প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Sunday, March 4, 2012

অগ্নিঝরা মার্চ-৫ : দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন, চট্টগ্রামে শহীদ হন ২২২ জন

৫ মার্চ। একাত্তরের এদিন ছিল বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে ডাকা লাগাতার হরতাল ও বিক্ষোভে উত্তাল আরেকটি দিন। ১ মার্চ যে আন্দোলন শুরু হয়, গত চারদিনে তা ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানিদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে সব স্তরের মানুষ একাত্তরের ৫ মার্চ রাস্তায় নেমে আসেন। মার্চে আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রাণ হারাতে থাকেন। কিন্তু কোনো মানুষ ভয়ে ঘরে ফিরে যাননি। বরং রাজপথে যত রক্ত ঝরেছে, আন্দোলন তত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে গত ক’দিনে নিহতদের জন্য ৫ মার্চ সারাদেশের মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে আরও তীব্র হয়ে ওঠে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য এদিন ঢাকায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু হয়।
একাত্তরের এ দিনে হরতাল পালনকালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে চট্টগ্রামে শহীদ হন ২২২ জন। টঙ্গীতে নিহত হন ৪ শ্রমিক, আহত হন আরও ১৮ জন। যশোরে মারা যান একজন। মুক্তির ঢেউ এদিন আছড়ে পড়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও। একদল স্বাধীনতাকামী মানুষ বেরিয়ে আসেন কারাগারের দেয়াল ভেঙে। দেয়াল ভাঙার সময় কারারক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারান ৭ জন; আহত হন আরও ৩০ জন। বেরিয়ে আসা ৩২৫ বন্দি চলে আসেন শহীদ মিনারে। যোগ দেন আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে। টঙ্গীতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নিহত শ্রমিকদের লাশ নিয়ে রাজধানীতে মিছিল বের করা হয়। এদিন বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রামের মিছিলেও গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এতে আহত হন তিনজন। টঙ্গী, চট্টগ্রাম ছাড়াও গুলিতে খুলনায় দুই, রাজশাহীতে একজন মৃত্যুবরণ করেন।
সংহতির ঘটনা ঘটে এদিন পশ্চিম পাকিস্তানেও। পাঞ্জাবিদের দ্বারা নিগৃহীত বেলুচিস্তানের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগণতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করে। আন্দোলনে নিহতদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের লাহোরে। সেখানের বিভিন্ন মসজিদে দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে সংহতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অন্যদিকে ঢাকা শহর থেকে এদিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে বিবৃতি দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। আর নিউমার্কেটে মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ন্যাপ ওয়ালীর জনসভায় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। রাতে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসভবনে দেখা করেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দেবেন—তা সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ।
সূত্র : আমার দেশ

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ