-শ্যামা
ফিঙে নাচে গাছে গাছে?
কোথায় জলে মরাল চলে
মরালী তার পাছে পাছে;

বাবুই কোথা বাসা বোনে,
চাতক বারি যাচে রে?
সে আমাদের বাংলাদেশ
আমাদেরই বাংলা রে!

পাখির মত | আল মাহমুদ

আম্মা বলেন, পড় রে সোনা
আব্বা বলেন, মন দে ;
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।

আমার কেবল ইচ্ছে জাগে
নদীর কাছে থাকতে
বকুলডালে লুকিয়ে থেকে
পাখির মতো ডাকতে।

সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলীর কূলটায়
দুধভরা ঐ চাঁদের বাটি
ফেরেস্তারা উল্টায়।

তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেমন করে উড়বো
কেমন করে শহর ছেড়ে
সবুজ গাঁয়ে ঘুরবো।

তোমরা যখন শিখছো পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য,
আমি না হয় পাখিই হব
পাখির মত বন্য।

প্রকাশ কৃতজ্ঞতা : যাযাবর-নামা/ফারজানা মাহবুবা

মামার বাড়ি | জসীম উদ্দিন

আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা,
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
মামার বাড়ি পদ্মপুকুর
গলায় গলায় জল,
এপার হতে ওপার গিয়ে
নাচে ঢেউয়ের দল।
দিনে সেথায় ঘুমিয়ে থাকে
লাল শালুকের ফুল,
রাতের বেলা চাঁদের সনে
হেসে না পায় কূল।
আম-কাঁঠালের বনের ধারে
মামা-বাড়ির ঘর,
আকাশ হতে জোছনা-কুসুম
ঝরে মাথার ‘পর।
রাতের বেলা জোনাক জ্বলে
বাঁশ-বাগানের ছায়,
শিমুল গাছের শাখায় বসে
ভোরের পাখি গায়।
ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের শাখায় উঠি
রঙিন করি মুখ।
কাঁদি-ভরা খেজুর গাছে
পাকা খেজুর দোলে
ছেলেমেয়ে, আয় ছুটে যাই
মামার দেশে চলে।

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ