প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Friday, September 23, 2011

বোধ || জাফর তালুকদার

তুমি কী আমার কথা বুঝতে পেরেছ?
অবশ্য না বোঝার কিছু নেই। আমি তোমাকে পরিষ্কার করে সব ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেছি। না, এতে বিস্ময়ের কি আছে! মন খারাপের মতো এমন কিছু ঘটেনি যে জন্য মুখ ভার করে থাকতে হবে। আসলে এতে তোমার কোন দোষ নেই। প্রচলিত অর্থে বিয়েটিয়ে অথবা স্বামী-সংসার বলতে যা বোঝায় সেই স্বপ্নটা এখানে নেই বলে একটু ধাক্কা লাগা স্বাভাবিক। আমার কাছেও ব্যাপারটা নতুন। বলতে পার একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এগোব। সোজা কথা, তোমার ভালো লাগুক আর না লাগুক আই ডোন্ট বোদার অ্যাট অল। আমি তোমার সহযোগিতা চাচ্ছি। যদি সেটা না পাই, গড সেক, আমার বীভৎস রূপটি তুমি নিশ্চয় দেখতে চাইবে না।
না, না, এতে কাদাকাটির কিছু নেই। এসব আদিখ্যেতা একেবারেই অসহ্য। তুমি কিঞ্চিৎ লেখাপড়া জান। ব্যস, এতেই চলবে। হয়তো ভাবতে পার, আমি তোমার সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ে করেছি। নেভার, এর একটা বর্ণও সত্য নয়। আমি দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়ে এসেছি। কিছু ডিগ্রি আছে আমার থলেতে। অর্থকড়ি যেটুকু আছে মেরেকেটে কয়েক পুরুষের দিব্যি চলে যাবে তাতে। আমি পূর্ববিবাহিত। স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনে জানাশোনা হয় কেটের সঙ্গে। দু’জনে এমবিএ কোর্সে ছিলাম। আমরা লিভ-টু-গেদার করেছি দীর্ঘদিন। আমার চাপাচাপিতে বিয়েটা গড়াল শেষ পর্যন্ত। বছরখানেকের মাথায় কেট পালিয়ে চলে গেল কোরিয়ার লি চিনের সঙ্গে।
এই হল ইউরোপে আমার ঘর-সংসারের গল্প। আশা করি, এ ব্যাপারে তোমার আর কোন কৌতূহল নেই।
হ্যাঁ, প্রশ্ন করতে পার সব ছেড়েছুড়ে কেন এ দেশে এলাম। না, কোন আবেগের বশবর্তী হয়ে সেটা করিনি। ওসব টিপিক্যাল বাঙালি-স্বভাব আমার নীতিবিরুদ্ধ। লন্ডনের বেথন্যালগ্রিন আর ফরেস্ট গেটে দুটো বাড়ি আছে আমার। বেকার অ্যান্ড ম্যাথুস কোম্পানির অন্যতম পার্টনার আমি। আরও দশকাহন কাহিনী তোমাকে শোনাতে পারব নিজের সম্পর্কে। কিন্তু এটা আমার পছন্দের বাইরে। শুধু এইটুকু বলার কারণ, তুমি যেন না মনে কর তোমার হাজব্যান্ড একজন চিটার। মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তোমাকে নিয়ে এসেছি হাতিয়া থেকে। আসলে সবকিছুই ঠিক আছে, শুধু তোমার জীবনযাপনটা হবে একটু অন্যরকম। আমার জন্যও বটেঃ। এবং এই পরীক্ষায় পাস করতে পারলেই আমরা মুক্ত হয়ে ফিরে যাব ছেঁড়া-দ্বীপে, নয়তো কোন গভীর অরণ্যেঃ কী পারবে না?
আমার সম্পর্কে তোমার কৌতূহল বাড়ছে সে-চোখ দেখেই বুঝতে পারছি। জিজ্ঞেস করতে পার আমি কে? আমার পরিচয় কী? এ দেশের কোথায় আমার বাড়ি। সরি ডিয়ার, কিছুই বলতে পারব না। আমি সেভেনটি-ওয়ানের একজন ওয়্যার-চাইল্ড। আই মিন যুদ্ধ-শিশু। আমাকে এতিমখানা থেকে দত্তক নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের নিঃসন্তান ধনী ব্যবসায়ী রবার্ট ম্যাথুস। বলতে গেলে ওখানেই আমি মানুষ হয়েছি। তাদের রক্ত আমার শরীরে নেই সত্য, কিন্তু তারাই আমার মহান বাবা-মা। তাদের জন্য আমি গর্বিত। বর্তমানে তারা কেউ বেঁচে নেই। তাদের সব সম্পত্তির হকদার করে গেছেন আমাকে। এই গুরুভার সহ্য হল না। একটা দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে সব দান করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।
মাঝে মাঝে ভাবি আমি কে? কোথায় আমার শিকড়? কেন আমি ঢাকায় এলাম! সত্যি বলতে এর কোন সদুত্তর নেই। ভেতরের কোন টান বা তাগিদ আছে বলেও মনে হয় না। তবুও এলাম। একটা ঝোলা নিয়ে ক’হপ্তা ঘুরে বেড়ালাম পুরো শহর। কী খুঁজছি, কেন ঘুরছি, কিচ্ছু জানি না। শুধু হাঁটছি। হেঁটে হেঁটে শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে মধ্যরাতে যখন ফিরে আসতাম হোটেলের লবিতে, তখন আর দাঁড়ানোর শক্তি থাকত না। ফ্রন্ট-ডেস্কের লোকজন দয়া করে পৌঁছে দিতেন রুমে। এরকম একজন কিম্ভূত পাঁচতারা-মার্কা বোর্ডার পেয়ে তাদের বিরক্তি আর কৌতূহলের অন্ত ছিল না।
মিরপুর মাজারের কাছে একদিন পরিচয় হল বেলাল নামের একটা লোকের সঙ্গে। সাধারণত আমি লোকজন অ্যাবয়েড করে চলি। গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে কথা বলি না। কেউ কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এলে পাত্তা দিই না। কিন্তু এই বেলালটা ফেউয়ের মতো জুটে গেল আমার সঙ্গে। লোকটা মতলববাজ। কিন্তু অদ্ভুত একটা সারল্যও ছিল তার মধ্যে। ধরে নিয়েছিলাম কিছু একটা ধান্ধা নিয়ে সে জুড়ে বসেছে আমার সঙ্গে। ফায়দা লোটা হলেই কেটে পড়বে। তার বাড়ি হাতিয়া দ্বীপে শুনে স্রেফ কৌতূহলের বশে একটি কনে জোগাড় করে দিতে বললাম সেখান থেকে। সে সন্দেহ-চোখে তাকাল আমার দিকে। কি বুঝল কে জানে। কয়েক মুহূর্ত গভীর চিন্তায় ডুবে ভাঙাগলায় বলল, হ্যাঁ, একটা মেয়ের সে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। বড়ই দুখী মেয়ে। অকালে মা চলে গেলে যা হয়। বাপ থেকেও নেই। মামার সংসারে লাথি-ঝাটা খেয়ে পড়ে আছে। মেয়েটি সুশ্রী। পড়ালেখা জানে। ভালো বউ হওয়ার সব গুণ তার আছে। আর কী চাই। কিন্তুঃ।
লোকটার চোখে স্পষ্টত সন্দেহ। এরকম একটা চালচুলোহীন লোক বউ খুঁজছে কোন উদ্দেশে এটা একজন বোকাও আন্দাজ করতে পারবে। লোকটার সন্দেহ আরও পোক্ত হল যখন একগুচ্ছ টাকা গুঁজে দিলাম তার হাতে। একটু চকচকে চোখে সে টাকাটা নিল বটে কিন্তু কোথায় যেন একটা বিমর্ষ ভাব লক্ষ্য করলাম তার মধ্যে। সে কথা দিল এবং দিব্যি তিন দিনের মাথায় সে তোমাকে নিয়ে হাজির হল আমার সামনে। তার তৎপরতায় মুগ্ধ হলাম। কিন্তু শুধু মুগ্ধতায় চিড়া ভিজবে কেন। সে নিংড়ে দু’হাজার ডলার নিয়ে গেল পারিশ্রমিক হিসেবে। তবে মানুষটা আর যাহোক চামার নয়। যাওয়ার আগে একবার দেখতে চেয়েছিল তোমাকে। কিন্তু সে সুযোগ আর হয়নি। আমি চাইনি সে আবারও ঝুলে থাকুক এই ব্যাপারটা নিয়ে। লেনদেন চুকে গেছে। ব্যস, আর কী চাই!
তবে পুরো ব্যাপারটায় হয়তো একটা বাণিজ্য-গন্ধ পেয়ে তুমি নাক সিঁটকাবে। না, সে রকম কোন মতলব আমার নেই। না হলে কাজী অফিস থেকে তোমাকে বউ হিসেবে কবুল করে নিতাম না। ভালোই হল, এখন শুধু তুমি আর আমি। এই বাড়িটাও নির্ঝঞ্ঝাটভাবে ভোগ করব আমরা। আগাম ভাড়া দিয়ে ছয় মাসের জন্য পুরোটা নিয়ে নিয়েছি। কেউ যাতে বিরক্ত করতে না পারে সেভাবে ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছে। তাছাড়া কেউ আমাদের চেনাজানা নেই এখানে। বিরক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না। তবুও সতর্ক থাকতে হবে। বাঙালি সুযোগ পেলেই নাক গলাবে। তারপর শুয়ে পড়বে। বি কেয়ারফুল।
আপাতত বাইরের সঙ্গে কোন যোগাযোগ না হলেও চলবে। কয়েক মাসের খাবারের ব্যবস্থা মজুদ আছে। বলতে গেলে সবই শুকনো খাবার। রান্নাবান্না নিয়ে খামোকা সময় নষ্ট করার মানে হয় না। এটা-সেটা দিয়ে চালিয়ে দিলেই হল। প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হতে পারে। অভ্যাস হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না। আর একটা জিনিস হয়তো লক্ষ্য করেছ, গোটা বাড়িতে কোন আসবাব নেই। বাহুল্য পোশাকাদি, হাঁড়িকুড়ি, বিছানা, টিভি, ফ্রিজ, ফোন ইত্যাদি কোন জঞ্জাল ঠাঁই দেয়া হয়নি এখানে। সব ফক্কা। এ সঙ্গে আমাদের শরীর থেকেও কাপড়-চোপড়ের পাট বিদায় করে দেব। অনেকটা গুহাবাসী আদিম মানুষের মতো। প্রয়োজনের বাইরে কথা বলার প্রয়োজন নেই। সবকিছু আকার-ইঙ্গিতে চলবে। এই আর কী। বাকিটা ধীরে ধীরে শিখে নেয়া যাবে।
হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা এই গৃহ-গুহায় সারাদিন করবটা কী! সোজা কথায় এর উত্তর হলÑ কিছুই না। তুমি ইচ্ছে করলে নিজের হাত-পা সুঁচ দিয়ে ফুঁড়তে পার। ব্লেড-ছুরি দিয়ে কেটে দেখতে পার চামড়ার কারবার। নিজেকে চাবকানোর মধ্যেও একটা আলাদা আনন্দ আছে। শারীরিক কসরতটাও খুব জরুরি। ধর, কয়েকটা ঘণ্টা তুমি মাথা মেঝেতে ভর দিয়ে পা উঁচু করে রাখলে। এভাবে দু’হাত দিয়ে হাঁটার চর্চাটাও মন্দ নয়। তুমি যে ইটে মাথা রেখে শোবে সেটা মুখের ওপর চাপা দিয়ে দাও কয়েক ঘণ্টার জন্য। চাইলে ইট দিয়ে হাত-পা থেতলে দিতে পার। মানুষের পেচ্ছাবে রোগ-প্রতিরোধের অপূর্ব ক্ষমতা আছে। এতে ঘেন্নাপেত্তার কিছু নেই। নিজের মলমূত্র আমরা তো নিজেরাই বহন করি। প্রতিদিন সকালে এক গেলাস টাটকা মূত্র গিলে ফেলবে। ব্যস, হয়ে গেল শরীর ফিট।
আরে, তুমি এভাবে আঁৎকে উঠলে কেন? মনে হচ্ছে এখনই মূর্ছা যাবে। না, না, এসব নিয়ম-কানুন শুধু তোমার জন্যই নয়। আমার বেলা হবে এটা আরও কঠোর। আমি কথার বাগাড়ম্বর পছন্দ করি না। এই দ্যাখো আমার জামা-প্যান্ট খুলে রাখছি। বাকি ক’টা দিন উদোম হয়ে থাকতে চাই এখানে। তুমি এক কাজ কর, শুরুতেই একটা থেরাপি দিয়ে দাও আমাকে। অই বেল্টটা নাও। কোন সংকোচ করবে না। আমি উপুড় হচ্ছি। তুমি যতক্ষণ পার মনের সুখে চাবকাবে। অবশ্য এর পরে তোমার পালাও আসবে। এর পরে রচিত হবে আমাদের মধু-বাসর। ওকে, কাম অন ডিয়ারঃ।
আমরা চমৎকারভাবে মোটামুটি একটা দিন পার করেছি। বেশ ভালো রেসপন্স পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। থ্যাংকু ডিয়ার। তুমি খামোকা গায়ে কাপড়টা এখনও পেঁচিয়ে রেখেছ কেন। না, না, ওটা ফেলে দাও। এখানে কোন সংস্কারের প্রয়োজন নেই। আমি তো দিব্যি উদোম হয়ে আছি। শোনো, তুমি বেশ ক্ষুধার্ত তা বুঝতে পেরেছি। রাতের মেন্যুটা আলু সেদ্ধ আর খেজুর দিয়েই হয়ে যাক। আমি অবশ্য কাঁচাই খাব। আগুনের ব্যবহার যত কম হয় ততই ভালো। আলো জ্বালানোর প্রয়োজন নেই। পানি ব্যবহারেও আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। øানের জন্য বরাদ্দ থাকবে সপ্তাহে একটা দিন। তবে প্রয়োজনে এটা চেঞ্জও হতে পারে। রান্নার পাট নেই বলে পানির ব্যবহারও তেমন থাকবে না। শুধু খাওয়া আর বাথরুমের ব্যবহারÑ কী পারবে না এইটুকু সামাল দিতে।
এখন আর আলোর প্রয়োজন নেই। সেই থেকে দরজা-জানালাগুলো বন্ধ। অন্তত রাতের বেলা কিছুক্ষণের জন্য এগুলো আমরা খুলে রাখতে পারি। বিলের কাছাকাছি বলে এদিকে তেমন একটা বাড়িঘর ওঠেনি। অনেকটা ফাঁকার দিকে পড়েছে আমাদের বাড়িটা। তুমি চাইলে রাতের আকাশ দেখতে পার। অপার এক রহস্য দিয়ে ঘেরা ওই নক্ষত্রপুঞ্জ। চাঁদটা দ্যাখো। কেমন ভরাট আর টলটলে। বিলটা যেন জ্বলছে। এত আলো আমার চোখে সয় না? কেবলই মরে যেতে ইচ্ছে হয়।
মন খারাপ কর না। এখানে ছ’টা মাস থেকে আমরা বেরিয়ে পড়ব পাহাড়-দ্বীপের দেশে। তবে পাহাড় আমাকে খুব টানে। এখানে হিমালয় নেই সত্য, ৩ হাজার ১৭২ ফুট উঁচুর কেওক্রাডং তো আছে। বগালেক, চিম্বুক, নিলগিরি পেরিয়ে চলে যাব দার্জিলিং পাড়া। ওখানে বসে বম-তরুণীর হাতের ধোঁয়া-ওঠা তাজা-চা খাব একান্তে বসে। তারপর ধীরে ধীরে উঠে যাব স্বপ্নের চূড়ায়। খুব খিদে পেলে ফিরে আসব পাশিংপাড়ায়। ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত দিয়ে খাব ঝাল করে রান্না বনমোরগের মাংস। মন চাইলে বগালেকের পানিতে গা ভাসিয়ে কাটিয়ে দেব পুরো একটা রাত। তারপর তুমি-আমি মিলে একটু গহিনে চিংড়ি ঝরনার কাছে বানাব একটা লতাপাতার কুটির। বেশ থাকব সেথায় দুই আদম মানব-মানবী। কী, যাবে তো আমার সঙ্গে?
তুমি তো দ্বীপ-কন্যা, তাহলে চল দ্বীপেই না হয় বাঁধব বাসা। ছেঁড়াদ্বীপ, মনপুরা, দুবলার চরÑ নয়তো সুন্দরবনের গহিন কোন প্রান্তে। বাঘ-ভালুক, সাপকোপে নেই কোন ভয়। আমরা ওদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকব। মাছ, মধু, বুনোফল, মেটেআলু, লতাপাতা হবে নিত্যদিনের আহার। তুমি কী গান জান? বনবিবির মন ভজাতে দু’খানা গান না গেলে গোস্যা হবে তার। দুবলার চরে রাশমেলার ক’টা দিন নেচেগেয়ে পার করব সবার সঙ্গে। ওই স্বপ্নে কেমন যেন বিভোর হয়ে যাচ্ছি এখনই।
আহা, একটা ভুল হয়ে গেছে। আমার থলেতে দ্যাখ একটা ছোট্ট কৌটা আছে। নাগের বাচ্চাটা কেমন আছে কে জানে! চন্দ্রা বেদেনীর কাছ থেকে ওটা কিনেছি ভারি সস্তায়। খুব লক্ষ্মী মেয়ে চন্দ্রা। কত আর বয়স হবে! এই বড়জোর সতের কী আঠোর। ভারি চঞ্চল। চোখ দুটো যেন সারাক্ষণই নাচছে। বেড়িবাঁধের কাছে আমার দেখা পেয়ে শুরু হল ট্যা ট্যাÑ দে না বাবু দশটা ট্যাকা। মা মনসার দুধ কেনব। কৌটা খুলে এক রত্তি মনসাকে দেখিয়ে সে কী হাসির বন্যা সারা শরীরে। অমন নিখুঁত পেটানো শরীরের কালো নারী-মূর্তি দেখেছি জাদুঘরে। রক্ত-মাংসের এই মূর্তিটি দেখে কী যে হয়ে গেল আমার। আলতো করে তার হাতখানা ধরে তাকালাম চোখের দিকে। সে সামান্য কেঁপে উঠে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘আমাকে নিবি বাবু?’
তাকে আর নেয়া হয়নি। নিয়েছি এই কেউটাটাকে। একটু দুধ গুলে খেতে দাও ওকে। কৌটায় বন্দি করে রাখার কী দরকার। ও মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াক। যতদিন ইচ্ছে থাকুক। চলে যেতে চায় যাবে। আর একটা কথা তোমাকে বলি, আমার থলের ভেতর একটা বয়েম আছে। ওটার ভেতর জোঁক আছে কয়েকটা। না, না, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জোঁক মানুষের নানা উপকারে আসে। নষ্ট রক্ত চুষতে ওদের জুড়ি নেই। ঘুমানোর আগে তুমি ওগুলো বসিয়ে দিও আমার শরীরে। বেশ ভালোই আহার হবে বেচারীদের। হাঃ হাঃ হাঃ।
রাত অনেক হল। চল ভেতরে যাই। দরজা-জানালাগুলো বন্ধ করে দাও। এবার বেল্টটা নিয়ে এস। তোমাকে এখন কিছুক্ষণ চাবকাতে চাই। এটার একটা কটরমটর নাম আছে। স্যাডোম্যাগোকিজম। আজ আমাদের বাসর রাত, তাই না!
এসো ডিয়ার, শুভ কাজে দেরি করতে নেই।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ