প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Tuesday, May 3, 2011

পরী ।। জসিম মল্লিক

১.
ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল চক চকে রোদ। গত তিন চার দিন আকাশ এমন গোমরামুখো হয়ে ছিল। রোদের দেখাই পাওয়া যায় নি। টেবিল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল দশটা। আজকে কোনো কাজ নেই। আজ রোববার। গতকাল একটু রাতেই ফিরেছে কাজ থেকে। শখে কাজ করা আর কি। টেলিভিশনের সুইচ অন করল। সিপি ২৪ চ্যানেল দেখল। ও মাই গড! বাইরেতো অনেক ঠান্ডা। উইন্ডচিলন্ড সহ মাইনাস ১৯। আগামী এক সপ্তাহ ওয়েদার এরকমই থাকবে। তবে এ দেশের ওয়েদারের কথা কিছুই বলা যায় না। টুক টাক কিছু কেনা কাটার দরকাল ছিল। ইচ্ছে করছে না কোথাও বের হতে। আগামী সপ্তাহে দেশে যাচ্ছে সাদি। বাবা জরুরী তলব করেছে।
সাদি বাবা মার একমাত্র সন্তান। সাদির বাবা কামাল আহমেদ একজন টাকার কুমির। ঢাকার গুলশানে দেড় বিঘা জায়গার উপর বাড়ি। দেখার মতো বাড়ি। দোতলা বাড়িটিতে সুইমিংপুল, এলিভেটর পর্যন্ত আছে। মতিঝিলে অফিস। নানা ধরনের ব্যবসা। কামাল সাহেব একজন ধুরন্দর লোক। হাইপ্রোফাইল স্মাগলার। অনেকেই সেটা জানে। কিন্তু পলিটিক্যাল কানেকশনের জন্য সে থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সরকাল বদল হলেও খুব অসুবিধা হয় না। কামাল সাহেব একজন প্রো পাকিস্তানীও বটে। সেটা সে বুক ফুলিয়ে প্রচারও করে। কিন্তু তাতে কিছু অসুবিধা নাই। ম্যানেজ হয়ে যায়। রাজনীতিবিদরা হচ্ছে এক ধরনের বেশ্যার মতো।  কামাল সাহেবদের মতো লোকরা তাদের কাছেই আশ্রয় প্রশ্রয় পায়। কারন ওদের চাঁদা দিয়েইতো রাজনীতিবিদদের চলতে হয়। রাজনীতির মতো ভাল ব্যবসা আর নেই।
কামাল সাহেব বছর পাঁচেক আগে কানাডাতে ঢাউস একটা বাড়ি কেনেন। এখন বাংলাদেশের পয়সাওয়ালাদের সবারই একটা করে সেকেন্ড হোম আছে। দেশে যখন সামাজিক বিপ্লব শুরু হবে তখন তাদের পালাবার জন্য একটা জায়গাতো থাকতে হবে। এজন্য বিভিন্ন দেশ ব্যবস্থা করেই রেখেছে। দুবাই, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা তাদের দরজা খোলা। যত খুশী পয়সা নিয়ে আসো। চোর বদমাশ ডকাত যাই হও অসুবিধা নাই। তোমাদের সাদরে বরণ করে নেয়া হবে। 
দেশে কী বিপ্লব আসন্ন! একটু খানি ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষের বাস। সেই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ষাট লাখ মানুষ থাকে বস্তিতে। আর লাখ লাখ মানুষ রাতে ঘুমায় ফুটপাতে। অথচ কামাল সাহেবের গুলশানের বাড়িতে দু’জন মাত্র মানুষ। আরো কায়েকটি বাড়ি আছে ঢাকায়। এছাড়া আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, কানাডাতেতো আছেই। এই বৈষম্য বেশীদন থাকবে না। যাদের ঢাকায় থাকার যায়গা নেই তারা একদিন এইসব অলস বাড়ি  দখল করে নেবে। নেবেই। কারণ সাধারন মানুষের ভাগ্য হরণ করেই এইসব বাড়ি গড়ে উঠেছে। ঢাকার অদূরের সব জমি জমাও কিনে নিয়েছে পয়সাওয়ালারা। চাষ বাস আর থাকার জায়গা নেই মানুষের। আরাম আয়েশ আর ফুর্তি করার জন্য সবারই একটা করে বাংলো বড়ি আছে। কামাল সাহেবও দেরশ বিঘা জায়গার উপর একটা বাড়ি করেছেন সাভারে। পনেরেশো টাকা করে শতাংশ কিনেছিলেন এখন একলাখ টাকা। অন্তত দুশ গরীব মানুষের কাছ থেকে এই জমি কিনেছেন। উইকএণ্ডে সেখানে গিয়ে থাকেন। লাখ লাখ টাকা উড়ে যায় এক রাতে। রাত যত গভীর হয় ততই অতিথিদের নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে। সেখানে আসেন রাজনীতিবিদ, সরকারী আমলা, ব্যবসায়ী আর পুলিশের কর্তারা।
২.
সাদির সাথে যখনই আহমেদের দেখা হয় নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়। আহমেদ সামাজিক বৈষম্যের কথা বলে, ভালবাসার কথা বলে, সমাজ বদলের কথা বলে। প্রথম প্রথম সাদি সব বুঝতো না। এখন বেশ বোঝে। আহমেদকে ওর বেশ লাগে। নাটক, আবৃতি, লেখালেখি করে। সাদির একমাত্র বন্ধু আহমেদ। যদিও আহমেদ সাদির চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের বড়। কিন্তু বন্ধু হতে কিছু আটকায়নি। আহমেদ এমন একটা মানুষ যে, সে যে কারো সাথে চালিয়ে নিতে পারে। আহমেদ ক্রমান্বয়ে সাদির ভিতর একটা বোধের জন্ম দিতে পারছে। সেটা হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসার বোধ। আহমেদ কখনও কামাল আহমেদ সম্পর্কে কিছু বলেনা সাদিকে। কিন্তু এটা ওকে বোঝাতে পারছে যে এরা আসলে হিপোক্রাট।
সাদি আহমেদ বস্তুত খুউব সোজা সরল ছেলে। ওর বয়স এখন পঁচিশ হবে। ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে বিসনেসে পড়াশুনা শেষ করেছে। চাকরীর চেষ্টা করছে। এখন একটা পিজা স্টোরে মেকলাইনে কাজ করে। পার্ট টাইম। আহমেদই কাজটা পাইয়ে দিয়েছে। বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করা। আহমেদ জানে সাদির একাউন্টে হাজার হাজার ডলার জমা আছে। প্রতি মাসে আসে ডলার। প্রথমে ওরা থাকতো বেভিউর পার্কলেনের একটা বাড়িতে। অবিশ্বাস্য দাম ছিল সেই বাড়ির। সতেরো মিলিয়ন ডলার! সেই বাড়ি মাত্র বছর খানেক ছিল। কারণ জামাল সাহেব এখানে থাকেন না। সামারে শুধু আসেন। এতবড় বাড়ি কে দেখবে! তাই সাদির জন্য একটা কন্ডোমোনিয়াম কিনে দিয়েছেন লেস্লি স্ট্রিটে। দামী কন্ডো। প্রায় হাফ মিলিয়ন ডলারের কন্ডো।
সাদি ফোন করলো আহমেদকে। আহমেদ ভাই কী করছেন!
এইতো একটা বই পড়ায় মন দেবার চেষ্ট করছি। খুব ইন্টারেস্টিং বই। মজা পাচ্ছি।
ওকে। তাহলেতো আপনার সাথে কথা বলা যাবে না।
আরে না বলো। এনিথিং রং!
না না সেরকম কিছু না। দেশে যাচ্ছি।
হঠাৎ!
হু, হঠাৎই। বাবা ফোন দিয়ে জরুরী তলব করেছে। আপনিও চলেন আমার সাথে।
আমি! কিজে বলো।
কেনো অসুবিধা কি! আপনিতো যান না অনেকদিন। ঘুরে আসবেন। ঢাকার পরিবর্তন দেখে আসবেন।
ধুর পাগল। আমার যাওয়ার উপায়ই নেই। অনেক অসুবিধা আছে।
কিচ্ছু অসুবিধা নেই আপনার। চলেন। মাত্র দু’সপ্তাহ মাত্র।
তুমি যাও।
এভোয়েড করছেন!
আরে না। এভোয়েড না। আচ্ছা ঠিক আছে আমি জানাবো।
ওকে আহমেদ ভাই, থ্যাংকস।
শোনো, আমাকে কোনো নিয়ে যেতে চাচ্ছো।
ঠিক জানি না কোনো। তবে মনে হয় আপনি আমার সাথে গেলে আমার জন্য ভাল হবে। আমি সব ব্যবস্থা করছি। আপনি ভাবিকেও নিয়ে যেতে পারেন।
ও যেতে পারবে কিনা জানি না।
আচ্ছা আমি ভাবির সাথে কথা বলব।
৩.
আহমেদ প্রায় পাঁচ ছয় বছর পর দেশে এলো। কানাডা প্রবাসী হওয়ার পর এটা দ্বিতীয়। অনেক বদলে গেছে শহর। মানুষে গীজ গীজ করছে। ট্রাফিক জ্যাম আগের মতোই। দামী দামী সব গাড়ি। কিন্তু চলার জায়গা নেই। সাদিকে নিতে এয়ারপের্টে বিএমডব্লিউ গাড়ি এসেছে। ভিতরটা ঠান্ডা। মন ভাল হয়ে যায়। দশ বছর আগে কী এইসব গাড়ি ছিল! ছোট ছোট বাড়ি ভেঙ্গে গড়ে উঠেছে এপার্টমেন্ট। চারিদিকে শুধু উচু উচু ভবন। মানুষ নিঃশাস নেয় কিভাবে! শেষ পর্যন্ত সাদি আর আহমেদই এসেছে। সাদির জেদের কাছে আহমেদের হার হয়েছে। বস্তুত আহমেদের ঢাকায় কোনো থাকার জায়গা নেই। সাদি চেয়েছিল ওদের বাড়িতেই উঠুক। এতবড় বাড়ি। কিন্তু আহমেদ তাতে রাজী হয়নি। আহমেদকে গুলশানের একটা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হলো। এখানেই ও আরামে থাকবে। দামী হোটেল। প্রতিদিন তিনশ উইএস ডলার রুম ভাড়া। স্যুইট  টাইপ। আহমেদের অনেক বন্ধু ঢাকায়। নাটকের বন্ধু, লেখালেখির বন্ধু. ইউনিভার্সিটির বন্ধু। যে ক’দিন থাকবে চুটিয়ে আড্ডা মারতে পারবে।
আহমেদের খারাপ লাগছে না। ফেব্রুয়ারি মাসটাই অন্যরকম। ভাল সময়ই আসা হয়েছে। চারিদিকে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে। বই মেলা শুরু হয়েছে। একদিন যাবে। ওখানে গেলে অনেকের সাথে দেখা হবে। কত বই বের হয় এখন। মানুষ যে এখনও বই কিনে পড়ে এটা ভেবে আশ্চর্য লাগে আহমেদের। অনেক বছর আগে ওরও দুটো বই বের হয়েছিল। প্রবাসী হওয়ার পর আর বের হয়নি। প্রবাসী লেখকদের অনেকেই নাকি নিজের খরচে বই বের করে। এই সুযোগটা নেয় কিছু ভুঁইফোর প্রকাশক। অনেকে পয়সা খরচ করে দেশে আসে বই মেলা উপলক্ষ্যে। বই বা লেখালেখির প্রতি এই আবেগকে আহমেদ শ্রদ্ধা করে। লেখকদের প্রবাসী হওয়া মানে তার সত্বার মৃত্যু।
আহমেদকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে চলে গলো সাদি। আহমেদকে অনেক কষ্টে রাজী করিয়েছে আসার জন্য। এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাবা কিজন্য তলব করেছে সাদি তা অনুমান করতে পারছে। আগেও এসব নিয়ে কথা হয়েছে। কামাল সাহেব ধুরন্দর মানুষ। এমনিতে হাসি খুশী, সারাক্ষণ হাসি ঠাট্টা করেন মানুষের সাথে। কিন্তু তিনি একজন নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। মানুষ খুন করে গাঙ্গে ভাসিয়ে দেওয়াও কোনো ব্যাপার না তার কাছে। তার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি ক্ষমা করেন না কাউকে। সাদি তার বাবাকে জানে। সে এবার প্রস্তুত হয়েই এসেছে। আহমেদ ভাইকে জোর করে নিয়ে এসেছে তার পরামর্শ পাওয়ার জন্য।
প্রথম কয়েকটা দিন বেশ ভাল ভাবেই কাটল। সাকালবেলা হোটেলের গেটে গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আহমেদ যেখানে খুশী যেতে পারে। মাঝে মাঝে সাদি এসে নিয়ে যায়। আহমেদের বন্ধুরা আসে। ঘুরে বেড়ায় প্রেসক্লাব, বেইলী রোড, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। তবে সবকিছু আগের মতো আর নেই টের পায় আহমেদ। মানুষ ব্যস্ত। কিসের যেনো একটা প্রতিযোগিতা। ছুটছে শুধু। আহমেদের বন্ধুরাও সময় দিতে পারে না। আগের সেই নির্মল আড্ডা যেনো আর হয়ে উঠে না। বন্ধুদের অনেকেই বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়ে গেছে।
এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়া এক দুরহ ব্যপার। দিন পার। চারিদিকে গাড়ি আর মানুষের মাথা। আহমেদের হোটেল সাদির বাসা থেকে কাছেই।
আজ রাতে একটু আগেই ফিরেছেন কামাল সাহেব। জরুরী কথাটা আজই সেরে ফেলতে চান। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন কিছুতেই মেজাজ হারাবেন না ছেলের প্রতি। ছেলেরা বড় হয়ে গেলে তাদের  একটা মতামত তৈরী হয়। জোর করে সবকিছু চাপিয়ে দেয়া যায় না। তার ছেলেকে এমন কিছু অবাধ্য সন্তানও মনে হয়না।
আহমেদ হোসেন কে?
বাবার অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে সাদি একটু ভিমরি খেলো। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে শান্তভাবে বলল, আমার বন্ধু।
সে তোমার বন্ধু হয় কিভাবে! সে নাকি একজন লেখক, নাটক ফাটক করে।
কোনো লেখকরা কি আমার বন্ধু হতে পারে না?
সাদির উত্তরের ধরনে বেশ অবাক হলেন কামাল সাহেব। কিন্তু বুঝতে দিলেন না। হাসি হাসি মুখে বললেন, নিশ্চয়ই পারে। কেনো পারবে না। এজন্যই তুমি তাকে টরন্টো থেকে সব খরচ দিয়ে নিয়ে এসেছো! দামী হোটেলে রেখেছো! কেনো? সে তোমার কি উপকারে আসবে!
তুমি নিশ্চয়ই একথা বলার জন্যই আমাকে ডাকোনি! আর আমার বন্ধুর সম্পর্কে তোমার স্পাইং করার দরকারটা কি!
নিজের ছেলেকে অপরিচিত লাগছে। কথ শিখেছে ভালই। নিজেকে সংযত করে বলল, শোনো, তুমি আর ফিরছো না কানাডায়। এখন থেকে আমার ব্যবসা দেখবে।
আমি ব্যবসার কিছু বুঝি না বাবা। আমি চাকরী করতে চাই।
অন্যের দাসত্ব কেনো করবে! তোমাকে বিসনেস পড়িয়েছি ব্যবসা দেখবে সেজন্য। তাছাড়া বিদেশের কষ্টের জীবন। কে দেখে তোমাকে! টরন্টোর কন্ডো বিক্রি করে দেবো।
ওকে বিক্রি করে দাও।
তুমি বিসনেসে জয়েন করছো।
আমাকে একদিন সময় দাও বাবা।
ওকে। টেক ইওর টাইম।
৪.
সব শুনে আহমেদ বলল, এব্যাপারে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না। তোমার ইচ্ছাটা কি বলো।
আমি কানাডায়ই ফিরে যাব। নিজের মতো থাকবো। একটা চাকরি আমি ঠিক পেয়ে যাব। বাবা আপনার সম্পর্কে সব জেনে গেছে। সে হয়ত মনে করে থাকতে পারে আপনি আমাকে বুদ্ধি পরামর্শ দেন।
কিছু বলেছে এ ব্যাপারে!
সরাসরি বলেনি।
আমার কথা বাদ দাও। এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
বাবাকে চেনেন না। সব কিছুর জন্য হয়ত আপনাকেই দায়ী করতে পারে।
সবকিছু মানেটা কী?
আছে।
কি শুনি।
আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি অনেকদিন থেকেই। ওকে বিয়ে করতে চাই। ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুউব ভাল মেয়ে।
ফাইন। বিয়ে করতে চাইলে করে ফেলো।
ভয় পাচ্ছি। বাবা তুলকালাম করবে।
ভয় পেওনা।
আপনার এত জোর কোথা থেকে আসে!
আহমেদ হাসল শুধু কিছু বলল না।
সেদিন বিকেলেই ওরা গেলো বেইলী রোডে। হ্যালভ্যাশিয়াতে। সেখানে পরীর মতো সুন্দর একটা মেয়ে অপেক্ষা করছে। ওদের দেখে  মেয়েটি এত সুন্দর করে হাসলে যে আহমেদের মনে হলো এই মেয়ের জন্য আটলান্টিক পারি দেয়া যায় সাঁতার কেটে। সাদি পরিচয় করিয়ে দিল, ও তানজিয়া। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এবার ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সে অনার্স শেষ করলো। তারপর ওরা অনেক গল্প করলো। তানজিয়াকে খুব ভাল লেগে গেলো আহমেদের। যেতে যেতে সাদি জিজ্ঞেস করলো, কেমন দেখলেন!
খুব চমৎকার মেয়ে। শুধু দেখতে সুন্দর বলেই নয় এই মেয়ের মধ্যে এমন এক সৌন্দর্য্য আছে যা ব্যখ্যা করার ক্ষমতা আমার নেই। একেই তোমার বিয়ে করা উচিত।
কিন্তু বাবা চাইছেন আমি তার পছন্দ করা কোনো ধনীর মেয়েকে বিয়ে করি।
না। 
‘না’ শব্দটা  আহমেদে এতটাই জোরালোভাবে বলল যে সাদি চমকে গেলো। সাদি আর কিছু বলল না।
রাত এগারোটা। দরজায় টুক টুক শব্দ। আহমেদ শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়ছিল। টিভিতে অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানের টেষ্ট ম্যাচ হচ্ছে পার্থে।
দরজা খুলে কামাল সাহেবকে দেখে তেমন অবাক হলো না। যেনো জানাই ছিল তিনি আসবেন। পিছনে আরো কয়েকজন লোক।
আসতে পারি!
সিউর। তবে এপয়েনমেন্ট করে আসলে ভাল হতো।
সরি ডিস্টার্ব করার জন্য।
ইটস ওকে। বসুন।
সোফায় বসলেন কামাল সাহেব। কোনো ভনিতা না করে সরাসরি আলোচনায় ঢুকে গেলেন।
আপনি সাদিকে বোঝান। ও যেনো ওই মেয়েটিকে বিয়ে না করে।
ওতো বাচ্চা ছেলে না। ও মেয়েটিকে ভালবাসে। অনেক দিনের সম্পর্ক।
মেয়েটি একজন সামান্য ব্যাংক ম্যানেজারের মেয়ে।
তাতে কী!
আমাদের সাথে ওদের মানায় না।
ব্যাংক ম্যানেজার হলেও বেশ সৎ মানুষ শুনেছি। মেয়েটিও অসাধারণ। আপনার ছেলেকে যে সে ভালবাসে এটা অনেক বড় ব্যাপার।
সে দ্যাট এগেইন! মুহুর্তে জ্বলে উঠলেন কামাল আহমেদ।
আশাকরি আপনার কথা শেষ হয়েছে।
আহমেদের কথায় এমন কিছু ছিল যে কামাল সাহেব আর কিছু না বলে চলে গেলেন।
৫,
আজকের দিনটা খুব সুন্দর। সত্যি সুন্দর। হিমেল বাতাস বইছে। একটা উৎসব উৎসব ভাব। ওরা তিনজন। সাদি, আহমেদ, তানজিয়া। তানজিয়া আজ একটা শাড়ি পরেছে। কিযে সুন্দর লাগছে। কোনো মানুষ এত সুন্দর হতে পারে আহমেদের জানা ছিল না। সাদিকেও আজ অপূর্ব লাগছে। পাঞ্জাবীতে বেশ মানিয়েছে ওকে। পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়িতে বসা তিনজন। মাঝখানে তানিজয়া। এখানেই তানজিয়ার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল সাদির।
আজ ভ্যালেইনটাইনস ডে। সাদি দুষ্টুমি করে করোজোরে বলল, উড ইউ ম্যারি মি! বলে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের আংটি বের করে তানজিয়ার সুন্দর অনামিকায় পরিয়ে দিল। তানজিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল সাদির দিকে। ওর চোখটা কি একটু ভিজে উঠল আনন্দে! আহমেদ একটা জোকস বলে পরিবেশটাকে হালকা করতে চাইছে। (সমাপ্ত)
জসিম মল্লিক, টরন্টো, ৩০ জানুয়ারি।
jasim.mallik@gmail.com

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ