মহাবিশ্বে অনেক কিছুকেই আমরা চিরন্তন সত্য বলে জানি। এর মধ্যে একটি চিরন্তন নিয়ম হচ্ছে সূর্য প্রতিদিন সকালে উঠে সন্ধ্যায় অস্ত যায়। কিন্তু কখনো কখনো নিয়মেরও ব্যতিক্রম হয়। এমনকি চিরন্তন সত্যের ক্ষেত্রেও। এমনই এক অবাক সত্য আছে। পৃথিবীতে এমন এক দেশ আছে যেখানে মধ্য রাতেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় সেখানে দিনের পর দিন সূর্যের দেখাই মেলে না। এই ঘটনা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ের। বিশ্বজুড়ে এ দেশের পরিচিতি 'নিশীথ সূর্যের দেশ' হিসেবে।
নরওয়েতে উত্তর গোলার্ধের গরমে কয়েকমাস সূর্য অস্ত না গিয়ে সবসময়ই আকাশ আলোকিত রাখে, বিপরীতে শীতকালে কয়েক মাস সূর্য উঠেই না। আর তখন প্রায়ই উত্তরের আলো বা 'অরোরা বোরিয়ালিস' দেখা যায়। ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত নরওয়ের রাজধানী অসলোয় জুন-জুলাই মিলিয়ে দু'মাস সবসময় দিনের আলো থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে এখানে সূর্য কখনো সম্পূর্ণ অস্তমিত হয় না। এর ফলে এ সময় রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে গোধূলীর আলো বজায় থাকে সারারাত। অসলো শহর দেশটির প্রায় দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। আরও উত্তরে ৭২ ডিগ্রি অক্ষাংশে আরও বেশি দিন এ সময় সূর্যালোক থাকে। শুধু অসলো নয়, প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত সুইডেনের স্টকহোম বা ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে ও রাশিয়ার বহু অঞ্চলে এর কাছাকাছি ঘটনা দেখা যায়। তবে বিশ্বজুড়ে নরওয়েই মধ্যরাতের সূর্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত।
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে এই আশ্চর্য অলৌকিক মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার জন্য আসেন। রাতে সূর্যের আলো দেখা সত্যিই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর অক্ষরেখা তার সমতলের ২৩.৫ ডিগ্রি ঝুঁকে যাওয়ার ফলে প্রতিটি গোলার্ধ গ্রীষ্মকালে সূর্যের দিকে হেলে যায়, আবার শীতকালে সেখান থেকে সরে যায়। ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে বছরের একটি বিশেষ সময় মধ্যরাতেও সূর্য দেখা যায়; কিন্তু যখন কুমেরু অঞ্চলে শীতকাল, তখন দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যায় না। কারণ সূর্য সেখানে উঠেই না। পুরো কুমেরু অঞ্চল অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ঠিক তখন (এপ্রিল থেকে জুলাই) সুমেরু অঞ্চল পুরো ২৪ ঘণ্টাই সূর্যালোকিত দিন উপভোগ করে। যথা নিয়মে সূর্য উঠে এবং অত্যন্ত ধীরগতিতে পরিভ্রমণ শুরু হয়। সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যেতে যেতে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত পেঁৗছায় কিন্তু তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সম্পূর্ণ অস্ত না গিয়ে পুনরায় উঠতে শুরু করে। সুমেরু অঞ্চলে প্রায় দু'মাস এ অবস্থা চলতে থাকে। তবে প্রকৃত মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায় ২১ জুন। ছয়মাস পর সুমেরু অঞ্চল অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং কুমেরু অঞ্চল সূর্যালোকিত হয়। কুমেরু অঞ্চলে মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। উত্তর অক্ষাংশের প্রান্তিক অঞ্চলকেও কখনো কখনো মধ্যরাতের সূর্যের দেশ আখ্যা দেওয়া হয়। উত্তর কানাডার বাইলট টিপের কাছেও মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে নরওয়ে শান্তির দেশ হিসেবেও চিহ্নিত। প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে (১০ ডিসেম্বর) অসলোর বিশ্ববিখ্যাত সিটি হল থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। শান্তির প্রতীক স্বরূপ অসলোর জাহাজবন্দরে একটি শিখা চিরপ্রজ্বলিত আছে।
অসংখ্য অভিযাত্রী আর আবিষ্কারকের দেশ হিসেবেও নরওয়ে বিশ্ব-বিখ্যাত। বেশ কয়েকটি মিউজিয়ামে তার চমৎকার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। অসলোর ভাইকিং মিউজিয়ামে এক হাজার ২০০ বছরেরও আগে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া ভাইকিং অভিযাত্রীদের ব্যবহৃত কাঠের নৌকা রাখা আছে। 'পোলার শিপ ফ্রাম' মিউজিয়ামে যে জাহাজে করে ন্যানসে ১৮৯৫ সালে সুমেরুর খুব কাছে (৮৬ ডিগ্রি) পেঁৗছেছিলেন তাতে উঠে ঘুরে দেখা যায়। কুমেরু বিজয়ী আমুন্ডসেলের (ডিসেম্বর ১৯১১) ব্যবহৃত জিনিসপত্র তাঁবু, রুট ম্যাপ, স্লেজ ইত্যাদি সাজানো আছে। কনটিকি মিউজিয়ামে দুঃসাহসী অভিযাত্রী থর হেয়েরডালের ব্যবহৃত মূল কনটিকি ভেলা, নৌকাসহ তার ব্যবহৃত নানা সাজসরঞ্জাম আছে। বালসা কাঠ নির্মিত এই কানটিকি ভেলা করেই তিনি ১৯৪৭ সালে উত্তাল প্রশান্ত মহাসাগরে ৫ হাজার মাইল পথ ১০১ দিনে পাড়ি দিয়ে পেরু থেকে পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জে পেঁৗছান। এছাড়াও অন্যান্য মিউজিয়ামের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ১৫০টি ছোটবড় বাড়ি নিয়ে গড়ে ওঠা সুবিশাল ফোক মিউজিয়াম। সেখানে বিভিন্ন প্রান্তের অধিবাসীদের প্রাচীন ও বর্তমান জীবনধারা, লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ আকর্ষণ উত্তর নরওয়ের এক্সিমোদের ঈগলু।
নরওয়েতে উত্তর গোলার্ধের গরমে কয়েকমাস সূর্য অস্ত না গিয়ে সবসময়ই আকাশ আলোকিত রাখে, বিপরীতে শীতকালে কয়েক মাস সূর্য উঠেই না। আর তখন প্রায়ই উত্তরের আলো বা 'অরোরা বোরিয়ালিস' দেখা যায়। ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত নরওয়ের রাজধানী অসলোয় জুন-জুলাই মিলিয়ে দু'মাস সবসময় দিনের আলো থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে এখানে সূর্য কখনো সম্পূর্ণ অস্তমিত হয় না। এর ফলে এ সময় রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে গোধূলীর আলো বজায় থাকে সারারাত। অসলো শহর দেশটির প্রায় দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। আরও উত্তরে ৭২ ডিগ্রি অক্ষাংশে আরও বেশি দিন এ সময় সূর্যালোক থাকে। শুধু অসলো নয়, প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত সুইডেনের স্টকহোম বা ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে ও রাশিয়ার বহু অঞ্চলে এর কাছাকাছি ঘটনা দেখা যায়। তবে বিশ্বজুড়ে নরওয়েই মধ্যরাতের সূর্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত।
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে এই আশ্চর্য অলৌকিক মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার জন্য আসেন। রাতে সূর্যের আলো দেখা সত্যিই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর অক্ষরেখা তার সমতলের ২৩.৫ ডিগ্রি ঝুঁকে যাওয়ার ফলে প্রতিটি গোলার্ধ গ্রীষ্মকালে সূর্যের দিকে হেলে যায়, আবার শীতকালে সেখান থেকে সরে যায়। ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে বছরের একটি বিশেষ সময় মধ্যরাতেও সূর্য দেখা যায়; কিন্তু যখন কুমেরু অঞ্চলে শীতকাল, তখন দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যায় না। কারণ সূর্য সেখানে উঠেই না। পুরো কুমেরু অঞ্চল অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ঠিক তখন (এপ্রিল থেকে জুলাই) সুমেরু অঞ্চল পুরো ২৪ ঘণ্টাই সূর্যালোকিত দিন উপভোগ করে। যথা নিয়মে সূর্য উঠে এবং অত্যন্ত ধীরগতিতে পরিভ্রমণ শুরু হয়। সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যেতে যেতে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত পেঁৗছায় কিন্তু তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সম্পূর্ণ অস্ত না গিয়ে পুনরায় উঠতে শুরু করে। সুমেরু অঞ্চলে প্রায় দু'মাস এ অবস্থা চলতে থাকে। তবে প্রকৃত মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায় ২১ জুন। ছয়মাস পর সুমেরু অঞ্চল অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং কুমেরু অঞ্চল সূর্যালোকিত হয়। কুমেরু অঞ্চলে মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। উত্তর অক্ষাংশের প্রান্তিক অঞ্চলকেও কখনো কখনো মধ্যরাতের সূর্যের দেশ আখ্যা দেওয়া হয়। উত্তর কানাডার বাইলট টিপের কাছেও মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে নরওয়ে শান্তির দেশ হিসেবেও চিহ্নিত। প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে (১০ ডিসেম্বর) অসলোর বিশ্ববিখ্যাত সিটি হল থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। শান্তির প্রতীক স্বরূপ অসলোর জাহাজবন্দরে একটি শিখা চিরপ্রজ্বলিত আছে।
অসংখ্য অভিযাত্রী আর আবিষ্কারকের দেশ হিসেবেও নরওয়ে বিশ্ব-বিখ্যাত। বেশ কয়েকটি মিউজিয়ামে তার চমৎকার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। অসলোর ভাইকিং মিউজিয়ামে এক হাজার ২০০ বছরেরও আগে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া ভাইকিং অভিযাত্রীদের ব্যবহৃত কাঠের নৌকা রাখা আছে। 'পোলার শিপ ফ্রাম' মিউজিয়ামে যে জাহাজে করে ন্যানসে ১৮৯৫ সালে সুমেরুর খুব কাছে (৮৬ ডিগ্রি) পেঁৗছেছিলেন তাতে উঠে ঘুরে দেখা যায়। কুমেরু বিজয়ী আমুন্ডসেলের (ডিসেম্বর ১৯১১) ব্যবহৃত জিনিসপত্র তাঁবু, রুট ম্যাপ, স্লেজ ইত্যাদি সাজানো আছে। কনটিকি মিউজিয়ামে দুঃসাহসী অভিযাত্রী থর হেয়েরডালের ব্যবহৃত মূল কনটিকি ভেলা, নৌকাসহ তার ব্যবহৃত নানা সাজসরঞ্জাম আছে। বালসা কাঠ নির্মিত এই কানটিকি ভেলা করেই তিনি ১৯৪৭ সালে উত্তাল প্রশান্ত মহাসাগরে ৫ হাজার মাইল পথ ১০১ দিনে পাড়ি দিয়ে পেরু থেকে পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জে পেঁৗছান। এছাড়াও অন্যান্য মিউজিয়ামের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ১৫০টি ছোটবড় বাড়ি নিয়ে গড়ে ওঠা সুবিশাল ফোক মিউজিয়াম। সেখানে বিভিন্ন প্রান্তের অধিবাসীদের প্রাচীন ও বর্তমান জীবনধারা, লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ আকর্ষণ উত্তর নরওয়ের এক্সিমোদের ঈগলু।
No comments:
Post a Comment