জলবায়ু পরিবর্তন, জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও খাল-বিল-জলাশয় ভরাট সত্বেও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপকূলীয় এলাকায় এখনও রয়েছে লাল শাপলার কিছু অস্তিত্ব। এক সময় বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের খাল-বিলে ফুটে থাকত নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত ঝিল-বিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে শাপলা জন্মাত। মানুষের খাদ্য তালিকায় আবহমান কাল থেকে যুক্ত ছিল শাপলা। এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রাকৃতিকভাবে আগের মতো আর শাপলা জন্মাচ্ছে না। কৃষি জমিতে ট্রাক্টরসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি আর কীটনাশকের ব্যবহার বোরো ধানক্ষেতে এবং খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে মাছ চাষে ব্যাপকতা পাওয়াই এর বিলুপ্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরৎকালে খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত অগণিত শাপলা। সকালের দিকে জলাশয়ে চোখে পড়ত রংবেরংয়ের শাপলা ফুল। শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। মনে অনাবিল প্রশান্তি বয়ে যেত। আজ খাল-বিল, মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত শাপলা। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকায় বিবেচিত হতো শাপলা, মেটাত পুষ্টির চাহিদা। এর ভেষজ গুণও কম নয়। হৃদরোগ, পিত্তজ্বালা, আমাশয়সহ অনেক রোগের ওষুধ এটি। সবজি হিসেবে শাপলার কদর এখনো বেশ। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। তবে এখনো ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের অন্যতম খাদ্য এ শাপলা, যা পুষ্টি চাহিদার বিশাল জোগান দেয়। গলাচিপা উপজেলার রাংগাবালী ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বারেক বিল থেকে শাপলা তুলছিলেন। তিনি জানান, ১১-১২ বছর বয়স থেকে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে শাপলা তুলে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু বর্তমানে আগের মতো আর এটি পাওয়া যায় না। তিনি আর জানান, শাপলা সবজি হিসেবে রান্না করে এবং সেদ্ধ করে আলুর মতো মাছের সঙ্গে খাওয়া যায়। তার দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ-সাত বছর আগেও এখানে খাল-বিল-পুকুরে প্রচুর শাপলা পাওয়া যেত। ধানের ক্ষেত, খাল-বিল ও পুকুরে যেখানে পানি, সেখানেই পাওয়া যেত শাপলা। এখন আর আগের মতো সে রকম জন্মে না। উপজেলা কৃষি দফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. নূরুল আমিন জানান, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো সরকারি অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে শুকিয়ে রাখার কারণে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র নষ্ট হলেও সরকারিভাবে এর অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment