প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Saturday, December 18, 2010

আমার মনের ভেতর একটা ট্রেন আছে : আল মাহমুদ

al-mahmod কোনো এক সময় আমি হয়তো এই সুরভী দাশকে দেখেছি। নামটা হয়ত সঠিক না। চরিত্রটা হয়তো ঠিক। পুরো ব্যাপারটাই এক রহস্যময় অভিজ্ঞতা। নারী চরিত্রগুলো নাম দিয়ে পরিচিত হয় না। সম্পর্ক দিয়ে হয়। আমিও নাম ব্যবহার করেছি কাছাকাছি

প্রশ্ন: ‘পিপাসার বালুচরে’ কাব্যগ্রন্থের পুরোটাইতো একটা দীর্ঘ কবিতা। বইয়ের ভূমিকা থেকে জানতে পারি এটা এক বছর সময় নিয়ে লিখা। চোখের সমস্যার কারণে আপনি তো এখন কবিতা সাধারণত ডিকটেশন দিয়ে লেখান। এরকম একটা দীর্ঘ কবিতা একটু একটু করে ডিকটেশন দিয়ে লেখা কীভাবে সম্ভব হলো?
আল মাহমুদ: দীর্ঘ কবিতা হলো দীর্ঘ প্রসেস। এক ধরনের কৌশল। দীর্ঘ কবিতার জন্য একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকার প্রয়োজন হয়। অনেকে মনে করেন, আমার বোধ হয় পুরো কবিতাটা একটু একটু করে আসে। বিষয়টা কিন্তু তা নয়। পুরা কবিতাটাই আমার এক সাথে আসে। পুরো কবিতাটা আমার মনে তৈরি হয়ে থাকে, পুরো কবিতাটাই আমার মধ্যে এক সঙ্গে কাজ করে। আগে আমি এভাবে লিখতে পারতাম না। এখন পারি, যেহেতু অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে এটা যেহেতু একটা দীর্ঘ কবিতা, এর বিষয় আলাদা। এ আমার মধ্যে একটু একটু করেই এসেছে। তবে লেখার সময় কিছু কিছু জায়গা আলাদাভাবে লিখিত হলেও, বলা চলে পুরোটা একসঙ্গেই লেখা হয়েছে। এই কবিতাটা লিখতে আমাকে সহায়তা করেছে রাফিক হারিরি। এভাবে দীর্ঘ কবিতার পারম্পর্য রক্ষা করার কায়দাটা আমার নতুন শেখা। আমার অন্ধত্বই আমাকে এই অভ্যস্ততা দিয়েছে, এই শিক্ষা দিয়েছে।

প্রশ্ন: ‘পিপাসার বালুচরে’র মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটা গল্প আছে। আজকাল কেউ কেউ কবিতার মধ্যকার ওই গল্প বলার বিষয়টাকে সরিয়ে ফেলার কথা বলছেন। বিষয়টা কি আদৌ সম্ভব বলে আপনি করেন?

আল মাহমুদ: হয়তো বা সম্ভব। কিন্তু আমি করিনি কখনও। আমার কবিতার মধ্যে এক ধরনের গল্প থাকেই। এমনকি আমার দীর্ঘ কবিতায় যদি কোনো নারী চরিত্র থাকে, তার একটা বিবিধ বর্ণনা আমার থাকে, সেটা আমি পারি। এই কবিতাতেও এরকম বর্ণনা আছে।

প্রশ্ন: এই কবিতার কোনো কোনো জায়গায় দেখি দার্শনিকের মতো জীবনকে দেখা পঙ্ক্তি। এক্ষেত্রে কাহলিল জিবরানের দীর্ঘ কবিতাগুলোর কথা অনেক সময় মনে পড়ে যায়। কবিতায় দার্শনিকতাটাকে আপনি কীভাবে দেখেন।

আল মাহমুদ: কবিতায় দর্শন উঁকি দিলে কবিতার স্বাদ গ্রহণ করা খুব মুশকিল হয়। কিন্তু একেবারেই দর্শন ছাড়া কোনো কবিতা হয় না। আমি জিবরানের কবিতা পড়েছি, বেশ ভালোভাবেই পড়েছি। কবিতা লিখতে গিয়ে তিনি দর্শনকে এনেছেন। দার্শনিকতা করার জন্য তিনি কোনো কবিতা লিখেননি। কিন্তু যেহেতু তার মধ্যে কবিত্বের পাশাপাশি দার্শনিক একটা মন ছিল, তার মধ্যে দর্শনটা এসেছে। তবে তার কবিতা পড়তে ভালো লাগে। সব কিছু ছাপিয়ে কবিতাটা পড়তে ভালো লাগলেই তো হলো। সে হিসেবে আমার কবিতা যদি পড়তে ভালো লাগে তাহলেই আমি মনে করি সফল।

প্রশ্ন: আপনার কবিতার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ওখানে নাটকের আত্মসংলাপ বলার মতো করে অনর্গল কথা বলে যাওয়ার প্রবণতা। ‘পিপাসার বালুচরে’ কবিতাটিও যেন এর ব্যতিক্রম নয়। কবিতার মধ্যের এই যে নাটকের মত করে সংলাপ বলার ভঙ্গি, এটা কি আপনি সচেতনভাবেই করেন?

আল মাহমুদ: কবিতা কি, আমার ধারণা কবিতা হলো প্রচ্ছন্ন নাটক। নাটকে যেমন দৃশ্যান্তর থাকে। কবিতায় থাকে স্পেস। এই স্পেসে কিন্তু কথা থাকে, দূরত্ব থাকে। কালের ব্যবধানে তৈরি হয়। এই কারণে আমার কবিতাতে এই বিষয়টা থাকে। ‘পিপাসার বালুচরে’ কবিতাটিও এর বাইরে নয়। আমি আসলে এভাবেই লিখতে অভ্যস্ত।

প্রশ্ন: দীর্ঘ এই কবিতাটা পাঠ শেষে আমরা যে পিপাসার দেখা পাই, তাকে কিন্তু বলা যায় যৌন পিপাসা বা যৌন আকাঙক্ষা। এই বিষয়ে কিছু বলুন।

আল মাহমুদ: সব আকাঙক্ষাই কিন্তু যৌন আকাঙক্ষারই রূপান্তর। যিনি প্রকৃত কবি তিনি যৌনতাকে আড়াল করে কাজ করতে চান। আমি অস্বীকার করি না যে এই কবিতাতে যৌনতার বিষয়টা আছে। কিন্তু এটা তো ঠিক সে বিষয়টা প্রধান হয়ে ওঠেনি।

প্রশ্ন: কবিতার এক জায়গায় আপনি লিখেছেন ‘আমি বলতে চাই শেফালি/ আর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে সুরভী দাশ’। এই চরিত্র দুটি কারা? বাস্তবেরই কি কেউ?

আল মাহমুদ: ওরা আমার পরিচিত। স্পর্শকাতর জায়গা এটা। হয়ত হঠাৎ মনে হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু কোনো এক সময় আমি হয়তো এই সুরভী দাশকে দেখেছি। নামটা হয়ত সঠিক না। চরিত্রটা হয়তো ঠিক। পুরো ব্যাপারটাই এক রহস্যময় অভিজ্ঞতা। নারী চরিত্রগুলো নাম দিয়ে পরিচিত হয় না। সম্পর্ক দিয়ে হয়। আমিও নাম ব্যবহার করেছি কাছাকাছি।

প্রশ্ন: পুরো কবিতাটাই একটা রেলভ্রমণকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। কবিতাটিতে এই রেলের প্রসঙ্গটা আসার কারন কী?

আল মাহমুদ: আমার বাড়ি রেলস্টেশনের পাশে। সব সময়ই শুনতাম হুইসেলের শব্দ। এখনও ট্রেনের হুইসেল শুনলে আমার বাড়ির কথা, শৈশবের কথা মনে পড়ে। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যভরা ট্রেন যাচ্ছে আর ভিখিরিরা বখশিস বখশিস বলে চিৎকার করছে ট্রেনের পাশে। এই স্মৃতি থেকেই হয়ত আমার কবিতায় ট্রেনের প্রসঙ্গ আসা। কিংবা বলতে পারো, এটা একটা চলমান বাস্তবতা। আজীবন আমি ট্রেনের পাশে ছিলাম। আমার মনের ভেতর একটা ট্রেন আছে।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ