যদি কখনও সংসদের বাইরে, বিশেষ করে পল্টন ময়দানের মতো খোলামেলা জায়গায় বাজেট পেশ করা হয়, তাহলে বাজেট পেশকারী তথা অর্থমন্ত্রীকে কী ধরনের মন্তব্য শুনতে হতে পারে, আসুন তা জেনে নেয়া যাক—
১. যেদিন বাজেট পেশ করা হতো, সেদিন সকাল থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকত ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। অর্থমন্ত্রী বারবার বাজেট পেশ করতে গিয়েও বাধাগ্রস্ত হতেন। কারণ যতবারই মিছিল আসত, ততবারই মাইকে ঘোষণা করা হতো—আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা মহানগর উত্তর কিংবা দক্ষিণ থেকে বিশাল একটি মিছিল এসে যোগ দিয়েছে আমাদের এই বাজেট অধিবেশনে। আসুন আমরা তাদের বরণ করে নিই। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত গলা ফাটানো স্লোগান—শুভেচ্ছা স্বাগতম, মিছিলের আগমন। এছাড়া নানা ধরনের তেলমারা কথা তো আছেই।
২. একটার পর একটা মিছিল যখন আসতেই থাকত, তখন অর্থমন্ত্রী খুব ভালোভাবেই বুঝে ফেলতেন যে আজ তার বাজেট পেশ করতে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে। কিন্তু তার যেহেতু বয়স হয়েছে, এতক্ষণ বসে থাকলে তো কোমর ব্যথা হয়, তাই না? তিনি পাতি নেতাদের তখন হয়তো বলতেন আমি আর বসে থাকতে পারছি না, মিছিল আসা শেষ হলে আমাকে মিসকল দিও। পাতি নেতারা তখন হায় হায় করে উঠত—এটা আপনি কী বলছেন? আপনি চলে গেলে কেউ যদি আপনার চেয়ারে বসে পড়ে, তখন চেয়ার পাব কই? দেখছেন না কী পরিমাণ নেতা এসেছে! অর্থমন্ত্রী তখন চেয়ার রক্ষার্থে বসবেন ঠিকই, তবে কান ফাটানো স্লোগান সহ্য করতে না পেরে পিএসকে পাঠাবেন তুলা কিনে আনার জন্য।
৩. বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সরকারি দলের নেতা-পাতি নেতারা মিছিল নিয়ে আসবে ঠিকই, তবে নিজেদের ব্যানার যাতে সোজা থাকে, যাতে ব্যানারের লেখাগুলো টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সেই জন্য তাদের থাকবে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এক এলাকার কর্মীরা যদি তাদের ব্যানার দিয়ে অন্য এলাকার নেতাকর্মীদের ব্যানার ঢেকে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে প্রথমে শুরু হবে ঘুষাঘুষি। কিন্তু তারা ঘুষাঘুষিতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ব্যানারের বাঁশ উঠিয়ে মারবে হেঁইয়ো বলে। তারপর এই মারামারির প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। অল্পক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে অধিকাংশ নেতাকর্মী আহত হয়ে চলে গেছে হাসপাতালে। অর্থমন্ত্রী এবার এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবেন যে, যাক ঝামেলা একটু কমল। এইবার বাজেট পেশ করা যায়।
৪. অর্থমন্ত্রী যখন বাজেট পেশ করার জন্য দাঁড়াবেন, এমনকি পেশ করতে শুরুও করে দেবেন, তখনই শুরু হয়ে যাবে নানামুখী মন্তব্য। কারণ উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গোছের পাবলিক থাকতেই পারে। তাদের মধ্যে যদি বাউল টাইপের কেউ থেকে থাকে, তাহলে বলবে—মন্ত্রী সাব, একটা কথা। আপনে সরাসরি বাজেট পেশ না কইরা আমরা যেইভাবে পালাগান শুরু করি, সেইভাবে বাজেটটা পেশ করেন। মন্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবেন পালাগানের মতো করে আবার বাজেট পেশ করে কীভাবে? বাউল টাইপের সেই পাবলিকরা তখন দেখিয়ে দেবে সিস্টেমটা। বলবে চারজন মন্ত্রীকে মঞ্চের চার কোণায় দাঁড়াতে। তারপর বলবে বন্দনা গাইতে—উত্তরে বন্দনা করলাম দয়াল বাবার নাম, দক্ষিণে বন্দনা করলাম অমুক পীরের নাম...
৫. বাজেট অধিবেশনটা যেহেতু টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হবে, অতএব ততক্ষণে অনেকে অর্থমন্ত্রীকে টিভিতে দেখেও ফেলবে। টিভিতে দেখার পর দূরের লোকজন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঘটনাস্থলে আসতে না পারলেও কাছের লোকজন তাড়াতাড়ি করে চলে আসবে। তাদের মধ্যে যারা রূপসচেতন, তারা এগিয়ে যাবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। গিয়ে বলবে—আপনাকে টিভিতে দেখে ছুটে এলাম। আপনি শুনে হয়তো কষ্ট পেতেও পারেন, তবু কথাটা বলি। মেকাপ ছাড়া টিভিতে দেখতে আপনাকে বেশ খানিকটা খারাপ লাগছে। অন্যদিন মেকাপ ছাড়া ক্যামেরার সামনে এলেও আজ যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটা অধিবেশন, প্লিজ আপনি একটা বিরতিতে গিয়ে মেকাপটা করে আসুন। তখনই হয়তো উপস্থাপকের মুখে শোনা যাবে—নিচ্ছি ছোট্ট একটা বিরতি।
৬. অনেক চড়াই-উত্রাই পার হয়ে বাজেট অধিবেশন শেষ হলো। এবার সভা থেকে সবার বিদায় নেয়ার পালা। গাড়ি-টাড়ি সব রেডি করা হলো। পুলিশ-র্যাব সবাই রেডি হয়ে গেল অর্থমন্ত্রীকে গার্ড দেয়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা হলো অর্থমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিক-ওদিক তালাশ করা হলো। অবশেষে দেখা গেল এক জায়গায় বেশ কিছু লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ যারা অর্থমন্ত্রীকে খুঁজছিল, তারা এবার সেই গোল চত্বরের দিকে এগিয়ে গেল। গিয়ে দেখে অর্থমন্ত্রী কী যেন লিখছেন। বিষয়টা ভালোভাবে জানার জন্য আরও কাছে এগিয়ে যেতেই জানা গেল সবাই তাকে ধরেছে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য, তিনি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। কোনো কোনো অটোগ্রাফের সঙ্গে আবার অর্থনীতি বিষয়ক বাণীও লিখে দিচ্ছেন।
সূত্র : আমার দেশ
১. যেদিন বাজেট পেশ করা হতো, সেদিন সকাল থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকত ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। অর্থমন্ত্রী বারবার বাজেট পেশ করতে গিয়েও বাধাগ্রস্ত হতেন। কারণ যতবারই মিছিল আসত, ততবারই মাইকে ঘোষণা করা হতো—আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকা মহানগর উত্তর কিংবা দক্ষিণ থেকে বিশাল একটি মিছিল এসে যোগ দিয়েছে আমাদের এই বাজেট অধিবেশনে। আসুন আমরা তাদের বরণ করে নিই। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত গলা ফাটানো স্লোগান—শুভেচ্ছা স্বাগতম, মিছিলের আগমন। এছাড়া নানা ধরনের তেলমারা কথা তো আছেই।
২. একটার পর একটা মিছিল যখন আসতেই থাকত, তখন অর্থমন্ত্রী খুব ভালোভাবেই বুঝে ফেলতেন যে আজ তার বাজেট পেশ করতে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে। কিন্তু তার যেহেতু বয়স হয়েছে, এতক্ষণ বসে থাকলে তো কোমর ব্যথা হয়, তাই না? তিনি পাতি নেতাদের তখন হয়তো বলতেন আমি আর বসে থাকতে পারছি না, মিছিল আসা শেষ হলে আমাকে মিসকল দিও। পাতি নেতারা তখন হায় হায় করে উঠত—এটা আপনি কী বলছেন? আপনি চলে গেলে কেউ যদি আপনার চেয়ারে বসে পড়ে, তখন চেয়ার পাব কই? দেখছেন না কী পরিমাণ নেতা এসেছে! অর্থমন্ত্রী তখন চেয়ার রক্ষার্থে বসবেন ঠিকই, তবে কান ফাটানো স্লোগান সহ্য করতে না পেরে পিএসকে পাঠাবেন তুলা কিনে আনার জন্য।
৩. বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সরকারি দলের নেতা-পাতি নেতারা মিছিল নিয়ে আসবে ঠিকই, তবে নিজেদের ব্যানার যাতে সোজা থাকে, যাতে ব্যানারের লেখাগুলো টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, সেই জন্য তাদের থাকবে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। এক এলাকার কর্মীরা যদি তাদের ব্যানার দিয়ে অন্য এলাকার নেতাকর্মীদের ব্যানার ঢেকে ফেলার চেষ্টা করে, তাহলে প্রথমে শুরু হবে ঘুষাঘুষি। কিন্তু তারা ঘুষাঘুষিতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ব্যানারের বাঁশ উঠিয়ে মারবে হেঁইয়ো বলে। তারপর এই মারামারির প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে। অল্পক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে অধিকাংশ নেতাকর্মী আহত হয়ে চলে গেছে হাসপাতালে। অর্থমন্ত্রী এবার এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবেন যে, যাক ঝামেলা একটু কমল। এইবার বাজেট পেশ করা যায়।
৪. অর্থমন্ত্রী যখন বাজেট পেশ করার জন্য দাঁড়াবেন, এমনকি পেশ করতে শুরুও করে দেবেন, তখনই শুরু হয়ে যাবে নানামুখী মন্তব্য। কারণ উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গোছের পাবলিক থাকতেই পারে। তাদের মধ্যে যদি বাউল টাইপের কেউ থেকে থাকে, তাহলে বলবে—মন্ত্রী সাব, একটা কথা। আপনে সরাসরি বাজেট পেশ না কইরা আমরা যেইভাবে পালাগান শুরু করি, সেইভাবে বাজেটটা পেশ করেন। মন্ত্রী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবেন পালাগানের মতো করে আবার বাজেট পেশ করে কীভাবে? বাউল টাইপের সেই পাবলিকরা তখন দেখিয়ে দেবে সিস্টেমটা। বলবে চারজন মন্ত্রীকে মঞ্চের চার কোণায় দাঁড়াতে। তারপর বলবে বন্দনা গাইতে—উত্তরে বন্দনা করলাম দয়াল বাবার নাম, দক্ষিণে বন্দনা করলাম অমুক পীরের নাম...
৫. বাজেট অধিবেশনটা যেহেতু টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হবে, অতএব ততক্ষণে অনেকে অর্থমন্ত্রীকে টিভিতে দেখেও ফেলবে। টিভিতে দেখার পর দূরের লোকজন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঘটনাস্থলে আসতে না পারলেও কাছের লোকজন তাড়াতাড়ি করে চলে আসবে। তাদের মধ্যে যারা রূপসচেতন, তারা এগিয়ে যাবে অর্থমন্ত্রীর কাছে। গিয়ে বলবে—আপনাকে টিভিতে দেখে ছুটে এলাম। আপনি শুনে হয়তো কষ্ট পেতেও পারেন, তবু কথাটা বলি। মেকাপ ছাড়া টিভিতে দেখতে আপনাকে বেশ খানিকটা খারাপ লাগছে। অন্যদিন মেকাপ ছাড়া ক্যামেরার সামনে এলেও আজ যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ একটা অধিবেশন, প্লিজ আপনি একটা বিরতিতে গিয়ে মেকাপটা করে আসুন। তখনই হয়তো উপস্থাপকের মুখে শোনা যাবে—নিচ্ছি ছোট্ট একটা বিরতি।
৬. অনেক চড়াই-উত্রাই পার হয়ে বাজেট অধিবেশন শেষ হলো। এবার সভা থেকে সবার বিদায় নেয়ার পালা। গাড়ি-টাড়ি সব রেডি করা হলো। পুলিশ-র্যাব সবাই রেডি হয়ে গেল অর্থমন্ত্রীকে গার্ড দেয়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা হলো অর্থমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিক-ওদিক তালাশ করা হলো। অবশেষে দেখা গেল এক জায়গায় বেশ কিছু লোক গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ যারা অর্থমন্ত্রীকে খুঁজছিল, তারা এবার সেই গোল চত্বরের দিকে এগিয়ে গেল। গিয়ে দেখে অর্থমন্ত্রী কী যেন লিখছেন। বিষয়টা ভালোভাবে জানার জন্য আরও কাছে এগিয়ে যেতেই জানা গেল সবাই তাকে ধরেছে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য, তিনি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। কোনো কোনো অটোগ্রাফের সঙ্গে আবার অর্থনীতি বিষয়ক বাণীও লিখে দিচ্ছেন।
সূত্র : আমার দেশ
No comments:
Post a Comment