প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Sunday, September 23, 2012

অতঃপর আমি | জিয়া রহমান




তোমার সমৃদ্ধ পাঁজর হতে ছুড়ে দেয়া ভালবাসা
আমি তোমার দুরভিসন্ধি চক্রান্ত ভেবেছিলাম
আমার একঘেয়ে একপেশে জীবনের দিকে তাক করা
ভালবাসার সনির্বন্ধতায় কপট দৃষ্টি ফেলেছিলাম
তোমার ভালবাসা তাই অধরাই থেকে গেছে ।

আমি স্বস্তির চাদরে অনুভূতিকে ঘুম পাড়িয়েছি
তোমার ভালবাসাকে ছড়িয়ে দিয়েছি
প্রথমত: চিরশূণ্য বাতাসে
ভেবেছি, বাতাসে বাতাসে তোমার স্পর্শ নিয়ে ঘুরে বেড়াব
বোঝাবো তোমাকে, ভালবাসা ছোঁয়া যায় না
এরপর তোমার ভালবাসাকে ছুড়েছি-
সমুদ্রের দিকে, অরণ্যের দিকে, নক্ষত্রের দিকে ।
একদিন সবিস্ময়ে হতাশ ও অবসন্ন হলাম !
দেখি, সবাই তোমার ভালবাসার অতি-অনাথ ভিক্ষুক হয়ে আছে !!
তোমার সামান্য মুখরতাহীন অলস প্রহরে
মাঝপথে আটকে দেয় সমুদ্র তার বুকের ঢেউ
অরণ্য মেলে ধরে না সবুজ আর
নক্ষত্রেরা অজ্ঞাতে হারিয়ে যায় ক্লান্ত শরীরে ।

অত:পর আমি, ভালবাসার নির্জলা তাপস হয়ে যাই ।
ছুড়ে দেয়া ভালবাসা খুঁজে তছনছ করি
পৃথিবীর মত সহস্র কোটি ব্রহ্মাণ্ড,
আমি ভালবাসা ছুঁতে পারি না ।। 



আকাশে আজ মেঘ চেপেছে | জিয়া রহমান



আকাশে আজ মেঘ চেপেছে
আশ্বিণীঝড়ের পূর্বাবাসে,
তাই বলে কি বাতাস লাগে
পথের ধারের দূর্বাঘাসে ?

মেঘের 'পরে মেঘ করেছে
সংসারের ঐ প্রবল বায়ে,
মেঘ কাটাতে ঝড় ঠেকাতে
কাটছে সময় প্রবল ঘা'য়ে ।। 






অন্তহীনের পথচলা | মিতা জাহান


পথে নেই কেউ !
চলেছে পথিকহীন পথে
দূর কোনো অজানায়
যাবে সে কোথা
অন্তহীন পথে.......
আসবে শুভ দিন
মিটাবে সে আশা
মনে মনে ভাবা
সবই যেন কল্পনার
চিত্রপটে আকা !
ভেবে ভেবে চিন্তা রেখা
পরে ছিল তার কপালে
এই বুঝি তার শেষ হলো আজ
অন্তহীনের পথচলা !



Sunday, September 16, 2012

বালিকা বেলা | সাবরিনা সিরাজী তিতির

বালিকা বেলা বড্ড টানে
নিয়ে চায় গভীর থেকে গভীরে
সে এক রঙিন দিনে হাসির মেলা

রেশমি চুড়ি রিনঝিন ,নূপুরের রুমঝুম
মাথায় গোলাপি ফিতে , কোঁচড় ভরা কৈশোর
কান পাতি সেই দূরে
গুনগুন করে ওঠে খেলার মাঠ ,মন খারাপের জানালা ,

অভিমানে ভিজে যাওয়া রুমাল মুখ গোঁজে
দস্যি কিশোরের বুক পকেটে
গোপন নালিশের রোদে উষ্ণ চিরকুট
আহা ! কি ভালোলাগায় ডুবে যাওয়া প্রহর

আমি আর আমার মিষ্টি বালিকা বেলা !

১২.০৯.১২

ভালবাসায় কিছু ভুল | জিয়া রহমান

দিনের যে অশিষ্ট আলোয়
তোমাকে দেখেছি কয়েকবার,
তাকে আজ ঘৃণা করতে শিখেছি।
আমার সময়েরা আজ অন্ধকার অধ্যুষিত,
তার রঙ সবুজ!
অন্ধকার সত্যের মতই সত্যি
দুবিনীত অথচ বঞ্চনা করে না।
ঐ যে নীল শার্টের মাঝের বোতামটা
এদিন যা বিসর্জিত ছিল তোমার খোঁপায়
লাগানো হয়নি আজও,
অনিচ্ছাকৃত নয়, হয়ত ভুল করেই।

সবিশেষ আরো অনেক ভুল,
প্রত্যহ অনেক ভুল হয়ে যায়!

ভালবাসায়
      কিছু ভুল থাকতে হয়,
      নইলে শুদ্ধ হয় না ভালবাসা।
ভালবাসায়
      কিছু ভুল করতে হয়,
      আত্মঘাতের সর্বনাশা ।।

বেশ তো আছি | মিতা জাহান



নির্জন একাকী বসে আছি নিরিবিলি,
কিছু চাওয়া কিছু পাওয়া
সবই যেন অতৃপ্ত বাসনা,
হেটে চলি একাকী
পথে নাহি মোর সঙ্গী
যেতে যেতে খানিকটা
উকি মারে কেউকেটা,
ভাবি বসে আনমনে
কেউ যদি হেসে বলে
কি রে কেমন আছিস ?
আমি বলি বেশ তো আছি !!


Friday, September 14, 2012

আমার যতো ইচ্ছে | মালিহা

কিছুই ভালো লাগে না, মনে হয় লেখাপড়ার নামে সবাই আমাকে বন্দি করে রেখেছে। মা বলেন, ‘জন্মের পর ১২ বছর কেটেছে তোমার হাসতে খেলতে আনন্দ করতে করতে। সামনের ১২টা বছর তোমাকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। ভালো ভালো রেজাল্ট আনতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। ভালো পদবিতে চাকরি করতে হবে।’ আমার শুধু ইচ্ছে করে একটা মাঠে একা একা দৌড়াতে—ঘাসে ভরা সবুজ মাঠে। চারপাশে গাছ আর গাছ। মাঠের প্রান্তজুড়ে থাকবে সবুজ আর অরণ্য। আর মাঠের মাঝখানে ছনের বাড়ি। বাড়িটা ঘিরে ফুলের বাগান। বাগানের পাশে একটা পাকা দোতলা বাড়ি থাকবে। সেই বাড়ির প্রতিটি দেয়ালে থাকবে আলমারি বোঝাই বই, বই আর বই। আমি যখন ইচ্ছে তখনই পড়ব। কেউ আমায় বাঁকা চোখে দেখবে না। কেউ ধমক দিয়ে আমার হাত থেকে বই কেড়ে নেবে না। রেগে রেগে কেউ আমায় বলবে না—যাও, স্কুলের পড়া পড়তে বসো।
বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়বে, আমি বৃষ্টির পানিতে ভিজবো। কিছুক্ষণ একা একা বৃষ্টির গান গাইবো আর ভিজবো। পরে অন্যদেরও সঙ্গে নেবো। ভালো হয় আমার সঙ্গে অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা ভিজতে এলে। সবাই আমায় মালিহাপু বলে ডাকবে। ওদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা খেলা খেলবো। মাঝেমধ্যে ওরা সবাই আমায় দূর থেকে পানি ছিটিয়ে দেবে, আমি আনন্দ পাবো। পশু-পাখি পুষতে খুব ইচ্ছা করে, যেমন—ব্লাড হাউন্ড, অ্যালসেশিয়ান, পুডল কুকুর, অনেক লোমে ভরা সাদা বড় বিড়াল আর ছোট কালো, নীল বিড়াল, যত রকম পাখি আছে—সব আমি চাই। সবগুলো থাকবে জোড়ায় জোড়ায়। আরেকটা পাখি চাই, যার কোনো জোড়া নেই। সেটা হলো ফিনিক্স।
বাগানে থাকবে অনেক প্রজাপতি। ফুল আর বাগানটা প্রজাপতিদের জন্য। পাশে থাকবে একটা বড় দীঘি আর সেই দীঘিতে রক্তকমল আর সাদা শাপলা ফুটবে। দীঘির পাড় ঘিরে থাকবে গাছের সারি। আমি পাড়ে বসবো আর চারপাশ দেখবো। দোতলা বাড়িটার একটা বড় রুমে থাকবে গিটার, বাঁশি, হারমোনিয়াম, ড্রাম, সেতার আর সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র। যারা বাজাতে চায় তারা আসবে এখানে। ওরা বাজাবে আমি শুনবো। আমি গিটার বাজাব। বাঁশি বাজানো শিখবো। একটা ঘরে আমার প্রিয়-অপ্রিয় গানের সিডি, ক্যাসেট, সিডি প্লেয়ার ওয়াকম্যান ইত্যাদি থাকবে। একটা ঘরে থাকবে অনেক রকম পুতুল, ছোট-বড় সাদা লাল কালো—সব রকমের পুতুল।
ছাদের ওপরে আর বাংলো বাড়ির সামনে দোলনা থাকবে। সেখানে বসে গান শুনবো, বই পড়বো। আর বৃষ্টির সময় ছাদে বসে বৃষ্টির রুমঝুম শব্দ শুনবো। মাঝেমধ্যে মনে হয়, দীঘির ওপর যদি একটা ঝুলন্ত দোলনা থাকত। দোল খেতে খেতে যদি দোলনা উল্টে যায় তাহলে তো পানিতে পড়ে যাবো। আমি তো সাঁতার জানি না। সাঁতার শিখতে হবে আমায়। শীতের সময় ছাড়া সব সময় দীঘিতে নেমে গোসল করবো। কী মজা! এত বড় জায়গায় আমি একা থাকবো।
বৃষ্টির সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আসবে ভিজতে। বইপ্রিয় মানুষরা আসবে বই পড়তে আর গানপ্রিয় মানুষ আসবে গান গাইতে। সবাই থাকবে দোতলা বাড়িটাতে আর আমি থাকবো ছনের ঘরে। আমার কারও সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে না। রবিনসন ক্রুসো নামে এক নাবিক একাকী কাটিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছে করে সেই রবিনসন ক্রুসো হয়ে যেতে ।
গল্প করতে ভালো লাগে। গল্প নিশ্চই একা করবো না। থাক না, মানুষের সব ইচ্ছা পূরণের দরকার নেই। আমার গান গাইতে নাচ করতে ইচ্ছে করে, ছবি আঁকতে মন চায়। কিছুই করতে পারি না। তখন নিজেকে অলস মনে হয়। মা অনেক বই কিনে দেন। ভালো লাগে লাবণ্যের বাসায় গেলে, দোলনায় চড়তে পারি। আমি কার্টুন আঁকতে পারি। এগুলো সব ভালো লাগে। যদিও তাল ঠিক থাকে না, তবুও সারাক্ষণ নাচতে থাকি।
আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোই লাগে। আমরা মারামারি করি। ওদের নিয়ে গল্প লিখি। ওরা পড়ে ভুল পেলে আমায় ধরে উত্তমমধ্যম দেয়। এটাও ভালো লাগে। স্কুলের ক্যাম্পের কথা খুব মনে পড়ে। তখন সবাই মিলে তাঁবু বানিয়েছি, কী যে মজা হয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত টিচাররাসহ গল্প করেছি।
একবার লাবণ্য আর আমি লিফটে আটকে পড়েছিলাম। খুব ভয় পেয়েছিলাম সেদিন। ভূতের ভয় হয়েছিল। লাবণ্য হাসতে হাসতে কাঁধের ওপর ঢলে পড়েছিল। তখন ওকে মিসেস ড্রাকুলা মনে হচ্ছিল। ছোট বোন ফারিহার সঙ্গে অনেক দুষ্টামি করি। বিদ্যুত্ চলে গেলে অন্ধ ঘরে ওর সঙ্গে লুকোচুরি খেলা খেলি। খুব ভালো লাগে। এই সব ছেড়ে কোথায় যাব? লাবণ্য, আদিবা, তাসনুবা, নাতাসা, সুস্মিতা, যূথি, মিলা, ঋত,ু মৌমি ওদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ফারিহাটা বোন হয়েছে বলে অনেক খুশি হয়েছি। এখন কীভাবে ওকে ছেড়ে চলে যাব? তবুও বুঝি লেখাপড়া করতেই হবে। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে লেখাপড়া করতেই হবে। স্বপ্নগুলো মনের মাঝে আছে। এগুলো পরে পূরণ করবো।

সূত্র: আমার দেশ/এক্কাদোক্কা

রংধনু | হোসেন মাহমুদ

বৃষ্টি ধোয়া শেষ বিকেলে
নানা রকম রং মিশেলে
দূর আকাশে উঠল হেসে
রংধনুটা অবশেষে।

ঐ যে দেখ ঐ দেখা যায়
আঙুল তুলে দিব্যি দেখায়
আকাশপটে রংবাহারি
রংধনুটা মিষ্টি ভারি।

মন ভরানো সাতটি রং
আদর কাড়া মোহন ঢং
মেঘ না থাকা আকাশটায়
রংধনুটা রং ছড়ায়।

ছেলে বুড়ো সবাই মিলে
চোখ জুড়ানো রং মিছিলে
মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়
রংধনুটার রঙের জয়।

এইতো নদী | ফারুক হাসান

এই তো নদী গাঁয়ের পথে
এঁকে বেঁকে যায়
মাল্লা মাঝি মধুর সুরে
ভাটিয়ালি গায়।

কী অপরূপ রূপের মায়ায়
দেখতে ছুটে এসো
এমন দৃশ্য দেখবে যদি
রূপকে ভালোবেসো।

রূপের নদী আলোর ধারে
ঢেউ এসে রোজ ঝাপটা মারে
গাঁয়ের বধূ ঝলকে চলে
কী বলিতে চায়—
সেই হারিয়ে যায়।

এই তো নদী নিরবধি
কোন যে অচিনপুরে
সুদূর কালের সাক্ষী হয়ে
ছুটছে কেবল দূরে।

সূত্র : আমার দেশ

রংধনু | ফাতিহা জামান অদ্রিকা

রংধনুর সাতটি রং
দেখো ভাই দেখো
সাত রঙের মিল দেখে
মিলে থাকা শেখো।

রঙে রঙে কত মেলা
নীল আকাশে ভাসছে।
তাই দেখে মন আমার
আজ খুশিতে নাচছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
প্রথম শ্রেণী, রোল-২৭

উদ্ভিদের জন্ম ও মৃত্যুর কথা | আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসু

মৃত্তিকার নীচে অনেক দিন বীজ লুকাইয়া থাকে। মাসের পর মাস এইরূপ কাটিয়া গেল। শীতের পর বসন্ত আসিল। তারপর বর্ষার আরম্ভে দুই-এক দিন বৃষ্টি হইল। এখন আর লুকাইয়া থাকিবার প্রয়োজন নাই। বাহির হইতে কে যেন শিশুকে ডাকিয়া বলিতেছে, আর ঘুমাইয়ো না, উপরে উঠিয়া আইস, সূর্যের আলো দেখিবে। আস্তে আস্তে বীজের ঢাকনাটি খসিয়া পড়িল, দুইটি কোমল পাতার মধ্য হইতে অঙ্কুর বাহির হইল। অঙ্কুরের এক অংশ মাটি ভেদ করয়া উপরে উঠিল। তোমরা কি অঙ্কুর উঠিতে দেখিয়াছ? মনে হয় শিশুটি যেন ছোটো মাথা তুলিয়া আশ্চর্যের সহিত নতুন দেশ দেখিতেছে।
গাছের অঙ্কুর বাহির হইলে যে অংশ মাটির ভিতর প্রবেশ করে তাহার নাম মূল। আর যে অংশ উপরের দিকে বাহিরে থাকে, তাহাকে বলে কাণ্ড। সকল গাছের ‘মূল’ আর ‘কাণ্ড’ এই দুই ভাগ দেখিবে। এই এক আশ্চর্য কথা, গাছকে যেরূপেই রাখ, মূল নীচের দিকে ও কাণ্ড উপরের দিকে যাইবে। একটি টবে গাছ ছিল। পরীক্ষা করিবার জন্য কয়েকদিন ধরিয়া টবটিকে উল্টা করিয়া ঝুলাইয়া রাখিলাম। গাছের মাথা নীচের দিকে ঝুলিয়া রহিল। আর শিকড় উপরের দিকে রহিল। দুই-এক দিন পরে দেখিতে পাইলাম যে, গাছ যেন টের পাইয়াছে। তাহার সব ডালগুলি বাঁকা হইয়া উপরের দিকে উঠিল ও মূলটি ঘুরিয়া নীচের দিকে নামিয়া গেল। তোমরা অনেকে শীতকালে অনেক বার মূলা কাটিয়া শয়তা করিয়া থাকিবে। দেখিয়াছ, প্রথমে শয়তার পাতাগুলি ও ফুলেল নীচের দিকে থাকে। কিছুদিন পরে দেখিতে পাওয়া যায়, পাতা ও ফুলগুলি উপর দিকে উঠিয়াছে।
আমরা যেইরূপ আহার করি, গাছও সেইরূপ আহার করে। আমাদের দাঁত আছে, আমরা কঠিন জিনিষ খাইতে পারি। ছোট ছোট শিশুদের দাঁত নাই, তাহারা কেবল দুধ খায়। গাছেও দাঁত নাই, সুতরাং তাহারা কেবল জলীয় দ্রব্য কিংবা বাতাস হইতে আহার গ্রহণ করিতে থাকে। চিনিতে জল ঢালিলে চিনি গলিয়া যায়। মাটিতে জল ঢালিলে মাটির ভিতরের অনেক জিনিষ গলিয়া যায়। গাছ সেই সব জিনিষ আহার করে। গাছের গোড়ায় জল না দিলে গাছের আহার বন্ধ হইয়া যায় ও গাছ মরিয়া যায়। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া অতি ক্ষুদ্র-পদার্থ দেখিতে পাওয়া যায়। গাছের ডাল কিংবা মূল এই যন্ত্র দিয়া পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে, গাছের শরীরে রস প্রবেশ করে। এছাড়া গাছের পাতা বাতাস হইতে আহার সংগ্রহ করে। পাতার মধ্যে অনেকগুলি ছোট ছোট ঠোঁট দেখা যায়। যখন আহার করিবার আবশ্যক হয় না তখন ঠোঁট বুজিয়া যায়। আমরা যখন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি তখন প্রশ্বাসের সঙ্গে এক প্রকার বিষাক্ত বায়ু বাহির হইয়া যায়। তাহাকে অঙ্গারক বায়ু বলে। ইহা যদি পৃথিবীতে জমিতে থাকে তবে সকল জীবজন্তু অল্পদিনের মধ্যে এই বিষাক্ত বায়ু গ্রহণ করিয়া মরিয়া যাইতে পারে। বিধাতার করুণার কথা ভাবিয়া দেখ। যাহা জীবজন্তুর পক্ষে বিষ, গাছ তাহাই আহার করিয়া করিয়া বাতাস পরিষ্কার করিয়া দেয়। গাছের পাতার উপর যখন সূর্যের আলোক পড়ে, তখন পাতাগুলি সূর্যের তেজের সাহায্যে অঙ্গারক বায়ু হইতে অঙ্গার বাহির করিয়া লয়।
এই অঙ্গার গাছের শরীরে প্রবেশ করিয়া গাছকে বাড়াইতে থাকে। গাছেরা আলো চায়, আলো না হইলে ইহারা বাঁচিতে পারে না। গাছের সর্বপ্রধান চেষ্টা, কি করিয়া একটু আলো পাইবে। যদি জানালার কাছে টবে গাছ রাখ, তবে দেখিবে সমস্ত ডালগুলি অন্ধকার দিক ছাড়িয়া আলোর দিকে যাইতেছে। বনে যাইয়া দেখিবে গাছগুলি তাড়াতাড়ি মাথা তুলিয়া কে আগে আলোক পাইতে পারে, তাহার চেষ্টা করিতেছে। লতাগুলি ছায়াতে পড়িয়া থাকিলে আলোর অভাবে মরিয়া যাইবে। এই জন্য তাহারা গাছ জড়াইয়া ধরিয়া উপরের দিকে উঠিতে থাকে। 
সূত্র: আমার দেশ

বঙ্গে মুসলিম সংস্কৃতি | সৈয়দ মুজতবা আলী

আজ যদি শুধুমাত্র সংস্কৃত পুস্তকপত্র থেকে ভারতবর্ষের ইতিহাস লিখতে হয় তাহলে এদেশে মুসলমান ধর্ম আদৌ প্রবেশ করেছিল কি না সে নিয়ে বিলক্ষণ তর্কের অবকাশ থাকবে। অথচ আমরা ভালো করেই জানি, মুসলমান-আগমনের পরও প্রচুর সংস্কৃত পুস্তক লেখা হয়েছে, ব্রাহ্মণপণ্ডিতগণ রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষকতা পাননি সত্য, কিন্তু তাদের ব্রহ্মোত্তর দেবোত্তর জমিজমার উপর হস্তক্ষেপ না হওয়ার ফলে তাদের ঐতিহ্যগত বিদ্যাচর্চা বিশেষ মন্দীভূত হয়নি। কিন্তু এইসব পণ্ডিতগণ পার্শ্ববর্তী মুসলমানদের সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অচেতন থেকেই আপন আপন লেখনি সঞ্চালনা করেছেন।১ অল্পোপনিষদ্ জাতীয় দু-চারখানা পুস্তক নিতান্তই প্রক্ষিপ্ত। বরঞ্চ এরা সত্যানুসন্ধানকারীকে পথভ্রষ্ট করে।
এ এক চরম বিস্ময়ের বস্তু। দশম, একাদশ শতাব্দীতে গজনীর মাহমুদ বাদশার সভাপতিত্বে আবু-র-বইহান মুহম্মদ আল বীরুনী ভারতবর্ষ সম্বন্ধে তাঁর প্রামাণিক পুস্তকে একাধিকবার সবিনয়ে বলেছেন, ‘আমরা (অর্থাত্ আরবীতে) যাঁরা জ্ঞানচর্চা করি, দার্শনিক চিন্তা আমাদের মজ্জাগত নয়। দর্শন নির্মাণ করতে পারে একমাত্র গ্রিক ও ভারতীয়রা।’
সেই ষড়দর্শননির্মাতা আর্য মনীষীগণের ঐতিহ্যগর্বিত পুত্রপৌত্রেরা মুসলমান-আগমনের পর সাত শত বত্সর ধরে আপন আপন চতুষ্পাঠীতে দর্শনচর্চা করলেন, কিন্তু পার্শ্ববর্তী গ্রামের মাদ্রাসায় ঐ সাত শত বত্সর ধরে যে আরবীতে প্লাতো থেকে আরম্ভ করে নিওপ্লাতনিজম তথা কিন্দী, ফারাবী, বু আলীসিনা (লাতিনে আভিসেনা), অল-গজ্জালী২ (লাতিনে অল-গাজেল), আবু রুশদ্ (লাতিনে আভেরস) ইত্যাদি মনীষীগণের দর্শনচর্চা হল তার কোন সন্ধান পেলেন না। এবং মুসলমান মৌলানারাও কম গাফিলী করলেন না। যে মৌলানা অমুসলমান প্লাতো-আরিস্ততলের দর্শনচর্চায় সোত্সাহে সানন্দে জীবন কাটালেন তিনি একেবারের তরেও সন্ধান করলেন না, পাশের চতুষ্পাঠীতে কিসের চর্চা হচ্ছে। তিনিও জানতে পেলেন না যে, তিনি প্লাতোর আদর্শবাদ দৃঢ়ভূমিতে নির্মাণ করার জন্য যেসব যুক্তি আকাশ-পাতাল থেকে আহরণ করেছেন তাঁর পাশের চতুষ্পাঠীতেই হিন্দু দার্শনিক শঙ্করাচার্যের আদর্শবাদ সমর্থনার্থে সেইসব যুক্তিই খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তিনি ‘গুলাত’ নাস্তিকদের জড়বাদ যেভাবে খণ্ডন করছেন, ব্রাহ্মণও চার্বাকের নাস্তিকতা সেইভাবেই খণ্ডন করছেন। এবং সবচেয়ে পরমাশ্চর্য, তিনি যে চরক-সুশ্রুতের আরবি অনুবাদে পুষ্ট বু আলীসিনার চিকিত্সাশাস্ত্র-‘য়ুনানী’ নামে প্রচলিত (কারণ তার গোড়াপত্তন গ্রিক [আইওনিয়ান=‘য়ুনানী’] চিকিত্সাশাস্ত্রের উপর)-আপন মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন, সুলতান বাদশার চিকিত্সার্থে প্রয়োগ করছেন, সেই চরক-সুশ্রুতের মূল পাশের টোলে পড়ানো হচ্ছে। সিনা উল্লিখিত যে-ভেষজ কি, তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না, কিংবা সিনা বলেছেন, ফলানা ওষুধিবনস্পতি এদেশে (অর্থাত্ আরবে) জন্মে না, সেগুলো যে তাঁর বাড়ির পিছনে আঁস্তাকুড়ে গজাচ্ছে তারও সন্ধান তিনি পেলেন না। কিঞ্চিত্ কল্পনাবিলাস করলে, এ পরিস্থিতিও অনুমান করা অসম্ভব নয় যে মৌলানার বেগমসায়েবা সিনা-উল্লিখিত কোন শাক তাঁকে পাক করে খাওয়ালেন, আর তিনি সেটি চিনতেই পারলেন না।
পক্ষান্তরে ভারতীয় আয়ুর্বেদ মুসলমানদের ইউনানী চিকিত্সাশাস্ত্র থেকে বিশেষ কিছু নিয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এই দুস্তর মরুভূমির মাঝখানে মাত্র একটি লোক দেখতে পাই। আওরঙ্গজেবের অগ্রজ যুবরাজ মুহম্মদ দারাশীকূহ্। ইনিই সর্বপ্রথম দুই ধর্মের সমন্বয় সম্বন্ধে বহুতর পুস্তক লেখেন। তার অন্যতম মজমা-উল্-বহরেন, অর্থাত্ দ্বিসিন্ধুসঙ্গম। দারাশীকূহ্ বহু বত্সর
অনাদৃত থাকার পর তাঁর সম্বন্ধে প্রামাণিক গবেষণা বিশ্বভারতীতেই হয়। শ্রীযুত বিক্রমজিত্ হস্রত্ ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দারাশীকূহ্ : লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্কস নামক একখানি অত্যুত্তম গ্রন্থ লেখেন এবং বিশ্বভারতী কর্তৃক সেটি প্রকাশিত হয়। প্রয়োজনমত আমরা এই পুস্তকখানি সদ্ব্যবহার করব।
আরও তিন শত বত্সর পর প্রাতঃস্মরণীয় রাজা রামমোহন রায় ফার্সীতে রচনা করেন তাঁর সর্বপ্রথম পুস্তক, ‘তুহাফতু অল্-মূওয়াহিহদীন:‘একেশ্বরবাদীদের প্রতি উত্সর্গ’। রাজা খ্রিস্টধর্মের সঙ্গেও সুপরিচিত ছিলেন বলে তাঁর পুস্তককে ‘ত্রিরত্ন’ধারী বা ত্রিপিটক বললে অত্যুক্তি হয় না। ব্রাহ্মধর্মের উত্পত্তি সম্বন্ধে যাঁরা সামান্যতম অনুসন্ধান করেছেন তাঁরাই জানেন রাজার শিক্ষাদীক্ষা ইসলাম ও মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতির নিকট কতখানি ঋণী এবং পরবর্তী জীবনে যদিও তিনি উপনিষদের উপর তাঁর ধর্মসংস্কারসৌধের দৃঢ়ভূমি নির্মাণ করেছিলেন তবু শেষদিন পর্যন্ত ইসলামের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার কণামাত্র হ্রাস পায়নি। প্রয়োজনমত আমরা তাঁর রচনাবলীরও সদ্ব্যবহার করব।
প্রায় ছশ’ বত্সর ধরে এদেশে ফার্সীচর্চা হল। হিন্দুরা না হয় বিদেশাগত ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রতি কৌতূহল না দেখাতে পারেন, কিন্তু যাদের রাজ্যচালনা করতে হয়েছে তাদের বাধ্য হয়ে এদেশের ভাষা রীতিনীতি অল্পবিস্তর শিখতে হয়েছে। উত্তম সরকারী কর্ম পাবার জন্য বহু হিন্দুও ফার্সী শিখেছিলেন। মাত্র একটি উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট হবে : এদেশে বহু হিন্দুর পদবী মুনশী। আমরা বাঙলায় বলি, লোকটির ভাষায় মুন্সিয়ানা বা মুন্শীয়ানা আছে, অর্থাত্ সে নাগরিক বিদগ্ধ চতুর (স্কিলফুল) ভাষা লেখে। এর থেকেই বোঝা যায়, কতখানি ফার্সী জানা থাকলে তবে মানুষ বিদেশী ভাষায় এ রকম একটা উপাধি পায়। তুলনা দিয়ে বলা যেতে পারে : আমরা প্রচুর ইংরেজি চর্চা করেছি, কিন্তু ইংরেজ মুনশী-জাতীয় কোনো উপাধি আমাদের কাউকে দেয়নি-বরঞ্চ আমাদের ‘ব্যাবু-ইংলিশ’ নিয়ে ব্যঙ্গই করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সবিস্তর আলোচনা পরে হবে, উপস্থিত এইটুকু উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই মুন্শী-শ্রেণীর যাঁরা উত্তম ফার্সী শিখেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই কায়স্থ, সংস্কৃতের পটভূমি তাঁদের ছিল না, কাজেই উভয় ধর্মশাস্ত্রের সম্মেলন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। উপরন্তু এঁরা ফার্সী শিখেছিলেন অর্থোপার্জনের জন্য—জ্ঞানান্বেষণে নয়। তুলনা দিয়ে বলা যেতে পারে, আমরা প্রায় দুই শত বত্সর ইংরেজি বিদ্যাভ্যাস করেছি বটে, তথাপি খ্রিস্টধর্মগ্রন্থ বাঙলায় অনুবাদ করার প্রয়োজন অতি অল্পই অনুভব করেছি।
শ্রীচৈতন্যদেব নাকি ইসলামের সঙ্গে সুপরিচিত ছিলেন। কথিত আছে বৃন্দাবন থেকে সশিষ্য বাংলাদেশে আসার সময় পথিমধ্যে এক মোল্লার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই মোল্লা নাকি তাঁকে প্রশ্ন করেন, তিনি তাঁর শিষ্যদের ভ্রান্ত ধর্মপথে চালনা করছেন কেন? শ্রীচৈতন্যদেব নাকি তখন মুসলমান শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে তিনি ভ্রান্ত ধর্মপ্রচার করছেন না। মুসলমান ধর্মে বলা হয়, যে লোক আর্তের সেবা করে, মিথ্যাচরণ বর্জন করে সত্পথে চলে—অর্থাত্ কুরান-শরীফ-বর্ণিত নীতিপথে চলে—তাকে ‘পয়গম্বরহীন’ মুসলমান বলা যেতে পারে, হজরত্ মুহম্মদকে পয়গম্বররূপে স্বীকার করেনি বলেই সে ধর্মহীন নয়। (আমরা এস্থলে ‘কাফির’ না বলে ‘ধর্মহীন’ শব্দ ইচ্ছা করেই ব্যবহার করছি; পরে এর বিস্তৃত আলোচনায় প্রয়োজন হবে। অতএব অনুমান করা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয় যে, বোধ হয় চৈতন্যদেবের শর্ত উদার প্রকৃতিবান ব্যক্তির পক্ষে হজরত্ মুহম্মদকে অন্যতম মহাপরুষ বা পয়গম্বররূপেও স্বীকার করে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। বস্তুত সে যুগে এবং এ যুগেও বহু হিন্দু সজ্জন মহাপুরুষ মুহম্মদকে আল্লার প্রেরিত পুরুষরূপে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।
দ্বিতীয় ঘটনা, কাজী-কর্তৃক সংকীর্তন বন্ধ করা নিয়ে। কথিত আছে, সেবারেও তিনি যুক্তিতর্কে কাজীকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন। পূর্বের অনুমান এস্থলেও প্রযোজ্য।
কিন্তু চৈতন্যদেব উভয় ধর্মের শাস্ত্রীয় সম্মেলন করার চেষ্টা করেছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। বস্তুত তাঁর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, হিন্দুধর্মের সংগঠন ও সংস্কার এবং তাকে ধ্বংসের পথ থেকে নবযৌবনের পথে নিয়ে যাবার।
তবুও এ বিষয় নিয়ে সবিস্তর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
এ যাবত্ আমাদের মূল বক্তব্য ছিল, মুসলমান যে জ্ঞানবিজ্ঞান ধর্মদর্শন সঙ্গে এনেছিলেন, এবং পরবর্তী যুগে, বিশেষ করে মোগল আমলে আকবর থেকে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত মঙ্গোল-জর্জরিত ইরান-তুরান থেকে যেসব সহস্র সহস্র কবি পণ্ডিত ধর্মজ্ঞ দার্শনিক এদেশে এসে মোগল রাজসভায় আপন আপন কবিত্ব পাণ্ডিত্য নিঃশেষে উজাড় করে দিলেন তার থেকে এ দেশের হিন্দু ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ, পণ্ডিত, দার্শনিকরা কণামাত্র লাভবান হননি। এবং বিদেশাগত পণ্ডিত দার্শনিক এ দেশে এসেছিলেন একমাত্র অর্থলাভের উদ্দেশ্যে—কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, স্বদেশ-প্রত্যাবর্তনের পর এঁদের অধিকাংশ তাঁদের চরম নিমকহারামির পরিচয় দিয়েছেন পঞ্চমুখে এদেশের নিন্দাবাদ করে। নিন্দা করেছেন মুসলমান রাজা এবং আমীর ওমরাহরাই—হিন্দু পণ্ডিতের সঙ্গে তাঁদের কোন যোগসূত্র স্থাপিত হয়নি।
ফার্সী সাহিত্যের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্রাউন উপরে উল্লিখিত যুগকে ফার্সী সাহিত্যের ইন্ডিয়ান সামার পুনরুচ্ছলিত যৌবন নাম দিয়েছেন। বস্তুত বর্বর মঙ্গোল অভিযানে ফলস্বরূপ ফার্সী সাহিত্যের যে অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল সে তখন অন্নজল পায় মোগল-দরবারে। ইরান আজকের দিনে ভারতের কাছে কতখানি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে সে খবর আমাদের কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু ভারতবর্ষে ফার্সী সাহিত্যের এই যুগ নিয়ে অতিঅল্প আলোচনাই হয়েছে, তাও উর্দুতে, বাঙলাতে কিছুই হয়নি।
এ তো প্রধানত সাহিত্য ও অন্যান্য বাঙ্ময়ের কথা, কিন্তু আমাদের কাছে ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি বলে মনে হয় এই দেখে যে, ভুবনবিখ্যাত ষড়দর্শনের দেশের লোক মুসলমান মারফতে প্লাতো-আরিস্ততল, সিনা রুশ্দ্ নিয়ে সপ্তম দর্শন নির্মাণ করল না। কল্পনা করতে এক অদ্ভুত অনুভূতির সঞ্চার হয়—ভারতবর্ষ তাহলে দর্শনের ক্ষেত্রে কত না দিক্চক্রবাল উত্তীর্ণ হয়ে যেত—দেকার্ত কান্টের অগ্রগামী পথপ্রদর্শক এ দেশেই জন্মাতেন!
পক্ষান্তরে মুসলমান যে-আরবি দর্শন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন তাই নিয়ে পড়ে রইলেন। মঙ্গোল কর্তৃক বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হওয়ার পর, এবং স্পেন থেকে মুররা বিতাড়িত হওয়ার ফলে আরব-জগতে দর্শনের অপমৃত্যু ঘটে। এদেশের মুসলমান দার্শনিককে অনুপ্রাণিত করার জন্য বাইরের সব উত্স সম্পূর্ণ শুষ্ক হল। হায়, এঁরা যদি পাকে-চক্রে কোন গতিকে ষড়যদর্শনের সন্ধান পেতেন।
এ তো কিছু অসম্ভব কল্পনা-বিলাস নয়। আজকের দিনের হিন্দু দার্শনিক এক দিকে নব্যন্যায় চর্চা করেন, অন্য দিকে দেকার্ত অধ্যয়ন করেন। ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁদের পথ-প্রদর্শক। কবি ইক্বালের ঐতিহ্যভূমি আভেরস-আভেচেন্নার উপর—তাঁর সৌধনির্মাণে তিনি সাহায্য নিয়েছেন কান্ট-হেগেলের।
আমরা এতক্ষণ যে অবস্থার বর্ণনা করলেম তার থেকে আপাতদৃষ্টিতে সিদ্ধান্ত করা সম্পূর্ণ অনুচিত নয় যে, ভারতবর্ষে তাহলে হিন্দু-মুসলমানের মিলন হয়নি। যেহেতু ব্রাহ্মণের দেবোত্তর বাদশা কেড়ে নেননি তাই তিনি নিশ্চিন্ত মনে আপন শাস্ত্রচর্চা করে যেতে লাগলেন, এবং যেহেতু আলিম-ফাজিলরা ওয়াক্ফ্-সম্পত্তি পেয়ে গেলেন তাই তাঁরাই পরমানন্দে তাঁদের মক্তব-মাদ্রাসায় কোরান-হাদীসের চর্চা করে যেতে লাগলেন। একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করার কোন প্রয়োজন অনুভব করলেন না।
কিন্তু দেশের সকলের তো লাখেরাজ ব্রহ্মোত্তর ওয়াক্ফ্-সম্পত্তি নেই। চাষা তিলি জোলা কাঁসারি মাঝি চিত্রকর কলাবত্ বৈদ্য কারকুন এবং অন্যান্য শত শত ধান্দার লোককে অর্থোপার্জন করে জীবনধারণ করতে হয়। সে স্থলে হিন্দু মুসলমানকে বর্জন করে চলতে পারে না, মুসলমানকেও হিন্দুর সংস্পর্শে আসতে হয়। তদুপরি উচ্চাঙ্গের চিত্রকলা সঙ্গীত স্থাপত্য বাদশা ও তাঁর অর্থশালী আমীর-ওমরাহের সাহায্য বিনা হয় না। বাদশারও দরকার হিন্দু রাজকর্মচারীর। কোনো দেশ জয় করা এক কর্ম, সে দেশ শাসন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন শিরঃপীড়া। বাদশা ইরান-তুরান থেকে দিগ্বিজয় করার সময় রাজকর্মচারী সঙ্গে আনেননি। আর আনবেনই বা কি? তারা এ-দেশের ভাষা জানে না, রাজস্বব্যবস্থা বোঝে না, কোন্ দণ্ডনীতি কঠোর আর কোন্টাই বা অতি সদয় বলে দেশের লোকের মনে হবে—এ সম্বন্ধে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বখ্শী (চীফ পে-মাস্টার, অ্যাকাউন্টেন্ট-কাম্-অডিটার জেনারেল), কানুনগো (লিগেল রিমেমব্রেন্সার), সরকার (চীফ সেক্রেটারি), মুন্শী (হুজুরের ফরমান লিখনেওলা, নূতন আইন নির্মাণের খসড়া প্রস্তুতকারী), ওয়াকে-নওয়ীস্ (যার থেকে ডধয়হরং), পর্চা-নওয়ীস্ (রাজকর্মচারীর আচরণ তথা দেশের জনসাধারণ সম্বন্ধে রিপোর্ট তৈরি করনেওলা) এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করবে কারা?
আমরা জানি, কায়স্থরা স্মরণাতীতকাল থেকে এসব কাজ করে আসছেন। এঁরাই এগিয়ে এলেন। মুসলমানপ্রাধান্য প্রায় দুশ’ বত্সর হল লোপ পেয়েছে, কিন্তু আজও এসব পদবী—প্রধানত কায়স্থদের ভিতর—সম্পূর্ণ লোপ পায়নি।
এ দেশের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, উর্দু ভাষা এবং অন্যান্য বহু জিনিস যে হিন্দু-মুসলমানের অনিবার্য মেলামেশার ফলে হয়েছিল সে কথা সকলেই জানেন।
শুধু ভাস্কর্য ও নাট্যকলা বাদশা-আমীর-ওমরার কোনো সাহায্য পায়নি। তার কারণ, ইসলামে মূর্তি নির্মাণ নিষিদ্ধ এবং নাট্যকলা ভারতের বাইরে মুসলিম জগতে সম্পূর্ণ অজানা।
হিন্দুধর্ম ভিন্নধর্মাবলম্বীকে আপন ধর্মে গ্রহণ করে না। কাজেই অন্য ধর্ম সম্বন্ধে তার ঔত্সুক্য নেই। মুসলমান বিধর্মীকে মুসলমান করতে চায়। উভয়ের মিলনের চিন্তা ব্রাহ্মণ পণ্ডিত কিংবা মুসলমান মৌলবী কেউ করেন না হিন্দু পণ্ডিত মুসলমানকে বলেন, ‘তুমি দূরে থাকো’। মুসলমান মৌলবী হিন্দুকে বলেন, ‘এসো, তুমি মুসলমান হবে’। তৃতীয় পন্থাও যে থাকতে পারে সেটা কারও মনে উদয় হয় না। হিন্দু হিন্দু থাকবে, মুসলমান মুসলমান থাকবে অথচ উভয়ের মধ্যে মিলন হবে, হৃদ্যতা হবে।
এ পন্থার চিন্তা করেছিল জনগণ। এটাতে ছিল তাদের প্রয়োজন। তাই এলেন ধর্মের জগতে জননেতা, জনাবতার কবীর দাদু নানক ইত্যাদি। পরম শ্লাঘার বিষয়, শান্তিনিকেতনেই এঁদের সম্বন্ধে অনুসন্ধান আরম্ভ হয়। এতদিন ধরে ভারতের হিন্দু-মুসলমান গুণী-জ্ঞানীরা যেসব মহাপুরুষদের সম্পূর্ণ অবহেলা করেছিলেন, শান্তিনিকেতনেই সে সময়ের ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনশাস্ত্রী তাঁদের নিয়ে সমস্ত জীবন ব্যয়িত করেন। তাঁর ‘দাদু’ ‘কবীরে’র পরিচয় এস্থলে নূতন করে দেবার প্রয়োজন নেই।
সে পুণ্যকর্ম এখনো বিশ্বভারতীতে পূর্ণোদ্যমে অগ্রগামী। ক্ষিতিমোহনের বৃদ্ধ বয়সের সহকর্মী বিশ্বভারতীর অধ্যাপক শ্রীযুত রামপুজন তিওয়ারীর ‘সুফীমত-সাধনা ঔর সাহিত্য’ সুচিন্তিত স্বয়ং-সম্পূর্ণ পুস্তক হিন্দি সাহিত্য তথা মধ্যযুগীয় লোকায়ত ধর্ম-চর্চার গৌরব বৃদ্ধি করেছে। পাণ্ডিত্যপূর্ণ অথচ সরল ভাষায় লিখিত এ ধরনের গ্রন্থ সর্ব ভাষায়ই বিরল।
কিন্তু চিন্তাজগতে—দর্শন-ধর্মশাস্ত্র-জ্ঞানবিজ্ঞানে—হিন্দু-মুসলমানের মিলনভাব অথচ অনুভূতির ক্ষেত্রে—চারুকলা সঙ্গীত লোকসাহিত্যে গণধর্মে—আশাতীত মিলন। এ বিষয়ে অধ্যয়ন এবং চর্চা করতে হলে উভয় জনসমাজের মূল ধর্ম, সামাজিক আচার-ব্যবহার গোড়া থেকে অধ্যয়ন করতে হয়। হিন্দুধর্ম ও সমাজ সম্বন্ধে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু মুসলমান ধর্মের উত্পত্তি ও বিকাশ সম্বন্ধে বাংলা ভাষায় প্রায় কিছুই নেই। যা-কিছু আছে তা সরল ধর্মোচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ এবং স্বধর্মবিশ্বাসীর হৃদয়-মনে উত্সাহ-উদ্দীপনা সঞ্চার করার জন্য-বিধর্মীর সম্মুখে আপন ধর্ম যুক্তিবিচারের উপর নির্মাণ করে তাকে আকর্ষণ করার কোনো প্রচেষ্টা তাতে নেই, আপন ধর্মের স্বতঃসিদ্ধ নীতিও যে বিধর্মীর কাছে প্রামাণ্যভাবে অসিদ্ধ হতে পারে সে দুশ্চিন্তাও এ-সাহিত্যকে বিক্ষুব্ধ করেনি। উপরন্তু ইংরেজ-আগমনের পর এদেশের ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দুরা ইংরেজির মারফতে পেলেন ইসলামের এক বিকট বিকৃত রূপ। সরল হিন্দু জানত না, খ্রিস্টান এবং মুসলিমে স্বার্থসংঘাত লেগে যায় মহাপুরুষের মৃত্যুর অল্প দিন পরেই, শত শত বত্সর ক্রুসেডের নামে একে অন্যের মরণালিঙ্গনে তারা সম্পিষ্ট; ফলে খ্রিস্টান কর্তৃক ইসলাম ও হজরত্ মুহম্মদের বিরুদ্ধে অকথ্য কটুবাক্য এদেশে এসেছে ‘নিরপেক্ষ গবেষণা’র ছদ্মবেশ ধরে। সাধারণ সরল হিন্দু এ ছদ্মবেশ বুঝতে পারেনি। (এস্থলে বলে রাখা ভালো, মুসলমান কিন্তু খ্রিস্টানকে প্রাণভরে ‘জাত তুলে’ গালাগাল দিতে পারেনি, কারণ কুরান-শরীফ যীশুখ্রিস্টকে অন্যান্য মহাপরুষদের একজন বলে যে স্বীকার করে নিয়েছে তাই নয়, তিনি মুহম্মদের পূর্বে সর্বপ্রধান পয়গম্বর বলে তাঁকে বিশেষ করে ‘রূহুল্লা’ ‘আল্লাহ আত্মা’ ‘পরমাত্মার খণ্ডাত্মা’ উপাধি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। পক্ষান্তরে খ্রিস্টান যুগ যুগ ধরে হজরত্ মুহম্মদকে ‘ফলস ‘প্রফেট’ ‘শ্যালট্যান ইত্যাদি আখ্যায় বিভূষিত করেছে। প্রায় চল্লিশ বত্সর পূর্বেও ঐতিহাসিক ওয়েলস তাঁর ‘বিশ্ব-ইতিহাসে’ মুহম্মদ যে ঐশী অনুপ্রেরণার সময় স্বেদাসক্ত বেপথুমান হতেন তাকে মৃগারুগীর লক্ষণ বলে মহাপুরুষকে উভয়ার্থে লাঞ্ছিত করেছেন)।
রামমোহন রামকৃষ্ণ রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দ সর্বদেশেই বিরল। এদেশে তো অবশ্যই।
ইতিমধ্যে আর-একটি নূতন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
এতদিন যে হিন্দু পণ্ডিত দার্শনিক মুসলমানের ধর্ম আচার-ব্যবহার সম্বন্ধে কোনো কৌতূহল প্রকাশ করেননি তাতে হয়তো তাঁদের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি, কিন্তু স্বরাজলাভের পর তাঁদের সে দৃষ্টিবিন্দু পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তান ইরান ইরাক সিরিয়া সউদি আরব ইয়েমেন মিশর তুনিস আলজিরিয়া মরক্কো তথা মুসলমানপ্রধান ইন্দোনেশিয়া ও নবজাগ্রত মুসলিম অধ্যুষিত আফ্রিকার একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতা স্থাপন করতে হবে। মুসলিমপ্রধান পাকিস্তানও এ ফিরিস্তির অন্তর্ভুক্ত। এদের ধর্ম, তার উত্পত্তি ও ক্রমবিকাশ, রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক বাতাবরণ-পার্থক্যে তাদের ভিন্ন ভিন্ন রূপ-পরিবর্তন— এসব এখন অল্পবিস্তর অধ্যয়ন না করে গত্যন্তর নেই। সত্য, আমাদের ইস্কুল-কলেজে এখনো আরবী-ফার্সীর চর্চা সম্পূর্ণ লোপ পায়নি, কিন্তু এই নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়াটা সমীচীন হবে না। কিছু কিছু হিন্দুদেরও আরবী-ফার্সী শিখতে হবে। এবং এই সাতশ’ বত্সরের প্রাচীন আরবী-ফার্সীর শিক্ষাপদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু সে প্রসঙ্গ যতই প্রয়োজনীয় হোক, এ স্থানে কিঞ্চিত্ অবান্তর।
আমরা যে মূল উেসর সন্ধানে বেরুচ্ছি তার জন্য আজ আর প্রাচীন মানচিত্র কাজে লাগবে না। ভাবোচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ অথবা সন্দেহে কণ্টাকাকীর্ণ প্রাচীন কোনো পদ্ধতির অনুসরণ করলে আজ আর চলে না। ধর্মকেও আজ রাজনীতি অর্থনীতি সমাজনীতির কষ্টিপাথর দিয়ে যাচাই করতে হয়।
কিন্তু অনুসন্ধিত্সু মনের সঙ্গে থাকবে সহানুভূতিশীল হৃদয়।

[১ টয়িনবি সাহেব যে রীতিতে পৃথিবীর সর্বত্র একই প্যাটার্নের অনুসন্ধান করেন বর্তমান লেখক সে নীতি অনুসরণে বিরত থাকবে। শুধু যেখানে প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি দেখিয়ে দিলে আলোচ্য বিষয়বস্তু স্পষ্টতর হবে সেখানেই এই নীতি মানা হবে। এস্থলে তাই শুধু উল্লেখ করি, যখনই কোন জাতি বৈদেশিক কোন ভিন্নধর্মাবলম্বী দ্বারা পরাজিত হয় তখন নূতন রাজা এঁদের পণ্ডিতমণ্ডলীকে কোন প্রধানকর্মে আমন্ত্রণ জানান না বলে এঁদের এক মানসিক পরিবর্তন হয়। এঁদের চিন্তাধারা তখন মোটামুটি এই : ‘আমাদের ধর্ম সত্য এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমরা ম্লেচ্ছ বা যবন কর্তৃক পরাজিত হলুম কেন? এর একমাত্র কারণ এই হতে পারে যে, আমরা আমাদের ধর্মের প্রকৃত রূপ বুঝতে পারিনি। ধর্মের অর্থকরণে (ইন্টারপ্রিটেশনে) নিশ্চয়ই আমাদের ভুল রয়ে গিয়েছে। আমরা তা হলে নূতন করে ব্যাখ্যা করে দেখি, ত্রুটি কোন্ স্থলে হয়েছে।’ ফলে পরাজয়ের পরবর্তী যুগে তাবত্ সৃষ্টশক্তি টীকাটিপ্পনী রচনায় ব্যয় হয়।]
[২ ইসলামের অন্যতম প্রখ্যাত পথপ্রদর্শক বা ইমাম। ইনি দার্শনিক-কিয়ত্কালের জন্য নাস্তিক- এবং পরিণত-বয়সে সূফী (মিস্টিক, ভক্তিমার্গ ও যোগের সমন্বয়কারী) হয়ে যান। এঁর জনপ্রিয় পুস্তক ‘কিমিয়া সাদত্’ এই শতাব্দীর প্রারম্ভে বাংলায় অনূদিত হয়ে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত হয়। বিশ্বভারতীর সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ স্বর্গত বিধুশেখর শাস্ত্রী এই পুস্তকের বড়ই অনুরাগী ছিলেন এবং আমাদের মন্দিরের উপাসনায় একাধিকবার ব্যবহার করেছেন। বিধুশেখর অত্যন্ত আচারনিষ্ঠ ‘টোলো পণ্ডিত’ ছিলেন। স্মরণ রাখবার সুবিধার জন্য উল্লেখযোগ্য-গজ্জালীর মৃত্যু ১১১১ খিস্টাব্দে।] 
সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী থেকে পুনর্মুদ্রিত

সূত্র : আমার দেশ

Thursday, September 13, 2012

‘কি মুসকিল, তোরা কি আমাকে পাগল করে দিবি’| অতনু বর্মণ

দেওয়ালে অথবা পোস্টারে, সাইনবোর্ডে কিংবা হোর্ডিংয়ে বিচিত্র বিপর্যয় আকছার চোখে পড়ে। তার কোনওটা, যে লিখেছে, তার বানান বোধের অভাব অথবা নিছক কোনও একটা শব্দ অসাবধানে বাদ পড়ে যাওয়াই হোক, কিংবা রসিকজনের ইচ্ছাকৃত কোনও শব্দ মুছে দেওয়াই হোক-এককথায় বিষয়টি মজাদার। কখনও কখনও আবার অতিরিক্ত একটি লাইন সংযোজনেও খেলাটা জমে ওঠে। যেমন আশির দশকের শেষের দিকে টালা ব্রিজের গায়ে বিশাল অক্ষরে লেখা ‘বাঙালি জাগো’-র ঠিক নিচেই কে যেন লিখেছিলেন-‘আঃ, কাঁচা ঘুম ভাঙাইবেন না।’ মনে পড়তে বাধ্য মনীভূষণ ভট্টাচার্যের সেই সপাটে চাবুক মারার মত ভাবনাটির কথা। যেখানে সত্তর দশকের দেওয়াল লিখলে ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’ জ্বল-জ্বল করে। ‘রাজনৈতিক’ শব্দটি কিভাবে যেন বাদ পড়ে যায়। বীরভূমের প্রান্তিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারে দেখেছিলাম লেখা আছে- ‘টিকিঘর ছাড়িবার পূর্বে টিকি ও টাক দেখিয়া লইবেন।’ রসিক বাঙালি টিকিটের ‘ট’ এবং টাকার আ’কার একটু মাথা খাটিয়ে মুছে দিয়েছিলেন মাত্র। লিখন বিপর্যয়ের সুপার ডুপার হিট একটি গল্প অনেকেরই হয়তো জানা। অবশ্য সেটিকে মুদ্রণ বিপর্যয় বললেই যথোপযুক্ত হয়। খবর কাগজে ছাপা হল-পুলিশের গুলি খেয়ে দুই বকের মৃত্যু। বলা বাহুল্য ওটা আসলে গুলি খেয়ে যুবকের মৃত্যু। আমার বক্তব্য ওটা নয়, রসিক বাঙালি এর সঙ্গে যোগ করল আরও একটি মাত্রা। পরের দিন সংশোধনীতে লেখা হল - ওটি ‘পাছার’ ভুল ছিল। ছাপার এমন বিপর্যয় বাঙালি ছাড়া আর কারও মস্তিষ্কের আমদানি হতে পারে। ছাপাখানার ভূত কত যে অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়ে চলে সারা দুনিয়া জুড়ে তার নজির মেলা ভার। কখনও যতি চিহ্ন বসিয়ে দেয় ভুল জায়গায় আর তার ফলে অর্থ যায় উল্টে। একসময় এইরকম একটি চিঠির কথা খুব শোনা যেত - আমাদের মেনি বেড়ালটি বমি করেছে শ্বশুরমশাইয়ের মুখে, ঘা হয়েছে পেঁপে গাছের, মগডালে মধুর চাক হয়েছে, শাশুড়িমায়ের কোমরে, ব্যথাটা বেড়েছে খোকার, একটি খেলনা এনে দিও ভুলো কুকুরের জন্য, আর তো পারা যায় না তোমার জন্য, মন খারাপ করে না, চিন্তা কোর, না আমি পথ চেয়ে, আছি ভাল, থেকো চিঠি, ইতি মৃণালিনী।
স্কুল সার্ভিস কমিশন পূর্ববর্তী যুগে যখন এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের নাম পাঠানো হত, আর হবু শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হত, সেই আমলের কথা। পিছনে বসে আছেন তিন-চারজন হোমরা-চোমরা। প্রধান শিক্ষক, এক্সপার্ট হিসেবে বাইরে থেকে আগত কোনও অধ্যাপক, পঞ্চায়েৎ থেকে মনোনীত একজন, এইরকম মানুষেরা। হবু শিক্ষককে পড়াতে দেওয়া হয়েছে মেঘনাদ বধ কাব্যের অংশ বিশেষ। বেশ পড়াচ্ছিলেন, হঠাৎ একটি লাইন এল - ‘হুহুঙ্কারে বাহিরিল বারণ’। অকালপক্ক একটি ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল -‘স্যর, বারণ মানে কি?’ হবু শিক্ষকের অবস্থা ঢিলে। বারণ মানে যে হাতি সেটি তাঁর জানা নেই, কিন্তু বাঙালি তো, জানি না বলতে শেখেননি। যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলে দিলেন ‘ওটা ছাপার ভুল, বারণ নয়, ওটা হবে রাবণ, রামায়ণ থেকে লেখা হয়েছে সেটা জানো না?’
লিখন না হলেও কথন বিপর্যয় জাতীয় একটা মজার খেলা আছে। এক সময় খেলাটিতে দক্ষ হয়ে উঠেছিলাম। অনায়াসে ওলোট-পালট কথা বলে যেতাম। গানও গাইতে পারতাম, যেমন - ‘রাঁওন শাতে যদি, অরণে শাসে মোরে, ঝাহিরে বড় বহে, বয়নে নারি ঝরেৃ’। আমরা বেশ কয়েকজন এই ওলোট-পালট বাক্যে কথাও বলতাম। হয়তো রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, অন্ধকার গ্রামের মেঠো পথ, সামনের বন্ধু হয়তো কাদায় পা দিয়েছেন, আমাকে সাবধান করে বলে উঠলেন-‘ধাবসান ধাবসান, কামনে সাদা’। আমরাই যে এমন মজাদার বাক্যক্রীড়ার আবিষ্কারক ছিলাম এমন দাবি করব না। আবহমান কাল থেকে বাঙালি এই চর্চা করে আসছে। মনে পড়ে ছেলেবেলায় মায়ের মুখে শুনতাম - লুলকো ফুচি, সিমকি নিঙারা আর এক চাপ কায়ের গল্প। অনেকে আবার সচেতন ভাবে নয়, স্বাভাবিক অভ্যাসেই কখন বিপর্যয়ের শিকার। নিচু ক্লাসের একটি ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘বয়ে আকার তয়ে আকার দন্ত্যসয়ে আকার, কি হয়?’ সে অম্লান বদলে বলল -বাসাতা। সে তো না হয় শিশু, আমরা বড়রাও কত অম্লান বদনে রিশকা অথবা ট্যাসকি চড়ে ঘুরে বেড়াই। খবরের কাগজে নৃশংসতার ঘটনা পড়ে বলে উঠি - ‘ওটা কি মানুষ? না পিচাশ?’
শুনেছিলাম চাটগাঁয়ের মানুষ নাকি ‘প’-কে ‘ফ’ বলেন। শোনা কথাটি ঠিক না ভুল তা পরীক্ষা করার জন্য একজন মাস্টার মশাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম - ‘স্যার, আপনারা নাকি ‘প’-কে ‘ফ’ বলেন?’ স্যার বলেছিলেন- ‘ধুর ফাগল, তাই কেউ বলে নাকি!’ আসলে যিনি বলেন তিনি তো জানেন না যে তিনি কি বলেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমাদের পাড়ায় জগাপাগলাকে খ্যাপাতো স্কুলের বাচ্চারা। একদিন চার-পাঁচটা ছেলে একসঙ্গে বিরক্ত করছে জগাকে। তিতিবিরক্ত হয়ে জগা বলে উঠল - ‘কি মুসকিল, তোরা কি আমাকে পাগল করে দিবি।’

কবর থেকে চুরি হল হুমায়ূনের লাশ! | মোঃ রাশেদুল কবির আজাদ

রাতটি ছিল একমাসে দুটো পূর্ণিমার ঘটার রাত। হোসেন আলী রাতের খাবার খেয়ে বাইরে বের হয়েছে। চারদিক জোছনায় ভরে আছে। হোসেন আলী জানে এই বিরল ঘটনা আবার তিন বছর পর দেখা যাবে। তাই পারত পক্ষে আকাশের বুকে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা দেখতে সে ভুল করে না। পূর্ণিমা, ধূমকেতু, কিংবা আকাশের বুকে তারাগুলোকে সে প্রতিদিন দেখে নেয়। যুগের পরিবর্তন হয়েছে। সভ্যতার চাদর মানুষকে দিয়েছে ঘরবন্দী পৃথিবী। তরুণ প্রজন্ম কম্পিউটার নিয়ে সারারাত কাটিয়ে দেয়। ফেইজবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নতুন প্রজন্মকে করছে গৃহপালিত। তাদের বাবা মা আশা নিরাশার মাঝে জীবন কাঁটায়। অনেকে অজ্ঞতার কারণে সন্তানের কাছে জানতেও চায় না সারা রাত সে কম্পিউটারে কী করে? কিন্তু স্কুল-কলেজের পরীক্ষার ফলাফল বের হলে অনেক বাবা-মার চোখের জলে দুঃখ ঝরে। কিন্তু এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না! মনের মাঝে অব্যক্ত কষ্ট নিয়ে প্রতিরাতেই হোসেন আলী প্রায় ঘন্টা খানেক খোলা আকাশের নিচে মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে থাকে। এই সময় সে কাউকে সঙ্গী করে না। তার স্ত্রী ঘুমানোর আগে হোসেন আলীর অভ্যাসের কথা ভেবে কাচের জগটি ভরে রাখে পানি দিয়ে। পাশে একটি গ্লাসও ঢেকে রাখে। তার স্ত্রী জানে, ঘরে ফিরেই সে হাত মুখ ধুয়ে প্রায় এক জগ পানি পান করবে। এই অভ্যাস হোসেন আলীর ছাত্র জীবন থেকে। তাই শরীরের প্রচুর ঘাম হয়। কিন্তু রোগ হয় কম। যখন হাঁটতে বের হয় রাতে, সে গ্রামের মানুষের খোঁজ খবরও নিতে যায়। বাঁশ বনের মাঝ দিয়ে দ্বিতীয় রাতের পূর্ণিমার চাঁদকে হোসেন আলী লক্ষ্য করে। সাদা মেঘগুলো কেমন জানি পাগলা ঘোড়ার মত চাঁদের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে। বাঁশ বনের ফাঁক গড়িয়ে নীলাভে চাঁদের কিরণ গ্রামের মেঠো পথে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অন্যরকম আলোকসজ্জ্বা। এমন আলোকসজ্জ্বায় ভুবণ রঙানো কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। হোসেন আলী এর বিস্তর বর্ণনা দিতে পারবে না তবে মনের মাঝে যে আনন্দ ও সুখের সৃষ্টি তা দেখে, তার পূর্ণতায় সে ভরপুর। বাঁশ বনের সামনেই নিশিপল্লীর গোরস্থান। কিছুদিন আগে এই গ্রামের নামকরা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তা মাস খানেক হবে। দেশের দূর দূরান্ত থেকে মানুষ প্রতিদিন আসে তার কবর দেখতে। শুধু মৃত ব্যক্তির ফুফু অসুস্থ থাকার কারণে তাকে দেখতে আসতে পারে নি। হোসেন আলী হাঁটতে হাঁটতে কাঠ বাদাম তলায় চলে আসে। সেখানে চারটি রিকসা কাপড় দিয়ে সামনে মোড়ানো। হোসেন আলী মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এত রাতে সবুর মিয়ার বাড়িতে কারা এলো? সে রিকসা চালকদের কাছে জানতে চায়। বৃদ্ধ বয়সি এক রিকসাচালক হোসেন আলীর সামনে এগিয়ে আসে। সে হোসেন আলীকে বলে, ‘আপনাদের গ্রামে সবুর মিয়ার যে আত্মীয় মাস খানেক আগে বজ্রপাতে মারা গেছেন এরা সেই বাড়ির মেহমান। রিকসার মধ্যে আলাপচারিতায় যা বুঝেছি তাতে মনে মৃত ব্যক্তির ফুফু এসেছেন’। হোসেন আলীর কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। হোসেন আলী একবার রাতের আকাশের দিকে তাঁকায় আবার ডানদিকে গোরস্থানের দিকে নজর দেয়। তাদের গ্রামটি অজো পাড়া গা হলেও বিদ্যুতের বাতি চারদিকে আনন্দে আত্মহারা। যদিও মাঝে মাঝে লোডশেডিং হয়। এখন আবার বিদ্যুৎ আসাতে রাতের আকাশটাকে কেমন যেন অন্ধকার লাগছে। তবুও নীলাভে চাঁদ তার জোছনার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে নিশিপল্লীতে। হোসেন আলীর হঠাৎ করেই তার মেয়ে মিথিলার কথা মনে পড়ে। কেন মনে পড়ে তা সে জানে না। মেয়ের জন্য তার বুকের ভিতর সে অব্যক্ত বেদনা ছিল, সৃষ্টিকর্তা তা অনেকটাই লাগব করেছেন। তার বিশ্বাস, তার মিথিলা একদিন বাবার হাত ধরে রাতের আকাশ দেখার জন্য ঠিকই বের হবে। হাতের বাম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটিকে জোড়াতালি দিয়ে রেখেছে একটি সেতু। আজ থেকে বিশ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। রাত ন’টার পর কোথা থেকে এসে কিছু মোটর সাইকেল আরোহী এই সেতুর ওপর বসে আড্ডা দেয়। গত সাত দিন আগে তাদের আলাপচারিতা হোসেন আলী শুনে ফেলে। আলাপচারিতা শুনে হোসেন আলীর মনে ভয় ধরে যায়। সে কাউকে সে কথা বলে না। তবুও সে রাতে হাঁটা বন্ধ করে নি।
সেদিন সেতু ওপর বসে কয়েকজন লোক আলাপ করতে ছিল মৃত মানুষের শরীর নিয়ে। বজ্রপাতে যারা মারা যায় তাদের শরীরের নাকি অনেক দাম। বিশেষ করে মৃত ব্যক্তি মাথা। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির মাথাটি নাকি ম্যাগনেটে পরিণত হয়। সেই মাথার মূল্য তারা যা বলছে তাতে হোসেন আলী বিস্মিত হয়। কী করে একটি মৃত মানুষের মাথা প্রায় কোটি টাকা মূল্য হতে পারে? যারা এ আলাপ করতে ছিল তারা অবশ্যই কোন সংঘবদ্ধ অপরাধ জগতের মানুষ। ইদানিং হোসেন আলী পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারে নিত্য নতুন চুরি ডাকাতির নানা কৌশল। মানুষের মধ্য থেকে মানবিকতা ওঠে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পাশের গ্রাম নগরকান্দা থেকে একরাতে সতেরটি লাশ চুরি গেছে।
অন্যদিকে শহরের অবস্থা আরো করুণ। ঢাকা শহরে ব্যস্ত কোন রাস্তার মোড়ে আপনি যদি ছোট্ট কোনো ছেলে মেয়ের হাতে কোনো ঠিকানা লেখা দেখতে পান এবং সেই মোতাবেক তাকে পৌছে দিতে যান, তাহলেই ধরা খেলেন। আপনাকে পণবন্দি হিসেবে তারা রেখে দিবে এবং আপনার পরিবারের কাছে কয়েক লক্ষ টাকা পণ দাবী করবে। না দিতে পারলে হয়ত আপনার প্রস্থান হবে পৃথিবী থেকে! হোসেন আলী ভাবে জীবন্ত মানুষকে নিয়ে না এমন করা গেল, কিন্তু মৃত মানুষের লাশ কারা কবর থেকে তুলে নিয়ে যায়? মৃত মানুষের হাড়, কঙ্কালও নাকি অনেক দামী। বিগত ছয় মাস ধরে হোসেন আলীদের গোরস্থান থেকে প্রায় দুএকটি করে কবর খোড়া পাওয়া যায়। সেই কবরে কোন লাশের চিহ্ন থাকে না। গ্রামের সহজ সরল মানুষ বিষয়টির প্রতি তেমন আমল দেয় না। তারা মনে করে, হয়ত শিয়ালে পঁচা লাশ খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু হোসেন আলীর মনে অন্য সন্দেহ ঢুকে যায়। আজো লোকগুলো সেতুর ওপর বসা। হোসেন আলী সেতুর ওপর বসতে যাবে এমন সময় ওদের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠলো, ‘কাকা আমরা একটা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করছি, আপনি এখানে না বসলে খুঁশি হবো’। হোসেন আলী জোছনার আলোতে দেখতে পায় একটি ছেলে হাতে পিস্তল। ছেলেটি হোসেন আলীকে দেখানোর জন্যেই পিস্তলটি বের করেছে। এমন সময় হোসেন আলীর পাশে একটি রিকসা এসে থামে। গ্রামের রাস্তা হওয়াতে রাত এগারোটার পর এই রাস্তায় কোনো মানুষের চলাচল নেই। রিকসাওয়ালা সোজা সেতুর ওপর ওঠে। ওদের মাঝ থেকে একজন রিকসাওয়ালাকে বলে, ‘কোদালটা এনেছিস?’ রিকসাওয়াল হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়। আরেকজন জানতে চায়, বস এসেছে কি না? রিকসাওয়ালা জবাব দেয়, ‘তারা মাইক্রো নিয়ে দু’ঘন্টা আগেই বসে আছে পাঁকা রাস্তায়’। হোসেন আলী বিপদের আভাস পায়। সে আর দেরি করে না। দ্রুত বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। পিছন থেকে ওদের একজন একটি টর্চ লাইট জ্বেলে বলে, ‘কাকা আমরা লাইট ধরছি, আপনি বাড়ি যান’।
ঘরে ফিরে হোসেন আলী টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসে। তার স্ত্রী ও মেয়েটি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আজ রাতে হোসেন আলীর কিছুতেই ঘুম আসবে না। কেন আসবে না, তার কারণও কাউকে সে বলতে পারছে না। যদি তার স্ত্রী এই ঘটনা শুনে, তাহলে তাকে আর রাতে বের হতে দিবে না। হোসেন আলী আবারও ঘর থেকে বের হয়ে টিউবওয়েলে দিকে যেতে থাকে। পূর্ণিমার চাঁদটিকে ইতোমধ্যে কালো মেঘ প্রায় গ্রাস করতে যাচ্ছে। কেমন যেন অন্ধকার লাগছে চারদিক। চাঁদের দিকে তাকিয়ে হোসেন আলী বলতে থাকে, ‘তুইও কী ওদের দলে? তা’না হলে আলো নিভাচ্ছিস কেন?’ চাঁদ কোনো জবাব দেয় না। চিরকালের জন্য দেয়া ‘না দেখা কলঙ্ক’ মাথায় নিয়ে চাঁদের মত চাঁদ জোছনা ভাঁসায় আবার আঁধার নামায়। টিউবওয়েলের হাতলটা ধরে হোসেন আলী একটি চাপ দিয়ে সামনে তাঁকায়। তার মনে হয়, গোরস্থানের মধ্যে কারা যেন কাজ করছে। তাহলে আবার কোনো মানুষ মারা গেল নাকি যাকে দাফন করা হচ্ছে? নিশিপল্লীর এই গোরস্থানে শুধু নিশিপল্লীর মানুষরাই শুয়ে নেই, শুয়ে আছে বিশ পঁচিশটা গ্রামের মানুষ। ইদানিং নদীর ওপার থেকে মানুষ এনে এখানে দাফন করা হয়। নিশিপল্লীর মানুষ জানে না কাকে দাফন করা হল।
সবুর মিয়ার ছেলে হুমায়ূন। লেখাপড়া শেষ করে সাংবাদিকতায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সারা বাংলাদেশ তাঁকে চেনে স্পষ্টভাষী হিসেবে। ঢাকায় বাড়ি-গাড়ির মালিক যে সময়ে হওয়ার কথাছিল তার চেয়ে আরো দশ বছর পরে হুমায়ূনের গাড়ি বাড়ি হয়। কিন্তু পেশা জীবনে তার সৃষ্টি হয় অনেক শক্রু। কিছুদিন আগে হুমায়ূন বৌ-বাচ্চাসহ নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসে। বাড়িতে আসলে এক মিনিটও হুমায়ূন স্থির থাকে না। সারাক্ষণ ছুটে বেড়ায় গ্রামের বন, বাদার, মাঠ, ঝিল, নদীনালা, খালবিলে। যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন হুমায়ূন তাদের দেখতে যায়। কুশল বিনিময় করে। নিশিপল্লীর সেই গৌরব হুমায়ূন কিছুদিন আগে বিকালে বৃষ্টিতে গোসল করতে ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে সে কদম গাছে তলায় মরে দাড়িয়ে থাকে। বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ না করা পর্যন্ত সে যে অবস্থায় ছিল ঐ অবস্থায় থাকে। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচিতে লোকে লোকারণ্য। বজ্রপাত যে নিশিপল্লীতেই হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে কার বাড়িতে বজ্রপাতটি হলো? এক সময় হুমায়ূনের লাশ দেখে নিশিপল্লীর মানুষ হতবিহবল হয়ে যায়। তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না, হুমায়ূন মারা গেছে। তবুও সত্য চিরদিন সত্য। হুমায়ূন আর ফিরে আসবে না। তার মৃত্যুর সময় দেশের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকলেও তার একমাত্র ফুফু অসুস্থতার কারণে সেদিন হুমায়ূনের দাফন কাফনে শরিক হতে পারে নি। ৮৫ বছর বয়সি হুমায়ূনের ফুফুর শরীরটা মাস খানেক পরে একটু সুস্থ হলেই তিনি ছুটে আসেন সবুর মিয়ার বাড়িতে হুমায়ূনের কবর জিয়ারত করতে।
হোসেন আলী ভাবে হয়ত হুমায়ূনের ফুফুরা তার কবর জিয়ারত করছে। টিউবওয়েরের ঠান্ডা পানি চোখে মুখে দিয়ে হোসেন আলী আরো ভালো ভাবে লক্ষ্য করে গোরস্থানের দিকে। কিন্তু এখনও কিছু দেখা যাচ্ছে না। কার প্রয়োজনে কে এসেছিল গোরস্থানে এই ভেবে আর রাত জেগে লাভ নেই। যা হবার তাই হবে, আর যা করার তারা তাই করবে। এভাবেই তো চলছে দেশ। তাহলে আমার মত হোসেন আলীর এত মাথা ঘামিয়ে লাভ কী? মাথায় কয়েক ফোটা বৃষ্টির পানি পড়তেই হোসেন আলী দ্রুত নিজের ঘরের দিকে রওয়ানা হয়। টেবিলের সামনে এসে তাওয়ালটা নিয়ে মাথা মুছতে থাকে। জগে ভরা পানিটুকু জগ ধরে পান করতে থাকে। তার আজ অনেক পিপাসা পেয়েছে। কেন জানি বুকটা আর মুখটা বার বার শুখিয়ে যাচ্ছে। মেয়ে মিথিলার পাশে বালিশটা নিয়ে হোসেন আলী শুয়ে পড়ে। মেয়ে মাথায় একটি হাত বুলিয়ে দেয়। আয়তাল কুরছি পাঠ করে মেয়ের মাথায় ফু দেয়। এই কাজটা করতে সে কখনই ভুল করে না। বিছানায় গা এলাতেই রাজ্যের চিন্তা তার মাথায় ভর করে। আজকাল দেশের একি হল! মরা মানুষের লাশ নিয়ে যাচ্ছে কারা? তারা এই লাশ দিয়ে কী করে? সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে লাশ চোর কয়েকটি সংঘবদ্ধ দলকে ধরেছে। মিডিয়াতে অপরাধী চক্রের বিস্তার শুনে এবং লাশগুলো কী করা হয় তা শুনে হোসেন আলী চোখ কপালে ওঠে যায়। কী করে এক শ্রেণির ডাক্তার নামধারী পশু এই সব লাশ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকে!
বাইরে কিছুটা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। নানা চিন্তার জগতে হোসেন আলী সাঁতরাতে সাঁতরাতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে যায়। কখন যে ঘুমের দেশের বাসিন্দা হয়ে ডুব দেয় মৃতপুরীর শান্ত ঘরে তা সে নিজেও জানে না।
সকালে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভাঙে। হোসেন আলীদের বাড়িতে ত্রিশ চল্লিশজন মানুষ জড়ো হয়েছে। হোসেন আলীর পিতা গ্রামের মুরুব্বি। সকলেই এসেছে তাঁর কাছে। হোসেন আলী চেঁচামেচি শুনে দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওঠে পড়ে। তখনও সূর্য ওঠে নি। বাইরে এসে দেখে পুরুষ মহিলা মিলে গোটা পঞ্চাশেক মানুষ জড়ো হয়েছে তাদের বাড়িতে। সবুর মিয়ার ভাই শহর মিয়া হোসেন আলীর বাবাকে বলতে থাকে, ‘কাকা হুমায়ূনের ফুফু অসুস্থ মানুষ। আধমরা অবস্থায় হুমায়ূনের কবর জিয়ারত করতে গত রাত এগারোটার সময় ভাইয়ের বাড়িতে এসেছে। রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা তাকে নিয়ে আর গোরস্থানের দিকে যায় নি। ভাবলাম সকালে ফজর নামাজ শেষে তাঁকে নিয়ে কবর জিয়ারত করতে যাবো। সেই মোতাবেক সবাই সকালে নামাজ পড়ে গোরস্থানে এসে দেখি হুমায়ূনের কবরটা খুঁড়া। কবর থেকে কোন গন্ধ বের হচ্ছে না। ভাবলাম শিয়াল হয়ত কবরটা খুড়েছে। নতুন মাটি কবরে রদয়ার জন্য একটি কোদাল নিয়ে কবরের কাছে যাই। গিয়ে যা দেখলাম, বলেই শহর মিয়া কাঁদতে থাকে। হোসেন আলীর পিতা শহর মিয়াকে থামতে বলে। আগে ঘটনা বল। কাকা, গিয়ে দেখি আমাদের হুমায়ূনের লাশ কবরে নাই। কারা যেন তাঁর লাশ চুরি করে নিয়ে গেছে। হুমায়ূনের ফুফু নিজ চোখে কবরে লাশ দেখতে না পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাঁকে ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাকা, কারা আমাদের হুমায়ূনের লাশ চুরি করলো? হোসেন আলীর পিতা পুরোনো দিনের মানুষ। শহর মিয়ার কথা সে বিশ্বাস করতে পারে না। মানুষ কী এতটা পশু হয়ে গেছে? হোসেন আলীর পিতা বলতে থাকে, ‘ভেবেছিলাম মারা গেলে গোরস্থানের রাখার কথা বলে যাবো। এখন দেখছি সেটা আর সম্ভব হবে না। কারণ জ্যান্ত মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি এ বদমান শুনেও শান্ত ছিলাম। কিন্তু মৃত মানুষের নিরাপত্তা যখন আমরা দিতে পারছি না তাহলে আমি মরার পর আমার বাড়ির সামনেই কবর দিস। তবুও শান্তি পাবো এই ভেবে যে, আমার লাশটা অন্তত চুরি হবে না। যুগ পরিবর্তন হয়েছে সেটা জানি, কিন্তু পরিবর্তনের মাত্রায় পশুকে হার মানিয়েছে তা জানতাম না। আজ থেকে অন্য গ্রামের কোন লাশকে নিশিপল্লীতে দাফন করতে দিবি না।’

Sunday, September 9, 2012

আবদুল মান্নান সৈয়দ সৎ ও বুদ্ধিদীপ্ত সমালোচনার কারিগর | মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ

১.
আবদুল মান্নান সৈয়দ ছিলেন আমাদের সমালোচনা-সাহিত্যের একজন দক্ষ কারিগর। কারিগর শুধুই নির্মাণ বা প্রতিনির্মাণ করেন না; অনেক সময় আবিষ্কারও করেন- যদি তিনি প্রতিভার ঘোড়ায় সওয়ার হতে পারেন। মান্নান সৈয়দ ছিলেন প্রতিভার দুর্দান্ত ঘোড়ার পিঠে সদাসওয়ার। তাই তিনি নির্মাণ বা প্রতিনির্মাণ ছাড়াও আবিষ্কার করেছেন অনেক কিছু। সমালোচক হিসেবে তিনি ছিলেন সৎ, নিষ্ঠাবান, উদার ও গ্রহিষ্ণু। সমালোচনা সম্পর্কে তাঁর শাণিত, সাহসী ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী স্মরণীয় ও অনুসরণীয়। সমালোচনা তিনি এতো বেশি করেছেন এবং সমালোচনা সম্পর্কে এতো বেশি লিখেছেন যে, যার পরে আমাদের পক্ষ থেকে তাঁর দৃকভঙ্গি সম্পর্কে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না-ব্যাখ্যা তো দেওয়ার প্রয়োজন নেই-ই। সমালোচনা সম্পর্কে তাঁর মত ও পথ অনুধাবনের জন্যে আমরা তাঁর ‘বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা' গ্রন্থের প্রথম তিনটি রচনা (যথাক্রমে : সমালোচনা, সমালোচনার সামাজিক দায়, সমালোচনার সমালোচনা) থেকে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করছি,
‘‘নিহিতার্থ সন্ধান সমালোচনার প্রধান কাজ। রূপকে সমালোচনা অগ্রাহ্য করে না, কিন্তু তার অন্তিম গন্তব্য আত্মা। যে-সমালোচনা রচনার আত্মাকে আবিষ্কার করতে পারলো না, তা বৃথা। আজকালকার দেহাত্মবাদী সমালোচনারও তীর্থ আত্মাই। আধুনিক সমালোচকের কাছে আধার ও আধেয় তুল্যমূল্য। ... খারাপ লেখাকে সবসময় চিহ্নিত করার দরকার নেই সমালোচকের, কিন্তু উত্তীর্ণ রচনা মাত্রকেই শনাক্ত করা প্রয়োজন। খারাপ লেখা আপনিই ঝরে যায়। কিন্তু ভালো লেখার তারিফ সাহিত্যের উন্নয়নের জন্যে, দিকনির্দেশের জন্যে দরকার। ভালো লেখা অপ্রশংসিত অবস্থায় পড়ে থাকা মানে সেই সাহিত্যের একটি সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয় কেবল-পরবর্তী সাহিত্যের অগ্রসরণও তাতে বাধাগ্রস্ত হয়। ভালো লেখা চিহ্নিত করা মানে রুচির নির্মাণ, রুচির উন্নয়ন, রুচির গুঞ্জরণ। ... স্পষ্টতার জন্যে সমালোচনার ভাষায় স্বচ্ছতা অনিবার্য। স্বচ্ছতার মানে অবশ্য তরলতা, রম্যতা বা সাংবাদিকতা নয়। সাধারণত এই তিন দোষ জুড়ে থাকে সমালোচনায়। সমালোচনা শেষ পর্যন্ত সাহিত্য। কাজেই তাকে স্বচ্ছ কিন্তু নির্বহুল হতে হয়, সাহিত্যগুণে ঋদ্ধ হতে হয়। ... শুক্ল, স্বগত, সংযত সমালোচনাই শ্রেষ্ঠ সমালোচনা। ... রুচিই হচ্ছে সমালোচনার আদি উৎস। রুচিই নির্বাচনের শক্তি দ্যায়। বাজে সমালোচকের রুচি খারাপ, এবং নির্বাচনের শক্তি নেই। ... সমালোচনায় নৈর্ব্যক্তিকতার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে নৈর্ব্যক্তিকতা একটা অসম্ভব ব্যাপার। সমালোচকও তো আদর্শবান, যে-আদর্শ তাঁর পাঠ, প্রস্তুতি, অনুভূতি, অভিজ্ঞতার একটি কেলাসিত রূপ। প্রত্যেক সমালোচক তো অনন্য হয়ে ওঠেন তাঁর এই আদর্শ থেকেই। সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিক যিনি, তিনি সমালোচক নন। ... মন্তব্য সমালোচনা নয়, সমালোচনা মানে বিশ্লেষণ। সে-বিশ্লেষণে রচয়িতার অন্তঃপ্রকৃতি কেবল বিশ্লেষিত হয় না, হয় তাঁর সমকালীন দেশ-কালও, তাঁর ধারাবাহিকতাও। সেজন্যে সমালোচনায় একটি সামাজিক দায়িত্ব উদযাপিত হয়। সাহিত্যের সত্য কোনোদিন কোনো চলিষ্ণু সামাজিক সত্যের বিরোধী হতে পারে না-অন্তর্গত অর্থে। হতে পারে আপাত-বিরোধী, কিন্তু স্থায়ী সত্যের উপাদান তার মধ্যে থাকেই থাকে। সমালোচনা তো কোনো জীবনবিচ্যুত জীবনবিদ্বেষী অতি তাত্ত্বিক রূপ মাত্র নয়। সমালোচনা জীবনশ্লিষ্ট এক ব্যাপার। সুতরাং সমালোচনা ব্যাপারটিই সামাজিক ব্যাপার। সমালোচনা সামাজিক।’’ (বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা, আবদুল মান্নান সৈয়দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৪।)
সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রে তাঁর এমন সাম্যশীতল অথচ সাহসশাণিত দৃষ্টিভঙ্গি না হলে কি তিনি সৈয়দ আলী আহসানকে-যাঁর নাম-গন্ধও আজ পাওয়া যায় না আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে-এদেশের আধুনিক সমালোচনা-সাহিত্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ আখ্যা দিতে পারতেন? তিনি সৈয়দ আলী আহসান সম্পর্কে লিখেছেন,
‘‘বস্তুত সৈয়দ আলী আহসানই এদেশের আধুনিক সমালোচনা-সাহিত্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ। তিনিই প্রথম এদেশে এলিয়ট-কথিত সমালোচনার দুই কুশলতা, তুলনা ও বিশ্লেষণ প্রয়োগ করেন। বিষয়বিচারী সনাতন সমালোচনা-পদ্ধতি তাঁর আগে, এবং পরেও, আমাদের সমালোচনাকে বিপর্যস্ত করেছে-এবং সেজন্যে তাঁর সমালোচনা-পদ্ধতি অনুধাবনযোগ্য। পান্ডিত্য কখনো ভার হয়ে দেখা দেয়নি তাঁর রচনায়-একটি লঘু সচ্ছল ক্রীড়াশীল ভূমিকা উদযাপন করেছে। (বাংলা সাহিত্যে মুসলমান, আবদুল মান্নান সৈয়দ, পৃ. ২৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৯৯৮।) এবং এই একই কারণে তিনি সুসমালোচনার অভাব, সমালোচনায় সহিষ্ণুতা ও নিরপেক্ষতার অভাবকে সাহিত্যজগতের জন্য মনে করতেন এক চূড়াস্পর্শী নৈরাজ্য -সাহিত্যের ক্রান্তিকাল :
‘‘ভালো সাহিত্যপত্র, সুসমালোচনা, সহিষ্ণুতা, নিরপেক্ষ তা প্রভৃতির অভাবে সাহিত্যজগতে নৈরাজ্য এখন চূড়াস্পর্শী। লিখতে শেখার আগেই গ্রন্থ প্রকাশ করা, প্রকাশনা-উৎসবের ব্যবস্থা করা, পত্রিকায় কাগজী সমালোচনার আয়োজন করা- এ সবই হয়ে দাঁড়িয়েছে সাহিত্যের নিয়ামক শক্তি। হ্যাঁ, যাকে একসময় হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেই ক্রান্তিকাল সাহিত্যে এখন সত্যি এসে উপস্থিত হয়েছে।’’ (মাসিক অগ্রপথিক, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃ. ১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।)
২.
শিল্পে-সৃজনে তেমন কোনো জবাবদিহির প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে একজন শিল্পী যখন অভ্যাসের অনুবর্তনে চর্চিত আপাতসৌন্দর্যাসক্তি থেকে বাঁক বদল করে বাস্তব সৌন্দর্য ও উচ্চাদর্শের দিকে ধাবিত হন, তখন তাঁকে নানা প্রশ্নের পিচ্ছিল কাদায় পড়তে হয়, তবে তিনি তাতে আটকে না পড়ে, সরল-স্বচ্ছ পথ বেয়ে মনজিলের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তাই  এসব প্রশ্নের উত্তর, আমার মনে হয়, তিনি অনেকটা বাধ্য হয়ে দিয়েছেন। কারণ, ‘সৃজনের কোনো জবাবদিহি চলে না। কবি বা শিল্পীর স্বধর্মই চলিষ্ণুতা।' বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ‘সোনালি কাবিন'এর কবি কেন পরে বাস্তববোধ, বিশ্বাস ও লক্ষ্যভেদী ‘সরল পথ'-এ ক্রমঅগ্রসর হলেন, সেই প্রশ্ন অনেককে পিষ্ট করেছে। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর পক্ষ হয়ে উত্তর দিয়েছেন :
‘‘সোনালি কাবিন'এর কবি কেন ওরকম নয় এরকম, অর্থাৎ পাঠক বা সমালোচকের ইচ্ছাপূরক নয়- এসবের কোনো জবাব নেই। সৃজনের কোনো জবাবদিহি চলে না। কবি বা শিল্পীর স্বধর্মই চলিষ্ণুতা। তাঁর এই স্বাভাবিক পরিণামকে না-বুঝে যদি ‘‘ডাকঘরে’’র মাধব দত্তের মতো আমরা অস্থির হয়ে উঠি, তাহলে আল মাহমুদের অধিকার আছে ঐ নাটকের ঠাকুর্দার মতো কড়া ধমক দিয়ে উঠতে, ‘চুপ করো অবিশ্বাসী! কথা কয়ো না।'-’’ (আল মাহমুদের সাম্প্রতিক কবিতা, আবদুল মান্নান সৈয়দ, প্রেক্ষণ (সাহিত্য ত্রৈমাসিক), আল মাহমুদ সংখ্যা, ২০০৭, পৃ. ১৬০।)
তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ মাছ সিরিজ (১৯৮৪)। প্রকাশের পর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর সামগ্রিক কবিতাচর্চা থেকে এই গ্রন্থ বেশ ভিন্ন। এ-গ্রন্থের কবিতাগুলো বিশুদ্ধ প্রতীকী কবিতা। ভাবে-বিষয়ে তাঁর অন্যান্য কবিতা থেকে বেশ আলাদা। কবিতাগুলোতে রয়েছে আধ্যাত্মিকতা ও মরমিবাদ। মরমিবাদ মান্নান সৈয়দের জীবনে সবসময়েই ছিল। সে-কথা এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি ধার্মিকতা ও মরমিবাদকে আলাদা করে দেখেন। তাঁর মতে ‘ধার্মিকতা হলো ধর্মাচরণ আর মরমিবাদ হলো ঈশ্বরবোধ'।
মনে রাখতে হবে, কবিতা-বিচার শুধু আধেয় দিয়ে নয়। আধার ও আধেয় দুটোই বিচার্য্য। কী বলা হচ্ছে এবং কীভাবে বলা হচ্ছে- দেখার বিষয় দু'টোই। বিষয় ও শিল্পরীতি দু'টোরই গুণাগুণ শনাক্ত করতে হবে। কবিতার মতো নান্দনিক পরিচর্যার বিষয়টি শুধু বিষয় দিয়ে কলুষিত হতে পারে না। বিষয়ের কারণে কবিতা শুদ্ধ কিংবা অশুদ্ধ হয় কী করে? কবিতা-অকবিতা বিচারের প্রশ্নটি যদি এসেই যায়, তা হলে তা করতে হবে শৈল্পিক গুণাগুণের নিরিখে-আধেয় ও আধার দু'টোকেই সামনে রেখে। যেটাই বলা হোক না কেন, শিল্পগুণে সমৃদ্ধ হলেই কবিতা হবে, এ যেমন একদিকে সত্য, তেমনিভাবে আরো জোরালো সত্য যে, কবি একজন মানুষ হিসেবে, সামাজিক জীব বলে এবং কবির সামাজিক দায়িত্ব আছে বলে, তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, তার সৃষ্টি যেন মানবজাতিকে চিরসুন্দর ও কল্যাণের শিবিরে আশ্রয় দেয়। আরেকটু এগিয়ে যদি বলি, ‘ঈশ্বরগুপ্তের কাছে কবিতা শুধু শিল্প নয়, সমাজ-সংস্কারের হাতিয়ার', তাহলে আমাদের কথাকে অনেকে ‘প্রেতকাহিনীর পুনরাবৃত্তি' বলে উড়িয়ে দিবে। কিন্তু ভুললে চলবে না, কাব্য ভাব বা বিষয়-নিরপেক্ষ কোনো রূপরচনা নয়। কাব্য ভাব বা বিষয়কে অবলম্বন করে, স্বপ্ন-কল্পনা ও সৌন্দর্যের পথ ধরে সৃজনশীলতার স্পর্শে এক অপরূপ মোহনীয়তা সৃষ্টি করে। ফলে রাজনীতি-সমাজনীতি, ধর্ম-দর্শন, সবকিছুই কাব্যের বিষয় হতে পারে, তবে সবকিছুকে আসতে সৌন্দর্যের রূপে, যা কবি-পাঠকের কল্পনাকে তৃপ্তি দেয়। আর এই স্বপ্ন-কল্পনা ও সৌন্দর্যের পথ ধরে সৃজনশীলতার স্পর্শে এক অপরূপ মোহনীয়তা সৃষ্টি করতে পারলেই, কবিতার (এবং ব্যাপক অর্থে যে কোনো শিল্পকর্মের) অন্তর্গত ভাব বা বক্তব্যবিষয় চিরপুরাতন হয়েও চিরনবীন হতে পারে অভিব্যঞ্জনায়। আসলেই এই নতুনত্ব ও মনোহারিত্ব উপস্থাপনা ও প্রকাশকৌশলের কারণেই। অভিব্যঞ্জনায় অভিনবত্ব আসতে হয় সৌন্দর্যের রূপে, কল্পনার পথ ধরে। উপর্যুক্ত বিচারে মান্নানের ‘সকল প্রশংসা তাঁর' অসাধারণ শিল্পকোমল কাব্যগ্রন্থ। ধর্মের চিরাচরিত বিষয়গুলোকে তিনি কবি-কল্পনার মাধুরি মিশিয়ে, আশ্চর্য কুশলী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। দেখা যাক কিছু পঙক্তি :
তাঁরই মুক্তা প্রজ্জ্বলিত ঘন-নীল রাত্রির ভিতরে;
তাঁরই হীরা দীপ্যমান দিবসের পূর্ব ললাটে;
যুক্ত করে দেন তিনি তুচ্ছতাকে- অসীমে, বিরাটে;
সমস্ত সৌন্দর্য তাঁরই লোকোত্তর প্রতিভাস ধরে। (সকল প্রশংসা তাঁর, পৃ.০৯)

-তোমারই আদর্শ আজো আমাদের অবাধ্য শণিতে
খেলা করে। তাই আজো মৃত্তিকার পৃথিবী রঙিন;
প্রবল বন্যারাও শেষে শস্য জাগে উর্বর পলিতে। (হজরত উমর (রা.) গোলাপে-ইস্পাতে, পৃ. ২১)

যতোদূর চোখ যায় নীলাকাশ সুদূরবিস্তৃত,
রৌদ্রের প্লাবনে ওই ভেসে যাচ্ছে মাঘের আকাশ।
দীপ্ত দিনের শহরে এদিকে জনতা উর্দ্ধশ্বাস
যে যার নিজের কর্মে ধাবমান -আত্মসমাহিত। (মধ্যদিন, পৃ. ৩১)

পৌষের দুপুরবেলা। বসে আছি ছাদের উপর।
নীলাকাশে ভেসে আছে পেঁজা-পেঁজা শাদা মেঘদল-
আসছে, যাচ্ছে। যতোদূর দৃষ্টি যায়, রৌদ্রকরোজ্জ্বল।
পাখির ডাকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে হাতুড়ির স্বর। (স্কেচ, পৃ. ৩৫)
৩.
যে-শিল্প -সাহিত্য/কবিতা- মানুষের আত্মিক প্রয়োজন পূরণ করে না এবং যে-কবিতা আত্মার খিদে মেটায় না; আত্মার খিদে জাগায়ও না, তাকে কবিতা নয় বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। চিন্তাহীন ও নিশ্চিন্ত, অনর্গল ও অমল উৎসারণকে কবিতা নয় বলে তিনি আখ্যা দিয়েছেন। এবং তিনি বলেছেন, চিন্তাই একজন কবিকে বিশ্বাসের দুয়ারে উপনীত করে। এই যে বিশ্বাসের কথা, এবং আরো গভীর অর্থে আদর্শের কারণে শিল্প ব্যাহত হয় না, ধূসরতায় ম্লান হয় না-সেকথা কায়কোবাদ থেকে শুরু করে আজকের আল মাহমুদের শিল্প সম্পর্কেও জোর দিয়ে বলেছেন বারবার। এমনকি অপেক্ষাকৃত ‘কমখ্যাত'-অথচ প্রতিশ্রুতিশীল-সম্ভাবনাময়- সমসাময়িক অনুজ কবিদের সপ্রশংস স্বীকৃতি দিয়েছেন। মতিউর রহমান মল্লিক, সাজজাদ হোসাইন খান, জাকির আবু জাফর, খায়রুল হাবীব, আহমদ আখতার, মোশাররফ হোসেন খান, হাসান আলীম, আসাদ বিন হাফিজ, সোলায়মান আহসান, মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ প্রমুখের কবিতাকীর্তির আলোচনা করে তিনি সমালোচনায় সততা ও নিরপেক্ষতার স্বাক্ষর স্থাপন করেছেন।
ধর্মবিশ্বাস আর সত্য-সুন্দরের বিশ্বাসই উপরোক্ত কবিদের কবিতাকে মহিমান্বিত করেছে- প্রকৃত কবিতা করে তুলেছে। তিনি অনেক কবিদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘বিশ্বাসী হয়েও তিনি কবি, বিশ্বাসী হয়েই তিনি কবি'। বাক্যদ্বয়ের ‘আধুনিক' ব্যাখ্যা কী দিবেন আজকের ‘আধুনিক কবিরা'?- জানতে বেশ ইচ্ছে করে। আমাদের মতো আধুনিক ‘কাব্য-খদ্দরদের' জিভ থেকে লালা ঝরে ‘আধুনিক সমালোচনা'র স্বাদ নেয়ার জন্যে। সুতরাং তাঁরই কথা ধার নিয়েই বলি, মান্নান সৈয়দ কবি বলেই বিশ্বাসী, বিশ্বাসী বলেই তিনি প্রকৃত কবি। সেই বিশ্বাসের ‘মেরাজ' তথা সমুন্নতি ঘটেছে ‘সকল প্রশংসা তাঁর', ‘মাছ সিরিজ' ও ‘আমার সনেট' ইত্যাদি গ্রন্থে।
কোনো সচেতন পাঠক এবং সন্ধানী সমালোচকের অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আবদুল মান্নান সৈয়দ আকৈশোর ফররুখ-অনুরাগী, এবং কবিতায় বহুদিক দিয়ে তিনি ফররুখ-প্রভাবিত। তবে অন্য-অনেক ফররুখ-অনুসারীদের মতো তাঁর কাব্যচেতনায়ও মিশ্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মান্নান সৈয়দের ফররুখ-অনুরাগ এবং তাঁর কবিতায় ফররুখ-প্রভাব প্রসঙ্গে আমি শামসুল ইসলাম সাঈদের বক্তব্য হাজির করছি। তিনি বলেন,
‘‘ফররুখের অনুসারী অন্য কবিদের ভেতর কাব্যচেতনায় মিশ্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আল মাহমুদের কবিতার প্রাথমিক স্তরে ফররুখের প্রভাব না থাকলেও পরবর্তীকালে আল মাহমুদ ফররুখের কাব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। ... অন্য উল্লেখযোগ্য কবি হচ্ছে আবদুল মান্নান সৈয়দ, তিনি আকৈশোর ফররুখ-অনুরাগী। ... তাঁর জ্যোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা (১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাতেই ‘সূর্যাস্ত ফেলেছে নিঃশ্বাস ফেরেস্তাদের রঙচঙে কাপড় চোপড়... ফাজিল আলোয় বসে নিদ্রার অপর জামা পরে আমার আল্লার ধ্রুব... আকাশে বসেছে মাশায়রা ফিরোজ অত্যাচারে পোড়ে মধ্যরাত। তুলি ধরি বান্দার রেকাব... কবিতা হা আমার কবিতা' ইত্যাদিতে এ ভাব প্রকাশ করলেও তাঁর কবিতা অনেক ক্ষেত্রে ফররুখ আহমদকে অনুসরণ করেনি। অবশ্য আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতায় সংশয়াচ্ছন্নতা স্পষ্ট, কখনো জীবনানন্দ দাশের কখনো ফররুখ আহমদের প্রভাবে তিনি উচ্চকিত।’’ (কাব্য বিশ্বাসের কবি ও কবিতা, শামসুল ইসলাম সাঈদ, পৃ. ১৪৪, ইউপিএল, ঢাকা, ১৯৯৫।)
যেখানে, শুধু বিশ্বাস ও ধর্মের কারণেই, প্রকৃত কবিতার মহিমা খর্ব করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেই তিনি ক্ষোভে-ক্রোধে ফুঁসে ওঠেছেন। ফররুখ আহমদের সমকালীন সতীর্থ কবি-বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ফররুখের কবিতা সম্পর্কে তাঁর মগজহীন মতলবী মন্তব্যের প্রতিবাদে মান্নান সৈয়দ লিখেন,
‘‘ফররুখ সম্পর্কেও এরকম দুরুক্তি করেছেন তিনি (সুভাষ মুখোপাধ্যায়) ‘আমার বন্ধু ফররুখ' নামক রচনায়। তিনি লিখছেন :
‘আমার কাছে চাপলেও নিশ্চয় গোঁড়া ইসলাম ধর্ম ওকে প্রবলভাবে টেনেছিল। তারই জোয়ারে লেখা ওর ‘সাত সাগরের মাঝি'। ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় ভোল পাল্টে গিয়েছিল ওর লেখার। তার পাশে ওপর প্রথম যৌবনের প্রেমের কবিতাগুলো একেবারেই জলো মনে হয়।'
এই উক্তির প্রতিটি শব্দের পেছনে বদ-মতলব কাজ করেছে। প্রথমত, ইসলাম ধর্মই গোঁড়া, সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই জ্ঞান কোত্থেকে পেলেন? দ্বিতীয়ত, ‘সাত সাগরের মাঝি'তে এককণা গোঁড়ামি নেই, আছে বিশুদ্ধ কবিতা। ইসলামী অনুপ্রেরণা এখানে কাজ করেছে-প্রেরণা এখানে কবিতায় রূপান্তরিত হয়েছে বলেই না ফররুখ আহমদকে নিয়ে আমাদের এতো গৌরব, তাঁকে নিয়ে অনেকের বিতর্ক-বিদ্বেষ, এমনকি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কূটভাষও ঐ কারণেই।'' (বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা, আবদুল মান্নান সৈয়দ, পৃ. ১২৯, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৪।)
মান্নান সৈয়দের কাছে ‘ইসলামি বাংলা সাহিত্য বলে' স্বতন্ত্র কিছু ছিল না। তাঁর বিবেচনার একমাত্র মানদন্ড ছিল সাহিত্যিক বা শৈল্পিক গুরুত্ব। সেখানে হিন্দু-মুসলমান পরিচয়, কিংবা ধর্মীয়-অধর্মীয় সাহিত্য অভিধা কোনোভাবেই মুখ্য ছিল না। এ কারণেই তিনি নিজের উদার করতলে কেবল একটি দেশ নয়, একটি মহাদেশকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম

আবদুল মান্নান সৈয়দ : আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব | মোহাম্মদ সা'দাত আলী

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০; রবিবার। সকাল ১০টা বা তার কিছু পরে। সেল ফোনে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। ‘‘বাংলা দর্পণ : আলাউদ্দিন আল আজাদ সংখ্যা’’ কুরিয়ারে পাঠিয়েছি বাসার ঠিকানায়। পেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হতে ফোন করেছি। বেশিক্ষণ কথা হয়নি। ফোনালাপের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছিল যেন প্রাণচাঞ্চল্যে কমতি কোথাও। তখনও জানি না, তিনি হৃদয়াক্রান্ত। অন্য সময় ফোন করলে স্বতঃস্ফূর্ত কথা হতো। কিন্তু আজ খুবই সামান্য হল। বললেন : ‘‘পত্রিকাটা পেলে তো আমার স্মরণে থাকতো’’ এটুকুই যেন বলতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। কুশলাদি বিনিময় করে রেখে দিলাম। অসুখের কথা কিছুই বললেন না। একটু পরেই তাঁর বাসা থেকে জেনেছি, স্যারের সামনে এখন আর সবকিছু দেয়া হয় না। ডাক্তারের নিষেধ। তিনি হার্টাক্রান্ত। ঘরের লোক ও ডাক্তার ছাড়া কারও সঙ্গে হালকা আলাপ-সালাপ ছাড়া পড়া নিষেধ। দেখাও বারণ। কারণ, তিনি কথা বলতে চাইতে পারেন।
আমারও মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা এমন হতে পারে যে, কুরিয়ারে পত্রিকাটি বাসায় ঠিকই গিয়েছে। স্যার হার্টের রোগী। অফুরান বিশ্রাম দরকার। হার্টে চাপ পড়ে তেমন কাজ করা বারণ। সে-কারণেই পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ সংখ্যাটি হাতে দেনই-নি।
যেদিন থেকে তাঁকে সামনাসামনি চিনি, আমার চোখে আবদুল মান্নান সৈয়দ নিরেট একজন ভাল মানুষ। নিরহংকারী। যে কোন ভালকে তিনি কদর করতে জানতেন। কাউকে প্রাপ্য সম্মান দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য ছিল না তাঁর মধ্যে।
১৯৯৫ বা কাছাকাছি সময়কাল। ‘‘এখন’’ নামক একটি সাহিত্য মাসিকের তিনি প্রধান সম্পাদক। খুব সম্ভব, সে-বছরের আগস্ট সংখ্যা হবে। বোধ করি সেটাই শেষ সংখ্যা। সম্পাদকীয় কিয়দংশ লিখেছিলেন আমাকে নিয়ে। ঐ পত্রিকার এক সংখ্যায় তাঁর অনুরোধে, আমি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকদের তালিকা করে দিয়েছিলাম। ১৯০১ থেকে হাল অবধি। সংখ্যাটি বর্তমানে আমার কাছে নেই। বার বার বাসা বদলে কোনভাবে খোয়া গেছে। আরও খোয়া গেছে অনেক লেখা ও পত্রিকার সংগ্রহ।
আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর সৃষ্টির জন্য বোদ্ধা পাঠকের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্র কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ মতিউর রহমান মল্লিক এইমাত্র কিছু দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন। মল্লিক তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করেছিলেন। আমিও করেছি আমার ৩য় কাব্য গ্রন্থ ‘‘লালগালিচা সংবর্ধনা’’।
মাটির পৃথিবীর এটা স্বাভাবিকতা যে, সব মানুষ বিদায় নেবে এমনিভাবে। থেকে যাবে কেবল কৃত্য। গুণ ও কৃত্যে যাঁরা অগ্রগামী, প্রতিভায় যাঁরা সব্যসাচী, মনুষ্যগুণে যাঁরা ঋদ্ধ-সর্বকালেই তাঁরা মনুষ্যসমাজে ও গ্রন্থাদিতে বরেণ্য এবং প্রশংসিত হয়ে থাকবেন।
মতিউর রহমান মল্লিক গেছেন, মান্নান সৈয়দও গেছেন। বছর খানেক আগে (৩ জুলাই, ২০০৯) গেলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। আমিও চলে যাব একদিন। একে একে চলে যাবে সবাই। মৃত্যুর কাছে নিষ্কৃতি নেই কারও। এই অনুভূতি নিয়ে কেবল এতটুকু প্রত্যয় ব্যক্ত করা যেতে পারে যে, সামনের দিনগুলি এবং চলমানতা যেন হয় মসৃণ এবং সহজ আর জীবনময় ভালবাসার।
পবিত্রতার মাস রমযানে বিদায় নিলেন মান্নান সৈয়দ। অনেকেরই এমন আগ্রহ পেশ করা থাকে বিধাতার কাছে। মান্নান সৈয়দ তেমন ভাবতেন কিনা জানি না। সৈয়দের ‘‘সকল প্রশংসা তাঁর’’ কাব্যগ্রন্থটি যদিও তেমন কথা বলে না। তবুও আকাঙ্ক্ষা অনেকের, যদি চির বিদায়টা হয় রমযানে! প্রার্থনা থাকলো বিধাতা সমীপে : ‘আমার বিদায় যেন হয় তেমন এক শুভ দিনে যখন মানুষেরা কেবলি বিধাতার কাছে অবনত'।
আবদুল মান্নান সৈয়দ উভয় বাংলায় সমভাবে আদৃত । তাঁর সৃষ্টিরা এমনই যে, সৈয়দ সাহেবকে স্মরণ না করে উপায় নেই। যেমনি মৌলিকত্ব, তেমনি গবেষণা। কত বরেণ্যকে তিনি সম্মানিত করেছেন। গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন। খুঁজে পেতে এনে মলাটভুক্ত করেছেন অসংখ্য লেখা। কেবল তাঁকেই যেন মানিয়েছে এসব কৃত্যের।

আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর জীবনালেখ্য | তৌহিদুর রহমান

আবদুল মান্নান সৈয়দের জীবন বহুদূর বিস্তৃত। আমরা তাঁকে একজন কর্মবীর বলে মনে করি। বহু বিচিত্র পথে তিনি পদচারণা করেছেন। তিনি একাধারে ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ এবং আপদমস্তক একজন লেখক। দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী-রূপালী আলোয় ঝলমলে তাঁর সাহিত্য সম্ভার। সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি হেঁটেছেন অত্যন্ত দাপটের সাথে। তাঁর এই বিশাল-বহুমুখী-বহুধাবিস্তৃত রচনাসম্ভারকে ‘বহুতল বিশিষ্ট ইমারত'-এর সাথে তুলনা করেছেন অনেকেই। যে ইমারতের প্রতিটি কক্ষই আলাদা, স্বাধীন, স্বতন্ত্র এবং মণি-মুক্তা খচিত।
অনেক বছর আগে থেকেই আবদুল মান্নান সৈয়দের লেখার সাথে আমার পরিচয় ছিল। ষাটের দশকের কিছু প্রতিভাবান কবি বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ নতুন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কাব্যধারা সৃষ্টির জন্য বিস্তর নিরীক্ষণ শুরু করেন। আমরা মনে করি আবদুল মান্নান সৈয়দ তাদের মধ্যে অন্যতম। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর কবিতায় বিভিন্ন আবহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুশীলনের ছাপ রেখেছেন। কবিতায় তিনি নানা রঙের ব্যবহার করেছেন অবলীলায়। কবিতার আকাশে তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে পাঠকের মনে অবস্থান করবেন বহুযুগ ধরে। এছাড়া অন্য যাঁরা বিশেষভাবে উজ্জ্বল তাঁরা হলেন, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ (১৯৪০-), আফজাল চৌধুরী (১৯৪২-২০০৪), রফিক আজাদ (১৯৪৩-), আসাদ চৌধুরী (১৯৪৩-), তিতাশ চৌধুরী (১৯৪৫-), আবু কায়সার (১৯৪৫-), সাযযাদ কাদির (১৯৪৭-), আবুল হাসান (১৯৪৭-৭৫), ফরহাদ মাজহার (১৯৪৭-) প্রমুখ।

যাহোক, সাহিত্যের মাঠে আবদুল মান্নান সৈয়দ ছিলেন একজন সফল নায়ক। তাঁর সমস্ত লেখালেখি পাঠ করার সৌভাগ্য আমার এখন পর্যন্ত না হলেও তাঁর বিভিন্ন রকমের সাহিত্য পাঠ করে আমি অতিশয় অবাক হয়েছি। এত বিশাল বিস্তৃত পরিসরে যিনি নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন, তা বড় পরিসরে তালিকাবদ্ধ অবস্থায় আমাদের জানা থাকা আবশ্যিক। সে উদ্দেশে তাঁর জীবন ও কর্মের ওপর পরিপূর্ণ একটা আলেখ্য আমি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। উল্লেখ্য যে, এই তথ্যের প্রায় সবটুকুই আমি লেখক থেকে সংগ্রহ করেছি। এজন্য আমি সবিনয়ে মরহুম আবদুল মান্নান সৈয়দের কাছে কৃতজ্ঞ। জাহিদা মেহেরুননেসার কাছেও আমি যারপরনাই ঋণি, কারণ তার কৃত পুস্তিকাও এক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।

মান্নান সৈয়দের গুরুত্ব বাংলা সাহিত্যে যুগযুগান্তরের পথ পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সত্যের মতো বদমাশ একটি অসাধারণ গল্পগ্রন্থ। যদিও এটি ষাটের দশকে লেখা, তবু গল্পের আঙ্গিকে রয়েছে আধুনিক রীতির ছাপ। বর্তমান বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকদের লেখার বৈশিষ্ট্য হলো আত্মদর্শন। তাঁর ‘সত্যের মতো বদমাশ' গল্পগ্রন্থে ষাটের দশকেই তার প্রমাণ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এর পরেও তিনি অসংখ্য গল্প লিখেছেন। কথা-সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি জীবনের গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। সব ধরনের পাঠকের জ্ঞাতার্থে লেখকের কর্মময় জীবনের পরিপূর্ণ একটি চিত্র উপস্থাপন করা হলো।

জন্ম ও পরিচিতি : আবদুল মান্নান সৈয়দ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চবিবশ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার জালালপুর গ্রামে ১৮ শ্রাবণ ১৩৫০, ৩ আগস্ট ১৯৪৩-এ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা-আলহাজ্ব সৈয়দ এএম বদরুদ্দোজা (১৯১০-১৯৮৯), মাতা-আলহাজ কাজী আনোয়ারা মজিদ (১৯২০-২০০৩)।

পড়ালেখা : পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগণা জেলার বশিরহাট মহকুমার জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। সেখানে তিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তারপর দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাস করেন।

কর্মক্ষেত্র : আবদুল মান্নান সৈয়দ একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এমসি কলেজসহ দেশের অনেক স্বনামখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন কয়েক বছর। সর্বশেষ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কলার-ইন-রেসিডেন্স ছিলেন।

লেখালেখী : অনেকের মতো কবিতার হাত ধরেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ আবদুল মান্নান সৈয়দের। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ' প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। কেবল কবিতা নিয়েই থেমে থাকেননি, কবিতার পাশাপাশি সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা। কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, জীবনী ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন। যে সামান্য ক'জন লেখক সমালোচক সাহিত্যের ক্ষেত্রে অসম্ভব অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন আবদুল মান্নান সৈয়দ তাদের মধ্যে অন্যতম। সম্পাদনাও তাঁর কর্মক্ষেত্রের বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে নজরুল-রচনাবলী, ফররুখ-রচনাবলী, মোহাম্মাদ ওয়াজেদ আলী-রচনাবলী, শ্রেষ্ঠ কবিতা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ১১টি পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন বিভিন্ন সময়। এর মধ্যে যেমন লিটলম্যাগ আছে তেমনি আছে প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকা। রেডিও টিভিতেও সমালোচনা সাহিত্যসহ সমসাময়িক অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। দিয়েছেন অনেক বক্তৃতা। ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা, অভিভাষণ ও লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন এবং কলকাতা সাহিত্য একাডেমীতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন অনেকবার। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে পড়ানো হয়। ইংরেজি, ফরাসি, হিন্দি, উর্দু, জাপানি, সুইডিস প্রভৃতি ভাষায় তাঁর একাধিক লেখা অনূদিত হয়েছে। আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য সাহিত্যের নিদর্শন হিসেবে তাঁর একটি গল্প পড়ানো হয়। গল্পটির নাম ‘অধঃপতন-The Fall’। ব্যাপক গবেষণা করেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কায়কোবাদ, শাহাদাৎ হোসেন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, ফররুখ আহমদ, সিকান্দার আবু জাফর প্রমুখকে নিয়ে। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র আধুনিক বাংলা সাহিত্য। কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, ফররুখ আহমদকে নিয়ে তিনি সর্বাধিক কাজ করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা দেড় শতাধিক। ভূমিকাও লিখেছেন অসংখ্য গ্রন্থে। সাহিত্যের বাইরে লেখকের আগ্রহ আছে চিত্রকলার ক্ষেত্রে। ‘বিংশ শতাব্দীর শিল্প- আন্দোলন' বিষয়ে লেখকের একটা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সমালোচনা সাহিত্য, স্মৃতিকথা, সম্পাদনা ইত্যাদি বিষয়ে এ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, তার মোটামুটি বিষয়ভিত্তিক একটা তালিকা এখানে তুলে ধরা হলো। এ কাজ জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহিত্যসেবীদের জন্যও অপরিহার্য বলে মনে করি। এ লেখার ভেতরে অনেক অসম্পূর্ণতা থাকতেই পারে। লেখকের ওপর তথ্যধর্মী আরো কাজ ক্রমশ বিস্তৃত হবে বলে আশা করি। লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থাবলির তালিকা নিম্নরূপ।

কবিতা : জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ (১৯৬৭), জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা (১৯৬৯), মাতাল মানচিত্র (১৯৭০, অনুবাদ-কবিতা), ও সংবেদন ও জলতরঙ্গ (১৯৭৪), নির্বাচিত কবিতা (১৯৭৫), কবিতা কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৮২), পরাবাস্তব কবিতা (১৯৮২), পার্ক স্ট্রিটে এক রাত্রি (১৯৮৩), মাছ সিরিজ (১৯৮৪), বিদেশি প্রেমের কবিতা (১৯৮৪, অনুবাদ-কবিতা), পঞ্চশর (১৯৮৭), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮৭), আমার সনেট (১৯৯০), সকল প্রশংসা তাঁর (১৯৯৩), নীরবতা গভীরতা দুই বোন বলে কথা (১৯৯৭), নির্বাচিত কবিতা (২০০১), কবিতাসমগ্র (২০০২), কবিতার বই (২০০৬), হে বন্ধুর বন্ধু হে প্রিয়তম (২০০৬)। 

ছোটগল্প : সত্যের মতো বদমাশ (১৯৬৮), বলো যাই পরোক্ষে (১৯৭৩), মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা (১৯৭৭), নির্বাচিত গল্প (১৯৮৭), উৎসব (১৯৮৮), নেকড়ে হায়েনা আর তিন পরী (১৯৯৭), গল্প (২০০৪), মাছ মাংস মাৎসর্যের রূপকথা (২০০১), নির্বাচিত গল্প (২০০২), শ্রেষ্ঠ গল্প (২০০৭)।

উপন্যাস : পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী (১৯৭৪), কলাকাতা (১৯৮০), পোড়ামাটির কাজ (১৯৮২), অ-তে অজগর (১৯৮২), সে সংসার হে লতা (১৯৮২), গভীর গভীরতর অসুখ (১৯৮৩), প্রবেশ (১৯৯৪), ক্ষুধা প্রেম আগুন (১৯৯৪), শ্যামলী তোমার মুখ (১৯৯৭), শ্রাবন্তীর দিনরাত্রি (১৯৯৮), ভাঙা নৌকা (২০০৬)।

প্রবন্ধ গ্রন্থ : শুদ্ধতম কবি (১৯৭২), জীবনানন্দ দাশের কবিতা (১৯৭৪), নজরুল ইসলাম : কবি ও কবিতা (১৯৭৭), করতলে মহাদেশ (১৯৭৯), দশ দিগন্তের দ্রষ্টা (১৯৮০), বেগম রোকেয়া (১৯৮৩) ছন্দ (১৯৮৫), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯৮৬), নজরুল ইসলাম : কালজ কালোত্তর (১৯৮৭), চেতনায় জল পড়ে শিল্পের পাতা নড়ে (১৯৮৯), পুনর্বিবেচনা (১৯৯০), দরোজার পর দরোজা (১৯৯১), ফররুখ আহমদ : জীবন ও সাহিত্য (১৯৯৩), বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা (১৯৯৪), বাংলা সাহিত্যে মুসলমান (১৯৯৮), রবীন্দ্রনাথ (২০০১), আধুনিক সাম্প্রতিক (২০০১), নজরুল ইসলামের কবিতা (২০০৩)।

জীবনী গ্রন্থ : শাহাদাৎ হোসেন (১৯৮৭), জীবনানন্দ দাশ (১৯৮৮), ফররুখ আহমদ (১৯৮৮), আবদুল গনি হাজারী (১৯৮৯), সৈয়দ মুর্তাজা আলী (১৯৯০), মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (১৯৯৪), প্রবোধচন্দ্র সেন (১৯৯৪)।

কিশোর গ্রন্থ : বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) (২০০২), ভুতুড়ে কান্ড (২০০২)।

আত্ম-জীবনী: আমার বিশ্বাস (১৯৮৪), স্মৃতির নোটবুক (২০০০), সম্পাদকের কলমে (২০০৬)।

নাটক : নাট্যগুচ্ছ (১৯৯১), নাট্যসমগ্র (২০০৯)।

সম্পাদিত গ্রন্থ : ফররুখ আহমদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭৫), ফররুখ-রচনাবলী (প্রথম খন্ড ১৯৭৯), ইসলামী কবিতা : শাহাদাৎ হোসেন (১৯৮৩), শাহাদাৎ হোসেনের ইসলামী কবিতা (১৯৮৮), সমালোচনা সমগ্র : জীবনানন্দ দাশ (১৯৮৩), জীবনানন্দ (১৯৮৪), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮৬), জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলি (১৯৮৭), বাংলাদেশের কবিতা (১৯৮৮), বাংলাদেশের ছড়া (১৯৮৮), মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন স্মৃতি অ্যালবাম (১৯৮৮), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৯), সমর সেনের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮৯), মোহিতলাল মজুমদারের নির্বাচিত কবিতা (১৯৮৯), তোরা সব জয়ধ্বনি কর (১৯৮৯), ফররুখ আহমদের (১৯৯০), সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সুনির্বাচিত কবিতা (১৯৯০), বুদ্ধদেব বসুর সুনির্বাচিত কবিতা (১৯৯০), সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সুনির্বাচিত কবিতা (১৯৯০), আবদুস সাত্তার : জীবন ও সাহিত্য (১৯৯০), মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী-রচনাবলী (প্রথম খন্ড ১৯৯০, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৯২), আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মারকগ্রন্থ (১৯৯১), শ্রেষ্ঠ কবিতা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৯২), নির্বাচিত কবিতা : ফররুখ আহমদ (১৯৯২), নজরুল-রচনাবলী (প্রথম খন্ড থেকে চতুর্থ খন্ড, ১৯৯৩), প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমগ্র : জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৪), প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৪), অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৪), কায়কোবাদ-রচনাবলী (প্রথম খন্ড ১৯৯৪, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৯৪, তৃতীয় খন্ড ১৯৯৫, চতুর্থ খন্ড ১৯৯৭), দেবেন্দ্রনাথ সেনের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৫), গোবিন্দচন্দ্র দাসের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৫), কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৫), যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৫), ফররুখ আহমদ-রচনাবলী (প্রথম খন্ড ১৯৯৫, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৯৬), সিকান্দার আবু জাফর-রচনাবলী (প্রথম খন্ড ১৯৯৫, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৯৭, তৃতীয় খন্ড ১৯৯৯), প্রেমের কবিতা-সমগ্র : জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৬), বনলতা সেন : জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৬), রূপসী বাংলা : জীবনানন্দ দাশ (১৯৯৬), শ্রেষ্ঠ নজরুল (১৯৯৬), নির্বাচিত কবিতা : কাজী নজরুল ইসলাম (১৯৯৬), সাবদার সিদ্দিকি কবিতাসংগ্রহ (১৯৯৭), শ্রেষ্ঠ জীবনানন্দ (১৯৯৮), শ্রেষ্ঠ গল্প : মানিক বন্দোপাধায় (১৯৯৮), লেখার রেখায় রইল আড়াল : নজরুল ইসলাম (১৯৯৮), রোকেয়া-রচনাবলী (১৯৯৯), বাংলাদেশের ছোটগল্প (২০০০), শ্রেষ্ঠ কবিতা : যতীন্দ্রমোহন বাগচী (২০০০), শ্রেষ্ঠ কবিতা : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (২০০১), শ্রেষ্ঠ কবিতা : শাহাদাৎ হোসেন (২০০১), শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (২০০১), শ্রেষ্ঠ গল্প : কাজী নজরুল ইসলাম (২০০১), শ্রেষ্ঠ গল্প : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (২০০১), শ্রেষ্ঠ গল্প : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (২০০১), গল্পসমগ্র : হাসান হাফিজুর রহমান (২০০১), শ্রেষ্ঠ কবিতা : গোলাম মোস্তফা (২০০২), শ্রেষ্ঠ কবিতা : অমিয় চক্রবর্তী (২০০২), শ্রেষ্ঠ কবিতা : ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (২০০২), শ্রেষ্ঠ কবিতা : জীবনানন্দ দাশ (২০০২), শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : বেগম রোকেয়া (প্রথম খন্ড ২০০২), শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : বেগম রোকেয়া (দ্বিতীয় খন্ড ২০০২), শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (২০০২), নির্বাচিত শিখা (২০০২), কাব্যসমগ্র : আবু হেনা মোস্তফা কামাল (২০০২), নজরুল ইসলাম ও জসীমউদ্দীন (২০০৩),পরদেশে পরবাসী : আব্দুর রউফ চৌধুরী (২০০৩), কমরেড মুজফফর আহমদের অপ্রকাশিত পত্রাবলী (২০০৪), মেঘের আকাশ : আলোর সূর্য (কবিতা) : আবুল হাসান (২০০৪), অতীত দিনের স্মৃতি (২০০৪), কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক সাক্ষাৎকার (২০০৪), পান্ডুলিপি : নজরুল-সংগীত (২০০৫), নতুন দিগন্ত সমগ্র (উপন্যাস) : আব্দুর রউফ চৌধুরী (২০০৫), কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র (প্রথম খন্ড ২০০৫), কবি আবদি আজাদ স্মারকগ্রন্থ (২০০৬)।

পাঠ্যপুস্তক : উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সংকলন (সম্পাদনা) (১৯৯৮), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা।

পুস্তিকা ও স্মরণিকা সম্পাদনা : চাকা, (কাব্যনাট্য, ১৯৮৫), নজরুল-জন্মবার্ষিকী স্মারক (১৩৯২ ও ১৯৮৫), আল মাহমুদের সাম্প্রতিক কবিতা (প্রবন্ধ, ১৯৮৯), কবি ও অন্যেরা (কাব্যনাট্য, ১৯৯৬), সিকান্দার আবু জাফর : ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মারক (১৯৯৮), সিকান্দার আবু জাফর : স্মরণ-উৎসব স্মারক (১৯৯৯), জীবনানন্দ দাশ জন্মশতবার্ষিকী স্মারক (১৯৯৯), আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর গ্রন্থপঞ্জি (২০০০), গল্প (২০০১), সিকান্দার আবু জাফর : স্মরণিকা (২০০১), জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন (২০০২), জাতীয় পর্যায়ে নজরুল-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন স্মরণিকা (২০০২), জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন স্মরণিকা (২০০৩), জাতীয় পর্যায়ে নজরুল-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন স্মরণিকা (২০০৩), নজরুল পদক স্মরণিকা (২০০৩), জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন স্মরণিকা (২০০৪), জাতীয় পর্যায়ে নজরুল-জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন স্মরণিকা (২০০৪), সিকান্দার আবু জাফর : ৩০তম প্রায়াণ-দিবস স্মরণিকা (২০০৫), সিকান্দার আবু জাফর স্মরণ উৎসব স্মরণিকা (২০০৫)।

ভূমিকা সংবলিত আংশিক সম্পাদিত গ্রন্থ : কবি ও কবিতা : আনওয়ার আহমাদ সম্পাদিত (প্রবন্ধ সংকলন, ১৯৮৪), যুদ্ধের ছবি : সৈয়দ নূরুল আলম (গল্পগ্রন্থ, ১৯৮৬), আমাদের মিলিত সংগ্রাম মওলানা ভাসানীর নাম : আবদুল হাই শিকদার ও মুকুল চৌধুরী সম্পাদিত (কবিতা সংকলন, ১৯৮৬), বাংলাদেশের নির্বাচিত ছোটগল্প (গল্পসংকলন, প্রথম খন্ড ১৯৮৯, দ্বিতীয় খন্ড ১৯৮৯, তৃতীয় খন্ড ১৯৯০), ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক কাব্য : ফররুখ আহমদ (কবিতাগ্রন্থ, ১৯৯১), রুবাইয়্যাৎ/ আকুতি : আমিনুল হক আনওয়ার (কবিতাগ্রন্থ, ১৯৯৩), দিলরুবা : ফররুখ আহমদ (কবিতাগ্রন্থ, ১৯৯৪), বারেক আবদুল্লাহর গল্প (১৯৯৪), রসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা : ইশারফ হোসেন সম্পাদিত (কবিতা সংকলন, ১৯৯৫), বুক পেতেছি জলপ্রপাতে : চৌধুরী গোলাম মাওলা (কবিতাগ্রন্থ, ১৯৯৫), স্বনির্বাচিত গল্প : শামসুল আলম (১৯৯৬), হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা : ফাতিমা তামান্না সম্পাদিত (কবিতা সংকলন ১৯৯৮), জয়পাড়ার কাছেই : কে. এম. সালাহউদ্দীন (উপন্যাস ১৯৯৮), চতুষ্কোণ : মানিক বন্দোপাধ্যায় (উপন্যাস, ১৯৯৮), অহিংসা : মানিক বন্দোপাধ্যায় (উপন্যাস, ১৯৯৮), অবেলায় অবগাহন : দীপক ভৌমিক (কবিতা ২০০১), ছন্দের ঘরবাড়ি : মুজিবুল হক কবীর (কবিতা, ২০০১), গল্পসমগ্র : হাসান হাফিজুর রহমান (২০০১), কাব্যজিজ্ঞাসা : অতুলচন্দ্র গুপ্ত (প্রবন্ধ, ২০০২), স্বপ্নের মোড়কে ইচ্ছার বসবাস : মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ (প্রবন্ধ, ২০০২), স্মৃতিকথা : চৌধুরী শামসুর রহমান (স্মৃতিকথা, ২০০২), বাংলার কাব্য : হুমায়ুন কবির (প্রবন্ধ, ২০০২), কবিতার কথা : জীবনানন্দ দাশ (প্রবন্ধ, ২০০২), অভিনয়ের পাঠ : মুস্তাফিজুর রহমান সৈয়দ (প্রবন্ধ, ২০০২), নজরুল-সংগীত স্বরলিপি- স্বরলিপিকার : ইদরিস আলী (২২তম খন্ড, ২০০২), দিবারাত্রির কাব্য : মানিক বন্দোপাধ্যায় (উপন্যাস, ২০০২), নজরুল-সংগীত স্বরলিপি স্বরলিপিকার : নিখিলরঞ্জন নাথ (২৩তম খন্ড,২০০২), নানা প্রসঙ্গে নজরুল : মোহাম্মদ আবদুল কাইউম (প্রবন্ধ, ২০০২), Kazi Nazrul Islam : Poems Elegidos : ড. জাহাঙ্গীর তারেক অনূদিত (নজরুল কবিতার স্পেনীয় তর্জমা, (২০০২), নজরুল ইসলামের সাহিত্যভাবনা : আফজালুল বাসার (প্রবন্ধ, ২০০২), Kazi Nazrul Islam : Achansons Achoisies : ড. জাহাঙ্গীর তারেক অনূদিত (নজরুলের কবিতায় ফরাসি তর্জমা, (২০০৩), কুমিল্লায় নজরুলের স্মৃতিফলক : মোঃ মানিরুল ইসলাম। (প্রবন্ধ ২০০৩), নজরুলের কবিতা : শিল্পরূপ বিচার : ড. সৈকত আসগর (প্রবন্ধ, ২০০৩), কাব্য আমপারা : কাজী নজরুল ইসলাম (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), অগ্নি-বীণা : কাজী নজরুল ইসলাম (কাব্য, তৃতীয় মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), সন্ধ্যা : কাজী নজরুল ইসলাম (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), জিঞ্জীর : (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), চক্রবাক : (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), বের হাওয়া : (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৩), নজরুলকে যেমন দেখিছে : শামসুন নাহার মাহমুদ (স্মৃতিকথা, ২০০৩), সুর-মুকুর, কথা ও সুর : নজরুল, স্বরলিপিকার : নলিনীকান্ত সরকার (স্মৃতিকথা, ২০০৩), সুর-লিপি, কথা ও সুর : নজরুল। স্বরলিপিকার : জগৎ ঘটক (২০০৩), কবি নজরুল : চৈতন্যের দুই সহোদর : জুবাইদা গুলশান আরা (প্রবন্ধ, ২০০৪), নজরুল-সংগীত-স্বরলিপিতে রাগদর্শন : কৃষ্ণপদ মন্ডল (প্রবন্ধ, ২০০৪), রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ : কাজী নজরুল ইসলাম (কবিতা, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৪), ছায়ানট : কাজী নজরুল ইসলাম (কাব্য, প্রথম মুদ্রণের প্রতিলিপি, ২০০৪), নজরুল ইসলাম : দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ (প্রবন্ধ, ২০০৪), Selected Prose : Kazi Nazrul Islam. Translated by Subrata Kumar Das. (২০০৪), অগ্নি-বীণা : কাজী নজরুল ইসলাম (কবিতা ২০০৪), নজরুল ইসলাম : রওশন আরা মুস্তাফিজ (প্রবন্ধ, ২০০৪), পুতুলনাচের ইতিকথা : মানিক বন্দোপাধ্যায় (উপন্যাস, ২০০৪), নজরুল-স্বরলিপি : কাজী নজরুল ইসলাম (২০০৫), সিকান্দার আবু জাফর-সম্পাদিত ‘সমকাল' কবিতা-সংখ্যা। (পত্রিকা,২০০৬)।

সি.ডি: সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, স্বকণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান এবং কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি ও কাজী অনিরুদ্ধের গিটার। পরিকল্পনা ও নির্দেশনা-আবদুল মান্নান সৈয়দ (২০০৪), সি.ডিটি প্রয়োজনা করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট।

সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা : শিল্পকলা (১৯৭০-৭৩), চারিত্র (১৯৭৯-৮৪), কাফেলা-কলকাতা (অতিথি-সম্পাদক, বাংলাদেশ-সংখ্যা,১৯৮৩), জীবনানন্দ (১৯৮৪-৮৫), এখন (মাসিক পত্রিকা, উপদেষ্টা সম্পাদক, জানুয়ারি-ডিসেম্বর ১৯৮৬), নজরুল একাডেমী পত্রিকা (নবপর্যায়, ১৩৯৩-১৩৯৬), শিল্পতরু (মাসিক পত্রিকা, উপদেষ্টা সম্পাদক, ১৯৮৮-৯৩), কিছুধ্বনি (অতিথি সম্পাদক, জীবনানন্দ দাশ-বিশেষ সংখ্যা (১৯৯৬), নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা (২০০২-২০০৫), নজরুল ইন্সটিটিউট পত্রিকা (২০০২-২০০৫)।

প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র পাঠ : ‘কণ্ঠস্বর'-এর চতুর্থ বর্ষ পদার্পণ অনুষ্ঠানে ‘এক শস্যপর্যায় : কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : মুনীর চৌধুরী। স্থান : পাকিস্তান কাউন্সিল অডিটোরিয়াম, ঢাকা ১৯৬৯। ন্যাশনাল বুক সেন্টার আয়োজিত কবি সিকান্দার আবু জাফর সম্পর্কিত আলোচনা সভায় ‘সিকান্দার আবু জাফরের একটি কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। স্থান : ন্যাশনাল বুক সেন্টার অডিটোরিয়াম, ঢাকা, ১৯৭০। বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুশতবার্ষিকীতে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত : বহে জলবতী নদী' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : মযহারুল ইসলাম। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৩। নজরুল একাডেমী আয়োজিত নজরুল-জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘নজরুল ইসলামের কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। স্থান : ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৪। বাংলা একাডেমী আয়োজিত রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে ‘রবীন্দ্রনাথের কূটাভাস' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৪। ফররুখ আহমদ স্মরণসভায় ‘ফররুখ আহমদ : কবি' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবদুল কাদির। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একটি সংস্থা ‘বক্তব্য' আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘জীবনানন্দের উপন্যাস' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। স্থান : টি. এস. মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৫। ‘ছায়ানট' আয়োজিত ‘শিল্পকথা-৭৪' সেমিনারে ‘সেমিনারে ‘আবিষ্ট নির্ঝর' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : বেগম সুফিয়া কামাল। স্থান : আর্ট কলেজ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৫। শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে ‘শামসুর রাহমানের কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : আবুল ফজল। সভাপতি : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্থান : জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র চত্বর, ঢাকা, ১৯৭৬। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানমালায় ‘ষাট দশকের লিটল ম্যাগাজিন ও আমাদের সাহিত্য' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : কবীর চৌধুরী। স্থান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৭৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত

অনুষ্ঠানে ‘আমাদের সমালোচনা-সাহিত্য' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : কবীর চৌধুরী। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়াতন, ঢাকা, ১৯৭৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘মধ্যযুগের ভগীরথ : সৈয়দ আলাওল' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আশরাফ সিদ্দিকী। স্থান : নজরুল একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৮। নজরুল একাডেমী আয়োজিত নজরুল-জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘নজরুল কেন বড় কবি' প্রবন্ধ পাঠ। স্থান : নজরুল একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৮। বাংলা একাডেমী আয়োজিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আলী আহসান। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৭৮। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে ‘জীবনানন্দ দাশের মাল্যবান' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : দেবীপদ ভট্টাচার্য। স্থান : সেমিনার কক্ষ, যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৯৭৮। বাংলা একাডেমী আয়োজিত রবীন্দ্র-জয়তী অনুষ্ঠানে ‘মৃত্যুর নিপুণ শিল্প' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। স্থান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৭৯। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর আদি উপন্যাস' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। স্থান : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, ১৯৮০। বাংলাদেশ পি. ই. এন. আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘গিওম আপোলিনেয়ার জন্মশতবার্ষিকী (১৮৮০-১৯৮০)' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাশি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. কুলো। সভাপতি : সৈয়দ আলী আহসান। স্থান : নান্দনিক কার্যালয়, ঢাকা, ১৯৮০। বংলা একাডেমী আয়োজিত নজরুল-জয়তীতে ‘নজরুল ও বাংলার নবজাগরণ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবদুল কাদির। স্থান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮১। বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত কবি মঈনুদ্দীনের জন্মদিবসে ‘কবি মঈনুদ্দীন' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। সভাপতি : বেগম সুফিয়া কালাম। স্থান : বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮১। নজরুল ইন্সটিটিউট আয়োজিত বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ‘নজরুল-কাব্যে বৈশাখ' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : সৈয়দ আলী আহসান। সভাপতি : মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ১৯৮২। বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত নজরুল জন্ড জয়তী উপলক্ষে ‘নজরুল ইসলাম' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. রফিকুল ইসলাম। স্থান : বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮২। কবিকণ্ঠ সৈয়দ আলী আহসানের ষাট বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ‘সৈয়দ আলী আহসান' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : বেগম সুফিয়া কামাল। স্থান : জলসাঘর, পূর্বানী হোটেল, ঢাকা, ১৯৮২। বিপরীত উচ্চারণ আয়োজিত ফররুখ আহমদের জন্ডবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘সম্পন্ন প্রতিমা : ফররুখ আহমদের দরিয়ায় শেষ রাত্রি' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : সৈয়দ আলী আহসান। স্থান : টি. এস. সি. মিলনায়তন, ঢাক, ১৯৮২। বিপরীত উচ্চারণ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকা'র যৌথ আয়োজনে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ইসমাইল হোসেন শিরাজী' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আশরাফ সিদ্দিকী। স্থান : ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৫। বাংলা একাডেমী আয়োজিত কবি নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশেই লেখা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্থান : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ১৯৮৫। শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘বাংলার রেনেসাঁস ও নজরুল ইসলাম' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবু হেনা মোতফা কামাল। স্থান : শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৫। বাংলা একাডেমী আয়োজিত নজরুল-জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘তিরিশের দুই প্রধান কবির চোখে নজরুল' প্রবন্ধ পাঠ। স্থান : বাংলা একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৬। বাংলা একাডেমী আয়োজিত রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ‘রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিকতা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্থান : বাংলা  একাডেমী সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ১৯৮৬। এশিয়াটিক সোসাইটি আয়োজিত আতর্জাতিক সেমিনারে ‘জীবনানন্দের জীবনবেদ' প্রবন্ধ পাঠ। স্থান : এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘প্রথম পুরুষ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্থান : বাংলা একাডেমী সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ১৯৮৭। ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ফররুখ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘ফররুখ আহমদের কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : তালিম হোসেন। স্থান : ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত বেগম রোকেয়ার ১০৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘বেগম রোকেয়ার অতঃপরিবর্তন' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : বেগম আববাসউদ্দীন। স্থান : বাংলা একাডেমী সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ১৯৮৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানমালায় ‘স্বাধীনতাউত্তর বাংলা সাহিত্যের রূপান্তর : বিষয় ও প্রকরণ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. আনিসুজ্জামান। স্থান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৮। বাংলা একাডেমী আয়োজিত রবীন্দ্র-জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবুল হোসেন। স্থান : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ১৯৮৮। ‘বিপরীত উচ্চারণ আয়োজিত ফররুখ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘আমাদের নবজাগরণ ও ফররুখ আহমদ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : তালিম হোসেন, ১৯৮৮। বাংলা একডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘বাংলাদেশের সাহিত্যপত্রিকা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : রাহাত খান। স্থান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৯। বাংলা একাডেমী আয়োজিত নবতিতম নজরুল-জন্তবার্ষিকীতে ‘নজরুল ও তাঁর সমকালীন সমাজ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবু হেনা মোতফা কামাল। স্থান : সেমিনার রুম, বাংলা একাডেমী, ১৯৮৯। বাংলাদেশ কবিতাকেন্দ্র আয়োজিত আল মাহমুদের একক কবিতা পাঠ অনুষ্ঠনে ‘আল মাহমুদের সাম্প্রতিক কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : সৈয়দ আলী আহসান। স্থান : বাংলাদেশ কবিতাকেন্দ্র প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ১৯৮৯। জাতীয় যাদুঘর আয়োজিত ‘ঢাকা : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ' অনুষ্ঠানমালায় ‘ঢাকার সাহিত্যচর্চার ধারা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : কবীর চৌধুরী স্থান : জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৮৯। ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের বিকাশে বাঙালি-মুসলমানের অবদান' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। স্থান : ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯০। নজরুল ইন্সটিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘দুই কবি' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মনিরুজ্জামান। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ১৯৯১। বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত নজরুল-জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘নজরুল : কালজ কালোত্তর' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : মোবাশ্বের আলী। স্থান : টাউন হল, কুমিল্লা, ১৯৯২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল গবেষণাকেন্দ্র' আয়োজিত ‘নজরুল- বক্তৃতামালা'য় ‘চিত্রকল্পের সম্রাট' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. রফিকুল ইসলাম। স্থান : উচ্চতর মানববিদ্যা কেন্দ্র মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৯২। নজরুল ইন্সটিটিউট আয়োজিত শতবার্ষিকী বক্তৃতামালায় ‘আধুনিকতা ও নজরুল' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আবুল কাশেম ফজলুল হক। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউট মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯৩। বাংলা একাডেমী আয়োজিত কবি জসীমউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘জসীমউদ্দীনের কবিতা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আশরাফ সিদ্দিকী। স্থান : বাংলা একাডেমী সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ১৯৯৩। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে রবীন্দ্র-নজরুল-জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে নজরুল' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : অধ্যক্ষ ড. এ. কিউ. এম. হাবিবুর রহমান। সভাপতি : মির্জা হারুন-আর রশিদ। স্থান : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯৩। বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত নজরুল-জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ‘ঢাকায় নজরুল' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম স্থান : জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯৩। বিপরীত উচ্চারণ আয়োজিত ফররুখ আহমদের ৭৫তম জন্মজয়ন্তীতে ‘ফররুখ আহমদ : রূপকল্প ও ছন্দ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. কাজী দীন মুহম্মদ। স্থান : জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯৩। বেগম রোকেয়ার জন্মমৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সম্মিলিত উদ্যাপন কমিটি' আয়োজিত তিন দিন ব্যাপী (৯,১০,১১/১৯৯৩) অনুষ্ঠানের সমাপনী দিবসে ‘রোকেয়ার শিল্পমানস' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি: প্রফেসর মোহাম্মদ হরুন-উর-রশিদ। স্থান : বাংলা একাডেমী বটমূল, ঢাকা, ১৯৯৩। ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত খানবাহাদুর আহছানউল্লা'র ১২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘খানবাহাদুর আহছানউল্লা' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ। সভাপতি : আলহাজ মোহাম্মদ সেলিমুল্লাহ। স্থান : আহছানউল্লা মিশন, ধানমন্ডি, ঢাকা, ১৯৯৩। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত নজরুল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নজরুলের স্বরূপসন্ধান : গদ্যরচনা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. এনামূল হক। স্থান : শিশু মিলনায়তন, জাতীয় জদুঘর, ঢাকা, ১৯৯৪। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত নজরুল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নজরুলের সবরূপসন্ধান : গদ্যরচনা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মুস্তাফা নুরউল ইসলাম। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউট। বাংলা একাডেমী আয়োজিত কায়কোবাদের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘কায়কোবাদের ঐতিহ্যপ্রীতি ও স্বাজাত্যবোধ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। স্থান : সেমিনার কক্ষ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৯৫। ‘সার্কিট হাউজ ইসলামী গ্রন্থাগার ও গবেষণাকেন্দ্র' আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘মাতৃভষা, বাংলা সহিত্য ও ইসলাম' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. এম. শমসের আলী। স্থান : সার্কিট হাউজ মসজিদ চত্বর, ঢাকা, ১৯৯৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল গবেষণা-কেন্দ্র' আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘নজরুলের উপন্যাস প্রসঙ্গে' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ। স্থান : উচ্চতর মানববিদ্যা কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৬। ‘জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মবার্ষিকী উদযাপন : নজরুল-জীবনী রচনার মূল্যায়ন' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা, ১৯৯৬। বাংলা একাডেমী আয়োজিত নজরুল-জয়তী উপলক্ষে ‘মানবপ্রেম : নজরুল-সাহিত্যে প্রতিফলিত দৃষ্টিভঙ্গি' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : মোবাশ্বের আলী। স্থান : সেমিনার কক্ষ, বাংলা কোডেমী, ঢাকা, ১৯৯৬। বাংলা সাহিত্য পরিষদ-এর বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘বাংলা সাহিত্যে বিদেশি প্রভাব' প্রবন্ধ পাঠ। বিশেষ অতিথি : আল মাহমুদ। সভাপতি : আবুল আসাদ। স্থান : ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তন, ঢাকা, ১৯৯৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নজরুল গবেষণা-কেন্দ্র' আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘নজরুলের কথাসাহিত্য : নাটক' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ। স্থান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনার কক্ষ, ১৯৯৬। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘পঁচিশ বছরের বাংলাদেশের সহিত্য-গবেষণা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ। স্থন : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ১৯৯৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত নজরুলের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নজরুল-কাব্যে গণজাগরণের মূলসূত্র' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : শওকত আলী। স্থান : বাংলা একাডেমী সেমিনার কক্ষ, ১৯৯৭। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘পঞ্চাশের দশক : বাংাদেশের কবিতার নতুন যাত্রা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্থান : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ১৯৯৮। জতীয় পর্যায়ে আয়োজিত নজরুলের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালায় ‘নজরুলের গানে অসাপ্রদায়িকতা' প্রবন্ধ পাঠ। প্রধান অতিথি : ড. এস. জামান মজুমদার। সভাপতি : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ঢাকা, ১৯৯৮। নজরুল ইন্সটিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘নজরুল-জীবনী রচনার সমস্যা' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. রফিকুল ইসলাম। স্থান : নজরুল ইন্সটিটিউটের সেমিনার কক্ষ, ঢাকা, ১৯৯৮। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘জন্ডশতবার্ষিক শ্রদ্ধার্ঘ্য : জীবনানন্দ দাশ : জীবন ও সাহিত্য' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। স্থান : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ১৯৯৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উচচতর মানববিদ্যা গবেষণাকেন্দ্র' আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘জীবনানন্দ দাশ : নতুন আবিকৃত রচনাগুচ্ছ' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। স্থান : উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণাকেন্দ্রের লেকচার থিয়েটার, ১৯৯৯। জাতীয় পর্যায়ে নজরুল-জন্ডশতবার্ষিক অনুষ্ঠানে ‘শতবর্ষের মূল্যায়ন: জীবন' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. রফিকুল ইসলাম। স্থান : সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা, ১৯৯৯। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত নজরুল-জন্ডশতবার্ষিক অনুষ্ঠানে ‘কবি নজরুল, কমরেড মুজফফর আহমদ ও কবি আবদুল কাদির' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : ড. মুতাফা নুরউল ইসলাম। স্থান : জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা, ১৯৯৯। হাবীবুল্লাহ বাহারের জন্ডশতবর্ষ উপলক্ষে মূল প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : কবি আবুল হোসেন। স্থান : সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা, ২০০৬। বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় ‘বিশ শতকের চিতাধারা : এস. ওয়াজেদ আলী' প্রবন্ধ পাঠ। সভাপতি : আলাউদ্দিন আল আজাদ। স্থান : বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ২০০৬।

আবদুল মান্নান সৈয়দকে উৎসর্গীকৃত গ্রন্থ : মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহর প্রবন্ধগ্রন্থ : নজরুল-কাব্যের শ্লিরূপ (১৯৭৩), মাহবুব সাদিকের কবিতাগ্রন্থ : সন্ধ্যার স্বভাব (১৯৯৬), আখতার-উন-নবী অনূদিত গল্পগ্রন্থ : সেই মেয়েটি (১৯৭৯), আল মাহমুদের কবিতাগ্রন্থ : অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না (১৯৮২), নূরউল করিম খসরুর প্রবন্ধগ্রন্থ : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ছোটগল্প : বিষয়-আশয় (১৯৮৩), আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতাগ্রন্থ : আমি যখন আসবো (১৯৮৪), ফারুক মাহমুদ-সম্পাদিত : ধোলাই কাব্য (১৯৮৬), কবি আবদুস সাত্তার অনূদিত নাটক : সম্রাটের দ্বদ্ব (১৯৮৭), আবদুল আজীজ আল আমান সম্পাদিত : অপ্রকাশিত নজরুল (১৯৮৯), শামসুল ইসলামের কবিতাগ্রন্থ : নষ্ট চন্দ্রার চাঁদ (১৯৮৯), রিফাত চৌধুরীর কবিতাগ্রন্থ : মেঘের প্রতিভা (১৯৯০), তৌহিদ আহমেদের কবিতাগ্রন্থ : তেলাপিয়দের অসুখ-বিসুখ (১৯৯০), ড. এনামূল হকের কবিতাগ্রন্থ : আত্মবিশ্বাসের চিতাবাঘ (১৯৯০), হাসান আলীমের কবিতাগ্রন্থ : মৃগনীল জোছনা (১৯৯০), আলী ইমমের প্রবন্ধগ্রন্থ : প্রিয় প্রসঙ্গ (১৯৯০), বজলুল করিম বাহারের প্রবন্ধগ্রন্থ : সমকালীন কবিতার দিকবলয় (১৯৯০), আবিদ আজাদের কবিতাগ্রন্থ : আবিদ আজাদের কবিতা (১৯৯১), মোশাররফ হোসেন খানের কবিতাগ্রন্থ : বিরল বাতাসের টানে (১৯৯১), কবি আবদুস সাত্তারের প্রবন্ধগ্রন্থ : নজরুল-কাব্যে আরবী ফারসী শব্দ (১৯৯২), ফররুজ্জামান চৌধুরী অনূদিত উপন্যাস : বিকিকিনির প্রেম (১৯৯২), শশী হকের কবিতাগ্রন্থ : অবিশ্রাত শ্রাবণ (১৯৯৩), কাজল শাহনেওয়াজের গল্পগ্রন্থ : কাছিমগালা (১৯৯৩), মোহাম্মদ মোরশেদ আলীর কবিতাগ্রন্থ : মিছিলে মিছিলে সাড়া (১৯৯৪), I have seen the Bengal’s face : Poems from Jibanananda Das : Edited by Faizul Latif Chowdhury. 1995. মুহাম্মদ আবদুল বাতেনের কবিতাগ্রন্থ : অশ্বারোহী মেঘ (১৯৯৬), নাসির হেলালের ছড়াগ্রন্থ : আগুন ঝরা ছড়া (১৯৯৬), আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নাটক : যুদ্ধযাত্রা (১৯৯৭), নিজাম সিদ্দিকীর উপন্যাস : প্রজাপতি মন (১৯৯৭), মুস্তফা আনোয়ারের কবিতাগ্রন্থ : রসাতল ও মরিয়ম (১৯৯৮), আবুল হুসাইন জাহাঙ্গীরের গল্পগ্রন্থ : নির্বাচিত গল্প (১৯৯৯), আজহার ইসলামের প্রবন্ধগ্রন্থ : চিরায়ত সাহিত্যভাবনা (১৯৯৯), খৈয়াম কাদেরের কবিতাগ্রন্থ : পারদ বিশ্বাস (১৯৯৯) আসাদুল হকের প্রবন্ধগ্রন্থ : নজরুল যখন বেতারে (১৯৯৯), আতাহার খানের কবিতাগ্রন্থ : এই জলকণা নাও নদী (২০০০), ড. মেসবাহউদ্দীন আহমেদ অনূদিত ও সম্পাদিত : এগারোটি ক্লাসিক সাইন্স ফিকশন (২০০০), তপোধীর ভট্টাচার্যের প্রবন্ধগ্রন্থ : জীবনানন্দ : কবিতার সংকেতবিশ্ব (২০০১), সাজজাদ হোসাইন খানের কিশোরতোষ গদ্যগ্রন্থ : দুই কাননের পাখি (২০০১), শাহাবুদ্দীন নাগরীর কবিতাগ্রন্থ : মধ্যরাতে নায়ে দিলাম চুমো (২০০১), আনওয়ার আহমদের কবিতাগ্রন্থ : অন্ধ-অন্ধকার (২০০১), আহমাদ মাযহারের প্রবন্ধগ্রন্থ : আধুনিকতা : পক্ষ-বিপক্ষ (২০০১), মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রবন্ধগ্রন্থ : শব্দ ও নৈঃশব্দ। (২০০২), রাফিদ আল ফারুকের কবিতাগ্রন্থ : জানাও বৈকালী (২০০১), আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের স্মৃতিকথা : ভালবাসার সাম্পান (২০০২), তারেক মাহমুদের কবিতাগ্রন্থ : সুবর্ণার প্রেম (২০০২), আবুবকর সিদ্দিকের কবিতাগ্রন্থ : আমার যত রক্তফোঁটা (২০০২), গোলাম মোহাম্মদের কবিতাগ্রন্থ : হে সুদূরে হৈ নৈকট্য (২০০৩), আবু করিমের কবিতগ্রন্থ : বনসাই (২০০৩), নাজমুল আলমের গল্পগ্রন্থ : গল্পসমগ্র (২০০৩), শামসুর রাহমান-অনূদিত : রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা : নির্বাচিত কবিতা (২০০৩), হাসান আলীমের প্রবন্ধগ্রন্থ : কুসুমে বসবাস (২০০৩), শাফিকুর রাহীম কবিতগ্রন্থ : কবিতাসমগ্র (২০০৪), নৃপেন্দ্রলাল দাশের কবিতাগ্রন্থ : সেই অনত অাঁখর (২০০৫), রববানী চৌধুরীর প্রবন্ধগ্রন্থ : নৃপেন্দ্রলাল দাশ : সৃজন ও মনন (২০০৫), আমীরুল ইসলামের কিশোরতোষ উপন্যাস সংগ্রহ : সাতটি তারার মেলা (২০০৫), ইমরুল চৌধুরীর কবিতাগ্রন্থ : সব অন্ধকার আমার ঘরে (২০০৬), রফিক আজাদের কবিতাগ্রন্থ : সেরা পাঁচ (২০০৬), আসাদ কাজলের কবিতাগ্রন্থ : মুকুটপুরুষ (২০০৬), শিহাব সরকারের উপন্যাস : দুঃস্বপ্নের পাত্রপাত্রী (২০০৬),

প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননা: বাংলা একাডেমীর একুশে পদকসহ এ পর্যন্ত শতাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। সম্বর্ধিত হয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে। সর্বশেষ জাতীয় প্রেসক্লাব ‘সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য' বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘গুণীজন সম্বর্ধনা' পেয়েছেন ২০০৯-এ। কবির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে বিপুল সম্বর্ধনা দেয়া হয়।

প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৫৯ সালে, ইমাম স্মৃতি পুরস্কার ‘সত্যাসত্য' গল্পের জন্য। ওমেন্স হল (বর্তমানে রোকেয়া হল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। গল্পটি ‘সত্যের মতো বদমাশ' গল্প গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এরপর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে আছে : ১৯৭৩ হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (শুদ্ধতম কবি, প্রবন্ধগ্রন্থ), লেখক শিবির, ঢাকা। ১৯৭৫ সুমত প্রকাশন সাহিত্য পুরস্কার (শুদ্ধতম কবি, প্রবন্ধগ্রন্থ) কলকাতা। ১৯৮১ আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (করতলে মহাদেশ, প্রবন্ধগ্রন্থ), ফরিদপুর। ১৯৮১ বাংলা একাডেমী পুরস্কার (প্রবন্ধ ও গবেষণা), ঢাকা। ১৯৮৬ চারণ সাহিত্য পুরস্কার (অনুবাদ ও গবেষণা) ঢাকা। ১৯৯১ ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার (প্রবন্ধ ও গবেষণা) চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র, চট্টগ্রাম। ১৯৯৩ ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার (কবিতা), ত্রিভুজ সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা। ১৯৯৮ নজরুল একাডেমী পুরস্কার (নজরুল-গবেষণা), চুরুলিয়া, বর্ধমান, ভারত। ১৯৯৯ বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ঢাকা। ২০০০ কবি তালিম হোসেন ট্রাস্ট পুরস্কার (নজরুল-গবেষণা), ঢাকা। ২০০০ নজরুল পদক (নজরুল গবেষণা), নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। ২০০১ নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার (সামগ্রিক সাহিত্য) নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র, ঢাকা। ২০০২ কবি সুকাত সাহিত্য পুরস্কার (প্রবন্ধ-গবেষণা) কবি সুকাত সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা। ২০০২ অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (কবিতা) অলক্ত সাহিত্য সংসদ, কুমিল্লা। ২০০৩ একুশে পদক (প্রবন্ধ-গবেষণা) বাংলাদেশ সরকার। ২০০৬ স্বাধীনতা ফোরাম সম্মাননা (কবিতা) স্বাধীনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা। ২০০৬ নজরুল পদক (নজরুল গবেষণ) নজরুল একডেমী, ঢাকা। ২০০৭ বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র পুরস্কার (সমগ্র সাহিত্য), ঢাকা। সর্বশেষ ২০১০ বাংলা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার ও গুণীজন সংবর্ধনা প্রাপ্ত হন।

সব্যসাচি এই লেখককে আরও বেশি করে জানা এবং তাঁর সাহিত্য-কর্ম ও জীবনাদর্শ আলোচনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের জাতির মহান ব্যক্তিত্বদের কথা আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। আমাদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে এদের অবদান অপরিসীম। আমাদের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরীদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা আমাদের দায়িত্ব।
সূত্র : দৈনিক সংগ্রাম

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ