বিখ্যাত সাহাবী, শীর্ষ মুফাসসিরে কোরআন হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ওলীদ ইবিন মুগীরা, আস ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনে আবদুল মোত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খাল্ফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একবার রাসুলের কাছে এসে বলল, আসুন আমরা পরস্পরের মধ্যে এই শান্তিচুক্তি করি যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদত করব (কুরতুবী)। তিবরানির সূত্রে ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, কাফিররা প্রথমে পারস্পরিক শান্তিচুক্তির স্বার্থে রাসুলুল্লাহর সামনে এই প্রস্তাব রাখল যে, আমরা আপনাকে বিপুল পরিমাণে ধন-ঐশ্বর্য দেব, ফলে আপনি মক্কার সর্বাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যাবেন। আপনি যে মহিলাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারবেন। বিনিময়ে আপনি শুধু আমাদের উপাস্যদের মন্দ বলবেন না। যদি আপনি এটাও মেনে না নেন, তবে এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবেন (তাফসিরে মাযহারি)। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর দূত জিবরাঈল সুরা কাফিরুন নিয়ে আগমন করলেন। এতে কাফিরদের ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ এবং আল্লাহতায়ালার অকৃত্রিম ইবাদতের আদেশ আছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, সুরাটিতে ‘আমি ইবাদত করি না যার ইবাদত তোমরা করো’—কথাটির পৌনঃপুনিক উল্লেখ রয়েছে। তাফসিরবিদরা বর্ণনা করেছেন, একই বাক্য একবার বর্তমানের জন্য এবং একবার ভবিষ্যত্কালের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাত্ বর্তমানে যেমন আমি তোমাদের উপাস্যের ইবাদত করি না, ভবিষ্যতেও এরূপ হবে না। মজার ব্যাপার হলো, এই একটি সুরা যার একটি আয়াত—‘তোমাদের জন্য তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য আমার কর্মফল’ নিয়ে কিছু লোক কোরআন থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (যদিও সেক্যুলারিজম মতবাদের বাংলা তরজমা হলো—ইহজাগতিকতা) এর প্রমাণ পেশ করতে চেষ্টা করেন—প্রকৃতপক্ষে পুরো সুরাটিই কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিপক্ষে ইসলামের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা ও জোরালো অবস্থানের ঋজু অভিব্যক্তি।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ইসলামের জুড়ি নেই। ভিন্নধর্মের অনুসারীর ওপর জোর-জবরদস্তি তো দূরের কথা, নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ যাবতীয় নাগরিক অধিকার প্রদানে ইসলাম অকুণ্ঠচিত্ত। তবে এর অর্থ এমন ভাবা ঠিক নয় যে, ইসলামের জন্য স্বাতন্ত্র্যের সীমারেখা বলতে কিছু থাকবে না। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ভুল ব্যাখ্যা সমাজে সমপ্রীতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নয়, বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি উত্পাদন করবে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সামাজিক সৌহার্দের পরিবর্তে নির্মূল ভাবনাকেই উসকে দেবে। এতে আমাদের উদারমুসলিম চরিত্র যেমন ম্লান হতে পারে, তেমনি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও ভিত নড়ে উঠতে বাধ্য।
বিষয়টির অবতারণা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার কারণ হলো, ১১ ডিসেম্বর ২০১১ শনিবার বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে মসজিদের ইমাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান প্রতিনিধি এবং ইফার কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এ সম্পর্কিত একটি বক্তব্য। ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক সভা ও কর্মশালা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকদের সঙ্গে সমপ্রীতি বজায় রাখতে দেশের ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘রাসুল (সা). মসজিদের অর্ধেক হিন্দুদের পুজার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব ধর্মের লোকদের মধ্যে সেই ধরনের সমপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’ অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মুহাম্মদ আফজাল বলেন, রাসুল ইহুদিদের ইবাদতের জন্য মসজিদের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই নবীর উম্মত (দেখুন, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, ১২.১২.২০১১ খ্রি. রবিবার)।’ প্রতিবাদকারী উপস্থিত ইমামদের মধ্যে অনেকেই প্রতিমন্ত্রী এবং ডিজিকে তাদের দাবির সপক্ষে কোরআন-হাদিসের কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো ধর্মীয় গ্রন্থের প্রমাণ পেশ করতে বললে একজন অপারগতা প্রকাশ ও অন্যজন প্রসঙ্গান্তরে চলে যান। এতে করে তাত্ক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এ ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক কথাবার্তা সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের ইন্ধন জোগাবে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলিক গবেষণাকর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থাদি মুদ্রণ ও ইসলামী প্রকাশনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। সমপ্রতি প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকাণ্ড ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ জনমনে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে বিতর্কিত ও নিন্দিত হচ্ছে। কোনো বিশেষজ্ঞ আলিম এমনকি ইসলাম সম্পর্কে যাদের অল্প-বিস্তর পড়াশোনা রয়েছে তাদের পক্ষে ধর্মীয় উদারতার এমন সরলীকরণ মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাসুলের আদর্শ বলে অভিমত দিয়ে রীতিমত ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে রাসুলের কণ্ঠে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকারের সনদ ঘোষিত হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল নয়। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতারূপী কোনো গোঁজামিল বিশ্বাসের স্থান নেই। ইসলাম সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সর্বজনীন, বৈষম্যহীন ও প্রকৃতিসম্মত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।
মুসলিমপ্রধান সমাজে মুসলমানরা যেমন সংখ্যালঘু ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে নিজেদের স্বত্ব দাবি করে না, তেমনি কোনো সুস্থ বুদ্ধির হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ইসলামের উদারতার দোহাই দিয়ে তাঁদের পুজা-পার্বণের জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেয়ার মতো উদ্ভট আবদার কখনও করবেন বলে মনে হয় না।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ইসলামের জুড়ি নেই। ভিন্নধর্মের অনুসারীর ওপর জোর-জবরদস্তি তো দূরের কথা, নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ যাবতীয় নাগরিক অধিকার প্রদানে ইসলাম অকুণ্ঠচিত্ত। তবে এর অর্থ এমন ভাবা ঠিক নয় যে, ইসলামের জন্য স্বাতন্ত্র্যের সীমারেখা বলতে কিছু থাকবে না। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ভুল ব্যাখ্যা সমাজে সমপ্রীতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নয়, বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি উত্পাদন করবে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সামাজিক সৌহার্দের পরিবর্তে নির্মূল ভাবনাকেই উসকে দেবে। এতে আমাদের উদারমুসলিম চরিত্র যেমন ম্লান হতে পারে, তেমনি মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও ভিত নড়ে উঠতে বাধ্য।
বিষয়টির অবতারণা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার কারণ হলো, ১১ ডিসেম্বর ২০১১ শনিবার বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে মসজিদের ইমাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান প্রতিনিধি এবং ইফার কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর এ সম্পর্কিত একটি বক্তব্য। ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী বার্ষিক সভা ও কর্মশালা’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকদের সঙ্গে সমপ্রীতি বজায় রাখতে দেশের ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘রাসুল (সা). মসজিদের অর্ধেক হিন্দুদের পুজার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব ধর্মের লোকদের মধ্যে সেই ধরনের সমপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’ অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মুহাম্মদ আফজাল বলেন, রাসুল ইহুদিদের ইবাদতের জন্য মসজিদের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই নবীর উম্মত (দেখুন, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক আমার দেশ, ১২.১২.২০১১ খ্রি. রবিবার)।’ প্রতিবাদকারী উপস্থিত ইমামদের মধ্যে অনেকেই প্রতিমন্ত্রী এবং ডিজিকে তাদের দাবির সপক্ষে কোরআন-হাদিসের কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো ধর্মীয় গ্রন্থের প্রমাণ পেশ করতে বললে একজন অপারগতা প্রকাশ ও অন্যজন প্রসঙ্গান্তরে চলে যান। এতে করে তাত্ক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এ ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক কথাবার্তা সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের ইন্ধন জোগাবে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলিক গবেষণাকর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থাদি মুদ্রণ ও ইসলামী প্রকাশনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। সমপ্রতি প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকাণ্ড ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ জনমনে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে বিতর্কিত ও নিন্দিত হচ্ছে। কোনো বিশেষজ্ঞ আলিম এমনকি ইসলাম সম্পর্কে যাদের অল্প-বিস্তর পড়াশোনা রয়েছে তাদের পক্ষে ধর্মীয় উদারতার এমন সরলীকরণ মেনে নেয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রতিমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাসুলের আদর্শ বলে অভিমত দিয়ে রীতিমত ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণে রাসুলের কণ্ঠে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও মানবাধিকারের সনদ ঘোষিত হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল নয়। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতারূপী কোনো গোঁজামিল বিশ্বাসের স্থান নেই। ইসলাম সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সর্বজনীন, বৈষম্যহীন ও প্রকৃতিসম্মত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।
মুসলিমপ্রধান সমাজে মুসলমানরা যেমন সংখ্যালঘু ভিন্নধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে নিজেদের স্বত্ব দাবি করে না, তেমনি কোনো সুস্থ বুদ্ধির হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ইসলামের উদারতার দোহাই দিয়ে তাঁদের পুজা-পার্বণের জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেয়ার মতো উদ্ভট আবদার কখনও করবেন বলে মনে হয় না।
সূত্র : আমার দেশ
No comments:
Post a Comment