আলতু গ্রামের মধ্যে এক মহা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। মহাকান্ড না বলেও প্রলয়কান্ড বলা যায়। এই কান্ডে গ্রামের সকল আবাল বৃদ্ধবনিতা অবাক হল। সেই কান্ডটি হল আলতু মেট্রিক পাশ করেছে। গ্রামের মাধ্যে এমনকি চৌদ্দ গ্রাম খুঁজলেও মেট্রিক পাশ ছেলে পাওয়া যাবে না। আলতুর বাবা ফালতুতো মহা খুশি। ধন্য ধন্য সাড়া পাচ্ছে সবখানে। আলতুর মেট্রিক পাশে তার বাবা ফালতু এবার আশা করছে তাকে ঢাকা শহরে পড়ালেখা করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলবে। এই কথা শুনে পুরো গ্রামে গাছপালাসহ কিঞ্চিৎ জীবজন্তুও অবাক হয়ে গেল। গ্রামের কোন ছেলে তাদের জেলা শহরের স্কুল কলেজে পড়ারতো দূরের কথা চিন্তাও করেনি। যা হোক সবাই খুব খুশি।
বাবা ফালতু ঢাকা শহরের মধ্যে পড়ার জন্য সকল ব্যবস্থা করে দিলেন। শহরে গিয়ে আলতু পড়ালেখা করে মাস ছয়েক পরে ফিরল। বাড়িতে আসার পরে বাড়ির ছেলেমেয়ে পরিবারসহ গ্রামের সকলে অবাক হল, যে আলতু ছেঁড়া লুঙ্গি, ছেঁড়া জামা পরত, এমনকি কোন কোন সময় গায়ে জামা থাকত না, আর সেই আলতু এখন শার্ট, জিন্স প্যান্ট, স্লিম সু পরেছে। সেটা দেখে গ্রামের মানুষদের মধ্যে পরিবর্তনও দেখা যায় বটে! সপ্তাহ খানেক থেকে আবার চলে গেল। এবার শহরে থেকে এল প্রায় আট মাস পর। এবার শুধু মানুষ নয়, মানুুষসহ পুরো গ্রামের আশে পাশের সকল গ্রামসহ তাজ্জব বনে গেল। আলতুকেতো আর চেনা যাচ্ছেনা। গ্রামে যেন আজব মানুষ নেমে এল।
আলতু জিন্স প্যান্ট আর নেই। এখন সে পরেছে ‘থ্রি কোয়ার্টার’। গায়ে পাতলা টি শার্ট। আবার কানের ভেতর কালো কি যেন ঢোকানো। গাইতেছে আর নাচতেছে। আবার মাঝে মাঝে ফাল্ মেরে লাভ দিয়ে উঠছে। শরীরের আকাবাঁকা গঠন ভঙ্গিতে হাঁটছে। ফালতু মিয়ারতো মাথা গরম, কী দেখছি এসব?
আবার তাকে জোর করে পাঠিয়ে দিল ঢাকায়। সেখানে আবার থেকে এল মাস তিনেক।
আলতু বাড়িতে আসার সঙ্গেই বাড়ির মধ্যে ছেলেমেয়েরা লজ্জ্বায় মুখ ঢাকতে লাগল। কেউ আবার মুখ গুঁজে নিচ্ছে, কেউবা হাসছে। প্রাণীসমেত গাছপালাও তাজ্জ্বব বনে গেল আরো একবার। কারণ আলতু এখন এমন ছোট জিন্স প্যান্ট পরেছে এবং এত নিচে পরেছে যে, উপুড় হলে তার নিতম্বের প্রায় চার পাঁচ ইঞ্চি খালি হয়ে যায়। এমন ছোট আর পাতলা গেঞ্জি যা পুরো শরীরের দেহ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
কালো কি বোঁটাযুক্ত দুটি জিনিস কানের ভেতর থেকে কালো তার পেটের কোথায় গিয়ে যেন গায়েব হয়ে গেল, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। শুধু এটুকুই শেষ নয়। সে যেন তার নিজের ভাষাও ভুলে গেছে। কী যেন বিদেশী ভাষা আবার সাথে বাংলা ভাষাতে ব্যবহার করছে, যা ঠিকভাবে শুনতে পায় তার ল্যাংটা বয়সের দোস্ত গিল্টু।
যে আলতু কিনা দোকান থেকে কেড়ে নিয়ে, চুরি করে খেত সে কিনা এখন পায়ের উপর ঠ্যাং দিয়ে দোকানদারকে বলছে ‘হায়, আমাকে একটা কফি অর টি (চা) দিনতো, কুইকলি’। দোকানদার কিছু বুঝলনা। বসে থাকায় আবার নাচ দিয়ে সুরের ভঙ্গিতে বলল, আহা এত লেট করছ কেন? প্লিজ। দোকানদার কফির কথা বুঝলেও কফি না থাকায় চা দিল।
আলতু বাবা ফালতু পড়ে গেল ভীষন চিন্তায়।
ছেলেকে পাঠালাম ঢাকা শহরে নাকি অন্য কোন নামের শহরে। ইতোমধ্যে তার এই কীর্তিকলাপ দেখে বুড়ো মুরব্বীরা অভিযোগ দিল তার বাবা ফালতুর কাছে। গ্রামের সকল মান সম্মান ডুবানোর উপক্রম। শালিশ বসলো। কি করা যায়? সবার মন্তব্য- ‘না, এর পেছনে কোন কারণ আছে’।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারাও ঠিক বুঝে ফেলেছেন সেই কারণটা। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনই যুবক যুবতীদের মূল অধঃপতনের কারণ। যেমনটা হলে এই মেধাবী তরুন ছাত আলতু শহরে গিয়ে পড়া লেখার বদলে সংস্কৃতির ভুল শেখা আর বেতার কেন্দ্রীক অশ্লীল প্রচারণা। সেই সঙ্গে ভাষা বিকৃতির এক জয়ভ্রমকার জায়গা। সেই কথাকে ব্যক্ত করে প্রচলিত প্রচলন পরিবাহিত কথা- “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।”
মাসিক কিশোর সাহিত্যে প্রকাশিত
No comments:
Post a Comment