এটি একটি এলে বেলে টাইপের লেখা। লেখাটি পাঠে কেউ গভীর তাৎপর্যময় কিছু খুঁজতে যাবেন না। আর গেলেও নিজ দায়িত্বে। এটি একটি হ-য-ব-র-ল লেখা। লেখাটি পাঠে কেউ নিজকে হেয় মনে করলে করতে পারেন, তবে দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ তার নিজের। উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে ভেসে কিংবা শত দুঃখ কষ্টের মধ্যে বেঁচে থেকেও আমরা যারা প্রাণ খুলে হাসতে চেষ্টা করি, তাদের জন্যই এই লেখা। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কিত থেকে থেকে আমরা যারা প্রাণ খুলে হাসতে ভুলে গেছি, তাদের জন্যই এই লেখা।
লেখাটি পাঠে কেউ যদি হাসির কোন উপাদান পেয়ে যান তবে প্রাণ খুলে হাসুন। আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাঁচুন।১. “তোমার কথার মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝছি না।” “তোমার মাথা আর আমার মুণ্ডু’- কথায় কথায় কিংবা কাউকে মৃদু অপমান করার ছলে অথবা কারও প্রতি ঈষৎ রুষ্ট হয়ে আমরা কথা ক’টি প্রায়ই ব্যবহার করি। মাথা আর মুণ্ডু দিয়ে ব্যবহৃত বাক্য দুটোর মর্মার্থ অনেকটা এরকম- ‘বোঝার অসামর্থ্যতা এবং বোঝানোর অপারগতা।’ বুঝতে না পারলে- ‘তোমার কথার মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলাম না’ অথবা, কাউকে কোন কিছু বুঝাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে ‘তোমার মাথা আর আমার মুণ্ডু’ বলে বিদ্রুপ করা আমাদের “কথন শিল্পকে” অধিকতর সমৃদ্ধ করেছে।
আমরা অনেক কিছুই আজকাল বুঝি না কিংবা বলা যায় বুঝে উঠতে পারি না। রাজনীতিবিদরা বলেন একটা আর করেন আরেকটা। আমরা বলি মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। মন্ত্রী-এমপি’রা করেন একটা আর বলেন আরেকটা। আমরা আম জনতা বলি ‘মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না।’ আর আমলারা কিছু বলেনও না, করেনও না। বললে সাধারণ বিষয়টিকে এমন ‘অসাধারণ জটিল’ করে বলেন যে, আমাদের মাথা লাটিমের ন্যায় ঘুরতে থাকে। আমাদের এই মাথা-মুণ্ডু’ কিছুই না বুঝার কারণে ক্ষমতাবানরা বিরক্ত হয়ে যদি আমাদের ‘মুণ্ডুপাত’ করতে থাকেন তাহলে তাদেরকে তো দোষ দেওয়া যায় না। কারণ আমাদের আম জনতার ‘সাধারণ’ মাথা এবং ক্ষমতাবানদের ‘ক্ষমতাসম্পন্ন’ মাথার মধ্যে বিস্তর ফারাক।
আমাদের আমজনতার কথা যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এগুলো যে সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা, এই কথাগুলো স্বাধীনতার এতো বছর পরেও তাবৎ তাবৎ জ্ঞানী মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদদের বুঝাতে পারি নাই। কি করেই বা পারবো! স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতিবিদরা চর দখলের ন্যায় ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে এরকমই ব্যস্ত ছিলেন যে, তাদের বোঝানোর সুযোগও পাইনি। এই করে করে ৪০ বছর পার হয়ে গেল। আমজনতার সাধারণ কথাকে রাজনীতিবিদরা আমলে না এনে ক্ষমতার কামড়া কামড়িতে এমনই ব্যস্ত ছিলেন যে, আমজনতার আম-ছালা দুটোই যেতে বসেছিল। এই আম কিংবা ছালার যে কোন একটা রক্ষার প্রচেষ্টায় ওয়ান ইলেভেনের সূত্রপাত। সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা শেষে হাল আমলে নতুন ধরনের ক্ষমতাবানরা ক্ষমতায় আসীন।
বর্তমান সময়ের ক্ষমতাবানরাও আমাদের আমজনতার সাধারণ কথাগুলো বুঝতে চাচ্ছেন না। অথবা বুঝলেও নিজেদের মতো করেই বুঝে চলেছেন। সাধারণ আমজনতার কেউই রাজভোগ চায় না। চায় পেট পুরে দুটো অন্ন খেতে। কিন্তু এই অন্ন যোগাড় করতে গিয়ে যে অন্যান্য জিনিস কেনার ক্ষমতা হারাতে বসেছে, তা ক্ষমতাবানরা কতটুকু টের পাচ্ছেন? চালের কেজি ৪০ টাকা অতিক্রম করে হাফ সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছে। এ হারে চলতে থাকলে এক কেজি চালের দাম অচিরেই সেঞ্চুরিতে গিয়ে ঠেকবে। চালের দামের এই সেঞ্চুরি ঠেকানোর উপায় কি-তা আমরা মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝছি না। ক্ষমতাবানরা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আন্তর্জাতিকভাবে চালের দাম বেড়ে গেছে। তাই আলু, কচু-ঘেঁচু খেয়ে দিন গুজরান করতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলো তো পয়সাওয়ালাদের খাবার। ‘মারি গণ্ডার তো লুটি ভাণ্ডার’ করে যারা পয়সা কামাতে পারবেন- তাদের জন্য।
দেশের প্রায় ষোল কোটি মানুষের সাধারণ এই চাহিদার ততোধিক সাধারণ এই বিষয়গুলো ক্ষমতাবানদের না বুঝার কী আছে তা অবশ্য আমাদের এই সাধারণ মাথায়ও ঢুকে না। আমরা মুণ্ডুপাত করি আমাদের দুর্ভাগ্যের। জ্বালানী তেলের দাম কি কারণে এক বৎসরে এতবার বাড়ে, মন্ত্রীরা-উপদেষ্টারা (চারিদিকে তাদেরকে তৈল মর্দনের পেছনেই সিংহভাগ ব্যয় হলে, না বেড়ে উপায় আছে?) অনেক তথ্য-তত্ত্ব কপচিয়ে আমাদের বুঝান। আমরা মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝি না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কি কারণে বেড়ে চলেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-আমলা-উপদেষ্টারা (ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে লুটপাট করলে দাম না বেড়ে উপায় আছে?) আমাদের জোর করে বুঝিয়ে দেন। আমরা মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝিনা। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং (কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি আর কোটি কোটি মোবাইল চার্জের কারণে হয় বলে ২০০৬ সালে জনৈক মন্ত্রী কর্তৃক আবিস্কৃত তথ্য) কি কারণে হয়, তৎকালীন মন্ত্রী এমপি’রা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। তবুও আমরা মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে চাই না। শেষমেষ ক্ষমতাবানরা বিরক্ত হয়ে যদি বলেই বসেন, এরকম সহজ-সাধারণ বিষয় তোমরা না বোঝো তাহলে তোমাদের মুণ্ডুপাত করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ‘আমাদের মাথা, তোমাদের মুণ্ডু’ আর এই বলে আমাদের এই অ-দামী মুণ্ডুতে কষে দু’চার ঘা লাঠির বাড়ি বসিয়ে যদি আমাদেরকে বুঝাতে চান তাহলে তো ক্ষমতাবানদের দোষ দেওয়া যায় না।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment