প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Friday, July 29, 2011

নীল কষ্ট ।। নির্জন আহমেদ অরণ্য

এই যে নীল জামাটা দেখছ, যে টা আমি পরে আছি
এর ভিতরেই বুক লুকিয়ে রেখেছি ,
আর বুকের যে পাশটায় রক্ত জমে আছে নীল হয়ে
সেখানটায় আছে হৃদয় ... ।
যত নষ্ট কষ্ট সব এখানটায় পুষে রেখেছি
কোন একদিন এখানে ছিল প্রেম
ছিল প্রিয়ার জন্য সীমাহীন ভালবাসা ...
আর আজ .........
আজ ভালবাসা শুধুই কালের সৃতি
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে
ভাঙাচুরা ধ্বংসাবশেষ ,
যার অনেকটাই সমাধি হয়ে গেছে
কষ্টের পাথর চাপায় ......।।
যে নীল শাড়িটা তুমি অঙ্গে জড়াও
বাতাসে উড়িয়ে দাও আঁচল
তার অন্তরালে খুঁজে দেখ কষ্ট পাবে কষ্ট .....
ছয়টি কুঁচির আড়ালে থাকে
ছয় রকমের কষ্ট ভাঁজে ভাঁজে ।
আমার কষ্ট গুলো আঁকড়ে থাকে
তোমার আঁচলের আলিঙ্গনে.........
নষ্ট কষ্ট মত্ত হয় এক অদ্ভুত খেলায়
বাতাসের সাথে কষ্টরা রঙ বদলায়
আর তোমাতেই মিশে থাকে নিরন্তর......।।
নীল হতে ঘন নীল হয় রক্তের কণিকা
কষ্টের তীব্রতা দিন দিন যায় বেড়ে
আর এই কষ্ট গুলো খুব যতনে তুলে রাখি
নীল জামার ভেতর যেখানে হৃদয় থাকে......
যেখানে নীল রক্ত জমাট বেঁধে আছে বুকে .........।।

প্রয়োজন ।। নির্জন আহমেদ অরণ্য

এখন আমার ক্লান্তি বেলা , ফুরিয়ে যাওয়ার পালা
দিনে দিনে আমি যাচ্ছিও ফুরিয়ে...
একে একে ছেড়ে যাচ্ছে আমায়
কাছের অথবা দূরের সবাই......।
বিদ্রোহী হয়েছে আমার আপন অনেক কিছুই
দুই দুয়ারি হয়েছে মন ...
ঘুম গুলো পর হয়েছে সেই কবেই
ঘুন পোকাদের মত ব্যাধি
কুরে কুরে নিঃশেষ করে চলেছে ভেতর ।
যাও ছিল এক রুদ্র নীল আকাশ
তাও আজ আর আমার নেই
ধূসর ঘন আভায় ঢেকে দিয়েছে সময় ।
এখন শুধু একা একা পরে থাকা
চার দেয়ালে বন্দী হৃদয়ের যত বাসনা
জানালার ওপারে ছোট্ট পৃথিবী আমার
তবুও চোখ মেলে হয়না দেখা ।
কিসের দহন এই পাঁজর জুড়ে
কোন অভিমানে জল এসে উঁকি দেয় চোখের কোনে
কার বিহনে শূন্য বাসর
তুলসী তলায় পরে রয় রুপোর কলস ...
কেউ জানবে না কোন দিন
কেন এই অরণ্য বিদঘুটে রাতের নির্জনতাকে
করেছিল আপন,
কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে নিভৃতে দিনের পর দিন
সুখের জলসায় কেন নিজেকে ভাসাতে পারেনি
যন্ত্রণার ঘরে সঁপে দিয়েছিল কেন প্রাণ...
কেউ জানবেনা তা কোনদিন
তুমিত জান কি ছিল আমার চাওয়া
তোমাকে এই জীবনে কতটা ছিল প্রয়োজন ...।।

Wednesday, July 27, 2011

কথাটা সত্যি! ।। মজিবুর রহমান মন্জু

কথাটা সত্যি!
ডুবে যাওয়া সূর্যের মত,
সবুজ বৃক্ষের নির্মল হাওয়া খেয়ে
জীবন সঞ্চারণী ঢিব্ ঢিব্ শব্দ তুলে
বেঁচে থাকার মত।
দিনান্তে যেমন আমি স্পর্শ করি
একত্রিশ থেকে বত্রিশ
তুমি ছাব্বিশ- সাতাশ
এভাবে গুনতে গুনতে
একদিন কেউ
ছিয়াশি কিংবা সাতানব্বই,
তারপর নিকেশের খাতাটা
বন্ধ করে অজানা গন্তব্যে...
কথাটা সত্যি!
একদিন অনিবার্য সুনামি তাড়া করছে
সমুদ্রবেষ্টিত সমস্ত দেশ- মহাদেশ,
বরফের পাহাড়-দুর্গম পর্বত,
ভালোবাসায় বুঁদ তোমাকে- আমাকে
তবুও প্রতিদিন
এড়িয়ে চলছি সকল চৈতন্য,
বিবেকের প্রশ্নমালা।
বিরতিহীন দুমড়ে যাচ্ছি
বিশ্বাসের শেকড়
অবিরত অন্ধ হচ্ছি সূর্য ডুবে
যাওয়া সন্ধ্যা-
অতঃপর নেমে আসা রাতের
গাঢ় অন্ধকারের মত...
কথাটা সত্যি, সম্পূর্ণ সত্যি।

ছায়া চিত্র


আলোর সামনে দু'হাত নিয়ে দেয়ালে হাতের ছায়া নিয়ে তৈরি করা যায় নানান ধরনের ছবি, তাকেই বলছি আমি ছায়া চিত্র। ইংরেজীতে একে বলা হয় Shadowgraphy বা ombromanie

আজ আমরা এখানে দেখব সেই ধরনেরই কিছু ছায় চিত্র...












































































এমন হাজারো ছায়া চিত্র পাওয়া যাবে গুগল ইমেজে।

Tuesday, July 26, 2011

 বিশ্ব কাঁপানো ছবিগুলো

প্যালেস্টাইন ফাদার শ্লিডিং সন
বর্বর ইসরাইলি সেনাদের নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতীক এই ছবি। ছবিতে দেখতে পাওয়া লোকটির নাম জামাল আল দুরা এবং তার বারো বছরের ছেলে মোহাম্মদ আল দুরা ইসরাইলি সেনাদের গুলি থেকে বাঁচার জন্য দেয়ালের আড়ালে আশ্রয় নেয়। এতেও রক্ষা হয়নি তাদের। সেনারা এদের দেখতে পেয়ে গুলি করতে উদ্যত হলে জামাল প্রাণভিক্ষা চেয়ে কান্নাকাটি করলেও লাভ হয়নি কোনো। গুলি করে তার ছেলেকে মারা হয় এবং জামাল গুলিতে গুরুতর আহত হয়। ঘটনাস্থলে থাকা দু’জন ফরাসি নাগরিক তখন এই ছবি তুলেছিলেন।

দ্য চাইল্ড অ্যান্ড দ্য ভালচার
দু’জনই খাবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিশুটি হামাগুড়ি দিয়ে ইউএনএ পরিচালিত লঙ্গরখানার দিকে আর শকুনটি জরাগ্রস্ত শিশুটির দিকে। অসহ্যকর যন্ত্রণাদায়ক এই ছবি তুলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার। ১৯৯৩ সালের মার্চে সুদান থেকে তোলা এই ছবির জন্য তিনি লাভ করেন পুলিত্জার পুরস্কার। শিশুটির ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল তা জানা যায়নি, তবে এই ছবি তোলার পর হতাশায় ভুগতে শুরু করেন কার্টার। এর রেশ ধরে বছরখানেকের মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন।

কসোভো রিফিউজি
বিখ্যাত এই ছবিটি তোলেন চারবার পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী মহিলা ফটো গ্রাফার ক্যারল গিউজি। এই ছবিটি দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ ও দাঙ্গার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতীক।
ছবিটিতে দেখা যাওয়া বাচ্চাটির নাম অ্যাজিম শালা, যে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পরিবারের বাকি সদস্যরা কসোভোতে যুদ্ধ চলার সময় আশ্রয় নেয় আলবেনিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কুকসের রিফিউজি ক্যাম্পে। পরে বাচ্চাটিকে এক ফ্রেঞ্চ নাগরিকের সহায়তায় তার বাবা-মা ফিরে পায়। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে বাচ্চাটিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেয়ার সময় ছবিটি তোলেন ক্যারল। যে ছবির জন্য তিনি ২০০০ সালে নিউজ ফটোগ্রাফি বিভাগে আবারও পুলিত্জার জেতেন।

ভূপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি
১৯৮৪ সালের ২-৩ ডিসেম্বর ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের মিথেল আইসোসায়ানেট গ্যাস প্লান্ট লিক হয়ে ওখানকার অন্যান্য কেমিক্যালের সংস্পর্শে চলে আসে এবং বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর শিল্পজগতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাত্ক্ষণিকভাবেই মারা যায় ৩৭৮৭ জন। পরে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায় অন্তত ১৫০০০ মানুষ। আহত এবং গ্যাসের প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫,৫৮,১২৫ জন। এই ছবিটির শিশুটিকে সমাধিস্থ করার সময় ছবিটি তোলেন যৌথভাবে বিখ্যাত ফটোগ্রাফার পাবলো বার্থালোমিউ ও রঘু রায়। ছবিটি অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনার ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছে।

আবু গারিব জেল
২০০৩-এ ইরাকে আক্রমণ চালানোর এক বছর পরই আমেরিকান সেনা কর্তৃক আবু গারিব জেলে বন্দি ইরাকিদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ছবি প্রকাশ হয়। ছবিতে দেখা যাওয়া নারী সৈন্য লিন্ডি ইংল্যান্ড বেশিরভাগ নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল। পরে জানা যায়, এই নির্যাতনের নেপথ্যে মার্কিন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ইন্ধন জোগায় এবং এতে সমর্থন ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের।

এক্সিকিউশন অব ভিয়েতকং সোলজার
১৯৫৯ থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে উত্তরের সমর্থক এনএলএফের এক বন্দি যোদ্ধাকে প্রকাশ্যে সায়গনের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পুলিশ প্রধান গুয়েন গোক লোন। পৈশাচিক বর্বরতার প্রতীক এই ছবি তোলেন ফটোগ্রাফার অ্যাডওয়ার্ড অ্যাডামস। যিনি পরে এই ছবির জন্য পুলিত্জার পুরস্কার জয়ী হন। ফটো জার্নালাজিমে এই ছবিটি অন্যতম বিখ্যাত ছবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অপারেশন লায়ন হার্ট
যুদ্ধের ফলে বেসামরিক মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কষ্ট ও দুর্ভোগের মূর্তমাণ প্রতীক এই ছবি।
আমেরিকা অনৈতিকভাবে ইরাকে আক্রমণ চালানোর সময় প্রচুর বেসামরিক লোক মারে। আমেরিকানদের বোমার আঘাতে ৯ বছর বয়সী এই শিশুটিও গুরুতর আহত হয়। তারপর শিশুটিকে অকল্যান্ডের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রায় ডজনখানেক বড় ধরনের অপারেশন চালানো হয় শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য। শিশুটি অপরিসীম কষ্ট সহ্য করে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায়। এত কষ্ট করে ঠিকে থাকার জন্য তাকে ‘সালেহ কালিফ’ অর্থাত্ সিংহ হৃদয় উপাধি দেয়া হয়। হাসপাতালে চিকিত্সা চলাকালে তার ছবিটি তোলেন ডেন ফিত্জমোরেচ। এই ছবিটির জন্য তিনি ২০০৫ সালে পুলিত্জার পুরস্কার জয় করেন। ছবিটি এক অর্থে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও হার না মানার মনোভাব প্রকাশ করে।
ওয়ার আন্ডারফুট
আপনি যদি ভাবেন এই ছবি সেনাদের বার্ষিক গুলি মহড়ার স্থান থেকে তোলা হয়েছে তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে আছেন। এটি তোলা হয়েছে লাইবেরিয়ার মনরোভিয়া শহরের একটি রাস্তা থেকে। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বুলেটের কেসিং কভারের এই ছবি প্রমাণ দেয় লাইবেরিয়ার জাতিগত দাঙ্গার ভয়াবহতার। ভয়ঙ্কর এই ছবি তুলেছেন লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের ফটোগ্রাফার ক্যারোলিন কোল।

ট্র্যাজেডি অব ওমেরা সানচেজ
১৯৮৫ সালে কলম্বিয়ার নেভাডো ডেল রুইজ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতে ভূমি ও কাদাধসের সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী এ কাদাধসে শহর তলিয়ে গিয়ে মারা যায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ। কলম্বিয়ান সরকারের উদ্ধার তত্পরতায় অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতাকে এত প্রাণহানির জন্য দায়ী করা হয়। ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ওমেরা সানচেজ। তিন দিনব্যাপী কাদা ও বিল্ডিংধসের ফাঁদে আটকে থেকে হাইপোথারমেয়া ও গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে মহিলাটি মারা যায়। এই দীর্ঘ সময়েও তাকে শনাক্ত করে উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। আলোকচিত্রী ফ্রাঙ্ক ফোরনিয়ার ছবিটি মহিলার মৃত্যুর অল্প কিছুক্ষণ আগে তোলেন। এই ছবিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার তত্পরতার অভাব বা অদক্ষতা কত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তা ফুটে উঠেছে।

থাইল্যান্ড ম্যাসাকার
স্বৈরশাসকদের নৃশংসতার মূর্তমান প্রতীক এই ছবি। থাইল্যান্ডের নির্বাসিত স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল থেনম কিটিকেচর্ন দেশে ফিরে আসতে চাইলে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে পড়ে দেশটি। এই ছবিটি তোলা হয়েছিল থেমাজেট ইউনিভার্সিটি থেকে। সেখানে বিক্ষোভরত সাধারণ ছাত্রদের ওপর ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর থেনমের ভাড়াটে গুণ্ডারা এমন নৃশংস আক্রমণ চালায় এবং এতে সৃষ্ট দাঙ্গায় উভয় পক্ষেই বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ছবিটি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার নিল আলেভিচ পুলিত্জার পুরস্কার জিতেন।

আফটার দ্য স্টর্ম
প্রকৃতির রুদ্ররূপের কাছে আমরা কতটা অসহায় তার প্রতীক এই ছবি। হাইতিতে ২০০৮ সালে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের সময় এই শিশুটির ছবি তোলেন মিয়ামি হেরাল্ডের ফটোগ্রাফার প্যাট্রিক ফেরাল।
ছবিতে শিশুটি তার স্ট্রোলারটিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, যেন ভয়ঙ্কর অতীতকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রয়াস তার। সাদা-কালো স্টাইলে তোলা ফেরালের হাইতির ওপর একটি ছবির সিরিজ আছে যা সারা দুনিয়াতেই আলোড়ন তুলেছিল।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ৯/১১
ট্রেড সেন্টারে দ্বিতীয় বিমানটি যখন আঘাত হানে তখন এই ছবি তোলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার স্টিভ লুডলাম। আমেরিকায় চালানো ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলার বীভত্সতা বোঝানোর জন্য এই ছবি যথেষ্ট।

অ্যাটমিক বম্বিং অব হিরোশিমা অ্যান্ড নাগাসাকি
পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে। এতে করে হিরোশিমায় মারা যায় ৯০০০০-১৬৬০০০ এবং নাগাসাকিতে ৬০০০০-৮০০০০ মানুষ। পারমাণবিক বোমার বীভত্সতা বোঝাতে বোমা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অ্যাটমিক ক্লাউডের এই ছবিটিই যথেষ্ট। 
সূ্ত্র : আমার দেশ

 এ দেশে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যানেল নেই - কৃষ্ণকলি ইসলাম

কৃষ্ণকলি ইসলাম। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৯-এ শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে তিরষ্কৃত হয়েছেন। মনপুরা ছবিতে ‘সোনার পালঙ্কের ঘরে’ গানটির জন্যই তার এ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তথাপি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও চলচ্চিত্রে তার গান গাওয়ার তেমন ইচ্ছে নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। তার বর্তমান ভাবনা নিয়ে সোনালি-রুপালির মুখোমুখি হয়েছেন কৃষ্ণকালি। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আর এ সুজন
বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
বর্তমানে পারিবারিকভাবে একটু বেশিই ব্যস্ত। তার মধ্য থেকে আমার পরবর্তী অ্যালবামের কাজ করছি। এ ছাড়া জাতীয় তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা কমিটির হয়ে কাজ করছি।
ঈদে শ্রোতাদের কী দিচ্ছেন?
শুধুই শুভেচ্ছা দিচ্ছি।
এই ঈদে কোনো অ্যালবাম তাহলে শ্রোতারা পাচ্ছে না আপনার কাছ থেকে?
এই ঈদে কেন, কোনো ঈদেই আমি অ্যালবাম বের করিনি, করবও না। আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো ঈদ, পূজা কিংবা ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি দিন উপলক্ষে কোনো অ্যালবাম রিলিজ করব না। এমনকি এসব দিনে আমি ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলোতেও পারফর্ম করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব। তবে ঋতুভিত্তিক কোনো কিছু উপলক্ষে করেই আমি আমার অ্যালবাম বের করে থাকি। যেমন পহেলা বৈশাখ হতে পারে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০০৯ এ প্রথমবারের মতো আপনি সেরা গায়িকা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ভালো লাগছে, এতটুকুই বলব। এর বেশি কিছুই বলার নেই।
আপনাকে মনপুরাতে গান করতে দেখা গেছে, তারপর আর কোনো সিনেমাতে গান করতে দেখা যায়নি, কেন?
আসলে আমি ‘মনপুরাতে’ আমার ব্যক্তিগত একটি কারণে গান করেছি। সিনেমাতে আমার গান করা বা গাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই এখন পর্যন্ত। তবে কখনও যদি ভালো লাগে তখন সিনেমাতে গাইতেও পারি।
সিনেমার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন, অথচ সিনেমাতে গান না করার সম্ভাবনার কথা বলছেন। এটা আপনার দায়িত্ববোধ থেকে সরে আসা নয় কি?
এখানে দায়িত্ববোধের প্রশ্ন আসে কেন!
আমি ভালো গান করেছি, তাই পুরস্কৃত হয়েছি। এর মানে তো আমাকে চলচ্চিত্রে গান করতে হবে এটা বুঝায় না। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই আমি মনে করি।
আমাদের দেশে শিল্পীরা অনেক চ্যারিটিমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন, কিন্তু এর অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে দেখা যায় না, কেন?
দেখা যায় না বললে সম্পূর্ণভাবে ভুল হবে। এটা বলতে পারেন এটাকে হাইলাইট করা হয় না। এই দেখুন, আমরা যে কয়েক দিন আগে ‘জাতীয় কমিটি’ লংমার্চ করলাম, এখানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ আরও অনেক লোকজন সম্পৃক্ত হয়েছেন এটাও তো একটা চ্যারিটিমূলক ব্যাপার হতে পারে। কিন্তু এটা নিয়ে পত্রিকায় কতটুকু লিখেছে? আর আমি ওই দলের সদস্য নই, যে দলে বাংলাদেশের কথিত সঙ্গীতশিল্পীরা দেশের বাইরে সঙ্গীতমূলক প্রোগ্রাম করে সংগৃহীত টাকা লুটপাট করে খায়।
আপনি তো একাধারে নিজের গানের কথা ও সুর সাজান এবং তাতে আপনি নিজে কণ্ঠ দেন। এত কিছু একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব?
সম্ভব করলেই সম্ভব হয়। ইচ্ছে শক্তিই মানুষের সব সফলতার উত্স। আর আমি তো শুধু গানই করছি না। এর বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক আন্দোলনে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া পরিবার তো আছেই। আর এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে ইচ্ছাশক্তি থেকেই।
বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে ‘শিল্পী বাছাই’ অনুষ্ঠান করতে দেখা যায় নিয়মিতভাবে। এর থেকে সঙ্গীতাঙ্গন কী পাচ্ছে?
আসলে সঙ্গীতাঙ্গন কী পাচ্ছে তা বলার আগে বলব এসব অনুষ্ঠানে ‘শিল্পী বাছাই’ অনুষ্ঠান হলেও তার মাধ্যমে শিল্পী বাছাই হচ্ছে না। এসব অনুষ্ঠানে যেহেতু বিভিন্ন স্পন্সর থাকে, তাই তাদের বিজ্ঞাপনগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই তারা অসদুপায় অবলম্বন করছে। আর আমাদের চ্যানেলগুলো টাকা পাওয়ার জন্য তা করে যাচ্ছে। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরুলেও বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া এখনও পরিপকস্ফ হয়নি। সে জন্য আমি বলব, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যানেল নেই। আর আমরা সেখান থেকে কীভাবে শিল্পী আশা করতে পারি। তাই এক কথায় বলব, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন এর থেকে ভালো কিছু পাচ্ছে না। এগুলোর মাধ্যমে চ্যানেলগুলো শুধুই ব্যবসা করছে।
যদি এর থেকে সঙ্গীত জগত্ সত্যিকারের শিল্পী না পেয়ে থাকে, তাহলে আপনারা এসব অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন না কেন?
প্রতিবাদ করছি না বললে ভুল হবে। আমি প্রতিনিয়তই এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু বললে কী হবে, তা তো সাংবাদিকরা ছাপছে না। এই দেখুন, আমরা জাতীয় তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা কমিটি যে আন্দোলনগুলো করছি তা কি ছাপা হচ্ছে? তাই আমি বলি, আমাদের পত্রিকা, চ্যানেলগুলো যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, তাই এরা শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। এরা নিরপেক্ষ হলেই আমাদের প্রতিবাদগুলো কাজে লাগবে।
আপনাদের তো একটা গানের দল আছে, তার সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমরা সব সময়ই গান নিয়ে গবেষণা করছি। বাংলা গানের শিকড়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া আমাদের একটা গানের পাঠশালাও আছে, এতে কাজ করছি। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারেন, আমাদের গানের দল গানের মধ্যে ডুবেই ব্যস্ত সময় পার করছে।
আমার সর্বশেষ প্রশ্ন, বর্তমানকালের সঙ্গীতাঙ্গন যে অবস্থায় চলছে তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে বললে আপনি কী বলবেন?
আমাদের সঙ্গীতাঙ্গন এখন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটা হতাশার দিক হলেও আমি এর মধ্যেই আশা খুঁজে পাই। কারণ দিনে দিনে আমাদের জনগণ শিক্ষিত হয়ে উঠবে, বেশি পড়াশোনা করবে এবং ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা লাভ করবে। তাহলেই দেখবেন, একদিন আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের কালো মেঘে ঝড় উঠবে, বৃষ্টি নামবে, সবুজ প্রাণে নামবে আলোর ঝলকানি।
 সূত্র : আমার দেশ

অসম্পূর্ণ ঘুমে স্মৃতিক্ষয়!

অসম্পূর্ণ কিংবা আমরা যাকে বলি কাঁচা ঘুম, তা যদি ভেঙে যায় তাহলে সেটি স্মৃতিশক্তির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনে। কারণ, স্মৃতিশক্তি গঠনের জন্য নিবিড় ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইঁদুরের ওপর দ্য প্রসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা মনে করছেন, এখন হয়তো আলঝেইমার্সসহ স্মৃতিশক্তির সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা করা সহজ হবে। বিবিসি
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, বিচ্ছিন্ন বা ভেঙে যাওয়া ঘুম প্রাণীর স্মৃতিশক্তি গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেছেন, হঠাত্ করে ঘুম ভেঙে গেলে একটি প্রাণী তার অনেক পরিচিত বস্তু চিনতে পারে না।
ব্রিটিশ স্লিপ সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান ঘুম বিশেষজ্ঞ নেইল স্ট্যানলি বলেছেন, গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সারা দিনের ঘটনাবলি মূল্যায়ন করে এবং কোন বিষয়টি স্মৃতিতে সংরক্ষিত রাখবে তা ঠিক করে।
গবেষকরা যে কৌশল প্রয়োগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন সেটি হচ্ছে অপটোজেনেটিকস। মস্তিষ্কের যে অংশ ঘুমানো এবং জেগে ওঠার বিষয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, গবেষকরা সে ধরনের কোষকেই লক্ষ্যবস্তু করে গবেষণা চালান। তারা ঘুমন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্কে সরাসরি আলোক তরঙ্গ পাঠান। পরে তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, নিবিড় ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব পড়েছে।
গবেষণাপত্রে প্রধান গবেষক ড. লুইস ডি লেসা বলেন, নিবিড় ঘুম না হলে তা স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা আলঝেইমার্স এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে জড়িত। ভেঙে যাওয়া ঘুম মানুষকে মদে আসক্ত করে তুলতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, যে বিষয়গুলো গবেষণায় উঠে এসেছে, তার প্রত্যক্ষ অনেক প্রমাণ হাতে নেই।
ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক মিরান্ডা ওয়াটসন বলেছেন, স্লিপ ডিজঅর্ডার বা ঘুমে বিঘ্ন ঘটা যে মারাত্মক ক্ষতিকর তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা আগে থেকেই জানা। অনেক কারণেই নিবিড় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ। এ রোগ যাদের রয়েছে ঘুমের সময় তাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তাই একটানা ঘুম তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। 

সূত্র : আমার দেশ

Friday, July 22, 2011

মুসলিম রেনেসাঁর বিস্মৃত কবি শিরাজী ।। পীরজাদা সৈয়দ শামীম শিরাজী

সমাজে যখন অত্যাচার, উত্পীড়ন, শোষণ-নির্যাতন চরমে ওঠে, ঠিক তখনই দু-চারজন ক্ষণজন্মা পুরুষের আবির্ভাব ঘটে। যারা এই সঙ্কটের জন্য সংগ্রাম করেন, প্রাণপাত করেন। তাদেরই আত্মত্যাগ ও পথনির্দেশে জেগে ওঠে ঘুমন্ত জাতি। ফিরে পায় হৃতগৌরব। উপমহাদেশে মুসলিম আবেগ ও হৃতমর্যাদার জন্য যে দু-চারজন মনীষী ক্ষুরধার লেখনী ও জ্বালাময়ী বক্তৃতাকে মাধ্যম করে নেমে পড়েছিলেন—গাজী এ-বলকান মরহুম মওলানা আবু মোহাম্মদ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ছিলেন নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম। আর সে দিনের সিরাজগঞ্জ ছিল মুসলিম বাংলার সাহিত্য, রাজনীতি, নব চিন্তাধারার প্রাণকেন্দ্র। এই শহরের পশ্চিম প্রান্তে শিরাজী ভবন ‘বাণীকুঞ্জ’ ছিল মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর কর্মকেন্দ্র। ‘বাণীকুঞ্জ’ শিরাজী সাহেবের জন্ম ও কর্মস্থলই শুধু নয়, এখানে তিনি চিরনিদ্রিত রয়েছেন। তিনি ১৮৭৯ সালের ১৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই ইন্তেকাল করেন।
ব্রিটিশ সরকারের ভিত কাঁপানো গ্রন্থ ‘অনল প্রবাহ’ (ব্রিটিশ সরকার যে গ্রন্থ রচনার জন্য শিরাজীকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল) থেকে শুরু করে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই সাধক কবি তার বাণী রচনা করেছেন এই পুণ্যভূমিতে বসেই। ‘বাণীকুঞ্জ’ হয়ে উঠেছিল জ্ঞান-তীর্থ, ঘুমন্ত মুসলিম বঙ্গের নবজীবন সঞ্চারের উত্স কেন্দ্র। ইসলামী জীবনবোধের নবরূপায়ণ ক্ষেত্র। দীর্ঘ ৫১ বছরের জীবনে শিরাজীর সাহিত্য ও কর্ম জীবনের পরিধি ছিল মাত্র ৩১ বছর। ‘ইংরেজ শক্তির শাসনামলে গোটা মুসলিম জাতির শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল। শিরাজী এই শিরদাঁড়া ভাঙা জাতির যুগ প্রতিনিধি ছিলেন। নবজাগরণের অভয় মন্ত্র তিনি শোনাতেন। বাণীকুঞ্জ থেকে যে বাণী ধ্বনিত হয়ে উঠেছিল সেদিন, তাই সেকালের বাঙালি মুসলমানদের কালঘুম ভাঙিয়েছে, মুক্তির পথের সন্ধান দিয়েছে। কবি, সাহিত্যিক, ধর্ম প্রচারক, রাজনৈতিক নেতা, যোদ্ধা, সমাজ সংস্কারক, সাংবাদিক, বাগ্মী প্রভৃতি বহুবিধ বৈশিষ্ট্য তিনি একাই লালন করেছেন নিজের মধ্যে। তাতে তিনি সফলকামও হয়েছেন।
শিরাজীর বক্তৃতা, সঙ্গীত, সাহিত্য যে শুধু বিপুল আবেগের পরিচয় বহন করে তা নয়, তার সবটার মধ্যেই নয়া জিন্দেগির স্বপ্ন ছিল। জাতির জাগরণের কামিয়াবির জন্য সাধনা ছিল, দরদ ছিল।
ইংল্যান্ডের প্রথিতযশা কবি ড. জনসন এক দিন তার ‘সাহিত্যচক্র’ গঠন করেছিলেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে একখানা গ্রন্থই লিখিত হলো ‘ড. জনসন অ্যান্ড হিজ সার্কেল’। জনসনের গ্রন্থ রসিকের আনন্দের ভাণ্ডার। সেদিনের মুসলিম বাংলার জনসন ছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী। যার ‘বাণীকুঞ্জে’ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাহিত্য রসিকদের সমাগম হতো। তাঁর যোগ্য পরিচালনায় সিরাজগঞ্জের সাহিত্যগোষ্ঠীর নাম হয়েছিল ‘শিরাজীচক্র’। শিরাজী সার্কেলে যারা ছিলেন তারা প্রায় সবাই কবি, সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক, শিল্পী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। কেউ কেউ শিরাজীর সান্নিধ্যে এসে নিজেকে নতুন করে উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন।
প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে থাকত বাণীকুঞ্জ। মিলাদ শরিফ, সঙ্গীতের জলসা, পিয়ারা নবীর (সা.) পুণ্যময় জীবনের কত খুঁটিনাটি দিক, স্ত্রী শিক্ষা, সুদ সমস্যা—এগুলো নিয়েও শিরাজীচক্রে রীতিমত আলোড়ন উঠত। বাণীকুঞ্জের সাহিত্যের আসরে যেমন আলোচনা হতো ফার্সি কবিকুল শ্রেষ্ঠ ফেরদৌসী, ওমর খৈয়াম, হাফিজ ও সাদীর কাব্য নিয়ে, তেমনি জার্মান দার্শনিক কান্ট ও নিটশে, হেগেল, আবু সিনা, ইমাম গাজ্জালী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বাদ পড়ত না। শিরাজী ছিলেন তাদের মধ্যমণি। তার সঙ্গে থাকতেন গোলাম আম্বিয়া, লোহানী, শেখ আবদুল গফুর জালালী, আবদুল মনসুর এলাহী বখস্, এম সিরাজুল হক, মানবজীবনের কর্তব্য প্রণেতা আব্বাস আলী তালুকদার, পণ্ডিত জিগ্রীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য, পণ্ডিত সত্যেন্দ্রনাথ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, শেখ জমির উদ্দিন বিদ্যাবিনোদ, শেখ মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, শ্রীযুক্ত অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, দিল্লির সুপ্রসিদ্ধ নিজাম উদ্দিন আওলিয়ার ওয়ারিশ বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক কবি ও সাধক সামছুল ওলামা। খাজা হাসান নিজামী, ঐতিহাসিক রামপ্রাণ গুপ্ত, চারণ কবি মুকুন্দ দাস, সত্যেন্দ্র চন্দ্র মিত্র (হাইকোর্টের উকিল ও অভিভক্ত ভারতের কাউন্সিল সভাপতি), ডাক্তার সাইফ উদ্দিন কিসলু (তাঞ্জিল আন্দোলনের সংগঠক), বাংলার হৃদয়জয়ী গায়ক আব্বাস উদ্দীন প্রমুখ সুধী নানা সময়ে নানা বিষয়ে উপলক্ষে শিরাজীর সাহচর্য ও সান্নিধ্য লাভের জন্য তার ‘বাণীকুঞ্জে’ এসেছেন। তারা এলেই মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ ও উত্সবে মুখর হয়ে উঠত বাণীকুঞ্জ। রাজনীতিবিদদের মধ্যে কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, পণ্ডিত জওয়াহের লাল নেহরু, দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাস, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শের-ই-বাংলা একেএম ফজলুল হক, মওলানা আবদুল্লাহেহল বাকী, ডা. হেমেন্দ্র নাথ দাস গুপ্ত, ভূতপূর্ব খাদ্যমন্ত্রী গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ, মো. আবদুল জব্বার পাহলোয়ান, ব্যারিস্টার কে আহম্মেদ, মৌলানা মোসাহেব আলী খাঁ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আবদুল হালিম গজনভী, ওয়াহেদ আলী খান পন্নী প্রমুখ জননেতা ও কৃতী পুরুষ এখানে এসেছেন। এই ‘বাণীকুঞ্জ’ পাক-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কর্মকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। এই বাণীকুঞ্জ বাংলা সাহিত্যের নব প্রেরণার উত্সস্থল ছিল।
শ্যামল সবুজ ছায়াঘেরা প্রকৃতির রম্য কুঞ্জ নামে পরিচিত শিরাজীর সেই সাধের ‘বাণীকুঞ্জ’ এখন আর বাণী ছড়ায় না। নেই সেই সৌরভ-মাখা মনমাতানো ফুলের কুঞ্জ কিংবা শিরাজীর স্বহস্তে রোপিত ছায়াঘেরা নানান বর্ণের ফুল ও ফলের গাছগুলো। এক কথায় বাণীকুঞ্জের সেই সৌন্দর্য আর শোভা এখন চোখে পড়ে না। অরক্ষিত ‘বাণীকুঞ্জ’ এখন ক্রমেই তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এক সময়ের সবুজ ছায়াঘেরা সবার দৃষ্টিকাড়া ‘বাণীকুঞ্জ’ এখন নিষ্প্রাণ। প্রখ্যাত ব্যক্তিদের পদচারণায় ধন্য ও মুখরিত এ কুঞ্জ এখন নীরব-নিস্তব্ধ। বাণীকুঞ্জের বৈঠকখানার এখন জীর্ণদশা। আর্থিক দৈন্যের কারণে পরিবারের সদস্যদের পক্ষে শিরাজীর শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু রক্ষা করাও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশের স্বাধীনতা লাভের দেড় যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও শিরাজীর মাজার সংস্কার ও বাণীকুঞ্জের উন্নয়নে কোনো মঞ্জুরি মেলেনি। হাজার স্মৃতিবিজড়িত বাণীকুঞ্জ ও শিরাজীর মাজার শরিফ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে পড়েছে। হারিয়ে ফেলেছে তার জৌলুস।
শিরাজী দেশের জন্য, জাতির জন্য, মানবকল্যাণের জন্য কি না করেছেন? জেল খেটেছেন, অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটিয়েছেন। যতদূর জানা যায়, বাংলা সাহিত্যে আজাদীর বাণী প্রচার করে শিরাজী সাহেবই সর্ব প্রথম জেলে গিয়েছিলেন। শিরাজীর বিরুদ্ধে ৮২ বার ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ২৮ বার তিনি বিভিন্ন মেয়াদে কারাবরণ করেন। তাঁর মনে কোনো কালিমা ছিল না, প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী শিরাজী যখনই কারো লেখার গভীরতা পরখ করতে পেরেছেন, তখনই তিনি তাকে নানাভাবে উত্সাহ-উদ্দীপনা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। কবি কায়কোবাদ, জসীমউদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি আবদুল কাদির তার উজ্জ্বল সাক্ষ্য। কায়কোবাদের মহাশ্মশান কাব্য লেখার পর শিরাজী সর্ব প্রথম তাকে মহাকবি আখ্যা দেন। সোনার কলম ও রুপোর দোয়াত উপঢৌকন দেয়ার উদ্যোগ নেন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শিরাজীর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে ধন্য হয়েছেন। কৃতজ্ঞতাবোধে আবদ্ধ হয়েছেন। দান-খয়রাতে শিরাজী দরাজ দেলের পরিচয় দেন। সে সময়ে তিনি একত্রে ৬০০ টাকা দান করেছেন। যার মূল্য আজকের দিনে ৬০ হাজার টাকারও বেশি। তাঁর দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হন। মুক্তি সংগ্রামের তূর্যবাদক নবজাগরণের অগ্রদূত শিরাজীর অভাবগ্রস্ত সংসার, স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের ফেলে শির উঁচু করে মুসলমান স্বার্থে কারাবরণকেই বেশি গৌরবজনক মনে করেছেন। বলা যায় সর্বক্ষেত্রে শিরাজীর নিঃস্বার্থ বিচরণ তাকে আরো মহত্ ও তুলনাহীন ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। উল্লেখ্য, অনল প্রবাহ বাজেয়াপ্ত করার পর তল্লাশি করতে এসে ব্রিটিশ মহাকুমা ম্যাজিস্ট্রেট লয়েড সিরাজীর ফ্যামিলি লাইব্রেরির গ্রন্থগুলো আগ্রহ সহকারে দেখে মন্তব্য করেন শিরাজী "ঘঙঞ ঙঘখণ অ ঘঅঞওঙঘঅখ চঙঊঞ অঘউ এজঊঅঞ ঙজঅঞঙজ ইটঞ অখঝঙ অ এজঊঅঞ ঝঈঐঙখঅজ" (মি. শিরাজী শুধু একজন জাতীয় কবি এবং উচ্চস্তরের বাগ্মীই নন, একজন বিরাট পণ্ডিত ব্যক্তি)। এই শিরাজীর প্রতি আমরা এ মর্যাদাই প্রদান করছি। প্রশ্ন ওঠে দেশ-দশ-জাতির কাছে এই কি প্রাপ্য ছিল শিরাজীর? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সফরে এসেছেন একাধিকবার। অথচ কেউ তাঁর মাজারে আসেননি। তাঁর মাজার সংস্কারের কথা ভাবেননি। শিরাজীর ইন্তেকালের পর বড় দুরবস্থার মধ্যে তার সুযোগ্য পুত্র সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজী ২২ বছর বয়সে এতিম ৩ ভাই ও ৩ বোনের সংসারে হাল ধরেন। ১৯৫২ সালের ১ মে মাতা বেগম ওয়াজেদুন নেছার মৃত্যুর এক বছর পর প্রথমবারের মতো তিনি পিতা ও মাতার মাজার দু’টি পাকা করেন। ১৯৬৩ সালে শিরাজী স্মৃতি সংসদ গঠিত হয়। শিরাজীর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। সৈয়দ আসাদ উদ্দৌলা শিরাজীর ব্যক্তিগত ৫ হাজার, ১৯৬৪ সালের পাকিস্তানের গভর্নর ৫ হাজার ও পাবনা জেলা কাউন্সিলের ৫ হাজার মোট ১৫ হাজার টাকা ব্যয় শিরাজীর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
জীবদ্দশায় শিরাজী বলতেন আমার জ্যেষ্ঠপুত্র আসাদ আমার প্রার্থনার পুত্র। ওর জন্মের আগেই তার নাম ঠিক করে রাখা হয়েছিল ‘আসাদ উদ্দৌলা’ (সাম্রাজ্যের সিংহ)। কবি নজরুল ইসলাম রাজদ্রোহের অভিযোগে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর আসাদ সিরাজীর উদ্দেশে লিখেছিলেন—
‘হে বাগ্মী! হে কবি!! কর্মী!!! প্রতিভার-মূর্ত অবতার। তোমার জনমে ধন্য নব্য বঙ্গ করে নমস্কার। পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের যাদের দেখেছি ও ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের ‘ছোট থেকে বড়’ পুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে। শিরাজী সাহেব মৃত্যুকালে কোনো ধনরত্ন রেখে যেতে পারেননি কথা ঠিক নয়, কেননা তিনি তার সুযোগ্য পুত্র আসাদ শিরাজীকে রেখে গেছেন যিনি পিতার যোগ্য উত্তরসূরি এবং ধনরত্ন অপেক্ষা কম নন। যাই হোক, পিতার সেই সাধনার পুত্র আসাদ শিরাজী ‘বাণীকুঞ্জের’ পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারিবারিকভাবে এক বিঘা জমি মাজারের নামে ওয়াকফ করার ব্যবস্থা করেন। এবং পিতা গাজী শিরাজীর শেষ ইচ্ছে পূরণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় যে মাজারের সামনে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। সেখানে ওয়াক্তিয়া ও জুমার নামাজ ছাড়াও নিয়মিত কোরআন শরিফ তাফসির ও হাদিস শরিফের আলোচনা এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদ ও স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাশে একটি সভাকক্ষ, গ্রন্থাগার, মোসাফিরখানা, সাহিত্য ও সমাজবিষয়ক গবেষণাগার থাকবে। এখানে মাঝেমধ্যে সাহিত্য সভার আয়োজন করা হবে এবং বিশিষ্ট পণ্ডিত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে ধর্ম, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞানের ওপর বক্তৃতা ও আলোচনার ব্যবস্থা থাকবে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন জ্ঞানী-গুণী ও সাধারণ মানুষ আসে শিরাজীর মাজার জিয়ারতের জন্য। মাজারসংলগ্ন মোসাফিরখানা তাদের অবস্থানের জন্য ব্যবহৃত হবে। শিরাজী ছিলেন অত্যন্ত গুল্মপ্রিয়, স্বহস্তে উদ্যান রচনা ও ফুলগাছগুলোর পরিচর্যা করা ছিল তাঁর শখ। তাই স্মৃতিসৌধের দক্ষিণ দিকে একটি ক্ষুদ্রাকার গুল্মোদ্যান ও ফোয়ারা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সর্বসাকুল্যে ওই সময়ে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পিতার প্রার্থনার পুত্র শেষ পর্যন্ত তার সাধারণ পরিকল্পনা শেষ রক্ষা করতে পারলেন না।
১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর সুপরিকল্পিতভাবে সৈয়দ আসাদউদ্দৌলা শিরাজীকে হত্যা করার পর থেকে পরিকল্পনাটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। পরিকল্পনার নীলনকশাই স্মৃতি আকারে রয়েছে, যার বাস্তবরূপ হচ্ছে না।
কবি-সাহিত্যিক ও লেখকরা শিরাজীর রচনাসম্ভার থেকে যেমন অনুপ্রেরণা লাভ করেছেন, তেমনি তাঁর কর্মস্থলে জীবনের ঘটনা জুগিয়েছে চলার পথের পাথেয়। দেশ ও জাতির জন্য যিনি নিরলসভাবে সারা জীবন সাধনা করে গেছেন, কালজয়ী এই জাতীয় পুরুষের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁর স্মৃতিচিহ্নকে জাগিয়ে রাখা জাতির অবশ্য কর্তব্য হলেও শিরাজীর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়নি।
সিরাজী স্বদেশ ও স্বজাতির কল্যাণব্রতী এক চিন্তানায়ক, জাতীয় জীবন গঠনের জন্য তার অসাধারণ ত্যাগ ও কর্মপ্রচেষ্টা আত্মবিশ্বাসহীন জাতির প্রাণে নবচেতনার সঞ্চার করেছিল একথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়। অথচ তার রচিত গ্রন্থগুলো বাজারে পাওয়া যায় না। বাংলা একাডেমী শিরাজী রচনাবলীটিও ছাপানোর দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না। ফলে আজকের স্বাধীন দেশের মাটিতে বসে এ প্রজন্মের পক্ষে শিরাজী এবং তার সহকর্মীদের ভূমিকা অনুধাবন করা সত্যিই কঠিন। কালের ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়ার মতো পুরনো তিনি নন। তাকে জানতে হলে ইতিহাস জানতে হবে। সে ইতিহাস জাতির স্বার্থেই আমাদের জানা প্রয়োজন। 

সূত্র : আমার দেশ

Thursday, July 21, 2011

এই মেঘলা দিনে একলা ।। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকেনাতো মন
কাছে যাবো তবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

যুঁথি বলে ওই হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
হায় হায়রে দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাবো তবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

শুধু ঝরে ঝর ঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হলো মন যে উদাসীন
আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কি যে ভাবি আনমনে
তুমি আসবে ওগো হাসবে
কবে হবে সে মিলন
কাছে যাবো তবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ

প্রবাস থেকে... লিরিক

একটি ছেলে রাতের ঘুমটা ফেলে
করছে স্মৃতি রোমন্থন
বুকের মাঝে তার হাহাকার
আর চাপা ক্রন্দন

কতদিন দেখিনা তোমায়
কতদিন দেখিনা
কতদিন দেখিনা তোমায়
আমার বাংলাদেশ
কতদিন দেখিনা

একটি মেয়ে কোন এক দুরদেশে
যাচ্ছে সকালে অফিসে
হয়না যে তার আর ছাদে বৃষ্টিতি ভেজা
খাওয়া হয় না যে আমের আচার

কতদিন দেখিনা তোমায়
কতদিন দেখিনা
কতদিন দেখিনা তোমায়
আমার বাংলাদেশ
কতদিন দেখিনা

একজন মানুষ ফিরছে বাড়ি
সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি
শোনে না যেন সে অনন্তকাল
ভোরের সেই আজানের ধ্বনি

মনেপরে তার গাঁয়েরই কথা
শীতের রাতে আগুন পোহানো
ভোরবেলায় খেজুর গাছে
বন্ধুরা মিলে রসচুরি করার আনন্দ

কতদিন দেখিনা তোমায়
কতদিন দেখিনা
কতদিন দেখিনা তোমায়
আমার বাংলাদেশ
কতদিন দেখিনা

————-
ব্যান্ড – অর্থহীন
এ্যলবাম – বিবর্তন

পাখির কথায় পাখা মেললাম ।। আল মাহমুদ

ভয়ের ডানায় বাতাস লেগেছে মুখে
শীতল সবুজ থরথর করে বুকে
কাঁপছে আত্মা, আত্মার পাখি এক
‘ঝাপটানি তুলে নিজের কথাই লেখ’

পাখির কথায় পাখা মেললাম নীলে
নীল এসে বুঝি আমাকেই ফেলে গিলে
নীল ছাড়া দেখি চারিদিকে কিছু নেই
তুমি ছাড়া, তুমি-তুমি পুরাতন সেই।

চির পুরাতন কিন্তু নতুন তোমার চোখের তারা
আমাকে কেবল ইশারায় করে প্রান্তরে দিশেহারা
তবুও তো আমি এখনো তোমার ছায়া
খুঁজে ফিরি আর ভাবি অলৌকিক মায়া

মুক্তির গান গাইবে এমন কবি কই এই দেশে?
কবিতার পরে কবিতাই থাকে স্বপ্নকে ভালোবেসে।

Tuesday, July 19, 2011

হাজীগঞ্জ দুর্গ ভ্রমণ চিত্র ।। মরুভূমির জলদস্যু


কদিন আগে গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জ। উদ্দেশ্য ছিলো কয়েকটি যায়গার ছবি তোলা, কিন্তু সেদিন বৃষ্টির কারণে রওনা হতে অনেক দেড়ি হয়ে যায়। ফলে ছবি তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি সবকটি স্পটের। এভাবে এলোমেলো ভাবে কথা না বাড়িয়ে গোড়া থেকেই শুরু করি।


দুপুরের পরপর বাসা (উত্তর বাড্ডা) থেকে যখন বের হই তখনও ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি ঝরে যাচ্ছে। কোনো ট্যাক্সি বা সিএনজি না পাওয়ায় উঠে পরি ছালছাবিল বাসে। ছালছাবিল থেকে নামি যাত্রাবাড়ি, সেখান থেকে বাস বদলে নারায়ণগঞ্জের বাসে চেপে চলে আসি নারায়ণগঞ্জ। নারায়নগঞ্জের আশিয়ান এসি বাস কাউন্টারের সামনে নেমে রিক্সা নিয়ে চলে আসি হাজীগঞ্জ দূর্গে। আজকের প্রথম স্পট এই হাজীগঞ্জ দূর্গে। আসুন একটু জেনে নেই দুর্গ আসলে কি, এবং কেনো।



(পাশ থেকে হাজীগঞ্জ জলদুর্গের প্রবেশ তোরন)


মূলত দুর্গ গড়ে তোলা হতো আক্রমণ ঠেকাতে। সেই প্রাচীন কাল থেকেই, ঈশা খাঁ গড়েছিলেন মোগলদের ঠেকাতে। আবার মোগলরা গড়েছিলেন মগ, পর্তুগিজদের ঠেকাতে। তাছাড়া দেখা গেছে শৌর্যে-বীর্যে প্রতীক হিসেবেও প্রাসাদ দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো অনেকগুলি দুর্গ টিকে আছে, যার মধ্যে দুটি আছে নারায়ণগঞ্জে। একটি সোনাকান্দা দুর্গ আর আপরটি হাজীগঞ্জ দুর্গ। আজ এখানে আমরা দেখবো হাজীগঞ্জ দুর্গ।

(হাজীগঞ্জ জলদুর্গের বাহির প্রাচীর)


হাজীগঞ্জ দুর্গ আসলে একটি জলদুর্গ। তৎকালিন ঢাকাকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় “ট্রায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট” বা “ত্রিভুজ জলদুর্গে” । ১৬৫০ সালের কিছু আগে-পরে নির্মিত হয়েছিল এই সব দুর্গ। এই তিনটি জলদুর্গের একটি হচ্ছে হাজীগঞ্জ দুর্গ। অপর দুটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা জলদুর্গ ও মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুর জলদুর্গ। প্রচলিতো বিশ্বাস অনুযায়ী কিল্লারপুলে অবস্থিত হাজীগঞ্জ জলদুর্গটি শায়েস্তা খাঁ নিমান করেন। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই দূর্গটি থেকে সেই সময়ে নদীর দিকে নজর রাখা হতো বলেই এটিকে জলদুর্গ বলা হয়।

((ভিতর থেকে হাজীগঞ্জ জলদুর্গের প্রবেশ তোরন)



এটি একটি ইট-সুরকির তৈরি ছোট চতুর্ভুজাকৃতি দূর্গ। দুর্গটি বেশ চওড়া দূর্গ-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দুর্গের প্রাচীরে রয়েছে বন্দুক বসিয়ে গুলি চালাবার ফোকর।

দূর্গের উত্তর দেয়ালেই দুর্গের একমাত্র প্রবেশ পথ “দুর্গ তোরণ”। কিছুটা উঁচু এই দূর্গে ঢুকতে হলে আপনাকে প্রবেশ তোরণের প্রায় ২০টি সিঁড়ি ডিঙ্গোতে হবে।

( প্রবেশ তোরন)



( প্রবেশ তোরন থেকে বাইরের দিকের রাস্তা)


( প্রবেশ তোরন থেকে বাইরের দিকের প্রাচীর)


আর তোরন থেকে দুর্গ চত্তরের নামতে হবে ৮টি ধাপ। প্রাচীরের ভেতরে চারদিকে চলাচলের পথ রয়েছে প্রাচীর ঘেষেই। দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় দুটি বুরুজ যায়গা আছে। আরো একটি বুরুজ রয়েছে দক্ষিণ পাশে। তাছাড়া উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম কোনায় ছোট দুটি বুরুজ অংশ আছে, যেখানে এক সাথে কয়েকজন বন্দুক বসিয়ে গুলি চালাতে পারতো ।

( প্রবেশ তোরনের ভিতরের দিক)


( প্রবেশ তোরনের ভিতরের দিক)


( পাশ থেকে প্রবেশ তোরনের ভিতরের দিক)



(দুর্গপ্রাচীরের ভেতরের চলাচলের রাস্তা)


(দুর্গপ্রাচীরের ভেতরের চলাচলের রাস্তা)


(দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণ কোনায় বড় বুরুজ)


(দুর্গের দক্ষিণ বুরুজ)


(একটি ছোট বুরুজ)


দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণ কোনে রয়েছে চোকো একটি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে ঢোকার জন্য ছিলো ছোট্ট একটি পূর্বমুখী দরজা। ভেতরে ঠিক মাঝখানে একটি মোটা গোল পিলার, পিলারের সাথে ছিলো গোলাকার সিঁড়ি। আজ পিলারটি টিকে থাকলেও নিচের দিকের অনেকটুকু সিঁড়িই ভেঙ্গে গেছে। শুধিকি তাই! গোটা ওয়াচ টাওয়ারটি আজ বিলিন হ্য়ার পথে।

(ওয়াচ টাওয়ার)


(ওয়াচ টাওয়ার)


(ওয়াচ টাওয়ার)


(ওয়াচ টাওয়ার)


(ওয়াচ টাওয়ারের প্রবেশ দরজা)


(প্রায় বিলিন হয়ে যাওয়া সিঁড়ি)


(প্রায় বিলিন হয়ে যাওয়া সিঁড়ি)

এর আগে যখন গিয়েছি তখন দেখেছি দুর্গের ভেতরে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে। এবার দেখলাম পাড়ার ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, সেবারও দেখেছি খেলতে।

দুর্গে চত্তরের পশ্চিম দিকে আছে বেশ বড় একটি আমগাছ, আর পূর্ব পাশে আছে বড় একটি লিচু গাছ। লিচু গাছটি বিচিত্র ভাবে বেঁচে আছে তার অর্ধেক খয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে।

(বুড়ো আম গাছ)


(অর্ধেক খয়ে যাওয়া লিচু গাছ)


পথের হদিস : ঢাকার যে কোনো স্থান খেতে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে, গুলিস্থান, যাত্রাবাড়ি বা কমলাপুর। গুলিস্থান বা যাত্রাবাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে পারবেন এসি বা ননএসি বাসে। ভাড়া পরবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। আর কমলাপুর থেকে যাবেন ট্রেনে, ভাড়া ১০ টাকার বেশি নয়। কম-বেশি ৪৫ মিনিটে পৌছে যাবেন ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ বাস বা বা ট্রেন স্টেশান থেকে ১৫ থেকে ১৮ টাকায় রিক্স ভাড়া নিবে হাজীগঞ্চ কেল্লা/ফোর্ট (কেল্লা বা ফোর্ট নাবললে ওরা চিনবে না)। ১০/১২ মিনিটেই পৌছে যাবেন হাজীগঞ্জ জলদুর্গে সামনে।

(এই পধ ধরেই হেঁটে যেতে হবে দুর্গে আর বেড় হওয়ার পথও এটিই)

বোনাসঃ হাজীগঞ্চ দূর্গের ৪০০ মিটার দক্ষিণেই রয়েছে বিবি মরিয়মের মাজার। দুর্গে যাওয়ার আগে সেটাও দেখে নিতে পারেন।


PDF



এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ