প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Showing posts with label ইশতিয়াক. Show all posts
Showing posts with label ইশতিয়াক. Show all posts

Monday, February 20, 2012

২১ ফেব্রুয়ারীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

 
[বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এদেশের ছাত্রসমাজ যে এত বড় বড় ঘটনার জন্ম দিয়েছে ঐতিহাসিকদের মতে সেই ছাত্র রাজনীতির সূত্রপাত ১৮৩০ সালে। রাজনীতির উত্থান-পতনের রেখা ধরেই অদ্যবধি প্রবহমান ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৫২ সাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম, যা নিজ মহিমায় এতই উজ্জ্বল যে বুদ্ধিজীবীদের মতে ২১ ফেব্রুয়ারী আমাদের অঘোষিত স্বাধীনতা দিবস। ২১ ফেব্রুয়ারীর ‘ভাষা আন্দোলন’ এর আবেদন এতই ব্যাপক যে এখনও প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী সোচ্চার এর বিরুদ্ধে। আর আমরা বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ঘুমিয়ে আছি এই অন্ধকার সময়ের ভিতর কিংবা যারা অর্ধসচেতন বা সচেতনভবে খুঁজে ফিরি মুক্তির পথ তাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে ভাষা আন্দোলনের সেই ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথা। ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণে প্রয়োজন সঠিক ইতিহাস জানা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তথা যে কোন আন্দোলনের ইতিহাস জানার জন্য অবশ্যই জানার প্রয়োজন পড়ে আন্দোলনের সময়কার পরিস্থিতি, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং সমসাময়িক অন্যান্য রাজনীতি যা এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয। তথাপি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানার মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করবো ভাষা আন্দোলনের বিশাল ইতিহাসকে; সে লক্ষ্যেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থানের চেষ্টা। ]

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাতঃ
পাকিস্তানের জন্মের তিন মাস পর করাচীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা গণ্য করার এক সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সংবাদ পরদিন ঢাকার ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ঢাকা শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। ঐদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সাধারণ ছাত্রসভা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ আশেপাশের অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রী। সমাবেশের পর এক বিরাট মিছিল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে পূর্ববাংলার অন্যতম প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা বিষয়ে একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন সেখানে বলা হয় উর্দু ও ইংরেজীর সঙ্গে বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হোক। ২৫ ফেব্রুয়ারী আলোচনা শেষে গণপরিষদের মুসলিম লীগের বাঙালি সদস্যরা বাংলাকে পরিষদের রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে ভোট দেয়। সেই খবরে ঢাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ২৬ ফেব্র“য়ারী ঢাকায় ধর্মঘট পালন হয়। ২ মার্চ ঢাকায় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক সভায় গঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। পরিষদের ডাকে ১১ মার্চ হরতাল পালন হয?। ১১ মার্চে ছাত্র জনতার উপর প্রশাসনিক গুন্ডা বাহিনীর নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদের ১২ মার্চ বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ এবং ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন হয়। ১৪ মার্চ সারা পূর্বপাকিস্তানে ধর্মঘট পালন হয়। ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে নাজিম উদ্দীন ৮ দফা চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন।

ঢাকার বাইরে প্রতিক্রিয়াঃ
২৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ধর্মঘট পালনের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সারা দেশে ভাষা আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র ফেডারেশন, মুসলিম ছাত্রলীগ, ছাত্র এসোসিয়েশন, ছাত্র সংঘ, যুবলীগ প্রভৃতি সংগঠনের উদ্যোগে জেলায় জেলায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হতে লাগল।

* ২৮ তারিখ পাবনায় ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্ররা রাস্তায় মিছিল করে এবং পুলিশের বেয়নেট চার্জে প্রথমবারের মত রঞ্জিত হয় পাবনার রাজপথ।
* ২ মার্চ যশোরে ধর্মঘট পালিত হয়। ১০ মার্চ শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। ১১ মার্চ যশোরে বিশাল মিছিল হয়। ১২ মার্চ কলেজ ছাত্র ধর্মঘট, ১৩ তারিখে মিছিলে পুলিশ প্রথমে লাঠি চার্জ ও পরে গুলি বর্ষণ করে। ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ মার্চ আবার হরতাল পালন করা হয়।
* রাজশাহীর নওগাঁতে ২৭ ফেব্রুয়ারী ব্যাপক ছাত্র সমাবেশ ঘটে। কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১১ মার্চ বিক্ষোভ চলাকালে মিছিলের উপর হামলা হয়।
* চাঁদপুরে ধর্মঘট ডাকা না হলেও স্বতস্ফূর্তভাবে পালিত হয়।
* মুন্সিগঞ্জে২৮ ফেব্রুয়ারী বিক্ষোভ মিছিল হয়।
* ১১ মার্চ বগুড়ায় বগুড়ায় কলেজ থেকে মিছিল বের হয়।
* খুলনায় ২৮ ফেব্রুয়ারী বি.এল কলেজে প্রতিবাদ সভা হয়। ১১ মার্চ আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করে।
* ২৭ ফেব্রুয়ারী বরিশালে বিশাল জনসভা হয়।

জিন্নাহর ঢাকা আগমনঃ
১৬ মার্চ ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় পুলিশী হামলার প্রতিবাদে ১৭ মার্চ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জিন্নাহর আগমনে ছাত্র জনতার ভিতর স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। তারা আশা করেছিল জিন্নাহ হয়তোবা পূর্ববাংলার সাম্প্রতিক ঘটনায় জনগণের পক্ষেই থাকবে। ১৯ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জিন্নাহ ঘোষণা করেলেন-
“..কিন্তু না আপনাদের পরিষ্কার ভাবে বলে দেয়া দরকার পাকিস্তানের রাষ্টভাষা হবে উর্দু, অন্যকোনো ভাষা নয় । এ ব্যাপারে কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে বুঝতে হবে সে হচ্ছে রাষ্ট্রের শত্রু।”
এই বক্তৃতা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলেও বিক্ষোভ হয় বিচ্ছিন্নভাবে। এরপর ২৪ মার্চ সকালে জিন্নাহর সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে জিন্নাহ যখন আবার বলেন “উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”; তখন মিলনায়তনে উপস্থিত বেশ কিছু ছাত্র একসঙ্গে না, না বলে উঠে। এই দিনে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি দলের সাথে জিন্নাহর নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাকে অপমান করা হয় এবং আলোচনা আর এগোয়নি।
আরবী হরফে বাংলা লেখার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৪৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের শিক্ষা সচিব পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডে এক সভায় বলেন-
“সহজ ও দ্রুত যে হরফের মারফত ভাষা পড়া যায় সেই হরফই সবচাইতে ভাল। সুতরাং দ্রুত লিখন ও পঠনের পক্ষে সুবিধাজনক বলিয়া আরবীকেই পাকিস্তানের হরফ করা উচিত।”
এর বিরুদ্ধে পূর্ববাংলায় প্রথম প্রতিবাদ ওঠে। ১২ মার্চ পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপনা পরিষদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সংসদ ভবন অভিমুখে যাত্রা করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবী হরফ চাই না’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত ছাত্র মিছিল পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সেখানে গ্র্রেপ্তার হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা।
১৯৫০ সালের ১১ মার্চ দলমত নির্বিশেষে রাষ্ট্রভাষা বাংলা সমর্থক প্রতিটি সংগঠন থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সাদামাটা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্যভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ‘আরবী হরফে বাংলা ভাষা’ নিয়ে বিতর্ক, প্রতিবাদ চলতে থাকে অথচ সরকার তা উপেক্ষা করে ১৮ এপ্রিল ১৯৫০ সাল থেকে পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০ টি কেন্দ্রে আরবী হরফে বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়ষ্কদের প্রাথমিক শিক্ষার কাজ শুরু করে দেয়। একদিকে শিক্ষাখাতে পূর্বপাকিস্তান ছিল বিশাল বৈষম্যের শিকার অন্যদিকে চলে ভাষা ও বর্ণমালা বিলুপ্তকরণ প্রক্রিয়া।
১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই পালন করা হয় ১১ মার্চ ও ১২ মার্চ তারিখটি।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারী পল্টনে নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের এক জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, -” পাকিস্তানের ‘একমাত্র’ রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু”.
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ৩০ জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ প্রতিবাদ ধর্মঘটের আয়োজন করে। ৩১ জানয়ারী বিকেলে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় সমাবেশে সর্বসম্মতভাবে গঠিত হয় “সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ”। ৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট, শোভাযাত্রা এবং জনসভার আয়োজন এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য ১১ এবং ১৩ ফেব্রুয়ারী পতাকা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে প্রায় ৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর একটি দীর্ঘ বিক্ষোভ মিছিল। ২১ ফেব্রুয়ারী সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ঘোষনা দিয়ে শেষ হয় মিছিল পরবর্তী জনসভা।
১১ ফেব্রুয়ারী পতাকা দিবস পালন হয়। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা পতাকা বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করা হয়। বের করা হয় দুটি পুস্তিকা, ‘আমাদের ভাষার লড়াই’-বদরুদ্দিন উমর এবং ‘রাষ্ট্রভাষা কি এবং কেন?”-আনিসুজ্জামন।
২১ ফেব্রুয়ারী হরতালের প্রস্তুতি চলতে থাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। আর সরকার ২০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টায় ক্রমাগত একমাসের জন্য ঢাকায় সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১ তারিখ ছিল পূর্ববাংলা সরকারের বাজেট অধিবেশন।
সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারী রাতে সর্বদলীং সংগ্রাম পরিষদ বৈঠকে মিলিত হয় সভায় তুমুল বাক-বিতণ্ডার সূত্রপাত ঘটে। অধিকাংশ সদস্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন এই কারণে যে, এর ফলে সরকার জরুরী অবস্থার অজুহাতে সাধারণ নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্তের জন্য ভোট দেন। মাত্র তিন জন বাদে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সকল সদস্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার পক্ষে ভোট দেয়। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ আরো সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরিষদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার যৌক্তিকতা বুঝানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু ছাত্ররা যদি মেনে না নেয় তবে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি তখন থেকেই বিলুপ্ত হবে।
২১ ফেব্রুয়ারী সকালে ১৪৪ ধারা ও পুলিশের মহড়া উপেক্ষা করে দলে দলে শহরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকে। ছাত্ররা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তে বিক্ষুদ্ধ হয়ে নানা রূপ ধ্বনি দিয়ে শামসুল হককে স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করার সিদ্ধান্তে ৪ জন, ৭জন, ১০ জন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে জমায়েত হলো মেডিকেল কলেজের প্রাঙ্গণে। কমপক্ষে ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী গ্রেপ্তার, লাঠচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস ইত্যাদির মধ্যদিয়ে পরিষদ ভবন ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে জমায়েত হয় মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে; বেলা ৩ টায় পরিষদ ভবনের অধিবেশনের পূর্বেই ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকবার ছাত্রদের উপর কাঁদুনে গ্যাস ছেড়ে তাড়া করতে করতে পুলিশ মেডিকেল কলেজে ছাত্রাবাসের ভিতর ঢুকে পড়ে। প্রতিরোধকল্পে ছাত্ররাও ইটপাটকেল সমেত ঝটিকা আক্রমন করে। আক্রমনের প্রচণ্ডতায় দিশেহারা হয়ে আনুমানিক বেলা চারটার দিকে পুলিশ মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের সামনে গুলি চালায়। এই গুলি জব্বার ও রফিকের প্রাণ কেড়ে নেয়। এই গুলির আওয়াজ শুনে মেডিকেল কলেজ ছাত্রবাসের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন বরকত, একটি বুলেট তার ঊরুদেশ বিদ্ধ করে প্রচুর রক্তপাতের পর রাত আটটায় বরকত মারা যায়।

২১ ফেব্রুয়ারী যাঁরা শহীদ হলেন-
* সালাউদ্দীন (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র)
* আব্দুর রাজ্জাক (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র)
* আবুল বরকত(বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র)
* রফিক উদ্দীন (বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র)

ইতোমধ্যে গুলি চালানোর খবর শহরের আনাচে কানাচে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অফিস আদালত সচিবালয় এমনকি ঢাকা বেতার কেন্দ্রের কর্মচারীরা পর্যন্ত অফিস বর্জন করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। ১৪৪ ধারার লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া গেল না। আইন পরিষদের অধিবেশনে ঝড় ওঠে। আন্দোলনের নেতৃত্বে চলে আসে মেডিকেল কলেজ। ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ পুনঃগঠিত হয?। ২২ তারিখ হরতাল ও গায়েবানা জানাযার কর্মসূচী ঘোষিত হয়।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের ভিতরে গায়েবি জানাযা পড়া হয়। সমস্ত শহর থেকে পুলিশ উঠিয়ে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। রেল কর্মচারীরা ধর্মঘট করে, সচিবালয়ের কর্মচারীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে আসে। জানাযা শেষে সর্বস্তরের মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নিলে সেনাবাহিনী বাধা দেয়। বাধা ডিঙ্গিয়ে মিছিল এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাইকোটের সামনে আবার গুলি হয়। এতে মিছিলে অংশগ্রহনকারী সরকারি কর্মচারী শফিকুর রহমান নিহত হন (তিনি আইনেরও ছাত্র ছিলেন)। জনতা বংশালের দিকে অগ্রসর হলে আবারও গুলি চালানো হয়; এতে একজন নিরীহ রিক্সাওয়ালা নিহত হন। ২৩ ফেব্রুয়ারী সংবাদ পত্রে ৫জন নিহত, ১২৫ জন আহত, ৩০ জন গ্রেফতার সহ লাশ গায়েব করার নিন্দা করা হয় ঐদিনই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২৫ ফেব্রুয়ারী প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারী সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করে। সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সংবিধান গৃহীত হয়। এই সংবিধানের রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ২১৪ নং অনুচ্ছেদ ছিল-
২১৪-(১) the state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali.


যাঁদের কাছে কৃতজ্ঞঃ
ডঃ মোহাম্মদ হাননান-বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী-নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ।
আসাদুজ্জামান আসাদ-স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি।
জহির রায়হান-একুশে ফেব্রুয়ারী।
পোস্ট আকারে সাজিয়েছেনঃ
ইশতিয়াক।
পোস্টটি সাহিত্য.কম এ প্রকাশিত।

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ