একটি মাসিক পত্রিকায় মাঝে মাঝে কিছু লেখা লিখেছি যেগুলো একটু ভিন্ন চিন্তার। এক কথায় সংস্কারমূলক চিন্তা থেকে লেখা। আমি লিখেছি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, এ চিন্তার সমর্থক রয়েছেন বিশাল একটি শ্রেণী। আমাকে এ বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে তারা নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সমর্থন যুগিয়েছেন। উল্লিখিত সে শ্রেণীটির বেশির ভাগই তরুণ। তরুণ মানে বয়সে নয়, চিন্তা-চেতনায় যাদের তারুণ্যের স্ফুরণ আছে। তাদের মনের গভীরে অগ্রসর চিন্তার যে বীজগুলো প্রোথিত তা আমার কলমে অঙ্কুরিত হচ্ছে দেখে কেউ কেউ উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। তবে দু’একজনের কাছ থেকে এ সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তার প্রকাশও ঘটেছে বলে আমি লক্ষ্য করেছি এবং অন্যের কাছে শুনেছি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আজ পর্যন্ত কেউ সরাসরি আমাকে এ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলেননি। এর কারণ হলো, আমি এমন কিছু অসঙ্গতি ও দুর্বলতার ওপর আলোকপাত করেছি যা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তারা নিজেরাও তা অনুধাবন করেন। কিন্তু বিষয়টি ভিন্নভাবে চিন্তা করার কারণে এভাবে বলাটা সমর্থন করেন না। তাদের যুক্তি হলো, কওমী মাদরাসা এবং আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে তো প্রচুর লেখালেখি এমনিতেই হয়। আমরা কেন ঘরের কথা পরকে বলে শুধুই নিজেদেরকে খাটো করব? তাদের যুক্তি চমৎকার! কিন্তু আমাদের কথা হলো, নিজের শরীরের অদর্শনীয় কোনো স্থানে বিষ ফোড়া হলে সেটা গোপন করে রাখা যায় কতদিন? কাউকে না কাউকে তো বলতেই হয়। অন্তত চিকিৎসার স্বার্থে তো নিজের আপনজন অথবা ডাক্তারকে তা খুলে বলতেই হয়। প্রয়োজনে দেখাতেও হয়। কোনো কোনো সময় অস্ত্রোপাচারও করা লাগে। এই অস্ত্রোপাচার চিকিৎসার স্বার্থে, আরোগ্য লাভের জন্য। এখন যদি নিজের গোপন অংশ দেখে ফেলার বা এ সম্পর্কে জেনে যাওয়ার ভয়ে কেউ বিষাক্ত ফোড়ার অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকে তাহলে তো তাতে পঁচন ধরবেই। এই পঁচন এক সময় তার প্রাণহানিরও কারণ হয়ে যেতে পারে। কওমী মাদরাসা কিংবা আলেম-ওলামা সম্পর্কে কিছু বলা স্পর্শকাতর বিষয়। এখানে বিবেচনার বিষয় হলো, বলার ঢং ও উদ্দেশ্য। একজন সন্ত্রাসীও ছুরি দিয়ে আঘাত করে আবার একজন ডাক্তারও ধারালো ছুরি দিয়ে অপারেশন করে। বাহ্যত দু’জনের ক্রিয়াতেই ব্যথা পাওয়া যায়। কিন্তু দু’জনের উদ্দেশ্য ভিন্ন, ছুরি চালানোর ঢংও ভিন্ন। এজন্য একজন পায় শাস্তি, আরেকজনের জন্য থাকে পুরস্কার। মাদরাসা শিক্ষা কিংবা আলেম-ওলামার দুর্বল দিকগুলো নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা যারা করে তাদের উদ্দেশ্য যে হীন সে কথা সবার জানা। কিন্তু আমরা যদি নিজেরা নিজেদের অসঙ্গতি ও দুর্বলতাগুলো নিয়ে আত্মসমালোচনা করি তাতে তো আমাদের উত্তরণের পথটা ত্বরান্বিত হয়। আমাদের দুর্বলতাগুলো গায়ে ঠেলে অস্বীকার করে ফেলার মতো গুয়ার্তুমি কেউ করবেন বলে আমার মনে হয় না। আমরা সবাই জানি কোথায় আমাদের দুর্বলতা। আর এগুলো কাটিয়ে ওঠা এক দুদিনের কাজ নয়। একক কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষেও সম্ভব নয় এর কোনো বিহিত করা। এটা সুদূরপ্রসারী একটা কাজ। চিন্তা-চেতনায় বড় ধরনের ধাক্কা না দিতে পারলে কস্মিনকালেও উত্তরণ সম্ভব নয়। মূলত আত্মসমালোচনার ও দুর্বলতার সম্পর্কে নিজের মধ্যে যখন সচেতনতা এসে যায় তখন সে এগুলো কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এ প্রচেষ্টাই তাকে একদিন উত্তরণের পথ দেখায়। আর নিজের ত্রুটিযুক্ত কাজ কিংবা ভুল পথে চলেও যদি কেউ আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে সে কখনও উত্তরণের পথ খুঁজে পায় না। আমাদের উদ্দেশ্য আত্মসমালোচনা। সম্ভাবনার দিগন্ত খোলা থাকা সত্ত্বেও চিন্তা-চেতনার পশ্চাদপদতার কারণে নিজেদের পিছিয়ে থাকার কথা যারা অনুভব করেন তারাই কেবল দরদের সঙ্গে কিছুটা আত্মসমালোচনা করেন। এতে কোনো ক্ষতি আছে বলে আমরা মনে করি না। বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যে চর্চিত না হলে আমাদের চিন্তাধারায় কোনো পরিচর্তন আসবে না। গতানুগতিক চিন্তা থেকে সরে আসার জন্য চাই ভিন্ন কিছু চিন্তার লালন ও বিকাশ। দুই. আসছে কুরবানী ঈদ। কওমী মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এ ঈদের গুরুত্ব একটু বেশি। গুরুত্বটা অন্য কারণে। ওইদিন কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশন করা হয় দেশের ছোট বড় প্রায় সব মাদরাসায়। গোরাবা তহবিলের বড় একটা আয় আসে এ খাত থেকে। ঈদুল আযহার আগে পরে মিলিয়ে প্রায় ১০/১৫ দিন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এ কাজে নিয়োজিত থাকেন। বার বার মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বিনীত ও কাতর হয়ে চামড়া কালেকশন করেন। ভেতরের খবর হলো, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশই এ কাজটাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। মনে মনে সবাই এটাকে ঘৃণা করেন। কিন্তু তারপরও করতে হয় বাধ্য হয়ে। মাদরাসার উস্তাদ-স্টাফরা চাকরি টিকানোর জন্য আর ছাত্ররা মাদরাসার আইন মানতে বাধ্য সে হিসেবে করে। কোনো কোনো মাদরাসার কর্তৃপক্ষও হয়ত তা পছন্দ করেন না, তবুও বাধ্য হয়ে করতে হয়। কারণ এ খাত থেকে বড় অংকের যে আয়টা আসে তা পূরণ করার মতো আপাত বিকল্প কোনো সোর্স নেই। ফলে কওমী মাদরাসাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশনটা এমন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে যে, এছাড়া কেউ মাদরাসা পরিচালনার কথা চিন্তাও করেন না। এমনকি এটাকে কেউ জিহাদের অংশ, দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিংবা সওয়াব হাসিলের বিশেষ উপায় হিসেবে গণ্য করেন। ছাত্রদের মানসিকতা সেভাবেই গড়ে তোলা হয়। এই প্রেরণা ও জযবা সৃষ্টি না করলে ঈদের আনন্দ মাটি করে জিল্লতি ও অপদস্থতার এ কাজে ছাত্রদেরকে লাগানো যেতো না। মূলত মাদরাসার অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকে লক্ষ্য করে ছাত্র-শিক্ষক সবাই তা স্বীকার করে নেন। দ্বীনী মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয় সাধারণত জনসাধারণের স্বতস্ফূর্ত দানের ভিত্তিতে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এসব প্রতিষ্ঠানে বিনা খরচে কিংবা স্বল্প খরচে পড়াশুনার সুযোগ পায়। সমস্যাগ্রস্ত এসব মানুষের যে সহায়তা দ্বীনী মাদরাসাগুলো করে থাকে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এ ধরনের সুযোগ সুবিধা না থাকলে হয়ত অনেকের পক্ষে দ্বীনের সহীহ ইলম হাসিল করা সম্ভব হতো না। কওমী মাদরাসার বৈশিষ্ট্য হলো, তাতে জনগণের দানের অংশ থাকে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিচালিত হয়। জনগণ এটা তাদের দায়িত্ব হিসেবেই আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। কিন্তু জনগণের এসব দান গ্রহণ করতে গিয়ে যদি জিল্লতি ভোগ করতে হয়, অপদস্থ-অপমানিত হতে হয়-তাহলে এর দ্বারা প্রকারান্তরে দ্বীনী শিক্ষাকে অপদস্থ করা। সম্পদশালীরা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে দান করবে-এটা তাদের করুণা নয়, ধর্মীয় দায়িত্ব। তাদের এ দায়িত্বটুকু যাতে সহজে পালন করতে পারেন এজন্যই মূলত সহযোগিতা করে থাকেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। এজন্য আমরা দেখি, মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দানশীলদের কাছে গিয়ে দান গ্রহণ করেন। কিন্তু এর পদ্ধতিটা যদি হয় দৃষ্টিকটূ, অপমানকর, জিল্লতির তাহলে কখনোই এ দান গ্রহণ করা বাঞ্চনীয় নয়। শরীয়ত কাউকে এ অধিকার দেয়নি যে, এমন কাজ করবে যা প্রকারান্তরে দীনকে অপদস্থ করে। কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশনের যে ধরনটা আমাদের মাদরাসাগুলোতে প্রচলিত সেটাকে কি সম্মানজনক বলা যাবে! কুরবানীর পশুর চামড়া কুরবানীদাতা ভোগ করেন না, এটা গরীব-দুঃখীর জন্যই বরাদ্দ থাকে। তার দায়িত্ব হলো, উপযুক্ত খাতে তা দান করা। যেহেতু ইয়াতীম-গরীবরা মাদরাসাগুলোতে বিনা খরচে পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে এজন্য কুরবানীর পশুর চামড়া পাওয়ার বেশি হকদার মাদরাসাগুলোর গোরাবা ফান্ড। এ ফান্ডে দান করলে সওয়াব বেশি হবে তাতে কারো কোনো দ্বিমত নেই। এ বোধটুকু সতেজ থাকলে কুরবানীর পশুর চামড়াটি কুরবানীদাতা স্বউদ্যোগে মাদরাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের দেশের ধনিক শ্রেণীর মধ্যে এ বোধটুকু সক্রিয় নয়। এজন্যই তাদের কাছে গিয়ে গিয়ে, ফজিলত বয়ান করে মাদরাসার জন্য চামড়া কালেকশন করতে হয়। কিন্তু মাদরাসার অতি উৎসাহী কর্তৃপক্ষ এই কালেকশন করতে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদাবোধ, অমুখাপেক্ষিতা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে বসে। ছাত্র-শিক্ষক সবাই একযোগে যেভাবে নিজেদের মনোযোগ ও শ্রম ব্যয় করেন তা দ্বীনের অন্য কোনো ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় না। কুরবানীর সারাদিন তাদেরকে এলাকা এলাকা ঘুরে যেভাবে চামড়া কালেকশন করতে হয় এবং মানুষের কটূক্তি, তীর্যক মন্তব্য ও হাসির পাত্র হতে হয় তা ন্যূনতম আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষেও মেনে নেয়া কঠিন। কুরবানীদাতা মনে করে হুজুররা চামড়ার ব্যবসায় নেমেছে। এজন্য পাইকারদের মতোই আচরণ করে তাদের সঙ্গে। আর চামড়ার পাইকাররা রীতিমত তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতে থাকে। বিশেষত রাজধানী ঢাকা শহরে যারা কুরবানীর চামড়া কালেকশন করেন চরম অপামানজনক পরিস্থিতির শিকার হননি এমন দাবি কেউ করতে পারবেন না। লজ্জা ও অপমানের চরম গ্লানি মাথায় নিয়েই তাদেরকে চামড়া কালেকশনের তথাকথিত জিহাদ চালাতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা ঢাকা শহরের মাদরাসাগুলোর। মফস্বলের মাদরাসাগুলো সাধারণত এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অনেক দূর পর্যন্ত এর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। চামড়া কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা বাড়তি একটা সুবিধা ভোগ করে থাকে। কিন্তু ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠা নানা রকমের মাদরাসার পরিচয় পাশের ফ্ল্যাটেরও কেউ হয়ত জানে না। কোনো কোনো লাইনে বা সেকশনে একাধিক মাদরাসা হওয়ার কারণে চামড়া উসূলে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। কুরবানীদাতাকে কে আগে প্রভাবিত করতে পারে, কে আগে চামড়াটি পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে তা নিয়ে মাদরাসাগুলো পরস্পরে মহাপ্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে যায়। এতে কখনও কখনও কুরবানীদাতা বিরক্ত হন, বিব্রতবোধ করেন। মাদরাসা ও আলেম-ওলামা সম্পর্কে তার মধ্যে একটা বাজে ধারণা জন্ম নেয়। সবচেয়ে বাজে দৃশ্য লক্ষ্য করা যায় কুরবানীর দিন। প্রতিটি পশু জবাই করার জন্য কয়েকটি মাদরাসার ছাত্র ভীড় জমায়। কার আগে কে চামড়াটি নিজের দখলে নিতে পারবে তা নিয়ে রীতিমতো মহড়া শুরু হয়ে যায়। তাদের এই মহড়া দেখে সাধারণ মানুষ ভাবতে থাকে, না জানি এখানে মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকের কত বড় ইন্টারেস্ট! অথচ প্রকৃত বিষয় হলো, এর পুরোটাই গোরাবা ফান্ডের। এতে মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকের বাহ্যত কোনো ইন্টারেস্ট নেই। যে ছাত্রটি সারা বছর বোর্ডিংয়ে টাকার বিনিময়ে খানা খায়, এ কাজে সে নিজেকেও উৎসর্গ করে। তার এখানে প্রাপ্তির কী আছে! তাকে এ কাজ করতে হয় বাধ্য হয়ে, মাদরাসার আইন মনে করে। এভাবে চরম অপমান, লজ্জা ও গ্লানিকর অবস্থায় চলছে মাদরাসাগুলোর চামড়া কালেকশন। কুরবানীর পশুর চামড়া মাদরাসার জন্য কালেকশন করার বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। মাদরাসা পরিচালনার স্বার্থে এর প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের আক্ষেপ হলো, এ কাজে নিজেদের সব সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিলিয়ে দেয়ার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি! কালেকশনটা কি সম্মানজনকভাবে হতে পারে না! আর দিন দিন তা মাদরাসাগুলোর অনিবার্য বিষয়ে পরিণত হচ্ছে কেন? যতদূর জানা যায়, আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগে এদেশে কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশনের কোনো রেওয়াজই ছিল না। সম্ভবত লালবাগ মাদরাসার কোনো উস্তাদের মাথায় এ আইডিয়াটা প্রথমে আসে। এরপর থেকে প্রায় সব মাদরাসায় তা চালু হয়। কিন্তু সহায়ক একটি খাতকে আজ অপরিহার্য ও বিকল্পহীন খাতে পরিণত করার কারণটা কী! আজ কি কোনো মাদরাসার কর্তৃপক্ষ চামড়া কালেকশন ছাড়া মাদরাসা পরিচালনার কথা ভাবতে পারে! ঢাকাসহ দেশের বড় বড় কয়েকটি মাদরাসার কথা জানি, তাদের গোরাবা ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা জমা থাকা সত্ত্বেও সেই একই কায়দায় কুরবানীর চামড়া কালেকশনের মহড়ায় নামে। এটা যেন আজ মাদরাসাগুলোর অপরিহার্য রুটিনে পরিণত হয়ে গেছে। প্রায় মাসখানেক পড়াশুনা বন্ধ রেখে শুধুই এ কাজে লেগে থাকে। একটু সাহস করে এ সিদ্ধান্তটুকু কি নেয়া যায় না যে, চামড়া কালেকশনের ব্যাপারে আমরা মরিয়া হয়ে উঠব না। সম্মানজনক পদ্ধতিতে যা আসে তাতেই সন্তুষ্ট থাকব। আমরা যাদেরকে আমাদের আকাবির মানি, দারুল উলূম দেওবন্দসহ ভারত-পাকিস্তানের মাদরাসাগুলো কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটাই অবলম্বন করে আসছে। তারাও কালেকশন করে, কিন্তু আমাদের মতো জিল্লতি ও অপদস্থতার সঙ্গে নয়। খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব মাদরাসায় পশু কুরবানীর ব্যাপক ব্যবস্থা আছে। এলাকার লোকেরা এখানে এসে কুরবানী করে চামড়াটা দিয়ে যায়। কোথাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে কালেকশনের ব্যবস্থা থাকলেও তা সীমিত পর্যায়ে সম্মানজনকভাবে। তাদের মাদরাসাগুলো কি চলছে না! যখন আমাদের দেশে এ রেওয়াজটা ছিল না তখন মাদরাসাগুলো কিভাবে চলত? দ্বীনের ইলম হাসিলরত ইয়াতীম-গরীবদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা আল্লাহ কোনো না কোনোভাবে করবেন-এ বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলটুকু কি আমরা নিজেদের মধ্যে আনতে পারি না! আমরা মনে করি, কুরবানীর চামড়া কালেকশনের ব্যাপারে মাদরাসাগুলো অতি বাড়াবাড়ি ও মরিয়া হয়ে না উঠলেও অর্থনৈতিক বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না। দু বছর আগে পরিকল্পিতভাবে হঠাৎ করে চামড়ার দর কমিয়ে দিয়ে দ্বীনী মাদরাসাগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ওপর একটা ধাক্কা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কি দেশের কোনো মাদরাসা বা লিল্লাহ বোর্ডিং বন্ধ হয়ে গেছে! মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে আগে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। মানুষের মনে তাদের অপরিহার্যতার কথা বদ্ধমূল করতে হবে। তা করতে পারলে কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশনের মতো তুচ্ছ বিষয়ে দুয়ারে দুয়ারে আত্মমর্যাদাবোধ বিলাতে হবে না। লোকেরা স্বউদ্যোগে এসে মাদরাসায় তাদের কুরবানীর চামড়াটি দিয়ে যাবে। এটাকেই তারা নিজেদের সৌভাগ্যের কারণ বলে মনে করবে। প্রকৃত বিষয় হলো, আমাদের মানসিকতাটা হীনতা ও নীচুতায় নিস্প্রভ হয়ে পড়েছে। কারণে অকারণে আমরা আমাদের সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ হারাচ্ছি। এজন্য সবার আগে দরকার মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া মাদরাসা ও আলেম-ওলামার সঙ্গে যুক্ত হওয়া অযাচিত বিষয়গুলো থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এজন্য অগ্রসর মানসিকতার সম্ভাবনাময় তরুণ শ্রেণীটিকে বিষয়গুলো সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে। তাদের মধ্যে ভাবনাগুলো সক্রিয় থাকলে আশা করা যায় একদিন অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। zahirbabor@yahoo.com | |
http://www.sonarbangladesh.com/articles/ZahirUddinBabar |
Monday, April 30, 2012
আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার | জহির উদ্দিন বাবর
Labels:
জহির উদ্দিন বাবর,
নিবন্ধ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment