আমাদের দেশের একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ দিয়ে আজকের লেখা শুরু করতে চাই। সমাজে কিছু লোক আছে যাদের কোন লাজ শরমের বালাই নেই। তারা মাথা উঁচু করে রাস্তায় সকলের সামনে হাঁটে তাতে হয়তো কেউ কেউ হাসে বৈ কি। কিন্তু এতে তাদের কোন সমস্যা নেই। সেজন্য কথায় বলে, যার এক কান কাটা সে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঠে। আর যার দু’কানই কাটা সে তখন রাস্তার মাঝ পথ ধরে হাটে। কারণ কান দু’টো যেহেতু লুকানো যাবে না, সেহেতু আর লাজ-শরম নিজের মধ্যে রেখে লাভ কি। আবার কিছু লোক থাকে এমন - যখন কোন ঝড়-তুফানের মতো বিপদ আসে তখন তারা মরুভূমির উটের মতো মাথাটাকে বালুর মধ্যে গুঁজে রেখে মনে করে যা হবার তা আমার পিঠের উপর দিয়ে হোক। আমি তো এসব কিছুই দেখছি না। জাতির র্দূভাগ্য আমাদের এমন কিছু মানুষের পিছনে হাটতে হয় এবং প্রতিদিন তাদের অমৃত বাণী মুখ বুঝে গলদকরণ করতে হয়।
আবার কিছু অতি বুদ্ধিমান লোক থাকে যারা চিলে কান নিল বললে, সকলেই চিলের পিছনে দৌঁড়তে থাকে কিন্তু নিজের কানের দিকে হাত উঠিয়ে দেখতে চায় না। তখন বুদ্ধিমান লোকগুলো দাঁত উঁচু করে হাসতে থাকে আর ভাবে, দেখ এত বোকা কি থাকে, আমি বললাম আর অমনি সবাই চিলের পিছনে ছুটছে কেউ একটু কষ্ট করে নিজের কানের দিকে তাকাচ্ছে না। আমরা যারা বোকা জনগণ আমাদের অবস্থা হলো, যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুল শুধু হাসে, তার কোন দোষ নেই।
যাক শিবের গীত গেয়ে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। আজ পদ্মা নিয়েই আমার লেখা। দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা আছে, এমন অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ থামিয়ে দিল। শুরু হলো সম্ভাবনাময় অভিযোগটি খুঁজে বের করার। যে দেশে ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়, তারপরও দুর্নীতি হয় না। কেন প্রশ্ন করার সাহসও দেখাতে পারে না যে, এই আলাদ্বীনের চেরাগটি আসলো কোথা থেকে। যে পরিবার সরকারের অর্থাৎ জনগণ থেকে খয়রাতি টাকা নিয়ে নিজেদের ভরণপোষন করে এবং সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হয়। যার ফলে সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত দিতে পারলো না। সেই পরিবারের ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে যখন জাহাজ, বাড়ি-গাড়ী, কল-কারখানা, বিদেশে অর্থের পাহাড় জন্ম নিচ্ছে তখন কেউ প্রশ্ন তোলে না। যে পরিবার এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠতে হয়। দেশের মানুষের কাছে বিচার চেয়ে যিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেই পরিবারের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার এফবিআই প্রতিনিধি এসে আদালতে সাক্ষী দেয় যে, তাদের কোটি কোটি ডলার বিদেশের ব্যাংকে জমা আছে যা অবৈধ। তখন তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। যে পরিবার বড় বড় ট্রাংক ও স্যুটকেস ভর্তি করে বিমানে সৌদি আরবে নিয়ে রেখে আসে তার মধ্যে কত ডলার, স্বর্ণ, আরও কি কি ধন-দৌলত আছে তার হিসাব কাউকে দিতে চায় না। যে পরিবার ও দলের নেতারা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা (দুর্নীতির মাধ্যমে জমানো অর্থও) সাদা করে যার বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। যে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নিজ দেশেরই ক্ষতি করার জন্য একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে অর্থ গ্রহণ করে, কিন্তু কোন সদোত্তর দিতে পারে না। যে দলের নেতারা হরতাল ডেকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই খোলা রাখে কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। তারা বুঝতে পেরেছে তাদের রাজনীতি ক্রমশঃ মন্থর হয়ে আসছে। তারা হয়তো বুঝতে পারছে তাদের অবস্থা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের পথ ধরে হাটছে তাদের তখন কিছু একটা তো করতে হবে।
বিএনপি বিগত তিন /সাড়ে তিন বছরে তাদের রাজনীতি মোটামুটি গুটিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের দলটির প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতার কবর বা মাজার জেয়ারতের দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে যদি একটু পূর্ণতা পাওয়া যায় তাহলে রক্ষা। ফলে রাজনীতিতে বেশি কাজ না থাকায় তারা দলগতভাবে এখন লবীং ফার্ম (তদবীরের) এর কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। এখনও দেশের মানুষ জানে না, কত টাকা ফি এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বিএনপি লবীং ফার্মকে তাদের পক্ষে মুখপাত্র করার কাজে নিয়োজিত করেছে। হয়তো একদিন তাও দেশের মানুষ জানতে পারবে। বিশ্ব ব্যাংক তখনও ঋণচুক্তি বাতিল করেনি কিন্তু বিএনপি থেকে ঘোষণা করা হলো, বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্য কারও অর্থ দিয়ে যদি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে তা তারা মানবে না। অর্থাৎ লবিং ফার্ম হিসেবে বিএনপি আগে থেকেই জানতো যে, তাদের নিয়োগ কর্তা আওয়ামী সরকারকে সেতু নির্মাণ করতে টাকা ঋণ দিবে না বা ঋণচুক্তিটি বাতিল করবে। তারপর যখন ষোল কলা পূর্ণ হলো মানে বিশ্বব্যাংক যখন ঋণচুক্তিটি বাতিল করে দিল (তাও মেয়াদার্ত্তীণ হবার আগে) তখন বিএনপি প্রকাশ্যে মাঠে নেমে গেল, যেন সরকার বিশ্বব্যাংকের সব দাবী মেনে নিয়ে তাদের কথা মতো সব কাজ করে। কোন স্বাধীন দেশের নাগরিক ও সরকার কি ভিন্ন কোন একটি প্রতিষ্ঠানের গোলামী করতে পারে? হ্যা, তারাই পারে যারা এ দেশের জন্মকে বিশ্বাস করে না, যারা এদেশের মাটি ও মানুষের মঙ্গল চায় না। অন্য কেউ নয়।
যাদের মাথার উপর হাজারও দুর্নীতির অভিযোগ। সেই দু’কান কাটা লোকের মতো তারাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিডিয়ার সামনে দাবী তুলে ধরে, যেন বর্তমান নৌকা মার্কা সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে নাকে খত দেয়। তাতে দেশের মানুষের মান-সম্মান না থাকলেও তারা তো জিততে পারবে। ভাবখানা এমন, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। যেখানে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য একটি টাকাও এখন পর্যন্ত দিল না। যেখানে তারা নিজেরা বলছে, কানাডিয়ান কোম্পানীকে কাজ দিলে দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা আছে। সেখানে বিএনপি এমনভাবে প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যাতে মনে হবে, বিশ্বব্যাংক হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে এবং পদ্মা সেতু অর্ধেক হয়ে গেছে কিন্তু বর্তমান সরকারের দুর্নীতির জন্য সব শেষ হয়ে গেল। এই একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল যুগে এখনও বিএনপি কি দেশের মানুষকে বোকা ও মূর্খ মনে করে! বর্তমান যুগে কি সে রকম মানুষ আছে, যাদেরকে চিলে কান নিয়ে গেছে বললে, নিজের কানের দিকে হাত দিয়ে; না দেখেই চিলের পিছনে ছুটবে? হয়তো অনেকে বলবেন, বিএনপির পেছনে কি কম লোক ছুটছে! এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিএনপির পেছনে অনেক লোক ছুটছে। এ দেশে এখনও কোটি কোটি মানুষ বিএনপিকে ভালবাসে। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের মাথার সাথে কান আছে তখন তারা কি করবে? যখন তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের প্রিয় রাজনৈতিক দলটি এখন বিশ্বব্যাংকের পক্ষে লবিং এর চাকুরি নিয়েছে তখন তাদের মনের অবস্থা কি হবে?
‘দুর্নীতি হয়েছে’ এবং ‘দুর্নীতির সম্ভাবনা আছে’ এ দুটির মধ্যে পার্থক্য কতটুকু তা বিএনপির নেতারা না বুঝলেও, সারা দেশের মানুষ কিন্তু এর পার্থক্যটুকু বুঝে। দেশে ও বিদেশে বিশ্বব্যাংক নিয়ে এত কথা হচ্ছে অথচ তারা কিন্তু একেবারে চুপ। এ সমস্ত বিষয়ে আর্ন্তজাতিকভাবে তাদের কিন্তু কোন বক্তব্য নেই। কারণ তারা যা বলবে, তারা যে উত্তর দিবে, তাদের যে বক্তব্য তার থেকেও বিএনপি বেশি ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা মহা খুশি কারণ বিএনপির মতো একটি অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দলকে আজ তাদের মুখপাত্র হিসেবে পেয়ে গেছে। দেশের এরকম একটি লজ্জাজনক মুহূর্তে বিএনপির মরুভূমির উটের মতো আচরণ জনগণ কিন্তু ভাল চোখে দেখছেন না। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা বিএনপি এ মুহূর্তে ক্ষমতায় থাকলেও হতে পারতো। হয়তো বিএনপি ভুলে গেছে, তাদেরই দুর্নীতির কারণে তারা ক্ষমতায় থাকতে যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক কয়েক বছর সম্পূর্ণ অর্থ ঋণ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে বিএনপির কতটুকু ক্ষতি হয়েছিল জানি না, তবে দেশের যোগাযোগ খাতে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আজও আওয়ামীলীগের কতটুকু ক্ষতি হবে এখনই বলা যাবে না কিন্তু দেশের ক্ষতি হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত। এখন বিএনপি নেতাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা নিজের নাক কেটে দেশের অগ্রযাত্রার পথকে থামিয়ে দিয়ে চায় কি না!
বিএনপি দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি রাজনীতি বিমুখ হলে আওয়ামীলীগ একনায়কতান্ত্রিক দল হয়ে যাবে- যা দেশের মানুষ কামনা করে না। তাই বিএনপিকে রাজনীতিতেই থাকতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান রক্ষার জন্য বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে সেই প্রত্যাশাই সকলে রাখে। দলের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। অনেক অভিযোগ ও অভিমান থাকতে পারে। কিন্তু অনেকে কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করে, বিএনপি দল হিসেবে শক্তিশালী হোক। দেশ নিয়ে, দেশের ইজ্জত নিয়ে তারা চিন্তা করুক। তাহলেই দেশের মানুষকে কারও কাছে মাথা নত করতে হবে না। দেশের জনগণ বিএনপির বাগিচায় সুন্দর ফুলের বাগান দেখতে চায়। দেশকে মাথানত করানোর কোন কূটচাল দেখতে চাই না।
সরকারের উচিত হবে পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির সাথে আলোচনা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উপরে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার যে সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, তার সাথে বিরোধী দলকেও সংযুক্ত করতে পারলে তিনি শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারবেন। দেশের সম্মান রক্ষা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য নিজের দেশের একটি বৃহত্তর বিরোধী দলের সাথে যদি কোন বিষয়ে নিজেকে একটু ছোটও করতে হয় তাতে ক্ষতি কী?
পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হোক। বিশ্ব দেখুক, দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য বাংলার জনগণের মনোবল ও সাহস এবং সত্যিকারের ত্যাগ স্বীকার কতখানি।
আবার কিছু অতি বুদ্ধিমান লোক থাকে যারা চিলে কান নিল বললে, সকলেই চিলের পিছনে দৌঁড়তে থাকে কিন্তু নিজের কানের দিকে হাত উঠিয়ে দেখতে চায় না। তখন বুদ্ধিমান লোকগুলো দাঁত উঁচু করে হাসতে থাকে আর ভাবে, দেখ এত বোকা কি থাকে, আমি বললাম আর অমনি সবাই চিলের পিছনে ছুটছে কেউ একটু কষ্ট করে নিজের কানের দিকে তাকাচ্ছে না। আমরা যারা বোকা জনগণ আমাদের অবস্থা হলো, যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুল শুধু হাসে, তার কোন দোষ নেই।
যাক শিবের গীত গেয়ে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। আজ পদ্মা নিয়েই আমার লেখা। দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা আছে, এমন অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ থামিয়ে দিল। শুরু হলো সম্ভাবনাময় অভিযোগটি খুঁজে বের করার। যে দেশে ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়, তারপরও দুর্নীতি হয় না। কেন প্রশ্ন করার সাহসও দেখাতে পারে না যে, এই আলাদ্বীনের চেরাগটি আসলো কোথা থেকে। যে পরিবার সরকারের অর্থাৎ জনগণ থেকে খয়রাতি টাকা নিয়ে নিজেদের ভরণপোষন করে এবং সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হয়। যার ফলে সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত দিতে পারলো না। সেই পরিবারের ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে যখন জাহাজ, বাড়ি-গাড়ী, কল-কারখানা, বিদেশে অর্থের পাহাড় জন্ম নিচ্ছে তখন কেউ প্রশ্ন তোলে না। যে পরিবার এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠতে হয়। দেশের মানুষের কাছে বিচার চেয়ে যিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেই পরিবারের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার এফবিআই প্রতিনিধি এসে আদালতে সাক্ষী দেয় যে, তাদের কোটি কোটি ডলার বিদেশের ব্যাংকে জমা আছে যা অবৈধ। তখন তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। যে পরিবার বড় বড় ট্রাংক ও স্যুটকেস ভর্তি করে বিমানে সৌদি আরবে নিয়ে রেখে আসে তার মধ্যে কত ডলার, স্বর্ণ, আরও কি কি ধন-দৌলত আছে তার হিসাব কাউকে দিতে চায় না। যে পরিবার ও দলের নেতারা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা (দুর্নীতির মাধ্যমে জমানো অর্থও) সাদা করে যার বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারে না। যে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নিজ দেশেরই ক্ষতি করার জন্য একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে অর্থ গ্রহণ করে, কিন্তু কোন সদোত্তর দিতে পারে না। যে দলের নেতারা হরতাল ডেকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকই খোলা রাখে কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। তারা বুঝতে পেরেছে তাদের রাজনীতি ক্রমশঃ মন্থর হয়ে আসছে। তারা হয়তো বুঝতে পারছে তাদের অবস্থা বৃহত্তর রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের পথ ধরে হাটছে তাদের তখন কিছু একটা তো করতে হবে।
বিএনপি বিগত তিন /সাড়ে তিন বছরে তাদের রাজনীতি মোটামুটি গুটিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের দলটির প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতার কবর বা মাজার জেয়ারতের দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে যদি একটু পূর্ণতা পাওয়া যায় তাহলে রক্ষা। ফলে রাজনীতিতে বেশি কাজ না থাকায় তারা দলগতভাবে এখন লবীং ফার্ম (তদবীরের) এর কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। এখনও দেশের মানুষ জানে না, কত টাকা ফি এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বিএনপি লবীং ফার্মকে তাদের পক্ষে মুখপাত্র করার কাজে নিয়োজিত করেছে। হয়তো একদিন তাও দেশের মানুষ জানতে পারবে। বিশ্ব ব্যাংক তখনও ঋণচুক্তি বাতিল করেনি কিন্তু বিএনপি থেকে ঘোষণা করা হলো, বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্য কারও অর্থ দিয়ে যদি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে তা তারা মানবে না। অর্থাৎ লবিং ফার্ম হিসেবে বিএনপি আগে থেকেই জানতো যে, তাদের নিয়োগ কর্তা আওয়ামী সরকারকে সেতু নির্মাণ করতে টাকা ঋণ দিবে না বা ঋণচুক্তিটি বাতিল করবে। তারপর যখন ষোল কলা পূর্ণ হলো মানে বিশ্বব্যাংক যখন ঋণচুক্তিটি বাতিল করে দিল (তাও মেয়াদার্ত্তীণ হবার আগে) তখন বিএনপি প্রকাশ্যে মাঠে নেমে গেল, যেন সরকার বিশ্বব্যাংকের সব দাবী মেনে নিয়ে তাদের কথা মতো সব কাজ করে। কোন স্বাধীন দেশের নাগরিক ও সরকার কি ভিন্ন কোন একটি প্রতিষ্ঠানের গোলামী করতে পারে? হ্যা, তারাই পারে যারা এ দেশের জন্মকে বিশ্বাস করে না, যারা এদেশের মাটি ও মানুষের মঙ্গল চায় না। অন্য কেউ নয়।
যাদের মাথার উপর হাজারও দুর্নীতির অভিযোগ। সেই দু’কান কাটা লোকের মতো তারাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন যুদ্ধ ঘোষণা করে দিল। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিডিয়ার সামনে দাবী তুলে ধরে, যেন বর্তমান নৌকা মার্কা সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছে নাকে খত দেয়। তাতে দেশের মানুষের মান-সম্মান না থাকলেও তারা তো জিততে পারবে। ভাবখানা এমন, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। যেখানে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য একটি টাকাও এখন পর্যন্ত দিল না। যেখানে তারা নিজেরা বলছে, কানাডিয়ান কোম্পানীকে কাজ দিলে দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা আছে। সেখানে বিএনপি এমনভাবে প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে যাতে মনে হবে, বিশ্বব্যাংক হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে এবং পদ্মা সেতু অর্ধেক হয়ে গেছে কিন্তু বর্তমান সরকারের দুর্নীতির জন্য সব শেষ হয়ে গেল। এই একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল যুগে এখনও বিএনপি কি দেশের মানুষকে বোকা ও মূর্খ মনে করে! বর্তমান যুগে কি সে রকম মানুষ আছে, যাদেরকে চিলে কান নিয়ে গেছে বললে, নিজের কানের দিকে হাত দিয়ে; না দেখেই চিলের পিছনে ছুটবে? হয়তো অনেকে বলবেন, বিএনপির পেছনে কি কম লোক ছুটছে! এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিএনপির পেছনে অনেক লোক ছুটছে। এ দেশে এখনও কোটি কোটি মানুষ বিএনপিকে ভালবাসে। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের মাথার সাথে কান আছে তখন তারা কি করবে? যখন তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের প্রিয় রাজনৈতিক দলটি এখন বিশ্বব্যাংকের পক্ষে লবিং এর চাকুরি নিয়েছে তখন তাদের মনের অবস্থা কি হবে?
‘দুর্নীতি হয়েছে’ এবং ‘দুর্নীতির সম্ভাবনা আছে’ এ দুটির মধ্যে পার্থক্য কতটুকু তা বিএনপির নেতারা না বুঝলেও, সারা দেশের মানুষ কিন্তু এর পার্থক্যটুকু বুঝে। দেশে ও বিদেশে বিশ্বব্যাংক নিয়ে এত কথা হচ্ছে অথচ তারা কিন্তু একেবারে চুপ। এ সমস্ত বিষয়ে আর্ন্তজাতিকভাবে তাদের কিন্তু কোন বক্তব্য নেই। কারণ তারা যা বলবে, তারা যে উত্তর দিবে, তাদের যে বক্তব্য তার থেকেও বিএনপি বেশি ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা মহা খুশি কারণ বিএনপির মতো একটি অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দলকে আজ তাদের মুখপাত্র হিসেবে পেয়ে গেছে। দেশের এরকম একটি লজ্জাজনক মুহূর্তে বিএনপির মরুভূমির উটের মতো আচরণ জনগণ কিন্তু ভাল চোখে দেখছেন না। আজ পদ্মা সেতু নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা বিএনপি এ মুহূর্তে ক্ষমতায় থাকলেও হতে পারতো। হয়তো বিএনপি ভুলে গেছে, তাদেরই দুর্নীতির কারণে তারা ক্ষমতায় থাকতে যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক কয়েক বছর সম্পূর্ণ অর্থ ঋণ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে বিএনপির কতটুকু ক্ষতি হয়েছিল জানি না, তবে দেশের যোগাযোগ খাতে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আজও আওয়ামীলীগের কতটুকু ক্ষতি হবে এখনই বলা যাবে না কিন্তু দেশের ক্ষতি হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত। এখন বিএনপি নেতাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা নিজের নাক কেটে দেশের অগ্রযাত্রার পথকে থামিয়ে দিয়ে চায় কি না!
বিএনপি দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি রাজনীতি বিমুখ হলে আওয়ামীলীগ একনায়কতান্ত্রিক দল হয়ে যাবে- যা দেশের মানুষ কামনা করে না। তাই বিএনপিকে রাজনীতিতেই থাকতে হবে। দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান রক্ষার জন্য বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে সেই প্রত্যাশাই সকলে রাখে। দলের অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। অনেক অভিযোগ ও অভিমান থাকতে পারে। কিন্তু অনেকে কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করে, বিএনপি দল হিসেবে শক্তিশালী হোক। দেশ নিয়ে, দেশের ইজ্জত নিয়ে তারা চিন্তা করুক। তাহলেই দেশের মানুষকে কারও কাছে মাথা নত করতে হবে না। দেশের জনগণ বিএনপির বাগিচায় সুন্দর ফুলের বাগান দেখতে চায়। দেশকে মাথানত করানোর কোন কূটচাল দেখতে চাই না।
সরকারের উচিত হবে পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির সাথে আলোচনা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উপরে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবার যে সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, তার সাথে বিরোধী দলকেও সংযুক্ত করতে পারলে তিনি শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারবেন। দেশের সম্মান রক্ষা ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য নিজের দেশের একটি বৃহত্তর বিরোধী দলের সাথে যদি কোন বিষয়ে নিজেকে একটু ছোটও করতে হয় তাতে ক্ষতি কী?
পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হোক। বিশ্ব দেখুক, দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য বাংলার জনগণের মনোবল ও সাহস এবং সত্যিকারের ত্যাগ স্বীকার কতখানি।
লেখক ও সাংবাদিক
সম্পাদক: পাক্ষিক সময়ের বিবর্তন
সম্পাদক: পাক্ষিক সময়ের বিবর্তন
No comments:
Post a Comment