দুনিয়াজুড়ে এমন অসংখ্য আবিষ্কার রয়েছে যার আবিষ্কারক একজন নন। একই আবিষ্কারের পেছনে একই সময় একাধিক উদ্ভাবক গবেষণা করেছেন এবং দুই বা ততধিক ব্যক্তিই সফলতা লাভ করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে আমরা এখন শুধু একজন আবিষ্কারকের কথাই জানি, কারণ চূড়ান্ত পর্যায়ে সব ক্রেডিট তুলে দেয়া হয়েছে একজনের হাতেই। তবে সাধারণ জনগণ না জানলেও ইতিহাসের পাতায় ঠিকই বাকি উদ্ভাবকদের অবদানের কথা লেখা আছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে এমন কিছু আবিষ্কার ও তার নেপথ্য কাহিনী রয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস কোনোভাবেই উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি নন
কলম্বাস প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন একথা প্রায় সবাই জানলেও এখানে কিছু ফাঁকি আছে। আধুনিক যুগে এসে কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করলেও তিনি কোনোভাবেই উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি নন। বর্তমানে গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, নরওয়ের বাসিন্দা লিফ এরিকসনের (৯৭০-১০২০ খ্রি.) নেতৃত্বে একদল ভাইকিং প্রথম আমেরিকা মহাদেশে পা রাখে এবং তা কলম্বাসের আমেরিকা যাওয়ার আরও প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে। অভিযাত্রী দলটি স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে রওনা হয়ে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছায়। বর্তমানে শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ভাইকিংরা গ্রিনল্যান্ড ও কানাডার উপকূলে তাদের আবাস গড়ে তুলেছিল। এছাড়াও প্রাচীন ফোনিশিয়ান জাতিরা (খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০-খ্রিস্টপূর্ব ৩০০) প্রথম উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছিলেন এমন বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এটি ঘটেছিল কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আরও কমপক্ষে ১০০০ বছর আগে। যদিও কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেননি তবু কলম্বাসের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো আধুনিক যুগে এসে আমেরিকা মহাদেশকে পুনঃআবিষ্কার করা, তাছাড়া পৃথিবী সমতল নয় এই তত্ত্বকে প্রমাণিত করা।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কারক নন
ভাগ্য কখনও কখনও খুব নির্দয় হয়, যেমন হয়েছে এলিশা গ্রের ক্ষেত্রে। মূলত বেল টেলিফোন যন্ত্রের প্রথম পেটেম্লট করেছিলেন কিন্তু প্রথম আবিষ্কারক তিনি নন। এই দাবি করতে পারেন অ্যান্তেনিও মিউচি। তিনি ১৮৫৭ সালে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক টেলিফোন আবিষ্কারের গবেষণায় সফলতা লাভ করেন। ১৮৬৫ সালে ইতালিয়ান আবিষ্কারক ইনোচেনযো মেনজাডি একটি স্পিকিং টেলিফোন আবিষ্কার করেন। হাঙ্গেরিয়ান আবিষ্কারক থিবেদার পুশকাস সুইচবোর্ড ও পার্টি লাইন আবিষ্কার করে টেলিফোনকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। তবে এরা বেলের প্রধান প্রতিযোগী নন। বেলের প্রধান প্রতিযোগী হলেন আমেরিকান উদ্ভাবক এলিশা গ্রে। মজার ব্যাপার হলো তিনি এবং বেল একই দিন (১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) পেটেম্লট অফিসে যান টেলিফোন যন্ত্রের নিবন্ধন করার জন্য। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গ্রে-র আইনজীবী বেলের চেয়ে কয়েকঘণ্টা পরে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেলই টেলিফোন আবিষ্কারের কৃতিত্ব লাভ করেন।
চার্লস ডারউইন কখনোই বিবর্তনবাদ ধারণার প্রথম প্রবক্তা নন
ডারউইনকে বিবর্তনবাদের জনক বলা যায় এই কারণে যে তিনি বিবর্তনবাদের ধারণাকে আরও পরিমার্জিত করেন এবং এর আধুনিক তত্ত্ব তিনি প্রকাশ করেন। কিন্তু ডারউইন কখনোই বিবর্তনবাদ ধারণার প্রথম প্রবক্তা নন।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যানেক্সিমেন্ডার (খ্রিস্টপূর্ব ৬১০-খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৫) প্রথম ঐশ্বরিক উপায় ছাড়াই জীবজন্তু বা উদ্ভিদের জন্মের কথা বলেন। তার দাবি ছিল বংশবিস্তারে শারীরিক ভূমিকাই সব, কোনো সুপারন্যাচারাল পাওয়ার নয়। যাই হোক আধুনিক বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রথম যুক্তিসঙ্গত ধারণা দেন ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ পিয়েরে লুইস মোপারচিও এবং চার্লস ডারউইনের দাদা ইরাসমাস ডারউইন। ফ্রেঞ্চ প্রকৃতিবিজ্ঞানী জেন ব্যাপটিস্ট লেমার্ক বিবর্তনবাদ নিয়ে জোরালো একটি ধারণা পেশ করেন। তিনি ধারণা দিয়েছিলেন, প্রজাতির মধ্যে থাকা এক ধরনের ন্যাচারাল ফোর্স যা অর্গানিজমের মূল চাবিকাঠি এবং এর মাঝে থাকা এনভায়রনমেন্টাল ফোর্স তাদের স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী করে তোলে। তবে ডারউইনরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ইংরেজ প্রকৃতিবিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়ালেচ। যিনি ১৮৫৮ সালে প্রেস্টিজিস লিননেন সোসাইটিতে ন্যাচারাল সেকশনে বিবর্তনবাদের ওপর একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন, যা চার্লস ডারউইনের তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ডারউইনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তার বই ‘দি অরিজিন অব স্পেসিস’। মূলত এই বইয়ের ফলে বিবর্তনবাদ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বিবর্তনবাদের প্রথম প্রচারক ও জনক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। অন্যরা যেখানে কোনো ক্রেডিটই পাননি।
টমাস এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারক নন, তিনি মূলত বাতিটির উন্নয়নে কাজ করেছেন
আরও একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য হলো টমাস এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারক। ইলেকট্রিক্যাল বাল্ব আবিষ্কারের কৃতিত্ব এককভাবে কাউকে দেয়া যায় না। যদি দিতে হয় তবে হামফ্রে ডেভিকে দেয়া যায়। এর আবিষ্কার ও আধুনিকায়নে একাধিক উদ্ভাবকের হাত রয়েছে। মূলত এডিসন বাতিটি ডেভেলপে কাজ করেছেন। এডিসনের জন্মেরও আগে ১৮০২ সালে ইংরেজ কেমিস্ট হামফ্রে ডেভি একফালি শীর্ণ প্লাটিনামের পাতের মাঝে বিদুত্প্রবাহ চালান এবং এর ফলে ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। যদিও এই বাল্ব ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। এরপর থেকে গবেষণা চলতে থাকে উন্নত ও টেকসই ফিলামেন্ট আবিষ্কারের। এরই ধারাবাহিকতায় ইংরেজ উদ্ভাবক আলফ্রেড ডি মলিনস ১৮৪১ সালে একটি ভ্যাকুয়ামে প্লাটিনামের তার ব্যবহার করে তাতে বিদ্যুত্ প্রবাহ করে আরও দীর্ঘস্থায়ী একটি ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম ইনক্যানডেসন্ট ল্যাম্পের পেটেম্লট করান। তবে তার আবিষ্কৃত এই বাল্বের প্রতিস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এত বেশি ছিল যে তার এই আবিষ্কার জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।
এরপর থেকে গবেষণা চলতে থাকে একই সঙ্গে সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ফিলামেন্ট আবিষ্কারের। শেষপর্যন্ত ১৮৭৯ সালে এডিসন আবিষ্কার করেন কার্বনাইজড ব্যাম্বু ফিলামেন্ট। যা ১২০০ ঘণ্টার মতো জ্বলতে পারত এবং খরচের দিক থেকেও ছিল সাশ্রয়ী। প্রায় একই সময়ে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জোশেপ সোয়ানও একটি ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। কিন্তু ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে এডিসনের ধারেকাছেও যেতে পারেননি তিনি। এডিসন দ্রুত তার বাল্বের পেটেম্লট নেন এবং তা স্থাপন করতে থাকেন। যার ফলে সবাইকে ছাড়িয়ে এডিসনের বাল্বই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। একথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে ইলেকট্রিক বাল্বকে আধুনিকায়ন এবং সাশ্রয়ী করার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান টমাস এডিসন, কিন্তু একথাও দাবি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই যে এডিসনই প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস কোনোভাবেই উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি নন
কলম্বাস প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন একথা প্রায় সবাই জানলেও এখানে কিছু ফাঁকি আছে। আধুনিক যুগে এসে কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করলেও তিনি কোনোভাবেই উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি নন। বর্তমানে গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, নরওয়ের বাসিন্দা লিফ এরিকসনের (৯৭০-১০২০ খ্রি.) নেতৃত্বে একদল ভাইকিং প্রথম আমেরিকা মহাদেশে পা রাখে এবং তা কলম্বাসের আমেরিকা যাওয়ার আরও প্রায় পাঁচশ’ বছর আগে। অভিযাত্রী দলটি স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে রওনা হয়ে নিউফাউন্ডল্যান্ডে পৌঁছায়। বর্তমানে শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ভাইকিংরা গ্রিনল্যান্ড ও কানাডার উপকূলে তাদের আবাস গড়ে তুলেছিল। এছাড়াও প্রাচীন ফোনিশিয়ান জাতিরা (খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০-খ্রিস্টপূর্ব ৩০০) প্রথম উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছিলেন এমন বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এটি ঘটেছিল কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আরও কমপক্ষে ১০০০ বছর আগে। যদিও কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেননি তবু কলম্বাসের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো আধুনিক যুগে এসে আমেরিকা মহাদেশকে পুনঃআবিষ্কার করা, তাছাড়া পৃথিবী সমতল নয় এই তত্ত্বকে প্রমাণিত করা।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কারক নন
ভাগ্য কখনও কখনও খুব নির্দয় হয়, যেমন হয়েছে এলিশা গ্রের ক্ষেত্রে। মূলত বেল টেলিফোন যন্ত্রের প্রথম পেটেম্লট করেছিলেন কিন্তু প্রথম আবিষ্কারক তিনি নন। এই দাবি করতে পারেন অ্যান্তেনিও মিউচি। তিনি ১৮৫৭ সালে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক টেলিফোন আবিষ্কারের গবেষণায় সফলতা লাভ করেন। ১৮৬৫ সালে ইতালিয়ান আবিষ্কারক ইনোচেনযো মেনজাডি একটি স্পিকিং টেলিফোন আবিষ্কার করেন। হাঙ্গেরিয়ান আবিষ্কারক থিবেদার পুশকাস সুইচবোর্ড ও পার্টি লাইন আবিষ্কার করে টেলিফোনকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। তবে এরা বেলের প্রধান প্রতিযোগী নন। বেলের প্রধান প্রতিযোগী হলেন আমেরিকান উদ্ভাবক এলিশা গ্রে। মজার ব্যাপার হলো তিনি এবং বেল একই দিন (১৮৭৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) পেটেম্লট অফিসে যান টেলিফোন যন্ত্রের নিবন্ধন করার জন্য। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গ্রে-র আইনজীবী বেলের চেয়ে কয়েকঘণ্টা পরে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেলই টেলিফোন আবিষ্কারের কৃতিত্ব লাভ করেন।
চার্লস ডারউইন কখনোই বিবর্তনবাদ ধারণার প্রথম প্রবক্তা নন
ডারউইনকে বিবর্তনবাদের জনক বলা যায় এই কারণে যে তিনি বিবর্তনবাদের ধারণাকে আরও পরিমার্জিত করেন এবং এর আধুনিক তত্ত্ব তিনি প্রকাশ করেন। কিন্তু ডারউইন কখনোই বিবর্তনবাদ ধারণার প্রথম প্রবক্তা নন।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যানেক্সিমেন্ডার (খ্রিস্টপূর্ব ৬১০-খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৫) প্রথম ঐশ্বরিক উপায় ছাড়াই জীবজন্তু বা উদ্ভিদের জন্মের কথা বলেন। তার দাবি ছিল বংশবিস্তারে শারীরিক ভূমিকাই সব, কোনো সুপারন্যাচারাল পাওয়ার নয়। যাই হোক আধুনিক বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রথম যুক্তিসঙ্গত ধারণা দেন ফ্রেঞ্চ গণিতবিদ পিয়েরে লুইস মোপারচিও এবং চার্লস ডারউইনের দাদা ইরাসমাস ডারউইন। ফ্রেঞ্চ প্রকৃতিবিজ্ঞানী জেন ব্যাপটিস্ট লেমার্ক বিবর্তনবাদ নিয়ে জোরালো একটি ধারণা পেশ করেন। তিনি ধারণা দিয়েছিলেন, প্রজাতির মধ্যে থাকা এক ধরনের ন্যাচারাল ফোর্স যা অর্গানিজমের মূল চাবিকাঠি এবং এর মাঝে থাকা এনভায়রনমেন্টাল ফোর্স তাদের স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী করে তোলে। তবে ডারউইনরে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ইংরেজ প্রকৃতিবিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়ালেচ। যিনি ১৮৫৮ সালে প্রেস্টিজিস লিননেন সোসাইটিতে ন্যাচারাল সেকশনে বিবর্তনবাদের ওপর একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন, যা চার্লস ডারউইনের তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ডারউইনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তার বই ‘দি অরিজিন অব স্পেসিস’। মূলত এই বইয়ের ফলে বিবর্তনবাদ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বিবর্তনবাদের প্রথম প্রচারক ও জনক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। অন্যরা যেখানে কোনো ক্রেডিটই পাননি।
টমাস এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারক নন, তিনি মূলত বাতিটির উন্নয়নে কাজ করেছেন
আরও একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য হলো টমাস এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারক। ইলেকট্রিক্যাল বাল্ব আবিষ্কারের কৃতিত্ব এককভাবে কাউকে দেয়া যায় না। যদি দিতে হয় তবে হামফ্রে ডেভিকে দেয়া যায়। এর আবিষ্কার ও আধুনিকায়নে একাধিক উদ্ভাবকের হাত রয়েছে। মূলত এডিসন বাতিটি ডেভেলপে কাজ করেছেন। এডিসনের জন্মেরও আগে ১৮০২ সালে ইংরেজ কেমিস্ট হামফ্রে ডেভি একফালি শীর্ণ প্লাটিনামের পাতের মাঝে বিদুত্প্রবাহ চালান এবং এর ফলে ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। যদিও এই বাল্ব ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। এরপর থেকে গবেষণা চলতে থাকে উন্নত ও টেকসই ফিলামেন্ট আবিষ্কারের। এরই ধারাবাহিকতায় ইংরেজ উদ্ভাবক আলফ্রেড ডি মলিনস ১৮৪১ সালে একটি ভ্যাকুয়ামে প্লাটিনামের তার ব্যবহার করে তাতে বিদ্যুত্ প্রবাহ করে আরও দীর্ঘস্থায়ী একটি ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম ইনক্যানডেসন্ট ল্যাম্পের পেটেম্লট করান। তবে তার আবিষ্কৃত এই বাল্বের প্রতিস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এত বেশি ছিল যে তার এই আবিষ্কার জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।
এরপর থেকে গবেষণা চলতে থাকে একই সঙ্গে সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ফিলামেন্ট আবিষ্কারের। শেষপর্যন্ত ১৮৭৯ সালে এডিসন আবিষ্কার করেন কার্বনাইজড ব্যাম্বু ফিলামেন্ট। যা ১২০০ ঘণ্টার মতো জ্বলতে পারত এবং খরচের দিক থেকেও ছিল সাশ্রয়ী। প্রায় একই সময়ে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জোশেপ সোয়ানও একটি ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কার করেন। কিন্তু ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে এডিসনের ধারেকাছেও যেতে পারেননি তিনি। এডিসন দ্রুত তার বাল্বের পেটেম্লট নেন এবং তা স্থাপন করতে থাকেন। যার ফলে সবাইকে ছাড়িয়ে এডিসনের বাল্বই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। একথা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে ইলেকট্রিক বাল্বকে আধুনিকায়ন এবং সাশ্রয়ী করার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান টমাস এডিসন, কিন্তু একথাও দাবি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই যে এডিসনই প্রথম বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেন।
সূত্র : আমার দেশ
No comments:
Post a Comment