প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Sunday, September 9, 2012

আবদুল মান্নান সৈয়দ : আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব | মোহাম্মদ সা'দাত আলী

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০; রবিবার। সকাল ১০টা বা তার কিছু পরে। সেল ফোনে কথা হলো তাঁর সঙ্গে। ‘‘বাংলা দর্পণ : আলাউদ্দিন আল আজাদ সংখ্যা’’ কুরিয়ারে পাঠিয়েছি বাসার ঠিকানায়। পেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হতে ফোন করেছি। বেশিক্ষণ কথা হয়নি। ফোনালাপের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছিল যেন প্রাণচাঞ্চল্যে কমতি কোথাও। তখনও জানি না, তিনি হৃদয়াক্রান্ত। অন্য সময় ফোন করলে স্বতঃস্ফূর্ত কথা হতো। কিন্তু আজ খুবই সামান্য হল। বললেন : ‘‘পত্রিকাটা পেলে তো আমার স্মরণে থাকতো’’ এটুকুই যেন বলতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। কুশলাদি বিনিময় করে রেখে দিলাম। অসুখের কথা কিছুই বললেন না। একটু পরেই তাঁর বাসা থেকে জেনেছি, স্যারের সামনে এখন আর সবকিছু দেয়া হয় না। ডাক্তারের নিষেধ। তিনি হার্টাক্রান্ত। ঘরের লোক ও ডাক্তার ছাড়া কারও সঙ্গে হালকা আলাপ-সালাপ ছাড়া পড়া নিষেধ। দেখাও বারণ। কারণ, তিনি কথা বলতে চাইতে পারেন।
আমারও মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা এমন হতে পারে যে, কুরিয়ারে পত্রিকাটি বাসায় ঠিকই গিয়েছে। স্যার হার্টের রোগী। অফুরান বিশ্রাম দরকার। হার্টে চাপ পড়ে তেমন কাজ করা বারণ। সে-কারণেই পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ সংখ্যাটি হাতে দেনই-নি।
যেদিন থেকে তাঁকে সামনাসামনি চিনি, আমার চোখে আবদুল মান্নান সৈয়দ নিরেট একজন ভাল মানুষ। নিরহংকারী। যে কোন ভালকে তিনি কদর করতে জানতেন। কাউকে প্রাপ্য সম্মান দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য ছিল না তাঁর মধ্যে।
১৯৯৫ বা কাছাকাছি সময়কাল। ‘‘এখন’’ নামক একটি সাহিত্য মাসিকের তিনি প্রধান সম্পাদক। খুব সম্ভব, সে-বছরের আগস্ট সংখ্যা হবে। বোধ করি সেটাই শেষ সংখ্যা। সম্পাদকীয় কিয়দংশ লিখেছিলেন আমাকে নিয়ে। ঐ পত্রিকার এক সংখ্যায় তাঁর অনুরোধে, আমি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকদের তালিকা করে দিয়েছিলাম। ১৯০১ থেকে হাল অবধি। সংখ্যাটি বর্তমানে আমার কাছে নেই। বার বার বাসা বদলে কোনভাবে খোয়া গেছে। আরও খোয়া গেছে অনেক লেখা ও পত্রিকার সংগ্রহ।
আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর সৃষ্টির জন্য বোদ্ধা পাঠকের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্র কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ মতিউর রহমান মল্লিক এইমাত্র কিছু দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন। মল্লিক তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করেছিলেন। আমিও করেছি আমার ৩য় কাব্য গ্রন্থ ‘‘লালগালিচা সংবর্ধনা’’।
মাটির পৃথিবীর এটা স্বাভাবিকতা যে, সব মানুষ বিদায় নেবে এমনিভাবে। থেকে যাবে কেবল কৃত্য। গুণ ও কৃত্যে যাঁরা অগ্রগামী, প্রতিভায় যাঁরা সব্যসাচী, মনুষ্যগুণে যাঁরা ঋদ্ধ-সর্বকালেই তাঁরা মনুষ্যসমাজে ও গ্রন্থাদিতে বরেণ্য এবং প্রশংসিত হয়ে থাকবেন।
মতিউর রহমান মল্লিক গেছেন, মান্নান সৈয়দও গেছেন। বছর খানেক আগে (৩ জুলাই, ২০০৯) গেলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। আমিও চলে যাব একদিন। একে একে চলে যাবে সবাই। মৃত্যুর কাছে নিষ্কৃতি নেই কারও। এই অনুভূতি নিয়ে কেবল এতটুকু প্রত্যয় ব্যক্ত করা যেতে পারে যে, সামনের দিনগুলি এবং চলমানতা যেন হয় মসৃণ এবং সহজ আর জীবনময় ভালবাসার।
পবিত্রতার মাস রমযানে বিদায় নিলেন মান্নান সৈয়দ। অনেকেরই এমন আগ্রহ পেশ করা থাকে বিধাতার কাছে। মান্নান সৈয়দ তেমন ভাবতেন কিনা জানি না। সৈয়দের ‘‘সকল প্রশংসা তাঁর’’ কাব্যগ্রন্থটি যদিও তেমন কথা বলে না। তবুও আকাঙ্ক্ষা অনেকের, যদি চির বিদায়টা হয় রমযানে! প্রার্থনা থাকলো বিধাতা সমীপে : ‘আমার বিদায় যেন হয় তেমন এক শুভ দিনে যখন মানুষেরা কেবলি বিধাতার কাছে অবনত'।
আবদুল মান্নান সৈয়দ উভয় বাংলায় সমভাবে আদৃত । তাঁর সৃষ্টিরা এমনই যে, সৈয়দ সাহেবকে স্মরণ না করে উপায় নেই। যেমনি মৌলিকত্ব, তেমনি গবেষণা। কত বরেণ্যকে তিনি সম্মানিত করেছেন। গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন। খুঁজে পেতে এনে মলাটভুক্ত করেছেন অসংখ্য লেখা। কেবল তাঁকেই যেন মানিয়েছে এসব কৃত্যের।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ