প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, July 26, 2011

 এ দেশে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যানেল নেই - কৃষ্ণকলি ইসলাম

কৃষ্ণকলি ইসলাম। সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৯-এ শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে তিরষ্কৃত হয়েছেন। মনপুরা ছবিতে ‘সোনার পালঙ্কের ঘরে’ গানটির জন্যই তার এ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তথাপি জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরও চলচ্চিত্রে তার গান গাওয়ার তেমন ইচ্ছে নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। তার বর্তমান ভাবনা নিয়ে সোনালি-রুপালির মুখোমুখি হয়েছেন কৃষ্ণকালি। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আর এ সুজন
বর্তমানে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
বর্তমানে পারিবারিকভাবে একটু বেশিই ব্যস্ত। তার মধ্য থেকে আমার পরবর্তী অ্যালবামের কাজ করছি। এ ছাড়া জাতীয় তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা কমিটির হয়ে কাজ করছি।
ঈদে শ্রোতাদের কী দিচ্ছেন?
শুধুই শুভেচ্ছা দিচ্ছি।
এই ঈদে কোনো অ্যালবাম তাহলে শ্রোতারা পাচ্ছে না আপনার কাছ থেকে?
এই ঈদে কেন, কোনো ঈদেই আমি অ্যালবাম বের করিনি, করবও না। আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো ঈদ, পূজা কিংবা ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি দিন উপলক্ষে কোনো অ্যালবাম রিলিজ করব না। এমনকি এসব দিনে আমি ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলোতেও পারফর্ম করা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব। তবে ঋতুভিত্তিক কোনো কিছু উপলক্ষে করেই আমি আমার অ্যালবাম বের করে থাকি। যেমন পহেলা বৈশাখ হতে পারে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০০৯ এ প্রথমবারের মতো আপনি সেরা গায়িকা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ভালো লাগছে, এতটুকুই বলব। এর বেশি কিছুই বলার নেই।
আপনাকে মনপুরাতে গান করতে দেখা গেছে, তারপর আর কোনো সিনেমাতে গান করতে দেখা যায়নি, কেন?
আসলে আমি ‘মনপুরাতে’ আমার ব্যক্তিগত একটি কারণে গান করেছি। সিনেমাতে আমার গান করা বা গাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই এখন পর্যন্ত। তবে কখনও যদি ভালো লাগে তখন সিনেমাতে গাইতেও পারি।
সিনেমার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন, অথচ সিনেমাতে গান না করার সম্ভাবনার কথা বলছেন। এটা আপনার দায়িত্ববোধ থেকে সরে আসা নয় কি?
এখানে দায়িত্ববোধের প্রশ্ন আসে কেন!
আমি ভালো গান করেছি, তাই পুরস্কৃত হয়েছি। এর মানে তো আমাকে চলচ্চিত্রে গান করতে হবে এটা বুঝায় না। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই আমি মনে করি।
আমাদের দেশে শিল্পীরা অনেক চ্যারিটিমূলক অনুষ্ঠান করে থাকেন, কিন্তু এর অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে দেখা যায় না, কেন?
দেখা যায় না বললে সম্পূর্ণভাবে ভুল হবে। এটা বলতে পারেন এটাকে হাইলাইট করা হয় না। এই দেখুন, আমরা যে কয়েক দিন আগে ‘জাতীয় কমিটি’ লংমার্চ করলাম, এখানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীসহ আরও অনেক লোকজন সম্পৃক্ত হয়েছেন এটাও তো একটা চ্যারিটিমূলক ব্যাপার হতে পারে। কিন্তু এটা নিয়ে পত্রিকায় কতটুকু লিখেছে? আর আমি ওই দলের সদস্য নই, যে দলে বাংলাদেশের কথিত সঙ্গীতশিল্পীরা দেশের বাইরে সঙ্গীতমূলক প্রোগ্রাম করে সংগৃহীত টাকা লুটপাট করে খায়।
আপনি তো একাধারে নিজের গানের কথা ও সুর সাজান এবং তাতে আপনি নিজে কণ্ঠ দেন। এত কিছু একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব?
সম্ভব করলেই সম্ভব হয়। ইচ্ছে শক্তিই মানুষের সব সফলতার উত্স। আর আমি তো শুধু গানই করছি না। এর বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক আন্দোলনে নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া পরিবার তো আছেই। আর এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে ইচ্ছাশক্তি থেকেই।
বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে ‘শিল্পী বাছাই’ অনুষ্ঠান করতে দেখা যায় নিয়মিতভাবে। এর থেকে সঙ্গীতাঙ্গন কী পাচ্ছে?
আসলে সঙ্গীতাঙ্গন কী পাচ্ছে তা বলার আগে বলব এসব অনুষ্ঠানে ‘শিল্পী বাছাই’ অনুষ্ঠান হলেও তার মাধ্যমে শিল্পী বাছাই হচ্ছে না। এসব অনুষ্ঠানে যেহেতু বিভিন্ন স্পন্সর থাকে, তাই তাদের বিজ্ঞাপনগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই তারা অসদুপায় অবলম্বন করছে। আর আমাদের চ্যানেলগুলো টাকা পাওয়ার জন্য তা করে যাচ্ছে। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরুলেও বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া এখনও পরিপকস্ফ হয়নি। সে জন্য আমি বলব, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যানেল নেই। আর আমরা সেখান থেকে কীভাবে শিল্পী আশা করতে পারি। তাই এক কথায় বলব, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন এর থেকে ভালো কিছু পাচ্ছে না। এগুলোর মাধ্যমে চ্যানেলগুলো শুধুই ব্যবসা করছে।
যদি এর থেকে সঙ্গীত জগত্ সত্যিকারের শিল্পী না পেয়ে থাকে, তাহলে আপনারা এসব অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন না কেন?
প্রতিবাদ করছি না বললে ভুল হবে। আমি প্রতিনিয়তই এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু বললে কী হবে, তা তো সাংবাদিকরা ছাপছে না। এই দেখুন, আমরা জাতীয় তেল-গ্যাস-বিদ্যুত্-বন্দর রক্ষা কমিটি যে আন্দোলনগুলো করছি তা কি ছাপা হচ্ছে? তাই আমি বলি, আমাদের পত্রিকা, চ্যানেলগুলো যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, তাই এরা শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। এরা নিরপেক্ষ হলেই আমাদের প্রতিবাদগুলো কাজে লাগবে।
আপনাদের তো একটা গানের দল আছে, তার সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমরা সব সময়ই গান নিয়ে গবেষণা করছি। বাংলা গানের শিকড়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া আমাদের একটা গানের পাঠশালাও আছে, এতে কাজ করছি। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারেন, আমাদের গানের দল গানের মধ্যে ডুবেই ব্যস্ত সময় পার করছে।
আমার সর্বশেষ প্রশ্ন, বর্তমানকালের সঙ্গীতাঙ্গন যে অবস্থায় চলছে তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে বললে আপনি কী বলবেন?
আমাদের সঙ্গীতাঙ্গন এখন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে এটা হতাশার দিক হলেও আমি এর মধ্যেই আশা খুঁজে পাই। কারণ দিনে দিনে আমাদের জনগণ শিক্ষিত হয়ে উঠবে, বেশি পড়াশোনা করবে এবং ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা লাভ করবে। তাহলেই দেখবেন, একদিন আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের কালো মেঘে ঝড় উঠবে, বৃষ্টি নামবে, সবুজ প্রাণে নামবে আলোর ঝলকানি।
 সূত্র : আমার দেশ

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ