যদি প্রশ্ন করা হয় একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটি, নির্দ্বিধায় উত্তর আসবে তরুণ বয়স। আবার তরুণ বয়সে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় হচ্ছে ১৮ বছরের ক্রান্তিকাল। বলা যেতে পারে এটি জীবনের একটি বাউন্ডারি লাইন। এই বাউন্ডারি লাইনকে ঘিরে সকলের মধ্যে কাজ করে ভিন্নরকম চিন্তাভাবনা।
মানুষের জীবনে প্রতিটি বছরকে একেকটি ইনিংস হিসেবে ধরা যাক। আর সেই হিসেবে একটি মানুষের জীবনে ১৮ নং ইনিংস অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সটিকে ধরা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়স। এ সময়টা জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময়। অন্তত কবি সুকান্ত তাই বলে গেছেন। তিনি বলেছেন,
‘আঠারো বছর যে কী দুঃসহ
স্পর্ধার নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’
প্রকৃত অর্থেই এই বয়সটা দুঃসহ এক বয়স। এ বয়সটা দুর্নিবার, দূরন্ত, অদম্য, ঝুঁকি নেওয়ার। এ বয়সে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সকল সাহস প্রকাশ পায়। সব বাঁধা দুই হাতে সরিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সামনে এগোয় তারা। এ সময়েই তারা বড় হয়ে ওঠে। পায় প্রেমে পড়ার সাহস। এই ১৮ তাদের বড় হওয়ার উপলব্ধি দেয়, দেয় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর হিম্মত আর অনুপ্রেরণা। ‘বড়’ হয়েছি’র যাবতীয় অনুভূতি কৈশোরে অংকুরিত হয় যা পূর্ণতা পায় ১৮’তে। কেননা এই বয়সে তারা পায় নাগরিকত্ব আর আইনগত কিছু অধিকার। ফলে অর্জিত হয় সাহসের অসাধ্য সাধন করার ক্ষিপ্রতা। ‘বড়’ হওয়ার কুঠুরিতে প্রবেশের ১৮ এক উন্মুক্ত প্রবেশদ্বার। কেন তারা এমন অনুভূতিতে স্পর্শিত হয়? একজন মানুষ ১৮’তেই পায় নাগরিকত্ব। অর্থাৎ ভোটাধিকার। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ। দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার স্বপ্নীল আমেজে জনপ্রিতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেয়া, সে এক অন্যরকম উত্তেজনা। এই ১৮ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গঠনের হাতিয়ার। এই বয়স কারো কাছে মত প্রকাশের অধিকার। ছোটবেলা থেকে মা বাবার কড়া শাসনে বড় হওয়া কেউ কেউ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই বয়সে পদার্পনের জন্য। ১৮’তে এলেই হবে মানসিকতার মুক্তি। তাই সব ছেলেমেয়ে এই বয়সটির জন্য অপেক্ষা করে। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু ১৮’তে সব অধিকার করায়ত্ত হলেই কি মানসিক গঠন পূর্ণতা পায়? সবাই কি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম?
আইনগত অধিকার
১৮ বছর বয়সের সব থেকে বড় দিক অধিকার প্রাপ্তি। একজন মানুষ হিসেবে। একজন সুনাগরিক হিসেবে যেসব অধিকার রাস্ট্র তাকে দিতে বাধ্য তার সবকিছু প্রাপ্তির খাতায় ধরা দেয় কেবল এই বয়সে উপনীত হবার পর। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার মানসিক জোর ও পরিপার্শ্বিক অবস্থা এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মনের ভেতর ক্রমাম্বয়ে বাসা বাঁধে। কেননা মনে করা হয় এই বয়সের পর মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয় যদি না সে মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ হয়ে থাকে। অধিকারের আরো কিছু দিক হলো, একটি মেয়ে এই বয়সে আইনগতভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ছেলেদের বেলায় যদিও তা ২১ বছর। যেকোনো মানুষের মতামতের গ্রহনযোগ্যতা এই বয়সে আইনসিদ্ধ। এই বয়সের পরই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। বয়স সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি নিষেধ ১৮’র পরই একজন মানুষ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা পায়। কোনো সন্তানের মা বাবা আলাদা বসবাস করলে সন্তান কার কাছে থাকবে, সন্তানই সেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবে যদি তার ১৮ বছর বয়স হয়ে থাকে। এমনকি একা থাকার অনুমতিও মিলবে এই বয়সে। কারও মা-বাবা অথবা উভয়ই মারা গিয়ে থাকলে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যাবতীয় সম্পত্তির দেখভাল বৈধ অভিভাবকের উপর ন্যস্ত থাকলেও ১৮ বছর হওয়ার পর সন্তানই সেই অধিকার প্রাপ্ত হয়। মোট কথা একজন নাগরিক হিসেবে মানুষের পাওনা অধিকারের জানালা এ বয়সে এসেই খুলে যায়। চিন্তা-ভাবনা আর স্বপ্নের পাখিরা ডানা মেলে এ বয়সে। উড়াল দেয় স্বপ্নজগতে। ‘বাঁধা দিলেই বাধবে লড়াই’ এ বয়সে এমন মনোভাব থাকে বলে অভিভাবকদের হতে হয় উদার মানসিকতা ও বোঝার ক্ষমতাসম্পন্ন।
বিশেষজ্ঞের কথা
১৮ বছর বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ডাঃ মোহিত কামাল বলেন, ১৮ বছরের নিচে পর্যন্ত যেকোনো অপরাধ ধরা হয় শিশু অথবা কিশোর অপরাধ হিসেবে। কিন্তু এই বয়স পার হওয়ার পর অপরাধের বিচারে তা সার্বজনীন হয়ে যায়। অর্থাৎ এ বয়সটাকে ধরা হয় প্রাপ্তবয়স্কতার মাপকাঠি। এ বয়সেই একটি মেয়ে চারপাশের পরিবেশকে প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতাসমৃদ্ধ হয় সবচেয়ে বেশি। একটি মেয়ে ১৮’র পরে বিয়ের ব্যাপারে আইনি বাঁধা মুক্ত হয়। এ বয়সের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে তা বাল্য বিবাহ হিসেবে গণ্য হয়। আর এ সময়ের শারীরিক সম্পর্ককে যৌন নিপীড়ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এই বয়সটিই যেকোনো মানুষের মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে। ১৮ বছর বয়সকে মার্জিন এইজ বা বয়সসীমা ধরা হয়ে থাকে। এ বয়স পর্যন্ত মানুষের মানসিক গড়ন থাকে সুপ্ত। ঠিক ঘুমন্ত বাঘের মতো। ১৮’তেই যা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে। ভালোবাসা, আবেগ, রাগ, লজ্জা ইত্যাদি গুণাবলী এই বয়সেই পূর্ণতা পায়। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধির বিষয়টিও এ বয়সে এসে পূর্ণ হয়। স্বাধীনচেতা আর নিজের পরিচয় নিজে নেয়ার অদম্য মানসিকতা গড়ে ওঠে এই বয়সে। সকাল অভিব্যক্তি মাথাচাড়া দিয়ে সরবে প্রকাশ পায়। অনেকের রাগ-ক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে যায়। কেউবা মেজাজের তারতম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। কিন্তু সে যাই করবে সে তাই সঠিক মনে করে। এ বয়সেই বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের মতবিরোধ শুরু হয় মূলত জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্ম ব্যবধানকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বাবা মায়েদের উচিত তাদের সন্তানদের সঠিক গাইড লাইন দেয়া। তবে সেটি প্রশিক্ষকের মতো করে নয় দিতে হবে বন্ধুর মতো করে। সন্তানদের জায়গায় এসে চিন্তা করতে হবে। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া উচিত না কখনোই তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার চেয়ে সকল পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত তার বোধের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে ধীরে ধীরে। ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে বাস্তবসমৃদ্ধ জ্ঞান দিয়ে। কারণ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা ভাবে বড় হওয়া মানেই নিজের মতো করে চলা। হঠাৎ করে জগতটা হয়ে ওঠে বিশাল। আত্ম-পরিচয় খুঁজে পেতে চায় তাদের মন। মাঝে মাঝে যা কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে মা-বাবা উভয়কেই থাকতে হবে একেবারে বন্ধুর মতো।
পরিশিষ্ট
১৮ বছর বয়সটি সেই বয়স যে বয়সে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এ বয়সটি ভবিষ্যতের নিশানা ঠিক করার বয়স। নিজেকে আবিষ্কার করা এবং লক্ষ্য স্থির রাখতে নিজের প্রতি বিশ্বাস সবকিছুই থাকতে পারে আত্ম-পরিচয়ের ভিত্তি শক্ত হলে। আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে না উঠতে পারলে জীবন হয়ে ওঠে লক্ষ্যহীন, গতিহীন। যা পরবতীকালে ব্যর্থতার কারণ হয়। রূপ নেয় হতাশায়। কিন্তু একটু সচেতনতাই পারে এই অতি উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। বয়স অনুযায়ী তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম করে তুলতে হবে। বন্ধুরা, আপনারা যারা এই মুহূর্তে ১৮ বছর বয়সের নৌকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তাদেরকে বলছি, জীবনের কঠিনতম এক সহজ অধ্যায়ে আছেন আপনি। সবকিছু নির্ভর করছে আপনার ওপর। আপনিই পারেন আপনার সুন্দর ভবিষ্যত ঠিক করতে। নিজেকে জানা আর নিজেকে জানানো সবই এই বয়সে হয়। তাই সচেতন থাকলেই এই বয়সটি অনেক বেশি প্রিয় ও মনে রাখার মতো হয়ে ধরা দেবে আপনার হাতে।
মানুষের জীবনে প্রতিটি বছরকে একেকটি ইনিংস হিসেবে ধরা যাক। আর সেই হিসেবে একটি মানুষের জীবনে ১৮ নং ইনিংস অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সটিকে ধরা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়স। এ সময়টা জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময়। অন্তত কবি সুকান্ত তাই বলে গেছেন। তিনি বলেছেন,
‘আঠারো বছর যে কী দুঃসহ
স্পর্ধার নেয় মাথা তুলবার ঝুঁকি
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’
প্রকৃত অর্থেই এই বয়সটা দুঃসহ এক বয়স। এ বয়সটা দুর্নিবার, দূরন্ত, অদম্য, ঝুঁকি নেওয়ার। এ বয়সে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সকল সাহস প্রকাশ পায়। সব বাঁধা দুই হাতে সরিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সামনে এগোয় তারা। এ সময়েই তারা বড় হয়ে ওঠে। পায় প্রেমে পড়ার সাহস। এই ১৮ তাদের বড় হওয়ার উপলব্ধি দেয়, দেয় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর হিম্মত আর অনুপ্রেরণা। ‘বড়’ হয়েছি’র যাবতীয় অনুভূতি কৈশোরে অংকুরিত হয় যা পূর্ণতা পায় ১৮’তে। কেননা এই বয়সে তারা পায় নাগরিকত্ব আর আইনগত কিছু অধিকার। ফলে অর্জিত হয় সাহসের অসাধ্য সাধন করার ক্ষিপ্রতা। ‘বড়’ হওয়ার কুঠুরিতে প্রবেশের ১৮ এক উন্মুক্ত প্রবেশদ্বার। কেন তারা এমন অনুভূতিতে স্পর্শিত হয়? একজন মানুষ ১৮’তেই পায় নাগরিকত্ব। অর্থাৎ ভোটাধিকার। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ। দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার স্বপ্নীল আমেজে জনপ্রিতিনিধি নির্বাচনে অংশ নেয়া, সে এক অন্যরকম উত্তেজনা। এই ১৮ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গঠনের হাতিয়ার। এই বয়স কারো কাছে মত প্রকাশের অধিকার। ছোটবেলা থেকে মা বাবার কড়া শাসনে বড় হওয়া কেউ কেউ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই বয়সে পদার্পনের জন্য। ১৮’তে এলেই হবে মানসিকতার মুক্তি। তাই সব ছেলেমেয়ে এই বয়সটির জন্য অপেক্ষা করে। এটা দোষের কিছু নয়। কিন্তু ১৮’তে সব অধিকার করায়ত্ত হলেই কি মানসিক গঠন পূর্ণতা পায়? সবাই কি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম?
আইনগত অধিকার
১৮ বছর বয়সের সব থেকে বড় দিক অধিকার প্রাপ্তি। একজন মানুষ হিসেবে। একজন সুনাগরিক হিসেবে যেসব অধিকার রাস্ট্র তাকে দিতে বাধ্য তার সবকিছু প্রাপ্তির খাতায় ধরা দেয় কেবল এই বয়সে উপনীত হবার পর। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার মানসিক জোর ও পরিপার্শ্বিক অবস্থা এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মনের ভেতর ক্রমাম্বয়ে বাসা বাঁধে। কেননা মনে করা হয় এই বয়সের পর মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয় যদি না সে মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ হয়ে থাকে। অধিকারের আরো কিছু দিক হলো, একটি মেয়ে এই বয়সে আইনগতভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ছেলেদের বেলায় যদিও তা ২১ বছর। যেকোনো মানুষের মতামতের গ্রহনযোগ্যতা এই বয়সে আইনসিদ্ধ। এই বয়সের পরই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। বয়স সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি নিষেধ ১৮’র পরই একজন মানুষ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা পায়। কোনো সন্তানের মা বাবা আলাদা বসবাস করলে সন্তান কার কাছে থাকবে, সন্তানই সেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারবে যদি তার ১৮ বছর বয়স হয়ে থাকে। এমনকি একা থাকার অনুমতিও মিলবে এই বয়সে। কারও মা-বাবা অথবা উভয়ই মারা গিয়ে থাকলে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যাবতীয় সম্পত্তির দেখভাল বৈধ অভিভাবকের উপর ন্যস্ত থাকলেও ১৮ বছর হওয়ার পর সন্তানই সেই অধিকার প্রাপ্ত হয়। মোট কথা একজন নাগরিক হিসেবে মানুষের পাওনা অধিকারের জানালা এ বয়সে এসেই খুলে যায়। চিন্তা-ভাবনা আর স্বপ্নের পাখিরা ডানা মেলে এ বয়সে। উড়াল দেয় স্বপ্নজগতে। ‘বাঁধা দিলেই বাধবে লড়াই’ এ বয়সে এমন মনোভাব থাকে বলে অভিভাবকদের হতে হয় উদার মানসিকতা ও বোঝার ক্ষমতাসম্পন্ন।
বিশেষজ্ঞের কথা
১৮ বছর বয়স সংক্রান্ত বিষয়ে বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ডাঃ মোহিত কামাল বলেন, ১৮ বছরের নিচে পর্যন্ত যেকোনো অপরাধ ধরা হয় শিশু অথবা কিশোর অপরাধ হিসেবে। কিন্তু এই বয়স পার হওয়ার পর অপরাধের বিচারে তা সার্বজনীন হয়ে যায়। অর্থাৎ এ বয়সটাকে ধরা হয় প্রাপ্তবয়স্কতার মাপকাঠি। এ বয়সেই একটি মেয়ে চারপাশের পরিবেশকে প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতাসমৃদ্ধ হয় সবচেয়ে বেশি। একটি মেয়ে ১৮’র পরে বিয়ের ব্যাপারে আইনি বাঁধা মুক্ত হয়। এ বয়সের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে তা বাল্য বিবাহ হিসেবে গণ্য হয়। আর এ সময়ের শারীরিক সম্পর্ককে যৌন নিপীড়ন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এই বয়সটিই যেকোনো মানুষের মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকে। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে। ১৮ বছর বয়সকে মার্জিন এইজ বা বয়সসীমা ধরা হয়ে থাকে। এ বয়স পর্যন্ত মানুষের মানসিক গড়ন থাকে সুপ্ত। ঠিক ঘুমন্ত বাঘের মতো। ১৮’তেই যা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে। ভালোবাসা, আবেগ, রাগ, লজ্জা ইত্যাদি গুণাবলী এই বয়সেই পূর্ণতা পায়। মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধির বিষয়টিও এ বয়সে এসে পূর্ণ হয়। স্বাধীনচেতা আর নিজের পরিচয় নিজে নেয়ার অদম্য মানসিকতা গড়ে ওঠে এই বয়সে। সকাল অভিব্যক্তি মাথাচাড়া দিয়ে সরবে প্রকাশ পায়। অনেকের রাগ-ক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে যায়। কেউবা মেজাজের তারতম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। কিন্তু সে যাই করবে সে তাই সঠিক মনে করে। এ বয়সেই বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের মতবিরোধ শুরু হয় মূলত জেনারেশন গ্যাপ বা প্রজন্ম ব্যবধানকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বাবা মায়েদের উচিত তাদের সন্তানদের সঠিক গাইড লাইন দেয়া। তবে সেটি প্রশিক্ষকের মতো করে নয় দিতে হবে বন্ধুর মতো করে। সন্তানদের জায়গায় এসে চিন্তা করতে হবে। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া উচিত না কখনোই তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তার চেয়ে সকল পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত তার বোধের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে ধীরে ধীরে। ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে বাস্তবসমৃদ্ধ জ্ঞান দিয়ে। কারণ এই বয়সের ছেলেমেয়েরা ভাবে বড় হওয়া মানেই নিজের মতো করে চলা। হঠাৎ করে জগতটা হয়ে ওঠে বিশাল। আত্ম-পরিচয় খুঁজে পেতে চায় তাদের মন। মাঝে মাঝে যা কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ বয়সে মা-বাবা উভয়কেই থাকতে হবে একেবারে বন্ধুর মতো।
পরিশিষ্ট
১৮ বছর বয়সটি সেই বয়স যে বয়সে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। এ বয়সটি ভবিষ্যতের নিশানা ঠিক করার বয়স। নিজেকে আবিষ্কার করা এবং লক্ষ্য স্থির রাখতে নিজের প্রতি বিশ্বাস সবকিছুই থাকতে পারে আত্ম-পরিচয়ের ভিত্তি শক্ত হলে। আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে না উঠতে পারলে জীবন হয়ে ওঠে লক্ষ্যহীন, গতিহীন। যা পরবতীকালে ব্যর্থতার কারণ হয়। রূপ নেয় হতাশায়। কিন্তু একটু সচেতনতাই পারে এই অতি উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। বয়স অনুযায়ী তাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম করে তুলতে হবে। বন্ধুরা, আপনারা যারা এই মুহূর্তে ১৮ বছর বয়সের নৌকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তাদেরকে বলছি, জীবনের কঠিনতম এক সহজ অধ্যায়ে আছেন আপনি। সবকিছু নির্ভর করছে আপনার ওপর। আপনিই পারেন আপনার সুন্দর ভবিষ্যত ঠিক করতে। নিজেকে জানা আর নিজেকে জানানো সবই এই বয়সে হয়। তাই সচেতন থাকলেই এই বয়সটি অনেক বেশি প্রিয় ও মনে রাখার মতো হয়ে ধরা দেবে আপনার হাতে।
No comments:
Post a Comment