প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Wednesday, March 30, 2011

অযাচিত পাওয়াতে ।। মনিরা চৌধুরী

রিমঝিম বৃষ্টির, অনাবিল ছন্দে
ঝির ঝির বাতাসের, হাওয়া মৃদু মন্দে
দুলে ওঠে মন মোর ছন্দে আনন্দে।

মিটি মিটি তারাদের, মিট মিট জ্বালাতে
দ্বীপ নেভা রাতে , জোনাকির আলোতে
জেগে ওঠে তনু মোর জাগতিক ছোঁয়াতে।

বয়ে চলা নদীর, কুল কুল ধ্বনিতে
উড়ে যাওয়া গাংচিল , নেমে আসা গাঙেতে
দেখে ভরে ওঠে প্রাণ মোর অযাচিত পাওয়াতে

আজ বারি ঝরা শ্রাবণে ।। মনিরা চৌধুরী

ঝর ঝর শ্রাবণের
ঝরা এ বারি,
মনে করে দেয় যেন ,
কাহারে?
ঝির ঝির বারাসেরা গন্ধ,
ছড়ায়ে তারি,
প্রাণে কিযে দোলা দেয় ,
আহারে !গুন গুন ভ্রমরের –
মৃদু গুঞ্জরনে,
ফুলবনে কে যেন ,
ডাকিছে মোরে।
ফুল ঝরা ফাগুনের
মোহ জাগা সঞ্চারণে।
আজি মনবনে মন মোর ,
চাহিছে কারে ।

অন্যরূপে ভালবাসা ।। মনিরা চৌধুরী

ভালবাসা তুমি যে
নিত্য সকাল সাঁঝে, হৃদয় গগনমাঝে
হও জমানো বাদল
চাইলেই ঝরো, অবিরাম
কারো ভিজাতে অন্তঃস্থল।
তুমি কখনো ভালবাস
দুঃখ পাহাড়ঘেষা, কষ্ট আবির মেশা
হয়ে ঝরণা ধারা।
ডাকলেই আসো, ছুটে নিরন্তর
কাউকে করো তুমি সর্বহারা।


কখনো আবার তুমি
বুক পাজরে রাখা, প্রাণ সরোবরে জাগা
হয়ে কোন উথলানো ঢেউ
ইচ্ছেমত তুমি, হওযে কারো
নিজের করো কারো কেউ ।

মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে সহজেই বয়স হিসাব করুন

অনেকেই বয়স বের করার পদ্ধতি জানেন না। বা অনেক সময় এটি ভুল হয়ে যায়। আপনি ইচ্ছা করলে সহজেই মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে বয়স, যেকোনো তারিখে আপনার বয়স বের করতে পারেন। এজন্য ডাউনলোড করুন age calculator এক্সেল ডকুমেন্টটি। এটি ওপেন করে এর Current Date দিন এবং Date of Birth Change করুন। ব্যস হয়ে গেল নিচে পেয়ে যাবেন আপনার বর্তমান বয়স।

Tuesday, March 29, 2011

চাষি ও রাজকন্যা ।। আমিনুল ইসলাম চৌধুরী

নেক অনেক দিন আগের কথা। বরেন্দ্র নামের জায়গায় বাস করত এক চাষি। কিন্তু সে ছিল বেজায় বোকা। মা ছাড়া কেউ ছিল না তার। যথারীতি সে একদিন মাঠে গেল কাজ করতে। কাজ করতে করতে সে গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়ল। উঠে দেখল, তার কাস্তে গরম হয়ে গেছে। সে কেঁদে বলতে লাগল, ‘আমার কাস্তের জ্বর এসেছে, আমার কাস্তের জ্বর এসেছে।’ এ সময় এক প্রবীণ লোক ওই দিকেই যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, তোমার কাস্তেকে জলে ভিজিয়ে রাখো, জ্বর কমে যাবে। চাষি কাস্তেটা জলে ভিজিয়ে তুলে দেখল, কাস্তের জ্বর কমে গেছে। এর পরের দিন চাষির মায়ের প্রচণ্ড জ্বর এল। সে কোনো ডাক্তার না এনে তাকে জলে ডুবিয়ে রাখল। তার মা মারা গেলেন। চাষি তখন কিছুই খায় না। নদীর পাড়ে বসে থাকে সব সময়।একদিন একটি শেয়াল যাচ্ছিল ওই দিকে। সে চাষির দুঃখের কথা শুনে বলল, ‘শোনো চাষি, তুমি যদি আমার কথা শোনো, তবে আমি তোমাকে রাজার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব।’ তবে এখন তোমাকে বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে মোটাসোটা হতে হবে। শেয়াল আরও বলল, এই এক মাস সে যেন শুধু কাপড় বোনে আর খাদ্যশস্য উৎপাদন করে। চাষি শেয়ালের কথামতো কাজ করে চলেছে। শেয়াল তো তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সে ঘটকালি করতে করতে এক রাজার সন্ধান পেল, যিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে চান। শেয়াল তাঁকে বোকা চাষির ফটো দেখাল। চাষি ছিল খুবই সুদর্শন। তা ছাড়া শেয়াল চাষির পরিচয় দিয়েছে রাজার ছেলে বলে। বিয়ের দিন-তারিখও শেয়াল ঠিক করে ফেলেছে। শেয়াল আর চাষি মিলে সবাইকে দাওয়াতও দিল। চাষিকে শেয়াল বলল, সেখানে যেন কথা না বলে। চাষিকে ভালো করে সাজিয়ে নিয়ে চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। গিয়েই শেয়াল দীন-দরিদ্রদের জন্য চাষির বোনা কাপড় আর উৎপাদিত খাদ্যশস্য বিলি করতে লাগল। খুবই জাঁকজমক করে বিয়ে হলো। চাষি দেখল, রুপার থালাবাসনে শত রকম খাবার। খাবারগুলো সে পকেটে পুরতে লাগল। শেয়াল সবাইকে বলল, ও তো খুব দরিদ্র, তাই গরিবদের সঙ্গে বসে খাবে আর তাদের মধ্যে খাবার বিলি করবে। বিয়ের প্রথম রাতেই সে দেখল, পালঙ্কের ওপর মশারি টানানো। ভাবল পালঙ্কের ওপর বুঝি আরেকটা ঘর, তাই সে মই বেয়ে যেই মশারির ওপর উঠল, ওমনি ধপাস। রাজকন্যা তা দেখে কাঁদল। কিন্তু সে ছিল বুদ্ধিমতী। তাই সে কিছুই প্রকাশ করল না। রাজাকে বলল, সে চাষিকে নিয়ে বেড়াতে যাবে ভিন দেশে। রাজাও তাতে অমত করলেন না। অনেক সৈন্য-সামন্ত, টাকাকড়ি দিয়ে তাদের ভিন দেশে পাঠালেন। সে সময় রাজকন্যা চাষিকে ভিন দেশি পণ্ডিতের শরণাপন্ন করে অনেক বিদ্যায় পারদর্শী করিয়ে তুলল। কিন্তু দেশ থেকে খবর এল, রাজা মারা গেছেন এবং তাঁর কোনো ছেলেসন্তান নেই বলে তাঁর জামাইকে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়েছেন। তারপর রাজকন্যা ও তার স্বামী দেশে ফিরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

কাটুর্ন আঁকেন যারা

আসিফুল হুদা : ১৯৫৬ সালে জন্ম নেয়া নরসিংদীর সন্তান আসিফুল হুদা ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ করেন। ১৯৮১ সালে সাপ্তাহিক সচিত্র স্বদেশ পত্রিকার মাধ্যমে কার্টুনিস্ট হিসেবে প্রথম পেশাগত জীবন শুরু করেন। বর্তমানে আমার দেশে কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত। জীবনে অসংখ্য কার্টুন এঁকে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ পর্যন্ত একক প্রদর্শনী করেছেন ৩টি। 
ইব্রাহিম মন্ডল : ১৯৫৮ সালে মোমেনশাহী জেলার গফরগাঁওয়ের পোড়াবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ড্রইং পেইন্টিংয়ে এমএ করেন। ১৯৮০ সাল থেকে কার্টুন অাঁকা শুরু করেন। কিশোরকণ্ঠ, সাপ্তাহিক ঝান্ডা, সাপ্তাহিক বিক্রম, দৈনিক মিল্লাতে কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও দেশের প্রথম কিশোর কার্টুন পত্রিকা নয়া চাবুকের সম্পাদক। ইব্রাহিম মন্ডল (ই মন্ডল) কার্টুন বিষয়ে একটি তথ্যবহুল বই রচনা করেছেন। তিনি দেশে বিদেশে বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। 

মহিউদ্দিন আকবর : ১৯৬৫ সালে মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণকারী মহিউদ্দিন আকবরের শৈশব কেটেছে পেশোয়ার ও রাওয়ালপিন্ডিতে। তাঁর অাঁকা কার্টুন ও কমিকসের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে একক চিত্র ও পোস্টার প্রদর্শনী করেছেন ৬ বার। বর্তমানে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কিশোর নিউজ লেটার পত্রিকার আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত।
 
শেখ তোফাজ্জল হোসেন তোফা : রাজবাড়ী জেলার ছেলে শেখ তোফাজ্জল হোসেন তোফা পড়াশুনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৭ সালে সৈনিক পত্রিকায় কার্টুন অাঁকা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে কার্টুন অাঁকার কারণে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩ হাজারের বেশি কার্টুন ও পকেট কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত। 

জাহিদ হাসান বেনু : ঝিনাইদহের ছেলে জাহিদ হাসান বেনু ১৯৮৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত। ১৯৭৩ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত শংকর আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রকলা প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক লাভ করেন।
 
মেহেদী হক : ১৯৮৪ সালে ঢাকায় জন্ম। কার্টুনিস্ট মেহেদী হক বর্তমানে ইংরেজি দৈনিক নিউএজ-এ কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি টিআইবি'র কার্টুন প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। 

আজিজুর রহমান তালুকদার নিয়ন : ১৯৮৫ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এমএফএ অধ্যয়নরত। পেশাগত জীবনে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের আর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। 

হাসান মাহমুদ : ১৯৯৫ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে খিলগাঁও সরকারি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি কিশোরকণ্ঠ ও নয়া চাবুকের নিয়মিত কার্টুনিস্ট। দেশের খ্যাতিমান কার্টুনিস্টদের সাথে নিয়ে প্রকাশিত কিশোরকণ্ঠ কার্টুন সমাজে তার কার্টুন স্থান পেয়েছে। 


মতামত : মেয়েরা কম মিথ্যা বলে !

 উপস্থাপনায়- ইসরাত শাহিন জেবা
-------------------------------------
 নীতিগতভাবে মিথ্যা বলা উচিত নয়। প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই মিথ্যাকে নিরুত্সাহিত করার জন্য পাপের ভয় দেখানো হয়েছে। পার্থিব আইন-আদালতও মিথ্যার বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। তবু পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী, যারা মিথ্যা কথা বলে কিংবা মিথ্যা আচরণ দেখায়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যেও মিথ্যাভাষণের তারতম্য রয়েছে। বলা হয়েছে, মেয়েদের চেয়ে মিথ্যা বলায় ছেলেরাই এগিয়ে। শুধু তা-ই নয়, মিথ্যা বলার পর তাতে অনুশোচনায় ভোগার দিক দিয়েও মেয়েরা এগিয়ে। ছেলেরা খুব কমই মিথ্যা বলার জন্য অনুতপ্ত হয়। সূত্র বিবিসি।ব্রিটেনে তিন হাজার নারী-পুরুষের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে এমনটা। গবেষকরা দেখেছেন গড় ব্রিটিশ পুরুষ প্রতিদিন কম পক্ষে তিনটি করে মিথ্যা কথা বলে। বছরে এর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৯২ টিতে। সে

ক্ষেত্রে মেয়েরা কিছুটা লক্ষ্মী। একজন ব্রিটিশ মহিলা বছরে ৭২৮টির বেশি মিথ্যা কথা বলে না। দিনে মাত্র দুটো করে। আর মিথ্যা কথাটা সব চেয়ে বেশি শুনতে হয় ব্রিটিশ মায়েদের। সায়েন্স মিউজিয়াম পরিচালিত এই জরিপে বলা হয়েছে, ২৫ ভাগ ছেলে তাদের মায়েদের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে। আর মেয়েদের বেলায় এই পরিমাণ ২০ ভাগ। ওদিকে ১০ ভাগ নারী-পুরুষ বলেছে, তারা তাদের সঙ্গী-সঙ্গিনীদের সঙ্গেই বেশি মিথ্যা কথা বলে।

পুরুষ সঙ্গীরা সঙ্গিনীদের সঙ্গে বেশি মিথ্যা বলে পান করার ব্যাপারটা নিয়ে। প্রায় সময় সঙ্গিনীর অনুযোগের জবাবে বলে, ‘কই, না! খুব বেশি ড্রিঙ্ক করিনি তো! মাত্র এক পেগ।’ আর মেয়েদের বেলায় সে মিথ্যাটা হলো, ‘না না, ঠিক আছে। আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।’

আর একটা মিথ্যা অবশ্য দুই পক্ষই সমান তালে বলে থাকে। সঙ্গী বা সঙ্গিনী একে অন্যকে কোন কিছু উপহার দিতে গেলে দুই পক্ষের কমন মিথ্যা বুলি হলো, ‘ ধন্যবাদ। ঠিক এটাই আমি এতদিন ধরে চেয়েছিলাম।’

মিথ্যা বলার পর অনেক সময় অনুশোচনাও হয়ে থাকে মানুষের। নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। এদিক দিয়েও অবশ্য ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ৮২ ভাগ মেয়ে মিথ্যা বলে অনুতপ্ত হয়। আর ছেলেদের মধ্যে অনুশোচনার হার ৭০ ভাগ। তবে মজার ব্যাপার হলো, ৫৫ ভাগ ব্রিটিশ পুরুষ কিন্তু নিজেদের চেয়ে মেয়েদেরই বেশি মিথ্যাবাদী মনে করে থাকে।

সায়েন্স মিউজয়ামের এসোসিয়েট মেডিক্যাল কিউরেটর কেটি ম্যাগস বলেন, ‘মিথ্যা বলাটা মানুষের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এটাকে একেবারে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে এটা সামাজিক জীবনে একটা মিথস্ক্রিয়া হিসেবে কাজ করে থাকে।’

Saturday, March 26, 2011

কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য-৩

এখন চলুন, আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা যাক।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিবেক-বুদ্ধির তথ্যসমূহ

তথ্য-১

কোন বস্তু বা বিষয়ের সঙ্গে প্রত্য ও পরোভাবে যে সকল বিষয় সম্পর্ক যুক্ত থাকে, তার একটি বা এক বিশেষ গ্রুপ হয় ঐ বস্তু বা বিষয় সৃষ্টি বা প্রণয়নের উদ্দেশ্য। আর বাকি সব হয় তার পাথেয় অর্থাৎ উদ্দেশ্যটি সাধনের জন্যে প্রয়োজনীয় বা সহায়ক বিষয়। দু’টি উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে আশা করি। উদাহরণ-১

একটি কলমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বস্তু বা বিষয়গুলো হচ্ছে লেখা, কালি, কাগজ, কলমের নিব ও শরীর, কলম ও কালি তৈরির কারখানা। এর মধ্যে লেখাটা হচ্ছে কলম তৈরির উদ্দেশ্য। আর বাকি সবগুলো পাথেয়। অর্থাৎ ঐ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে প্রয়োজনীয় বস্তু বা বিষয়সমূহ।

উদাহরণ-২

ডাক্তারী বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বস্তু বা বিষয়সমূহ হচ্ছে-চিকিৎসা করা, ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ঔষধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। এর মধ্যে চিকিৎসা করা হচ্ছে ডাক্তারী বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য আর বাকি সব হচ্ছে তার পাথেয়।

 মানুষের জীবনের সঙ্গেও নানা ধরনের বিষয় সম্পর্কযুক্ত এবং ঐ বিষয়গুলোকে ৪টি গ্রুপে ভাগ করা যায়। যথা- উপাসনামূলক কাজ, ন্যায়-অন্যায় কাজ, শরীর-স্বাস্থ্য গঠনমূলক কাজ এবং পরিবেশ পরিস্থিতি গঠনমূলক কাজ। তাহলে বিবেক-বুদ্ধির রায় অনুযায়ী ঐ ৪ গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপের কাজই হবে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য। আর বাকি সবগুলো হবে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধনের পাথেয়।

তথ্য-২

কোন সৃষ্টিকারক যখন কোন উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে একটি জিনিস সৃষ্টি বা প্রণয়ন করেন, তখন ঐ জিনিসের গঠনটি তিনি এমনভাবে করেন যেন ঐ বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে তা সরাসরি ও সুনির্দিষ্টভাবে সহায়ক হয়। এটাও একটা চির সত্য কথা। নিষ্প্রাণ জিনিসের বেলায় সেই গঠন হয় শুধু শারীরিক। আর সপ্রাণ জিনিসের বেলায় তা হয় শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক। অর্থাৎ একটা সপ্রাণ সৃষ্টির-

ক. বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন হবে এমন যেন সে জন্মগতভাবে (কোন পড়াশুনা, শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াই) বুঝতে পারে, কোন বিষয়টি বা বিষয়গুলো তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য। তা না হলে যে প্রাণীদের পড়াশুনা বা শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা নেই তারাতো বুঝতে বা জানতে পারবে না, তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী। আবার যে মানুষটির শিার সুযোগ হয়নি বা যেখানে শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ নেই, সেখানকার মানুষ তো বুঝতে পারবে না তার বা তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী। তাছাড়া অন্য মানুষের (নবী-রাসূল বাদে) নিকট থেকে শিখতে হলে তারা সৃষ্টির উদ্দেশ্যটা সঠিকভাবে শিখাচ্ছেন কিনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ সবসময়ই থাকবে।

খ. শারীরিক গঠন হবে এমন যেন সেই গঠন ঐ প্রাণীর জন্য তার উদ্দেশ্য সাধনের পথে সরাসরিভাবে সহায়ক হয়। কারণ, তা না হলেও তার জন্যে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধন করা দুষ্কর বা অসম্ভব হবে।

মানুষ সৃষ্টি করতে পারে শুধু নিষ্প্রাণ জিনিস বা বস্তু। এই চির সত্য কথা অনুযায়ী তাই দেখা যায়, মানুষের সৃষ্টি করা প্রতিটি বস্তুর শারীরিক গঠন ব্যতিক্রম ছাড়াই এমন হয় যে, তা সরাসরিভাবে তার উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়। উদাহরণস্বরূপ একটা ছুরিকে ধরা যায়। ছুরি সৃষ্টি বা বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন কিছু কাটা। তাই সকল ছুরির প্রস্তুতকারক ছুরির শারীরিক গঠন অবশ্যই এমন করেন যেন, তা দিয়ে সহজেই কোন কিছু কাটা যায়।

কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য-২

বর্তমান বিশ্ব মুসলমানদের মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অসতর্ক ধারণাসমূহ
বর্তমান বিশ্বের মুসলমান সমাজে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে চালু থাকা ধারণাসমূহ-

১. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি উপাসনামূলক কাজগুলো করার জন্যে বেশির ভাগ মুসলমানের মানুষ সৃষ্টির আল্লাহর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এটাই হচ্ছে ধারণা। ২. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদাত বা দাসত্ব করার জন্যে। অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদাত বা দাসত্বমূলক সকল কাজই মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য-এ ধারণাটাও অনেক মুসলমানের মধ্যে বিদ্যমান।

৩. মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর খলিফা হিসেবে জীবন-যাপন করা। অর্থাৎ আল্লাহর খলিফা হিসেবে করা সকল কাজই মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য-এ ধারণাটাও অনেকে পোষণ করেন।

সুধী পাঠক

চলুন আমরা কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের মাধ্যমে যাচাই করে দেখি,মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের ঐ ধারণাসমূহের কোনটিই ঠিক কিনা। আর ঠিক না হলে প্রকৃতভাবে মহান আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি কী?

মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন বিভাগ

চলুন, আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সহজে বুঝার জন্যে প্রথমে মানুষের জীবনের সকল কর্মকাণ্ডকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেয়া যাক-

মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন বিভাগ

জীবনরে সকল র্কমকান্ড-

১.উপাসনামূলক কাজ
(কুরআনের জ্ঞান অর্জন, ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি)

২. ন্যায় কাজ ও অন্যায় কাজ
(সত্য বলা, মিথ্যা না বলা, পরোপকার করা, নিজে পেট ভরে খেলে অপরের খাওয়ার ব্যবস্থা করা, নিজে শিতি হলে অপকে শক্ষিা দয়ে)

৩. শরীর-স্বাস্থ্য গঠনমূলক কাজ
(খাওয়াদাওয়া,বিশ্রাম, ব্যায়াম, চিকিৎসা ইত্যাদি)

কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য-১

বিভিন্ন পর্বে বিষয়টির যেসব প‌য়েন্ট আলোচিত হবে:
১. আলোচ্য বিষয়টির গুরুত্ব
২. বর্তমান বিশ্ব মুসলমানদের মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অসতর্ক ধারণাসমূহ
৩. মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন বিভাগ
৪. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিবেক-বুদ্ধির তথ্যসমূহ
৫. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আল-কুরআনের তথ্যসমূহ
৬. আল্লাহর দৃষ্টিতে ন্যায়-অন্যায় কাজগুলো কী কী তা জানার উপায়
৭. ন্যায়-অন্যায় কাজগুলোর দু’চারটা করলে চলবে না সবগুলো করতে হবে৮. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে হাদীসের তথ্যসমূহ
৯.মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ইসলামের চূড়ান্ত রায়
১০.উপাসনামূলক কাজগুলোর অধিক গুরুত্বের করণ
১১.মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
১২.মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চলমান চিত্র
১৩.শেষ কথা


১: আলোচ্য বিষয়টির গুরুত্ব

সুধী পাঠক, প্রথমে চলুন পর্যালোচনা করা যাক আলোচ্য বিষয়টি মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ হতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানার গুরুত্ব

তথ্য-১

কোন জিনিস ব্যবহার করে দুনিয়ায় কল্যাণ পেতে হলে ঐ জিনিসটি তার প্রস্তুতকারক যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, সেই উদ্দেশ্য সাধনকে সামনে রেখে তা ব্যবহার করতে হয়। এটা একটা চির সত্য কথা।

একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে। ধরুন, একটা রেডিও। এই রেডিও থেকে কল্যাণ বা উপকার পেতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে, রেডিওটা কী উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তারপর সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রেডিওটি ব্যবহার করতে হবে। রেডিও বানানো হয়েছে এই উদ্দেশ্যে যে, মানুষ রেডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন রেডিও সেন্টারের অনুষ্ঠান শুনবে এবং তা থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হবে। এখন মানুষ যদি রেডিওকে তার প্রস্তুতকারকের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যবহার না করে দেখার বস্তু হিসেবে ঘরের কোণে রেখে দেয়, তাহলে এর দ্বারা মানুষের কোন কল্যাণ হবে না।

আল্লাহ্ও অনুরূপভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে। মানুষ যদি তার শরীর, মন ও জীবন ব্যবহার করে দুনিয়ায় কল্যাণ পেতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার সেই উদ্দেশ্যকে প্রথমে জানতে ও বুঝতে হবে এবং তারপর তার জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে পরিচালনা করতে হবে সেই উদ্দেশ্য সাধনকে সামনে রেখে।

আর মানুষ যদি তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার সেই উদ্দেশ্যকে সামনে না রেখে তাদের শরীর, মন ও জীবনকে ব্যবহার করে তবে দুনিয়াতে তাদের অবশ্যই ভোগ করতে হবে নানা অশান্তি ও অকল্যাণ।

তথ্য-২

কোন বিষয়ের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে জানা থাকলে কোন্ কাজটি ঐ বিষয়ের করণীয় কাজ নয় তা সহজে বুঝা যায়। যদি দেখা যায় একটি কাজ কোন বিষয়ের উদ্দেশ্য সাধনের পথে বিরাট বা স্পষ্ট প্রতিবন্ধকতা, তবে সহজেই বলা যাবে যে, ঐ কাজটি ঐ বিষয়ের করণীয় কাজ হতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ একটি কলমকে ধরা যায়। কলম তৈরির উদ্দেশ্য হল লেখা। যদি বলা হয় কলম ব্যবহারের একটি বিধান হল লিখার সময় নিবটি উপরের দিকে ধরে রাখা, তবে যার কলম তৈরির উদ্দেশ্যটা জানা আছে সে সহজেই বলতে পারবে যে এটি কলম ব্যবহারের বিধান হতে পারে না। কারণ নিব উপরের দিকে থাকলে কলম তৈরির উদ্দেশ্য তথা লিখা কাজটি সাধন হবে না বা তা কলম তৈরির উদ্দেশ্য সাধনের পথে একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা।

একইভাবে যার মানুষ সৃষ্টির সঠিক উদ্দেশ্যটি জানা আছে সে সহজেই বুঝতে পারবে কোন কাজটি মানুষের জীবনের করণীয় বিধান বা কাজ হবে না। সে যখন দেখবে একটি কাজ মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সাধনের পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা তখন সে সহজেই বলে দিতে পারবে ঐ কাজটি মানুষের জীবনের কোন করণীয় কাজ নয় বরং নিষিদ্ধ কাজ।

আখিরাতের দৃষ্টিকোণ হতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানার গুরুত্ব

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সূরা ছোয়াদের ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوا فَوَيْلٌ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ.

অর্থ: মহাকাশ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মধ্যে থাকা কোন কিছুই আমি বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। উহা কাফের লোকদের ধারণা। আর ঐ ধরনের কাফের লোকদের জাহান্নামের আগুনে ধ্বংস হওয়া অনিবার্য।

ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটির মাধ্যমে যে তথ্যগুলো মহান আল্লাহ্ স্পষ্টভাবে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন তা হচ্ছে

 মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ উভয়ের মধ্যে থাকা সকল কিছু অর্থাৎ মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা, নদীনালা, কুরআন, নামাজ, রোজা, হজ্জ ইত্যাদির প্রত্যেকটি সৃষ্টি বা প্রণয়ন করার পেছনে তাঁর একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে।

 যারা মনে করে বা ধারণা করে, ঐ সকলকিছুর কোন একটিও মহান আল্লাহ্ বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তারা কাফের।

 পরকালে ঐ কাফেরদের ঠিকানা হবে দোযখ।

মহান আল্লাহ্ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, খাবার-দাবার, কুরআন, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যে সকল জিনিস বা বিষয় মহাকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে আছে, তার কোন কিছুকে তিনি বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি বা প্রণয়ন করেছেনএটা যারা মনে করবে বা ধারণা করবে, তারা কাফের এবং তাদের ঠিকানা হবে দোযখ। তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, যারা ঐ ধারণাকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করে, ঐ সকল জিনিস বা বিষয়ের কোন একটিকেও এমনভাবে ব্যবহার বা আমল করবে, যাতে ঐ জিনিস বা বিষয়টি সৃষ্টি বা প্রণয়নের পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি সাধন হয় না বা সে উদ্দেশ্য সাধনের ব্যাপারে তা কোন ভূমিকা রাখে না, তবে সে ব্যক্তি বা সে ব্যক্তিদেরও আল্লাহর নিকট কাফের হিসেবে গণ্য হতে হবে এবং তাদের ঠিকানা হবে আরো নিম্নস্তরের দোযখ।

বর্তমান বিশ্বের মুসলমান তথা মানুষের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশেরই আল্লাহ্ কী উদ্দেশ্যে তাদের এবং কী উদ্দেশ্যে কুরআন, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, পশু-পাখি, খাবার-দাবার, নদীনালা ইত্যাদি সৃষ্টি বা প্রণয়ন করেছেন, সে ব্যাপারে সঠিক ধারণা নেই। তাই তারা তাদের জীবন ও অন্যান্য জিনিস বা বিষয় এমনভাবে ব্যবহার বা আমল করছেন যে, ঐ সকল জিনিস বা বিষয় সৃষ্টি বা প্রণয়ন করার পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যগুলো সাধিত হচ্ছে না। তাই পরকালে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানের অবস্থা কি হবে, তা ভেবে চিন্তাশীল ও দরদী সকলেরই ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা।

তাই আমার এ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষকে কী উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তা পর্যালোচনা করা এবং সে পর্যালোচনার ফলাফল মানুষকে জানানো। যাতে তারা সৃষ্টির সেই উদ্দেশ্য সাধনকে সামনে রেখে তাদের জীবনকে পরিচালনা করে দুনিয়ায় শান্তি পায় এবং আখিরাতে কামিয়াব হয়।

(কিউআরএফ, সিরিজ-১, পর্ব-১)

ছেলেবেলা- ০৪ ।। বাবুল হোসেইন

হরিৎ আকাশ দেখে দেখে সময় কেটে যায়

মেঘের ভেলায় বৃষ্টি কেন উড়ে উড়ে যায়।

হাজার রকম প্রশ্ন মনে কাকে বলি খুলে

গোলাপ কেন লাল হল কি আছে এর মূলে।পাহাড় কেন এমন উঁচু বংশ কি তার বলো

নদীর এমন খরস্রোতা মন কোথায় হারালো?

আকাশ কেন এত উঁচু তারাগুলো দূরে

হাট বাজারে রোজ কেন এত্ত মানুষ ঘুরে।

বাবা কেন এমন বড় আমার মত নয়

মামা কেন এমন বেকুব চুপচাপ রয়।

ফড়িংগুলো কেন উড়ে নীল আকাশের নীলে

শাপলা কেন ফুটে থাকে নদী এবং ঝিলে।

কিসের টানে এত্ত মানুষ ছুটছে দিগ্বিদিক

এত্ত বড় পৃথিবীটার কে দেয় রিযিক।

jokes

স্ত্রী: ওগো শুনছো, আমাদের মেয়ে নাবিলাকে রত্নার ছেলের সাথে বিয়ে দিলে কেমন হয়। আমাদের মেয়ের বয়স ১ বছর আর ওর ছেলের বয়স ২ বছর। তার মানে ওর ছেলের বয়স আমাদের মেয়ের বয়সের দ্বিগুন।
স্বামী: (চিন্তা করে) অর্থাৎ আমাদের মেয়ের বয়স যখন ২০ বছর হবে তখন রত্নার ছেলের বয়স হবে ৪০। না না না না আমি আমার মেয়েকে ওই বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দেবো না।
স্ত্রী: (হাসাতে হাসতে) আরে পাগল, আগামী বছরইতো আমার মেয়ের বয়স দুই বছর হয়ে যাবে। তাহলে তখন সমান সমান হয়ে যাবে না।

ছেলেবেলা- ০৩ ।। বাবুল হোসেইন

তিন একে তিন নাচি দ্রিম দ্রিম

চার একে চারি চলছি মামার বাড়ী

এসব তখন মনের ভিতর করছে বাড়াবাড়ী

বুকের ভিতর তখন ছিল কষ্ট এবং হিম।
এক একে এক একটু ফিরে দেখ

দুই একে দুই বসতে পারিস তুই

বসবি নাকি বাবুসোনা কিংবা বাগান জুঁই

মনে মনে ছড়াগুলো শেখ।

ছেলেবেলা- ০২ ।। বাবুল হোসেইন

তখন আমি স্কুলে যাই শ্লেট পেন্সিল ছাড়া

ছেলেবেলার দিনগুলো তাই ভীষণ ছন্নছাড়া।

স্কুল মানে অন্ধকারে টিনের ঘরে ইচ্ছে মতন বসা

কানের ভিতর বাজায় বাঁশী কালো কালো মশা।
ক্লাশের চেয়ে বেশী ছিল খেলার দিকে মন

মাঠটা তাই ছিল বুঝি ভীষণ রকম আপন।

মাঠের ভিতর হল্লা ছুটে সারা সময় জুড়ে

ছেলেবেলা এখন বুঝি অনেক অনেক দূরে!

প্রেম কত প্রকার ও কি কি, সবিস্তারে বর্ণনা ।। নাফিস ইফতেখার

১. প্রথম প্রেম: জীবনের প্রথম প্রেম সবার কাছেই স্মরনীয় হয়ে থাকে। প্রথম প্রেমের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই তবে অনেকের ক্ষেত্রেই খুব কম বয়সে প্রথম প্রেম এসে থাকে। প্রথম প্রেম বেশিরভাগ সময়ই আদতে প্রেম হয়না, সেটা হয়ে থাকে Infatuation। প্রথম প্রেম হতে পারে কোন বাল্য বন্ধু, হতে পারে গৃহশিক্ষক বা স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা, হতে পারে বয়সে বড় কোন আপু, হতে পারে কোন ফিল্মের নায়ক বা নায়িকা, হতে পারে পাড়ার কোন হ্যান্ডসাম তরুনী বা বড়ভাই। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার জীবনের প্রথম প্রেমই একমাত্র প্রেম। ২. প্রথম দেখায় প্রেম/Love at First Site: প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। প্রথম দেখাটা হতে পারে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে, শপিং মল, কলেজ, ভার্সিটি, কোচিং সেন্টারে, স্যারের বাসায়, বন্ধু আড্ডায়। এমনকি বন্ধুর মোবাইলে ছবি দেখেও এ ধরনের প্রেমের শুরু হতে পারে। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের (বন্ধুকূল বা বড়ভাই) সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ সৌন্দর্য্য ও দৈহিক সৌন্দর্য্যের ভুমিকাই বেশি।

৩. বন্ধুত্ব থেকে প্রেম: এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দুজনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব কালের বিবর্তনে প্রেমে রূপ নিতে থাকে, অনেক সময়ই দুজনেরই অজান্তে। তবে আশেপাশের মানুষ (বিশেষত বন্ধুকূল) কিন্তু ঠিকই খেয়াল করে। দুঃখজনকভাবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে - বিশেষত মেয়েরা।

৪. একরাতের প্রেম/One Night Stand: এগুলোকে প্রেম বললে পাপ হবে। ৯০% ক্ষেত্রেই ছেলেরাই এ ধরনের প্রেমের আয়োজক। দৈহিক বাসনাকে পূর্ণতা প্রদান করাই এই প্রেমের প্রধান উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য পূরণের পূর্বে কিছু নাম মাত্র ডেটিং হতে পারে। উদ্দেশ্য পূরণের জনপ্রিয় স্থান: কোন হোটেল, খালি ফ্ল্যাট, সমুদ্রতীরবর্তী কোন শহর।
এই ধরনের প্রেমের মূলমন্ত্র হলো:
"আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোনোদিন নয়........"

৫. বিবাহোত্তর প্রেম: এই প্রেম শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম প্রবল থাকে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পূর্বপরিচিত নয় এমন দুজনের মধ্যে এ্যারেন্ঞ্জ বিয়ে হলে এই ধরনের প্রেম প্রবল রূপে পরিলক্ষিত হয়। প্রেম করে বিয়ে হলে সেক্ষেত্রে বিবাহোত্তর প্রেমে ভাঁটা পড়ে বলে একটি মতবাদ প্রচলিত আছে, কবে এর সত্যতা পরীক্ষিত নয়। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।

৬. পরকীয়া প্রেম: বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার সাথে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। পরকীয়া প্রেমের মূল কারনগুলো হলো:

ক. সময়ের সাথে সংসার জীবনের প্রতি অনাগ্রহ বা তিক্ততা চলে আসা।
খ. শারীরিক চাহিদা পূরণে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি একঘেঁয়েমি চলে আসা।
গ. শারীরিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর অক্ষমতা বা অপূর্ণতা।
ঘ. নিতান্তই এ্যাডভেঞ্চার-প্রিয়তা, লুকিয়ে প্রেম করার স্বাদ অনুভব করা।

মহিলাদের মধ্যে পরকীয়া এদেশে এখনো ততোটা জনপ্রিয় নয় যতোটা পুরষদের মধ্যে। পুরুষদের পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি কম বয়সী কোন অল্প বয়সী মহিলা এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে যুবতীও হয়ে থাকেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যাক্তিটি সাধারণত কোন মধ্যবয়সী পুরুষ হয়ে থাকেন। ৩০-৪৮ বছর বয়সীদের মধ্যে পরকীয়া প্রেম বহুলভাবে পরিলক্ষিত হয়।

৭. অপরিণত প্রেম/কম বয়সে প্রেম/না বুঝেই প্রেম: এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও পড়ে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দুজনই সমবয়সী হতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেমিক তার চেয়ে বয়সে বড়ও হতে পারে। তবে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার কম - অর্থাৎ এ ধরনের প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় খুব কম ক্ষেত্রেই।

৮. কর্মক্ষেত্রে প্রেম: কর্মসূত্রে দুজন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। উক্ত দুজন হতে পারেন কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর দুজন কর্মকর্তা অথবা কোন প্রজেক্টে পরস্পরের পার্টনার। অফিসে নতুন জয়েন করেছেন এমন কোন মেয়ের সাথে এরূপ প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অফিসের পুরুষ কর্মকর্তাদের মাঝে তাগিদ দেখা যায়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।

৯. মোবাইল প্রেম: বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফ্লেক্সির দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সুত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক সময় মোবাইলে এভাবে কথা বলে ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমের সফলতার হার খুবই কম। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা এ ধরনের প্রেমের মূল উদ্দেশ্য নয়।

১০. ইন্টারনেটে প্রেম: ইন্টারনেটে চ্যাটিংয়ে বা সোসিয়্যাল মিডিয়া সাইটে (যেমন - ফেইসবুক, মাইস্পেস) দুজনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। অনেক ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের একজন বিদেশে অবস্থান করে। এভাবে পরিচয়ের পর ছেলে মেয়ে পরস্পরের সাথে সামনাসামনি দেখা করে। এ ধরনের প্রেমে উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে অনেক। অনেক সময়ই কোন ছেলে মেয়ে সেজে অন্য কোন ছেলের সাথে এমন সম্পর্ক চালিয়ে যায়। আর তাই অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের সম্পর্ক প্রতারণায় পরিণত হয়। পূর্বে এ ধরনের প্রেমের সাফল্যের হার বেশি থাকলেও বর্তমান সময়ে এসে সাফল্যের হার কম।

১১. ত্রিভূজ প্রেম: এ ধরনের প্রেমকে বলা যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে দুজন ছেলের টাগ-অফ-ওয়ার বা দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি দুজন ছেলের ভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত মেয়েকে পেতে দুজন ছেলেই মরিয়া থাকে। ত্রিভূজ প্রেমের ক্ষেত্রে প্রায়শঃই মেয়েরা মানসিক দ্বন্দে ভোগে - কাকে পছন্দ করবে এই নিয়ে। অনেক সময়ই ছেলে দুজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা রূপ নেয় মারামরিতে। দুজন মেয়ে আর একজন ছেলের মধ্যেও ত্রিভূজ প্রেম লক্ষিত হয়। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা মারামারিতে নয় বরং রূপ নেয় চুলোচুলিতে।

১২. বহুভূজ প্রেম/Multi প্রেম: একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি ২ এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই মূলতঃ বহুভূজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।

১৩. অসমবয়সী প্রেম: এ ধরনের প্রেমের বৈশিষ্ট্য প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে বয়সের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান। যদিও মেয়ের চাইতে ছেলে কয়েক বছর বড় হলেও তা স্বাভাবিক প্রেম হিসেবে ধরা হয়, তথাপি, যদি পার্থক্য খুব বেশি হয় - যেমন ১২ বছর তবে তা অসমবয়সী প্রেম হিসেবে ধরা হয়। মজার ব্যাপার হলো ছেলের চাইতে মেয়ে এক বছরের বড় হলেও তা অসমবয়সী প্রেম হয়ে হিসেবে ধরা হয়। অসমবয়সী প্রেমকে এ সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়, বিশেষত যদি মেয়ে ছেলের চাইতে বয়সে বড় হয়। অসমবয়সী প্রেম বিয়েতে রূপ নিলে দাম্পত্য জীবন শান্তিপূর্ণ হয় না বলে একটি মতবাদ এদেষে প্রচলিত আছে, কিন্তু এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

১৪. শারীরিক প্রেম/শরীর সর্বস্ব প্রেম: প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে শরীরি আকর্ষণই এই প্রেমের মূল উপাদান। আবেগ ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

১৫. দুধের মাছি প্রেম/অর্থসর্বস্ব প্রেম: "যতোদিন টাকা আছে, ততোদিন সম্পর্ক" - অনেকটা এই নীতির বলে এই ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। অবশ্যই ছেলেরাই টাকা ব্যয় করে থাকে এসব ক্ষেত্রে। ধনীর ঘরের ছেলেদের পক্ষে এই ধরনের সম্পর্ক বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। তবে মোটামুটি আয়ের ছেলেরা খরচের ঠেলায় অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠে, সম্পর্কও আর বেশিদিন থাকেনা। তখন ঐসব মেয়েরা অন্য ছেলের খোঁজে বেরোয়।

১৬. ঈর্ষাণ্বিত প্রেম: "অমুক ছেলে প্রেম করে, আমাকেও করতে হবে" বা "অমুকের বয়ফ্রেন্ড আছে,আমারো চাই" - অনেকটা এমনতর মানসিকতা থেকে এসব প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমগুলো অনেক সময়ই সাময়িক হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময়ই বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড মনের মতো না হলেও প্রয়োজনের তাগিদে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া হয়।

১৭. জেদের বশে প্রেম: পূর্ববর্তী বা বর্তমান বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডকে অনেকটা দেখিয়ে দেয়ার ("তুমি ছাড়াও আমার প্রেম করার লোকের অভাব নেই.......") উদ্দেশ্যে যাকে সামনে পাওয়া যাবে ধরে তার সাথে প্রেম করাই এ ধরনের প্রেমের মূল লক্ষ্য। মনের মতো লোক পাওয়ার বিষয়টি এখানে নগণ্য।

১৮. চড়িয়ে খাওয়া প্রেম/গাধাখাটুনি প্রেম/ঘানি টানা প্রেম: প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য। ক্লাসের ভালো রেজাল্ট করা মেধাবী ছাত্রটি এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় শিকার হিসেবে পরিগণিত হয়। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রেমের প্রচলণ বেশি দেখা গেলেও ছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।

১৯. অব্যক্ত প্রেম/না বলা প্রেম: নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।

২০. সুপ্ত প্রেম: একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।

২১. চুক্তিবদ্ধ প্রেম: এ ধরনের প্রেম হয় পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোন ভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের। মূল উদ্দেশ্য হলো কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে নিজেদের মধ্যে প্রেম দেখিয়ে কোন বিশেষ স্বার্থ চরিতার্থকরণ। শোবিজ ও মিডিয়ার তারকাদের মধ্যে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।

২২. মিথ্যে প্রেম/অভিনয় প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক বা প্রেমিকার দুজনের যেকোন একজন প্রেমের অভিনয় করে যায়। যখন প্রেমিক বা প্রেমিকার কেউ একজন ভবিষ্যতের কথা ভাবতে আরম্ভ করে তখন এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটে। এ ধরনের প্রেমের পরিণতিও যেকোন একজনের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।

২৩. ২য় ইনিংস প্রেম/Old is Gold প্রেম/Revived প্রেম: পূর্ববর্তী বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে পুনরায় জুড়ে গিয়ে এই প্রেম করা হয়।

২৪. ব্ল্যাকমেইল প্রেম/অনিচ্ছাপূর্বক প্রেম/জোড় খাটানো প্রেম: এটাকেও প্রেম বললে পাপ হবে। জোড়পূর্বক এসব প্রেম করা হয়ে থাকে। এর শিকার হয়ে থাকে মেয়েরাই। পাড়ার বখাটে ছেলে বা বড় ভাই, কলেজের বখাটে ছাত্র, কর্মক্ষেত্রে উপরস্থ কর্মকর্তা বা বস প্রধানত এরাই এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হন।

২৫. গায়ে পড়ে প্রেম/নাছোড়বান্দা প্রেম: মেয়ে কোন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী নয় তবুও ছেলে জোড় চেষ্টা চালিয়ে যায় এমন প্রেমে। অনেক সময়ই এমন পরিস্থিতিতে মেয়েরা সরাসরি না বলতে পারে না যার মাশুল তাদেরকে পরে দিতে হয়।

২৬. বিদেশী প্রেম/পরবাসী প্রেম: এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ের মধ্যে অন্ততঃ একজন বিদেশী হয়।

২৭. অসাম্প্রদায়িক প্রেম: এ ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দুজনে দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করেনা। বিশেষতঃ হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করে।

২৮. চাঞ্চল্যকর প্রেম/আলোচিত প্রেম: এ ধরনের প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকা যাই করেন না কন তা মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য হিসেবে প্রচার করা হয়। সাধারণত শো-বিজ আর মিডিয়ার তারকা ও সেলিব্রেটিরা এ ধরনের প্রেম করে থাকেন।

২৯. ঐতিহাসিক প্রেম: এইসব প্রেমের কাহিনীর অবসান ঘটেছে অনেক আগেই কিন্তু আজো রয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। এখনো এসব প্রেমকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়।

৩০. ভাড়াটে প্রেম/ভ্রাম্যমাণ প্রেম/Roaming প্রেম: এ ধরনের প্রেমের প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেন্ঞ্জ করার মতো।

৩১. প্রেমময় প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক আর প্রেমিকা দুজনেই একজন আরেকজনের দিকে প্রেমময় ভঙ্গিতে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকেন, হাত ধরে বসে থাকেন কোন রেস্টুরেন্টের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে, সারাক্ষণ I Love You বলে আর শুনেও ক্লান্তি আসে না তাদের। সারাদিন প্রেমের পর মোবাইলে ১২টার পরও কম জান না তারা।

৩২. ঝগড়াটে প্রেম: সারাক্ষণ দুজনের মধ্যে খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই প্রেমের বৈশিষ্ট্য। কিছুক্ষণ হয়তো দুজনে শান্ত থাকে, তারপর আবার কিছু না কিছু একটা নিয়ে একজন শুরু হয়ে যায়। এ ধরনের প্রেমে ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই হয় ফোনে। বন্ধুকূল সর্বদা দুজনের ঝগড়া মিটাতে ব্যস্ত থাকে। মেয়ে তার সখীদের কাছে এই ঘনঘন ঝগড়ার কথা বলে বেড়ায়।

৩৩. সমলিঙ্গীয় প্রেম: আমাদের দেশে এখনো খুব একটা প্রচলিত না হলেও বাইরের অনেক দেশেই এই ধরনের প্রেমের প্রচলণ আছে। দুজন ছেলের মধ্যে হলে তাদেরকে Gay বলে আর দুজন মেয়ের মধ্যে হলে Lesbian।

৩৪. অমিল প্রেম/দুনিয়াছাড়া প্রেম: এই প্রেমে প্রেমিক ও প্রেমিকার মধ্যে কথাবার্তা, মত, পছন্দ, অপছন্দ কোন দিক দিয়েই কোন মিল থাকেনা, তারপরও কিভাবে যেন সম্পর্ক টিকে থাকে।

৩৫. ব্যর্থ প্রেম: এবং সবশেষে আছে ব্যর্থ প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব প্রত্যাখান দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার বাড়ি আর কখনো কখনো গণধোলাই। অনেক সময়ই ব্যর্থ প্রেমের পরিণতি হয় করুন। কেউ দেবদাস হয়ে যায়, কেউবা মেয়েদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে ও "দুনিয়ার সব মেয়ে এক" এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। দুর্বল মানসিকতার কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নেয়।

* প্রেম খুবই পরিবর্তনশীল ও ব্যাক্তিভেদে এর সংজ্ঞা ভিন্ন। আর আমার দেয়া প্রকারভেদগুলোর সাথে কারো কারো দ্বিমত থাকাটা স্বাভাবিক। আমি দাবী করছি না এখানে সব ধরনের প্রেমের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু অনেক ধরনের কথা বলা হয়েছে এটা সত্য। প্রকারভেদগুলো আলোচনার সময় যতোটা সম্ভব নিরপেক্ষতা অবলম্বনের চেষ্টা করা হয়েছে। কারো কারো কাছে এই প্রচেষ্টা ধৃষ্টতা মনে হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

* আমি জানি আপনাদের কাছেও অনেক ধরনের প্রকারভেদ আছে প্রেমের। তার কোনটি এই পোস্ট অনুপস্থিত থাকলে মন্তব্যতে যোগ করে দিন। আমি পোস্টে যোগ করতে পেরে আনন্দিত বোধ করবো।

সরকারী মেডিকেলের নাম

Bangabandu Sheikh Mujib Medical University.

Begum Khaleda Zia Medical College.

Chittagong Medical College.

Comilla Medical College. Dhaka Medical College.

Dinajpur Medical College.

Faridpur Medical College.

Khulna Medical College.

Mymensingh Medical College.

Rajshahi Medical College.

Rangpur Medical College.

Shaheed Ziaur Rahman Medical College.

Sher-E-Bangla Medical College, Barisal.

Sir Salimullah Medical College.

M.A.G. Osmani Medical College, Sylhe.

মনের মত গান খুজে পাবেন নিচের সাইট গুলোতে...

ছেলেবেলা- ০১ ।। বাবুল হোসেইন

রাতের বেলা ঘুমের খেলা স্বপ্ন দেখা সারাবেলা

হাজার হাজার রঙের মাঝে ভীষন নাজুক ছেলেবেলা।

মাঝপুকুরে শাপলা ফুটে ভীষন রকম বায়না বুকে

শাপলা আমায় দিতেই হবে কান্নাকাটির হল্লা চুকে।
বিকেল বেলার রাস্তাঘাট দস্যি ছেলে মাতায় মাঠ

কানামাছি, গোল্লাছোট আর বউছি খেলার বসে হাট।

চাচা মামার ভীষন শাষন মারামারি এবং ভাষন

এক কানেতে ঢুকতে দিতাম অন্য কানে সঞ্চালন।

পাশের বাড়ীর আম বাগানে মাঝে মাঝে ফুলবাগানে

দস্যিপনার মেলা হত রাত্রি এবং দিন যাপনে।

পুকুর ধারে নেবুর তলে জ্বোনাকগুলো নেভে জ্বলে

হাত বাড়ালেই ধরতে পারি ছেলেবেলা এলেবেলে।

Friday, March 25, 2011

অনু গল্প : প্রথম প্রেমের স্মৃতিটা ফেরত চাই ।। অরুদ্ধ সকাল

প্রকাশদাকে পেলাম না।

আমার কৈশর থেকে কলেজ দিনগুলির স্মৃতিতে যে ব্যক্তিটি জড়িয়ে আছে সেই প্রকাশদা। যার ছোলাবোটের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। প্রতি সন্ধ্যেয় যার হাতের ফোচকা না হলে চলতো না আমার। আমি যার হাতের মাখানো ঝালমুড়িকে পৃথিবীর সেরা ঝালমুড়ি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম।ইচ্ছে ছিলো আমার টাকা হলে, প্রকাশদাকে আমাদের বাড়িতে রেখে দেব। তা, আর আমার হয়নি কেননা যে বাড়িতে তাকে রাখতে চেয়েছিলাম, আজ সে বাড়িতে নিজেরইতো ঠাই হয়না।

প্রকাশদার বাড়িটা চিনতাম, রিভার ষ্ট্রিটের পশ্চিম প্রান্তেই একচালা টিনের ঘরের বাসিন্দা ছিলো প্রকাশদা। শহীদপার্কের যে কোন সমাবেশ কিংবা গড়ের মাঠের ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ তার মিস হবার নয়। তিন চাকাওলা ভ্যানের মতো তার ছোট্ট ঠেলা গাড়িটা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যে পথে বেরুত। আমার স্কুল পালানোর বয়সেই তার সাথে পরিচয় ঘটেছিলে। ক্লাস এইটের গেইট পেরুবার আগেই তার কাছে বই রেখে সপ্তাহে একদিন সিনেমাহলটা ধন্য করতে চলে যেতাম।

কলেজ পাশ করবার পর পর্যন্তও প্রকাশদার সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো। যে বছর বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে এলাম তারপর থেকে আর যোগাযোগ করা হয়নি। পুরো ছয়টি বছর পর বাড়ি ফিরে তার খোজেই দু’দিন যাবত তন্ন তন্ন করে চষে বেড়াচ্ছি।



০২.



উইলকিংসন রোডের মাথায় যেসব অফিস দেখতে পেলাম, সেগুলো নতুন মনে হলো। আমার আগের দেখা উইলকিংসন রোডে এ প্রান্তটা তষর কলোনি ছিলো। কিন্তু এখন কলোনি উধাও হয়ে গিয়ে রাজনৈতিক দল গুলোর অফিস উঠেছে, আর তাই লাবন্যদের হদিস পাচ্ছিনা। তাছাড়া পুরো নগরটার সাথে সাথে আমি নিজেও খানিকটা অচেনা পথিক হয়ে গেছি সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে। এই তো সেদিন ষ্টেশানে অরিন্দম বাবু দেখে বললে কি,রে অনি চেহারা অমন ফ্যাকাশে হলো কি করে !! বেশি মাত্রায় রোদে ঘোরাফেরা, আহার ঠিকমতো না করা। সবমিলিয়ে যায় দিন পোহায় রাত টাইপের থাকলে চেহারা যে এমন হবে সেটা বোঝাই কি করে।

শিমু দি বা মেজ দি তো উঠতে বসতে টিপ্পনি কাটে সকাল-দুপুর প্রেম একটা করেছিলি অনি; শেষ পর্যন্ত তোকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়লো। জেল-পিটুনি খাবার পর কানে ধরে বলেছি বেচেঁ থাকতে প্রেম আর নয়। নারী যে নাগিনী হতে পারে তাতে সন্দেহ নেই।



০৩.



আমি নিজের মনের আকাশকেই এতো বলি। ওটা আমার প্রেম ছিলেনা। ছিলো প্রতারনা কিন্তু মন সেটা বুঝবে না। সে বলে প্রেম প্রেম আচ্ছা ভালোবাসা না থাকলে ক্ষতিটা কি হতো ওই শালা চন্ডিদাশ,রজকিনী কিংবা শিরি-ফরহাদকে সামনে পেলে ঝাড়ু পেটা করতাম। শালারা খেয়ে দেয়ে কাজ পায়নি আর। প্রেমিষ্ট হয়েছে।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মেন্টাল অবস্থায় হাসপাতালের বেডে যখন ছিলেম; তখন নার্স গুলোকে দেখলেই ইচ্ছে করতো গলাটিপে মেরে ফেলি সবক’টাকে; কিন্তু পরে বুঝেছি ওদের কি দোষ সব নারী তো আর এক নয়। আমার প্রেম হারাবার কান্না আর পুলিশের প্যাদানি; সব মিলিয়ে ভজঘট হয়ে গেলো লাইফটা। দোষ না করেও আমি কষ্ট পেয়েছিলাম; যখন শুনলাম আমি নাকি অপহরন করেছি কৃষ্ণাকে।

আচ্ছা মানুষ নিজেকে নিজে অপহরণ করতে পারেনা। যদি সম্ভব হতো তাহলে একদিন নিজেকে নিজে অপহরণ করতাম।



০৪.



কাচাঁদিনের পাঁকা প্রেম তো আমাকে কম তো ভোগায় নি। ছেলেরা বড্ড চলাক হয় মেয়েরাও কিন্তু কম না। আমি বোকা বা হাদারাম কোনটাই ছিলাম না। তথাপি আমি কিন্তু হার মেনেছি টাকার কাছে।

পৃথিবীতে টাকার কাছে প্রেম কিছুই না। আর সেটা আমার সামনে ভেসেছে সেই ধুমকেতুর মতো; যে ধূমকেতুটা দেখতে গিয়ে ছোট বেলায় সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আমার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিলো। সেই ভাঙ্গা হাতে আমি এখনও শক্তি পাই কম।

আমি সেই দিবসে কার মুখ দর্শন করে যে উঠেছিলাম কে জানে। পুরো দিনটাই বিদ্ধস্ত ভাবে কাটিয়েছি সকাল থেকে দুপুর অতপর বিকেল থেকে সন্ধ্যে পার্কের প্রতিটি দূর্বা ঘাস পেরুনো বোধকরি আমার বাকী ছিলোনা। সময় কঠিন তার চেয়ে কঠিন অপেক্ষা করা। আমি অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে আর পারিনি। আইন রক্ষার খাকী পোষাকের সদস্যরা আমাকে জেলে নিয়ে পুরেছে।



তারপর মাস ছয়েক চার দেয়ালের কারাগার বাস।

আমি পর্যায়ের এমন স্তরে গিয়েছিলাম প্রায় উন্মাদ যাকে বলে। তা সবটাই প্রেমের জন্য। কোন গাধা নাকি লিখেছিলো ভালোবাসা পেলে কোন বোকা পড়ে থাকে জলে। আমি জলে পড়ে থাকলেই ভালো করতাম পতঙ্গ হয়ে উড়তে গিয়েই যতো কান্ড ঘটালাম। হায়রে প্রেম।

কৃষ্ণা সেদিন পালিয়েছিলো ঠিকই তবে আমার সাথে নয়; অন্য কারো সাথে। সবাই জানতো আমিই তার প্রেম পতঙ্গ তাই জেলে ঠেসে দিতে কেউ কার্পন্য বোধ করেনি।

কৃষ্ণা পুরো ছ’মাস পালিয়ে গিয়ে কারো সাথে যোগাযোগ করেনি; আমাকেও তাই ছমাস কারাভোগ করতে হয়েছে। জেলা শহরের কারাভোগ শেষে আমি আর বাড়ি ফিরিনি ; আর ফিরতামই বা কোন মুখে। তাই শহরেই থেকে গেছি।

সেদিন বই মেলায় ভ্রান্ত পথিকের মতো হাটতে গিয়ে কৃষ্ণার সাথে দেখা। বলে বসলে আমি যে তোমায় ভালোবাসতাম তার কোন নমুনা আছে ? আমি তো হতবাক বলে কি !! তাই তো মনটা খচ্ করে উঠলো। প্রেমের নমুনা বলতে গেলে একটা চিঠি আছে কৃষ্ণার। সেটা আছে প্রকাশদার কাছে।

আজ ছ’বছর পর এসেছি নগরে তাও আবার প্রকাশদার খোজে; যার কাছে রয়েছে আমার সেই প্রেমের নমুনা একটা মাত্র প্রেমের চিঠি সেটা পেলে কৃষ্ণার মুখে ছুড়ে দিয়ে প্রেমটা ফেরত চাইবো।



আজ প্রকাশদাকে অনেক খুজলাম। পেলাম না । লাবন্য ছিলো ওর একমাত্র বান্ধবী ওকে পেলে প্রকাশদার ঠিকানা পেতাম তাও হলোনা। রিভার ষ্ট্রিটের বঙ্কুবাবু বললেন তুমি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর প্রকাশ চলে গেছে এই নগর ছেড়ে। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারেনা।

তবুও আমি হন্যে হয়ে খুজছি প্রকাশদাকে । তাকে পেলে আমি আমার পুরোনো প্রেমের গন্ধমাখা চিঠিটা পেতাম। প্রেম চাইনা কিন্তু প্রথম প্রেমের স্মৃতিটা ফেরত চাই।

রাজনৈতিক কৌতুক

***ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান।**



নির্বাচন সামনে রেখে এক ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানের মধ্যে কথা হচ্ছিল।



ডেমোক্রেট-আমি যখন কোন টেক্সিতে চড়ি তখন সেই টেক্সি ড্রাইভারের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করি। প্রথমে তার ছেলে মেয়ের কোজ খবর নেই, তাকে মোটা বকশিস দেই। এবং নামার সময় বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।



রিপাবলিকান-আমি টেক্সিতে উঠেই ড্রাইভারকে গালাগালি দিতে শুরু করে দেই। সিগারেট ধরিয়ে তার মুখে ধোয়া ছেড়ে দেই, এক টাকাও টিপস দেই না। তবে নামার সময় তোমার মতই বলি ডেমোক্রেটদের ভোট দিও।

**বিরোধী দলীয় নেতা**

বিরোধী দলীয় নেতা সমুদ্র সৈকতে একটি প্রাচীন বোতল কুড়িয়ে পেলেন। বোতলের ছিপি খুলতেই ভেতর থেকে এক দৈত্য। নেতাকে কুর্নিশ করে দৈত বলল-আপনি আমাকে জাদুর বোতল থেকে মুক্ত করেছেন, তাই আমি আপনার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করব। তবে শর্ত হচ্ছে আপনি যা পাবেন আপনার প্রতিপক্ষ নেতা পাবে এর দুই গুণ।ঠিক আছে-নেতা রাজী হলেন। আমার প্রথম ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল বাড়ী, ২য় ইচ্ছা একটি বিলাস বহুল গাড়ী, আর শেষ ইচ্ছা আমি আমার একটি কিডনি জনস্বার্থে দান করে দিতে চাই।

ত্রিমাত্রিক সমীকরণ

ফোনটা হাতে নিয়ে বসে রইল অভি। মুখে সব পেয়েছির একটা হাসি। ভীষণ খুশি লাগছে। লুবনা রাগ করেনি, একটুও না। বলছিল কাজটা একদম ঠিক হয়নি। কিন্তু গলা শুনে মোটেই তা মনে হচ্ছিল না। বরং ওর গলায় একটা খুশি খুশি সুর লুকানো ছিল। একটা চাপা উত্তেজনা, এপাশ থেকেও খুব স্পষ্ট অভি বুঝতে পারছিল। বুঝতে পারছিল লুবনার ফর্সা গাল দুটো লালচে হয়ে গেছে, চকচক করছে। আজ লুবনাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল, এত আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিল অভি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিল না। কাছে যাবো না, যাবো না করেও কখন কিভাবে যে অতখানি ঝুঁকে পড়েছিল অভি টেরই পায়নি। লুবনা সরে যায়নি, আবার কাছেও টেনে নেয়নি। শুধু প্রচ্ছন্ন একটা প্রশ্রয় দিয়েছে। ওর এই প্রশ্রয়ের কারণেই অভি এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছে। এমনকি ঠিক হচ্ছে না, এই অনুভূতিটুকুও ওর মধ্যে কাজ করে না।মাত্রই মাস্টার্স শেষ করে বের হয়েছে অভি। বেরুনোর সাথে সাথেই কাজ পেয়ে গেছে একটা প্রোজেক্টে, ছয় মাসের চুক্তি। হয়তো পরে আরো বাড়ানো হবে। এখানে এসেই পরিচয় লুবনার সাথে। ওরা দুজন একটা টিম হিসেবে কাজ করে। লুবনা ওর দু’বছরের বড়। এ কাজে আছে বহদিন ধরে। তাই ওকে হাতে-কলমে শেখানোর দায়িত্বও লুবনার। প্রথম দেখার পর থেকেই অভি লুবনার প্রতি একটা অসম্ভব রকম আকর্ষণ বোধ করে আসছে। লুবনা অনেক সুন্দর দেখতে আর তারচেয়েও বেশি আকর্ষণীয়। ওর চেহারায়, কথায়, হাসিতে, চোখের তারায়, শরীরের প্রতিটা বাঁকে, অঙ্গভঙ্গিতে চুম্বকের মত একটা আকর্ষণ। লুবনার গায়ের রঙ একদম টুকটুকে, গোলাপের মত। যে রঙের জামা পড়ে তাতেই ওকে ভাল লাগে। যেভাবে সাজে তাতেই অভি মুগ্ধ হয়ে যায়, এমনকি না সাজলেও!

অভি হয়তো ভাবে না, কিন্তু ওর মনের অনেক ভিতরে একটা তুলনা এসে যায়। মুনিরা তো এমন না। এত বছর ধরে মুনিরাকে ও দেখে আসছে, মুনিরা কখনো নিজেকে এইভাবে সাজায় না, পরিপাটি হয়ে অভির সামনে আসে না, এইভাবে চোখে চোখে কথা বলতে পারে না, বড্ড আনস্মার্ট মুনিরা, বড্ড সেকেলে.......লুবনার চার বছরের ছোট হলেও মুনিরাকে বুড়ি বুড়ি লাগে। ও কখনো অভিকে এইভাবে আকর্ষণ করেনি। ওর কাছে অভি গেছে আট বছরের অভ্যস্ততায়, কিন্তু মুনিরা সবটুকু দিয়েও ওকে কখনো জাগিয়ে তুলতে পারেনি। যা লুবনা পারে শুধু একটু চোখের তাকানোতে বা মুচকি একটু হাসিতে। অভি ভাবে আর কেমন একটা আবেশে ওর চোখ জড়িয়ে আসে।

প্রায় সারাদিন লুবনার সাথে থাকতে হয় ওকে। একদিন কি কাজে যেন একটু বেশি রাতেই অভি ফোন করেছিল লুবনাকে। ঘুমভাঙা গলায় আধো আধো কথা বলেছিল লুবনা। এত অ™ভুত ছিল ওর গলাটা, অভির গা সিরসির করে উঠেছিল। ওই গলাটা শোনার জন্য অভি এখন কোন না কোন ছুতোয় রোজ রাতে ফোন করে। লুবনা কখনো রাগ করে না। বরং কথা বলে ওর সাথে ঘন্টা পার করে। কত কথা যে বলে ও, কতভাবে যে বলে! মুনিরার সাথে রোজকার একঘেয়ে রুটিন কথার পর লুবনা যেন ওকে কল্পনার একটা জগতে নিয়ে যায়। কথায় কথায় ওদের সম্পর্কটা এখন অনেক গভীর। যদিও মুনিরার কথা কেউ ভোলে না, কিন্তু কেউ তুলেও না ওই প্রসঙ্গ। মুনিরা উহ্য থেকে যায়।

প্রথমদিকে অভির একটু একটু খারাপ লাগতো। মনে হতো ঠিক হচ্ছে না। এভাবে মুনিরাকে এড়িয়ে, ওকে ঠকিয়ে। কিন্তু এখন ও যেন লুবনার মধ্যে ডুবে গেছে। কোন কিছুই ওর আর মনে হয় না। বরং মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যায় মুনিরার ওপর। ওর খুঁতগুলো বেশি বেশি চোখে পড়ে আর তাই নিয়ে হইচই করে। যেটা কখনোই আগে করতোনা।

আজ লুবনা একটা টকটকে লাল জামা পরেছিল। তারসাথে মিলিয়ে লাল টিপ কপালে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। সন্ধ্যায় ফেরার পথে রিকশায় বসে কি কথায় যেন ভীষণ হাসছিল, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল। মুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতে হঠাৎ করে কি যে হল, এক হাতে জড়িয়ে ধরল লুবনাকে আর গালে টুক করে একটা চুমু। কিছুক্ষণ ওইভাবেই বসে থেকে লুবনা আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তারপর আবার স্বাভাবিক। কাজটা করেই অভি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। সারাক্ষণ অস্বস্তি। বাসায় ফিরে, মুনিরার সাথে কথাও বলেছে অভ্যাসমত। কিন্তু সারাক্ষণই অপেক্ষা করেছে কখন রাত হবে, কখন লুবনার সাথে কথা বলবে। না, লুবনা রাগ করেনি। একবার শুধু বলেছে ‘এটা কিন্তু ঠিক না’। তারপরই আবার স্বাভাবিক। আজ কথাগুলো আরো ভাল লাগছিল শুনতে, একটা ভাল লাগায় আচ্ছন্ন অভি।

ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে লুবনার কথা। এরই ফাঁকে একবার মুনিরাকে মনে পড়ল। মুনিরাকে ভালবাসে অভি, মুনিরার সাথে এত বছরের অভ্যস্ত জীবন ছাড়া সম্ভব না। আবার লুবনার জন্যও তারমধ্যে অসম্ভব একটা আকর্ষণ। কোনটাই এড়ানো সম্ভব না অভির পক্ষে।

*****

লুবনা হাসছে। এই হাসিটা অভি কোনদিন দেখেনি। ভীষণ নিষ্ঠুর, ক্রুর একটা হাসি লুবনার ঠোঁটে। অভির জন্য ওর করুণা হচ্ছে। বেচারা!

অভিকে দেখে বেচারা শব্দটাই লুবনার মাথায় প্রথম এসেছিল। ভোলা-ভালা, বোকা-সোকা একটা ছেলে, মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির বাইরে পা রেখেছে। বুঝতে শেখার পর থেকেই একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল বলে জীবনের অনেকগুলো দিক, হরেক রকম মানুষ ও দেখেনি। মুনিরার কথা ও প্রথম থেকেই বলেছে। আর শুনতে শুনতেই লুবনার মনে হয়েছে এতদিনের সম্পর্ক হলেও কোথাও একটা বড় ফাঁক আছে। ওদের সম্পর্কে একটা অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে, নির্ভরতা তৈরি হয়েছে কিন্তু কোন নতুনত্ব নেই। একঘেয়ে হয়ে গেছে। অভির চোখ তাই লুবনাকে দেখে ধাঁধায় পড়ে গেছে। ধীরে ধীরে অভির দৃষ্টির পরিবর্তন দেখেছে লুবনাকে, আর নিজেকে সেভাবেই ওর সামনে তুলে ধরেছে। অভির মুগ্ধ দৃষ্টি, প্রশংসা, তোষামোদ খুব উপভোগ করে লুবনা। ছেলেগুলো যে কি! এত বছরের একটা সম্পর্ককে তুচ্ছ করে, অবহেলা করে অভি কি করে পারে লুবনার সাথে এইসব তোষামোদী করতে। এমন তো না যে অভি বোঝে না এটা অন্যায়। লুবনার ভালই লাগে। ‘তুমি যদি নাচতে চাও, কেন আমি ঢোলে বাড়ি দিবো না?’

আসিফ চলে যাওয়ার পর থেকে লুবনা কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করে না। কারো কথাই সত্যি বলে মানতে পারেনা। অভি যখন বলেছিল মুনিরার সাথে ওর এতদিনের সম্পর্ক, ওদের গভীর ভালবাসা, ওদের মধ্যে কখনো কোন সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝি হয় না, ওরা অনেক সুখী তখন অবহেলায় মনে মনে ঠো^ট বাঁকিয়েছিল লুবনা। দেখতে চাইছিল কতটা গভীর অভির ভালবাসা। আস্তে আস্তে জাল বিছিয়েছে যেভাবে অভি চেয়েছে। যাতে অভি পা দিতে চেয়েছে, নিজের অজান্তে।

আর আজকে তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটল। লুবনার এই হাসিটা অভি খুব পছন্দ করে। মুগ্ধ হয়ে দেখে, আজকেও তাই ঘটল। লুবনা শুধু অনিচ্ছার ভান করে করা স্পর্শটুকু অভিকে দিয়েছে। আর অভি বাধ্য হয়েছে শেষ পথটুকু অতিক্রম করতে। হাহ্ প্রেম! এত বছরের এত ভালবাসা, কই চলে গেল। সেই তো ডুবল। আপনি অন্নেক সুন্দর! অনেক এ্যাট্রাকটিভ! আপনাকে মিস করছি ভীষণ! কত কত এসএমএস। ছেলেগুলো এমন কেন? বিতৃষ্ণায় ঠোঁটের কোণাটা বেঁকে গেল লুবনার।

“সব শালা হারামি!” লুবনার খুব পছন্দের একটা কথা। যখনই েেকান ছেলের ভেতরের চেহারাটা বের হয়ে পড়ে তখনই লুবনা এই কথাটা বিড়বিড় করতে থাকে। অসহ্য লাগে সব।

আসিফের চলে যাওয়াটা লুবনার জন্য একটা ভয়াবহ আঘাত ছিল। আসিফের মধ্যে ছিল প্রচন্ড সন্দেহ। ও প্রতিটা ব্যাপারেই লুবনাকে সন্দেহ করতো। প্রথমদিকে লুবনার ভালই লাগতো। ভাবতো, ও আমার এত কেয়ার করে, সারাক্ষণ আমি কি করলাম, কই গেলাম তাই নিয়ে অস্থির হয়ে যায়। কিন্তু এক পর্যায়ে আসিফের সন্দেহ সব সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে। লুবনা আর সহ্য করতে পারেনা। প্রচন্ড ভালবাসা ফিকে হয়ে আসে, সে জায়গায় জন্ম নেয় ঘৃণা। তারা দূরে সরতে থাকে একজন অন্যজনের থেকে। আর একসময় আসিফ ওকে মিথ্যে সব অপবাদ দিয়ে চলে যায় একা ফেলে। আসিফের অভিযোগগুলো শুনলে লুবনা হতভম্ব হয়ে যেতো। এইসব কখনো সে কল্পনাও করতে পারতো না। অনেক আঘাত পেয়েছিল লুবনা। সেটা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিল প্রচুর। সেই দু:সহ সময়টা একা একা নিজের সাথে যুদ্ধ করে পার করেছে। আর একলা পথ চলতে গিয়ে মুখোমুখি হয়েছে অভির মত এইসব মুখোশ পরা ভাল মানুষগুলোর। ঘেন্না করে লুবনা এদের, প্রচন্ড ঘেন্না। “সব শালা হারামি!”

*******

অনেকক্ষণ ধরে জেগে আছে মুনিরা। ঘুম আসছে না। মনটা ভীষণ খারাপ। অভি আজকাল এত দূরে সরে গেছে! চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই ওর এই পরিবর্তন। এই চাকরিটা নিয়ে ওরা দুজনেই এত খুশি ছিল, অথচ এই চাকরিটাই একটা কাল পর্দার মত ওদের মাঝখানে আড়াল তৈরি করেছে। অভিকে ও বুঝতেই পারে না এখন। কথায় কথায় রেগে যায়, বকাবকি করে, এটা এমন কেন, হল না কেন, তুমি সাজো না কেন, আরেকটু পরিপাটি থাকো না কেন তাই নিয়ে হইচই করে। অভির মধ্যে মুনিরাকে নিয়ে কখনো কোন অভিযোগ ছিল না। মুনিরা সবসময় সাদামাটা থাকে, খূব একটা সাজে না বা কোন কৃত্রিমতা পছন্দ করেনা। আর অভি তাতেই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু আজকাল কি ভীষণ বদলে গেছে!

শুধু অভিযোগ, শুধু অভিযোগ। মুনিরা বুঝে না ওর দোষটা কোথায়? শুধু কষ্ট পায়। আজকে কি যে হল, মুনিরা আম্মার সাথে কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে তাই বলছিল। আর অভি কি একটা ধমক লাগাল, ‘রাখো তো তোমার এইসব ফালতু কথা।’ মুনিরা বুঝে না ফালতু কিসে হল। ফোন রেখে দিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল একাই। আগে হলে অভি আবার ফোন করতো, স্যরি বলতো, আদর করে দিতো। কিন্তু আজকে অভি ফোনই করল না। মুনিরা বুঝে না কি এমন হল যে অভি এতটা দূরে সরে গেল। শুধু কষ্ট পায়, প্রচন্ড কষ্টে ছটফট করে।

*********

গভীর রাত। ঘুমিয়ে পড়েছে পুরো শহর। রাস্তার বাতিগুলোও ঝিমিয়ে পড়েছে। শুধু জেগে আছে তিনটি মানুষ। একই শহরের তিনপ্রান্তে নির্ঘুম তিনজোড়া চোখ। সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিভ্রান্ত, অসহায়।







সাম্প্রতিক.কম এর ১৪ই এপ্রিল সংখ্যায় পূর্ব প্রকাশিত

শব যাত্রা ।। আত্মভোলা (ছন্দ্রনাম)

আজকাল লাশ পরছে যত্রতত্র

গাছের পাতার মত,শুকনো খড়কুটোর মত

লাশ পরছে এখানে ওখানে,

ঘুম থেকে উঠে দেখি খবরের কাগজে লাশের ছবি

বড় বিভৎস সেই ছবি
রক্তের নদীতে ভেসে যাওয়া অথবা কয়েক টুকরা হয়ে যাওয়া লাশ

অথবা দেখি চাদরে ঢেকে ভ্যানে টেনে নেয়া কোন লাশ।

লাশ পরেছে লাশ

এক কথাতেই পরছে লাশ

সাজা পাবার ভয় নেই, তাই

লাশ পরছে লাশ

এ এক আজব দেশ যেথা

লাশ ফেললে হয়না সাজা

ফেলতে পার যখন তখন

ইচ্ছে মত লাশ

লাশ পরছে লাশ।

লাশের রক্তে গোসল করে

লাশের বুকে পারা দিয়ে

যাচ্ছে যারা বুক চিতিয়ে

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে

ফেলি তাদের লাশ

লাশ ফেলব লাশ।

বিকেল বেলা ।। কাপালিক

তোমার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল সেই বিকেলের পর

সন্ধ্যা তখন ছুঁই ছুঁই করছে।

তুমি মাথা নীচু করে রাখছিলে আর কথা খুজছিলে,

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম, কোন কথা খুঁজে পাই নি।

আমরা বুঝতে পারছিলাম যে আমাদের আর কখনও দেখা হবে না।

তুমি চলে যাবে তোমার পথে, আমি আমার।

আমাদের জীবনটা খুব সহজেই পালটে যাচ্ছিল।

আমরা বুঝতেও পারছিলাম না আমরা কি করছি।



আলাদা হতে খুব একটা সময় লাগে না,

যতটা লাগে জোড়া লাগতে।



তুমি কি রংয়ের শাড়ী পড়েছিলে তা ভুলে গেছি,

অথবা তোমার পায়ের স্যান্ডেলটা কেমন ছিল দেখতে,

তাও আজ মনে নেই।

তোমার চোখের দিকে তাকাতেও অস্বস্তি লাগছিল।

মানুষ কত সহজেই পর হয়ে যায়।

সম্পর্কের সুতোগুলো পুড়িয়ে ফেলে একদম।



সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছিল সেদিন।

রাজপথে ছিল অনেক যানবাহন আর ল্যাম্পপোষ্ট।





আচ্ছা এ নগরীর বুকে প্রতিদিন কতগুলো সম্পর্ক তৈরী হয় আর ভাঙ্গে?

সেই মিশুকের নগরী।

সেই বেলুনের আর হাওয়াই মিঠাইয়ের নগরী।

পিজি হাসপাতাল আর রেডিও অফিসের নগরী।

স্মৃতিসৌধের দূর থেকে দেখা লাল আলোর নগরী।

বহুতল বাড়ীগুলোর জানালা থেকে হলুদ আলো বের হয়ে আসা নগরী।



আমি হারিয়ে ফেলেছি সেই নগরী।

তুমিও হারিয়ে গেছ।



অথচ জীবনটা হতে পারত সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ।



এখন প্রচুর গাড়ী নগরীতে।

রেডিও অফিসের থেকে

বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোর অফিসই বেশী কার্যকর।

রোদটা এখন অন্যরকম দেখতে।

রঙ্গীন টেলিভিশন এখন সহজলভ্য।



অথচ আমরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম,

একটা রঙ্গীন টেলিভিশন কিনব,

একটা ফ্রীজ কিনব।



নাহ বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব।

মৃত্যুই এখন আমার শেষ পরিণতি।

সর্বগ্রাসী মৃত্যু।

আমার কোন দায় নেই এ পৃথিবীতে।

আমার কোন বংশধর নেই।

আমার কোন সম্পর্কের সুতো নেই।

সব সুতোগুলো পুড়ে গেছে।



আমি যে কি আমি তা নিজেও এখন জানি না।





তুমি এখন কোথায় আছ আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

তোমার কি একটা মেয়ে আছে?

মেয়েটা নিশ্চই এতদিনে কলেজে পড়ছে।

তুমি নিশ্চই এখন ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখ,

একদিন ও ডাক্তার হবে।



তোমার বা আমার আসলে এখন চাওয়ার কিছুই অবশিষ্ট নেই আর।

আমাদের কর্মক্ষেত্র, সম্পর্কের ব্যররথতার ভয়, সফলতার আনন্দ,

সব এখন নিরর্থক।

এখন আর আমাদের সেই বিদায় সন্ধ্যাটা নেই,

নেই সেদিনের কথা খুঁজে না পাওয়া।

তবে তুমি তোমার স্বপ্ন হয়তো ছড়িয়ে দেবে,

তোমার সন্তানের মাঝে,

তোমার হারাবার কিছু নেই।



আমারও হারাবার কিছু নেই,

আমি আগেই সব হারিয়ে বসেছি।

মহান মানুষ ।। বাবুল হোসেইন

আসমান থেকে খসে পড়া চাঁদের কণা

পৃথিবী রাঙ্গানো হয় তার স্পর্শে

বহুদিন ভুলিনি সেই রূপের বাহার

যেদিন সেজেছিলে তুমি অপূর্ব দৃশ্যে।

তোমার উদারতা, তোমার দেওয়া-মন

চারপাশে বিলায় পরমানন্দের ঝড়

গ্রহ-নক্ষত্রের বাগান তুমি দাও না বলেই

ইতিহাস হয়ে রয় চির-অমর।



সূর্যের লাল আভা দাও এনে তুমি

আমাদের হতভাগ্য পোড়া কপালে

মানুষের সকল মানবিকতা, মহানুভবতা

লিখে রাখো ইতিহাসে দেয়ালে।



তুমি মহান, মহানুভব তুমি জীবনে

স্পর্শের কাছে ঋনী জনমভর

এমন স্পর্শের তরে উৎসর্গ হোক জীবন

ভুলে যাই কে আপন কে পর। 


উৎসর্গ : নেজা মিয়া স্যারকে। সফাত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। যিনি আমার জীবনে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, প্রিয় শিক্ষক। এখনো যিনি দক্ষ হাতে চালাচ্ছেন স্কুলের সকল কার্যক্রম। আল্লাহ তাকে আরো দীর্ঘায়ু করুন।

ফ্রি কল করুন

ওয়েবসাইটের খোঁজ পেলাম যেটা দিয়ে কম্পিউটার থেকে মোবাইলে ফ্রি কল করা যায়। দিনে দুইটা কল করা যাবে ফ্রি তে। আইপি পরিবর্তন করে আরও বেশী করা যেতে পারে।

ঠিকানাটা হল - http://evaphone.com/

একসাথে ৫০-১০০ বা তারও বেশী ছবি রিসাইজ করুন ।। শাহিন

ফটোশপ ৭ বা সি.এস দিয়ে এর সমাধান করতে পারেন। যা করতে হবে:

১। যে ফোল্ডার এর অরজিনাল ছবি আছে, তার সাথ রিসাইজ নামে আরেকটি ফোল্ডার তৈরি করুন।
২। ফটোশপ চালু করুন এবং view হতে action বা ALT+ F9 চাপুন।( যদি একশন প্যালেট চালু না থাকে।) ৩। এবার প্যালেট এর create new action baton ক্লিক করে name text box এ resizepic টাইপ করে Record baton এ ক্লিক করুন।

৪। এবার file>open এ ক্লিক করে আপনার অরজিনাল ফটো ফোল্ডার হতে যে কোন একটি ফটো অপেন করুন।
৫। এবার image>image size এ ক্লিক করে, width 800 and height 600 type করুন। ok বাটনে ক্লিক করুন।

৬। এখন file>save as এ ক্লিক করে format এর drop down baton এ ক্লিক করে JPEG(*.jpg,*.ipeg,*.jpe)সিলেক্ট করন এবং ফাইলের নাম পরিবতন না করে শুধুমাত্র আপনার resize folder লোকেশন নিধারন করে save baton এ ক্লিক করুন। JPEG OPTIONS এর Qulity box এ ৫ অথবা ৪ টাইপ করুন। এবার OK বাটনে ক্লিক করুন।

৭। ফটো ফাইলটি বন্ধ করুন। একশন প্যালেট এর stop এ Cilck করুন ।

৮। File>automate>batch এ ক্লিক করুন।

৯। এবার action dropdown হতে resizepic selet , অতপর source হতে Folder এবং choose এ ক্লিক করে আপনার অরজিনাল ফোল্ডার সিলেক্ট করে দিন। একইভাবে destination হতে Folder এবং choose এ ক্লিক করে আপনার Resize ফোল্ডার সিলেক্ট করে দিন। Ok বাটনে ক্লিক করুন।

১০। দেখুন আপনার অরজিনাল ফোল্ডার হতে ( হতে পারে আপনার অরজিনাল ফোল্ডার এ হাজার এর উপরে ছবি আছে, তাতে ও কোন সমস্যা নেই। ) অটোমেটিক একের পর এক করে Resize folder এ জমা হচ্ছে, আপনার নতুন সেটিং অনুযায়ী । এই প্রসেস চলাকালিন JPEG OPTIONS box আসলে OK বাটনে ক্লিক করুন।

Thursday, March 24, 2011

ডাউনলোড করুন বোখারী শরীফের বাংলা অনুবাদ

হাদিস শরীফের কিতাবগুলোর মধ্যে বোখারী শরীফকে সবচেয়ে বিশুদ্ধ বলে গন্য করা হয়। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের যেমন নিয়মিত কোরান শরীফ পড়া উচিৎ, তেমনি হাদিসও পাঠ করা উচিৎ। বাজারে বাংলায় অনুবাদসহ কোরান শরীফ ও হাদিস শরীফগুলো কিনতে পাওয়া গেলেও ইন্টারনেটে পিডিএফ ফরম্যাটে এগুলো ডাউনলোড করার সাইট খুবই অল্প। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা অনেক খুজেও কাক্ষিত ওয়েবসাইট বা বইটি খুজে পাই না। আজ আমি সাত খন্ডের বোখারী শরীফ ডাউনলোডের জন্যে একটা সাইটের লিংক দিচ্ছি।
তাহলে দেরী না করে এখনই ডাউনলোড করুন এবং পড়তে থাকুন ।



লিংক=

http://techbarta.blogspot.com/2010/04/download-bangla-bukhari-shareef-volume_30.html

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সুন্দরী শিক্ষিকা ও রাজুর ইন্টারভিউ

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সুন্দরী শিক্ষিকা চাকুরিতে যোগ দিলেন। পড়াতে গিয়েই টের পেলেন,যুগের ছেলেরা পাল্টেছে, অতি স্মার্ট ডিজুস পোলাপান নিয়ে ম্যাডামের বেকায়দা অবস্থা। প্রথম গ্রেডে সদ্য ভর্তি হওয়া রাজু তো বলেই বসলো, ম্যাডাম,আমি কোনো অবস্থাতেই প্রথম গ্রেডে পড়বোনা। কারণ,প্রথম গ্রেডের সব পড়ালিখা আমি অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছি। এমনকি আমার বড় বোন যে ৩য় গ্রেডে পড়ে ,আমি ওর চেয়ে ও স্মার্ট।কাজেই মিনিমাম ,আপনি আমাকে ৩য় গ্রেডে পড়ার সুযোগ করে দিন। ম্যাডাম,রাজুকে নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলেন।সব খুলে বললেন।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, ঠিক আছে,আমি তোমাকে দুয়েক টা প্রশ্ন করবো, যদি তুমি ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারো ,তবে তোমাকে উপরের ক্লাশে প্রমোশন দেয়া হবে।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, আচ্ছা বলতো রাজু, ৩ গুন ৩ = কত?

রাজুর জটপট জবাব, স্যার , নয়।

আচ্ছা বলতো ৮ গুন ৮ সমান কত?

এবারও রাজুর জবাব স্যার ৬৪।

প্রিন্সিপাল স্যার ম্যাডামকে বললেন, রাজুকে উপরের ক্লাসে প্রমোশন দেয়া যায়।

রুপবতি ম্যাডাম এবার প্রিন্সিপাল স্যার কে বললেন, স্যার আমারও কিছু প্রশ্ন ছিলো, যদি আপনি অনুমতি দেন,আমিও একটু ওর মেধা যাচাই করি।

প্রিন্সিপাল স্যার এবার মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

ম্যাডাম ,রাজুকে প্রথম প্রশ্ন করলেন-আচ্ছা রাজু বলতো,গাভীর চারটা আছে,কিন্ত আমার আছে দুটো। সে টা কি?

রাজু চুপচাপ চিন্তা করছে,আর মিটিমিটি হাসছে।

ম্যাডাম বললেন,লজ্জা পাবার দরকার নেই রাজু। তুমি সঠিক জবাব দিও।

রাজু বললো, ম্যাডাম,এটা হলো-আপনার দুই পা।

ম্যাডাম এবার ২য় প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা এবার বলতো, তোমার প্যান্টের ও জায়গায় আছে,আর আমার তা নেই সেটা কি?

রাজু লাজে হাসে।

ম্যাডাম বলেন,লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই রাজু।

রাজু বলেন,ম্যাডাম এটা হলো,আমার প্যান্টের পকেট।

ম্যাডামের পরের প্রশ্নঃ আচ্ছা, বলতো,এমন একটি শব্দ যা ইংরেজে লেটার

C দিয়ে শুর আর T দিয়ে শেষ। জিনিসটা গোলাকার,ডিলিশাস,ভেতরে ভেজা ভেজা, আর নরম,যা পেলে সবাই তৃপ্ত হয়।

প্রশ্ন শুনে প্রিন্সিপাল স্যারের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।চেহারা পুরো লাল হয়ে গেছে।

রাজ বললো, ম্যাডাম এটা হলো Cocunut.

ম্যাডের পরের প্রশ্নঃ আচ্ছা এবার বলোতো, যা খুব শক্ত হয়ে কারো ভিতরে ঢুকে,আর নরম,ভেজা,আঠালো হয়ে বের হয়ে আসে?

রাজুর জবাব, ম্যাডাম এটা হলো বাবল গাম।

ম্যাডামঃআচ্ছা এবার বলোতো, কোন শব্দ ইংরেজি F দিয়ে শুরু আর K দিয়ে শেষ। যে শব্দ শুনলেই শরীরে যথেষ্ট উত্তাপ আর উত্তেজনা শুরু হয়-

এ প্রশ্ন শুনে প্রিন্সপাল স্যারের আবারো, লজ্জাকর অবস্থা ।

কিন্ত রাজুর উত্তর ,ম্যাডাম এটা হলো Fire Truck.

ম্যাডামঃ বলোতো কোন শব্দ ইংরেজি F দিয়ে শুরু আর K দিয়ে শেষ। যা মানুষ না পেলে হাত ব্যবহার করে।

রাজুর জবাব-ম্যাডাম এটা হলো-Fork.

ম্যাডামঃ রাজু বলতো সোনা,এ জিনিসটা কারো লম্বা, আবার কারো ছোট, একেক জনের একেক সাইজের হয়।বিয়ে করার পর জামাই আদর করে বউকে দিয়ে থাকে।

রাজুর জবাব--ম্যাডাম এটা হলো ডাকনাম।

ম্যাডামঃ রাজু বলতো এটা পুরুষের শরীরে কোন অংশ যেখানে কোনো হাড় নেই,তবে অনেক শিরা আছে,এক রকমের মাংসপিন্ডের সমষ্টি,উত্তেজনাকর অবস্থায় বেশী অনুভূত হয়।বিশেষ করে যা দিয়ে ভালোবাসা বাসি বুঝা যায়।

রাজুর জবাব, ম্যাডাম এটা হলো হার্ট বা হৃদয়।

শুনার পর প্রিন্সিপাল স্যার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ম্যাডাম কে বললেন ওকে ৮ গ্রেডেই প্রমোশন দেয়া হোক। কারণ শেষের কয়েকটি প্রশ্নের জবাব আমি নিজেই ভুল করেছি।

হাসতে মানা

***মহিলার প্রতি ডাক্তার, ঠিক আছে আপনার আগের ডাক্তার কি বলেছে ?

রোগীঃ সে আমার সব কিছু বদলির ও পরিবর্তনের জন্য বলেছে।

ডাক্তারঃ তা আপনি এখন কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

রোগীঃ আমি ডাক্তার বদলি দিয়েই সর্বপ্রথম আরম্ভ করেছি।
***রোগীঃ ডাক্তার সাহেব, আমাকে কুকুরে কামড়েছে।

ডাক্তারঃ আপনি কি জানেন না যে আমার রোগী দেখার সময় ৪টা থেকে ৮টা।

রোগীঃ আমিতো জানি। কিন্তু ওই হতচ্ছাড়া কুকুরে তো আর ওটা জানে ন





***অপারেশরেন রুগীকে কয়েকদিন পরে দেখে -

ডাক্তারঃ আরে আপনি! কি খবর? এখন কেমন আছেন? কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

রোগীঃ না, কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে হয়েছি কি এখন দম নেয়ার সময় আর ছাড়ার সময় বুকের ভেতরটায় টিকটিক শব্দ করে।

ডাক্তারঃ (বেশ আনন্দের সঙ্গে) তাইতো বলি, আমার এত দামি ব্রান্ডের হাত ঘড়িটা কই গেল?



***১ম জন : আপনার ভাগ্য ভালো যে, অ্যাকসিডেন্টটা একজন ডাক্তারের চেম্বারের সামনেই হয়েছে। চিকিৎসা তাড়াতাড়িই পাবেন, কিন্তু ডাক্তার সাহেবকে দেখছি না যে?

২য় জন : কী করে দেখবেন। এই চেম্বারের হতভাগা ডাক্তার তো আমিই

একটি ভ্রুনহত্যার গল্প ।। অর্ক

আমি আজকাল প্রায় সকালেই দেরী করে ঘুম থেকে উঠি।আজও দিবানিদ্রাতেই থাকার প্রাণপন প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম।কিন্তু ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো নোকিয়া ফোনের কড়কড় রিংটোনে।সাধারণত এরকম ক্ষেত্রে আমি ঘুমের ভান করে পরে থাকি।কিন্তু আজকের ঘটনা ভিন্ন।কারণ ফোনটা করেছে মুনিয়া খালা।আমাকে যদি আমার দেখা পৃথিবীর দশজন ভালো মানুষের তালিকা করতে বলা হয় তাহলে আমি উনাকে এই তালিকাতে রাখতে পারবোনা। আমার কাছে উনি কারো সাথেই তুলনীয় নন।খালা আমাকে এতটাই ভালোবাসেন যে আম্মা মাঝে মাঝে উনাকে বলেন,"মুনিয়া আমার ছেলেরে তুই নিয়ে যা,তোকে আমি দিয়ে দিলাম।" মজার ব্যাপার হলো উনি আমার আপন খালা না।বিভিন্ন লতায়-পাতায় পেঁচানো খালা।প্রকৃতির কি অদ্ভুত লীলা যার মনটা এত মায়া দিয়ে গাঁথা,তাকেই খোদা কখনো নিজের সন্তানের মা ডাক শুনতে দেননি।খালার প্রথম সন্তান মারা যাওয়ার পর কি কারণে যেন উনি আর কখনোই মা হতে পারেননি।খালার সেই সন্তানটি ছিলো ছেলে,যে পৃথিবীতে আসার পূর্বে নাম প্রাপ্ত হয়েছিলো অর্ক।এর কিছুদিন পর আমার জন্ম হলে এই খালাই আমাকে তার সন্তানের জন্য রাখা নামটি দেন।শুনেছি জন্মের পর মুনিয়া খালা আমাকে নিয়ে যান কিনা এটা ভেবে আম্মা বেশ ভয়ে ছিলেন।হয়তো তার হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে আমার মাঝে খুঁজে পান বলেই প্রতিবার বাসা থেকে বিদায় নেওয়ার আগে ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,"আব্বা গেলাম,তুমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কইরো।পড়াশোনা বাদ।"



আসল কথায় ফিরে আসি।আমি খালার ফোন ধরে সালাম দিতেই খালা কান্না কান্না কন্ঠে আমাকে অনেকগুলো কথা একসাথে বলতে লাগলেন।অস্পষ্টভাবে যা বললেন তাতে আমি যা বুঝলাম তা হলো,রিমি হাসপাতালে।আজকে ওর abortion করা হয়েছে।সমস্যা হয়েছে ওর জ্ঞান এখনো ফেরেনি।

রিমির পরিচয় দেয়া দরকার।রিমি আমার খালার পালিত কন্যা।ওকে দত্তক নেয়ার ঘটনাটা খুবই বিচিত্র।খালার সন্তান মারা যাওয়ার পর খালা একটু কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলেন।তখন ঘরের কাজের জন্য একজন বুয়া রাখা হয়।বুয়ার মাসখানেক আগে একটা মেয়ে হয়েছিলো।খালা বুয়ার বাচ্চাকে নিজের খাটে শুইয়ে ঘুম পাড়াতেন,কোলে নিয়ে রাখতেন,এমনকি খাইয়েও দিতেন।খালু এই ব্যাপার নিয়ে মহা পেরেশান ছিলেন।আমার আম্মাকে প্রায় বলতেন "আপা বুয়ার বাচ্চার জন্য আমি আজকাল ঘুমাইতে পারিনা,আমাকে আপনার বোন সোফায় ঘুমাইতে বলে নিজে বাচ্চারে আমাদের খাটে রেখে দেয়।বলেনতো এইটা কিছু হইলো?"।

দুঃখজনকভাবে বুয়া কাজ করার দুইমাস পরে তার শরীরে লিউকিমিয়া ধরা পড়ে।খালা শুধু বুয়ার কন্যাসন্তানটির জন্য হলেও বুয়ার অনেক চিকিৎসা করিয়েছিলেন।কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুর কয়েকঘন্টা আগে হঠাৎ করে বুয়া খুব হাসতে শুরু করে।একসময় খালার হাত ধরে বলে,"আপনে কিন্তু ওর মা আছেন,আপনারে কীরা দিয়া গেলাম"। আমার মমতাময়ী খালা এভাবেই রিমিকে পান। রিমি আর আমার বয়স প্রায় সমান।খুব বেশি হলে বছরখানেক ছোট হবে।ওর আপন মা মারা যাওয়ার পর খালা কখনো ওকে এতটুকু কষ্ট দিয়ে মানুষ করেননি।আমরা এবং খালার আত্নীয়স্বজনদেরকে খালা প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন,উনাকে যদি কেউ আপন মনে করে তাহলে এই বাচ্চাকেও আপন ভেবে নিতে হবে।একবার আমার এক মামা কিছু একটা বলেছিলেন,মুনিয়া খালা চোখের পানি নাকের পানি এক করে তাকে ত্যাজ্য করেন।ওই মামা পরে রিমির জন্য ১০ কেজি চমচম কিনে খালার বাসায় রওনা হোন।খালা তো তার দরজা খুলেননা কোনভাবেই।পরে খালুজান অনেক কষ্টে খালাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মামার সাথে ভাব করায় দেন।খালা শর্ত দিছিলেন,মামা যেন তার বাসায় কখনো মিষ্টি ছাড়া না আসে।আমরাও মামার বদৌলতে প্রায়ই চমচম খেয়ে তৃপ্তিভরা ঢেঁকুর তুলতাম।উল্লেখ্য রিমির প্রিয় খাবার ছিলো চমচম।

সবই ঠিক ছিলো,শুধু সমস্যা ছিলো খালুজান।খালা মনে করতেন খালুজান রিমিকে আপন মেয়ের মত ভালোবাসেননা।যদিও রিমি কখনো অভিযোগ করেনি,বরং খালুর সাথে দেখতাম তার বেশ ভালোই ভাব।খালু তার এই পালক কন্যাকে কখনো একবারের জন্যও সামান্য ধমক দেয়নি।তবুও খালা রিমিকে নিয়ে খালুজানকে প্রায়ই বকাঝকা করতেন।

সেই রিমির চার মাস আগে আকদ হয়ে গেছে আর আজকে কি ভয়ঙ্কর কথা শুনলাম।আমি খালাকে হাসপাতালের নাম জেনে এখুনি আসছি কথা দিয়ে ফোন রাখলাম।এর এক ঘন্টা পর আমি মনোয়ারা হাসপাতালে রিমির কেবিনের পাশের খোলা বারান্দায় দাঁড়ানো।আমার পাশে রিমির জামাই মুখ কাঁচুমাঁচু করে বসে আছে।আমি তাকে মুখ গম্ভীর করে জিজ্ঞেস করলাম, abortion এর সিদ্ধান্ত কেন নিলো! উনি আমার দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো, "এখনো তো ঘরে তুলে নেইনি।আম্মা বলছে অনুষ্ঠান করে বউ ঘরে নেবেন।তাই অনুষ্ঠানের আগে বাচ্চা হয়ে গেলে সমস্যা।এইজন্যই আর কি..."।আমি এহেন জবাব শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেও আর ইচ্ছা হলোনা।খালা আর খালুর পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম। খালা তখন অঝোরে কাঁদছে মেয়ের পাশে বসে।খালু খালার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন চুপ করে।আমাকে দেখে খালা কাছে টেনে এনে বসালেন।তারপর কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, "তোমার খালুজানরে জিজ্ঞেস করো সে কেন কিছু করলোনা।এখন আমার সাথে আহলাদ দেখায় বলে মেয়ের কিছু হবেনা।কোনদিন এই লোক মেয়েটাকে নিজের মেয়ে ভাবেনাই।" খালু আস্তে আস্তে মাথা নাড়ায় বলে, "আমি কি করবো?তোমার মেয়ের জামাই এমন সিদ্ধান্ত নিলে ওদের মধ্যে আমি কি কিছু বলার হক রাখি?" খালা এবার রেগে গেলো, "তুমি আমার সামনে থেকে দূর হও।তোমার মুখ দেখাও পাপ"। খালু আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন,তারপর কেবিনের বাহিরে হাঁটা দিলো।খালা আমাকে এরপর জিজ্ঞেস করলো,নাস্তা করছি নাকি।হালকা পাতলা কথা বললো।

এর একটু পর রিমির প্রথমবারের মত সেদিন জ্ঞান ফিরলো।খালা হন্তদন্ত হয়ে রিমির মাথার কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, "মা এখন কেমন লাগতেছে?ব্যাথা আছে?"। রিমি একটা কেমন অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে খালার দিকে তাকালো।তারপর খেব মৃদু কন্ঠে বললো, "আম্মু ভাইয়াকে অনেকদিন পর দেখলাম।ও তো বোনের কথা একবারও ভাবেনা।" আমি রিমির দিকে হাসি দিয়ে তাকিয়ে বললাম, "সময় পাইনারে।বাসাতেও আজকাল থাকিনা তেমন"। রিমির চোখ দিয়ে দেখলাম টপ টপ করে পানি পড়ছে।আমাকে কান্না কান্না গলায় বললো, "ভাইয়া জানিস ডাক্তার না মানা করছিলো বাচ্চাটাকে না মারতে,আমি সকালে আসলে ডাক্তার আমাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখায় আমার বাচ্চার ছোট্ট মুখখানা,তার হৃদপিন্ডের ধুক ধুক শুনায়।জানিস ভাইয়া অনেক ছোট্ট ছোট্ট হাত ছিলো।এমন কেন হলো রে?আমার বাচ্চাটা কি কোনদিন আমাকে মাফ করবেরে ভাইয়া?আমি অনেক কাঁদছিলাম যেন বাচ্চাটাকে না মারে,কিন্তু আমার কথা কেউ শুনেনাই।ভাইয়া আমার বাচ্চাটা এখন কই আছে বলতো?বেহেশতে না ভাইয়া?"

আমি চোখের পানি ঢাকার জন্য কেবিনের বাহিরে চলে আসি।পিছনে শুনলাম খালা অঝোরে কাঁদছে।বাহিরে এসে শার্টের কোনা দিয়ে চোখ মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ।একটু স্বাভাবিক হলে পিছন ফিরে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেলাম।আমার খালুজান হাসপাতালের করিডোরের আরেক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আমি উনার কাছে আস্তে আস্তে হেঁটে গেলাম।দেখলাম উনি রিমির আসল বাবা ফরিদ উদ্দিন সাহেবের কাঁধে হাত দিয়ে কান্নাভেজা চোখে এক গাদা কথা বলছেন। "বুঝলা ফরিদ আমার মেয়েটাকে যখন স্কুল থেকে নিয়ে আসতাম তখন প্রায় সে মিস্টির দোকানের দিকে তাকিয়ে থাকতো।প্রতিদিন আমরা মিস্টির দোকানে যেয়ে একসাথে চমচম খেতাম।ওর জন্য প্রতিরাতে চমচম কিনে আনতাম।ওর মা ঘুমায় থাকতো,তখন আমি ওকে কোলে করে নিয়ে বারান্দায় ঘুরতাম আর মিস্টি ভেঙ্গে ভেঙ্গে মুখে দিতাম।ও আমার কোলেই খেতে খেতে ঘুমায় পড়তো।আজকে আমার এই মামুনীটা এভাবে হাসপাতালে শুয়ে আছে আর আমি ওর জন্য কিছু করতে পারছিনা।" ফরিদ সাহেব মাথা নিচু করে খালুজানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিইয়ে বললো, "কাইন্দেন না।আমাগো মাইয়ার কিছু হইবোনা।"

আমি এই দুই অশ্রসজল পিতার ভালোবাসার দৃশ্য কিছুক্ষণ দেখলাম।কিছু সময় মানুষ অনুভূতিহীন হয়ে যায়।আমারো ঠিক এই মুহূর্তে এমনটাই মনে হচ্ছিলো।কত কথা মনে পড়ে গেলো।আমার এস.এস.সি,এইচ.এস.সি পরীক্ষার সময় রিমি প্রতিদিন বাসায় এসে এটা-ওটা রান্না করতো।আমাকে বলতো, "আমার ভাইয়া হলো সবসময় ফাস্ট।তাই এখন পরীক্ষার জন্য ওর খাবারও হবে ফাস্টক্লাস।" আমি এসব ভাবতে ভাবতে মনে মনে বললাম , "বোনরে আমি কোনদিন ফাস্ট হইতে পারিনাই।কিন্তু তুই সবসময় বোন হিসেবে আমার কাছে ফাস্ট ছিলি"।

আরেকবার চোখে পানি মুছতে মুছতে খালার চিৎকার শুনতে পারলাম।আমি হুড়মুড় করে কেবিনের দিকে দৌড় দিলাম।দেখি রিমির শরীর কেমন কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে।হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।ডাক্তার ডেকে আনা হলো।রিমির জামাই আফসার সাহেব ছুটাছুটি করতে থাকলেন।ডাক্তার সবাইকে রুম থেকে বাহিরে যেতে বললে আমরা কেবিনের বাহিরে জমায়েত হলাম।আমার খালা অঝোর ধারায় তখন কাঁদছে। "আমার মেয়েটার এমন সর্বনাশ হয়ে গেলো আমরা কিচ্ছু করতে পারলাম না।কেমন ছেলের কাছে বিয়ে দিলাম।আজকে বিয়ে বাঁচাতে মেয়েটাকে মনে হয় মেরেই ফেললাম।"...খালার এইসব কথা শুনে রিমির জামাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।আমি উনাকে যেয়ে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে লাগলাম, "বউ বলে কি রিমির সাথে যা ইচ্ছা করার অনুমতি পায়া গেছেন।ওরে মানুষ মনে হয়না?নিজের বাচ্চারে এভাবে মারতে ঘৃনা হলোনা?" আমি এই কথা বলে সোজা হাসপাতালের বাহিরে চলে আসলাম।আমার কিচ্ছু তখন ভালো লাগছিলোনা।কি অসহ্য এই মানব জীবন।আমরা মানুষগুলো দিন দিন কেমন যেন অমানুষ হয়ে যাচ্ছি।আজকে রিমির সাথে যা হয়েছে,সামাজিকতার দায়ে না জানি আর কত মেয়ের সাথে এমন হয়ে চলছে প্রতিদিন।

রাত আটটার দিকে রিমির কেবিনে আমরা সবাই।অতিরিক্ত রক্তপাতের জন্য ওর অবস্থা তখন মুমূর্ষ।সেই সময় পান খেতে খেতে আবির্ভাব ঘটে রিমির শ্বাশুরীর।উনি রিমির কপালে হাত দিয়ে বলেন, "এখুন কিমুন আছে মাইয়া?" খালা কটমট চোখে তাকিয়ে বলেন, "আমি যদি আগে জানতাম আপনারা আমার মেয়ের সাথে এই কাজ করবেন তাহলে..." ।রিমির শ্বাশুরী খালার দিকে তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে বলেন, "আমি কি জানতাম আপনার বাসায় আমার পোলা যায়া থাকে?আর মাইয়া তো বড় হইছিলো।তার বুদ্ধি থাকলেইতো পোয়াতি হওয়া লাগতোনা।আমার পোলাটাও যে বেকুব এইটাও খাটি সত্য।" রিমির আসল পিতা ফরিদ সাহেব মহিলার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বললো, "আমার স্যান্ডেলটা কিন্তু চামড়ার না প্লাস্টিকের।মুখে পড়লে দাগ যাইবোনা।আমি যদি বুজতাম আগে,আমার মাইয়ারে বিয়া বইতে দিতামনা।আপনার পোলারে থুতু দিয়া আসতাম।" রিমির শ্বাশুরী এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।তিনি সাথে উঠে উঠে দাঁড়িয়ে গজগজ করতে করতে হাঁটা দিলেন।পিছন থেকে তার ছেলে "আম্মা আম্মা" করে নপুংশকের মত হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গেলো।

রাত্রি নয়টায় রিমির জ্ঞান কিছুটা ফিরে আসে।সে "আব্বু আব্বু" বলে ডাকা শুরু করে।খালুজান রিমির খাটের পাশে বসে শক্ত করে ওর হাত ধরে আছেন যেন কেউ তার মেয়েকে তার থেকে কেঁড়ে নিতে না পারে।রিমি খালুজানের আঙ্গুলগুলো আস্তে আস্তে দুর্বল ভাবে ধরে মৃদু কন্ঠে খালুকে আরো কাছে আসতে বললো।ওর দুর্বল গলার স্বর আমরা ঠিকই শুনতে পাচ্ছিলাম।কেমন যেন তীব্র হয়ে তা কানে বিঁধছে। "আব্বু তুমি যে আমাকে মার থেকে বেশি ভালোবাসো এটা আমি কিন্তু জানি।তোমার মনে আছে আমি যখন ছোট্ট কালে টাইফয়েড জ্বরে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম,তখন তুমি সব কাজ রেখে সারাদিন আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরেছিলে?যে ভালোবাসা তুমি আর আম্মু আমাকে দিছো আমি হাজার জনমেও এর ঋণ শোধ করতে পারবোনা।আমি মারা গেলে তুমি কিন্তু আম্মুর অনেক খেয়াল নিবা।তুমি আর ভাইয়া ছাড়া আম্মুজানের কেউ নাই।আর আব্বু আমার বাচ্চাটা খুব সুন্দর হইতো জানো।ওর তো বয়স দুই মাস হয়ে গেছিলো।আমার মনে হতো,ও হালকা নড়াচড়াও করতো।আমি ওর সাথে প্রতিদিন রাতে কত কথা বলছি।গতরাতে ও আমাকে স্বপ্নে বলছিলো আম্মু আমার হার্ট ধুকধুক করে।তুমি বেশি নড়াচড়া কইরোনা ঘুমের সময়।"

আমার খালাখালু অসহায় চোখে রিমির পাশে বসে তার কথা শুনছিলো।রিমি শ্বাস টেনে টেনে এতগুলো কথা অনেক কষ্ট করে কিভাবে বললো জানিনা।আমি নিজের চোখের পানি আটাকাতে পারছিলাম না।সবাই রিমিকে বলছিলো ও যেন চুপ করে থাকে।ওর কিচ্ছু হবেনা।কিন্তু আমি জানতাম,অনেক আগেই জানতাম এই নোংরা পৃথিবী ওর জন্য না।

আমার জানাটা মিথ্যা ছিলোনা।রাত তিনটায় রিমি মারা যায়।দিনটি ছিলো ১৯শে অক্টোবর,২০০৮।মারা যাওয়ার আগে সে শেষবার আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, "ভাইয়া আমার বাবুর কাছে যাচ্ছিরে"। আমি এখনও রিমিকে অনেক মনে করি।আমার বোনটা কোথায় আছে,কেমন আছে জানিনা।কিন্তু আমি সবসময় প্রার্থনা করি যেন আমার সকল পুণ্য ও আর ওর অনাগত সন্তানটি পায়।ওর স্বামীকে আমরা কখনো ক্ষমা করিনি।অবশ্য সেও রিমিকে কবর দেয়ার পর থেকে কখনো আর আমাদের সামনে মুখ দেখায়নি।শুনেছি ভদ্রলোক(?) এখন সুইডেনে আছে।আরেকটা বিয়ে যে করেছে এটা না বললেও চলে। আর আমার মুনিয়া খালা সারাদিন তার বাসার বারান্দায় বসে থাকেন।কারো সাথে তেমন কথা বলেননা।শুধু আমি বাসায় গেলে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করেন,"তোরা সব এমন কেন?"।এরপর কান্নাকাটি করেন অনেক, যা আমি সহ্য করতে পারিনা বলে নিজেই দুফোঁটা চোখের জল ফেলে বাসা থেকে বের হয়ে আসি।পিছনে শুনতে পাই আমার খালু গম্ভীর কন্ঠে বলতে থাকেন, "কাইদোনা মুনিয়া।আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে"।

[লিখায় বর্ণিত ভ্রুণহত্যার ঘটনাটি কল্পিত নয়।নামগুলো আর কিছু চরিত্র পালটে দিয়েছি।গল্পের রিমি মারা গেলেও বাস্তবের রিমি বেঁচে আছে।কিন্তু যে মানসিক যাতনার সে স্বীকার হয়েছে তাকে বেঁচে থাকা বলে কিনা বলতে পারছিনা।তার গুণধর স্বামীও তাই পার পেয়ে গেছেন এবং আপাতত ইউরোপে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছেন।Abortion এর জন্য আমাদের দেশে অনেক মায়ের মৃত্যু ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।আমার জানামতে ব্যাপারটা খুবই কমন।এই লেখাটা সেই মা আর তাদের অনাগত সন্তানের জন্য।আরো বলে নিচ্ছি গল্পতে বর্ণিত অর্ক আমি নই।অর্ক সেই মানুষটি যার থেকে পুরো ব্যাপারটি জানা গেছে।রিমি ও তার অনাগত সন্তানের জন্য সবাই আশা করি একবারের জন্য হলেও প্রার্থনা করবেন।লেখার সময় আমার নিজের প্রতি বেশ ঘৃণাবোধ হয়েছে।কারণ এই নোংরা সমাজের আমিও এক অংশ।]

কৌতুক পড়ুন আর হাসুন

১.
একজন মানুষকে টেলিগ্রাম করা হলঃ বউ মারা গেছে, কবর দিব নাকি পুড়িয়ে ফেলব ?
সেই মানুষ সাথে সাথে উত্তর পাঠালঃ কোন রিস্ক নেবার দরকার নাই; প্রথমে পোড়ান, তারপর সেই ছাই কবর দিন। ২.
দৌড়ে ডাক্তারের কাছে এসে এক ভদ্র মহিলা জানালেন তার স্বামীর পেটে একটা ইঁদুর ঢুকে গেছে।
ভয় নেই, ডাক্তার অভয় দিলেন।
আপনার স্বামীর মুখের কাছে একটা শুঁটকি নাড়তে থাকুন, ইঁদুর বের হয়ে আসবে।
আমিও এসে যাচ্ছি কিছেক্ষণের মধ্যে।
বাড়ীতে গিয়ে ডাক্তার সাহেব দেখলেন ভদ্রমহিলা তার স্বামীর মুখের সামনে এক বাটি দুধ ধরে চুকচুক করছেন।
কি ব্যাপার ?
ডাক্তার বিরক্ত হয়ে বললেন, ইঁদুর কখনো দুধ খায় ? আপনাকে না শুঁটকি নাড়তে বলেছি।
তা বলেছেন। ভদ্রমহিলার উত্তর, কিন্তু ইঁদুরটা ধরার জন্য যে ওর পেটে আমি বেড়াল ঢুকিয়ে দিয়েছি। আগে তো ওটা বের করি।

ভ্রুণহত্যা, বিড়ালহত্যা কিংবা মধ্যবিত্ত নিতিদিন ।। অর্ক

তন্দ্রার মনযোগ ভাঙে দূরের একটি ট্রাকের গর্জনে। সে মৃদু আলোর দিকে তাকায়, খানিকটা দূরে, ট্রাকের আলোয় রাস্তার মাঝখানে শুয়ে থাকা একটি বিড়াল স্পষ্ট হয়। সম্ভবত প্রচণ্ড গরমের কারণেই বিড়ালটি এমনভাবে রাস্তায় বসে আছে একটু খোলা হাওয়ায় শীতল হবে বলে। বিড়ালটিকে তন্দ্রার আদর করতে ইচ্ছে করে, ভাবতে ভাবতে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে আসা দূরের ট্রাকটি মুহূর্তেই বিড়ালটিকে চাকায় পিষ্ট করে আঁধার করে দিয়ে যায়। ল্যাম্পপোস্টের নিচে পড়ে থাকে ২৫০ ভোল্ট বাতির মৃদু আলো। বিড়ালটির মৃত্যু তন্দ্রার ভারাক্রান্ত মনে একটু বড়সড় ধাক্কা দেয়, একি তবে বড় কোন দুর্ঘটনার আভাস।সুপ্ত’র সঙ্গে তন্দ্রার প্রেম করে বিয়ে হয়নি। ওদের বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিকভাবেই তবে বিয়ের আগেই তারা একে অপরকে দেখেছিল কয়েকবার। কলেজ ক্যাম্পাসে দু’জনের প্রথম কথা হয়। লেকের ধারে বসে দীর্ঘক্ষণ নিরবতা শেষে তন্দ্রার হাতে সুপ্তর স্পর্শ যেনো একরাশ কথার সজীবতা দিয়ে যায়। তারপর এই সংসার; বিয়ের সময় অবশ্য তার দু’একজন বিবাহিত বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছিল দেখিস, পুরুষ মানুষের মন একটু বুঝে শুনে চলিস, সবকথা পুরুষকে বলতে নেই, সবকথা পুরুষের ধাতে সয় না। কথাটি তন্দ্রার মূর্খ সংস্কৃতি মনে হয়, সবকথাই যদি বলা না যায় তবে আর দুয়ের বন্ধন কেন!
ভাবতে ভাবতে রাত্রি দ্বি-প্রহর অতিক্রান্ত হয়েছে, তন্দ্রার চোখে ঘুম নেই, ঘুম আসছেও না। ফলে দোতলার উত্তর দিকের জানালা খুলে দিয়ে সে বড় রাস্তার মৃদু আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এ সময়ও হঠাৎ হঠাৎ মৃদু আলোয় মানুষের আসা-যাওয়া প্রত্যক্ষ হয় আবার কখনও কখনও মালবাহী দু’একটি ট্রাকের গর্জন মনযোগ ভাঙে। এই তো ক্ষাণিক আগে রাস্তার একটি বিড়ালকে চাপা দিয়ে গেছে একটি ট্রাক। ট্রাকের ড্রাইভারটি নিশ্চয়ই একজন মানুষ কিন্তু কেমন মানুষ। এরকম ফাঁকা রাস্তায় কেউ এভাবে বিড়ালটিকে হত্যা করতে পারে, নিজের কাছেই প্রশ্ন করে তন্দ্রা।
সুপ্ত সকালবেলা নাস্তা করে বেরিয়ে গেছে অফিসে, এখনও ফেরেনি। সবেমাত্র তিন-চার মাস অতিক্রান্ত হয়েছে ওদের বিয়েরকাল। এখনি সুপ্তর মন বাইরে চলে গেছে, খুব সাধারণ একজন মেয়ের মতো সেও এইকথা ভাবে। অথচ জীবনটাকে খুব সহজ করে নিয়েছিল সে নিজের মতো। সারাটা জীবন কি তবে এভাবেই কাটাতে হবে, খুব আফসোস হয় তন্দ্রার। তার বিবাহিত বান্ধবীদের কথা মনে পড়ে। ওদের কারও কারও বিয়ের বয়স তিন-চার বছর পেরিয়ে গেছে তবু ওদের স্বামী সম্পর্কে মধুর কথা শোনে নিজেকে দুর্ভাগ্যবতী মনে হয়। তার কষ্টটা বাইরে প্রকাশ করার মতো নয় নিজে কাছে সওয়া ছাড়া। কাকে বলবে সে, সেই একটি ঘটনাই তাকে বারবার অবদমিত করে রাখে। কেন সে এমনটি করেছিল তার আজ কোন যুক্তি খুঁজে পায় না। আজ তো জীবনের মানেই অন্যরকম বোধ হচ্ছে। নিজের কাছেই নিজেকে আরও বেশি অপরাধী মনে হয়। তার কিবা দোষ ওটা তো বয়সজনিত ঘটনা, তাছাড়া সে নিজেও বুঝতে পারেনি কিভাবে ওটা ঘটেছিল। আজ বুঝে, ওরকম আবেগ ও বিশ্বাস কখনও কখনও ভাল নয়। পুরনো স্মৃতি তাকে ভারাক্রান্ত করে, কখন যে অতীতমন্থনে ডুবে যায় তার মন সে নিজেও জানে না। একটি মুখোশ তার দিকে স্পষ্ট হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। সে রাগে, দুঃখে মনে মনে ভাবে মুহূর্তেই আগুন জ্বালিয়ে দেবে মুখোশটির শরীরে, কেন ওভাবে তাকে প্ররোচিত করেছিল।
ক্রমশ মুখোশটি অস্পষ্ট হতে হতে আবার ভেসে ওঠে বান্ধবীদের মুখ। আজ তাদের কথাই সত্যি মনে হয় নইলে সেই ঘটনাটি শোনার পর থেকে সুপ্ত এত মনমরা হয়ে আছে কেন। তন্দ্রার চোখে ঘুম এসে গিয়েছিল, আধোঘুমের লেশলাগা চোখেই সে রাস্তার দিকে তাকায় এবং মুহূর্তেই তন্দ্রালু চোখ ভেঙে দিব্যজগতে ফিরে আসে সে। সুপ্তর আগমন দৃশ্যটি আজ তার কাছে অন্যরকম মনে হয়। সুপ্ত কি আজ মাতাল হয়ে ঘরে ফিরছে। সাধারণত এ অবস্থায় পুরুষরা মদটদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরে। কলিংবেল বেজে ওঠার আগেই সে নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেয়, স্বচ্ছ হয়ে ওঠে সুপ্তর মুখ; কান্ত, তন্দ্রালু আর হাজার প্রশ্নের বাণ যেন চোখ বেয়ে নেমে আসে তন্দ্রার দিকে। তার ভীত শরীর হাল্কা গরম আর ভয়ার্ত প্রতিবেশে ঘামতে শুরু করেছে। সুপ্ত কোন কথা না বলে ভেতরে প্রবেশ করে, দরজা বন্ধ করে পেছনে পেছনে দোতলায় ওঠে তন্দ্রা। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে কোট-টাই খুলে সুপ্ত। তন্দ্রার ইচ্ছা হয়, প্রতিদিনের মতো আজো কোট-টাই খুলে দিতে কিন্তু সাহস হয় না। কোন এক অক্টোপাস যেন শীতল করে রেখেছে তার হাত-পা-মুখ। হাল্কা ট্রাউজার পরে বাথরুমে প্রবেশ করে সুপ্ত। ক্ষাণিক পর ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসে কিন্তু তার চোখে-মুখে হাল্কা কান্তির ছাপ রয়ে গেছে, আয়নায় চুল আঁচড়িয়ে বিছানার দিকে যায় এমন সময় কথা ফোটে তন্দ্রার।
টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে, খাবে চল।
খাব না, বলেই সুপ্ত বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। তন্দ্রার রাতের খাবার খাওয়া হয়নি, কথা না বাড়িয়ে সেও বিছানায় গা ছেড়ে দেয়, কিছুক্ষণ ভাবে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা? তারপর প্রশ্ন করে...
দুপুরে খেতে এলে না যে?
ইচ্ছে হয়নি, সুপ্তর সহজ উত্তর।
ক’দিন যাবত তুমি এমন করছ, কি এমন দোষ করেছি যে...। তন্দ্রার কথা শেষ হতে না হতেই সুপ্তর স্বাভাবিক ঝাঁঝালো স্বর...
দেখ, এই মাঝরাতে কোন সিনক্রিয়েট করতে চাই না। যা হয়েছে তা মামুলি বিষয়, খুবই স্বাভাবিক কিন্তু চেপে রাখা আরও বেশি অস্বাভাবিক। আমাকে তাই করতে হচ্ছে, এরকম বিপাকে পড়তে হবে কোনদিন ভাবিনি আমি। এত রাতে রুমে বাতি জ্বালানো থাকলে, বাবা-মা চলে আসতে পারেন। বাতিটা নিভিয়ে দয়া করে একটু শান্তিতে ঘুমোতে দাও। তন্দ্রা আর কথা বাড়ায় না, ধীরে ধীরে ওঠে বাতিটা নিভিয়ে দেয়। তারপর শেষ রাত্রে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে দু’জন কেউ জানে না।
মন: মনুষ্য ধারাবাহিকতায় একটি জটিল বিষয়। মিরাকল। সে কখন কোথায়-যে যায় তার কোন ঠিকানা নেই। বিড়াল, বারো ঘরের পাতিলের গন্ধ শুঁকে শেষে উগাড়ের ইঁদুর নিয়ে যার রাত্রিবাস। এখানেই জীবনের সম্পর্ক জড়িত, আমাদের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবখানেই রয়েছে মনোবিত্ত কিংবা নেই। এই আছে ও নেই এর মধ্যে আমাদের আজন্ম বসবাস, এই কথা হয়েছে জানা।
সুপ্ত ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু তন্দ্রার চোখে ঘুম নেই। ঘুম আসছে না। নুসরাত আপুর কথা স্মরণ হয় তার। প্রতিবেশী। বড়বোন শুভ্রার বান্ধবী। বিয়ের কিছুদিন পর হঠাত একদিন বাড়ির বাঁশঝাড়ে গলায় দড়িবেঁধে আত্মহত্যা করলো সে। সবাই অবাক, নুসরাত এরকম করলো কেন? পরে, বাড়ির লোকজনের কানাঘুঁষায় আসল ঘটনাটি জেনেছিল তন্দ্রা। নুসরাত তখন হাইস্কুলের ছাত্রী। ওদের বাড়িতে একজন গৃহশিক্ষক থাকতো। এই শিক্ষকের সাথেই বাড়ির সকলের অজান্তে নুসরাতের প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায়। সম্পর্ক এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, একে-অপরের দেহদানে সঠিক হিসেবের অবকাশ হয়নি কারোর। একসময় অসতর্ক নুসরাত সন্তান সম্ভবা হয়ে যায়। ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে বাড়ির লোকজন জেনে গেলে কোন একরাতে নুসরাত-কে স্থানিয় এক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এবোরশন করিয়ে আনে। ঘটনাটি প্রতিবেশী কেউ বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির লোকজন ওই গৃহশিক্ষক-কে বাড়ি থেকে বিদেয় করে দেয়।
তার বছর পাঁচেকের মধ্যেই বিয়ে হয় নুসরাতের। বিয়েরাতেই বরের কাছে ঘটনাটি জানিয়ে দিয়েছিল নুসরাত। ঘটনাটি জানার পর ওর বর আর তাকে বউ হিসেবে রাখতে চায়নি। ফিরতি নাইয়রের নামে নুসরাত-কে বাড়ি রেখে গিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয় ওর বর। অসহায় নুসরাত ভেবে কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে শেষমেষ গলায় দড়ি বেধে আত্মহত্যা করে।
শুভ্রাকে মানুষ বলে মনে হয় না তার। ওইরকম সময়েই তো অহনের সাথে তন্দ্রার অনেকটা প্রেমের মতোই ঘটনাটি ঘটেছিল। অহন শুভ্রার ভাসুরের ছেলে। সুদর্শন যুবক। ওইরাতের ঘটনাটি মনে পড়ে তন্দ্রার। শুভ্রার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। রাতে তন্দ্রা আর অহন একসাথে ছিল। ছেলেটা খুব পাগল, অস্থির আর উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল। তন্দ্রা নিজেও খুব সম্মোহিত আর চড়ম লোভী হয়ে ওঠেছিল সে রাতে। ভাবতে ভাবতে খুবই লজ্জাক্রান্ত হয় তন্দ্রা। ঘুমন্ত স্বামীকে পাশে রেখে এসব ভাবতে ভালো লাগে না তার। তাছাড়া তার চিন্তা ঘুমন্ত সুপ্ত আবার টের পেয়ে যাচ্ছে নাতো! সে রাতের নিজস্ব আলোয় সুপ্তর দিকে তাকায়। সুপ্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। ফ্যানের হালকা বাতাসেও সুপ্তর শরীর মৃদু ঘর্মাক্ত। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু জলের স্থির সন্তরণ। জনশ্রুতির কথাটি মনে হয় তার। যে পুরুষের নাক বেশি ঘামে সে পুরুষ খুব বউ-আদরের হয়। সুপ্তকে আদর করতে ইচ্ছে হয় তার কিন্তু পারে না। ঘুমন্ত স্বামীকে আদর করে দিতে কেমন যেন গর্হিত অপরাধবোধ আটকে রাখে তাকে। মনে ভাবে, সুপ্তর মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে ওঠলে ওকে ইচ্ছেমতো আদর করে প্রমাণ করবে জনশ্রুতির কথাটি আসলেই ঠিক।
অন্ধকারের আলোতেই মুখোশটির অস্তিত্ব টের পায় তন্দ্রা। মুখোশটি তার চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে আর প্ররোচিত করতে থাকে। পালিয়ে যা তন্দ্রা, পালিয়ে যা, দূরে কোথাও। নইলে শান্তি পাবি না। পালাবার এখনই সময়। তন্দ্রা ভাবে সত্যি সত্যি সে পালিয়ে যাবে কিনা। গেলে কেমন হয়? একেবারে অজানায়, দূরে, অনেক দূরে। নুসরাতের কথা মনে হয় তন্দ্রার। তারমতো সেও কী দূরে কোথাও গিয়ে আত্মহত্যা করবে নাকি। আবার ভাবে আত্মহত্যা করবে কেন? সে সুপ্তকে ভালোবাসে আর সুপ্তও তাকে, তাই তার আত্মহত্যা করা ঠিক হবে না। অস্থির হয়ে ওঠে তন্দ্রা, তার শরীরও ঘামতে থাকে। মুহূর্তেই সে মুখোশটিকে ধরে ফেলতে চায় কিন্তু ধরতে পারে না। অন্ধকারেই মুখোশটি একবার তার পাশে আসে... একবার সোফায় গিয়ে বসে... একবার সুপ্তর কম্পিউটার টেবিলে গিয়ে বসে... একবার জানালার পাশে দাঁড়ায়... একবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়... মুখোশটিকে সে যেন কিছুতেই ধরতে পারে না। ঘর্মাক্ত তন্দ্রা বিছানা ছেড়ে টেবিলের দিকে যায়। জগভর্তি পানি থেকে একগ্লাস পানি খায় সে। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। নির্জন রাস্তায় স্ট্রিট লাইটের ২৫০ ভোল্ট বাতির মৃদু আলো আর ট্রাকচাপায় থেতলে যাওয়া বিড়ালটিকে দেখতে থাকে সে।
সকালে নাস্তার টেবিলে দুজনেই চুপচাপ থাকে যেন একে-অপরকে কেউ চেনে না। অন্যান্য দিন তন্দ্রা নিজ হাতে ব্রেড-এ জেলি মেখে খেতে দিয়েছে কিন্তু আজ দিচ্ছে না, নিজেও নিচ্ছে না। হঠাত সুপ্ত উত্তেজিত হয়ে কোনো সিনক্রিয়েট করে ফেলে সেই ভয়। তন্দ্রা কী রাতে ঘুমিয়েছিল? বোধ হয় না, ওর চোখ দেখে বোঝা যায়। হয়তবা রাতে কেঁদেও ছিল। নাস্তা সেরে সুপ্ত রমে ফিরে অফিস যাবে বলে প্রস্তুত হয়েছে, এমন সময় তন্দ্রা এসে সামনে দাঁড়ায়।
তোমার সাথে কথা আছে।
বল, সুপ্ত’র উত্তর।
আমি বাড়ি যাব।
এবার সুপ্ত মনযোগী ভঙ্গিতে আরেকটু সামনে এগিয়ে তন্দ্রার মুখোমুখি হয়।
এখানে কী খারাপ লাগছে? হেভ য়্যু ফিল বোরিং হিয়ার!
এমন একটি সিরিয়াস বিষয়ে সুপ্ত’র হেয়ালিপনার অর্থ তন্দ্রা বুঝতে পারে না, সে উত্তরহীন তাকায়।
ওকে, ওকে ইফ য়্যু ফিল বোরিং অর ডিজগাস্টিং দেন য়্যু কেন গো বাট নট উইদাউট মি। আই ওয়ান্ট টু গো উইথ য়্যু ফর রিচড্ এন্ড এ পিচফুল এরেঞ্জমেন্ট ফর য়্যু দেয়ার। হেভ য়্যু আন্ডারস্ট্যান্ড ডেয়ার অনারেবল মেডাম। এই বলে তন্দ্রার মুখটা দু’হাতে একটু উঁচিয়ে ধরে নিজের খুব কাছাকাছি এনে সম্মোহনের মতো তাকায় সুপ্ত। তন্দ্রা কিছু বুঝতে পারে না, সে সুপ্তর দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রথম দিনের মতো, মহাজাগতিক জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে। ফাঁকে, কখন যে সুপ্ত তার ওষ্ঠে একটা চুম্বন দৃশ্য এঁকে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়, ঠাহর হয় না তন্দ্রার।
বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে গ্রামের মেয়েরা যে রকম বৃষ্টিতে ভিজে সজীবতা উপভোগ করে, তন্দ্রাও সেই সজীবতা ফিরে পায়। বুঝতে পারে, কী ভুলটাই না সে করতে বসেছিল। মতিভ্রমে মানুষের এরকমই হয়। তার মুখে তখনও ভাষা ফুটেনি, ইচ্ছে করে দৌড়ে গিয়ে সুপ্তকেও সে একটি চুম্বন করে আসে কিন্তু পারে না, প্রথম দিনের মতো বহুকালের অচেনা বোধ কাজ করে। আজন্ম নারীজনমের লজ্জাবোধ তাকে আটকে রাখে।
অফিসে ফিরেই সুপ্ত নিশ্চিত টেলিফোন করবে, তন্দ্রা জানে। তাই রুমেই থাকে, এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে, বই পড়ে, টেলিভিশন অন করে কিন্তু ভালো লাগে না, সিডি প্লেয়ার অন করে লোপামুদ্রা মিত্রের গান শোনে ‘ছেলেবেলার বৃষ্টি মানেই আকাশজোড়া...’ গরম পড়েছে তবু এই গান খারাপ লাগে না; স্মৃতিমন্থন হয়। ফ্যানটা ছেড়ে সে উত্তরের জানালাটা পুনরায় খুলে দেয়। খুলতে খুলতে মনে পড়ে বড় রাস্তায় গতকাল রাতে একটি বিড়াল ট্রাকচাপা পড়েছিল। তার থেতলে যাওয়া চিহ্ন এখনও স্পস্ট হয়। বিড়ালটির কোনো দোষ ছিল না, সেই ভ্রুণটিরও... পুনরায় তার সেই ছায়াটির কথা মনে হয় কিন্তু দিনের শ্বেতশুভ্র আলোয় তাকে দেখতে পায় না সে। তন্দ্রা জানে এবার যদি তাকে সামনে পায় সে নিশ্চিত গলাটিপে হত্যা করবে।

Tuesday, March 22, 2011

পাপ

শালা, সাইকোলজিস্ট? মেয়েদের সাথে ফস্টিনস্টি করস, মেরে হাড়গোড় ভেঙে চুরমার করে দেবো। পঙ্গু হতে না চাইলে বল, অ্যাডভোকেট সাহেবের মেয়ে কোথায়?’-সাজ্জাদের নিতম্বে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সজোরে একটা লাথি মেরে আক্কেলপুর থানার ওসি মামুনের খেদোক্তি। ওসি’র লাথিতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে সাজ্জাদ। আরেকটা লাথি পড়ার আগেই সাজ্জাদ ওসি সাহেবকে বলে উঠে, ‘আল্লাহ’র কসম, বিশ্বাস করেন, ফারজানা কোথায় আমি জানি না, ও আমার বন্ধু ছিল। আমি তাকে আপন বোনের মতো ভালোবেসেছি। ওর মাও আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতেন। আমি তাকে অপহরণ করবো কেন?’ ওসি আরো রেগে যায়, ‘একদম মিথ্যা বলবে না, ঠিকঠাক মতো স্বীকার কর তুই-ই ফারজানাকে অপহরণ করেছিস। নইলে স্ক্রু দিয়ে হাতের নখ উপড়ে ফেলবো, কারেন্টের শক দিলে ঠিকই গরগর কইরা স্বীকার করবি।’ বিরক্তিকর ভঙ্গিতে ওসি বলেন, ‘শালার সব কেসই এক, সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠে না। কিন্তু পুলিশ চাইলে আঙ্গুল যে কত বাঁকা করতে পারে তা ক্রিমিনালরা প্রথমে বুঝে না। আঙ্গুল বাঁকা করার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাবি শালা।’ এভাবে সাজ্জাদকে ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে ওসি। কিন্তু তার এক কথা, ‘ফারজানাকে আমি অপহরণ করিনি, সে কোথায় আমি জানি না।’ সাজ্জাদকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে অ্যাডভোকেট কাদেরের কন্যা ফারজানাকে অপহরণ করেছে। সাধারণত রিমান্ডে থানার সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তারা আসামিকে জেরা করে তথ্য বের করেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট সাহেব মানী মানুষ, তার মেয়ে অপহৃত হয়েছে, তিনি নিজেই বাদি হয়ে মামলা করেছেন বলেই কোন এসআইকে না দিয়ে রিমান্ডের দায়িত্বটি ওসি সাহেব নিজেই নিয়েছেন। প্রথম দফার তিনদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত, এই তিনদিনে তথ্য বের করা না গেলে আরো রিমান্ড চাওয়া হবে। এই কেসটা নিজের পেশাগত জীবনের অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন ওসি মামুন। কারণ, ব্যাপারটি একটু ব্যতিক্রম। এর আগে এরকম অপহরণের ঘটনায় সরাসরি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। ভিকটিমকে উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটনার মূলহোতার কোন সহযোগীকে গ্রেফতার করতে পারলে তাকে রিমান্ডে নেয়া হত। তার কাছ থেকে তথ্য বের করে সেই সূত্র ধরে ভিকটিমকে উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। ওই সময়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও প্রধান আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। এখন যার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ সেই ব্যক্তিকে আগেই গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। অবশ্য মাঝে মাঝে ওসি নিজেও সন্দিহান হয়ে পড়ে যে, এই ছেলে ফারজানাকে অপহরণ করলে সে তো মেয়েটিকে নিয়ে কোন নিরাপদ অবস্থানে চলে যেত। কিন্তু পুলিশ তাকে শহরের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। অ্যাডভোকেট সাহেবের কন্যা ‘অপহৃত’ হওয়ার বিষয়টি ওসি মামুনের কাছেই রহস্যময় মনে হচ্ছে! সাজ্জাদের মা থানা হাজতে এসে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। ওসি সাহেবের হাতে-পায়ে ধরে বলেন, ‘আমার ছেলে জীবনে একটি শব্দও মিথ্যা বলেনি, কোন মানুষকে কষ্ট দিতে চায়নি। আমার গুণী ছেলে, সে কখনো এই কাজ করেনি। পরিবারের সবাইকে সে সদুপদেশ দেয়, কত ভালো ছেলে। ছোট থেকেই সে মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন। আমার নিষ্পাপ ছেলেকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়ার বিচার আল্লাহ করবেন।’ সাজ্জাদের মায়ের কান্না কিংবা অভিশাপ পুলিশের কাছে অর্থহীন। তাদের কাছে ‘আসামির মায়ের কান্না’ কেবল কিছু অপ্রাসঙ্গিক শব্দ। কারো কান্না কিংবা অভিশাপে তাদের কিছু যায় আসে না। কারণ, পুলিশের পেশাগত জীবনে এ রকম ব্যাপার প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। কোন পুরুষ গ্রেফতার হলেই প্রথমে দৌড়ে থানায় চলে আসেন তার মমতাময়ী মা। ছেলে দোষী না নির্দোষ তা ভাবে না, কান্না জুড়ে দিয়ে ছেলের মুক্তির জন্য পুলিশের হাত-পা ধরে। আসামি গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার অধিকার যে পুলিশের নাই তা মায়েরা বুঝে না, অথবা বুঝেও মমতাময়ী তার মায়াকান্না ধরে রাখতে পারেনা। পুলিশ নির্দয়ভাবে আসামির মাকেও অনেক সময় ভর্ৎসনা করে। আমাদের দেশের পুলিশ বোধহয় কোনোদিনও সভ্য হবে না। সাজ্জাদ মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা ছেলে, যে এখন ‘কমপ্লেক্স অব হিউম্যান সাইকোলজি’ নিয়ে এমফিল করছে। তার বিরুদ্ধে এখনও কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি অথচ পুলিশ তুই-থুকরি আচরণ করছে, রিমান্ডে নিয়ে পাছায় লাথি দিচ্ছে। পুলিশ যে জনগণের সেবক এবং সেবাই যে পুলিশের ধর্ম-তা যেন তাদের মনেই থাকে না। সেবকের সম্বোধন যে ‘শালা’ নয়, ‘স্যার’ এ শিক্ষা আমাদের পুলিশ কখনোই পায়নি। তাই তাদের কাছে গড়পড়তা সবাই ‘আসামি’ এবং সবাইকে ‘শালা’ সম্বোধন! দুই দফায় ছয় দিনের রিমান্ডে সাজ্জাদের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। এতে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে মারাত্মক জখম হয়েছে। তার মেরুদণ্ডে আঘাত লেগেছে। বেতের আঘাত ও লাথিতে হাঁটু-কনুই ফুলে গেছে। শিক্ষিত মানুষ, বিনাকারণে পুলিশের হাতে এভাবে নির্যাতিত হলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারত কিন্তু সাজ্জাদ মনোবিজ্ঞানের ছাত্র। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত রাখার পাঠ তাকে মনোবিজ্ঞান দিয়েছে। দুই দফা রিমান্ডে নিয়েও ফারজানার ‘অপহরণ’ রহস্যের কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তার শরীরে শক্তি নেই, এখন আর রিমান্ডেও নেয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সাজ্জাদকে নিয়ে উল্টো বেকায়দার পড়ে তারা। শেষমেষ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হল। রিমান্ডে পাওয়া কিছু তথ্য পুলিশ আদালতে উপস্থাপন করেছে। সাজ্জাদ পুলিশকে জানিয়েছে : অ্যাডভোকেট কাদেরের কন্যা ফারজানা তার বন্ধু। ইন্টারমিডিয়েটে তারা একই সাথে পড়েছে। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি ফারজানার মাও জানতেন। ওর মা সাজ্জাদকে ছেলের মতো স্নেহ করেন, বাড়িতে বেড়াতে আসলে নিজের হাতে খাইয়ে দেন। ফারজানার জীবনে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে যে ছেলেটিকে জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে ভালোবেসেছিল, যাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিল সেই ছেলেটি কথা রাখেনি। ফারজানাকে অকূলে ভাসিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ার, প্রিয় মানুষটির কথা না রাখার এ কষ্টের দহনে দগ্ধ হতে হতে ফারজানা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, বিষয়টি সে নিজেই জানে না। অথচ তার আচার-আচরণে তা স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। মনোরোগের প্রথম স্তর হলো ‘সিজোফ্রেনিয়া’। কিন্তু ফারজানার মনোরোগ এখন চরম স্তরে, এর নাম ‘সাইকৌসিস’, যার অর্থ-সাংঘাতিকরূপে অস্বাভাবিক বা রুগ্ন মানসিক অবস্থা, মনোবৈকল্য। এ ধরনের রোগীর আত্মহত্যা করার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বন্ধুর এ চরম মানসিক অস্থিরতার বিষয়টি সাজ্জাদকে ভাবিয়ে তুলে, সে প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিতে সিদ্ধান্ত নেয় ফারজানাকে বাঁচাতে হবে। কারণ, বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়, বন্ধুর বিপদের দিনে এগিয়ে আসা বন্ধুর কর্তব্য। সাজ্জাদ পুলিশকে আরো জানিয়েছে, ফারজানার সাথে ফোনে দুয়েকদিন কথা বলার পর তার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে, মেয়েটি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। সাইকোলজিস্টরা কারো সাথে দুয়েকবার কথা বললেই তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পান। তরুণ সাইকোলজিস্ট হিসেবে এসব ব্যাপারে সাজ্জাদের আগ্রহ একটু বেশিই। পুরোপুরি পেশাজীবী হওয়ার আগে ইন্টার্নি করার মতোই কারো ভেতরে মনোরোগের লক্ষণ দেখলেই সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দেয়ার চেষ্টা করে সাজ্জাদ। ফারজানার কথাবার্তায় বেশ অসঙ্গতিও খুঁজে পাওয়া গেল। একদিন জানালো তার কাছে যে মোবাইল ফোন আছে তা তার ভাইয়া জানেন না, চুরি করে ফোন ব্যবহার করেন। আরেকদিন ফোন ব্যস্ত পেয়ে কে ফোন করেছে জিজ্ঞ্যেস করাতে বলল, ভাইয়া ফোন করেছে! এ রকম আরো অনেক ধরনের অসঙ্গতি তার আচার-আচরণে সাজ্জাদের কাছে ধরা পড়ে। মনোবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী, ‘সাইকৌসিস’ আক্রান্তকে স্বাভাবিক করার জন্য তার প্রতি বিপরীতে লিঙ্গের কাউকে গভীর ভালোবাসা দেখাতে হবে, তার সাথে এমন আচরণ করতে হবে যাতে সে মনে করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার একটা সুন্দর অর্থ আছে। তার রূপ-গুণের প্রশংসা করতে হবে এবং কোন ব্যাপারে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। ঠিক সেই সূত্র অনুযায়ীই কাজ শুরু করে সাজ্জাদ, নানাভাবে ট্রিটমেন্ট দিতে থাকে ফারজানাকে। এর মধ্যে এক পর্যায়ে সাজ্জাদের ভালোবাসা পেয়ে ফারজানার ভেতরে এক ধরনের শক্তি তৈরি হয়, সে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। একদিন ফারজানা স্বীকারও করে, ‘মনে হয় আমি তোমার জন্যই বেঁচে আছি।’ কিন্তু এরপর কী হয়েছে সাজ্জাদ কিছুই জানে না। হঠাৎ ফারজানার উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তার কাছেও রহস্যজনক। তবে পুলিশকে মনোবিজ্ঞানের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা দিয়ে সাজ্জাদ দাবি করেছে, ‘ফারজানা সম্ভবত সাইকৌসিস থেকে মুক্ত হয়ে গেছে। এ থেকে মুক্ত হয়ে যে কেউ নিজের ভেতরের শক্তি সম্পর্কে অবগত হয়। নিজের জীবনের জন্য সর্বোচ্চ ভালো বিষয়টি খুঁজে নিতে পারে, তার ভেতরে যৌক্তিকতা প্রাধান্য পায়, জীবনদর্শন-জীবনবোধ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বাড়ে। ফারজানা সাইকৌসিস মুক্ত হয়ে বুঝতে পেরেছে তার জীবনের জন্য এই মুহূর্তের করণীয় কি। হয়তো সে কোন পুরুষকে নীরবে বিয়ে করেছে, বিষয়টি বাবা-মাকে জানিয়ে নতুন কোন ঝামেলা পাকাতে চায়নি। সাজ্জাদের সন্দেহ, ফারজানার বেশ কয়েকজন বিবাহযোগ্য বন্ধু ছিল, তাদের কাউকেই সে নীরবে বিয়ে করেছে।’-পুলিশের এই বক্তব্যকে আসামির জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি আদালত, কারণ ভিকটিম উদ্ধার হয়নি। এমনকি ‘অপহরণ’ রহস্যও ভেদ করা যায়নি। এ অবস্থায় আদালতও ফারজানার অবস্থান নিয়ে রহস্যে পড়ে যায়। শুনানি শেষে ‘ফারজানা উদ্ধার না হওয়া এবং তার সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত সাজ্জাদকে কারাগারে বন্দি রাখা হোক’ মর্মে অন্তবর্তীকালীন রায় দেয় আদালত। এরপর দুই বছর ধরে ফারজানার কোন সন্ধান মিলেনি। এই পুরোটা সময় সাজ্জাদ কারাগারে। এর মধ্যে তার মা বেশ কয়েকবার আদালতে জামিন নিতে এসেছিলেন। কিন্তু আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে দিয়েছে। এর পেছনে অবশ্য ফারজানার বাবার প্রভাব কাজ করেছে। তিনি নিজেও আইনজীবী, মামলার শুনানিতে আইনজীবী বন্ধুদের সবাইকে আদালতের দাঁড় করিয়ে দেন। ফলে প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতে পেরে উঠেনি। সাজ্জাদের মা ছেলের জন্য গভীর বেদনার কান্না বুকে চেপে আদালত ত্যাগ করেন, ফারজানার বাবার প্রভাবের কাছে তিনি অসহায়! সমাজের কিছু মানুষ এভাবে অযৌক্তিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে অন্যকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, তারা অপরের কষ্ট অনুভব করতে পারে না। পুরো ব্যাপারটির সাথে ফারজানার মায়ের কোন ভূমিকা নেই, যিনি সাজ্জাদকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন, আদর করে বুকে জড়িয়ে নিতেন, তিনিও সম্ভবত সাজ্জাদকে ভুল বুঝেছেন, প্রতিপক্ষ ভাবছেন-এ কারণে তাকে একবার দেখতেও আসেন নি। কারাগারে সাজ্জাদকে তাও বেশ পীড়া দেয়। আত্মপ্রয়োজনে মানুষ আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যেতে পরে, এটা এক ধরনের সাইকোলজি। এই ভদ্র মহিলাও সম্ভবত বদলে গেছেন, তিনি একজন মা হয়েও আরেকজন মায়ের হৃদয়ের কষ্ট অনুভব করতে পারেন নি। তিনি একবারও অ্যাডভোকেট কাদেরকে বলেন নি, ‘ছেলেটা তো ভালো ছিল, সে হয়তো এ কাজ করেনি।’ তার এটা বলার দরকার ছিল। কারণ, ভদ্র মহিলা জানতেন সাজ্জাদ ছিল ফারজানার ভালো বন্ধু, তাকে সবসময় সদুপদেশ দিয়েছে। ফারজানাকে বিয়ে করার কোন মানসিকতা তার ছিল না। সুতরাং যার ভেতরে এই ধরনের মানসিকতা নেই সে কোন কারণে, কোন যুক্তিতে ফারজানাকে অপহরণ করবে? এ বিষয়টি শিক্ষিত মহিলা হিসেবে তার ভেতরে স্পষ্ট থাকারই কথা। অথচ, সাজ্জাদকে বিনা কারণে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে জেনেও তিনি মুখ খুলেন নি। কিছু পরিস্থিতিতে প্রকৃতি মানুষকে বোবা বানিয়ে দেয়! অবশেষে সাজ্জাদের মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাই সত্য হয়েছে, ফারজানাকে কেউ অপরহণ করেনি, সে তার ডাক্তার বন্ধুর সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তাদের সংসারে একটি ফুলও ফুটেছে। বিষয়টি এতদিন গোপন রাখার কারণ হিসেবে ফারজানার যুক্তি হলো, ‘ঘরে বিয়ের প্রস্তাব আসলেই প্রতিবেশী ও পরিচিত কিছু কুচক্রী হীন চরিত্রের মানুষ পাত্রপক্ষের কাছে ফারজানার কুৎসা রটাতো। সবকিছু ঠিকঠাক, পাত্রী পছন্দও হতো কিন্তু কী একটা কারণে পাত্রপক্ষ হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে নিত। আর বিয়ে হতো না। এ কারণে ফারজানা সিদ্ধান্ত নেয়, গোপনে বিয়ে করবে এবং সন্তানের মা না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই জানাবে না।’ সাইকৌসিস থেকে মুক্তির পর যে কেউ নিজের সর্বোচ্চ ভালো দিকটি বেছে নিতে পারে-এ যুক্তিটি ছিল সাজ্জাদের, ফারজানার সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ বহন করে। ফারজানা সংসার করছে, আর তাকে সাইকৌসিস থেকে মুক্তি দেয়ার ‘পাপ’ করে সাজ্জাদ কারাগারে দিন কাটাচ্ছে! মানুষের নিয়তি মাঝে মাঝে এমন বৈপরিত্য হয়, নিয়তির লীলা মানুষ বুঝে উঠতে পারে না। আক্কেলপুর থানার ওসি মামুন বদলি হয়ে গেছেন। তিনিই অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। ফারজানা অপহৃত হয়নি এটা তিনি জানলে সাজ্জাদের ওপর নির্যাতনের জন্য অনুশোচনা করতেন হয়তো। মেয়ে ফিরে আসার পর অ্যাডভোকেট কাদেরের বোধোদয় হলো, তিনি আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানালেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে আসামির উল্টো মানহানি মামলা করার ঝুঁকি থাকে কিন্তু অ্যাডভোকেট সাহেব নিশ্চিত যে সাজ্জাদের মা তা করবেন না। কারণ, মহিলা ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন অ্যাডভোকেট কাদেরের প্রভাব আদালতে অনেক বেশি। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছে সাজ্জাদ মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। এতদিন পর ছেলেকে পেয়ে আবেগে তার মায়ের কণ্ঠ স্তব্ধ। অনেকক্ষণ ধরে দু’জনার কেউই কোন কথা বলতে পারল না। অমাবশ্যার নিকশ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে চারিদিকের পৃথিবী। পাশে বসা মানুষটিকেও দেখা যাচ্ছে না। শব্দহীন-অদৃশ্যভাবে বসে আছে সাজ্জাদ ও তার মা। শেষে নীরবতা ভেঙে মা বললেন, ‘বাছাধন, কী পাপ করেছিলে? কার পাপে, কিসের পাপে তোমাকে এমন কষ্ট পেতে হলো?’ সাজ্জাদ বলল, মা, একজন সাইকোলজিস্ট হিসেবে আমি তাদের মেয়েটাকে ‘সাইকৌসিস’ থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলাম। তার ভাঙা হৃদয়ের কষ্ট মুছে দিয়ে নতুন শক্তিতে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম, কোন অন্যায় করিনি। মনোবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী, ঠিক ওই সময়ে আমি ফারজানাকে ট্রিটমেন্ট না দিলে সে এর কিছুদিনের মধ্যেই জীবন-যন্ত্রণায় নীরবে পুড়তে পুড়তে আত্মহত্যা করে বসতো। কারণ, সে যে বেদনা বয়ে বেড়াত তা শেয়ার করার কেউ ছিল না, কাউকে বুঝাতে পারত না হৃদয়ের যন্ত্রণা-দহন। আমি তার ভেতরে বেঁচে থাকার শক্তি তৈরি করে দিয়েছিলাম। ফারজানাকে ভালোবেসে, সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিয়ে আত্মঘাতী কোন চরম দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করাটা কি আমার পাপ? বলো মা, এটা কি আমার পাপ?-এসব কথা বলতে বলতে সাজ্জাদ ভয়ংকর হয়ে উঠে। তার চোখে-মুখে হিংস্রতা প্রশ্রয় পেতে থাকে, ক্ষোভে কাঁপতে থাকে পুরো শরীর। অন্ধকারের ভেতরেও সাজ্জাদের ক্ষোভের উত্তাপ কতটা প্রবল তা বুঝতে পারেন তার মা। উন্মত্ত সাজ্জাদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মাকে বলে উঠে, ‘রিমান্ডে আমার শরীর ভেঙে গেছে, কারাগারে দুটি বছর আমার জীবন থেকে হারিয়েছে, আমার এমফিল-পিএইচডির স্বপ্নও ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আমি এর প্রতিশোধ নেব।’ অন্ধকারে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে প্রচণ্ড ক্ষিপ্তকণ্ঠে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি খুন করবো মা, আমি তাদের খুন করে ফেলবো!’ ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে সাজ্জাদের মা বলে উঠেন, ‘ওরা তোমার ওপর অন্যায় করেছে, তুমি তাদের ওপর কোন অন্যায় করতে যেও না, বাবা। কারণ, প্রকৃতি অন্যায় সহ্য করে না। ধীরে ধীরে এর প্রতিশোধ নেয়। প্রকৃতি একদিন এর প্রতিশোধ নেবে, প্রকৃতির প্রতিশোধ বড়ই নির্মম!’

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ