কে আপনি, কে? এই যে, এই যে আপনি, কালো আলখাল্লা পরে আমার বুক বরাবর এসে দাঁড়িয়েছেন। কে আপনি? আপনার মুখটা আমি দেখতে পাচ্ছি না। আগের দিনকার শাহজাদিদের মতো কালো নেকাবে মুখ ঢেকে রেখেছেন, কিন্তু আকৃতিতে আপনি বিশাল। কোনো মেয়ে এত দীর্ঘাঙ্গী হয় না। আপনি কে? কে আপনি? আরে, চট করে আবার কোথায় চলে গেলেন? এই যে, এই যে…
আমরা তিনটি ভাইবোন কেবিনের বাইরে বসে আছি। হাসপাতালটি চৌদ্দতলা। বাদল ছিল আইসিইউতে। আজ সতেরো দিন সে ডিপ কোমায়। তিন দিন আগে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। অবস্থার একচুলও পরিবর্তন হয়নি। চোখ বন্ধ, লাশের মতো চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ধবধবে সাদা বেডে। মুখে অক্সিজেন-মাস্ক লাগানো। আমাদের হামিদ মামা প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই আছেন বাদলের সঙ্গে। আমরা দশটি ভাইবোন। তিনজন আমেরিকায়। ঢাকায় যে সাতজন, তার মধ্যে বাদলের এই অবস্থা। অন্য ছয়জন যখন যে পারছে হাসপাতালে এসে প্রথমে বাদলের রুমে ঢুকছে, তাকে একপলক দেখে বাইরের বেঞ্চে এসে হতাশ মুখে বসে থাকছে। বাদলের কেবিন ছেড়ে হামিদ মামাও মাঝেমধ্যে এসে বসছেন আমাদের সঙ্গে। বাদলকে নিয়ে আমরা ফেলে আসা দিনের কথা বলি। টুকটাক স্মৃতিচারণা করি।
আজ কোনো কথা হচ্ছিল না। বেঞ্চে আমার দুপাশে বসে আছে দুবোন। একপাশে পলি আরেক পাশে ডলি। পলি আর বাদল যমজ। যমজদের পরস্পরের প্রতি টান থাকে অন্য রকম। সেই টানে আমরা কেউ আসি না-আসি, পলি প্রতিদিন আসে হাসপাতালে। ভাইয়ের মুখ একপলক দেখে বাইরে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। কখনো বিড়বিড় করে দোয়া-দরুদ পড়ে, কখনো নিঃশব্দে কাঁদে।
আজও কাঁদছিল সে।
এ সময় বাদলের কেবিন থেকে পাগলের মতো ছুটে এলেন হামিদ মামা। তোরা আয়। তাড়াতাড়ি আয়। বাদল হঠাৎ নড়েচড়ে উঠেছে। মুখ থেকে অক্সিজেন-মাস্ক খুলে ফেলেছে। আর পরিষ্কার ভাষায় কথা বলছে। তাড়াতাড়ি আয়।
সতেরো দিন এই প্রথম আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলো। ছুটে গিয়ে ঢুকলাম বাদলের রুমে। বাদলের মুখ দেখে তিন ভাইবোন হতভম্ব। যেন এইমাত্র গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সে। মুখে বিশ-বাইশ দিনের না কামানো দাড়ি-গোঁফ। তার মুখটা বেশ ফ্রেশ লাগছে। কিন্তু চোখে অদ্ভুত এক চঞ্চল দৃষ্টি। যেন এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে। শরীর নড়াতে পারছে না, মাথা ঘোরাতে পারছে না এদিক-ওদিক। শুধু চোখের মণি ঘুরিয়ে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছে। আর কথা বলছে পরিষ্কার গলায়। কোথায় গেল? সে কোথায় গেল?
আমি বাদলের মুখের কাছে ঝুঁকে গেলাম। কে কোথায় গেল? কাকে খুঁজছিস তুই? বাদল, কাকে খুঁজছিস?
চিনি না, আমি তাকে চিনি না। কালো আলখাল্লা পরা মুখে মেয়েদের মতো কালো নেকাব। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। বড় বড় চোখ। ধক ধক করছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে আমার বুক বরাবর এসে দাঁড়িয়েছে।
হামিদ মামা ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে এনেছেন। অল্পবয়সী একজন ডাক্তার। সে অনেক দিন ধরেই বাদলকে দেখছে। বলল, কোনো কোনো রোগীর এ রকম হয়। আপনারা নার্ভাস হবেন না। এই অবস্থাটা চলতে থাকবে।
কিন্তু বাদলের কথাবার্তা একেবারেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে আমার। তার চোখ ও কণ্ঠে এক ধরনের ঘোর লেগে আছে। আমাদের প্রত্যেকের দিকেই তাকাচ্ছে সে, আবার কারও দিকেই যেন তাকাচ্ছে না। সবাইকে দেখছে, আবার কাউকেই যেন দেখছে না। আর কথা সে বলেই যাচ্ছে। কোনো এক কালো আলখাল্লা পরা, মুখ কালো নেকাবে ঢাকা মানুষের কথা বলে যাচ্ছে।
…আমি আগেও তাকে দেখেছি। ওই, ওই যে একবার আমার, খুব ছোটবেলায়, খুব ছোটবেলায় বিক্রমপুরে, মেদিনীমণ্ডল গ্রাম, নানির কাছে থাকি। শীতকালের রাত, গভীর রাত, আমার খুব কাশি হচ্ছিল, দম নিতে পারছিলাম না তখন, তখন হারিকেনের আলোয় আমি তাকে ছায়ার মতো একবার দেখেছিলাম। ঠিক এই রকমই। কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে ঢাকা মুখ। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। অন্ধকারে বাঘের চোখ যেমন জ্বলে, তেমন জ্বলছিল। সেই রাতে ছোট নানা আর মামারা গিয়ে জলধর ডাক্তারকে ডেকে আনল কাজির পাগলা থেকে। সকালবেলাই ভালো হয়ে গেলাম আমি…
বাদলের কথা শুনে আমরা তিনটি ভাইবোন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। অন্য ভাইবোনদের ফোনে জানানো হয়েছে বাদলের অবস্থা। সে কথা বলছে শুনে যে যার মতো করে রওনা দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেকে এসে পড়বে।
কিন্তু ডাক্তার বললেন, এ ধরনের রোগী এলোমেলো কথা বলে! কই, বাদল তো তা বলছে না। সে তো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথাই বলছে। এই ঘটনা তো আমরা সবাই জানি। একটুও তো এলোমেলো কথা না।
…আরেকবার, আরেকবার তাকে আমি দিনের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম। ওই যে, ওই যে গাড়িটা যেবার আমাকে ধাক্কা দিল, আমাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল, আমি, আমি তখন একটা সময়ে দেখি গাড়িটা না, কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে মুখ ঢাকা, বিশালদেহী কে একজন আমাকে চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে আমি যখন মরে যাচ্ছি, তখন, তখন হঠাৎ করে দেখি, আমি মাটিতে পড়ে আছি। কালো আলখাল্লা পরা মানুষটা কোথাও নেই। আমার চারপাশে অনেক লোক…
এবারও আমরা তিন ভাইবোন এ ওর দিকে তাকালাম। সত্যি তো বাদল একবার অ্যাকসিডেন্ট করেছিল। একজন আনাড়ি ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে, বাদল হেঁটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, হঠাৎ করে গাড়িটা এসে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল বাদলকে। পা দুটো প্রায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ওর। চার-পাঁচ মাস লেগেছিল ভালো হতে।
…এবার আমি যে রাতে অসুস্থ হলাম, সেই রাতে তাকে দেখলাম আমার পায়ের দিকটায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেন পা ধরে আমাকে কোথাও টেনে নিয়ে যাবে। তারপর দেখলাম আজ, এই তো কিছুক্ষণ আগে আমার বুক বরাবর এসে দাঁড়িয়েছিল। কে, ওটা কে? এখন আর দেখছি না কেন? চট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল…
ততক্ষণে আমার বড় ভাই, ভাবি, অন্যান্য বোন, বোনজামাই, সবাই এসে পড়েছে। বাদলের কেবিনে বেশ বড় রকমের ভিড়। হামিদ মামা আমাকে ডেকে বাইরে নিয়ে এলেন। তাঁর মুখ বিবর্ণ, ফ্যাকাসে, চোখে ভয়, আতঙ্ক। বললেন, এই লক্ষণটা ভালো না। বাদল মনে হয়, বাদল মনে হয়…
কথা শেষ করতে পারলেন না হামিদ মামা। আমার হাত ধরে বাদলের কেবিনে ঢুকলেন। বাদলের চোখে সেই আগের দৃষ্টি। এখনো যেন কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে ঢাকা মুখ, সেই মানুষকে সে খুঁজছে। আমরা দুজন কেবিনে ঢোকার পরপরই যেন তাকে সে পেয়েও গেল। চোখ দুটো স্থির হলো বাদলের। এই প্রথম তাকে খুব ভয় পেতে দেখলাম। চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টি, কণ্ঠে প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার সুর। …আরে, আরে এই তো সে। এই তো! এই যে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার ভয় করছে, আমার খুব ভয় করছে। এই, এই ওকে তোমরা সরে যেতে বলো, সরে যেতে বলো। আমার দিকে যেন এগিয়ে আসছে…
ওটাই ছিল বাদলের মৃত্যুমুহূর্ত।
সূত্রঃ প্রথম আলো
আমরা তিনটি ভাইবোন কেবিনের বাইরে বসে আছি। হাসপাতালটি চৌদ্দতলা। বাদল ছিল আইসিইউতে। আজ সতেরো দিন সে ডিপ কোমায়। তিন দিন আগে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। অবস্থার একচুলও পরিবর্তন হয়নি। চোখ বন্ধ, লাশের মতো চিৎ হয়ে শুয়ে আছে ধবধবে সাদা বেডে। মুখে অক্সিজেন-মাস্ক লাগানো। আমাদের হামিদ মামা প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই আছেন বাদলের সঙ্গে। আমরা দশটি ভাইবোন। তিনজন আমেরিকায়। ঢাকায় যে সাতজন, তার মধ্যে বাদলের এই অবস্থা। অন্য ছয়জন যখন যে পারছে হাসপাতালে এসে প্রথমে বাদলের রুমে ঢুকছে, তাকে একপলক দেখে বাইরের বেঞ্চে এসে হতাশ মুখে বসে থাকছে। বাদলের কেবিন ছেড়ে হামিদ মামাও মাঝেমধ্যে এসে বসছেন আমাদের সঙ্গে। বাদলকে নিয়ে আমরা ফেলে আসা দিনের কথা বলি। টুকটাক স্মৃতিচারণা করি।
আজ কোনো কথা হচ্ছিল না। বেঞ্চে আমার দুপাশে বসে আছে দুবোন। একপাশে পলি আরেক পাশে ডলি। পলি আর বাদল যমজ। যমজদের পরস্পরের প্রতি টান থাকে অন্য রকম। সেই টানে আমরা কেউ আসি না-আসি, পলি প্রতিদিন আসে হাসপাতালে। ভাইয়ের মুখ একপলক দেখে বাইরে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। কখনো বিড়বিড় করে দোয়া-দরুদ পড়ে, কখনো নিঃশব্দে কাঁদে।
আজও কাঁদছিল সে।
এ সময় বাদলের কেবিন থেকে পাগলের মতো ছুটে এলেন হামিদ মামা। তোরা আয়। তাড়াতাড়ি আয়। বাদল হঠাৎ নড়েচড়ে উঠেছে। মুখ থেকে অক্সিজেন-মাস্ক খুলে ফেলেছে। আর পরিষ্কার ভাষায় কথা বলছে। তাড়াতাড়ি আয়।
সতেরো দিন এই প্রথম আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হলো। ছুটে গিয়ে ঢুকলাম বাদলের রুমে। বাদলের মুখ দেখে তিন ভাইবোন হতভম্ব। যেন এইমাত্র গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে সে। মুখে বিশ-বাইশ দিনের না কামানো দাড়ি-গোঁফ। তার মুখটা বেশ ফ্রেশ লাগছে। কিন্তু চোখে অদ্ভুত এক চঞ্চল দৃষ্টি। যেন এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে। শরীর নড়াতে পারছে না, মাথা ঘোরাতে পারছে না এদিক-ওদিক। শুধু চোখের মণি ঘুরিয়ে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করছে। আর কথা বলছে পরিষ্কার গলায়। কোথায় গেল? সে কোথায় গেল?
আমি বাদলের মুখের কাছে ঝুঁকে গেলাম। কে কোথায় গেল? কাকে খুঁজছিস তুই? বাদল, কাকে খুঁজছিস?
চিনি না, আমি তাকে চিনি না। কালো আলখাল্লা পরা মুখে মেয়েদের মতো কালো নেকাব। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। বড় বড় চোখ। ধক ধক করছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে আমার বুক বরাবর এসে দাঁড়িয়েছে।
হামিদ মামা ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে এনেছেন। অল্পবয়সী একজন ডাক্তার। সে অনেক দিন ধরেই বাদলকে দেখছে। বলল, কোনো কোনো রোগীর এ রকম হয়। আপনারা নার্ভাস হবেন না। এই অবস্থাটা চলতে থাকবে।
কিন্তু বাদলের কথাবার্তা একেবারেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে আমার। তার চোখ ও কণ্ঠে এক ধরনের ঘোর লেগে আছে। আমাদের প্রত্যেকের দিকেই তাকাচ্ছে সে, আবার কারও দিকেই যেন তাকাচ্ছে না। সবাইকে দেখছে, আবার কাউকেই যেন দেখছে না। আর কথা সে বলেই যাচ্ছে। কোনো এক কালো আলখাল্লা পরা, মুখ কালো নেকাবে ঢাকা মানুষের কথা বলে যাচ্ছে।
…আমি আগেও তাকে দেখেছি। ওই, ওই যে একবার আমার, খুব ছোটবেলায়, খুব ছোটবেলায় বিক্রমপুরে, মেদিনীমণ্ডল গ্রাম, নানির কাছে থাকি। শীতকালের রাত, গভীর রাত, আমার খুব কাশি হচ্ছিল, দম নিতে পারছিলাম না তখন, তখন হারিকেনের আলোয় আমি তাকে ছায়ার মতো একবার দেখেছিলাম। ঠিক এই রকমই। কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে ঢাকা মুখ। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়। অন্ধকারে বাঘের চোখ যেমন জ্বলে, তেমন জ্বলছিল। সেই রাতে ছোট নানা আর মামারা গিয়ে জলধর ডাক্তারকে ডেকে আনল কাজির পাগলা থেকে। সকালবেলাই ভালো হয়ে গেলাম আমি…
বাদলের কথা শুনে আমরা তিনটি ভাইবোন মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। অন্য ভাইবোনদের ফোনে জানানো হয়েছে বাদলের অবস্থা। সে কথা বলছে শুনে যে যার মতো করে রওনা দিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেকে এসে পড়বে।
কিন্তু ডাক্তার বললেন, এ ধরনের রোগী এলোমেলো কথা বলে! কই, বাদল তো তা বলছে না। সে তো তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথাই বলছে। এই ঘটনা তো আমরা সবাই জানি। একটুও তো এলোমেলো কথা না।
…আরেকবার, আরেকবার তাকে আমি দিনের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম। ওই যে, ওই যে গাড়িটা যেবার আমাকে ধাক্কা দিল, আমাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল, আমি, আমি তখন একটা সময়ে দেখি গাড়িটা না, কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে মুখ ঢাকা, বিশালদেহী কে একজন আমাকে চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে আমি যখন মরে যাচ্ছি, তখন, তখন হঠাৎ করে দেখি, আমি মাটিতে পড়ে আছি। কালো আলখাল্লা পরা মানুষটা কোথাও নেই। আমার চারপাশে অনেক লোক…
এবারও আমরা তিন ভাইবোন এ ওর দিকে তাকালাম। সত্যি তো বাদল একবার অ্যাকসিডেন্ট করেছিল। একজন আনাড়ি ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে, বাদল হেঁটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে, হঠাৎ করে গাড়িটা এসে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল বাদলকে। পা দুটো প্রায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ওর। চার-পাঁচ মাস লেগেছিল ভালো হতে।
…এবার আমি যে রাতে অসুস্থ হলাম, সেই রাতে তাকে দেখলাম আমার পায়ের দিকটায় এসে দাঁড়িয়েছে। যেন পা ধরে আমাকে কোথাও টেনে নিয়ে যাবে। তারপর দেখলাম আজ, এই তো কিছুক্ষণ আগে আমার বুক বরাবর এসে দাঁড়িয়েছিল। কে, ওটা কে? এখন আর দেখছি না কেন? চট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল…
ততক্ষণে আমার বড় ভাই, ভাবি, অন্যান্য বোন, বোনজামাই, সবাই এসে পড়েছে। বাদলের কেবিনে বেশ বড় রকমের ভিড়। হামিদ মামা আমাকে ডেকে বাইরে নিয়ে এলেন। তাঁর মুখ বিবর্ণ, ফ্যাকাসে, চোখে ভয়, আতঙ্ক। বললেন, এই লক্ষণটা ভালো না। বাদল মনে হয়, বাদল মনে হয়…
কথা শেষ করতে পারলেন না হামিদ মামা। আমার হাত ধরে বাদলের কেবিনে ঢুকলেন। বাদলের চোখে সেই আগের দৃষ্টি। এখনো যেন কালো আলখাল্লা পরা, নেকাবে ঢাকা মুখ, সেই মানুষকে সে খুঁজছে। আমরা দুজন কেবিনে ঢোকার পরপরই যেন তাকে সে পেয়েও গেল। চোখ দুটো স্থির হলো বাদলের। এই প্রথম তাকে খুব ভয় পেতে দেখলাম। চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টি, কণ্ঠে প্রচণ্ড ভয় পাওয়ার সুর। …আরে, আরে এই তো সে। এই তো! এই যে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার ভয় করছে, আমার খুব ভয় করছে। এই, এই ওকে তোমরা সরে যেতে বলো, সরে যেতে বলো। আমার দিকে যেন এগিয়ে আসছে…
ওটাই ছিল বাদলের মৃত্যুমুহূর্ত।
সূত্রঃ প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment