এতিমের লুকানো ব্যথা কে দেখে হায়, কেঁদে, কেঁদে শূন্যতায় দিন বয়ে যায়। বাচার তাগিদে বাচতে হয় জীবন বড় দান, দুঃখ-যন্ত্রনায় চালিত নিঃশ্বাসে এতিমের প্রাণ। তবু মানুষের বাচতে হয় হোক যত সংশয়, বেচে থাকা প্রাণ যে জীবন্ত নাহী হয় তার ক্ষয়। একদা এক রাতে মা জননী তার কেঁদে ওঠে, কোলের শিশুটি ডেকে বলে কেন কাঁদছ তুমি মা? অবুঝ শিশু বয়স মাত্র হল সবে পাঁচ, সেই দিন সেই রাতে তার বাবা হলেন পর-পার। পর-পার পড়ের দিন অপরাহ্ণে জননী কে ডেকে বলে, মা, বাবা কোথায়, বাবা কি খায়নি খাবার? হঠাৎ স্তব্ধতায়স্ত জেগে ওঠে মায়ের অশ্রু ভরা আর্তনাদ। ওরে বুকের ধন আয়রে বুকে আয়, কি করে বুঝাই, তোর বাবা যে এ পৃথিবী হতে নিয়েছেন চির-বিদায়। বুকের বন্ধনে বাঁধা দু-হাতে জড়ায়ে শিশু, কেঁদে ওঠে ওঝোর দেখে মায়ের কান্না-কাতর। বিদায়ের বেদনায় জননী আজ বড় অসহায়, ওরে খোকা তোর বাবা যে আর ফিরিবেনা ঘরে, ওই সমাধির তরে শুয়ে আছেন প্রভুর হয়েছে আপন। খোকা দৌরে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে বাবার কবরের তরে, অবুঝ আর্তনাদ করে বলে ওঠে, বাবা ওঠো, জেগে ওঠো, দেখো করোনা তুমি এমন অভিমান। আমি চাইবোনা আর কোন খেলার পুতুল, তোমার সব নির্দেশ করিবো সদা সম্মান। খোদার দরবারে যে হয়েছেন একবার পর-পার, অবুঝ কি বোঝে সেথা হতে কেউ আসেনা ফিরে আর? গরিবের অভাবের সংসার ঠেকা বড় দায়, পিতৃহীন সন্তান কত যে নিরুপায়। নিষ্ঠুর নিয়তি আর দুঃখ ভরা স্মৃতি নিয়ে, গড়ে ওঠা শিশু আজ কিশোরে হলো পরিণত। অভাব-অনটনে ঘেরা জীবনের সবকূল, করে তুলে মানুষের মন বড় অশান্ত। জীবনের কিছু প্রথা দেয় শুধু ব্যথা, ভীষণ বেদনায় ভরে ওঠে মন। বছর দশেক পর একদিন হঠাৎ , মমতাময়ী জননীও হলেন যে পরলোকগমন। মায়ের মমতা ভরা কচি কিশোরের হৃদয়, মর্মাহত শুধু ভেবে তা জীবনে কেন এতো পরাজয়? শোকের ছোয়ায় ঝরছে কিশোরের লোনা জল, কেউ রইলনা আর এই এতিমের আপন। হায়রে পৃথিবী কেমন তোর এ রীতিনীতি, এ বাল্য বয়সে পিতামাতাহীন করলে মোরে এতিম। কোথায় পাব ঠাই আপন যে কেউ নাই, নদীর পাঁড়ে কুঁড়ের নীর ভেঙ্গে নিল বন্যায়। কে বুঝবে আর কত এই মনে কত ক্ষত, কে মুছবে ঝরা অশ্রু মোর বিধাতা ? নিঃশ্ব জীবনে দুঃখ বিহনে কি পেলাম বলনা? আদর করে আচঁল তরে কে দিবে মায়ের মমতা? এতিম আমি, আমিতো বন্দি দুঃখের সঙ্গী, খুজে পাইনি কভূও জীবন সুখের ঠিকানা। এখানে-সেখানে আজ দিন রাত বয়ে চলে, আশ্রয়হীন একা পথের পথিক আমি আজ এ ধরায়। কভূতো করিনি ভুল তবে কেন জীবনের এ ভাঙ্গা কূল, পথে-ঘাটে মানুষের শুধু অবহেলা-অনিহা, এতিম বলেতো আমি অভিশপ্ত নই প্রভু, কেন নির্দয় মানুষের মাঝে ফোটেনা দয়ার ছোট্ট ফুল? যে আগুঁন জ্বালায় দ্বিগুণ জ্বলাতোকনা এ দেহে, জ্বলতে, জ্বলতে ঝর হয়ে ঝরোকনা এই মনে। এতিমের নিঃশ্বাসের ভার ভীষণ দহন, কেউতো বুঝেনা প্রভু শোনেনা এ এতিমের কহন, দিন দিন মানুষ হচ্ছে পাথর কে করবে কারে আপন। কেউ আর আসেনা এগিয়ে দু-হাত বাড়িয়ে, অসহায় এতিমের করিতে সহায়, মানুষের মনে ভরে দাও সেই চেতনা প্রভু, যে চেতনায়, মানুষ মানুষের মাঝে রাখে শ্রেষ্ঠ বন্ধন। মানবকূলে সে মানব সদা সু-মহান, যে মানুষ সদা মানুষেরে করেন সমান সম্মান। | |
http://www.sonarbangladesh.com/articles/SaifChowdhury |
Monday, April 30, 2012
এতিমের অশ্রু | সাইফ চৌধুরী
Labels:
কবিতা,
সাইফ চৌধুরী
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment