প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, March 8, 2011

ভাগ্যবান শিকারি ।। বিপ্রদাশ বড়ুয়া

মস্ত বড় এক শিকারি। ছেলের সপ্তম জন্মদিনে সে শিকারে বের হবে ঠিক করল। কিছু পেলে জন্মদিনে চমৎকার ভোজ হবে। ছেলেও খুব খুশি হবে। তার বন্দুকটা ছিল দেয়ালের পেরেকে ঝোলানো। সেখান থেকে নিতে গিয়ে লাগল ফ্যাসাদ। দুম করে হাত থেকে পড়ে গেল। নিচে ছিল লোহার ইয়া বড় এক হামানদিস্তা। তাতে পড়ল আর শব্দ হলো ঘ-টা-আ-ং-ং! হায় হায়, বন্দুকের নলটা বেঁকে প্রায় দ-এর মতো হয়ে গেল! 'বাবা, লক্ষণ ভালো নয়। তুমি আজ শিকারে যেও না।' ছেলে প্রায় কান্নার সুরে বলল।
'তুই একটা বোকা ছেলে! আরে এটা তো বরং ভালো লক্ষণ। বন্দুক আঘাত করেছে হামানদিস্তায়। এর অর্থ ওটা শিকারকেও ভালো ঘায়েল করবে।' হাসতে হাসতে বলেন বাবা।
শিকারি চলল শিকারে। গিয়ে পেঁৗছাল পাহাড়ের ধারের হ্রদে। চারদিকে প্রথম ভোরের শান্ত পরিবেশ। নলখাগড়ার মাথা একটু একটু দুলছে। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা শ্রবণা আর দেখা যাচ্ছে না। পাখিরা ডাকছে হ্রদে, তাদের পাখার শব্দও শোনা যাচ্ছে। এদিক-ওদিকে হিজল ও বরুণগাছ। দূর্বা ঘাসে দুই ফোঁটা শিশির উঁকি দিচ্ছে।
শিকারি তখন কী দেখল? বুনো হাঁস। একটি দুটি নয়, ১৩টি।
১২টি পানিতে ভেসে ঘুমুচ্ছে, আর ১৩ নম্বরটি হ্রদের কূলে পাথরের পাশে ঘুমুচ্ছে শান্ত হয়ে। ঘুমুলে কী হবে, ঘুমের মধ্যেও চোখ খোলে আর পিটপিট করে তাকায়।
'কী সৌভাগ্য!' শিকারি মনে মনে আওড়ে নিল। আর ওই বাঁকা নল দিয়ে লক্ষ্য স্থির করল।
'ঠাস দুম!' গর্জে উঠল বন্দুক। আর কী কাণ্ড দেখো! বন্দুকের নল যেহেতু দ-এর মতো বাঁকা, তাই গুলিও ছুটল এঁকেবেঁকে। ১২টি বুনো হাঁস বিদ্ধ করে গুলি ছুটল ১৩ নম্বরের দিকে। ওটাও ঘায়েল হলো; কিন্তু মরল না। আর কী অবাক কাণ্ড! ওটা গিয়ে পড়ল হ্রদের পানিতে। সেখানে পাখা মেলে দাপাদাপি শুরু করল। শিকারিও তার গুলি-গোলা রাখার থলে, এই কাজের যাবতীয় সরঞ্জাম, দড়ি, ছোরা ঝোলানোর বেল্ট, হুক ইত্যাদি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওই নাদুস-নুদুস বড় বুনো হাঁসটাও ধরা চাই।
ওই দিয়ে চমৎকার রোস্ট হবে। হাঁসের দাপাদাপিতে পানি থেকে কী যেন একটা দিল উড়াল। সেটা গিয়ে পড়ল কূলের সবুজ ঘাসে। শিকারি দেখে কী, ওটা সাদা চকচকে বড় এক মৃগেল মাছ। এত বড় মৃগেল সে কত দিন দেখে না, তাই খেতেও পায় না। আরে ব্যা-স। একটি একটি ধরতে লাগল।
১২টি হাঁসের গলা ধরে কোমরে বেঁধে নিল। ওদের দাপাদাপিতে পানি উতাল-পাতাল। ১৩ নম্বরটিও ধরে বাঁধল। মৃগেলটাও ধরতে হবে। এই ভেবে কূলে উঠতে গেল। ধরল কূলের দুটি শেকড়। আরে ধ্যাৎ, শেকড় কোথায়! এ যে বড় একটা খরগোশের দুটি পা। শুরু হলো তার দাপাদাপি, আঁচড়-পাঁচড়। সে সামনের দুই পা দিয়ে মাটি আঁকড়ে ধরতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল। তাতে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে এল ২৫টি মিষ্টি রাঙা আলু। বেশ বড় বড় আর লম্বা। শিকারি গেল ঘাসের দঙ্গল থেকে মৃগেলটা খুঁজে নিতে। দেখল মাছটা গিয়ে পড়েছে বন মুরগির বাসায়। মুরগিটা মৃগেলের দাপাদাপিতে ঘাড় ভেঙে পড়ে আছে। ওটা নিল। ওর বাসায় পেল ১৩টি ডিম। ওগুলো ঠেঁসে ঢুকে আছে নরম ঘাসের বিছানায়। অবাক কাণ্ড! একটা ডিমও ভাঙেনি। খুব যত্ন করে ঘাস ও পাতা সরিয়ে ডিমগুলো নিল। ওই ঘাস ও পাতার নিচে পেয়ে গেল অনেক ব্যাঙের ছাতা। খেতে যা মজা হবে, তা আর বলার নয়। লেখারও নয়। খরগোশের কান দুটি ও মুরগির গলা বেঁধে ঝুলিয়ে নিল ডান কাঁধে। মৃগেল ও রাঙা আলু বেঁধে নিল বাঁ কাঁধে ঝুলিয়ে। বুনো হাঁসদের নিল কোমরের চারদিকে বেঁধে। ডিমগুলো নিল জামার ভেতরে বুকের সঙ্গে। ব্যাঙের ছাতা নিল থলেয়। তারপর শিকারি তার দ-এর মতো বিখ্যাত বন্দুক নিয়ে বাড়ির পথে ছুটল। ধরল তা-না-না-আ তান। ফেরার পথের গান।
ঘরেফিরেই সে প্রথমে খুলল শিকারির উলের বিখ্যাত মোটা মোজা। তারপর পাতলুন। ওগুলো ভিজে একাকার। জবজব। ভীষণ বিরক্তিকর। তখন দেখে আরেক কাণ্ড। উলের লম্বা মোটা মোজায় আটকে আছে অনেক অনেক ছোট চিংড়ি। আর মোটা সুতোর পাতলুনে আটকে আছে ৩৩টি ট্যাংরা। কানের কাঁটায় আটকে আছে বলে ওরা তখনো গান করছে কোঁ-কোঁ, কাঁ-কাঁ। ততক্ষণে কিছু পড়ে গেল মেঝেতে, বাকিগুলো ছাড়াতে হলো একে একে। চিংড়ি ও ট্যাংরা নাচছে আর লাফঝাঁপ দিচ্ছে।
একবার ভেবে নাও শিকারির ছেলের সপ্তম জন্মদিনে কী মজার ভোজ চলল। বাড়ির আশপাশের সবাই সেই ভোজে পেট পুরে খেল-দেল। এমন ভোজ যে সবাই দু-তিন দিনে শেষ করতে পারল না। আর চুপি চুপি বলে রাখি, আমিও ছিলাম সেই ভোজোৎসবে। মাছের মুড়োটা দিয়েছিল কি না আমাকেই। [জাপানের গল্প]

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ