প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Sunday, September 2, 2012

আমার শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক | হাসান আলীম


১.
আমার সৌভাগ্য হুমায়ূন আহমেদ আমার সরাসরি স্যার ছিলেন। এম এস সির পলিমার কেমিস্ট্রি তিনি পড়াতেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি ক্লাস নিতেন। রসায়নের বিশেষত পলিমার কেমিস্ট্রির ফিজিক্যাল প্রপার্টি পড়াতে ক্যালকুলাস ও ফলিত গণিতের জটিল অঙ্ক ও জ্যামিতিক বিষয়াদির সহায়তা নিতে হয়। অঙ্কের জটিল সমাধানের মধ্যদিয়ে পলিমার রসায়নের বিভিন্ন অবস্থার বিষয় ব্যাখ্যা করতে হয়। স্যার এসব বিষয় অনেক সহজ করে বুঝিয়ে পড়াতেন। এর ফলে আমরা এ বিষয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছি।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারও এ বিষয়ে আমেরিকা থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন। আমাদের ডিপার্টমেন্টে অনেক ডক্টরেটধারী মেধাবী শিক্ষক ছিলেন কিন্তু  তার মতো অত সুন্দর করে অনেকেই শিক্ষাদান করতে সক্ষম হতেন না।
কাসের কোনো এক সময়ে খোঁজ-খবর নিতেন আমাদের। রাশভারী লোক হলেও তিনি ছিলেন মিশুক এবং বেশ সহজ-সরল। অর্থাৎ তিনি গম্ভীরই ছিলেন তবে যখন কথা বলতেন দ্রুত বলতেন এবং অনেক রসিকতাও করতেন।
আমি কবিতা লিখতাম ছাত্রাবস্থায় পত্র-পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে। মাস্টার্সের ছাত্রাবস্থায় আমার একটি কাব্যগ্রন্থ ‘শ্বাপদ অরণ্যে অগ্নিশিশু’ বের হয়। এ জন্য আমার কাস শেষে  অনেকে কৌতূহল বোধ করতো এবং আনন্দ প্রকাশ করতো। স্যার আমার লেখালেখির কথা জেনে খুশি হন। আমাকে একটু স্নেহের চোখে দেখতে থাকেন। একদিন কাস শেষে তিনি আমাকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। তাঁর দুটো গ্রন্থ ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘নিশিকাব্য’ আমাকে উপহার দিলেন। এরপর থেকেই স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। বেশকিছু কাল পরে আমার একটি গল্পগ্রন্থ ‘সোনার খাঁচা’ প্রকাশ পায়। এ গ্রন্থটি স্যারের নামে উৎসর্গ করি।
স্যার তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন। নিবিড়ভাবে লেখালেখি, রাতজেগে উপন্যাস রচনা করা খুব কঠিন। আবার একই সাথে শিক্ষকতা করা বড় দুরূহ ব্যাপার। সাহিত্যের প্রেমে ও নেশায় তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিলেন শেষ পর্যন্ত।
তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী ও জনপ্রিয় শিক্ষক। কাসে তিনি ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন কিন্তু তারচেয়ে বেশি মনজয় করেছিলেন তার পাঠক শ্রেণী।
রসায়নের শিক্ষকতাকালে তিনি ড. শহীদুল্লাহ হলের হাউস টিউটর ছিলেন। হল ক্যাম্পাসের মনোরম আবাসনে তিনি অবস্থান করতেন।
ঢাকা ভার্সিটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যানিকেতন। কিন্তু এই শিক্ষায়তনের শিক্ষকবৃন্দ যে বেতন পান তা দিয়ে খুব আরাম আয়েশে চলা যায় না। ভীষণ হিসাব নিকাশ করে চলতে হয়। সংসারে সচ্ছলতা আনার জন্য তিনি উপন্যাস এবং টিভি নাটক লিখতে শুরু করেন। ‘বিচিত্রার’ কোনো এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তার মেয়েরা রঙিন টিভি দেখতে পায় না। এটা খুব বেদনাদায়ক। ভার্সিটির  শিক্ষক হয়েও তিনি রঙিন টিভি ক্রয় করতে পারছেন না এ জন্যই তিনি নাটক লভেল লিখতে শুরু করেন। এরফলে প্রচুর টাকা পাওয়া যায়। পাঠকেরা তার বই কেনে প্রচুর। বইয়ের কাটতির জন্য প্রকাশকরা তাকে অগ্রিম লাখ লাখ টাকা দিয়ে যায়। টাকা অর্জনই কেবলমাত্র লক্ষ্য ছিল, না তার লক্ষ্য ছিল জনপ্রিয় কথা সাহিত্য রচনা করা। মানুষকে আনন্দ দান করা।
এই ঢাকা শহরে প্রায় ৪০ বছর চলছে আমার। ছাত্রজীবন এবং কর্মজীবন এই দুইয়ের ভেতরে করেছি কাব্য চর্চা। সাহিত্য চর্চা। আমার এ পর্যন্ত ত্রিশের অধিক গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে কাব্যগ্রন্থই অর্ধেকের বেশি। বাকি গদ্যগ্রন্থ অর্থাৎ গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ, কিছু গল্পগ্রন্থ, কল্পকাহিনী ও কিশোরতোষ রচনা।
হুমায়ূন স্যারের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল ছাত্রজীবনে অর্থাৎ মধ্য আশির দশক পর্যন্ত। এরপর কর্মজীবনে চলে যাই ঢাকার বাইরে একটি কলেজে। তারপর আবার ঢাকায় তবে শেষ পর্যন্ত তা ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানে। স্যারের সাথে যোগাযোগ কম হয়ে যায়। এক সময় তা আর দীর্ঘতর হয়নি। কিন্তু তার গ্রন্থের সাথে অল্প বিস্তর যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠতর ছিল টিভি নাটকে, সিরিয়ালে।
২.
হুমায়ূন আহমেদ একদিনেই সম্রাট হুমায়ূন নয়, একদিনেই সাহিত্য সম্রাট নয়। নিজেকে গড়েছেন পরম যতেœ। প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকের’ পর বেশ বিরতি এরপর তীব্রতর আনন্দময় প্রস্ফুটন, উদ্ভাসন, দুই শতাধিক গ্রন্থের গর্বিত জনক। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কথা সাহিত্যিক কী রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, শরৎচন্দ্র, সুনীল, সমরেশ, সঞ্জীবন বুদ্ধদেবগুহÑ সবার ওপরে সবাইকে ছাপিয়ে বড় হয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি কোটি কোটি পাঠক হৃদয়ে।
হুমায়ূন আহমেদ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞান, কল্পকাহিনী, নাটক, টিভি নাটক, ধারাবাহিক নাটক, সিনেমা কাহিনী, গান, প্রবন্ধ, বিজ্ঞানগ্রন্থ রচয়িতা। তাঁর প্রকৃত নাম শামসুর রহমান। ডাক নাম কাজল। লেখক নাম হুমায়ূন আহমেদ। তিনি হুমায়ূন আহমেদ নামেই পৃথিবী খ্যাত হয়েছেন।
তাঁর লেখা ‘আমার ছেলেবেলা’ সূত্রে জানা যায়, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নানার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের দৌলতপুরের শেখ বাড়িতে। এ বাড়িতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন। একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরের মৌলভী বাড়ি তাঁর পৈতৃক নিবাস। তাঁর দাদা ছিলেন একজন বড় আলেম। পিতা ফয়জুর রহমান আহমেদ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। এ নন্দিত লেখকের মায়ের নাম আয়েশা আক্তার খাতুন।  বাবার বদলির চাকরির কারণে কুতুবপুর এবং দৌলতপুরÑ এ দু’জায়গাতেই শৈশব-কৈশোরের অনেক দিন কেটেছে হুমায়ূনের। দাদার বাড়ি এবং নানার বাড়ির বিস্তর বর্ণনা দিয়ে ‘আমার ছেলেবেলা’য় তিনি লিখেছেনÑ ‘আমার শৈশবের সবচেয়ে আনন্দময় সময় হচ্ছে এই দু’জায়গায় বেড়াতে যাওয়া। প্রতি দু’বছর পর পর একবার তা ঘটত। আমার মনে হতো, এত আনন্দ, এত উত্তেজনা সহ্য করতে পারব না। অজ্ঞান হয়ে যাব। আমরা ছুটিতে যাচ্ছি। ছুটিতে যাচ্ছি। ছুটি!’ জন্ম সাল ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। লাকি থার্টিন। আমার জন্মও ১৯৫৭ সালের ১৩ মার্চ লাকি থার্টিনে। লাকি থার্টিন এ কারণে যে মুহম্মদ (সা.) এর আদ্যাক্ষর ইংরেজি ১৩ নম্বর অক্ষর এম (গ) দিয়ে শুরু। এই প্রিয় ১৩ তারিখে তাঁর জন্ম।
তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হচ্ছেÑ নন্দিত নরকে শঙ্খনীল কারাগার, এইসব দিন রাত্রি, জোছনা ও জননীর গল্প, মন্ত্রসপ্তক, দূরে কোথাও, সৌরভ, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর, জংশন, বহুব্রীহি, লীলাবতী, কবি, নৃপতি, অমানুষ, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, আমার আছে জল, আকাশ ভরা মেঘ, মহাপুরুষ, শূন্য, ওমেগাপয়েন্ট, ইমা, আমি এবং আমরা, কে কথা কয়, অপেক্ষা, পেন্সিলে আঁকা পরী, অয়োময়, কুটুমিয়া, দ্বিতীয় মানব, ইস্টিশন, মধ্যাহ্ন, মাতাল হাওয়া, শুভ্র গেছে বনে, ম্যাজিক মুনসি, ময়ূরাক্ষী, হিমু, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম, হলুদ হিমু কালো র‌্যাব, আজ হিমুর বিয়ে, হিমু রিমান্ডে, চলে যায় বসন্তে দিন, আমিই মিসির আলি, যখন নামবে আঁধার ইত্যাদি।
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল, ফাউন্টেইনপেন, রং পেন্সিল, নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ। চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত সার্থক সৃষ্টি শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, আগুনের পরশমণি ও শ্যামল ছায়া।
হুমায়ূন আহমেদ প্রচুর টিভি নাটক লিখেছেন। এরমধ্যে তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়  টিভি সিরিয়াল এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার প্রভৃতি। এছাড়াও তার অনেক খণ্ড নাটক একাঙ্কিকা, একক নাটক টিভিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ তার ওপরে কেউ নেই বিশেষত কথা সাহিত্য ও নাটক সিনেমায়। অত্যন্ত জীবনঘনিষ্ঠ নাটক কথসাাহিত্য তিনি রচনা করেছেন। তিনি আমাদের সমাজকে ফাঁকি দেননি। সমাজ সংসার বাস্তবতা নিয়েই তিনি লিখেছেন। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মুসলিম সমাজের বাস্তবজীবন অত্যন্ত রসালো করে জীবননিষ্ঠ করে ফুটিয়ে তুলেছেন তার গল্প, নাটক ও উপন্যাসে। তার নাটকের গৃহকর্তাকে দেখা যায় কিনশেভ অথচ মাথায় টুৃপি পরা ভদ্রলোক হিসেবে। কখনও কখনও সমাজপতি বা গ্রাম প্রধানের মাথায় টুপিও দাড়ি রয়েছে যা তাঁর গল্পে সুন্দরভাবে সুন্দর চরিত্রে অঙ্কিত হয়েছে। এ কারণেই আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ হুমায়ূনকে  এভাবে বিপুল আনন্দে গ্রহণ করেছে। অপরপক্ষে হুমায়ূনের আগে টিভি নাটক ও সিনেমায় মুসলিম লেবাস পরা লোকদের ভিলেন ও খলনায়ক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা দর্শক ও পাঠকেরা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা এবং শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের কথা সাহিত্যিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা কত ছিল সবারই জানা। আমাদের দেশে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এক সময়ের যে জনপ্রিয়তা ছিল তাকেও হুমায়ূন ছাড়িয়ে গেছেন। হুমায়ূন আহমেদ সত্যিই একজন বড় লেখক। বাংলা ভাষার গর্ব আমি তাই মনে করি।’
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হিন্দু সমাজের ভেদনীতি, বিধবা গঞ্জনা, নারী নির্যাতন, শ্রেণী বৈষম্য প্রভৃতি সমাজ বাস্তব বিষয়ে লিখেছেন। হিন্দু সমাজের নারী সমাজের প্রগতির কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সুখদুখের কথা বলেছেন অত্যন্ত সফলভাবে। হুমায়ূন আহমেদ তদ্রƒপ লেখক সমাজ কর্তৃক অনাদৃত, অনুল্লেখ্য, বিপুল বিশাল মুসলিম সমাজকে প্রধান উপজীব্য করেছেন। মুসলিম সমাজপতির সমাজ পরিবার সংস্কার ভালো কর্ম করা, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সুখদুঃখ তার লেখায় প্রধান হয়ে ওঠেছে। সাধারণ পাঠকেরা তাদের জীবনের কথা তার লেখার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে লেখার কথাগুলো বাক্যগুলো অত্যন্ত তীর্যকভাবে বর্ণনা হওয়ায় পাঠকেরা তা সহজে গ্রহণ করেছে। অত্যন্ত সহজ সরলভাবে অথচ রসে ভরা, দর্শনে ভরা তার লেখা পাঠকেরা  দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস, গল্প ও নাটকে ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলিম মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সুখদুখের সরস বর্ণনা। কোথাও ভাঁড়ামি, নোংরামি, অশ্লীলতা, মিথ্যা ও অবাস্তবতা ছিল না তার গল্পের চরিত্রগুলোতে। ছিল না ধর্মের প্রতি কটাক্ষ বরং কোথাও কোথাও অত্যন্ত বাস্তবভাবে ধর্মজীবনের আলোকপাত রয়েছে। নর-নারীর প্রেম ভালোবাসাও তার গল্পে স্থান পেয়েছে কিন্তু তাতে নেই অযথা সেক্স ভায়োলেন্স।
তাকে কেউ কেউ অতি আধুনিক ধর্মহীন বলার ফালতু প্রয়াস পেয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন আস্তিক লেখক। তিনি নাস্তিক ছিলেন না। ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু লেখননি। মুক্তিয্দ্ধু নিয়ে তিনি অতিবাস্তব উপন্যাস রচনা করেছেনÑ সেখানে তিনি ধর্মকে আঘাত করেননি।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অশ্লীল লেখক হুমায়ুন আজাদ আক্রমণের শিকার হলে তখন তিনি ১৮ জুলাই ২০০৮ সালে দৈনিক সমকালের সাথে এক সাাৎকারে বলেছেন, ‘যে বইটা তিনি লিখেছিলেন, তা এতই কুৎসিত যে, যে কেউ বইটা পড়লে আহত হবে। তার জন্য মৌলবাদী হতে হয় না।
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সম্পর্কে তিনি বলেন ওনাকে কেউ তো খুন করেনি। উনিতো ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। ওনাকে দেশদ্রোহী কখনোই বলা হয়নি। দেশদ্রোহী কথাটা ভুল ইনফরমেশন। তার বিরুদ্ধে কখনোই দেশদ্রোহিতা মামলা হয়নি। তাছাড়া পুরো ব্যাপারটিই ছিল এত তুচ্ছ, আমরা জানি যে, পুরোটাই ছিল একটা সাজানো খেলা।
‘সমাজ ও রাজনীতি’ অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজাকার বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানকে সাপোর্ট করেছেন তাদের মধ্যে আমার নানাও একজন, যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা গেছেন। আমার এই নানার মতো, মামার মতো ভদ্রলোক পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত এত পরিপূর্ণ ভদ্রলোক এই জীবনে দেখিনি। আমার নানা একটি আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছেন। একটি পূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। কারণ বড় হওয়ার সময় এই অঞ্চলের হিন্দুদের দ্বারা প্রচণ্ড নির্যাতিত হয়েছিলেন। কোনো মিষ্টির দোকানে গেলে তাদের প্লেটে করে মিষ্টি দেয়া হতো না। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তাদের হাতে দেয়া হতো। এটা শুধু মুসলমানদের সঙ্গেই না, নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গেও করতো। এটা ছিল হিন্দুদের কাস্ট সিস্টেম। এসব দেখে দেখে সে সময়ের মুসলমানরা বড় হয়েছেন এবং তাদের মনে হয়েছে একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রয়োজন। অনেক যুদ্ধের পর তারা তা পেয়েছেন। যখন তারা দেখলেন চোখের সামনে দিয়ে সেই রাষ্ট্র ভেঙে যাচ্ছে, তখন তারা মনে করেছেন আবার হিন্দু রাজত্ব শুরু হয়ে যাবে। তখন পাকিস্তানকে সাপোর্ট করা শুরু করেন। কিন্তু পাকিস্তান আর্মির অন্যায়গুলো ক্রমেই চোখে পড়তে থাকে। তারা দেখলেন পাকিস্তানি আর্মিরা তো কেবল হিন্দু মারছে না, সমানে মুসলমানদেরও খুন করছে। আমার নানা দেখলেন, তার অতি আদরের বড় মেয়ের পুলিশ অফিসার স্বামীকে (আমার বাবা) বেঁধে নিয়ে আর্মিরা গুলি করে মেরে ফেলল। তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। কী হচ্ছে এসব? কোন দিকে যাবেন? তিনি কি পাকিস্তান আর্মির সঙ্গেই থাকবেন , নাকি কমন যে স্রোত আছে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন? এই নিয়ে কনফিউশন তৈরি হলো তার মধ্যে। তিনি এই কনফিউশন দূর করতে পারলেন না। এ েেত্র তার যেমন দোষ ছিল, আমাদেরও ছিল। কারণ আমরা তাদের বোঝাতে পারিনি, কনফিউশন দূর করাতে পারিনি। তিনি মারা গেলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এখন আমরা তাকে মা করব কি করব না সেই প্রশ্ন। শেখ মুজিব সাহেব তাদের মা করে দিয়েছেন। আমি মার পপাতী। (মাহফুজ আহমেদ, ঘরে-বাইরে হুমায়ূন আহমেদ হাজার প্রশ্ন, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ১৯৯৪. পৃ.৩১-৩২)
হুমায়ূন আহমেদ একজন বিশ্বাসী এবং ঐতিহ্যবাহী ছিলেন। আমার এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যাবে ফিরোজ এহতেশাম, হুমায়ূন আহমেদের সে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তা থেকে।  ফিরোজশাহ এহমেশাম : ঈশ্বর বিষয়ে আপনার ভাবনা কী? আপনি তো ঈশ্বরে বিশ্বাসী, আস্তিক?
হুমায়ূন আহমেদ : হ্যাঁ। আচ্ছা বলো ঈশ্বর কি আছে? লজিক বলে যে নেই। তবে লজিকের অসম্ভব ক্ষমতা। যে কোনো লজিকের বিপক্ষে তুমি আরেকটি লজিক দাঁড় করাতে পারো। আমাকে এসে একদিন একজন বলল যে, স্যার, সুনামি হইল, এতোগুলো মানুষ মারা গেল, ছেলেমেয়ে বাচ্চা-শিশু এরা তো কেউ কোনো পাপ বা অপরাধ করে নাই। এরা যে মারা গেল তার দায়দায়িত্ব তো তাহলে সম্পূর্ণ আল্লাহপাকের, যদি আল্লাহ থেকে থাকে, আমাদের তো দায়দায়িত্ব না। লজিক স্ট্রং না?
ফিরোজ এহতেশাম : হ্যাঁ, মোটামুটি স্ট্রং, লজিক ...
হুমায়ূন আহমেদ : এই লজিকের বিপক্ষে আরেকটা লজিক দাঁড় করানো যেতে পারে। আমি তাকে বললাম, মনে করো তুমি একটি বাগান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছো আনমনে তুমি যখন যাচ্ছ, তখন তোমার পায়ের নিচ দিয়ে দুই সারি পিঁপড়া যাচ্ছে, তাদের কারো মুখে ডিম, কারো মুখে বাচ্চা। তুমি তাদের পিষে চলে গেলে, জানলেও না। পিঁপড়াগুলো ভাবল, একি ঘটল। আমাদের তো কোনো দোষ নেই, কে আমাদের শত শত বাচ্চা মেরে চলে গেল। ঘটনা একই।
মনে কর তুমি মঙ্গলগ্রহে গিয়ে পাহাড় পর্বতের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা ক্যামেরা কুড়িয়ে পেলে। পেয়েই তোমার মনে হবে এটার একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। এই আপনাআপনি সৃষ্টি হয়নি। তুমি অবাক হলে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলে একটি খরগোশ। এই খরগোশের যে চোখ তা ওই ক্যামেরার চোখের চেয়ে এক লাখ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। তখন তোমাকে এই খরগোশেরও যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে, তা স্বীকার করতে হবে।
ফিরোজ এহতেশাম : আচ্ছা লজিকের খাতিরেই যদি বলি, আপনি বললেন যেসব সৃষ্টিরই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। লালনের একটা কথা আছে যে সব সৃষ্টি করছে তারে সৃষ্টি কে করেছে? আপনি কী বলবেন?
হুমায়ূন আহমেদ : হ্যাঁ, আরজ আলী মাতুব্বরও এমন বলেছে। সব কিছুরই যদি ক্রিয়েটর থাকে, তাহলে বেসিক কোয়েশ্চেন, ক্রিয়েটরের ক্রিয়েটর কে? বিগব্যাং থেকে পৃথিবীর শুরু সব কিছু শুরু। তাহলে বিগ ব্যাংগের আগে কী ছিল?
ফিরোজ এহতেশাম : এটা তো এখনো জানা যায়নি।
হুমায়ূন আহমেদ : লজিক দেই, লজিক দিলে টের পাবে। একটা পিঁপড়া তো যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞানী। এরা চাষ করে, এরা গরু পালে, এদের সোসাইটি আছে, সেনাবাহিনী আছে, এরা বাড়িঘর তৈরি করে। এরা হাইলি ডিসিপ্লিনড, আমরাও তাই। আমাদের পক্ষে কি সম্ভব পিঁপড়াকে আমাদের ফিজিক্স কেমিস্ট্রি, ম্যাথ শেখানো? সম্ভব না। ডিফারেন্সটা হচ্ছে জ্ঞানের লেভেলের। ওরা যে ফিজিক্স  কেমিস্ট্রি, ম্যাথ নিয়ে এসেছে তা নিয়েই ওরা থাকবে। আমরা আমাদেরটা হাজার চেষ্টা করেও তাদের শেখাতে পারব না। যদিও আমরা তাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি উন্নত। তেমনি ঈশ্বরও এতই ওপরের স্তরের যে তার সঙ্গে কোনোক্রমেই কমিউনিকেট করা সম্ভব না। মাঝে মধ্যে উনি শুধু পয়গম্বরদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কমিউনিকেটের চেষ্টা করেন।
ফিরোজ এহতেশাম : এই মুহূর্তে আপনার কি কোনো ঘটনা মনে পড়ছে, যা আপনাকে বেশ আনন্দ বা তৃপ্তি দিয়েছিল?
হুমায়ূন আহমেদ : আমি যখন পিএইচডির শেষ পর্যায়ে। তখন আমার কাছে খ্রিস্টান পাদ্রিরা আসতে শুরু করল। তারা মনে করল, একজন বিধর্মীকে ওদের ধর্মে নিয়ে গেলে ওদের জন্য সুবিধা। আমি দেখলাম, ওরা প্রচুর পড়াশোনা করে, জানে। ওদের ধর্ম বিষয়ে যেমন ওরা প্রচুর জানে, আমাদের ধর্মবিষয়ে তেমনি। আমি আমাদের প্রফেটকে হাইলাইট করার জন্য এক পাদ্রিকে বললাম যে, শোন আমাদের প্রফেট ছিলেন এমনই একজন মানুষ, তিনি যখন কারো  সঙ্গে কথা বলতেন, তখন সরাসরি তার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন। তিনি যার সঙ্গে কথা বলতেন, তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে বলতেন না, তিনি পুরো বডিকে তার দিকে টার্ন করতেন, যাতে সে মনে করে তাকে ফুল অ্যাটেনশন দেয়া হচ্ছে।
 শুনে পাদ্রি বললেন, দেখুন স্পল্ডিলাইটিস বলে একটা ডিজিজ আছে, যে ডিজিজ ঘাড়ের চামড়া শক্ত হয়ে যায়, আপনাদের প্রফেটের ছিল স্পন্ডিলাইটিস ডিজিজ। উনি ঘাড় ফিরাইতে পারতেন না বলে পুরো শরীর অন্যের দিকে ফেরাতেন। তাহলে তোমার একটা ডিজিজকে হাইলাইট করছে কোন দুঃখে? হঠাৎ করে আমার মনটা এমনই খারাপ হলো যে ভাবলাম, আসলেই তো, একটা ডিজিজের জন্য তিনি এটা করতেন বলে আমরা এটাকে মানছি। তখন গড আমাকে হেল্প করলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একটা লজিক দিয়ে দিলেন এবং লজিকটা আমার তাৎক্ষণিকভাবে আসা। পাদ্রি তখনো ওখানে বসা, চা খাওয়া শেষ করেননি। আমি বললাম, আপনার কথাটা ভুল। আমাদের নামাজ পড়ার একটা সিস্টেম আছে। সিস্টেমে মাথা ফিরাইতে হয়। আমাদের প্রফেটের যদি স্পন্ডিলাইটিস ডিজিজ থাকতো, তাহলে তিনি পুরো শরীর ফেরাবেন, উনি তো তা করেননি। তার এই ডিজিজ ছিল না, তিনি যেটা করতেন, তা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে করতেন।
তারপর আমি তাকে বললাম, আমি কিন্তু ঈসা (আ.) সম্পর্কে এ জাতীয় কথা বলিনি। তিনি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং বললেন, তোমার লজিক খুব পরিষ্কার, আসলেই তো তোমরা নামাজের সময় দুই দিকে মাথা ঘোরাও।
ফিরোজ এহতেশাম : আর কোনো ঘটনা?
হুমায়ূন আহমেদ : হ্যাঁ, আরেকবার এভাবেই আমি জয়ী হয়েছিলাম নিউইয়র্কে। সেখানে আমাকে একজন বলল, তোমরা তোমাদের মেয়েদের বোরকার ভেতর ঢুকিয়ে হিজাব-টিজাব পরিয়ে ছেড়ে দিয়েছ সভ্য জাতি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারনি। আমি বললাম, তোমরা যখন তোমাদের মেয়েগুলোকে হিজাব পরিয়ে বাইরে পাঠাও, তখন অত্যন্ত সম্মান করো। আর আমাদের মেয়েগুলো হিজাব পরলে এত রাগ করো কেন? সে রেগে গেল আমরা আমাদের মেয়েদের হিজাব পরিয়ে পাঠাই মানে! আমি বললাম, কেন, তোমাদের নানদের দিকে তাকিয়ে দেখ। তাদের ড্রেস আর আমাদের হিজাব পরা মেয়েদের ড্রেসের মধ্যে কোনো বেশকম আছে? তাকে একমত হতে হলো যে নানদের ড্রেসের সঙ্গে হিজাব পরা মেয়েদের ড্রেসের কোন পার্থক্য নেই।
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সমূহের প্রধান চরিত্র এবং উপরোক্ত সাক্ষ্যৎকারের মাধ্যমে এটা সুস্পষ্ট যে তিনি আস্তিক্যবাদী প্রগতিশীল কথাশিল্পী।
আস্তিকতা হুমায়ূনের উপন্যাসকে জীবন্ত এবং বাস্তবমুখী করে তুলেছে। কথাসাহিত্যিক এবং আস্তিক্যবাদী অথবা আস্তিক্যবাদী কথাসাহিত্যিক আমাদের দেশে পূর্বেও ছিলেন এবং এখনও আছেন তবে তাঁরা এতটা সুখ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। যতটা হুমায়ূন পেরেছেন। এখানে হুমায়ূনের লেখার যোগ্যতা, পাঠক নন্দিত বাক্যরচনা এবং গল্পলেখার নতুনত্বই তাকে শিখরে তুলেছে।
হুমায়ূন আমাদের হাজার বছরের সাহিত্য ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ। কলকাতার এক স্মরণসভায় প্রখ্যাত উপন্যাসিক শঙ্কর বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তার বেশ কয়েকটি লেখা আমি পড়েছি। লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, তিনি বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তার জীবদ্দশায় তিনি রবীন্দ্র, নজরুল, বঙ্কিম, শরৎ চন্দ্রের পাশে স্থান করে নিয়েছিলেন’।
হুমায়ূনের মৃত্যুর পর তিনি আরো মহীয়ান আরো বড় হয়ে ওঠেন। তার মৃত্যুতে যে লাখ লাখ লোকের জানাজা তা এ দেশে একমাত্র নজরুলের জানাজা ছাড়া অন্য কোনো লেখকের বেলায় দেখা যায়নি। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ১৪-১৫ দিন পর্যন্ত অনবরত লিখছে। সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে তাকে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রায় সপ্তাহখানেক স্মরণ করেছে। তাঁকে দেশের পক্ষ থেকে ‘জাতীয় কথাশিল্পী’র মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা উচিত ছিল অন্তত তিনি একজন শহীদ পিতার সন্তান এবং ‘জোছনা জননীর গল্প’-এর মত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাসের স্রষ্টা। এর পিছনে কি হীনম্মন্যতার দেয়াল তা তাঁর পাঠক ভক্তরা জানে না। ভারতের পশ্চিম বাংলার বাংলা পত্র-পাত্রিকা এবং টিভিগুলোতে তার মৃত্যুতে আশ্চর্য নীরবতা পালন করেছে।
কোলকাতার এ আচরণ সম্পর্কে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘শরৎচন্দ্রের পর হুমায়ূনের জনপ্রিয়তায় দুই বাংলার সাহিত্যিকরা ভ্রু কোঁচকাবেন। তার বই বের হলে একবারে ২৫ হাজার কপি নিমেষে শেষ হয়ে যেতো। এ জনপ্রিয়তার কারণ, রিকশা চালক থেকে উচ্চপদের আমলা সবার হেঁসেলে প্রবেশ করার ক্ষমতা ছিল তার।
আরেক লেখক বলেছিলেন হুমায়ূনের লেখায় মামি, চাচি, খালা, ফুপু,আম্মা ইত্যাদি শব্দ থাকতো যার কারণে আমাদের এখানের পাঠকরা তাকে অবহেলা করেছে। আমাদের এ দেশের পাঠকেরা অতিমাত্রায় মৌলবাদী। কারণ বাংলাদেশের পাঠকেরা আমাদের লেখা ফেলে রাখে না যদিও আমাদের লেখায় খুড়ো, পিশি, মাসি, কাকাবাবু বৌদি ইত্যাদি শব্দ থাকে।
সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে হুমায়ূন। তিনি বাংলা ভাষাভাষী ৫০ কোটি মানুষের কেবল লেখক নন। তার লেখা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাকে পৃথিবীর মানুষ শ্রদ্ধা করছে তার এ প্রাপ্য দিনে দিনে আরো বাড়তে থাকবে।
হুমায়ূন চলে গেছেন আমাদের কথাসাহিত্যকে উজ্জ্বল করে দিয়ে তবে তার দ্রুত চলে যাওয়ায় আমাদের সাহিত্যে এক বিরাট ঘাটতি দেখা দেবে। গঙ্গার পানি এখানে এতদিন তাঁর জন্য প্লাবন সৃষ্টি করতে পারেনি পদ্মার ফুলে উঠায় পশ্চিমের পানি প্রবেশ সাহিত্যের অনুপ্রবেশ ঠেকে গিয়েছিল।
হাজার বছরের এ শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের অবদান আমাদেরকে মহিমান্বিত করেছে সাহিত্যের রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বকেন্দ্রে সংযুক্ত করেছে।                           
লেখক : কবি

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ