প্রাণিজগৎ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার যেমন অন্ত নেই, তেমনি মানুষের ও কৌতূহলের শেষ নেই। এসব প্রাণীর খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, প্রজনন; এমনকি নানা ভয়ঙ্কর রোগ নিরাময়ের উপায় খুঁজতেও বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত দ্বারস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন জাতির প্রাণীর কাছে। বহুদিন আগ থেকেই নেকড মোল র্যাট নামে এক ধরনের ইঁদুর নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ইঁদুর নাকি ক্যান্সারের উপশমকারী! আকারেও ভীষণ ছোট। স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি বেশ অদ্ভুত ধরনের। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে এ ইঁদুর নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। চামড়া কুঁচকানো, লোমের লেশমাত্র নেই। তবে যেটি নজর কাড়ে তা হলো, মুখ থেকে বের হয়ে আসা বাঁকানো অদ্ভুত দাঁতগুলো। মাটির গভীরে থাকতে এরা ভালোবাসে। লম্বা বাঁকা দাঁতের সাহায্যে অনায়াসেই খুঁড়তে পারে গর্ত। এ ইঁদুরগুলো সাধারণত দলবদ্ধভাবে গর্তে বাস করে। কোনো কোনো গর্তে সংখ্যায় তা আশি থেকে একশ' আবার তিনশ'রও বেশি মিলে দল গঠন করে নেয়। কলোনিতে প্রজননে সক্ষম এমন একটি নারী ইঁদুর থাকে এবং সেই হয় রানী। সঙ্গী নির্বাচনে রানীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সাধারণত দু'তিনটি ইঁদুর রানীকে সঙ্গ দেয়। এসব ইঁদুরের আচরণ বেশ সামাজিক; মৌমাছি, পিঁপড়ে, উইপোকা কিংবা ভীমরুলের মতো। ত্রিশ বছর গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, ক্যান্সার দূরীকরণে এ প্রাণীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেমিন এ দুটি হরমোন আছে। আচরণের ক্ষেত্রে এ হরমোনই প্রভাব বিস্তার করে। ইঁদুরের হরমোন নিয়ে গবেষণার পর মানুষের ওপরও এ হরমোনের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা চালান। তাতে দেখা যায়, এই প্রাণীটির হরমোনের সঙ্গে মানুষের হরমোনের যথেষ্ট মিল আছে। তবে এ নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও গবেষকরা জানান। এসব বৈচিত্রময় প্রাণী নিয়ে যত গবেষণা হচ্ছে, ততই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নানা অচেনা দিক উন্মোচিত হচ্ছে। সৃষ্টি করছে বিস্ময়।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
No comments:
Post a Comment