প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Sunday, December 19, 2010

আহার নিয়ন্ত্রণে ওজন নিয়ন্ত্রণ

"মেদ ভুঁড়ি, কী করি" ধরনের বিজ্ঞাপন দেখলেই যেন হালে পানি পান এমন স্থূলকায় ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে বর্তমানে বহু মধ্যবয়স্ক নারী-পুরুষেরই শারীরিক স্থূলতা একটা বড় সমস্যা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার এই যুগে কর্মজীবী নারী-পুরুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বসে থাকছেন দপ্তরে। ব্যস্ততা আর কাজের চাপে কোনো ব্যায়াম তো দূরের কথা, খাওয়া-দাওয়াটা হয়ে যাচ্ছে নিতান্তই অনিয়ন্ত্রিত। ফলাফল ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা।
আর তরুণ প্রজন্মের বিশেষ আকর্ষণ ফাস্টফুড তো আছেই। দিনমান ক্লাস, পড়াশোনা আর আড্ডার ফাঁকে শিক্ষার্থীরা দেদার পেট ভরছেন ইয়া বড় বার্গার, পিজ্জা ইত্যাদি খেয়ে। তাই বয়স্করাই শুধু নয়, তরুণেরাও পড়ছেন স্থূলতার খপ্পরে। ওজন কমাতে তাই এখন অনেকেই ছুটছেন জিমে আর যাদের সময় বা সামর্থ্য নেই, ওজন বৃদ্ধি বা মোটা হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তারও তাদের অন্ত নেই।
জানেন কি, শুধু খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেই ওজন কমানো সম্ভব? ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে।শুধু যা করতে হবে তা হলো খেতে বসে খাওয়ার রাশ টেনে ধরতে হবে। এ প্রসঙ্গে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্য পুষ্টিবিদ শাহীন আহমেদ বললেন, ‘কম খাওয়া মানে পরিমিত, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, যা ওজন ও স্বাস্থ্য দুটোই টিক রাখতে সাহায্য করবে। শরীরটা ঝরঝরে রাখতে ৩০ বছর বয়সের পরই স্বাস্থ্যসচেতন হবে, কারণ এ বয়সের পর থেকে নিয়ম মেনে আহার নিয়ন্ত্রণ না করলে শরীর হবে রোগবালাইয়ের বাসা। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারলেই খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা আর কোনো ব্যাপারই নয়।’
তাই ভোজনরসিকেরাও মনকে বোঝান, খেতে বসে কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। ওজনকে আর পাগলা ঘোড়ার মতো আগে বাড়তে না দিযে লাগাম নিয়ে নিন নিজের হাতে আর তার সুবিধার্থে দেখে নিন পুষ্টিবিদ শাহীন আহমেদের দেওয়া জরুরি পরামর্শগুলো-
*কম খাওযার রয়েছে দুটি মূলমন্ত্র
১. খাবারের আয়োজনে পদ বা আইটেমের সংখ্যা কম রাখুন। খাবারে শর্করা, আমিষ, ভিটামিনের একটি করে উৎস থাকলেই ভাববেন, আপনার খাবারের মেন্যু যথেষ্ট পরিপূর্ণ।
২. যে কটি পদ আছে খাবারের আয়োজনে তার সবই একসঙ্গে একবারে পাতে তুলে নিন। তাহলে সবকটি পদই খাওয়া হবে, কিন্তু পরিমিত পরিমাণে।

*ভাতের সঙ্গে সবজি নয়, যেন সবজির সঙ্গে ভাত খাওয়া হয় এমন বেশি পরিমাণে শাকসবজি খান ভাত কম খেয়ে। এতে মোটা হওয়ার ভয় থাকবে না মোটেও, পেটও ভরবে।

*আঁশযুক্ত ফলমূল, সবজি বেশি খেলে পেট ভরে যাবে অল্পতেই, কিন্তু মোটা হবেন না।

*দুপুর ও রাতে সাধারণত ভাতটাই খাওয়া হয়ে থাকে। সেক্ষেত্র একবেলা রুটি খান। রুটি ও ভাত দুটোই শর্করা কিন্তু ভাত পরিমাণে বেশি খাওযা হয়। কিন্তু রুটি দুই-তিনটির বেশি খাওয়া যায় না। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রুটিই শ্রেয়।

*পেট পুরো ভর্তি করে খাওয়া যাবে না একদমই। পাকস্থলীর চার ভঅগের এক ভাগ খালি রেখে খেতে হবে। এতে হজমটা ভালো ও দ্রুতুর হয়। ফলে শরীরে মেদ জমার ভয় থাকে না।

*মূল আহারের পর যদি মিষ্টি বা ডেজার্ট পর্ব থাকে তবে মূল খাবার কম খেযে ডেজার্ট এমনভাবে খেতে হবে যাতে পেট একটু খালি থাকে।

*মনে রাখবেন, পেট খালি রেখে খাওয়া মানেই একেবার কম খাওয়া নয়; তাহলে ক্ষুধা রয়ে যায় এবং আবার খেতে হয়। তাই যেই মনে হবে ক্ষুধা মিটেছে অমনি খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং অতিরিক্ত খাওয়ার মায়া ত্যাগ করে উঠে পড়ুন।

* এমন খাবার খাবেন যা দ্রুত পাচ্য ও যাতে পেট ভরেছে বলে মনে হয়। তাতে মেদ জমার আশঙ্কা থাকেনা। তাই খাওয়ার আগে প্রচুর পরিমাণে সালাদ খেয়ে নিন। এতে মূল আহারে কম খাওয়া হবে, কারণ সালাদে জলীয় অংশ বেশি বলে পেট অনেকটাই ভরে যায়।

*অনেকে খাওয়ার আগে পানি খান। সেটা না করাই ভালো, কারণ তাতে পাচক রস খাওয়ার পর খাবার হজমে সুবিধা করতে পারে না। এতে স্বাস্থ্যহানি ঘটবে।

সকালের খাবার খান রাজার হালে। কারণ সারা রাতের পর সকালে পেট থাকে খালি। তাই ভারী প্রাতরাশ করুন, যা সারা দিনের পরিশ্রমে আপনিই হজম হয়ে যাবে।
ঠিক উল্টোটা করুন রাতের বেলায়। আক্ষরিক অর্থেই হালকা কিছু মুখে নিন, কারণ রাতে কায়িক ক্রিয়াকর্মের ব্যাপার নেই বলে ভারী খাবার খেলে তা মেদ হয়ে জমে যাবে। শোয়ার ঘন্টাখানেক আগে রাতের খাওয়া সেরে ফেলুন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সব বেলায় নিয়মিত আহার করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একবেলা ভারী খেয়ে যদি দুই বেলা না খান, ওজন কমানোর জন্য তাতে কোনো লাভ নেই। কারণ হঠাৎ খাওয়া কমিয়ে দিলে শরীর কম খাদ্য গ্রহণেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে এখন যতই কম খান না কেন, ওজন কমাতে চায় না। তাই তিন বেলায় নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে পুষ্টিসম্মত খাবার খান।
তিন বেলা পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করলে মাঝে টুকটাক হালকা নাশতা করতে পারেন। তবে তা কম ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাদ্য হতে হবে, যেমন একটি ফল বা দু-তিনটি সল্টেস বিস্কৃট ইত্যাদি।
অতিরিক্ত ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার বা রিচফুড এড়িয়ে চলুন। একবেলা যদি দাওয়াতে গিয়ে বা প্রিয় কোনো রিচফুডের হাতছানি এড়াতে না পারেন, তবে পরের বেলা কম খেয়ে ভারসাম্য রক্ষা করুন। খেয়াল রাখুন, পরিমিত আহারেই রয়েছে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। তবে হঠাৎ কম খাওয়া শুরু করবেন না, আহার নিয়ন্ত্রণ করুন ধীরে ধীরে, তবেই ওজন কমাতে সক্ষম হবেন। মনকে বোঝান, কম খাওয়ার সুফলগুলো আর বুঝেশুনে খাবার খান। একবার নিজেকে নিয়মে বেঁধে ফেলতে পারলেই নিয়ন্ত্রিত আহারে আপনি অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। আর হ্যাঁ, কম খাওযা শুরু করবেন কীভাবে, তাই যদি ভাবেন, তবে পরামর্শ হলো শুরুটা করুন আজই, এ বেলার খাবার দিয়েই। কাল বা পরশু থেকে কম খাব ভাবতে থাকলে দেখবেন আপনার সেই কাল-পরশু আর আসছেই না। সুতরাং তৈরি হোন আজই, এক্ষুনি। পরিমিত খেয়েই ওজনকে আনুন নিজের বশে।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ