প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Thursday, February 3, 2011

কাক ও কবুতর

একদিন এক কবুতর তার বাচ্চাকে উড়ান শেখাতে শেখাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় একটি উঁচু গাছের ডালে বসল। সামান্য বিশ্রাম নেয়ার পরই দেখতে পেল পাশের ডালে একটি খালি বাসা। তৎক্ষনাৎ উড়ে গিয়ে ওই বাসায় বসলো। বাসাটি ছিল এক কাকের। বছরখানেক আগে কাক ওই বাসা ছেড়ে অন্যখানে চলে যায়। ঘটনাচক্রে সেদিনই এ পথ দিয়ে উড়ার সময় আগের বাসার কথা মনে পড়ল কাকের। নিচে নেমে এসেই দেখতে পেল একটি কবুতর তার বাচ্চা নিয়ে বসে আছে ওই বাসায়। অমনি কাক কা কা করে চিৎকার করে বলে উঠলো, এই বজ্জাত কাক! তুই আমার বাসায় বসে আছিস কেন? তোকে কে অনুমতি দিয়েছে?
কবুতর বলল : না, কারো অনুমতি নেইনি। তাছাড়া এখানে আমরা থাকার জন্যও আসিনি। আমার বাচ্চা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় এখানে কয়েক মিনিট জিরিয়ে নিচ্ছিলাম মাত্র। তুমি অযথায় রাগারাগি করো না, আমরা এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।
কাক আবারো চিৎকার করে বলল : তুই অন্যায়ভাবে আমার বাসা দখল করেছিস। আবার বড় বড় কথা বলছিস! তোকে এত সহজে ছাড়ব না। এক্ষুনি সব পাখিদের ডাকব। তারা এলে তোকে ঘাড় ধরে বাসা থেকে বের করে দেবো।
এই বলেই কাক কা কা করে সব পাখিদের ডাকল। আর এই ফাঁকে কবুতরের বাচ্চাটিকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে মাটিতে ফেলে দিল। কাকের শোরগোল শুনে চারদিক থেকে পাখিরা এসে জড়ো হলো। তারা জানতে চাইলো, ব্যাপার কী?
কাক বলল : এই কবুতর অন্যায়ভাবে আমার বাসা দখল করে বসে আছে। আমি এখন ওকে চরম শিক্ষা দেবো।
কবুতর বললো:তোমরা কাকের কথা বিশ্বাস করো না। কাক মিথ্যা বলছে। এ বাসা আমারই। এই কাক এসে অন্যায়ভাবে আমার শিশু বাচ্চাকে বাসা থেকে বের করে নিচে ফেলে দিয়েছে। তোমাদের কাছে আমি এর বিচার চাই।
দু'পক্ষের কথা শুনে পাখীরা কাককে জিজ্ঞেস করলো: এ বাসাটি যে তোমার এ বিষয়ে তোমার হাতে কোনো দলিল প্রমাণ আছে কি?
কাক বললো: কি সব আজেবাজে কথা বলছো! দলিলপ্রমাণ, সাক্ষী-সাবুদ এসব আবার কী?
পাখীরা এবার কবুতরকে জিজ্ঞেস করলো : এ বাসাটি যে তোমার তার কী কোনো প্রমাণ আছে?
কবুতর বললো: অন্য কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। আমার সাক্ষী আমার বাচ্চা। কাক ঘাড় ধাক্কা দিয়ে আমার বাচ্চাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে এবং একই কায়দায় আমাকেও বাসা থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে। আমাকে দুর্বল পেয়ে কাক কী অত্যাচারইনা শুরু করে দিয়েছে।
পাখীরা বললো : ঠিক কথাই তো! কাকের অধিকার নেই এভাবে কবুতরের ওপর জুলুম করা। কাকের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সে গিয়ে কাজীর কাছে বিচার চাইতে পারে।
এরপর পাখীদের এক প্রতিনিধি গেল হুদহুদ পাখীর কাছে। হুদহুদ সোলায়মান পয়গম্বরের বন্ধু। ন্যায় বিচারক হিসেবে তার বেশ সুনাম আছে। কাক ও কবুতরের মধ্যে ঝগড়া বেধেছে শোনার পরই হুদহুদ চলে এলো। সে কাককে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে বলো শুনি?
কাক বললো: আমি বছরখানেক হলো এ বাসা বানিয়েছি। অথচ কবুতর এসে বিনা অনুমতিতে এখানে জেঁকে বসেছে।
কবুতর বললো : আমি বেশ কিছু সময় ধরে এখানে আছি এবং এখানে কোনো কাক দেখিনি। আজ হঠাৎ করে কাক এসে আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে এবং আমার বাচ্চাকে বাসা থেকে জোর করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে।
কাক ও কবুতরের কথা শোনার পর হুদহুদ বললো:এখন যদি আমি বিচার করি তাহলে সবাই কী মেনে নেবে?
সমবেত পাখীরা বললো : অবশ্যই মেনে নেবো।
হুদহুদ কিছুক্ষণ ভেবে বললো : কাক যেহেতু এতদিন বাসাটিতে ছিল না এবং সে অন্যায়ভাবে কবুতরের বাচ্চাকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে সে জন্য আমার মতে, বাসাটি কবুতরের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত।
হুদহুদের বিচারের রায় শোনামাত্রই কাক ক্ষেপে আগুন হয়ে গেল। কিন্তু পাখীদের বাধার কারণে সে বেশিক্ষণ সেখানে টিকতে পারলো না।
কাক একটু দূরে যাবার পর কবুতর হুদহুদের কাছে এসে বসলো এবং আস্তে আস্তে বললো : কাজী সাহেব! আপনার মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ । কিন্তু আমি একটি বিষয়ে জানতে চাই আর তাহলো,আমার কাছে যেমন কোনো সাক্ষ্য ছিল না তেমনি কাকের কাছেও কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না। তাহলে আপনি কী করে আমার পক্ষে রায় দিলেন?
হুদহুদ বললো:তুমি ও কাক ছাড়া প্রকৃত সত্য যেমন আর কেউ জানে না, তেমনি আমিও জানি না। কিন্তু যখন কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকে তখন যার চরিত্র ভাল, সুনাম-সুখ্যাতি বেশি,মিথ্যা বলেনা, তার পক্ষেই আমি রায় দিয়ে থাকি। সত্যবাদী হিসেবে তোমার খ্যাতি আছে আর মিথ্যাবাদি ও বদমেজাজী হিসেবে কাকের অনেক বদনাম আছে। তাই তোমার পক্ষে রায় দিয়েছি।
কবুতর বললো : আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনি সুন্দর কথা বলেছেন। তবে আপনাকে এখন বলছি যে, এ বাসাটি আমার নয়। এটি কাকেরই। আমি চাইনে যে, সত্যবাদী হিসেবেও পরিচিত হবো আবার এর উল্টো কাজও করবো।
হুদহুদ বললো : সত্য কথা বলার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু বিচারের সময় তুমি মিথ্যা বললে কেন ?
কবুতর বললো : আমি আসলে মিথ্যা বলিনি। আমি কখনই বলিনি যে, বাসাটি আমি তৈরি করেছি বরং আমি বলেছি, আমি এখানে ছিলাম। আর এ কথায় কোনো মিথ্যা নেই। তবে আপনার আসার আগে কাক এসে আমার সাথে বাজে ব্যবহার করায় আমিও একই ধরনের আচরণ করতে বাধ্য হই। সে যখন গায়ে পড়ে ঝগড়া বাধাতে চাইলো তখন আমিও তাকে একটা শিক্ষা দিতে চাইলাম। এখন যেহেতু আমার সত্যবাদিতা ও সুখ্যাতির কথা উঠেছে সেহেতু আমি আমার এ সুখ্যাতিকে এ ধরনের শত বাসার সাথেও বিনিময় করতে চাইনা।
হুদহুদ বললো : মাশআল্লাহ!খুব ভাল লাগলো তোমার কথাগুলো। কিন্তু এখন যেহেতু প্রকৃত ঘটনা বলেছো সেহেতু আমিও তোমার কোন বদনাম কারো সামনে প্রকাশ করতে চাইনা।
এরপর হুদহুদ সব পাখীকে ডেকে বললো : তোমরা সবাই সাক্ষী থাকো। কাক যদি কবুতরের কাছে তার অন্যায় আচরণের জন্য ক্ষমা চায় তাহলে কবুতর কাককে এ বাসাটি দিয়ে দিতে রাজি আছে।
কাক নিরুপায় হয়ে বললো : কাজী সাহেব! আমার আসলে কোন দোষ নেই। আমার নিয়ত খারাপ ছিল না। তবে আমাদের কাকদের স্বভাবই হলে কর্কশ কণ্ঠে কা কা করা। আমার ব্যবহারের কারণে আমি লজ্জিত এবং আমি সবার সামনে কাকের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
হুদহুদ বললো : বেশ ভাল কথা। তাহলে কবুতর কাককে বাসা হস্তান্তর করে দিচ্ছে।
উপস্থিত পাখীরা কলরব করে বললো : ধন্য কবুতর! জয় কবুতর! সত্যিই সে অনেক দয়ালু ও মহৎ।

সূত্র : ইরান বাংলা রেডিো

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ