প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, June 28, 2011

হারিয়েছি ।। জহির রহমান

হারিয়েছে হাসির ঝিলিক
হারিয়ে গেছে মাঠ
নরম তুলো জীবন হলো
শুকনো আমের কাঠ।

হারিয়েছি পুকুর দীঘি
সাঁতার কাটার দিন
সব হারিয়ে আমরা বাজাই
বিষণ্নতায় বীণ।

হারিয়েছে প্রিয়রা সব
বেড়ে উঠার সাথী
কই হারালো আনন্দময়
অবাক মাতামাতি।

হারিয়েছে ভাইয়ের আদর
বোনের ভালোবাসা
কই গেল সব হারিয়ে
বড় হওয়ার আশা।
 

হারিছে গণতন্ত্র
বাঁচার স্বাধীনতা
সবখানেতেই ঢুকে গেছে
বিশ্রী কৃত্রিমতা।

২৭ জুন, ২০১১

শক্ত হাড়ে সুস্থ হার্ট


পৃথিবীতে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন। এসব আক্রান্ত ব্যক্তি কেউ হতে পারেন আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, নিকটাত্মীয় কেউ। এমনকি আপনি নিজেও। হৃদরোগ যেমন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা, একইসঙ্গে অনেক মানুষ হারাচ্ছে তাদের কর্মক্ষমতা, হচ্ছে প্রচুর অর্থব্যয়। সুতরাং হৃদরোগ একটি জাতীয় ও বিশ্বজনীন সমস্যা।
হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজের গবেষকরা দেখেছেন, হৃিপণ্ড সুস্থ করার জন্য আপনার হাড় মজবুত করুন। গবেষকরা দেখান, শক্তিশালী হাড় যাদের আছে তাদের চেয়ে দুর্বল হাড়বিশিষ্টদের ২৭ ভাগের বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গবেষকরা হাড় শক্তিশালী করতে ব্যায়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের উপদেশ দিয়েছেন। প্রচলিত একটি ধারণা আছে, স্ট্রোক একটি হৃিপণ্ডের রোগ। বাস্তবে এটি মোটেই সত্য নয়। স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতাজনিত রোগ।
স্ট্রোককে চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরিব্রভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। সেরিব্রাল অর্থ মস্তিষ্ক আর ভাসকুলার অর্থ রক্তনালী। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালীর দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। এ দুর্ঘটনায় রক্তনালী বন্ধও হতে পারে আবার ফেটেও যেতে পারে। আমাদের দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের হার বেড়ে যায়। কখনও কখনও তরুণরাও এর শিকার হয়। অনিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ। এছাড়া ধূমপান, অতিরিক্ত টেনশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস, রক্তে বেশিমাত্রায় চর্বি, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ এর আশঙ্কা বাড়ায়।
তবে গবেষকরা বলছেন, ব্যায়াম এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাদ্য হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বেশি করে ব্যায়াম করুন এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। তাহলেই আপনার হাড় শক্ত হবে এবং হৃিপণ্ড সুস্থ থাকবে। ইন্টারনেট
সৌজন্য : আমার দেশ

ক্রপ সার্কেল রহস্য ।। সারোয়ার সোহেন

ক্রপ সারর্কেল কি?

ক্রপ সার্কেল হচ্ছে ফসলের ক্ষেতে তৈরি এক ধরনে নকশা বিশেষ। এই নকশা মূলতো গোলাকৃতিরই হয়ে থাকে। তবে কদাচিত গোল ছাড়াও অন্যান্য সেপেরও হতে দেখা যায়। এই নকশাগুলি বিস্তির্ন ফসলের মাঠে তৈরি করা হয়। বিস্তির্ন ফসলের মাঠে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ফসল মাড়িয়ে নিয়ে এই নকশা তৈরি করা হয়।


অনেকের ধারনা এই নকশাগুলি ভিন্নগ্রহের প্রাণীরা তাদের উপস্থিতি জানানোর জন্য রাতের আধারে তৈরি করে রেখে যায়। অনেকেই আবার দাবি করেন যে তারা নিজেরাই দেখেছেন যে চোখের সামনে হঠাত করেই দ্রুততার সাথে এই নকশা গুলি তৈরি হতে শুরু করে অল্প সময়েই তৈরি সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। আবার অনেককেই বলতে শোনা যায় এই সমস্ত নকশাগুলির কাছাকাছি মাত্রারিক্ত রেডিয়েশান থাকে, যা কিনা UFO বা ফ্লাইং সসারের আগমণের বড় প্রমাণ। (যদিও এটা কখনো তেমন জোড়ালো ভাবে প্রমান তারা করতে পারেনি।)


কিন্তু অতিউৎসাহী কিছু সত্যান্যাসী তাদের প্রচেষ্ঠায় দেখিয়ে দিয়েছেন যে এই সমস্ত নকশাগুলি কোনো ভিন্নগ্রহের প্রাণীর রেখেয়াওয়া সংকেত নয়, বরং তা নেহায়েতই কিছু মানুষের তৈরি। একদল লোক চাইলেই রাতের আধারে কয়েক ঘন্টা সময়ের মধ্যেই তৈরি করে ফেলতে পারেন একটি দৃষ্টি নন্দন ও জটিল ফসলি নকশা। এই বিষয়টি বিবেচনা করলে আমরা ফসলি নকশা কে ফল্স নকশা বললেও ভুল হবে না।
এই নকশাগুলি সাধারনত গম, যব, রাই, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলের মাঠে তৈরি করা হয়। আগেই বলেছি ক্রপ সার্কেল যে শুধু গোল হয় তা নয়, তাই ক্রপ সার্কেলকে ক্রপ ফরমেশন-ও crop formations বলা হয়ে থাকে।




ঠিক কবেযে প্রথম এই নকশা দেখা যায় তা কিই সঠিক ভাবে বলতে পারবে না। তথ্য উপাত্য থেকে দেখা যায় মাত্র ১৯৭০ সাল থেকে বর্তমাণ সময় পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। ১৯৭০এর আগের কোনো তথ্য নেই। এই সময়ের মধ্যে মোটামুটি ২৬টি দেশে এই ধরনের কনশার দেখা পাওয়া গেছে।এই সমস্ত দেশের রিপোর্ট অনুয়ায়ী প্রায় দশ হাজার ক্রপ সার্কেল দেখা গেছে, যার ৯০ ভাগই দেখা গেছে শুধু দক্ষিণ ইংল্যান্ডে। আরেকটি লক্ষ্যনিয় বিষয় হচ্ছে “প্রায় প্রতিটি নকশাই তৈরি হয়েছে প্রাচীন কোনো নিদর্শনের কাছাকাছি”, যেমন স্টোনহ্যাঞ্জ (Stonehenge) এর কাছে।

Stonehenge
একটি সমিক্ষাতে দেখা গেছে ২০০৩ সালে ইউকেতে তৈরি নকশাগুলির প্রায় অর্ধেকই তৈরি হয়েছে Avebury এর ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে।

Avebury
সাধারনত দেখা গেছে নকশাগুলি রাতে তৈরি হয়। শুধু তাই নয় দেখা গছে এক রাতেই এই নকশাগুলি তৈরি হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু নকশা দিনেও তৈরি হতে দেখা গেছে।

সত্যিকার অর্থে এই নকশার তৈরির কৌশল অনেক আগেই গবেষকরা আবিষ্কার বা শনাক্ত করে ফেলেছেন। কয়েকজন লোকোর একটি গ্রুপ খুব সহজেই এবং অল্প সময়েই (এক রাতেরও কম সময়ে) এইমন নকশা তৈরি করে ফেলতে পারে। একটি লম্বা দড়ি আর কিছু বিভিন্ন সাইজের কাঠের তক্তা হলেই কাজ চলে যায়। দড়ির এক মাথাতে একটি তক্তা বেঁধে নিয়ে অন্যমাথা একটি ফসলের মাঠের নির্দিষ্ট স্থানে আটকে রেখে, তক্তার সাহায্যে ফসলগুলিকে মাটির সাথে নুয়িয়ে/শুয়িয়ে দিয়ে খুব সহজেই একটি বৃত্ত তৈরি করে ফেলা যায়্ এভাবে বিভিন্ন সাইজের তক্তা নিয়ে আর দড়ির দৈর্ঘ্য কমিয়ে বাড়িয়ে নানান মাপের বৃত্তের চমৎকার সব নকশা তৈরি করে ফেলা যায় কয়েক ঘন্টাতেই। তাছাড়া শুধু মাত্র লন রোলার (lawn roller) ব্যবহার করেও চমৎকার কনশা তৈরি করা সম্ভব। আরো আছে প্রথমে সুতা বেঁধে নকশা তৈরি করে একটি দড়ির দুই প্রান্ত একটি তক্তার দুই পাশে বেঁধে নিয়ে সেই তক্তা দিয়ে পায়ের সাহায্যে ফসর মাড়িয়েও নকশা তৈরি করা যায়। নিচে কিছু ছবি দিচ্ছি, দেখতে পাবেন কি করে তৈরি করা হচ্ছে ফসলি নকশা।


প্রথমেই নকশা ঠিক করে ফেলতে হবে।


এটাই হচ্ছে সেই তক্তা, যা দিয়ে নকশা তৈরি হবে।


এভাবে ফসল শুয়িয়ে দিতে হবে।


এই নকশাটাই তৈরি হলো এতোক্ষণে।


এটি ৭৮০ ফুট একটি ফসলি নকশা, এটাতে ৪০৯টি বৃত্ত রয়েছে। John Lundberg এটি তৈরি করেছেন ইংল্যান্ডের Milk Hill এ এটি তৈরি হয় ২০০১ সালে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যত যাই বলাহোক না কেনো, এই সমস্ত নকশা তৈরি করতে ইটি বা ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের লাগে না। আমরা মানুষেরাই তৈরি করে ফেলতে পারি। আমি তথ্য উপস্থাপন করলাম সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব যার-যার নিজের।
কারা তৈরি করছে এই নকশাগুলি- মানুষ না এলিয়েন?

এবার কিছু ফসলি নকশার ছবি দেখুন


১।



২।



৩।


৪।


৫।


৬।


৭।


৮।


৯।


১০।



সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Crop_circle
ছবি : google মামা


এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

বর্ষার ফল পেয়ারা

বর্ষাকালের ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা হলো পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম সিডিয়াম গুয়াজাভা। কম চর্বি ও ক্যালোরিযুক্ত এই ফল সব বয়সের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ' ও 'সি'। 'এ' ও 'সি' ত্বক ও চুলে পুষ্টি জোগায় এবং দেহের বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ভিটামিন 'এ' চোখের পুষ্টি-ঘাটতি দূর করে, দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, মুখের ঘা প্রতিহত করে। পেয়ারার ভেতরের অংশের চেয়ে বাইরের ত্বকে রয়েছে অপেক্ষাকৃত বেশি ভিটামিন 'সি'। অর্থাৎ খোসাসহ পেয়ারা বেশি উপকারী।

পেয়ারার ভিটামিন 'সি' শরীরকে মৌসুমি রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে; দেহের যে কোনো কাটাছেঁড়া, ঘা, চর্মরোগ দ্রুত দূর করে; দাঁতের মাড়ি মজবুত করে। পেয়ারায় রয়েছে ফ্ল্যাভিনয়েড নামের (বিটাক্যারোটিন, লুটেইন, লাইকোপেন, ক্রিপ্টোজ্যানথিন) উপাদান, যা রক্ত পরিষ্কার করে এবং ফুসফুস, প্রোস্টেট, স্তন, পাকস্থলি ও মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন, যে ব্যক্তি যত বেশি পরিমাণ ভিটামিন 'সি' খাবে, তা তার দেহে ক্ষতিকর সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তত বেশি। আর পেয়ারা এমনই একটি ফল, যা এই যুদ্ধে সাহায্য করবে। ফলটি ত্বক কুঁচকে যাওয়া ও অকাল বার্ধক্য রোধ করে, তারুণ্য বজায় রাখে দীর্ঘদিন। পেয়ারার খোসায় রয়েছে ফাইবার বা আঁশজাতীয় উপাদান। ফাইবার খাবার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেয়ারায় ভিটামিন 'বি'-এর মধ্যে রয়েছে প্যানটোথেনিক এসিড, নিয়াসিন, পাইরিডকসিন 'বি'। ভিটামিন 'বি'র অভাবে বেরিবেরি রোগ ও বদহজম হয়। পেয়ারায় 'ই' ও 'কে' নামে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ভিটামিন। 'ই' সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। যকৃৎ ও গলব্লাডারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আর ভিটামিন 'কে' রক্তশূন্যতা, ত্বকে কালচে দাগ পড়া, নাক-মাড়ি থেকে রক্তপাত দূর করে। ভিটামিন 'কে'র অভাবে হাড় ও হৃৎপিণ্ডে দুর্বলতা দেখা দেয়। পেয়ারায় আরও রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। এগুলোর মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাংগানিজ উল্লেখযোগ্য। এই পদার্থগুলো দেহের লবণ ও অম্ল-ক্ষারের পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর কপার রক্তের লোহিত বা লাল রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে। পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এই ফলটিকে সবার গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পূর্ণবয়স্ক সবাই প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও পেয়ারা খান।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Monday, June 27, 2011

পোস্ট অফিসে ইলেকট্রনিক ও মোবাইল মানি অর্ডার

দেশজুড়ে প্রায় ৯৬৬টিরও বেশি পোস্ট অফিসে চালু হয়েছে মোবাইল মানি অর্ডার। এর মাধ্যমে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দ্রুত টাকা গ্রহণ এবং প্রেরণ করা যায় । বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলালিংক প্রথমবারের মতো এ সেবা এনে দিয়েছে। ডাক বিভাগের এই মানি অর্ডারে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে যে কোনো পরিমাণ টাকা গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায়।

[b]যেভাবে এ সুবিধা পেতে পারেন[/b]
ডাক বিভাগের এ সুবিধা পাওয়ার জন্য কেবল প্রেরক ও প্রাপকের দুটি মোবাইল নম্বরই যথেষ্ট। এ সেবা দানকারী যে কোনো পোস্ট অফিসে টাকা জমা এবং উত্তোলন করা যায়। প্রেরক তার টাকা পোস্ট অফিসে জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি গোপন নাম্বার (পিন কোড) দেয়া হয়। প্রাপক একটি রিসিভ ফরমে এই পিন কোড, টাকার পরিমাণ এবং প্রেরকের মোবাইল নম্বর পূরণ করে জমা দিলেই পেয়ে যাবেন তার কাঙ্ক্ষিত টাকা। প্রাপক টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেরক বুঝতে পারবেন তার টাকা পেয়েছে কিনা, কেননা পরিশোধিত লেখা সংবলিত এসএমএস আপনা-আপনি যাবে প্রেরকের মোবাইল নম্বরে ।
[b]বাড়ছে ডাক বিভাগের জনপ্রিয়তা এবং রাজস্ব আয়[/b]
একসময় যোগাযোগের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল পোস্ট অফিস। কালস্রোতে চিঠি আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তা কমে গেলেও বর্তমানে টাকা আদান-প্রদানের কাজটি করছে পোস্ট অফিস। ফলে ডাক বিভাগে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বেড়েছে ডাক বিভাগের জনপ্রিয়তা। এখন সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনই ব্যস্ত থাকে পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিসে এ সেবা গ্রহণকারীর ভিড়ও থাকে লক্ষণীয়। তবে মানি অর্ডার চালু হওয়াতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন বাইরে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী তাদের বাসা থেকে প্রেরিত মাসিক খরচের টাকা খুব সহজে পোস্ট অফিসে গ্রহণ করতে পারছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা তুলতে আসা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী জিনাত শারমিন জিমি জানায়, তার বাড়ি তেঁতুলিয়া থেকে টাকা পাঠালে আগে সময় লাগত প্রায় দুই দিন, এজন্য যেতে হতো শ্যমলী অথবা গাবতলীর কোনো গাড়ির কাউন্টারে। তবে পোস্ট অফিসে মানি অর্ডার চালু হওয়ার পর আর তার প্রয়োজন হয় না। এখন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই হাতের কাছে পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় টাকা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, এ সুবিধা গ্রহণকারী অধিকাংশই শিক্ষার্থী। গত মাসে ডাক বিভাগের এ খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তাই ডাক বিভাগের আধুনিকতাই শুধু নয়, এ খাতটি হতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়েরও একটি অন্যতম খাত।

Sunday, June 26, 2011

ড্রামে ফলের গাছ লাগান

অনেকের বাড়িতে ফুল-ফলের বাগান করার মতো বাড়তি জায়গা পাওয়া যায় না। তাই বলে তো বাগান করার শখ থাকবে না এমন হতে পারে না। বাড়ির ছাদ ও বারান্দায় ফুল ও ফলের চাষ করা যায়। এ উদ্যোগটি আপনিও নিতে পারেন। ড্রাম, টব বা স্থায়ী কাঠামোতে লাগানো ফল গাছে জমির মতোই পরিচর্যা প্রয়োজন। নিয়মিত জৈবসার ও পরিমিত সেচ নিশ্চিত করা হলে এসব কাঠামোতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে। যেসব কলমের চারায় ডালপালা কম ও দ্রুত ফল দেয় সে সব ফলের চারা ড্রাম বা টবে লাগানোর ব্যবস্থা নিন। আজকাল আপনার নিকটস্থ যে কোনো নার্সারিতে কাজী পেয়ারা, আম্লপলি, আম, জামরুল, পেঁপে, লেবু, লিচু, কামরাঙা, আপেল, কুল, আমড়া, আঙ্গুর ফলের কলম পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো কিনে ড্রাম বা টবে রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে ফল পেতে পারেন। যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মেটাবে।

জামের পোকা দমন

বিছা পোকা জামের অন্যতম প্রধান শত্রু। এ পোকার কীড়া গাছের পাতা খেয়ে গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বিছা পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতার ডালপালা ভেঙে পোকার গাছসহ ধ্বংস করতে হবে। এছাড়া সুমিথিয়ন অথবা লিবাসিড ৫০ ইসি তরল ওষুধ ৫ লিটার পানিতে ২ চা চামচ হারে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করেও পোকা দমন করা যায়।

লেবুর ডাইব্যাক

ডাইব্যাক রোগে আক্রান্ত লেবু গাছের পাতা ঝরে যায় এবং কচি ডাল আগা থেকে শুকিয়ে মরে যেতে থাকে। ডাইব্যাক রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে এবং কাটা অংশে বর্দোপেস্ট লাগাতে হবে। আক্রান্ত গাছে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা বর্দো মিশ্রণ (১%) স্প্রে করতে হবে।

উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ।। জহির রহমান

মানুষের জন্ম, বিকাশ ও সভ্যতার অন্তরালে যে সমৃদ্ধি তার পেছনে রয়েছে জ্ঞান চর্চার নিরন্তর প্রচেষ্টা। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রসমূহের শিক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রসমূহের চেয়ে অনেক উন্নত। বলা হয়ে থাকে যে, পশ্চাৎপদ শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের বিষয়টি ব্যাপকতা রয়েছে। রাষ্ট্র নাগরিকের জীবন মান উন্নয়নের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মূল দায়িত্ব ব্যক্তি পরিবার বা সমাজ ব্যবস্থার।

আমরা যদি পৃথিবীর স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিগণের জীবন ও ইতিহাস অধ্যয়ন করি তাহলে দেখতে পাই ব্যক্তির কঠিন আত্ম প্রচেষ্টা সকল সাফল্যের ভীত তৈরি করেছে। আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। শিক্ষা জীবনের শুরুতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ শিশুদের নিকট সামান্য ক'টা পয়সার অভাবই বড় কাঁটা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশ ঘটেনা। যারা এই প্রাথমিক শিক্ষা অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় তারাই জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। বিশ্ব সভ্যতার উন্নয়নের জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের অনেকেই দারিদ্রকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে জয় করেছে। এরুপ একজন মনীষীর নাম আমরা উল্লেখ করতে পারি। যিনি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আব্দুল কালাম। তাঁর শিক্ষা অর্জনের প্রতিটি স্তর ছিল দারিদ্র ক্লিষ্টতাসহ আরো অনেক প্রতিবন্ধকতার দ্বারা বাধাগ্রস্থ। মূলতঃ তাঁর চেষ্টার ফলেই আধুনিক ভারত আজ জ্ঞান বিজ্ঞানে এতটা উন্নতি লাভ করেছে। এরুপ হাজারো উদাহরণ আমরা আমাদের চারপাশে পাব। সম্প্রতি প্রথম আলোর 'ছুটির দিনে'র এক সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় ৯৫০ বার চেষ্টা করে এক ব্যক্তি সাফল্য লাভ করেছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয় শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর করে সুখী সমৃদ্ধ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। শুধুমাত্র মিক্ষার্জনের মাধ্যমে যে কোন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা সম্ভব। শিক্ষার্জনে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার মত ব্যক্তিবর্গের অভাব রয়েছে। অনেকেই অজ্ঞতার কারণে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে যায় বিধায় কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনা। শিক্ষার্থীগণ পাঠ্য বইয়ের সাথে যদি মনীষীদের জীবন ইতিহাস পাঠ করে তাহলে নিজেদেরকে সেইভাবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিতে পারবে। মনীষীদের জীবনী শিক্ষার্থীদের জীবন পথে আলোক বর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

আপনার সম্ভ্রম রক্ষা করুন ট্রায়াল রুমের হিডেন ক্যামেরা থেকে ।। রাশেদ

আজ আমি আপনাদের কাছে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপুর্ন টিপস দিবো।এই টিপস টি আমার আপনার বোন দের বাচাবে তাদের স্পম্ভ্রম রক্ষায় সতর্ক করতে।
আজকাল আমরা জামা-কাপড় কিনতে গেলে সেটি যদি পছন্দ হয় তবে ট্রায়াল রুম এ গিয়ে চেঞ্জ করে দেখি ঠিক মত লাগে কিনা !! কিন্ত আমরা কি জানি সেই ট্রায়াল রুম এর মধ্যে গপন ক্যামেরা আছে কিনা ????

কি ভয় পেয়ে গেলেন??? না। ভয়ের কিছুই নেই ।একটু যদি আমরা সাবধান হই তবে এর থেকে রক্ষা করতে পারি নিজেকে ।কিভাবে??? তবে জানুন-
যেখানে আপনি আপনার পোশাক টি পরিবর্তন করবেন তার সামনে গিয়ে আপনার মোবাইল ফোন থেকে যে কোন জায়গায় একটি কল করুন। যদি কল টি কেটে যায় অথবা না করা যায় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে গোপন ক্যামেরা রয়েছে.

কারন এটি হয় FIBER OPTIC er মাধ্যমে SIGNAL TRANSFER বাধা গ্রস্ত হলে । " cell phone jammer " এর মাধ্যমে এটিপরীক্ষা করা যায়।অনেক সময় এটি কাজ নাও করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে নিজের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
তাই দেরী না করে সবাই কে এই মেসেজ টুকু কষ্ট করে জানিয়ে দিন । 



সূত্র : ওপেষ্ট

ছিলে স্বপ্ন মধুর ।। মনিরা চৌধুরী

আপনার চেয়ে
আরো আপনা হয়ে,
ছিলে স্বপ্ন মধুর
তুমি দিনগুলি মোর।
কারে যে দিয়ে দেখা
আমারে রেখে একা,
হারায়ে গিয়াছ আজ
অনেক অনেকটা দূর।
নিকটে ছিলে
আরো অতি নিকটে,
নিলে নিজেরে সরায়ে তুমি
কোন সে সুদূর।

হতে যে তোমার
তুমি আমারে করে পর,
দিলে বেদনা বিধুর,
একি যাতনা মধুর!
বিষাদ মাখা স্পর্শে আমায় করে
চূর্ণ হতে আরো চূর।
আজো নিশীথ রাতে
কর তোমাতে বিভোর,
মোর মনেতে জাগাও
কি যে শোর।

ছিলে স্বপ্ন মধুর তুমি
দিনগুলি মোর,
আজ হারায়ে গিয়াছ তুমি
অনেক অনেকটা দূর
করে বিষাদ মাখা স্পর্শে আমায়
চূর্ণ হতে আরো চূর।

বিশুদ্ধ ভালোবাসা ।। মনিরা চৌধুরী

ভালোবাসা
তোমায় তো নয়
যদি কেবলই বিরামহীন
তাহারে কাঁদায়,
ভালোবাসা
তাহারে কাঁদায়ে যদি
তোমারে হাসায়
তবে তো ভালোবাসা
বিশুদ্ধ নয়।

ভালোবাসা হয়
যদি তাহারে হাসায়ে যায়
অবিরাম নির্মল
বৃষ্টি ধারায় ,
ভালোবাসা বিশুদ্ধ হয়
যদি তাহারে - তোমায় বাঁধে
নির্মোহ কামনার
মিলন মেলায়।

রাত শেষে হায় ।। মনিরা চৌধুরী

চাঁদ ডুবে যায়
রাত শেষে হায়!
হয় মেঘের ছায়া সরে
ভোরের উদয়।
কোকিল ডাকে
গাছের শাখে,
ঢাকে আঁধার যত
ঐ সূর্যালোকে।
রোদ ঝিকমিক
হাসে ফিকফিক,
এক নতুন দিনের শুরু
হয় ঠিক ঠিক।
দু:খ হারায়
সুখ ইশারায়,
ভাসে বেদনা ধুয়ে
প্রাণ আনন্দধারায়
ভরে যায় যাতনায়
বুক যদি হায়!
ঘুচে যায় বাসনার
দৃঢ় সাধনায়।
খুশি এসে টলমল
দেয় হাসি ঝলমল,
কালিমা রোধে
করে জীবন সচল।


Friday, June 24, 2011

ইঁদুরের সাতকাহন

প্রাণিজগৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার যেমন অন্ত নেই, তেমনি মানুষের ও কৌতূহলের শেষ নেই। এসব প্রাণীর খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, প্রজনন; এমনকি নানা ভয়ঙ্কর রোগ নিরাময়ের উপায় খুঁজতেও বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত দ্বারস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন জাতির প্রাণীর কাছে। বহুদিন আগ থেকেই নেকড মোল র‌্যাট নামে এক ধরনের ইঁদুর নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ইঁদুর নাকি ক্যান্সারের উপশমকারী! আকারেও ভীষণ ছোট। স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি বেশ অদ্ভুত ধরনের। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে এ ইঁদুর নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। চামড়া কুঁচকানো, লোমের লেশমাত্র নেই। তবে যেটি নজর কাড়ে তা হলো, মুখ থেকে বের হয়ে আসা বাঁকানো অদ্ভুত দাঁতগুলো। মাটির গভীরে থাকতে এরা ভালোবাসে। লম্বা বাঁকা দাঁতের সাহায্যে অনায়াসেই খুঁড়তে পারে গর্ত। এ ইঁদুরগুলো সাধারণত দলবদ্ধভাবে গর্তে বাস করে। কোনো কোনো গর্তে সংখ্যায় তা আশি থেকে একশ' আবার তিনশ'রও বেশি মিলে দল গঠন করে নেয়। কলোনিতে প্রজননে সক্ষম এমন একটি নারী ইঁদুর থাকে এবং সেই হয় রানী। সঙ্গী নির্বাচনে রানীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সাধারণত দু'তিনটি ইঁদুর রানীকে সঙ্গ দেয়। এসব ইঁদুরের আচরণ বেশ সামাজিক; মৌমাছি, পিঁপড়ে, উইপোকা কিংবা ভীমরুলের মতো। ত্রিশ বছর গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ক্যান্সার দূরীকরণে এ প্রাণীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেমিন এ দুটি হরমোন আছে। আচরণের ক্ষেত্রে এ হরমোনই প্রভাব বিস্তার করে। ইঁদুরের হরমোন নিয়ে গবেষণার পর মানুষের ওপরও এ হরমোনের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা চালান। তাতে দেখা যায়, এই প্রাণীটির হরমোনের সঙ্গে মানুষের হরমোনের যথেষ্ট মিল আছে। তবে এ নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও গবেষকরা জানান। এসব বৈচিত্রময় প্রাণী নিয়ে যত গবেষণা হচ্ছে, ততই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নানা অচেনা দিক উন্মোচিত হচ্ছে। সৃষ্টি করছে বিস্ময়। 

আঙ্গুলের ভাষা...

ভালোভাবে চলাচলের জন্য মানুষের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই অত্যন্ত জরুরি। তবে বাহ্যিক নানা কাজ সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে হাত ও পা বেশি প্রয়োজন। হাতের আঙ্গুল দিয়েই সব কাজ সম্পন্ন করা যায়। শারীরিক নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গেই আঙ্গুলের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আঙ্গুলের আছে নিজস্ব ভাষা। যেমন আমাদের দেশে কাউকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর অর্থই হচ্ছে তাকে অপমান বা ব্যঙ্গ করা। কিন্তু আমেরিকায় বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর মানে হচ্ছে ওকে অর্থাৎ সব ঠিক আছে। তবে লাতিন আমেরিকায় বৃদ্ধাঙ্গুল আর তর্জনীর অগ্রভাগ মিলিয়ে বৃত্ত এঁকে দেখানো মানে কাউকে অপমান করা! কিন্তু ফ্রান্সে এর অর্থ হচ্ছে জিরো বা মূল্যহীন, কাজের নয় ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশের লোক দুই আঙ্গুলের সাহায্যে 'ভি' চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করেন শান্তি বা বিজয়। আর হাতের তালুটি যদি ভেতরের দিকে থাকে, তাহলে ব্রিটিশরা অপমানবোধ করে! আফ্রিকার কিছু দেশে কনিষ্ঠা আর তর্জনী উঠিয়ে মাঝখানের দুটি আঙ্গুল ভাঁজ করে নামিয়ে রাখলেই ভাবে বিপদ বুঝি দোরগোড়ায়। অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা বিদ্রুপ বোঝানোর জন্য মাঝের আঙ্গুল উঁচিয়ে ধরে। পকেটে হাত দিয়ে কথা বললে কেউ কিছু মনে করে সত্য, তবে জাপানে এটি চূড়ান্ত অভদ্রতা। হাতের থাবার দিকটি সামনে বাড়িয়ে দিলেই পশ্চিম আফ্রিকাবাসী অপমানিত হন। তবে গ্রিসে এর অর্থ হচ্ছে বিবাদের শুরু। আমেরিকানরা ভাবে কাজের বিরতি। কপালে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁইয়ে বসে থাকাও সমস্যা। এমনটি করলে হল্যান্ডবাসী ধরেই নেয় লোকটি পাগল। আর আমেরিকানরা ভাবে লোকটি কী স্মার্ট! আমেরিকানরা সাধারণত তর্জনী সামান্য উঁচিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল একটু বাড়িয়ে ওয়েটারদের ডাকে। কিন্তু জাপানিরা এ ধরনের ইশারায় ওয়েটারদের ডাকা একেবারেই পছন্দ করে না। আবার জার্মানিরা এ ধরনের ইশারা করলে ওয়েটাররা আরও দুটি ড্রিঙ্কস নিয়ে এসে হাজির হয়। মালয়েশিয়ানরা বাতাসে একটু আঁকিঝুঁকি কেটে ওয়েটারদের ডাকে। তবে ওই দেশে তর্জনী বাঁকানো মানেই উগ্রতা। ভাবুন একবার, একই অঙ্গের কত রূপ। 

ক্ষতুপাড়া জমিদার বাড়ি

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়িটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভেঙে লতাপাতায় ছেয়ে গেছে। বর্তমানে বাড়িটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ ১০ বিঘা জমির ওপর তৈরি এ বাড়িটি সংস্কার করলে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র ।

জনশ্রুতি রয়েছে আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ভারত থেকে নব কুমার নামে এক জমিদার এসে সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করে ১৫৪টি তৌজি নিয়ে তার জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার নব কুমার রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে পার্বতী চরণ রায় ৬০ বছর এখানে জমিদারি করেন। জমিদার নব কুমার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা না গেলেও তার ছেলে পার্বতী চরণ রায় সম্বন্ধে জানা যায়, তিনি ভারতের কাশীতে বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে চার পুত্রসন্তানের জনক ছিলেন তিনি। পুত্ররা হলেন হেমন্ত রায়, রামাচরণ রায়, শ্যামা চরণ রায় এবং বামা চরণ রায়। বাবা পার্বতী চরণ রায় মারা যাওয়ার পর তিন পুত্র ভারতে চলে গেলেও এক পুত্র শ্যামা চরণ রায় সাঁথিয়ায় থেকে যান। শ্যামা চরণ রায় মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে দীপক কুমার রায় সংসারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে দীপক কুমার রায় জমিদার বাড়িটি বিক্রয় করার ঘোষণা দিলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের সন্ধ্যা রানী বাড়িটি ক্রয় করেন। বর্তমানে বাড়িটিতে সন্ধ্যারানী ও তার স্বামী জ্ঞানেন্দ্র নাথ তালুকদারের চার ছেলে উত্তম কুমার তালুকদার, গৌতম কুমার তালুকদার, অরুণ কুমার তালুকদার এবং অলক কুমার তালুকদার বসবাস করছেন। জানা যায়, সন্ধ্যারানী বাড়িটি ক্রয় করার পর ১৯৩৮ সালে একবার বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে বাড়ির বাসিন্দারা অর্থাভাবে সংস্কার করতে পারছেন না। বাড়িটি সংস্কার করা না হলে অচিরেই হারিয়ে যাবে ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু এবং হারিয়ে যাবে সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটি। উল্লেখ্য, এ জমিদার বংশের অন্যতম প্রাণপুরুষ শ্যামা চরণ রায় একজন বিদ্যানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি বর্তমান সাঁথিয়া উপজেলা সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সাঁথিয়া কামিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জায়গা দানসহ অনেক সেবামূলক কাজ করে গেছেন। 

আশিক ইকবাল, পাবনা 
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

চোখে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব

আমরা প্রতিদিন একটি রৌদ্রোজ্জ্বল সকালের প্রত্যাশায় থাকি। সুন্দর সকাল, সুন্দর দিনের সূচনা এমন কথাও প্রচলিত। দিনের আলোর প্রয়োজনীয়তার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। সূর্যের আলো চোখে দেখি কিন্তু যা দেখতে পাই না তা হলো_ আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, যা ক্ষতিকর। সূর্যের আলোতে বর্তমান আল্ট্র্রাভায়োলেট রশ্মি তরঙ্গ মান অনুযায়ী তিন ধরনের। এর মধ্যে ইউভি-বি (২৯০-৩২০ ন্যানোমি) ও ইউভি-এ (৩২০-৩৯০ ন্যানোমি) পৃথিবীতে সূর্যের আলোর সঙ্গে পেঁৗছায় এবং এর প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শুধু সরাসরি সূর্যের আলোতেই থাকে না, পুকুর-নদী-সমুদ্রের পানি, বালু, কংক্রিটের দেয়াল, জানালার কাচ ইত্যাদি থেকে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত আলোর মাঝেই আছে আমাদের পরিবেশের সঙ্গে। যত বেশি নগরায়ন এবং গাছপালা কাটা হবে ততই আমরা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতির শিকার হবো। আমাদের চোখে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব ও ক্ষতির ধরন অনেক আগেই ভালোভাবে নির্ণীত হয়েছে। আনুমানিক ২০ লাখ যন্ত্রাংশে তৈরি আমাদের চোখের ভিন্ন ভিন্ন কোষকলা ভিন্ন তরঙ্গ মানের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শোষণ করে এবং তাদের প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন।

আমাদের চোখের কর্নিয়া ইউভি-বি'র থেকে ইউভি-সি (২০০-২৯০ ন্যানেমি)'র প্রতি বেশি সংবেদনশীল, যা ওয়েল্ডিংয়ের আলোর ঝলকানিতে আছে। সূর্যের আলোতে বর্তমান থাকলেও উচ্চাকাশ ভেদ করে পৃথিবীতে পৌঁছায় না। ইউভি-সি (২০০-২৯০ ন্যানোমি) আমরাই তৈরি করি। যার প্রভাবে চোখে কাঁটা কাঁটা ফোটা, পানি পড়া, তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় ৩০ মিনিট থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে। যারা প্রতিনিয়ত এবং বেশি সময় ধরে এর সংস্পর্শে থাকেন তাদের কর্নিয়ার কোষ ধ্বংস হতে দেখা গেছে। অথচ রাস্তা-ফুটপাতের পাশে অহরহই আমরা ওয়েল্ডিংয়ের আলোর ঝলকানি দেখতে পাই। ইউভি রশ্মির তরঙ্গ মান ২৯০ ন্যানোমির বেশি হলে কর্নিয়া কোষের শোষণ নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ইউভি-এর বেশিরভাগ এবং ইউভি-বি'র কিছু অংশ চোখের কর্নিয়া ও এক্যুয়াস ভেদ করে চোখের লেন্সে সম্পূর্ণভাবে শোষিত হয়, যা চোখের লেন্স কোষের প্রোটিনের পরিবর্তন করে এবং চোখে ছানি দেখা দেয়। তাই আমাদের দেশে ছানি রোগীর সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে যারা মাঠে কাজ করে। বড় তরঙ্গ মানের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি চোখের লেন্স ভেদ করে রেটিনার বিভিন্ন কোষকলাকে নষ্ট করে, বিশেষ করে ম্যাকুলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বর্তমান বিশ্বে সভ্য মানুষের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত ফ্লুরেসেন্ট বাতি, টিভি-কম্পিউটার মনিটর থেকে নির্গত খুব সীমিত পরিমাণের বড় তরঙ্গ মানের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির কিউমিলেটিভ প্রভাব অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। এসব যন্ত্র কম ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বর্তমান বাজারে হাই ইনডেক্স, ফটোক্রোমিক ও পরিকার্বনেট লেন্স প্রায় ৯৯% আল্টাভায়োলেট রশ্মি প্রতিরোধে সক্ষম এবং আমাদের একমাত্র ভরসা। ভবিষ্যৎ বংশধরদের নির্মল সুস্থ জীবনের জন্য নগরায়ন না করে সবুজায়ন করার প্রতিজ্ঞা করি, যা হবে তাদের আসল ও নিরাপদ সম্পদ।

লেখক : চক্ষুবিশেষজ্ঞ,

কসমেটিক ও অক্যুলার সার্জন। ফোন : ০১৭১১৮১৪৫৬৫

বেগম রোকেয়ার স্মৃতি ।। সুফিয়া কামাল

বেগম রোকেয়ার সাথে আমার যখন দেখা হয় তখন ত আমি ছোট। ৬/৭ বছর বয়স, সাত বছর হয়ে গেছে। বেগম রোকেয়ার দারুণ প্রভাব আমার জীবনে। তাই তাঁর প্রসঙ্গে কিছু বিস্তারিত কথা বলবো। আম্মাকে ফুফু আম্মা ডাকতেন বেগম রোকেয়া। রক্তের সম্পর্ক কি না জানি না, তবে কুটুম্বিতা ছিল। তা কোলকাতায় আমরা গেছি তখন আমি ছোট, ৭ বছর হবে। একদিন শুনি যে স্কুলের গাড়ী এসেছে ‘ইস্কুলকা গাড়ী আয়া’ বলে হাঁক। তা দেখি যে এক মস্ত গাড়ী এসেছে। আম্মা, খালা-আম্মা সবাই বারান্দায় বসে আছেন। দেখি যে ছোটখাট সুন্দর একটি মেয়ে মানুষ উঠে আসছেন। তা উঠে এসে পরপর আম্মাকে, খালাম্মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। ‘রুকু’ তুমি কোলকাতায় আছ, আসনা যে? জী হ্যাঁ, আমি ত কোলকাতায়ই আছি। আমি ত আসি না কিন্তু আপনারাই বা আমার কত খবর নেন? বললেন উনি হাসি মুখেই। উনি ইস্কুল টিস্কুল করেছিলেন বলে ত মুসলমান সমাজের যত বড় বড় ঘরের সাথে আত্মীয়তা ওনার। প্রায় সবাই উনাকে আবিষ্কার করতে চাইত, এই রকম অবস্থা। তারপরে বসলেন। আমি ওখান দিয়ে যাচ্ছি—আম্মা বললেন, ‘সালাম কর, তোমার আপা হয়।’ আমিও সালাম করলাম। উনি আম্মাকে বললেন, ‘ফুফু আপনার মেয়ে?’ আম্মা বললেন, হ্যাঁ। তখন উনি বললেন, ‘আমার ইস্কুল ত আমি করেছি, সেখানে অনেক মেয়ে পড়ে, হিন্দু-মুসলমান সব মেয়েরা পড়ে, কিন্তু আমার আত্মীয়স্বজনের কোনো মেয়ে আমার স্কুলে পড়ে না।’
রওশন জাহান, খুরশীদ জাহান আমার চেয়ে বয়সে বড়, আমার খালাত ভাইয়ের মেয়ে। খালা-আম্মার ছেলের মেয়ে। ওদের কথা বললেন যে, ওদেরকে লেখাপড়া শিখান না—, আমার স্কুলে যদি দেন। এইত পর্দা ঢাকাইত গাড়ী। গাড়ীতে পর্দার মধ্যেইত আসবে যাবে। অনেক মুসলমান মেয়েরা যখন আসছে। মেয়েদের দিলে খুশী হতাম। আম্মাকে বললেন ‘ওকে পড়াবেন’? আম্মা বললেন, ‘আমি ত কোলকাতায় থাকি না। আমি ত এসেছি আবার ক’মাস পরেই চলে যাব। মাস দু’তিন থাকব। নয়ত তোমার স্কুলে দিতাম পড়তে।’ আমার খুবই ইচ্ছা তখন থেকে আমি যদি পড়তে পারতাম। কি জানি ছোটবেলা থেকে স্কুলে ত কোনোদিন যাই নাই। যাবার একটা ইচ্ছা ছিল। আমি আম্মাকে বলেছি, আম্মা স্কুলে যাব। আম্মা বললেন আমরাত থাকব না, না হলে তোমাকে স্কুলে দিতাম। তা আমরা আবার একদিন সেই বন্ধ গাড়ীতে চড়ে স্কুলে গিয়ে দেখে টেখে এলাম। তখন স্কুলটা ছিল লোয়ার সার্কুলার রোডে। এখন ত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল লর্ড সিনহা রোডে।
শুনলাম ওরা—আমার খালাত ভাইয়ের মেয়েরা স্কুলে যাবে। আমার ত এত দুঃখ লাগল যে, ওরা স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু আমি যেতে পারব না। আমরা যে চলে আসব শায়েস্তাবাদে। তারপর অবশ্য ওদেরও আর স্কুলে যাওয়া হল না। কারা কারা যেন বললো, হ্যাঁ এখন আর স্কুলে যায় নাই—একজন ইউরোপীয়ান গভর্নেস ওদের পড়াত। তা বেগম রোকেয়া বললেন যে, ইউরোপীয়ান গভর্নেস বাড়ীতে পড়ায়, কিন্তু আমার স্কুলে আমার আত্মীয়স্বজনের মেয়েরা নাই। এই কথাটা আমার এখনও মনে আছে। তারপরে ত আমরা শায়েস্তাবাদে চলে এলাম। তারপরে যখন আবার কোলকাতায় আসি তখন ত আমি বড় হয়েছি, বিয়ে টিয়ে হয়ে গেছে। তখন এসে আবার ওনার সঙ্গে দেখা। তখন উনি বললেন, ‘ফুলকবি’ তুই ত লেখাপড়া শিখিলি না, কিন্তু কবি ত হয়ে গেলি। আম্মাকে বললেন, ফুফু এই মেয়েটাকে যদি পড়াতেন তবে আজকে এই মেয়েটা কত লায়েক হত। আম্মা বললেন কি করব? আমাদের সময় ত আমরা শায়েস্তাবাদে থাকলাম। কলকাতায় ত থাকি নাই, কি করে পড়াব?
উনি আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম বলে একটা সমিতি করেছিলেন, তাতে হিন্দু-মুসলমান সব মেয়েরা সেই সমিতির সভ্য ছিল। তা ওখানে আমিও সভ্য হলাম। মরিয়ম আপাও ছিলেন। বুলু ও আমি ত অবশ্য তখন বড় হয়ে গেছি। লেখাপড়া আর কি শিখব। প্রায়ই তবু আমরা যেতাম। উনিও আসতেন প্রায়ই আমাদের ওখানে। তা আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলামে সব বাংলা নাম দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের উপর, বাংলা ভাষার উপর, বাংলা জাতির উপরে কি রকম যে ওনার একটা টান ছিল। আজকালকার দিনে কয়টা মানুষের সে রকম আছে আমি জানি না। সেই কালে উনি করলেন বাংলার মেয়েদের সমিতি, বাংলার খাওয়াতীনে ইসলাম, সব বাংলায় ওখানে। তবে ওনার যে স্কুলটা ছিল সেটা খালি স্কুল না। বেগম রোকেয়ার জীবনটা পড়লে দেখা যাবে ‘তারিণী ভবন’ বলে একটা কথা আছে তাতে। ‘পদ্মরাগ’ বলে একটা উপন্যাস উনি লিখেছেন। সেখানে তারিণী ভবনের উল্লেখ আছে। ওনার স্কুলটাই ছিল সেই তারিণী ভবন। সেখানে হিন্দু, মুসলমান, খৃস্টান, ফার্সি সবরকম মেয়েরা পড়তো। কেউ শিক্ষয়িত্রী, কেউ সুপারিনটেনডেন্ট, কেউ পড়ছে, কেউ অনাথ, কেউ আসছে সেখানে থাকতে, কাজ করতে। এত সুন্দর প্রতিষ্ঠান আমি এখন পর্যন্ত আর কোথাও দেখি নাই। দেশে বিদেশে এ দেশের মেয়েরা কিম্বা অন্যান্য দেশের মেয়েরা মহিলারা কত সুন্দর সুযোগ-সুবিধা পায়, গভর্নমেন্টের সাহায্য পায়। কিন্তু উনি ত সে সব পেতেনইনা বরঞ্চ তখনকার দিনের সেই ধর্মান্ধ সমাজ ওনাকে গালাগালি করেছে। কত উড়া চিঠি লিখেছে। কতকরকম করে ওনাকে নির্যাতন করেছে। ঢিল মেরেছে। কিন্তু ওই স্কুল নিয়েই উনি ছিলেন। তা উনি নিজেই বলেছেন, আর আমরাও জানি ওনার ভাগলপুরে বিয়ে হয়েছিল সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। উনি মারা যাবার সময় ওনার কাবীনের টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। ওই দশ হাজার টাকা দিয়ে উনি ভাগলপুরে প্রথমে একটা স্কুল করেন ওনার স্বামী মারা যাবার পরে।
উনি ছিলেন খলিল সাবের, ইব্রাহীম সাবেরের বোন। ওনার বাবার নাম ছিল জহীর উদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। পায়রাবন্দের সেই গ্রামের মধ্যে জমিদারের মস্ত বড় বাড়ী। ওখানে ত মেয়েরা ইস্কুল টিস্কুলে যেত না। ওনার দুই ভাই ইব্রাহীম সাবের আর খলীল সাবের বাড়ীতে যেতেন, তাঁদের কাছে বেগম রোকেয়া পড়াশুনা দেখতেন, তাঁদের কাছে পড়াশুনা উনি শিখতে চাইতেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতে চুপচাপ করে উনি সেখানে বসে পড়তেন।
তা ভাই দেখলেন যে উনি মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়ছেন। বললেন, রুকু তুমি কি পড়ছ? আর উনি একদম ভয় পেয়ে গেলেন যে হয়ত নিষেধ হবে। তবে ভাই দেখলেন যে তার পড়বার খুবই আগ্রহ। তখন উনি ভাইয়ের কাছে লেখাপড়া শিখতে লাগলেন। এখন ত সব ভেঙে গেছে পায়রাবন্দ গ্রামের। কিন্তু ওইখানে আমি ওনার একটা স্মৃতিফলক রেখে এসেছি। যদি দেশের মেয়েরা ওনার স্মৃতিফলকটাকে বাঁচিয়ে রেখে সেইটির উন্নতি করে তা হলে তাঁর স্মৃতি রক্ষা সম্ভব হবে। ওনার জন্মভূমির একটা পাথর ওখানে বসিয়ে এসেছি। মিসেস আয়শা জাফর, আমি, আরও কয়েকজন মহিলা যাদের নিয়ে আমাদের ওই ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতি কমিটি’; সেই সমিতি থেকে ওনার নামের একটা পাথর আমি ওখানে বসিয়ে এসেছি। তা যাক সে কথা, এখন দেশের মানুষ করবে। আমি যেটুকু পেরেছি, করেছি।
সেই পায়রাবন্দ গ্রামে বসে, সেই মোমবাতির আলোতে সবার নিষেধের মধ্যে উর্দু, আরবী, ফার্সী, বাংলা শিখলেন, ইংরেজী শিখলেন। ওনার ইংরাজী লেখাওত আছে। ‘সুলতানার স্বপ্ন’। আরও অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। অনেক কিছু লিখেছেন। ভালো ইংরাজীও শিখলেন। ভালো বাংলা ত শিখলেনই। আর ছোটবেলাতে উর্দুই ওনাদের ভাষা ছিল। তারপরে বিয়ে করে উনি ভাগলপুরে গেলেন। কিন্তু শ্বশুরবংশ উনাকে পছন্দ করল না। উনি লেখাপড়া জানা মেয়ে বলে। কিন্তু ওনার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন সাহেব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। খুব উত্সাহ দিতেন। উনি খুব উত্সাহ দিতেন মেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে এবং বেগম রোকেয়াকেও খুব উত্সাহ দিতেন। ‘তুমি লেখ পড়’। তার পরে ত বেশী দিন বাঁচেন নাই। কয়েকটা বছর পরেই ত উনি মারা গেলেন। সাখাওয়াত হোসেন মারা গেলেন। তখন বেগম রোকেয়া স্বামীর নামে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বলে একটা স্কুল ভাগলপুরে করলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়স্বজন এত ক্ষেপলেন, এত নির্যাতন শুরু করলেন ওনার উপর যে উনি চলে এলেন। এসে উনি কোলকাতায় ওয়ালী উল্লাহ লেনে ১৯২১ সালে এগারটা মেয়ে নিয়ে একটা স্কুল করলেন। এই ওনার স্কুলের শুরু। একদম বস্তীর মেয়েদের নিয়ে উনি কাজ শুরু করলেন। তখন কোনো ভদ্রলোকের মেয়েরা স্কুলে যায় না। মুসলমান মেয়েরা এই বস্তীতে স্কুল করলো। হিন্দু মেয়েরা, খৃস্টান মেয়েরা সব ওনার কাছে আসত এখানে। এইভাবে আস্তে আস্তে স্কুলটি বড় করলেন। খালি স্কুলটা বড় করা না—যদি উনি সেই সময় এরকম না করতেন তাহলে বোধকরি সমাজও জাগত না। মুসলমান সমাজ কি হিন্দু সমাজ তখন অনেক অন্ধকারে ছিল। বিশেষ করে মুসলমান সমাজ, আমি বলব। হিন্দু মেয়েরা লেখাপড়া শিখে এগিয়ে গেছে। হিন্দু ভদ্রলোকেরা অনেকটা মুক্তবুদ্ধি শুভবুদ্ধি নিয়ে মেয়েদের উন্নতির জন্য অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু মুসলমান সমাজ ত তখন ওনার একদম বিরোধী। তা সত্ত্বেও উনি সেই স্কুলটা করলেন। সেটাকে বোর্ডিং না বলে একটা অনাথ আশ্রম বলা যেতে পারে।
সেখানে যত হিন্দু মেয়ে, খৃস্টান মেয়ে, নির্যাতিত মেয়েরা, যাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, যারা হিন্দু সমাজ থেকে বেরিয়ে গেছে, ইংরেজ সমাজে যাদের ঠাঁই নাই তারা এসে ওনার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। আর মুসলমান মেয়েদের ত কথাই নাই। ওই রকম আশ্রম করে উনি ওই নিজেদের মধ্যেই খুব লেখাপড়া জানা না হলেও ওদের দিয়েই স্কুল চালাতে শুরু করলেন। ওই আশ্রমটা চালাতে শুরু করলেন। আমরা নিজেরা দেখেছি। প্রায় ১৯২৭-২৮ সনে আমি আবার কলকাতায় এলাম তখন এসেই আমি ওনার সাথে দেখা করলাম। তখন গিয়ে দেখলাম সে বিরাট একটা আশ্রম করেছেন। অনেক মেয়ে ওখানে থেকেই লেখাপড়া করছেন। বাচ্চাদের লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। তারপরেও নানান রকম কথা শুরু হল। হ্যাঁ, উনি ত ভালোরকম করে শিখান না, ওনার শিক্ষয়িত্রী যারা তারা ত কিছুই লেখাপড়া জানে না, তারা ত বাপে খেদানো, মায় তাড়ানো। মানে যাদের কোনো সমাজ নাই, সংসার নাই তারা সব ওখানে আছে। সেই জন্য উনি বিএ পাস করা, এমএ পাস করা ট্রেনিং নেওয়া মেয়েদের নিয়ে স্কুলে মাস্টারির কাজে লাগান। আগে কিন্তু উনি সব কাজ নিজে করতেন। আর ওইসব মেয়েদের দিয়ে স্কুল চালাতেন।
আমাকে বড় আদর করতেন। মায়াদি বলে একজন ছিলেন। তার নিজের কথা ত কাউকে বলতেন না। কিন্তু আমরা জানি। হিন্দু সমাজের মেয়ে ডাকাতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, পরে আর ওনাকে ঘরে নিত না। বাবা, মা, শ্বশুর বাড়ির কেউই ওনাকে আর গ্রহণ করলেন না। আগে ত এই রকম ছিল সমাজ। সেই বেচারী ছিল সেই আশ্রমে। আমি দেখেছি তাকে, আমরা মায়াদি বলতাম। এখন ত মারা গেছেন। ওই সাখাওয়াত মেমোরিয়ালেই মারা গেছেন। খবর দেওয়া হলো রামকৃষ্ণ মিশনে, ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হলো, দেখেছি আমরা। তা এই রকম কত যে নির্যাতিত হিন্দু মুসলমান মেয়েরা ছিল।
আর একজন ছিলেন খৃস্টান মহিলা—না দুইজন ছিলেন, তাদের স্বামী, তাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের। ওদের মধ্যে আবার ডিভোর্স নিতে পারে না। কত কিসব হাঙ্গামা-টাঙ্গামা আছে ডিভোর্স নিতে গেলে। কিন্তু স্বামী অত্যাচারী মাতাল মদখোর। বিলাতী মেয়ে, দেশি খৃস্টান না। ব্রিটিশ এই দু’জন মহিলাও ওনার কাছে ছিল। বুড়ি হয়ে গিয়েছিল। মাথার চুল পেকে গেছে। একজন ইংরেজি শিখাতেন, আরেকজন শিখাতেন পিয়ানো। এই দু’জন মহিলাকেও আমি দেখেছি ওখানে। তারা বললেন যে, বেগম রোকেয়ার মতো যদি আরও দু’চারজন মহিলা বাংলাদেশে থাকতেন তবে এই সমাজের খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি হতো।
ওই আদর্শটাই ত আমার মনে আছে। কিন্তু ওই রকম কি আর আমি পারি। কোথায় বেগম রোকেয়া, আর কোথায় আমি। আমার সাধ্যে কি কুলায়? ওনার আদর্শ তো আমার জীবনের সঙ্গে একদম লেপটে গেছে। আর ওই আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম যে উনি করলেন, ওইটার কাজ নিয়ে কলকাতায় বস্তিতে বস্তিতে আমরা কাজ করেছি। সেই সমিতিতে তখন এলেন একদম লেডি গজনবী থেকে শুরু করে লেডি ফারুকী, মিসেস মোমেন, মিসেস গফফার, বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ—আমরা সবাই তার সভ্য ছিলাম। খালি বলতেন, দেখ এই যে কাছে আসে যারা, বোরখা পরেই আসুন বা শাড়ি পরেই আসুন বা পায়জামা পরেই আসুন তারা যে এই মিটিং-এ আসে এইটাই খালি উন্নতি না, আসলে আমাদের দেখতে হবে যে আরও যে আমাদের নির্যাতিত বোনেরা রয়েছে, ভাইয়েরা রয়েছে তাদেরকে। তোমরা যাও, তোমরা কাজ কর। এই স্কুলে যতক্ষণ তোমরা আমার সঙ্গে কথা বলতে তার চেয়ে তোমরা যদি বস্তীতে গিয়ে আমার ভাইদের, বোনদের বুঝাও তাহলে আমাদের সমাজের উন্নতি হবে। ওরা যদি স্কুলে নাও আসতে চায় তবু ওদেরকে একটু লেখাপড়া শিখাও। আমরা তাই পাড়ায় পাড়ায় গেছি। কত মহিলারা আমাদের সঙ্গে আগ্রহ করে লেখাপড়ার জন্য ঘরে ঘরে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র খুলতে চেয়েছে। কত মহিলা আমাদের সঙ্গে আগ্রহ করে মিশতে চেয়েছে, তা স্বামীরা বলেছে ‘ইয়ে লোগত খারাব আওরাত হ্যায়’, ইয়ে লোগকো মাত আনে দো’ ইয়ে লোগ বস্তি বস্তিমে ঘুমতা। এই কোলকাতার বস্তিওয়ালারা। কিন্তু তবু আমরা গেছি। আবার কেউ কেউ আদর করে বসিয়েছে বোন বসেন, চা খান। আপনারা কেন এসেছেন? এরকম করে আমাদের জিজ্ঞাসা করেছেন।
আমরা হিন্দু মুসলমানদের বস্তীতে ঘুরেছি। ভদ্রলোকদের জন্যও স্কুল ছিল। তারা ত অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু হিন্দুদের মধ্যেও তখন বস্তীতে এত অনুন্নত সম্প্রদায় ছিল— অচ্ছ্যুত্ সম্প্রদায়ের ছিল বেশি। মুসলমানদের মধ্যে ত অচ্ছ্যুত্ সম্প্রদায় নাই। কিন্তু আমার এখনও মনে আছে আমার প্রথম জীবনে হিন্দু অচ্ছ্যুত্ সম্প্রদায় আমরা তখন দেখেছি, একদম বস্তীতে। ভদ্রলোকদের সঙ্গে যাওয়া-আসা বা ইস্কুল-কলেজে তারা যেতে পারে না। সেইসব জায়গায় বেগম রোকেয়ার আঞ্জুমান থেকে আমরা বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র করেছি। তবে সেটা কি বিএ, এমএ পাস করাবার জন্য? না—এই প্রাথমিক শিক্ষাটা অক্ষর পরিচয়, একটা চিঠি লেখা, একটু হিসাব লেখা, এই পর্যন্ত আমরা শেখাবার চেষ্টা করেছি। হ

কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘একালে আমাদের কাল’ গ্রন্থ থেকে

শত্রু-মিত্র চিনতে পারে কবুতর

শত্রু-মিত্র চেনার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে নগরবাসী মুক্ত কবুতরের। তারা খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে কে তার বন্ধু আর কেইবা তাকে হত্যায় তত্পর হয়ে উঠতে পারে। অর্থাত্ গৃহপালিত নয় নগরবাসী এমন কবুতররা কে খাবার দেবে আর কে দেবে না, সেটা ধরে ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক এক ফরাসি গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই তথ্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, নগরবাসী মুক্ত কবুতরদের খাদ্যের সন্ধানে বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না। তাই তারা খাদ্য গ্রহণে বেশি সময় ব্যয় করতে পারে। এ গবেষণা থেকেই প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক প্রমাণ পাওয়া যায় যে, নগর এলাকায় সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কবুতররা তাদের ওই বিশেষ সামর্থ্য কাজে লাগায়। গবেষকদের প্রাপ্ত তথ্য অ্যানিমেল কগনিশন জার্নালে প্রকাশিত হবে।
ফরাসি গবেষকরা বলেন, নগরবাসী মুক্ত কবুতররা মানুষের নানা কার্যক্রমের মধ্যেই বাস করে। তারা প্রায়ই মানুষের দেয়া খাদ্য খেতেই অভ্যস্ত। এদের দেহের রঙ এবং প্যাটার্নে ভিন্নতা রয়েছে। সারা ইউরোপে ছড়িয়ে আছে এই কবুতররা। এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়ও এদের যত্রতত্র দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হলো, ওই শহরগুলোতে কবুতর শিকারের ঘটনা খুবই কম এবং খাদ্যের প্রাপ্যতা ও প্রজনন এলাকার অভাব নেই।
ওই কবুতররা শত্রু এড়িয়ে মিত্র মানুষের কাছ থেকে খাদ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি ঠিক কীভাবে নিশ্চিত করে, তা নিয়ে আরও গবেষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গবেষকরা। তাদের ধারণা, নগরবাসী মুক্ত কবুতররা প্রতিদিনের খাদ্যানুসন্ধানের কাজে সম্ভবত তাদের মেমোরি এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কাজে লাগায়। কোথায় নিয়মিত খাদ্য পাওয়া যাবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি একটি ব্যাপার। এতে করে খাদ্য খোঁজার কাজে সময় ব্যয় কম হয় এবং খাদ্য গ্রহণে অধিক সময় পাওয়া যায়।
গবেষক দল বলছে, কবুতরের এই আচরণ নিশ্চিত হতে একটি পার্কে দুটি গবেষণা তারা পরিচালনা করেছে। একজন ছিল খাদ্যদাতা, অন্যজন বৈরী। উভয় পরীক্ষায় দেখা গেছে, মুক্ত কবুতররা খুব দ্রুত তাদের শত্রু ও মিত্রকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তারা শত্রুর কাছ থেকে দূরে থেকেছে এবং মিত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। 

সূত্র : আমার দেশ

Thursday, June 23, 2011

মধু মাস ।। আবদুল ওহাব আজাদ

গাছে পাকা আম ঝোলে
লিচু থরে থরে।
ফলের সুবাস বয়
প্রতি ঘরে ঘরে।

ডেগো ফল তুলতুল

হয়ে আছে নিচু।
কালো জাম সাদা জাম
আরও কত কিছু।

কাঁঠাল পাকার আজ

ভুরভুর গন্ধ।
গাছে দোলে খেজুর ফল
খেতে নয় মন্দ।

পাকা ফলে ভরা এই

কি যে মধু মাস।
জ্যৈষ্ঠ উঁকি দেয়
কচি তাল শাঁস।

জলভেজা ফল ছুঁয়ে

বৃষ্টির ধারা বয়।
স্বপ্নের দেশ যেন

আহা কত্ মধুময়

রংধনু, মেঘ ও বৃষ্টি ।। জুলফিকার শাহাদাৎ

মেঘ নেমে এসেছিল গতকাল। ঠিক ভোর ৫টায়। রংধনু তখনো ঘুমিয়ে। হঠাৎ তার ঘুম ভাঙে। মেঘ কথা বলে। হাসে। রংধনু অবাক হয়। মেঘ তার কথা বোঝে? সে কতদিন মেঘকে ডেকেছিল।

মেঘ বলে,

: কেমন আছ রংধনু?

রংধনু মুখ খোলে না। মা তার পাশে শুয়ে আছে তখনো। মেঘ আবার বলে,

: তুমি কেন প্রতিদিন আমাকে ডাক?

: আমি তোমার বন্ধু হতে চাই ... তাই

রংধনুর কথা শোনে মেঘ হাসে। আরও হাসে।

: আমিও

রংধনু খুশি হয়। মেঘ তার বন্ধু হবে। কত মজা হবে।

মেঘ বলে,

: আমি অনেক দূরে থাকি। সবসময় তোমার কাছে আসতে পারব না। তুমিও তো আমার কাছে যেতে পারবে না। তোমার পাখা নেই। আমার আছে। তবে কি! মা আমাকে চোখে চোখে রাখে।

: তোমার মা?

: হ্যাঁ, আমার মা বৃষ্টি

: বৃষ্টি?

: হ্যাঁ, বৃষ্টি আমার মা। মা মাঝেমধ্যে নিচে নেমে আসে। আমি পারি না। ভেসে বেড়াই। ভেসে ভেসে মেঘের নৌকা বানাই। রংধনু এতে খুশি হয় এবং বলে,

: মেঘভাই তুমি কি আমাকে মেঘের দেশে নিয়ে যাবে?

: অবশ্যই। রাতে। সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে ঠিক তখন, কেউ জানবে না। তুমি সারারাত মেঘের দেশে ঘুরবে। সকাল হওয়ার আগে তোমাকে আবার ফিরে যেতে হবে।

: হ্যাঁ মেঘভাই, সকালে আমি মক্তবে যাই। আরবি পড়ি। তার আগেই আমাকে ফিরতে হবে।

: ঠিক আছে

সে রাতে মেঘের সঙ্গে রংধনুর আর বেশি কথা হয় না।

আরেকদিন।

রাত ১২টা। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে। হঠাৎ কানে আওয়াজ এল রংধনুর। সে চোখ খুলল,

: কে? কে?

: চুপ, চুপ আমি মেঘ। তোমাকে নিতে এসেছি। তুমি যাবে আমার সঙ্গে?

রংধনু চারদিকে তাকায়। কেউ জেগে নেই। এই তো সময়। সে মেঘের দেশে যাবে। মেঘ আরও কাছে নেমে আসে।

পাখা মেলে বলে,

: তুমি আমার পাখায় চড়

রংধনু আস্তে আস্তে বিছানা থেকে পা নামায়। তারপর আলতো করে মেঘের পাখায় চড়ে। মেঘ রংধনুকে অনুরোধ করে,

: চোখ বন্ধ কর রংধনু। রংধনু চোখ বন্ধ করতেই নিমেষে সে আকাশে এসে পেঁৗছায়।

মেঘ বলে,

: এই আমাদের দেশ। তুমি আমার ডানায় চড়ে এই রাতে পৃথিবী ঘুরতে পারবে। তোমার যা যা দেখার ইচ্ছা সব দেখতে পারবে।

: আমি বৃষ্টি আন্টির কাছে যাব?

: হ্যাঁ, যেতে পারবে, একটু ধৈর্য ধর।

মেঘ ভেসে বেড়ায়। রংধনুও। ভাসতে ভাসতে সে পৃথিবী দেখে। সূর্য দেখে। গ্রহ-নক্ষত্র দেখে। মেঘ বলে,

: তুমি মায়ের কাছে যাবে?

: হু

: চল

রংধনু মেঘের সাঁকোয় আবারও ভাসতে লাগল। একসময় তারা পেঁৗছল এক বরফের দেশে। রংধনু বলল,

: এত বরফ?

মেঘ বলল,

: আমার মা বরফ হয়ে থাকে। কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

: ওহ তাই!

:হ্যাঁ, তাই

: আমি বৃষ্টি আন্টির কাছে ভিজব_

: হ্যাঁ, কালকেই ভিজবে। মা কাল তোমাদের দেশে যাবে। এখন সকাল হয়ে আসছে। চল, তোমাকে দিয়ে আসি। রংধনু মেঘের ভেলায় চড়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। মায়ের পাশে শোয়। তার ঘুম আসে না। সে অপেক্ষা করে কখন সকাল হবে। কখন ঝুমঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে।

ও মা ভূত... ।। নূর হোসনা নাইস

একদিন সন্ধ্যাবেলার কথা। একটি ফুড কর্নারে হৈচৈ তার মা-বাবাসহ বার্গার খাচ্ছিল, সঙ্গে আরও একজন ছিল। ঘটনাটা হৈচৈ'র স্পষ্ট মনে আছে, কিন্তু আর একজনের চেহারা কিছুতেই মনে করতে পারছে না। পরদিন স্কুলে ঠিক এভাবেই হৈচৈ তার প্রিয় বন্ধু পদ্মকে বলছিল তার দেখা স্বপ্নটির কথা। খুব উৎসাহের সঙ্গে পদ্মকে বলল, জানো পদ্ম, আমি অদ্ভুত একটি স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নে দেখা সেই অচেনা লোককে ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছি, তার সঙ্গে আমার অনেক গল্পও হয়েছে কিন্তু কিছুতেই তার চেহারা মনে করতে পারছি না। জান পদ্ম, সে আমাদের মতো খেতে পারে না, আমাকে বলেছিল সে নাকি বাতাস খায়, হা... হা...। পদ্ম কি যেন ভাবছে। তাই দেখে হৈচৈ বলল কী ভাবছ পদ্ম?

পদ্ম বলল, জানো হৈচৈ তুমি কাকে দেখেছ?

হৈচৈ বলল, নাহ্ সেটাই তো বুঝতে পারছি না। পদ্ম বলল, তুমি ভূত দেখেছ হৈচৈ। হৈচৈ একটু অবাক হয়ে বলল, ও মা ভূত! পদ্ম বলল, হুম, এদের একবার দেখলে আর মনে রাখা যায় না। এরা অনেক রহস্যময় হয়, এরা কখনো পারফিউমও দেয় না যে, তুমি গন্ধ শুঁকে এদের উপস্থিতি টের পাবে। হৈচৈ বলল, তাই নাকি! তারপর...

পদ্ম বলল, হৈচৈ আমি এর বেশি কিছু জানি না। হৈচৈ বলল, কিন্তু পদ্ম আমার যে খুব বেশি জানতে ইচ্ছা করছে। পদ্ম বলল, হৈচৈ আমি যা শুনেছি সব আঙ্গুর মামা'র কাছে কিন্তু মামা তো এখন কানাডায়।

হৈচৈ খুব আফসোস করে বলল, ইস্ আমি যদি ভূতবন্ধুটাকে আবার দেখতে পেতাম। জানো পদ্ম, আমি খুব মিস করছি ভূতবন্ধুটাকে।

এর ফাঁকেই টিফিন পিরিয়ড শেষ হলো। হৈচৈ খুব দ্রুত ক্লাসে চলে গেল। স্কুলে ক্লাস শেষ করেই হৈচৈ বাসায় ফিরল। বাসায় ফেরার আগে হৈচৈ গাড়িতে খুব বেশি গম্ভীর ছিল। তাই দেখে ড্রাইভার বলছিল হৈচৈকে, আফা আপনের কি মন খারাপ? হৈচৈ বলল, না ড্রাইভার আঙ্কেল। আচ্ছা ড্রাইভার আঙ্কেল, তুমি কি ভূত দেখেছ? ড্রাইভার বলল, না দেহি নাই, তয় একবার ভয় পাইছিলাম, তয় বুঝছেন আফা, এরা বেশি ভালা অয় না, মেলা বদমাইশ অয়। আমারে তো একবার...। ড্রাইভারকে থামিয়ে দিয়ে হৈচৈ বলল, তুমি আঙ্কেল কিছু জান না, এরা অনেক ভালো হয়, আমার একজন ভূতবন্ধু আছে, তবে আমি তাকে একবার দেখেছি কিন্তু এখন যে তাকে কোথায় খুঁজে পাই। ড্রাইভার অনেক অবাক হয়ে বলল, তাই নাহি আফা?

হৈচৈ বলল জী, আচ্ছা ড্রাইভার আঙ্কেল ভূত কোথায় দেখতে পাব? এদের কি কিনতে পাওয়া যাবে?

ড্রাইভার বলল, আপনে শহরে ভূত পাইবেন কই! এনেরা শহরের আলোয় ভয় পাইয়া আয়ে না, আপনি এনাদের গ্রামে পাইতে পারেন। আর এনাদের কেনা যাইব কিনা হুনি নাই, তয় হুনছি আমেরিকা অনেক বড় দেশ, এইহানে সবকিছুই নাহি পাওয়া যায়, ওইহানে গেলে পাইতেও পারেন, আমি সঠিক জানি না আফা?

হৈচৈ বলল, আঙ্কেল আমি তো গত ঈদে আব্বু-আমুর সঙ্গে আমেরিকায় ঘুরতে গেছি কিন্তু সেখানে তো ভূত দেখতে পাইনি।

ড্রাইভার বলল, কি জানি আফা! তয় আমি হুনছি ওই দেশে ক্ষমতা অনেক। হ্যারা চাইলে ভূত বানাইতেও পারব। হৈচৈ বলল, জী ড্রাইভার আঙ্কেল, বঝুলাম। রাতে খাবার টেবিলে বসে হৈচৈ তার আব্বু-আম্মুকে বলল, আমি ভূত দেখতে গ্রামে যাব, তোমরা আমাকে নিয়ে যাও, প্লিজ? হৈচৈ-এর আম্মু বলল, ভূত বলে কিছু নেই মামণি। হৈচৈ এই কথা শোনা মাত্রই বলল, না আছে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আমি গ্রামে যাবই, প্লিজ আব্বু আমার ভূতবন্ধুর কাছে আমাকে নিয়ে চল। মেয়ের নাছোর অবস্থা দেখে হৈচৈ-এর আব্বু বলল, ঠিক আছে তোমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে আমরা গ্রামে যাব তোমার ভূতবন্ধুর কাছে।

দেখতে দেখতেই হৈচৈ'র ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলো। ঈদও চলে এল। হৈচৈ-এর আব্বু-আম্মু বলল, ভালোই হলো, এবার ঈদের ছুটিতে আমরা সবাই মিলে গ্রামে যাব। তারপর তারা ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে গ্রামে গেল। এত গাছপালা, চারপাশ এত সুন্দর দেখে হৈচৈ-এর অনেক ভালো লাগল। পরদিন হৈচৈ গ্রামের সবচেয়ে বড় বটগাছের নিচে গিয়ে ডাকতে লাগল ভূতবন্ধু তুমি কেমন আছ? তুমি কি আমার সঙ্গে রাগ করেছ? আমার সঙ্গে কথা বল। কিন্তু কেউ আর কথা বলল না। হৈচৈ মনে মনে ভাবতে লাগল আসলেই কি ভূত বলে কিছু নেই। সেদিন সন্ধ্যাবেলা হৈচৈ গ্রামের ঈদের মেলায় তার আব্বু-আম্মুসহ বেড়াতে গেল। মেলা থেকে ঘুরে আসতে অনেক রাত হয়ে গেল। যখন তারা বাড়িতে ফিরছে ঠিক সেই মুহূর্তে বটগাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন ফিসফিস করে বলল, হৈচৈ বন্ধু কেমন আছ? তুমি কি আজ আমায় ডেকেছিলে? এই কথা শুনে তো হৈচৈ মহাখুশি, সেই খুশিতে সে লাফ দিয়ে বলল ও মা ভূত!!!

তারপর সে তার ভূতবন্ধুকে বলল, আচ্ছা ভূতবন্ধ,ু তোমাকে শহরে কেন আমি দেখতে পাই না। ভূতবন্ধুটি বলল, তোমাদের শহর আমার ভালো লাগে না। সেখানে বাতাস দূষিত, মানুষেরা আমাদের ভালো চায় না, তাই তারা সব গাছ কেটে বড় বড় দালানকোঠা তৈরি করছে। আর আমরা মুক্ত বাতাস খেয়ে বেঁচে আছি, তাই আমরা গ্রাম অনেক পছন্দ করি। হৈচৈ বলল, ও এই ব্যাপার। জান, আমারও গ্রাম অনেক ভালো লাগে। গ্রামের সবাই অনেক ভালো, এখানে কেউ ব্যস্ত থাকে না, এখানে গল্প করার অনেক মানুষ।

হৈচৈ একটু মন খারাপ করে ভূতবন্ধুকে বলল, কিন্তু আমরা আগামীকালই ঢাকায় চলে যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে আমার কিভাবে দেখা হবে ভূতবন্ধু? ভূতবন্ধুটি বলল, তুমি চিন্তা করো না, আমি মাঝে মধ্যে তোমার বেলকনির ফুলগাছে বসে তোমার সঙ্গে গল্প করে আসব।

তারপর হৈচৈ তার আব্বু-আম্মুকে বলল, দেখেছ ভূতরাও অনেক ভালো হয়। এরপর থেকে ভূতবন্ধুটি প্রতিদিন হৈচৈ-এর বেলকনিতে এসে অনেক গল্প করে, একসঙ্গে খেলে, একসঙ্গে পড়াশোনা করে আর অনেক অনেক মজা করে।

Wednesday, June 22, 2011

সংগ্রামী নারী বেগম সুফিয়া কামাল ।। ছালেহা খানম জুবিলী

নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ কবি বেগম সুফিয়া কামাল। তিনি সবার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় ধন্য। তার কবিতা ছোট-বড় সবাইকে অনুপ্রাণিত করে, মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে। বিংশ শতাব্দীর নারী জাগরণের সঙ্গে এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের বিচিত্র ইতিহাসের সঙ্গে কবি সুফিয়া কামালের নাম নিবিড়ভাবে জড়িত। কবি সুফিয়া কামালের জন্মদিন ২০ জুন পালিত হলো। কবি সুফিয়া কামালের জন্ম ১৩১৮ সালের ১০ আষাঢ় (২০ জুন ১৯১১) শায়েস্তাবাদের এক নবাব পরিবারে। সুফিয়া কামালের জীবনটাই ছিল সংগ্রামের। তিনি যখন ছোট্ট শিশু, তখনই তার বাবা নিরুদ্দেশ হয়ে যান। শৈশবেই তিনি চলে আসেন মায়ের সঙ্গে মামারবাড়ি। মাতুলালয়ে প্রচুর বিলাস-বৈভব, আদব-কায়দা ও কঠোর রক্ষণশীল পরিবেশে তিনি লালিত হন। সুফিয়া কামালের যে সময় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, সে সময় মুসলিম পরিবারে মেয়েদের অনেক কিছুই নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে সে সময়টা নারী-শিক্ষার ছিল ঘোরবিরোধী। কিন্তু অদম্য স্পৃহা এবং জ্ঞান-বাসনা তাকে দমাতে পারেনি। তিনি সীমাবদ্ধ আঙ্গিনা ভেঙে বেরিয়ে আসেন। সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা পাননি। তার বড় মামার বিশাল লাইব্রেরিতে মায়ের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এভাবেই তার বিদ্যাচর্চার পরিধি বাড়তে থাকে। সে সময় পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বেগম রোকেয়া ও সারা তৈফুরের লেখা পড়ে তার সাহিত্য সৃষ্টির অভিলাষ জাগে এবং তিনি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
কবি সুফিয়া কামালের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন বড় মাপের কবি এবং স্বৈরশাসনবিরোধী সাংস্কৃতিক নেত্রী ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বরিশাল থেকে প্রকাশিত ‘তরুণ’ পত্রিকায় সৈনিক বধূ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ ঘটে। সুফিয়া কামালের বিয়ে হয় ১২ বছর বয়সে তারই মামাতো ভাই নেহাল হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি শায়েস্তাবাদ ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে বরিশালে চলে আসেন এবং পরে স্বামীর সঙ্গে কলকাতা চলে যান। এসেই পরিচিত হয়েছেন সাহিত্য সমাজে। পূর্ব পরিচয় থাকলেও কলকাতায় আসার পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ১৯৩২ সালে স্বামী নেহাল হোসেন মারা যাওয়ার পর তিনি মর্মাহত হন। সেই সঙ্গে পারিবারিক অসহযোগিতা সইতে না পেরে তিনি এক হাতে বিধবা মা, অন্যহাতে কন্যাশিশুটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে আসেন। শুরু হয় তার কঠিন এবং সংগ্রামী জীবন। কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তিনি কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পাশাপাশি চলে তার সাহিত্য চর্চা। কবি কাজী নজরুল ইসলাম সুফিয়া কামালকে সওগাত সম্পাদক নাসির উদ্দীনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এ পরিচয় কবির জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তার প্রথম গল্প ‘কেয়ার কাঁটা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৩৮ সালে। সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হলো—সাঁজের মায়া, একাত্তরের ডায়েরি, মায়া কাজল, উদাত্ত পৃথিবী, ইতলবিতল, কেয়ার কাঁটা ও সোভিয়েত দিনগুলো। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তার কবিতা অনুবাদ হয়েছে। ১৯৩৯ সালে তার আবার বিয়ে হয় কামালউদ্দীন খানের সঙ্গে। শুরু হয় তার আবার নতুন জীবন। কামালউদ্দীন ছিলেন প্রগতিবাদী সাহিত্যপ্রেমিক। স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি শুরু করেন সমাজকর্ম ও জনসেবা। বরিশালে মাতৃমঙ্গল সেবাসদনের কাজ দিয়ে সুফিয়া কামালের সমাজসেবী কর্মজীবনের শুরু হয়।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল নারী জাগরণ এবং আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার জীবনই ছিল কর্মময়। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন স্নেহময়ী মা, আপসহীন নেত্রী। এই ছোট্ট পরিসরে তার ব্যাপক কর্মময় জীবনের খুব সামান্যই তুলে ধরা হলো। সুফিয়া কামাল ১৯২৫ সালে অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীজি বরিশাল এলে তিনি নিজের চরকায় সুতা কেটে গান্ধীজির হাতে তুলে দেন। তিনি ইন্ডিয়ান উইমেন্স ফেডারেশনের প্রথম মুসলিম মহিলা সদস্য মনোনীত হন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রতিষ্ঠিত আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে তিনি কাজ করেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় কলকাতায় লেডি ব্রেবোন কলেজে আশ্রয় কেন্দ্র পরিচালনা করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকায় মহিলাদের সংগঠিত করে মিছিলের আয়োজন এবং মিছিলে নেতৃত্বসহ সামগ্রিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ওয়ারি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রথম সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে তার নেতৃত্বে ঢাকায় ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী নিবাসের নাম ‘রোকেয়া হল’ করার প্রস্তাব পেশ করা হয়।
১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠন এবং সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা শহরেই অবরুদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন। সুফিয়া কামাল একজন মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। এদেশের অবহেলিত, নির্যাতিত, শোষিত নারীসমাজের জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। নারীদের সাহসী, সংগ্রামী এবং আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। বেগম সুফিয়া কামাল জীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ সংগ্রামী মহীয়সী নারী আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সংগ্রামী এক সাহসী কর্মময় জীবন বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। তার লেখা গল্প, কবিতা, ছড়া আমাদের মনের মণিকোঠর থাকবে জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়ে। আসছে ২০ জুন আমাদের সবার প্রিয় কবির জন্মদিন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি। 

সূত্র : আমার দেশ

যেমন করে বাবা দিবস ।। হাসান তারেক

বাবা দিবসের ইতিহাস নিয়ে মতভেদ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হ্যারিমেক দাবি করেন ১৯১৫ সাল থেকে তিনি বাবা দিবস পালন শুরু করেন। নিজের জন্মদিনের কাছাকাছি একটা দিনই তিনি বাবা দিবস হিসেবে পালন করেছিলেন। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মিসেস চার্লস ক্লেটন তার বাবার জন্মদিন পালন করেন যেদিন, সেটিই পরবর্তীকালে বাবা দিবস হয়েছে বলে অভিমত তার। তার মতে, আমেরিকান চার্চগুলো বাবা দিবস পালন শুরু করে ১৯০৮ সাল থেকে। বাবা দিবস প্রচলনের ক্ষেত্রে মিস সনোরা লুইস স্মার্ট ডডের কাহিনীটি বেশ গ্রহণযোগ্য। ডডের জন্ম ১৮৮২ সালে আমেরিকার আরাকানসে। জ্যাকসন স্মার্ট ও মাইলেন স্মার্টের ছয় সন্তানের মধ্যে সনোরা ছিলেন সবার বড়। তার বাবা ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা। স্টেটসের বিভিন্ন জায়গায় কাজের জন্য ছোটার কারণে শৈশবে সনোরা বাবাকে কাছে পাননি। বড়সন্তান হিসেবে পরিবারের অনেক দায়িত্ব চলে আসে তার কাঁধে। এ সময় তার পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবা। সামরিক দায়িত্বের শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাবা তার ছয় সন্তানকে পরম মমতায় আগলে রাখলেন। মায়ের অভাব বুঝতে দিলেন না। বাবার রূপ বিস্মিত করে সনোরাকে। বাবা হয়ে ওঠে তার কাছে মহীরুহ। মা’কে সম্মান জানানোর জন্য যখন চলছিল একটি দিবস উদযাপনের পরিকল্পনা, সনোরা ভাবলেন মা দিবস হলে বাবা দিবসও থাকা উচিত। বাবা দিবস প্রচলনের চেষ্টায় নামলেন তিনি। এ নিয়ে প্রচারণা চালালেন বছরদুয়েক। ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবস পালন করা হলো। বাবা দিবসের প্রচলন করেই ক্ষ্যান্ত হননি সনোরা, দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালনের জন্য ক্যাম্পেইনে নামেন। সাড়াও পান প্রচুর। উইলিয়াম ডেনিংস ব্রায়নের মতো রাজনীতিক তার কণ্ঠে কণ্ঠ মেলালেন। আমেরিকার প্রায় প্রতিটি শহরেই উত্সব আমেজে বাবা দিবস পালন শুরু করে। দিবসটি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো একটা সময়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১৬ সালে বাবা দিবসের ধারণাকে অনুমোদন দেন। তবে বাবা দিবসের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেতে সময় লেগেছিল আরও অনেক বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিনডন জনসন ১৯৬৬ সালে বাবা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের ঘোষণা দেন। তারও কয়েক বছর পর প্রেসিডেন্ট নিক্সন স্থায়ীভাবে বাবা দিবস পালনের বিল পাস করেন। এর দু’বছর পর ১৯৭৪ সালে বাবা দিবসের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সনোরা লুইস স্টার্টকে সম্মাননা দেয়া হয়। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে বাবা দিবস পালন করা হচ্ছে ১৯ জুন। তবে সাধারণ হিসেবে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। 

সূত্র : আমার দেশ

ইয়াহুতে লগইন করা যাবে গুগল বা ফেসবুক দ্বারা ।। এসএম মেহেদী আকরাম

জনপ্রিয় ইমেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ইয়াহু অ্যাকাউন্টে অন্য অ্যাকাউন্ট দ্বারা লগইন করার সুবিধা দিয়েছে। ফলে ইয়াহুতে লগইন করতে ইউজার-পাসওয়ার্ড ছাড়াই ফেসবুক বা গুগলে লগইন করা থাকলে সরাসরি নির্দিষ্ট ইয়াহু অ্যাকাউন্টে লগইন করা যাবে।

ফেসবুক দ্বারা লগইন করা

ইয়াহুতে লগইনের সময় নিচের দিকে Sign in with: এর নিচের ফেসুবকের আইকনে ক্লিক করুন, তাহলে একটি পপআপ উইন্ডো আসবে। এবার ফেসুবকে লগইন করা থাকলে (লগইন না করা থাকলে লগইন করে) অষষড় িবাটনে ক্লিক করুন। এখন উপরের ডানে Already have a Yahoo! ID? Gi Sign in to connect-এ ক্লিক করুন এবং ইয়াহুর আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ঝরমহ ওহ বাটনে ক্লিক করুন তাহলে ইয়াহুতে লগইন হবে। এরপর থেকে ইয়াহুতে লগইন করতে ফেসবুকের আইকনে ক্লিক করলে ফেসবুক লগইন করা থাকলে ইয়াহুতে লগইন হবে।

গুগল দ্বারা লগইন করা

এজন্য নিচের Sign in with: এর নিচের গুগলের আইকনে ক্লিক করুন, তাহলে একটি পপআপ উইন্ডো আসবে। এবার গুগলে লগইন করা থাকলে (লগইন না করা থাকলে লগইন করে) Remember this Approval চেক রেখে Allow বাটনে ক্লিক করুন এবং ইয়াহুর আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে Sign ওহ বাটনে ক্লিক করুন, তাহলে ইয়াহুতে লগইন হবে। এরপর থেকে ইয়াহুতে লগইন করতে গুগলের আইকনে ক্লিক করলে গুগলের ওই অ্যাকাউন্টে লগইন করা থাকলে ইয়াহুতে লগইন হবে। এছাড়াও ইয়াহুতে লগইনের সময় ইয়াহু আইডি’র স্থলে জিমেইল ঠিকানা লিখে পাসওয়ার্ড দিয়েও লগইন করা যাবে।

ফেসবুক দ্বারা লগইন করার সুবিধা বাদ দেয়া

এজন্য ফেসুবকে লগইন করে Account>Privacy Settings এ গিয়ে নিচের Apps and Websites-Gi Edit your settings for using apps, games and websites-এ ক্লিক করুন। Apps you use-Gi Edit Settings বাটনে ক্লিক করে Yahoo! আইকনের ডানের ঢ বাটনে ক্লিক করলেই হবে।

গুগল দ্বারা লগইন করার সুবিধা বাদ দেয়া

এজন্য গুগলে লগইন করে www.google.com/dashboard এ ঠিকানায় গিয়ে Websites authorized to access the account-এ ক্লিক করে অথবা সরাসরি www.google.com/accounts/IssuedAuthSubTokens ঠিকানাতে যেতে হবে। এবার open.login.yahoo.com এর Revoke Access এ ক্লিক করলেই হবে।

জিমেইলের বহুমুখী ব্যবহার ।। এম. হারুন অর রশিদ

জিমেইলের পটভূমিতে নিজের ছবি
জিমেইল সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। জিমেইলে থিম ব্যবহারের সুবিধা অনেক আগেই দেয়া হয়েছে, সঙ্গে ছিল নিজস্ব থিম ব্যবহারের সুবিধা। সম্প্র্রতি নিজস্ব থিমে নিজস্ব ছবি আপলোড করার সুযোগ দিল। ফলে ব্যবহারকারীরা জিমেইলে নিজের পছন্দের ছবি ব্যবহার করতে পারবে।
এজন্য জিমেইলে লগইন করে Mail Settings-এ ক্লিক করুন। এবার ঞযবসবং ট্যাবে ক্লিক করে নিচে Create your own theme-এ ক্লিক করুন, তাহলে পপআপ উইন্ডো চালু হবে। এবার মূল অংশে (উপরে) ক্লিক করলে Main Background নামে একটি রঙের চার্ট আসবে যার নিচে Background Image-এর Select এ ক্লিক করলে একটি পপআপ উইন্ডো আসবে। এখানে পিকাসা আ্যাালবাম থেকে ছবি পছন্দ করে অথবা কম্পিউটার থেকে JPG, GIF বা PNG ফরম্যাটের ছবি আপলোড করে সেট করুন। এভাবে ফুটারের ছবিও যুক্ত করতে পারেন। সব শেষে ঝধাব বাটনে ক্লিক করে দেখুন জিমেইলে ছবিটি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাতে জিমেইল

জিমেইলকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রযোজন নেই। কমবেশি প্রায় সবারই জিমেইল অ্যাকাউন্ট আছে। তবে জিমেইল নিয়ে নতুন করে কথা বলার কারণ হচ্ছে, জিমেইল এখন আমাদের প্রাণের ভাষা মাতৃভাষা বাংলাতে ব্যবহার করা যাচ্ছে। বাংলাতে জিমেইল পেতে অবশ্যই আপনার কম্পিউটারে বাংলা কনফিগার করা থাকতে হবে।
এবার আপনার জিমেইল বাংলা ভাষাতে রূপান্তর করতে জিমেইলে লগইন করে সেটিং-এ ক্লিক করুন। এখন জেনারেল ট্যাবে ক্লিক করে উপরে ষধহমঁধমব এর অংশ থেকে Gmail display language-এর ড্রপডাউন থেকে বাংলা ভাষা নির্বাচন করুন। সবশেষে নিচের সেভ বাটনে ক্লিক করুন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার জিমেইল বাংলাতে রূপান্তর হয়ে যাবে। এখন থেকে মাতৃভাষা বাংলাতে জিমেইল উপভোগ করুন।

জিমেইলে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত মেইল ফিরিয়ে আনা যাবে

জিমেইলে এতদিন পর্যন্ত মেইল আনডু (সেন্ড করার পরে ফিরিয়ে আনা) করার সুবিধা ছিল ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। তবে এখন থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত মেইল আনডু সেন্ড করা যাবে। এজন্য জিমেইলে লগইন করার প েউপরের ডানে Settings-এ ক্লিক করুন এবং General ট্যাবে থাকা অবস্থায় Undo Send: এ Enable Undo Send চেক করে ড্রপ ডাউন থেকে ৩০ নির্বাচন করে সেভ করুন।
আর যদি General ট্যাবে Undo Send না থাকে তাহলে খধনং ট্যাবে যান। এবার Undo Send-এর অপশন Enable বাটন নির্বাচন করে সেভ করুন। এবার General ট্যাবে এসে দেখুন Undo Send এসেছে। ব্যাস, এবার থেকে মেইল করলে উপরে Undo আসবে যা স্থায়ী হবে ৩০ সেকেন্ড। এ অবস্থায় Undo তে ক্লিক করলে সেন্ড করা মেইল কম্পোজে ফিরে আসবে। তবে কিছু ব্রাউজারের পুরনো সংস্করণ জিমইলে ল্যাব সমর্থন করে না, সেক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন না

আরও দ্রুতগতিতে জিমেইল ব্রাউজ করুন

বর্তমানে জিমেইল বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি এটা লোড হতে দেরি হয় তাহলে বেশ বিরক্তিকর লাগে। যাদের ইন্টারনেটের গতি কম তারা চাইলে একটু চালাকি করে এবং কিছু সুবিধা বাদ দিয়ে জিমেইল দ্রুত লোড করতে পারেন। এমনই কিছু টিপস দেয়া হলো :
১. সাধারণভাবে জিমেইল লোড হওয়ার সময় বেশি সময় নিলে Ctrl+F5 চাপুন তাহলে খুবই দ্রুত জিমেইল ইনবক্স চলে আসবে।
২. জিমেইলের সাইটে প্রবেশের জন্য www.gmail.com না লিখে https://mail.google.com/mail লিখে প্রবেশ করুন। তাতে দ্রুত এবং নিরাপদে প্রবেশ করতে পারেন।
৩. যদি জিমেইল HTML মুডে চালু করতে চান তাহলে https://mail.google.com/mail/h লিখে প্রবেশ করুন। তবে স্ট্যান্ডার্ড মুডে পরিবর্তন করতে চাইলে পরে তাও করতে পারবেন।
৪. আপনি চাইলে মোবাইল সংস্করণেও (http://m.gmail.com) প্রবেশ করতে পারেন। কোনোরকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই মূল বিষয়গুলো এই সংস্কবণে পাবেন।
৫. এছাড়াও জিমেইল যদি ব্রাউজার চেক করে তাহলে তা বাদ নিতে চাইলে https://mail.google.com/gmail?nocheckbrowser লিখে প্রবেশ করুন।
৬. মেইলে প্রবেশের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেজে যেতে হয়। ফলে ৫০/১০০ মেইল লোড হতে গেলে বেশি সময় লাগে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫ মেইল দেখার ব্যবস্থা থাকলে খুব দ্রুত লোড হবে ৫০/১০০ এর তুলনায়।
৭. আর Standard Without Chat হিসেবে থাকলে বেশ দ্রুত লোড হবে।

ফেসবুক নিরাপত্তায় ।। মোঃ আহসান হাবিব

এক. ব্যক্তিগত গোপন (প্রাইভেসি) সেটিং সম্পর্কে জানা
আপনি দীর্ঘদিন ফেসবুক ব্যবহার করলেও নিজের গোপন সেটিং সম্পর্কে ধারণা না-ও থাকতে পারে। এমন অনেকেই আছেন, যারা কখনও এই অপশনটিতে প্রবেশ করেননি। কিন্তু ফেসবুকে নিজের তথ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোপন সেটিং সম্পর্কে জানা জরুরি।
এজন্য প্রথমেই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে হবে। এরপর ওপরে ডান দিকে অ্যাকাউন্ট মেন্যুতে ক্লিক করে প্রাইভেসি সেটিংয়ে আবার ক্লিক করতে হবে। প্রাইভেসি সেটিং পেজটি এলে সেটিং টেবিল থেকে কাস্টমাইজ সেটিংয়ে ক্লিক করতে হবে। এখন নির্ধারণ করুন, বন্ধু, বন্ধুর বন্ধু অথবা সবার সঙ্গে কী কী এবং কোন কোন তথ্য আপনি শেয়ার করতে চান অথবা চান না।
এখানেই শেষ নয়। এরপর ভিউ সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এখন দেখতে পাবেন অন্যরা আপনার ফেসবুকের পেজটি কেমন দেখতে পাবেন। এভাবে নিজের কোন ধরনের তথ্য আপনি শেয়ার করতে চান, তা সহজেই নির্ধারণ করতে পারবেন।

দুই. কী তথ্য পোস্ট করছেন তা ভালোভাবে দেখা
ফেসবুকে আপনি ইচ্ছেমত মনের কথা, কবিতা-গল্প-গানের লাইন ও তথ্য পোস্ট করতে পারেন। পোস্টের লেখা দেখতে পাবে আপনার ফেসবুক বন্ধুরা। আপনি হতে পারেন যে কোনো মানুষের বন্ধু। যাকে হয়তো কখনও চোখে দেখেননি, এমন মানুষেরও। ডিজিটাল যুগে এ ধরনের অনেক কিছুই সম্ভব। তবে কিছু বিষয় থাকে একান্তই গোপনীয়। তাই আপনি কী তথ্য পোস্ট করছেন, সেটা ভালোভাবে দেখে তারপর পোস্ট করা উচিত। তাই নিজের তথ্যের নিরাপত্তার প্রথম বিষয় হচ্ছে কী তথ্য পোস্ট করছি, সেটা ভালোভাবে ভেবে-চিন্তে পোস্ট করা।

তিন. তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণে রাখা
বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের পাশাপাশি আরও বেশকিছু সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট রয়েছে। এসব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন প্রদানের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের ওয়েবসাইট থেকে অনেক সময় আপনার ফেসবুক পেজে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের অনুরোধ আসে। ফেসবুকের পাশাপাশি অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে এ ধরনের অনুরোধ এলে ভালোভাবে না জেনে তা গ্রহণ করা ঠিক নয়। ওই অ্যাপ্লিকেশনের কারণে আপনি যতবার বা যতক্ষণ অনলাইনে থাকেন, তার চেয়েও বেশি সময় দেখাতে পারে। এমনকি আপনার ফেসবুক পেজেও তারা প্রবেশ করতে পারে। যদি তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনার ফেসবুক প্রাইভেসি সেটিংয়ের এডিট সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এরপর কোন কোন অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইট আপনি গ্রহণ করবেন, সেটা নির্ধারণ করুন। এর ফলে ওই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোই আপনার পেজে দেখা যাবে।

চার. নিয়মিত তথ্য কাটছাঁট করা

অনেকেই আপনাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠাতে পারে। আপনি সেগুলো গ্রহণও করতে পারেন। কিন্তু যদি কেউ আপনাকে বিভিন্নভাবে বার্তা বা তথ্য দিয়ে বিরক্ত করতে থাকে কিংবা অপ্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাতে থাকে; তখন ওই বন্ধুকে তালিকা থেকে বাদ দেয়াই ভালো। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে বন্ধুদের তালিকা হালনাগাদ করাও ভালো। এভাবে কাউকে বাদ দিলে এজন্য ফেসবুক থেকে কোনো ধরনের বার্তা বা সতর্কতা আপনাকে পাঠাবে না। তাছাড়া অপ্রয়োজনীয় নিজের অনেক তথ্যও বাদ দেয়া বা মুছে ফেলা যেতে পারে। মোট কথা, নিয়মিত নিজের পেজের তথ্য কাটছাঁট করা ভালো। নিজের বার্তা, বন্ধুর অনুরোধসহ অন্যান্য তথ্য নিয়মিত কাটছাঁট করলে তথ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছেই থাকে।

পাঁচ. অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে

ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার পর কোনো কারণে যদি আর ব্যবহারের ইচ্ছা না থাকে, তবে অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্র্রিয় করাই ভালো। তাহলে নিজের তথ্য হারানো বা অন্যের কাছে পৌঁছানোর আর কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্র্রিয় করতে অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে গিয়ে একেবারে নিচের দিকে ‘ডিঅ্যাকটিভেট’ লিঙ্কটি পাওয়া যাবে। এটিতে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তবে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্র্রিয় হওয়া মানেই অ্যাকাউন্ট একেবারে হারিয়ে যাওয়া (ডিলিট) নয়। আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একেবারে মুছে ফেলতে চাইলে তাও করতে পারবেন। স্থায়ীভাবে অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে অ্যাকাউন্টের মধ্যে হেল্প সেন্টারে ক্লিক করতে হবে। এরপর পার্মানেন্টলি ডিলিট অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। এছাড়া http://on.fb.me/3qsIFP এই লিঙ্কের মাধ্যমেও সরাসরি মুছে ফেলা অপশনে যাওয়া যাবে।
 
বদলে যাচ্ছে ফেসবুক কাঠামো
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় কোটি মানুষ ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। সম্প্রতি ফেসবুকের এই বিপুল জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। ‘দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ নামের এই চলচ্চিত্রটি আমেরিকার বক্স অফিস হিটও করে। তবে এই চলচ্চিত্রটি কিন্তু ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা জুকেরবার্গের জন্য খুব একটা আনন্দ বয়ে আনেনি। বরং তার ইমেজে খানিকটা কালি লাগিয়েছে বক্স অফিস হিট এই সিনেমা। সেখানে জুকেরবার্গকে তুলে ধরা হয়েছে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আর কাটখোট্টা এক তরুণ হিসেবে।
২৬ বছর বয়সী এই তরুণের ওয়েবসাইটে নিয়মিত আনাগোনা থাকে বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষের। সেই ফেসবুক নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এর নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক নেই। বিজ্ঞাপনী মানসিকতা বেশি। মোটের ওপর তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা নিয়েও সমস্যা রয়েছে ফেসবুকে। এতসব বিতর্কের আপাত অবসান ঘটানোয় এবার সচেষ্ট ফেসবুক। সম্প্রতি সংস্থাটি অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এখন থেকে কেউ ফেসবুক ছেড়ে চলে যেতে চাইলে, তিনি তার প্রোফাইলের সবকিছু ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন কম্পিউটারে। বলাবাহুল্য, এমন সুবিধার কারণে ফেসবুকত্যাগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জুকেরবার্গ এ বিষয়টিকে আপাতত আমলে নিচ্ছেন না। আরও যে সুবিধা ফেসবুকে যোগ হয়েছে, তা হচ্ছে বন্ধুদের গ্রুুপ তৈরি। এটা আগেও ছিল। তবে সেটা গ্রুপ নয়, লিস্ট। পার্থক্য হচ্ছে গ্রুুপ আকারে বন্ধু আর সহকর্মীদের মধ্যে দেয়াল তোলা যাবে। দেয়াল তোলা যাবে আলাদা ধরনের পরিচিতদের মধ্যেও। আর এমন সব সুবিধাই তো চাইছে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। ফেসবুকের নতুন এই রূপ দেখে অনেকেই মনে করছেন, তাহলে সিনেমাই কি বদলে দিল ফেসবুক কাঠামো!

আরও কিছু নতুন সংযোজন
ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর জন্য ্তুওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড সুবিধা চালু করেছে ফেসবুক। ফেসবুক জানিয়েছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই অন্যের কম্পিউটার ব্যবহার করে ফেসবুকে লগ-ইন করেন। অনেক কম্পিউটারেই বিভিন্ন ধরনের ‘কি লগার’ সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে, যেগুলো ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করে রাখে। অনেক সময় ব্রাউজারও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে। ফলে পরবর্তী সময়ে অন্য ব্যবহারকারী এসব পাসওয়ার্ড দেখার সুযোগ পায়। এ ঝুঁকি থেকে ব্যবহারকারীদের রক্ষা করতে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ ফিচার চালু করা হয়েছে।
ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কেবল ২০ মিনিটের জন্য কার্যকর থাকবে। ফলে অন্য কেউ পরবর্তী সময়ে এই পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও ফেসবুকে লগ-ইন করতে পারবে না। নতুন এ সুবিধা চালুর ফলে ব্যবহারকারীরা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে যুক্ত ফোন নম্বর থেকে ফেসবুকের অফিশিয়াল নম্বর ৩২৬৬৫ (FBook) G OTP লিখে এসএমএস পাঠালেই ফিরতি এসএমএসে একটি টেম্পোরারি পাসওয়ার্ড পাবেন। এ পাসওয়ার্ডটি দিয়ে যে কোনো কম্পিউটার থেকেই নিশ্চিন্তে লগ-ইন করতে পারবেন। ব্যবহারকারীদের এ টেমপোরারি পাসওয়ার্ড ২০ মিনিটের জন্য কার্যকর থাকবে। তবে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে শুধুমাত্র বাংলালিংক ব্যবহারকারীরাই এ সুবিধাটি পাচ্ছেন।

চালু হলো ‘ফেসবুক প্লেস’

ফেসবুকে ব্যবহারকারীর অবস্থান বন্ধুদের জানাতে ‘ফেসবুক প্লেস’ সুবিধা চালু করেছে ফেসবুক। ব্যবহারকারীরা এ সুবিধার মাধ্যমে তাদের ফেসবুক বন্ধু কোন এলাকায় অবস্থান করছেন, তা জানতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পাবেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সুবিধাটি উদ্বোধন করেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকেরবার্গ। তিনি বলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজস্ব জিপিএস বা স্যাটেলাইট পজিশনিং ট্র্যাকিংনির্ভর স্মার্টফোন ব্যবহার করলে তাদের সর্বশেষ অবস্থানের তথ্য বন্ধুরা জানতে পারবেন। ব্যবহারকারী রেস্টুরেন্ট বা বার, যেখানেই থাকুন, মুহূর্তেই তা জানতে পারবেন বন্ধুরা, যা সামাজিক যোগাযোগকে আরও প্রাণবন্ত করবে।
এরই মধ্যে ফেসবুক প্লেস সুবিধাসংবলিত ফিচার নিয়ে আইফোনের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন বাজারে ছেড়েছে ফেসবুক। অন্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরাও জিও লোকেশন এবং এইচটিএমএল ফাইভ প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ব্রাউজার থেকে এ সুবিধা পাবেন।

ভূত তৈরির কলা-কৌশল ।। সারোয়ার সোহেন

ভূত!! ভূত আমাদের কল্পকাহীনি গুলিতে নানাভাবে তাদের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। নানী-দাদীরা সেই তখনকার সময় থেকেই তাদের নাতী-নাতনীদের ভূতের গল্প শুনিয়ে আসছেন। তবে ইদানিং ডিজিটাল যুগের নাতী-নাতনীরা আর সেই ভূতের গল্প শুনতে চায় না। তারা খুব ভালোভাবেই জানে - “ভূত বলে কিছু নেই”। আবার অনেকে হয়তো বিশ্বাস করে ভূতের অস্তিত্বে। যাইহোক, ভুত আছে কি নেই তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা। ভূতের গল্প শোনাতে না পেরে নানী-দাদীদের মনের অবস্থা কেমন সেটাও আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমরা আজ দেখবো কি করে একটি ভূত তৈরি করা যায়। অনেকের ধারনা মানুষ অপঘাতে মারা গেলে ভূত হয়ে যায়। না ভয় নেই, আমরা কাউকে অপঘাতে মারার প্লান তৈরি করছি না।



আমরা যে ভূত তৈরি করবো তার জন্য আমাদের লাগবে কিছু তারের বেড়া, কিছু তার, কিছু পেরাক আর গ্লাভর্স। এগুলি নিয়ে একটা বনের ধারে চলেন।




প্রথমে হাতে গ্লাভর্স পরে নিয়ে তারের বেড়াটিকে একটি গোল পাইপের মতো করে নিয়ে তার দিয়ে বেঁধে ফেলতে হবে। এবার তৈরি করা তারের পাইপটির একপাশ মাটিতে দাঁড়করিয়ে পেরাক মাটিতে গেঁথে দিতে হে।




এবার উপরের দিকটিকে সামান্য চিকন করে নিতে হবে।





উপরিভাগ একটু সামনের দিকে ঝুকিয়ে দিয়ে একটি মানুষের মাথার আকৃতি তৈরি করতে হবে। মাঝামাঝি আংশে কোমর ও হাতের আদল দিতে হবে। কাজ শেষ, তৈরি হয়ে গেছে আমাদের ভূত।



এবার দেখুন কেমন দেখা যাবে আমাদের ভূতটিকে বিভিন্ন দূরত্বে...






আগামীতে আবার দেখা হবে অন্য কিছু মজার ছবির সাথে, ততোদিন সকলেই ভালো খাকবেন।



এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

নয়নাভিরাম লাল শাপলা ।। হাসান মাহবুব

 
জলবায়ু পরিবর্তন, জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও খাল-বিল-জলাশয় ভরাট সত্বেও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপকূলীয় এলাকায় এখনও রয়েছে লাল শাপলার কিছু অস্তিত্ব। এক সময় বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের খাল-বিলে ফুটে থাকত নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত ঝিল-বিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা জন্মাত। মানুষের খাদ্য তালিকায় আবহমান কাল থেকে যুক্ত ছিল শাপলা। এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রাকৃতিকভাবে আগের মতো আর শাপলা জন্মাচ্ছে না। কৃষি জমিতে ট্রাক্টরসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি আর কীটনাশকের ব্যবহার বোরো ধানক্ষেতে এবং খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে মাছ চাষে ব্যাপকতা পাওয়াই এর বিলুপ্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরৎকালে খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত অগণিত শাপলা। সকালের দিকে জলাশয়ে চোখে পড়ত রংবেরংয়ের শাপলা ফুল। শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। মনে অনাবিল প্রশান্তি বয়ে যেত। আজ খাল-বিল, মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত শাপলা। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকায় বিবেচিত হতো শাপলা, মেটাত পুষ্টির চাহিদা। এর ভেষজ গুণও কম নয়। হৃদরোগ, পিত্তজ্বালা, আমাশয়সহ অনেক রোগের ওষুধ এটি। সবজি হিসেবে শাপলার কদর এখনো বেশ। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। তবে এখনো ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের অন্যতম খাদ্য এ শাপলা, যা পুষ্টি চাহিদার বিশাল জোগান দেয়। গলাচিপা উপজেলার রাংগাবালী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বারেক বিল থেকে শাপলা তুলছিলেন। তিনি জানান, ১১-১২ বছর বয়স থেকে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে শাপলা তুলে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো আর এটি পাওয়া যায় না। তিনি আর জানান, শাপলা সবজি হিসেবে রান্না করে এবং সেদ্ধ করে আলুর মতো মাছের সঙ্গে খাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ-সাত বছর আগেও এখানে খাল-বিল-পুকুরে প্রচুর শাপলা পাওয়া যেত। ধানের ক্ষেত, খাল-বিল ও পুকুরে যেখানে পানি, সেখানেই পাওয়া যেত শাপলা। এখন আর আগের মতো সে রকম জন্মে না। উপজেলা কৃষি দফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন জানান, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো সরকারি অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে শুকিয়ে রাখার কারণে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হলেও সরকারিভাবে এর অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

Monday, June 20, 2011

পবিত্র কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশচন্দ্র সেন

গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৪ বাংলা ১২৪১ - ১৯১০)। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামে তিনি অধিক পরিচিত। তাঁর প্রধান পরিচয় ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন- এর প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে। তখন প্রায় ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, মূলভাষা থেকে অনূদিত হলে গ্রন্থটির পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হবে। পবিত্র কুরআন সম্পর্কেও এমন ধারণা ছিল। এ কারণে অনেক মুসলিম মনীষী এর বঙ্গানুবাদ করতে সাহস পাননি। গিরিশচন্দ্র সেনই অন্য ধর্মালম্বী হয়েও এই ভয়কে প্রথম জয় করেন। শুধু কুরআন শরীফের অনুবাদ নয় তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক গবেষণাও করেন।

খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বেই উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলে বিজেতা মুসলমানদের আগমন ঘটে৷ কিন্তু বণিক ও ধর্মপ্রচারক হিসাবে এখানে মুসলমানদের পদার্পণ ঘটে তারও অনেক আগে৷ তবুও মুসলমানদের সর্বপ্রধান ও মূল জীবন ব্যবস্থা সম্বলিত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ ১৮৭৬ খ্রি. পর্যন্ত এদেশে প্রকাশিত হয়নি৷ তখন আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষাবিজ্ঞ আলেমের অভাব এদেশে ছিল না৷ তাদের মধ্যে কারও কারও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর ভাল দখলও ছিল, তাদের রচিত ও অনূদিত বিভিন্ন পুস্তক হতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়৷ কিন্তু এদিকে মনোযোগ তাদের কারও হয়নি৷ এই মহান কাজ সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন করেন বাংলার একজন হিন্দু সন্তান-ভাই গিরিশচন্দ্র সেন৷ তিনি এই মহান কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ব্রাহ্মসমাজের আচার্য কেশবচন্দ্র সেনের আদেশে৷

জন্ম ও বংশপরিচয়
পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক এবং হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর প্রথম বাঙালি জীবনীকার ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বর্তমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এক বিখ্যাত দেওয়ান বৈদ্যবংশে ১৮৩৫ খ্রী. জন্মগ্রহণ করেন। গিরিশচন্দ্রের পিতা ছিলেন মাধবরাম সেন এবং পিতামহ ছিলেন রামমোহন সেন। গিরিশচন্দ্ররা ছিলেন তিন ভাই। ঈশ্বরচন্দ্র সেন, হরচন্দ্র সেন এবং সর্বকনিষ্ঠ গিরিশচন্দ্র সেন। ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের পরিবার ছিল অত্যন্ত গোঁড়াপন্থি। পরিবারে সনাতন ধর্মের আচরণ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বাড়াবাড়ি রকমভাবেই মেনে চলা হতো। এমন একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে জন্ম নিয়েও গিরিশচন্দ্র সেন একজন সম্পূর্ণ সংস্কার মুক্ত মানুষ হয়েছিলেন। অন্য ধর্মের উপর গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।


বাল্যকাল ও আরবী শিক্ষা

দশ বছর বয়সের সময় গিরিশচন্দ্র সেনের বাবা মারা যান৷ বড় দাদা তাঁকে ঢাকায় নিজের কাছে আনেন এবং ঢাকার পোগোজ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি বেশিদিন বিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা হয়নি। তাঁর বিদ্যালয় ছাড়ার কারণ নিয়ে একটি ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। একদিন তিনি শ্রেণীকক্ষে দেখলেন শিক্ষক তাঁর এক সহপাঠীকে পড়া না পারার জন্য খুব মারছেন। এই দেখে তাঁর মনেও ভয় ধরে গেল, শিক্ষক যদি তাঁকেও মারেন। এই ভয়ে তিনি বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে বাসায় চলে এলেন। তাঁর বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার এখানেই সমাপ্তি। এরপর তিনি পাঁচদোনায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তার পাশের গ্রাম শানখোলায় কৃষ্ণ চন্দ্র রায় নামে একজন খুব ভালো ফারসি জানা লোকের কাছে গিরিশচন্দ্র ফারসি ভাষা শিখতে শুরু করেন। বছর দুয়েকের মধ্যে ফারসি ভাষা তিনি বেশ ভালো ভাবেই আয়ত্ব করে ফেলেন। গিরিশচন্দ্র ময়মসিংহের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও কাজী মৌলবী আব্দুল করিম সাহেবের কাছে রোক্কাতে আল্লামী অধ্যয়ন করেন।



১৮৭৬ সালের আরবি শিক্ষার জন্য গিরিশ চন্দ্র লক্ষ্মৌ যান। লক্ষ্মৌ ব্রাহ্ম সমাজের আনুকূল্যে এবং সহযোগিতায় জ্ঞানবৃদ্ধ মৌলবী এহসান আলী সাহেবের কাছে আরবি ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজের পাঠ গ্রহণ করেন। লক্ষ্মৌ থেকে কলকাতায় ফিরে একজন মৌলবীর কাছে এ বিষয়ে আরও কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকায় নলগোলায় মৌলবী আলিমউদ্দিন সাহেবের কাছে আরবি ইতিহাস ও সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন।

কর্মজীবনে প্রবেশ

বেশ কিছুদিন বেকার বসে থাকার পর তিনি তাঁর মেজভাইয়ের সাথে চাকরির খোঁজে ময়মনসিংহ গমন করেন। সেখানে তিনি ময়মনসিংহ জেলাস্কুলে সহকারী শিক্ষকের (দ্বিতীয় পন্ডিত) পদে যোগদান করেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্র সামান্য এক চাকরির মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে পারলেন না। তাঁর ছিল জ্ঞানের পিপাসা। তিনি নিজে নিজেই পড়াশোনা শুরু করলেন। এরপর গিরিশচন্দ্র ময়মনসিংহে নবপ্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঠ সম্পন্ন করেন৷ অতপর তিনি নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন এবং ফাইনাল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন৷ সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাও শুরু করলেন গিরিশচন্দ্র। তৎকালীন ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'ঢাকা প্রকাশ' পত্রিকায় তিনি ময়মনসিংহের সংবাদদাতা ছিলেন। তাছাড়া এই পত্রিকায় তাঁর অনেকগুলো লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।


ব্রাহ্ম ধর্মের দীক্ষালাভ
চাকরি ছেড়ে দিয়ে গিরিশচন্দ্র কলকাতায় গমন করেন। কলকাতায় যাওয়ার পর তাঁর সাথে দেখা হয় রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মের তৎকালীন প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের। সে সময় কেশবচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের নববিধান শাখার প্রধান। তাঁরই প্রভাবে গিরিশচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজ তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ভাই উপাধিতে ভূষিত করে।

কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক
কেশবচন্দ্রের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনাতে তিনি ফারসি ভাষায় আরো গভীর জ্ঞান লাভ এবং আরবি-ফারসি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা করার জন্য কানপুরলখনউ গমন করেন। ফিরে আসার পর কেশবচন্দ্রের উৎসাহেই তিনি ইসলামি দর্শনের উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য প্রধান বাঁধাই ছিল ভাষা। হিন্দুখ্রিস্ট ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহ অনেক আগেই বাংলায় অনূদিত হয়েছিল, কিন্তু ইসলাম ধর্মের কোন ধর্মশাস্ত্রই বাংলাভাষায় ছিলনা। বিশেষ করে পবিত্র কুরআন ও হাদিস তখনো বাংলায় প্রকাশিত হয়নি। যার ফলে কুরআনের মর্মার্থ অনুবাধন করা থেকে বৃহত্তর মুসলিম গোষ্ঠী পুরোপুরিই বঞ্চিত ছিল। তাই ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভা ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই, আরবি-ফারসি ভাষার সুপন্ডিত ভাই গিরিশচন্দ্র সেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ দায়িত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন।

লেখক গিরিশচন্দ্র সেন
তিনি কুরআন শরীফের সম্পূর্ণ অংশ, মিশকাত শরীফের প্রায় অধিকাংশ, হাদিস, তাজকিরাতুল আউলিয়া, দিওয়ান-ই-হাফিজ, গুলিস্তাঁ, বুঁস্তা, মকতুব্বত-ই-মাকদুস, শারফ উদ্দিন মুনিবী, মসনভী-ই-রুমী, কিমিয়া-ই-সাদত, গুলশান-ই-আসরার ইত্যাদিসহ বহু ইসলামি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।


বিভিন্ন গ্রন্থাবলী রচনা
তাঁর প্রথমগ্রন্থ ব্রহ্মময়ী-চরিত(জীবনী) প্রকাশিত হয় ১৮৬৯ সালে। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ 'হিতোপদেশমালা'-র গল্পগুলো ছিল কবি শেখ সাদির গুলিস্তাঁ গ্রন্থের কিছু গল্পের অনুবাদ। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার গিরিশ প্রেস থেকে। 'ধর্ম ও নীতি' প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালের ১৮ জুলাই কলকাতার ওল্ড ইন্ডিয়ান প্রেস থেকে। এরপর তিনি 'আকসিরে হেদায়েত' থেকে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন 'ধর্ম-বন্ধু' গ্রন্থটি। এটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার বাহ্মসমাজ থেকে। তিনি তিন খন্ডে পারস্যের কবি হাফিজের জীবনী, নৈতিক উপদেশ ও বাণীসমূহের অনুবাদ প্রকাশ করেন। এর প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালের ২৩ জানুয়ারি, দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালের ১৮ অক্টোবর। তিনটি গ্রন্থই প্রকাশিত হয় কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ থেকে। 'তাজকিরাতুল আউলিয়া' নামক গ্রন্থ থেকে তিনি মুসলিম দরবেশদের বাণীসমূহ সঙ্কলন ও অনুবাদ করে প্রকাশ করেন ১৮৭৭ সালের ১৯ আগস্ট। 'দরবেশদিগের উক্তি (তাসাউফ)' শিরোনামের এই গ্রন্থটিও প্রকাশ কয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে। উর্দুগ্রন্থ 'আকসিরে হেদায়েত' থেকে তিনি মুসলিম দরবেশগণের বাণী সঙ্কলন ও অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। 'নীতিমালা' শিরোনামের এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালের ১৯ আগস্ট। 'দরবেশদের ক্রিয়া'(তাসাউফ) প্রকাশিত ১৮৭৮ সালে এবং মুসলিম পীর-দরবেশরা কীভাবে আল্লাহ্jর ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত হন, নামাজ আদায় করেন ও কীভাবে তত্ত্বলাভ করেন, এ সম্পর্কিত আলোচনা বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ 'দরবেশদিগের সাধন প্রণালী' প্রকাশিত হয় ১৮৭৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। কুরআনের বাছাই করা আয়াতের অনুবাদ 'প্রবচনবলী (ধর্ম উপদেশ)' প্রকাশিত হয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে ১৮৮০ সালের ২০ জানুয়ারি।

ভাই গিরিশ্চন্দ্র সেনের মিশনারিসুলভ কাজের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল 'তাজকিরাতুল আউলিয়া'-র বাংলা অনুবাদ 'তাপসমালা' শিরোনামে একটি ধারাবাহিক গ্রন্থের প্রকাশ। তাজকিরাতুল আউলিয়াতে মোট ৯৬ জন মুসলিম দরবেশের কাহিনী বর্ণিত আছে। এই কাহিনীগুলো ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি মোট ছয় খন্ডে এই বিশাল অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেন।


কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ
অনুবাদক হিসেবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি কুরআনের অনুবাদের কাজ শুরু করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে মোট ১২ টি খন্ডে এই অনুবাদক্ররম সমাপ্ত করেন। 'তাপসমালা'র দুটো খন্ড বের হওয়ার পর ১৮৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর কুরআনের প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়। প্রথম খন্ড প্রকাশের সময় গিরিশচন্দ্র অনুবাদকের নাম গোপন রাখেন। কারণ তৎকালীন সময়ে কাজটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মুসলিম সমাজে এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সে সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণাই ছিলনা। গ্রন্থটিতে শুধুমাত্র প্রকাশক গিরিশচন্দ্র সেন এবং মুদ্রক তারিণীচরণ বিশ্বাসের নাম ছিল। ৩২ পৃষ্ঠার এই খন্ডের মূল্য ছিল মাত্র চারআনা। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের আশংকা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো। মুসলমান আলেমসমাজ এই মহৎকর্ম সম্পাদন করার জন্য এই অজ্ঞাতনামা অনুবাদকের প্রশংসা করে ব্রাহ্মসমাজের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তাঁদের প্রশংসাপূর্ণ পত্রের অংশবিশেষ নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ

[quote]আমরা বিশ্বাস ও জাতিতে মুসলমান। আপনি নিঃস্বার্থভাবে জনহিত সাধনের জন্য যে এতোদৃশ চেষ্টা ও কষ্ট সহকারে আমাদিগের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধনে নিযুক্ত হইয়াছেন, এজন্য আমাদের আত্যুত্তম ও আন্তরিক বহু কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি দেয়।[/quote]


[quote]
কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা, অনুবাদক সাধারণ সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন। যখন তিনি লোকমন্ডলীয় এতোদৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন, তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্ন-পরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিত।
[/quote]কুরআন অনুবাদ শেষ করে ভাই গিরিশচন্দ্র্র সেন বলেছিলেনঃ

[quote]আজ কুরআনের সমাপ্ত দেখিয়া আমার মনে যুগপৎ হর্ষ-বিষাদ উপস্থিত। হর্ষ এই যে, এত কালের পরিশ্রম সার্থক হইল। বিষাদ এই যে, ইহার প্রথমাংশ শ্রী মদাচার্য্য কেশবচন্দ্রের করকমলে অর্পণ করিয়াছিলাম। তিনি তাহাতে পরমাহ্লাদিত হইয়াছিলেন এবং তাহার সমাপ্তি প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। শেষাংশ আর তাঁহার চক্ষুর গোচর করিতে পারিলাম না। ঈশ্বর তাঁহাকে আমাদের চক্ষুর অগোচর করিলেন। তিনি অনুবাদের এরূপ পক্ষপাতী ছিলেন যে, তাহার নিন্দা কেহ করিলে সহ্য করিতে পারিতেন না। আজ অনুবাদ সমাপ্ত দেখিয়া তাঁহার কত না আহ্লাদ হইত, এছাড়াও তাঁহার কত আশীর্ব্বাদ লাভ করিত।[/quote]

কুরআনের সম্পূর্ণ খন্ড একত্রে প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালে। সম্পূর্ণ খন্ডেই প্রথম তিনি স্বনামে আত্নপ্রকাশ করেন। ভাই গিরিশ্চন্দ্র সেন অনূদিত কুরআনের চতুর্থ সংস্করণে মৌলানা আকরাম খাঁ একটি প্রশংসাসূচক ভূমিকা লিখেছিলেন।

হাদিসের অনুবাদ

কুরআনের পর তাঁর আর একটি বড় কাজ হাদিসের অনুবাদ। হাদিসও কয়েকখন্ড পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়। এর প্রথম খন্ড হাদিস-পূর্ব-বিভাগ (১ম খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৮৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি। শেষ খন্ড হাদিস-উত্তর-বিভাগ (৪র্থ খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৯০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।

জীবনী গ্রন্থমালা
তাঁর জীবনী গ্রন্থমালা সমূহও মূলত 'তাপসমালা'র সমতুল্য। 'মহাপুরুষ চরিত' প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮৮৩ সালে। প্রথম ভাগে ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ.)হযরত দাউদ (আ.)-এর জীবনী। দ্বিতীয় ভাগে ছিল হযরত মুসা (আ.)-এর জীবনী। এটি ১৮৮৪ সালের ৬ জানুয়ারি। তৃতীয় ভাগে আছে ইহুদী রাজা কিং ডেভিডের জীবনী। তাঁর 'জীবনচরিতমালা'-র আরেকটি বড় গ্রন্থ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী। এর প্রথমখন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালের ২৩ জানুয়ারি। দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালের ২৪ জানুয়ারি। তৃতীয় ও শেষ খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ মে।

অন্যান্য জীবনীগ্রন্থ
  • পরমহংসের উক্তি ও জীবনী। এই গ্রন্থে ১৮৪ টি বাণী আছে। প্রকাশকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৩।
  • ইমাম হাসান ও হোসাইন। প্রকাশকাল ১ জানুয়ারি, ১৯০১।
  • বিশ্বাসী সাধক গিরিন্দ্রনাথ। প্রকাশকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯০৩।
  • চারিজন ধর্মনেতা [ প্রথম চার খলিফা, তথা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত ওসমান (রা.) এবং হযরত আলী (রা.)]-এর জীবনী। প্রকাশকাল ২৫ জুলাই, ১৯০৬।
  • সতীচরিত্র ( মহারাণী শরৎ সুন্দরী দেবী-র জীবনী। প্রকাশকাল ২৫ জানুয়ারি, ১৯১১। মৃত্যুর পর প্রকাশিত।
  • চারি সাধ্বী মোসলমান নারী ( হযরত খোদেজা, ফাতেমা, আয়েশা ও রাবেয়ার জীবনী। মৃত্যুর পর প্রকাশিত।
অন্যান্য গ্রন্থ

  • তত্ত্ব কুসুম (ধর্মবিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন)। প্র্রকাশকাল ২০ এপ্রিল, ১৮৮২।
  • তত্ত্বরত্নমালা (ফারসি ভাষা থেকে ধর্মীয় নীতিকথার অনুবাদ)। প্রকাশকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৮২।
  • ১৮৮৫ সালের ৮ আইনের সহজ বাংলা অনুবাদ (দুখন্ড)। প্রকাশকাল ২৪ নভেম্বর, ১৮৮৫।
  • নববিধান প্রেরিতগণের প্রতিনিধি (ব্রাহ্মধর্মের নববিধান সংঘের কার্যক্রমবিষয়ক গ্রন্থ)। প্রকাশকাল ২৪ জানুয়ারি, ১৮৮৭।
  • নববিধান কি?। প্রকাশকাল ২৪ ব্জানুয়ারি, ১৮৮৭।
  • তত্ত্ব সন্দর্ভমালা (নববিধানের মূলতত্ত্ব)। প্রকাশকাল ২৭ আগস্ট, ১৮৯৩।
  • কাব্যলহরী (পাঠ্যপুস্তক : কবিতা)। প্রকাশকাল ১৮ জুন, ১৮৯৭।
  • দরবেশী (তাসাউফ)। প্রকাশকাল ১৯ এপ্রিল, ১৯০২।
  • ধর্মবন্ধুর প্রতি কর্তব্য (বিবিধ)। প্রকাশকাল ২২ মার্চ, ১৯০৬।
  • আত্নজীবনী। প্রকাশকাল ১৯০৭।
  • মহালিপি (পারস্যের শরাফত-আল-দীন আহমদ মালিরির পত্রাবলীর অনুবাদ। প্রকাশকাল ১৯০৯
সম্পাদনা কর্ম


ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'বঙ্গবন্ধু' ও 'সুলভ সমাচার' নামের দুটি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। তৎকালীন পশ্চাৎপদ নারী সমাজের জাগরণে নিজউদ্যোগে প্রকাশ করেছিলেন 'মহিলা' নামের একটি পত্রিকা। তিনি নিজেই এর সম্পাদক ছিলেন।

মৃত্যু

মুক্তমনা ও অসাধারণ মানুষ ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। 



সূত্র : বাংলাদেশ
ধন্যবাদ : আহাম্মেদ খালেদ

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ