ভূতকথার সাথে আমার পরিচয় খুব ছোট থেকেই। শুনেছি গল্প না শুনালে আমাকে খাওয়ানো যেত না ছোটবেলায়। আমাকে প্রথম ভূতকথা শুনিয়েছিলেন আমার আপি। ছোটবেলায় আমার সাত ফুপি, একমাত্র বড় আপি, কারো কাছেই গল্প শোনা থেকে বিরত থাকিনি। ভূতকথা শব্দটিই অনেক অনেক বেশি কাছে টানতো আমাকে। আজো টানে। ছোটবেলায় মনে দাগ কেটে যাওয়া একটি ভূতকথা তোমাদের জন্য শুরু করছি। বলেই ভূতকথা বলা শুরু করেন ৮০ বছরের অন্যরকম মানুষ 'মৃদঙ্গ চক্রবর্তী'। গল্পটা সত্যিই অদ্ভূত। শীতের এক সকালে সবাই আনন্দসহকারে গল্পটা শুনেছিল। ভূতপিঠার গাছ নিয়ে এটা এক মজার গল্প। ভূতং গ্রামের এক রাখালভূত পিঠা খাচ্ছিল। হঠাৎ সে কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে বুনে দিল। যেদিন বুনে দিয়েছিল সেদিনের পর প্রায় প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দেয় সেখানে। সাথে দেয় সার হিসেবে কিসমিস, নাড়কেলও। হঠাৎ একদিন রাখালভূত দেখল, যেখানে সে তার প্রিয় পিঠাটি বুনে দিয়েছিল, সেখানে একটা গাছ হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুধ রঙের এই গাছটির মগডালে ঝুলে আছে শাদা শাদা পিঠা। আরাম করে পিঠা খায় রাখালভূত। পিঠা খায় আর ভাবে, আরো পিঠা বুনে দেয়ার কথা। অন্যদিকে আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। রাখাল পিঠার গাছে উঠে পিঠা খায়। রাখালভূতের ছিল বেশ কিছু বন্ধু। এরা কিন্তু ভূত ছিল না। ছিল তোমার আমার মতো মানুষ। রাখালভূত সারাদিন ভূতং রাজার ঘোড়াভূতগুলোকে লালন-পালন করার সাথে সাথে পিঠাগাছের যত্ন নেয়। এমন যত্ন করে যে, কিছুদিনের মধ্যেই বড় হয়ে যায় গাছটি। রাখালভূত নিচে খায় আর বন্ধুদের মাঝে বিলিয়ে দেয়। তার মনে আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে আর বিলিয়ে বিলিয়ে তার সময় ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন এক ভূতবুড়ি নামক এক দুষ্টবড়ি এলো গ্রামে। সে রাখালভূতের কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু রাখালভূত তাকে কোনো পিঠা দিল না। কেননা, এই বুড়ি মন্ত্র জানে, পাছে আবার পিঠাগাছের কোনো ক্ষতি করে; সেই ভয়ে। কিন্তু বুড়ি? তারতো অনেক রাগ হলো। সেই রাগে বুড়ি মন্ত্র পড়ে রাখালভূতকেই পিঠা বানিয়ে ফেললো। ভূতবুড়ি পিঠা বানানোর পর তাকে যেমনি খেয়ে ফেলতে উদ্ধত হয়, অমনি পিঠা লাফ দেয়। এভাবে একবার বুড়ি খেতে চাইলে পিঠা সাতবার লাফ দেয়। লাফিয়ে লাফিয়ে কোনোমতে ভূতবুড়ির হাত থেকে নিজেকে বাঁচায়। বুড়ির হাত থেকে অনেক দূরে চলে আসে সে। কিন্তু এখন উপায়? উপায় খুঁজতে খুঁজতে সে তার মানুষ বন্ধুদের কাছে ছুটে গেল। কিন্তু কেউই চিনল না। শেষে এক লাফে এদিক যায়, আরেক লাফে ওদিক যায়। লাফিয়ে লাফিয়ে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে সে তাদের রাখালভূত বন্ধুটি। কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বন্ধুদের সামনে পিঠার এই হাঁটাহাঁটি দেখে পিঠাটি ধরার চেষ্টা করে সবাই। কিন্তু কেউই ধরতে পারে না। অবশেষে পিঠা নিজেই তানশার কাছে আসে। তানশা যেমন বুদ্ধিমান তেমন নম্র স্বভাবের। সবাই তাকে ভালোবাসে, আদর করে। তানশা বুঝতে পারে পিঠা কিছু একটা বলতে চায়। সে পিঠাটি হাতে নিয়ে বলে
-কি নাম তোমার?
-আমার নাম রাখালভূত। যতটা সম্ভব জোড়ে বলে রাখালভূত। কিন্তু তানশা শুনতে পায় না। আবার জানতে চায়,
-কি বললে, কি নাম তোমার?
-রাখালভূত, রাখালভূত।
-রাখালভূত! আশ্চর্য হয়ে যায় তানশা।
-হ্যাঁ, রাখালভূত।
-কিন্তু তুমিতো একটা পিঠা...
তানশার কথা শেষ হওয়ার আগেই চঞ্চল ছোঁ মেরে পিঠাটি নিয়ে যায়। খেয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে মুখে দিতে যাবে এমন সময় চঞ্চল শুনতে পায় আমাকে খেওনা, আমি তোমার রাখালভূত বন্ধু...
আর মুখে দেয় না চঞ্চল। এবার আরো জোড়ে চিৎকার করে রাখালভূত বলে
-আমাকে তানশার কাছে ফিরিয়ে দাও। আমি ওর সাথে কথা বলবো। চঞ্চল পিঠারুপী রাখালভূতকে তুলে দেয় তানশার হাতে। অন্যরা কেবল েেচয়ে থাকে আর ভাবে এই আশ্চর্য ঘটনার কথা।
তানশা হাতে নেয় পিঠাটি। রাখাল ভূত এবার বলতে শুরু করে, আমি একদিন আমার মায়ের বানানো পিঠা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে বুনে দিলাম। যেদিন বুনে দিয়েছিলাম সেদিনের পর প্রায় প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিতাম সেখানে। সাথে সার হিসেবে কিসমিস, নাড়কেলও দিয়েছি। হঠাৎ একদিন দেখলাম, যেখানে আমি আমার মায়ের হাতে বানানো প্রিয় পিঠাটি বুনে দিয়েছিলাম, সেখানে একটা গাছ হয়েছে। শুধু তাই নয় দুধ রঙের এই গাছটির মগ ডালে ঝুলে ছিল শাদা শাদা পিঠা। আরাম করে পিঠা খেয়েছিলাম সেদিন। বলে একটু থামে পিঠাটি। তারপর আবার বলতে শুরু করে, পিঠা খাই আর ভাবি, আরো পিঠা বুনে দেয়ার কথা। অন্যদিকে আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। আমি পিঠার গাছে উঠে পিঠা খাই। তোমাদের ওতো দিয়েছি, তাই না? প্রশ্ন করে আবার থামে রাখালভূত। তাকে থামতে দেখে সবাই সমস্বরে সবাই একসাথে জানতে চায় তারপর?
একটা দীর্ঘশ্বাসের রঙধনু তুলে পিঠা আবার বলতে শুরু করে তার কষ্টগাথা কথা
-তারপর আমি সারাদিন ভূতং রাজার ঘোড়াভূতগুলোকে লালন-পালন করার পাশাপাশি পিঠাগাছের যত্ন নেই। এমন যত্ন করি যে, কিছুদিনের মধ্যেই বড় হয়ে যায় গাছটি। আমার মনে আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে আর বিলিয়ে বিলিয়ে আমার সময় ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন এক ভূতবুড়ি নামক এক দুষ্টবুড়ি এলো গ্রামে। সে আমার কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু আমি তাকে কোনো পিঠা দিইনি। কেননা, এই বুড়ি মন্ত্র জানে, পাছে আবার পিঠাগাছের কোনো ক্ষতি করে; সেই ভয়ে। কিন্তু বুড়ি? তারতো অনেক রাগ হলো। সেই রাগে ভূতবুড়ি মন্ত্র পড়ে আমাকেই পিঠা বানিয়ে ফেললো। এবং খাওয়ার চেষ্টা করল। আমি কোনোমতে পালিয়ে এসেছি। আমাকে তোমরা বাঁচাও।
-তোমরাতো ভূত। আমরা তোমাদের কিভাবে বাঁচাতে পারি? তানশা জানতে চায়। এবার পিঠা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, তারপর বলে,
-আমরা ভূত, কিন্তু তোমরা মানুষ। ভূতের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি বুদ্ধিমান আর সাহসী-শক্তিশালী। আমি তোমাদের যেভাবে বলবো, সেভাবে তোমরা কাজ করলেই আমি বেঁচে যেতে পারি ভূতবুড়ির রোষানল থেকে।
- আচ্ছা বলো, আমরা চেষ্টা করে দেখবো। আর আমাদের নেতত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবে তানশা। দৃঢ়তার সাথে কথাটি বলে, চঞ্চল।
চঞ্চলের কথা থামতেই পিঠারুপী রাখালভূত আবার বলা শুরু করে
-ভূতবুড়ির একটা ঝোলা আছে। সেই ঝোলার মধ্যেই বুড়ির প্রাণ...
-মানে? কৌতুহল দমাতে না পেরে পিঠার কথার মাঝখানেই সবাই সমস্বরে জানতে চায়
-মানে হলো, ওই ঝোলার মধ্যেই অনেকগুলো সন্দেশ আছে। সবচেয়ে যে সন্দেশটি সুন্দর, সেই সন্দেশটিই হলো ভূতবুড়ির প্রাণ। তোমরা আমাকে বাঁচাতে চাইলে ওই ঝোলাটা আগে তোমাদের কাছে নিয়ে এসো। কিন্তু সাবধান, ভূতবুড়ির গায়ে যেন ছোঁয়া না লাগে।
-লাগলে কি হবে? ফারহানার প্রশ্ন। ফারহানা হলো তানশার ছোট বোন, যেমন ভিতু তেমন-ই বুদ্ধিমান।
-ছোঁয়া লাগলেই মৃত্যু নিশ্চিত।
সবাই মিলে রওনা হলো ভূতবুড়ির উদ্দেশ্যে। গিয়ে দেখে বুড়ি গাছের মগডালে বসে আরাম করে পিঠা খাচ্ছে। ঝোলাটা নিচেই বলা যায়। শেকড় থেকে একটু উপরে। কিন্তু নিয়ে আসা যাবে এমন জায়গায় রেখেই ভূতবুড়ি পিঠাগাছে উঠেছিল।
এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে তানশারা। ঝোলাটা নিয়েই দৌড় দৌড়। আজও দৌড় কালও দৌড়।
ভূতবুড়ি পিঠা খাওয়ায় মগ্ন থাকার কারণে প্রথমে খেয়াল না করলেও পড়ে গাছ থেকে নেমে পিছে পিছে ধাওয়া করে। ভূতবুড়ির যেই লম্বা লম্বা পা। কয়েক পা বাড়াতেই ধরে ফেলতে উদ্ধত হয়। ততক্ষণে তানশা সন্দেশগুলো বের করে সুন্দর সন্দেশটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলে। অমনি বুড়ি দাঁড়িয়ে যায়। এক চুলও নড়ে না। নড়বে কিভাবে? নড়ার সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। কারণ, তার প্রাণ এখন মনুষ্য সন্তান তানশার হাতে। তানশা এবার ঘুরে দাঁড়ায়। দৌড় বন্ধ করে সবাই। ঘুরে দাঁড়ায় চঞ্চল, ফারহানা, সামিসহ অন্যরা।
-আমার প্রাণ রক্ষা করো। আমাকে মেরো না। কাঁদতে কাঁদতে বলে ভূতবুড়ি।
তানশারাওকম যায় না। তারা একসাথে সাহস নিয়ে ভূতবুড়ির উদ্দেশ্যে বলে
-তাহলে আমাদের আমাদের বন্ধু রাখালভূতকে তুমি পিঠার জীবন থেকে ফিরিয়ে নাও। একথা শুনে বুড়ি তার হাতির কানের মত দু'পাশে ঝুলে থাকা চোখ নেড়ে নেড়ে বলে
-না, তা আমি পারবো না। ও আমার সাথে বেয়াদবী করেছে। তানশা একটা মুচকী হাসি দিয়ে বলে,
- ছোটদের কারো কাছে বড়রা কিছু চাইলে, তা যদি ছোটরা দিতে না চায়, তাতে বেয়াদবী হয় না। বরং তুমি তাকে পিঠা বানিয়ে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করে অন্যায় করেছো। ভূতবুড়ি কেবল বড় বড় চোখ নেড়ে তাকায় আর কিছুই করতে পারে না। কারন, জানটা তার তানশার হাতের মুঠোয়। যদি তানশা সন্দেশটি খেয়ে ফেলে, তাহলে বুড়ির জীবন শেষ।
ভয়ে ভয়ে বুড়ি বলে,
-আমার প্রাণ বাঁচাও আমিও ওকে পিঠা থেকে রাখালভূত করে দেব।
-সত্যি? জানতে চায় তানশাসহ অন্যরা। ভূতবুড়ি সব রাগকে বিসর্জন দিয়ে বলে
-সত্যি। তানশারা এবার আরো সাহসীকতার সাথে বলে,
-তিন সত্যি বলো। বুড়ি এবার আরো নরম হয়ে বলে,
-এক সত্যি, দুইসত্যি, তিনসত্যি...
আর সত্যি করতে হবে না। আমাকে রাখালভূত বানাও রাখাল ভূত। বলে কেঁদে ওঠে পিঠারুপী রাখালভূত। অবশেষে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ভূতবুড়ি মন্ত্র বলে পিঠার জীবন থেকে মুক্তি দেয় রাখালভূতকে। আগের জীবন ফিরে পেয়ে সে কি খুশিটাই না হয়েছিল, তোমরা তা না দেখলে বুঝতেই পারবে না। বলেই আনন্দিত হয়ে ওঠেন চক্রবর্তী দাদা। আর অন্যরা সবাই মিলে বলে
-ওঠে দাদা, দাদা তারপর?. তারপর আর কি; রাখালভূত তার প্রিয় বন্ধু তানশাসহ সবাইকে বারোমাসই পিঠা ভাগ করে দিতে থাকলো। আর ভূতবুড়ি ভয়ের চোটে ভূতং গ্রাম ছেড়ে অনেক দূরে গিয়ে আবাস গড়ল। পাছে আবার তার প্রাণটা দস্যি মেয়ে তানশার হাতের মুঠোয় চলে যায়...সূত্র : যায় যায় দিন
-কি নাম তোমার?
-আমার নাম রাখালভূত। যতটা সম্ভব জোড়ে বলে রাখালভূত। কিন্তু তানশা শুনতে পায় না। আবার জানতে চায়,
-কি বললে, কি নাম তোমার?
-রাখালভূত, রাখালভূত।
-রাখালভূত! আশ্চর্য হয়ে যায় তানশা।
-হ্যাঁ, রাখালভূত।
-কিন্তু তুমিতো একটা পিঠা...
তানশার কথা শেষ হওয়ার আগেই চঞ্চল ছোঁ মেরে পিঠাটি নিয়ে যায়। খেয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে মুখে দিতে যাবে এমন সময় চঞ্চল শুনতে পায় আমাকে খেওনা, আমি তোমার রাখালভূত বন্ধু...
আর মুখে দেয় না চঞ্চল। এবার আরো জোড়ে চিৎকার করে রাখালভূত বলে
-আমাকে তানশার কাছে ফিরিয়ে দাও। আমি ওর সাথে কথা বলবো। চঞ্চল পিঠারুপী রাখালভূতকে তুলে দেয় তানশার হাতে। অন্যরা কেবল েেচয়ে থাকে আর ভাবে এই আশ্চর্য ঘটনার কথা।
তানশা হাতে নেয় পিঠাটি। রাখাল ভূত এবার বলতে শুরু করে, আমি একদিন আমার মায়ের বানানো পিঠা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে বুনে দিলাম। যেদিন বুনে দিয়েছিলাম সেদিনের পর প্রায় প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিতাম সেখানে। সাথে সার হিসেবে কিসমিস, নাড়কেলও দিয়েছি। হঠাৎ একদিন দেখলাম, যেখানে আমি আমার মায়ের হাতে বানানো প্রিয় পিঠাটি বুনে দিয়েছিলাম, সেখানে একটা গাছ হয়েছে। শুধু তাই নয় দুধ রঙের এই গাছটির মগ ডালে ঝুলে ছিল শাদা শাদা পিঠা। আরাম করে পিঠা খেয়েছিলাম সেদিন। বলে একটু থামে পিঠাটি। তারপর আবার বলতে শুরু করে, পিঠা খাই আর ভাবি, আরো পিঠা বুনে দেয়ার কথা। অন্যদিকে আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। আমি পিঠার গাছে উঠে পিঠা খাই। তোমাদের ওতো দিয়েছি, তাই না? প্রশ্ন করে আবার থামে রাখালভূত। তাকে থামতে দেখে সবাই সমস্বরে সবাই একসাথে জানতে চায় তারপর?
একটা দীর্ঘশ্বাসের রঙধনু তুলে পিঠা আবার বলতে শুরু করে তার কষ্টগাথা কথা
-তারপর আমি সারাদিন ভূতং রাজার ঘোড়াভূতগুলোকে লালন-পালন করার পাশাপাশি পিঠাগাছের যত্ন নেই। এমন যত্ন করি যে, কিছুদিনের মধ্যেই বড় হয়ে যায় গাছটি। আমার মনে আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে আর বিলিয়ে বিলিয়ে আমার সময় ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন এক ভূতবুড়ি নামক এক দুষ্টবুড়ি এলো গ্রামে। সে আমার কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু আমি তাকে কোনো পিঠা দিইনি। কেননা, এই বুড়ি মন্ত্র জানে, পাছে আবার পিঠাগাছের কোনো ক্ষতি করে; সেই ভয়ে। কিন্তু বুড়ি? তারতো অনেক রাগ হলো। সেই রাগে ভূতবুড়ি মন্ত্র পড়ে আমাকেই পিঠা বানিয়ে ফেললো। এবং খাওয়ার চেষ্টা করল। আমি কোনোমতে পালিয়ে এসেছি। আমাকে তোমরা বাঁচাও।
-তোমরাতো ভূত। আমরা তোমাদের কিভাবে বাঁচাতে পারি? তানশা জানতে চায়। এবার পিঠা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, তারপর বলে,
-আমরা ভূত, কিন্তু তোমরা মানুষ। ভূতের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি বুদ্ধিমান আর সাহসী-শক্তিশালী। আমি তোমাদের যেভাবে বলবো, সেভাবে তোমরা কাজ করলেই আমি বেঁচে যেতে পারি ভূতবুড়ির রোষানল থেকে।
- আচ্ছা বলো, আমরা চেষ্টা করে দেখবো। আর আমাদের নেতত্ব দিয়ে এগিয়ে নেবে তানশা। দৃঢ়তার সাথে কথাটি বলে, চঞ্চল।
চঞ্চলের কথা থামতেই পিঠারুপী রাখালভূত আবার বলা শুরু করে
-ভূতবুড়ির একটা ঝোলা আছে। সেই ঝোলার মধ্যেই বুড়ির প্রাণ...
-মানে? কৌতুহল দমাতে না পেরে পিঠার কথার মাঝখানেই সবাই সমস্বরে জানতে চায়
-মানে হলো, ওই ঝোলার মধ্যেই অনেকগুলো সন্দেশ আছে। সবচেয়ে যে সন্দেশটি সুন্দর, সেই সন্দেশটিই হলো ভূতবুড়ির প্রাণ। তোমরা আমাকে বাঁচাতে চাইলে ওই ঝোলাটা আগে তোমাদের কাছে নিয়ে এসো। কিন্তু সাবধান, ভূতবুড়ির গায়ে যেন ছোঁয়া না লাগে।
-লাগলে কি হবে? ফারহানার প্রশ্ন। ফারহানা হলো তানশার ছোট বোন, যেমন ভিতু তেমন-ই বুদ্ধিমান।
-ছোঁয়া লাগলেই মৃত্যু নিশ্চিত।
সবাই মিলে রওনা হলো ভূতবুড়ির উদ্দেশ্যে। গিয়ে দেখে বুড়ি গাছের মগডালে বসে আরাম করে পিঠা খাচ্ছে। ঝোলাটা নিচেই বলা যায়। শেকড় থেকে একটু উপরে। কিন্তু নিয়ে আসা যাবে এমন জায়গায় রেখেই ভূতবুড়ি পিঠাগাছে উঠেছিল।
এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে তানশারা। ঝোলাটা নিয়েই দৌড় দৌড়। আজও দৌড় কালও দৌড়।
ভূতবুড়ি পিঠা খাওয়ায় মগ্ন থাকার কারণে প্রথমে খেয়াল না করলেও পড়ে গাছ থেকে নেমে পিছে পিছে ধাওয়া করে। ভূতবুড়ির যেই লম্বা লম্বা পা। কয়েক পা বাড়াতেই ধরে ফেলতে উদ্ধত হয়। ততক্ষণে তানশা সন্দেশগুলো বের করে সুন্দর সন্দেশটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলে। অমনি বুড়ি দাঁড়িয়ে যায়। এক চুলও নড়ে না। নড়বে কিভাবে? নড়ার সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। কারণ, তার প্রাণ এখন মনুষ্য সন্তান তানশার হাতে। তানশা এবার ঘুরে দাঁড়ায়। দৌড় বন্ধ করে সবাই। ঘুরে দাঁড়ায় চঞ্চল, ফারহানা, সামিসহ অন্যরা।
-আমার প্রাণ রক্ষা করো। আমাকে মেরো না। কাঁদতে কাঁদতে বলে ভূতবুড়ি।
তানশারাওকম যায় না। তারা একসাথে সাহস নিয়ে ভূতবুড়ির উদ্দেশ্যে বলে
-তাহলে আমাদের আমাদের বন্ধু রাখালভূতকে তুমি পিঠার জীবন থেকে ফিরিয়ে নাও। একথা শুনে বুড়ি তার হাতির কানের মত দু'পাশে ঝুলে থাকা চোখ নেড়ে নেড়ে বলে
-না, তা আমি পারবো না। ও আমার সাথে বেয়াদবী করেছে। তানশা একটা মুচকী হাসি দিয়ে বলে,
- ছোটদের কারো কাছে বড়রা কিছু চাইলে, তা যদি ছোটরা দিতে না চায়, তাতে বেয়াদবী হয় না। বরং তুমি তাকে পিঠা বানিয়ে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করে অন্যায় করেছো। ভূতবুড়ি কেবল বড় বড় চোখ নেড়ে তাকায় আর কিছুই করতে পারে না। কারন, জানটা তার তানশার হাতের মুঠোয়। যদি তানশা সন্দেশটি খেয়ে ফেলে, তাহলে বুড়ির জীবন শেষ।
ভয়ে ভয়ে বুড়ি বলে,
-আমার প্রাণ বাঁচাও আমিও ওকে পিঠা থেকে রাখালভূত করে দেব।
-সত্যি? জানতে চায় তানশাসহ অন্যরা। ভূতবুড়ি সব রাগকে বিসর্জন দিয়ে বলে
-সত্যি। তানশারা এবার আরো সাহসীকতার সাথে বলে,
-তিন সত্যি বলো। বুড়ি এবার আরো নরম হয়ে বলে,
-এক সত্যি, দুইসত্যি, তিনসত্যি...
আর সত্যি করতে হবে না। আমাকে রাখালভূত বানাও রাখাল ভূত। বলে কেঁদে ওঠে পিঠারুপী রাখালভূত। অবশেষে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ভূতবুড়ি মন্ত্র বলে পিঠার জীবন থেকে মুক্তি দেয় রাখালভূতকে। আগের জীবন ফিরে পেয়ে সে কি খুশিটাই না হয়েছিল, তোমরা তা না দেখলে বুঝতেই পারবে না। বলেই আনন্দিত হয়ে ওঠেন চক্রবর্তী দাদা। আর অন্যরা সবাই মিলে বলে
-ওঠে দাদা, দাদা তারপর?. তারপর আর কি; রাখালভূত তার প্রিয় বন্ধু তানশাসহ সবাইকে বারোমাসই পিঠা ভাগ করে দিতে থাকলো। আর ভূতবুড়ি ভয়ের চোটে ভূতং গ্রাম ছেড়ে অনেক দূরে গিয়ে আবাস গড়ল। পাছে আবার তার প্রাণটা দস্যি মেয়ে তানশার হাতের মুঠোয় চলে যায়...সূত্র : যায় যায় দিন
No comments:
Post a Comment