প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, March 8, 2011

তিড়িং বিড়িং ফড়িং ।। ধ্রুব নীল

বোঁ বোঁ বোঁ।
দ্রুত ডানা ঝাপটানোর শব্দে কানে তালা লেগে গেল বুড়ো শুঁয়োপোকার। লেবু পাতায় সবে আয়েশ করে কামড় বসাতে যাবে, তার আগেই মাথার ওপর চক্কর খেতে লাগল পুচকে চিচি।
'লেবু পাতায় ল্যান্ড করতে যাচ্ছি। শুঁয়োপোকা তুমি খানিকটা সরে দাঁড়াও। ওভার।'
'হ্যাঁ হ্যাঁ সরছি।'
'রজার দ্যাট।'
'কী বললে?' 'বিমান চালালে এমনটা বলতে হয়। এখন তুমি সরো। ওভার অ্যান্ড আউট।'
চারদিকে মাথাটা ঘুরিয়ে নিল চিচি। দেখে নিল আশপাশে দোপেয়ে প্রাণীগুলো আছে কি না। ফড়িং হওয়ার এই এক সুবিধা, সোজা দাঁড়িয়ে থেকেই চারদিকে মাথা ঘোরানো যায়। যখন খুশি ডানে-বামে, ওপর-নিচে সরে যাওয়া যায়। চারটে পাখার গতি কমিয়ে নিরাপদে লেবু পাতায় ল্যান্ড করল গঙ্গাফড়িংটা। এখানে ও জিরিয়ে নেবে কিছুক্ষণ। এই ফাঁকে চলো চুপিচুপি চিচি নামের ফড়িংটাকে একটু ভালো করে দেখে নেওয়া যাক।
এ কি! পেছনে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই টের পেয়ে গেল! বোঁ করে উড়ে আরেকটা পাতায় গিয়ে বসল ফড়িংটা। হুম, টের পাওয়ারই কথা। চোখ তো তার যেনতেন নয়। একেকটা চোখে আছে ৩০ হাজার লেন্স! প্রতিটি লেন্স আবার একেকটা চোখ! আমরা তো শুধু চোখের সামনের এ মাথা থেকে ও মাথা দেখি, আর ফড়িং দেখে পুরো তিন শ ষাট ডিগ্রি! মানে সামনে-পেছনে, ডানে-বামে সব একসঙ্গেই দেখে! আর ১৫ মিটার দূরে কিছু একটা নড়ে উঠলেও টের পেয়ে যায় প্রাণীটা। এখন উপায়!
হ্যালো মিস্টার চিচি। তোমার সঙ্গে একটু কথা বলা যাবে?
'কে তুমি! হু আর ইউ!'
আমি টুনটুন টিনটিন। একটা ছোট্ট ইন্টারভিউ নিতে এসেছি।
'সময় কম। যা বলার জলদি বলো। একটু পর আবার শিকারে যাব।'
কী শিকার করবে আজ?
'আজ খুব মাছের পোনা খেতে ইচ্ছে করছে। আর পথে যদি দু-চারটা মাকড়সা পড়ে, তবে...।'
কিন্তু মাকড়সার জালে আটকা পড়বে তো!
'আরে নাহ! চিকন ফড়িংগুলোই আটকা পড়ে। ইংরেজিতে তোমরা যাদের বলো ড্যামসেলফ্লাই। আর আমি তো হচ্ছি ড্রাগনফ্লাই। আমি উল্টো মাকড়সার জাল থেকে মাকড়সার ছানা ধরে খাই।' বলে চিচি উড়ে গেল।
দেখলে ফড়িংয়ের সাহস! অবশ্য সাহসী তো হবেই। ফড়িং তো আর সেদিনকার পতঙ্গ না। ৩০ কোটি বছর আগ থেকেই চারটে ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াচ্ছে প্রাণীটা। কীটপতঙ্গের জগতে এরাই সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা।
শুধু তাই নয়। অন্যদের মতো অল্প কয়েক মাসের আয়ু নিয়ে আসেনি ফড়িং। পতঙ্গের মধ্যে ফড়িংই সবচেয়ে বেশি দিন বাঁচে। কিন্তু আফসোসের ব্যাপারটা হলো, ফড়িংকে তার জীবনের একটা বড় সময় কাটাতে হয় লার্ভা অবস্থায়। সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়ার পরের দশাটাই হলো লার্ভা। আর ওই অবস্থায় ফড়িংয়ের কোনো ডানাও থাকে না। আরে! চিচিকে খুঁজতে দেখি তার বোন এসেছে। চলো তো শুনি উনি কী বলেন।
এঙ্কিউজ মি।
'ইন্টারভিউ পরে, আগে বলো চিচিকে দেখেছ কি না! এত দুরন্ত। নিজেকে জেট বিমান মনে করে। আমার বাকি বারো শ তেপ্পান্নটা ভাইবোন নিয়ে এত যন্ত্রণা পোহাতে হয় না।'
বলেন কি! এত ভাই-বোন? বয়স কত ওর?
'ছোট হলে কী হবে। আমরা ফড়িংরা কয়েক শ থেকে হাজার খানেক ডিমও পাড়ি। আর আমাদের মধ্যে চিচিই সবার পরে উড়তে শিখল। টানা চার বছর সময় লেগেছে ওর। আমি তো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই খোলস ছেড়ে উড়ে যাই।'
এত দিন শুধু পানিতে ঘুরেফিরে কাটিয়েছে?
'তো কি আর আকাশে উড়বে? ফড়িং তো পানিতেই ডিম পাড়ে। তা না হলে খাবার পাবে কোথায়?'
কী কী খান আপনারা?
'সবই খাই। লার্ভা থাকতে আমি যে কত মাছের পোনা আর ছোট ছোট পানির পোকা খেয়ে ফেলেছি। এখন আর অত খেতে পারি না, এখন শুধু বেছে বেছে মশা আর ছোট পোকা খাই।'
মশা! দারুণ তো। আমাদের বাসায় চলুন না! সন্ধ্যা নামলেই মশারা বেশ জ্বালায়।
'তুমি তাহলে জানোই না, অনেকেই কিন্তু আমাদের বাসায় থাকতে দেয়। শুনেছি বিদেশে আমাদের খামারও আছে নাকি। ওরা আবার আমাদের ব্যাপারে অনেক সচেতন। আমাদের বেশ যত্নে রাখে।'
চিচির বোন উড়ে যেতেই কোত্থেকে চিচি এসে হাজির। এসেই বিমানচালকদের মতো কী সব বলতে শুরু করল।
'মে ডে! মে ডে!'
এখন চলছে মার্চ! মে ডে বলছ কেন?
'আরে এটা হলো বিপদের সংকেত! চরম বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম! একটা মাছরাঙা! উফ.. সে কি হিংস্র মাছরাঙা। আমাকে খাওয়ার জন্য ছুটে এল। সময়মতো চোখের পেছনের লেন্সে ওটাকে দেখে ফেললাম। প্রাণপণে ছুট লাগিয়েছি।'
কত জোরে ছুটতে পারো তুমি?
'তুমি বোধ হয় জানো না, কীটপতঙ্গের মধ্যে আমরা গঙ্গাফড়িংরাই সবচেয়ে দ্রুত উড়তে পারি। ঘণ্টায় ৩০ মাইলও হয় আমাদের গতি।'
বলো কি! এ তো প্রায় টাউনে চলা বাসের সমান!
'সাউদার্ন জায়ান্ট নামের আমাদের এক বিদেশি জাত আছে। ওই জাতের একটা ফড়িং আবার রেকর্ডও গড়েছে। ঘণ্টায় ওটা ৬০ মাইল বেগে উড়েছে! ঠিক যেন এফ-১৬ ফাইটার বিমান।'
কথা শেষ হতেই বোঁ করে উড়াল দিল চিচি। তার পেছন পেছন একটা ছোট্ট শিশুও ছুটছে। মনে হয় চিচিকে ধরতে চায়। শিশুটা বোধ হয় কোনোভাবে জেনে গেছে গঙ্গাফড়িং কিছুতেই কামড় বসাতে পারে না। আঁকড়ে ধরে শুধু।

সবচেয়ে বড় গঙ্গাফড়িং পাওয়া যাবে যুক্তরাজ্যের বন-বাদাড়ে। বড় ফড়িংগুলোকে বলে 'হকার'। এগুলো দৈর্ঘ্যে গড়ে সাড়ে তিন ইঞ্চিও হয়। আর পাখার এ মাথা থেকে ও মাথা হয় সাড়ে পাঁচ ইঞ্চির চেয়ে একটু বেশি। সবচেয়ে বড় পাখা আছে মধ্য আমেরিকার একটি প্রজাতির। ওটার পাখা সাড়ে সাত ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। আর সবচেয়ে ছোট ফড়িংয়ের দেখা মিলবে মালয়েশিয়া, জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে। এদিকটায় আধা ইঞ্চি আকারের ফড়িংও পাওয়া যায়।
লার্ভা থেকে পূর্ণবয়স্ক ফড়িং হওয়ার আগ পর্যন্ত একটা ফড়িং সর্বোচ্চ ১৭ বারও খোলস বদলায়।
মৌমাছির মতো ফড়িংও ওড়ার সময় পাগুলো ভাঁজ করে ঝুড়ির মতো করে রাখে। ওই ঝুড়িতেই শিকার ধরে নিয়ে যায় ফড়িং। 


সূত্র : কালের কন্ঠ

1 comment:

  1. জান্নাতুল ফেরদাউসMarch 11, 2011 at 8:33 PM

    সুন্দর গল্প

    ReplyDelete

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ