প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, March 8, 2011

সবুজের গাঁও :: রানা হোসেন

গ্রামের বাড়িতে এসে খুব ভালো সময় কাটছে সবুজের। সকালে দাদুর হাতে গরম গরম পিঠে আর খেজুরের রস, সারাদিন গ্রামের ছেলেদের সাথে হৈ-চৈ, খেলাধুলা করা, মাছ ধরা, আর দুপুর হলে মায়ের বকুনি খাওয়া। এইভাবে যাচ্ছে সবুজের দিন। আজ খুব ভোরে সবুজের ঘুম ভেঙেছে, বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে মামনি বলে, সবুজ এতো সকালে উঠবি না, ঠান্ডা লাগবে। আর কিছুক্ষণ শুয়ে থাক। সবুজের মন বিরক্তিতে ভরে উঠে। সে আপন মনেই বলে, এই মামনিটি তাকে বেশি বিরক্ত করছে। সকালে উঠলে বলে ঠান্ডা লাগবে, কোথাও একা যেতে দেয় না। এমন সময় দাদুমণি ডাকে সবুজ সোনা উঠেছে,
মুখডা তাড়াতাড়ি ধুইয়া আহো, গরম গরম পিঠা খাইবা। দাদুর কথা শুনে সবুজ এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে মন আনন্দে ভরে উঠে তখন। পেস্ট, ব্রাশ হাতে দৌড়ে যায় পুকুর পাড়ে। দেখে তার শাহানা ফুফু হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজে ব্যস্ত। সবুজের একমাত্র ফুফু চাচা নেই। তার বাবা প্রকাশক। প্রকাশনির কাজ শেষ করতে পারেনি বলে তাদের সাথে আসতে পারেনি। গ্রামের এক দূর সম্পর্কের চাচার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মগবাজারে সবুজের বাসা, সেখানে এখন সবুজের ভাইয়া আর তার বাবা আছে। কাজের মেয়ে তারাবিবি তাদের জন্য রান্না করে। সবুজের ভাইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ফুফু সবুজের দাদু ভাপা পিঠা করছে। সবুজ খুব মজা করে পিঠা আর রস খেয়ে একটা হাই তোলে। তারপর বেরিয়ে পরে গ্রামের বন্ধুদের সাথে খেলা করতে।
গোটা অর্ধ দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে তার বাবা বসে আছেন ঘরে। আনন্দে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সবুজ। বাবা সবুজের কপালে চুমু দিয়ে ভাত খেতে বসে। তখন তার মা বলে ভাত খেয়ে কাপড় পরে নাও। আমরা কিছুক্ষণ পর ঢাকায় চলে যাবো। সবুজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সে বলে, না, না, আমি কিছুতেই যাবো না। ঢাকায় গিয়ে কি করবো। পাশের বাসার লিটু, মাসুদ নিশ্চয় এখনো বাড়িতে। না না আমি যাবো না। তার মা তাকে ধমক দিয়ে বলে, পাগলামো কর না, আমরা এসেছি বারো দিন হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে নাও। সবুজের দু’চোখ পানিতে ভরে যায়। ভাত তার গলা দিয়ে সরতে চায় না। সে ভাতের থালা ফেলে দৌড়ে দাদুর ঘরের দিকে চলে যায়। দাদু বলে, বউ মা, আর দুইডা দিন থাইকা যাও। সবুজ খুব কষ্ট পাইছে, যাইবার কথা শুইনা। নিশান চৌধুরী বলে, না, মা অনেক দিনতো থাকলো ওরা। এখন যাক কিছুদিন পর আবার আসবে। যাবার সময় সবুজের সে কি কান্না। দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, দাদুমনি আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায়ও যাবো না, বন্ধুদেরও ছেড়ে যাবো না। দাদুমনির চোখেও পানি। সবুজের বাবা সবুজকে কোলে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো, তার মাও পিছনে পিছনে হাঁটছে। স্টেশনে এসে বাবা দুটো টিকিট নিয়ে নিল। অল্পক্ষণের মধ্যে বাঁশি বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল। নিশান চৌধুরী দেখলো, সবুজ মুখ কালো করে বসে আছে, চোখে পানি। তিনি তাকে কাছে টেনে বললেন, ছি, আর কেঁদো না। স্কুল ছুটি হলে আমরা আবার আসবো। বাবার সান্ত্বনা কানে গেল না সবুজের। তার চোখে তখনো পানি ঝরছে। ট্রেন চলছে দ্রম্নত গতিতে। সবুজের মন ভালো নেই। ওর চোখে শুধু গ্রামের স্মৃতি। গ্রামে অনেক মজা। সবুজের মনে হলো, মগবাজারে তারা থাকে সেটা যদি হঠাৎ তাদের দাদুর গ্রাম হয়ে যেতো। তাহলে সেই গ্রাম ছেড়ে তাকে যেতে হতো না কোথাও।

সূত্র : সাপ্তাহিক সোনার বাংলা

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ