প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, July 26, 2011

 বিশ্ব কাঁপানো ছবিগুলো

প্যালেস্টাইন ফাদার শ্লিডিং সন
বর্বর ইসরাইলি সেনাদের নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতীক এই ছবি। ছবিতে দেখতে পাওয়া লোকটির নাম জামাল আল দুরা এবং তার বারো বছরের ছেলে মোহাম্মদ আল দুরা ইসরাইলি সেনাদের গুলি থেকে বাঁচার জন্য দেয়ালের আড়ালে আশ্রয় নেয়। এতেও রক্ষা হয়নি তাদের। সেনারা এদের দেখতে পেয়ে গুলি করতে উদ্যত হলে জামাল প্রাণভিক্ষা চেয়ে কান্নাকাটি করলেও লাভ হয়নি কোনো। গুলি করে তার ছেলেকে মারা হয় এবং জামাল গুলিতে গুরুতর আহত হয়। ঘটনাস্থলে থাকা দু’জন ফরাসি নাগরিক তখন এই ছবি তুলেছিলেন।

দ্য চাইল্ড অ্যান্ড দ্য ভালচার
দু’জনই খাবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিশুটি হামাগুড়ি দিয়ে ইউএনএ পরিচালিত লঙ্গরখানার দিকে আর শকুনটি জরাগ্রস্ত শিশুটির দিকে। অসহ্যকর যন্ত্রণাদায়ক এই ছবি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার। ১৯৯৩ সালের মার্চে সুদান থেকে তোলা এই ছবির জন্য তিনি লাভ করেন পুলিত্জার পুরস্কার। শিশুটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল তা জানা যায়নি, তবে এই ছবি তোলার পর হতাশায় ভুগতে শুরু করেন কার্টার। এর রেশ ধরে বছরখানেকের মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন।

কসোভো রিফিউজি
বিখ্যাত এই ছবিটি তোলেন চারবার পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী মহিলা ফটো গ্রাফার ক্যারল গিউজি। এই ছবিটি দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ ও দাঙ্গার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতীক।
ছবিটিতে দেখা যাওয়া বাচ্চাটির নাম অ্যাজিম শালা, যে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পরিবারের বাকি সদস্যরা কসোভোতে যুদ্ধ চলার সময় আশ্রয় নেয় আলবেনিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কুকসের রিফিউজি ক্যাম্পে। পরে বাচ্চাটিকে এক ফ্রেঞ্চ নাগরিকের সহায়তায় তার বাবা-মা ফিরে পায়। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে বাচ্চাটিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেয়ার সময় ছবিটি তোলেন ক্যারল। যে ছবির জন্য তিনি ২০০০ সালে নিউজ ফটোগ্রাফি বিভাগে আবারও পুলিত্জার জেতেন।

ভূপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি
১৯৮৪ সালের ২-৩ ডিসেম্বর ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের মিথেল আইসোসায়ানেট গ্যাস প্লান্ট লিক হয়ে ওখানকার অন্যান্য কেমিক্যালের সংস্পর্শে চলে আসে এবং বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর শিল্পজগতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাত্ক্ষণিকভাবেই মারা যায় ৩৭৮৭ জন। পরে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায় অন্তত ১৫০০০ মানুষ। আহত এবং গ্যাসের প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫,৫৮,১২৫ জন। এই ছবিটির শিশুটিকে সমাধিস্থ করার সময় ছবিটি তোলেন যৌথভাবে বিখ্যাত ফটোগ্রাফার পাবলো বার্থালোমিউ ও রঘু রায়। ছবিটি অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছে।

আবু গারিব জেল
২০০৩-এ ইরাকে আক্রমণ চালানোর এক বছর পরই আমেরিকান সেনা কর্তৃক আবু গারিব জেলে বন্দি ইরাকিদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ছবি প্রকাশ হয়। ছবিতে দেখা যাওয়া নারী সৈন্য লিন্ডি ইংল্যান্ড বেশিরভাগ নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল। পরে জানা যায়, এই নির্যাতনের নেপথ্যে মার্কিন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ইন্ধন জোগায় এবং এতে সমর্থন ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের।

এক্সিকিউশন অব ভিয়েতকং সোলজার
১৯৫৯ থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে উত্তরের সমর্থক এনএলএফের এক বন্দি যোদ্ধাকে প্রকাশ্যে সায়গনের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পুলিশ প্রধান গুয়েন গোক লোন। পৈশাচিক বর্বরতার প্রতীক এই ছবি তোলেন ফটোগ্রাফার অ্যাডওয়ার্ড অ্যাডামস। যিনি পরে এই ছবির জন্য পুলিত্জার পুরস্কার জয়ী হন। ফটো জার্নালাজিমে এই ছবিটি অন্যতম বিখ্যাত ছবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অপারেশন লায়ন হার্ট
যুদ্ধের ফলে বেসামরিক মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কষ্ট ও দুর্ভোগের মূর্তমাণ প্রতীক এই ছবি।
আমেরিকা অনৈতিকভাবে ইরাকে আক্রমণ চালানোর সময় প্রচুর বেসামরিক লোক মারে। আমেরিকানদের বোমার আঘাতে ৯ বছর বয়সী এই শিশুটিও গুরুতর আহত হয়। তারপর শিশুটিকে অকল্যান্ডের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রায় ডজনখানেক বড় ধরনের অপারেশন চালানো হয় শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য। শিশুটি অপরিসীম কষ্ট সহ্য করে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায়। এত কষ্ট করে ঠিকে থাকার জন্য তাকে ‘সালেহ কালিফ’ অর্থাত্ সিংহ হৃদয় উপাধি দেয়া হয়। হাসপাতালে চিকিত্সা চলাকালে তার ছবিটি তোলেন ডেন ফিত্জমোরেচ। এই ছবিটির জন্য তিনি ২০০৫ সালে পুলিত্জার পুরস্কার জয় করেন। ছবিটি এক অর্থে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও হার না মানার মনোভাব প্রকাশ করে।
ওয়ার আন্ডারফুট
আপনি যদি ভাবেন এই ছবি সেনাদের বার্ষিক গুলি মহড়ার স্থান থেকে তোলা হয়েছে তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে আছেন। এটি তোলা হয়েছে লাইবেরিয়ার মনরোভিয়া শহরের একটি রাস্তা থেকে। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বুলেটের কেসিং কভারের এই ছবি প্রমাণ দেয় লাইবেরিয়ার জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতার। ভয়ঙ্কর এই ছবি তুলেছেন লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের ফটোগ্রাফার ক্যারোলিন কোল।

ট্র্যাজেডি অব ওমেরা সানচেজ
১৯৮৫ সালে কলম্বিয়ার নেভাডো ডেল রুইজ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতে ভূমি ও কাদাধসের সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী এ কাদাধসে শহর তলিয়ে গিয়ে মারা যায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ। কলম্বিয়ান সরকারের উদ্ধার তত্পরতায় অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতাকে এত প্রাণহানির জন্য দায়ী করা হয়। ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ওমেরা সানচেজ। তিন দিনব্যাপী কাদা ও বিল্ডিংধসের ফাঁদে আটকে থেকে হাইপোথারমেয়া ও গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে মহিলাটি মারা যায়। এই দীর্ঘ সময়েও তাকে শনাক্ত করে উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। আলোকচিত্রী ফ্রাঙ্ক ফোরনিয়ার ছবিটি মহিলার মৃত্যুর অল্প কিছুক্ষণ আগে তোলেন। এই ছবিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার তত্পরতার অভাব বা অদক্ষতা কত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তা ফুটে উঠেছে।

থাইল্যান্ড ম্যাসাকার
স্বৈরশাসকদের নৃশংসতার মূর্তমান প্রতীক এই ছবি। থাইল্যান্ডের নির্বাসিত স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল থেনম কিটিকেচর্ন দেশে ফিরে আসতে চাইলে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে পড়ে দেশটি। এই ছবিটি তোলা হয়েছিল থেমাজেট ইউনিভার্সিটি থেকে। সেখানে বিক্ষোভরত সাধারণ ছাত্রদের ওপর ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর থেনমের ভাড়াটে গুণ্ডারা এমন নৃশংস আক্রমণ চালায় এবং এতে সৃষ্ট দাঙ্গায় উভয় পক্ষেই বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ছবিটি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার নিল আলেভিচ পুলিত্জার পুরস্কার জিতেন।

আফটার দ্য স্টর্ম
প্রকৃতির রুদ্ররূপের কাছে আমরা কতটা অসহায় তার প্রতীক এই ছবি। হাইতিতে ২০০৮ সালে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের সময় এই শিশুটির ছবি তোলেন মিয়ামি হেরাল্ডের ফটোগ্রাফার প্যাট্রিক ফেরাল।
ছবিতে শিশুটি তার স্ট্রোলারটিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, যেন ভয়ঙ্কর অতীতকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রয়াস তার। সাদা-কালো স্টাইলে তোলা ফেরালের হাইতির ওপর একটি ছবির সিরিজ আছে যা সারা দুনিয়াতেই আলোড়ন তুলেছিল।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ৯/১১
ট্রেড সেন্টারে দ্বিতীয় বিমানটি যখন আঘাত হানে তখন এই ছবি তোলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার স্টিভ লুডলাম। আমেরিকায় চালানো ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলার বীভত্সতা বোঝানোর জন্য এই ছবি যথেষ্ট।

অ্যাটমিক বম্বিং অব হিরোশিমা অ্যান্ড নাগাসাকি
পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে। এতে করে হিরোশিমায় মারা যায় ৯০০০০-১৬৬০০০ এবং নাগাসাকিতে ৬০০০০-৮০০০০ মানুষ। পারমাণবিক বোমার বীভত্সতা বোঝাতে বোমা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অ্যাটমিক ক্লাউডের এই ছবিটিই যথেষ্ট। 
সূ্ত্র : আমার দেশ

1 comment:

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ