প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Saturday, February 5, 2011

একটি স্বপ্ন…

প্রতিদিনের মত আজকেও সূর্য উঠেছে। পাখিরা কলরব করছে। সবাই সবার মত ব্যস্ত হয়ে পরেছে। অথচ সেই সকাল থেকে প্রভা বসে আছে চুপটি মেরে তার ঘরের দরজার সামনে। প্রভার মা অনেক বার তাকে ডেকে গেলেও কোনো সারা পেলো না। ছোট ভাইটিও যেন আজ খুব বেশি বিরক্ত করছে প্রভাকে। প্রভার কিছুই ভালো লাগছে না। শুধু কাদঁতে ইচ্ছে করছে। প্রভার আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে।

প্রভার শুধু মনে হচ্ছে আজ তার পাশে কেউ নাই। প্রভা খুব সাধারন একটা মেয়ে। ভালবাসে পড়াশুনা করতে,গান গাইতে,বন্ধুত্ব করতে,তবে সব চেয়ে বেশি ভালবাসে স্বপ্ন দেখতে আর সেই স্বপ্ন কে বাস্তবে পরিণত করতে। যদি কখনো এমন হয় যে তার স্বপ্ন পূরন হল না বা ওর খুব মন খারাপ তবে সে তার সব চেয়ে প্রিয় ডায়রিটা নিয়ে বসে পরে। কিন্তু আজ সকালে প্রভা তার ডায়েরিটা খুজে পেল না। সারা ঘর খুজল কিন্তু কোথাও খুজে পেলো না। অবশ্য মনটা প্রভার এই জন্যে খারাপ না। হয়তো ডায়েরিটা তমার বাসায় রয়ে গেছে।
তমা প্রভার খুব কাছের বান্ধবি। একি স্কুল এ পড়ে ওরা। প্রভা রাতে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে। সেইটা নিয়ে সে চিন্তিত। কিন্তু স্বপ্নতা আবসা। কি যেন মনে করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। আজ প্রভার খুব শখের একটা দিন। আজ ওর বন্ধুত্তের ১বছর পূর্তি হলো। কিন্তু কেও আজ ওকে শুভেচ্ছা জানালো না। কেইবা আছে ওর শুভেচ্ছা জানাবার। তমা আর বলদ মার্কা বন্ধু দিপু ছাড়া। তবে দিপুকে ওরা গনায় ধরে না কারণ জানে ও মন ভুলা মানুষ। তাই বলে কি তমাও ভুলে যাবে। প্রভার ছোট ভাই নিলয় আবার এল প্রভা কে জ্বালাতে।
প্রভা: কি চাই?
নিলয়: তমা আপু তোমাকে ডাকছে।
প্রভা: কোথায় তমা?
নিলয়: নিচে আছে, তোমাকে যেতে বলেছে।
প্রভা: তুই যা,ওক উপরে উঠতে বল।
নিলয়: ok।
তুই এখনো মুখটা ভোতা করে বসে আসিছ কেন? ঘরে ঢুকেই বলতে শুরু করল তমা। Ready হয়েনে।দিপু বাহিরে দাড়িয়ে আছে। প্রভা জানতে চাইল কেন। তমা উত্তর দিল না। শুধু বলতে লাগলো জ্বলদি কর।
Ready হয়েই বের হয়ে পরল ওরা।রাস্তায় বের হতেই দিপু চিৎকার করে উঠল congretz দোস্ত।
আজ তুই আর তমা যা চাইবি তাই করব। আজ আমাদের ৩ জনের বন্ধুত্তের এক বছর পুর্ন হলো। অনেক মজা করব আমরা।
কিন্তু আজ প্রভা এত আয়োজনেও নিজেকে খুব একা ফিল করছে। মনে হচ্ছে কে যেন তার পাশে নাই। খুব চিন্তা করেও খুজে বের করতে পারলো না কেন এমন লাগছে।
বাহির থেকে এসেই প্রভা বিছানায় শুয়ে পরল। প্রভার মা খেতে ডাকলো কিন্তু প্রভা বল্লো ওর ক্ষুধা নেই।
চারপাশ অনেক নিশ্চুপ। নিঝুম কালো গুটগুটে অন্ধকার। কোনো সারা শব্দ নেই। প্রভার চোখ খোলা কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কে যেন তার চোখ দুটি বেধে রেখেছে। অনেকক্ষন চিন্তার পর মনে পরল ও ওর রুম এ ঘূমাচ্ছিল। কি কারণে ঘুম ভাংলো মনে করতে চেষ্টা করল। অনেক চিন্তার পর মনে পরল কাল রাতের স্বপ্নটি সে আবার দেখেছে!
একটা ছোট ফুটফুটে মেয়ে প্রভাকে ডাকছিল। খুব দূর থেকে। মেয়েটির হাতে ছিল এক গোছা ফুলের মালা। ফুলের রং ছিল ধবধবে সাদা। মেয়েটির দুটি চোখে ছিল জ়ল। মেয়েটি প্রভাকে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলতে পারছিল না। প্রভা চারপাশ তাকিয়ে দেখল কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না মেয়েটির পাশে। প্রভা মেয়েটির কাছে যেতে চেষ্টা করল। কিন্তু প্রভা যতই মেয়েটির কাছে যেতে চাইল ততোই মেয়েটি অন্ধকারে হারিয়ে যেতে লাগলো। প্রভা প্রানপণ চেষ্টা করে যখন মেয়েটির কাছে গেলো, দেখতে পেল মেয়েটি একটি লোকের হাত ধরে চলে যাচ্ছে।
স্বপ্নটি দেখার পর প্রভার খুব পানির পিপাসা পেলো। পানি খেতে উঠতে যেতেই হঠাৎ একটা ব্যথা অনুভব করল মাথায়। পুরাটা মাথা যেন ঝিম মেরে আছে। ওর খালি মনে হচ্ছে কে যেন ওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে মারছে। অনেক কষ্টে উঠে পানি খেল প্রভা।
সকাল বেলা প্রভাকে এত বেলা ঘুমাতে দেখে প্রভার মা ডাকতে এল প্রভাকে। দেখলো প্রভা মুখ বালিশের নিচে রেখে শুয়ে আছে। মা ডাকতেই মুখ ঘুরাল। মাকে ইশারায় বসতে বলল। প্রভার মা জানতে চাইল কি হয়েছে। প্রভা বেশ কিছুক্ষণ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। শেষে কাঁদতে শুরু করল আর বলল আজ বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। বাবা আমাকে দেখা না দিয়েই চলে গেল।
আজ ১০বছর প্রভার বাবা মারা গেছেন সড়ক দূর্ঘটনায়, প্রভা যখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল তার বাবার সাথে। প্রভার আবদার ছিল তার বাবার কাছে বকুল ফুলের মালার। রাস্তা পার হতে যেতেই এই সর্বনাশ। প্রভা মাঝে মাঝেই বাবাকে স্বপ্ন দেখে। প্রভার চিন্তায় থাকে তার বাবা।তার স্বপ্ন সে এক দিন তার বাবার হাত ধরে হাঁটবে। বকুল ফুলের মালা নিয়ে আসবে বাবা আর মেয়ে মিলে তার মায়ের জন্যে। কিন্তু আজও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলো না প্রভা।
প্রভা আদৌ জানে না কখনো কি সে পারবে তার এই স্বপ্ন পূরণ করতে………..

সূত্র : হিমেলের ছোট্ট ঘর

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ