প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, March 8, 2011

স্বাধীনতা আমার ভালোবাসা ।। সালেহ আকরাম

স্বাধীনতা আমার ভালোবাসা। স্বাধীনতা পরাধীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার নাম। মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। গানের মাস। সুরের মাস, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার লড়াই শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করি। বিজয় আসে ত্যাগের বিনিময়ে। বিজয় আসে লাখো মানুষের জীবনের বিনিমিয়ে। স্বাধীনতা লাভ করতে হয় রক্ত দিয়ে। ভালোবাসা দিয়ে।
‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা
আমরা তোমাদের ভুলবো না।’
স্বাধীন দেশের সকল মানুষের হৃদয়ে এ গান যুগ যুগ ধরে বাজতে থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বীর শহীদদের এভাবে সবাই স্মরণ করবে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এ ইতিহাসের সূচনা করে। সেদিন গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়াউর রহমান। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। নয় মাস যুদ্ধ শেষে আসে বিজয়। আমরা যদি তার একটু পেছনে যাই তাহলে দেখবো ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন দেশের জন্ম লাভ করে। ইংরেজদের ২০০ বছরের অত্যাচার থেকে আমরা মুক্তি লাভ করি। ইংরেজদের জুলুম শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন আমাদের সাহসী বীর নবাব সিরাজউদদৌলা, টিপু সুলতান, তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, মুন্সি মেহের উল্লাহ, ঈশা খাঁ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক প্রমুখ বীর সেনানী। তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম লাভ করে পাকিস্তান। বাংলার মানুষ পায় স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতার লোভ আর শোষণের কাছে স্বাধীনতার কোনো মূল্যই রইলো না। নষ্ট হয়ে যায় সেই স্বাদ। ২৫ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভাগ হলো। বাংলাদেশ নামক একটি নতুন দেশ বিশ্ব দরবারে তার নাম লেখালো। আমরা পেলাম একটি স্বাধীন ভূখন্ড, পেলাম একটি লাল সবুজের পতাকা, পেলাম একটি সুজলা, সুফলা, ধানের দেশ গানের দেশ বাংলাদেশ। আমরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধলাম। হৃদয়ে জাগলো অনেক আশা। আমরা আমাদের দেশকে উচ্চ আসনে বসাবো, শান্তির দেশ হিসেবে অগ্রসর হবো-এটাই ছিলো প্রত্যাশা, কিন্তু আমাদের অনেক আশাই পূরণ হয়নি। আমরা স্বাদ নিতে পারিনি বিজয়ের। কবি লিখেছেন-
‘পদে পদে যে জন মানে হাজার রকম অধীনতা
তার তরে নয় মুক্ত জীবন, তার তরে নয় স্বাধীনতা।’
আমাদের বড় সমস্যা আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দেশটাকে এখনো হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসতে পারিনি দেশের মানুষকে, মাটিকে। পরের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অভ্যাসও আমাদের মাঝে গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে সামান্য স্বার্থ নিয়ে চলে দলাদলি, চলে প্রতিহিংসার রাজনীতি। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারি না, আমাদের মধ্যে হিংসা এতো বেশি যে কেউ কাউকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি না, সত্যের পথ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। পাশাপাশি দেশজুড়ে খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি তো চলছেই। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে অন্যদের উপর চালায় দলন, পীড়ন। স্বাধীনভাবে সাধারণ মানুষ তার মত প্রকাশ করতে পারে না। তা হলে কি হলো? একি স্বাধীনতা? না আমরা পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত হয়েছি মাত্র। এখনো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পাইনি। পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পেতে হলে আমাদেরকে আরো উদার হতে হবে। সৎ যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। একে অপরকে ভালবাসা দিতে হবে। অন্যায় অবিচার দূর করতে হবে। তা হলেই তো স্বাধীনতার সুবাতাস বইবে সারাদেশে, সবার ঘরে ঘরে। কবি সাজজাদ হোসাইন খান তার এক ছড়ায় বলেছেন-
দেশের মাটি কামড়ে থাকো
খামচে ধরো ভাষা
হৃদয়টারে উদাম করে
ওড়াও ভালোবাসা।
স্বপ্নে মাখা অতীতটারে
বর্তমানে মিশাও
অন্ধকারের দ্বন্দ্ব যতো
আলোর সাথে পিশাও।

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ