কুকুরটা পিছু নিয়েছে। আর কুকুরটার পিছু নিয়েছে ওর বাঁকা লেজ। কয়েকদিন ধরে নিচ্ছে। পিছু নিয়েছে মনে করে প্রান্ত যেই দাঁড়িয়ে গেলো; অমনি কুকুরটাও। এতে প্রান্ত কুকুরটাকে ভয় দেখানোর লোভ সামলাতে পারে না। সে ঘুরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটাও। প্রান্ত তখন কুকুরের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
প্রান্তকে এভাবে আসতে দেখে কুকুরটা উল্টো ঘুরে কয়েক পা এগোয়। তারপর থামে। তারপর মুখটা নিজের শরীরে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কুকুরের এমন লজ্জা দেখে প্রান্তর হাসি পায়। সে হৈ হৈ করে এসে একেবারে কুকুরটার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। এতে প্রথমে একদম জড়সড়। তারপর প্রান্তর পায়ের সঙ্গে ওর শরীর ঘষতে শুরু করে।
কুকুরের এমন আচরণে প্রান্তর অনেক ভালো লাগে। এতো এতো যে, সে তক্ষণি ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে আনে। তারপর আম্মু টিফিনের জন্য যে তিনটা ডিমের টোস্ট দিয়েছে_ তার থেকে একটা ছুড়ে মারে। কুকুরটা তা লাফ দিয়ে ধরে ফেলে। এতে প্রান্তর ভালো লাগে। ভালো লাগে বলে যে দুটি বাকি ছিলো, তাও কুকুরের মুখে ছুড়ে মারে। এ ঘটনায় প্রান্তের অনেক আনন্দ হয়, আবার অবাকও হতে হয়। সে খুব ভালোভাবে কুকুরটাকে দেখে। কিন্তু কোনোমতেই এটাকে লান্টুস বলে মনে হয় না।
২.
দু'জন এখন বন্ধু, গলাগলি ফ্রেন্ড। এ শহরে এসে প্রান্ত স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কুকুরটাই তার প্রথম বন্ধু। স্কুলে যাওয়ার পথে বন্ধুর সঙ্গে প্রান্তের দেখা হয়ে যায়। প্রতিদিন। একই জায়গায়। একটা বাসার গেটে মাথা বের করে কুকুরটা দাঁড়িয়ে থাকে। প্রান্ত অবশ্য বাসাটার নাম দিয়েছে জামিল স্যার। নতুন স্কুলের সবচেয়ে গম্ভীর স্যার হলেন জামিল স্যার। এ বাসাটাও তেমনি। এখানে কাউকে কোনোদিন দেখেনি সে। একতলা বাড়িটার ছাদে একটা কাপড় নড়ে উঠতেও কোনোদিন দেখা যায়নি। ফলে প্রান্ত ধরেই নিয়েছে এ বাড়িটা তার কুকুরবন্ধুর। ধরেই নিয়েছে এ বাসাটার নাম গম্ভীর বাসা।
কুকুরটা এভাবে বন্ধু হয়ে গেলেও স্কুলে প্রান্তের এখনও কোনো বন্ধু হয়নি। যে ছেলেটাকে প্রান্তের ভালো লেগেছে, তার নাম নিরঞ্জন। নিরঞ্জন নামটা শুনে প্রান্তের মনে হলো_ ওর একটা বাগান আছে। সে বাগান সবুজে ঘেরা। কেন মনে হলো? কোনো কারণ নেই। তবু মনে হলো। প্রান্ত নিজে নিজে ভেবেছে নিরঞ্জন বন্ধু হওয়ার পর দুই বন্ধু একসঙ্গে ওই বাগানে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু প্রান্তকে নিরঞ্জন একদম পাত্তা দিলো না। প্রান্তের মন খারাপ হলো। ওই ঘটনার পর আরও সাতদিন পেরুলো। কিন্তু কেউ প্রান্তের বন্ধু হলো না।
প্রান্ত এর আগে যে শহরে ছিলো, সেখানেও তার একটা কুকুরবন্ধু ছিলো। আর ছিলো একটা খরগোশ বন্ধু। বাড়ির গেট পর্যন্ত সাদা তুলতুলে খরগোশটা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। গেট থেকে বেরুলেই কুকুরটা। কোত্থেকে যে চলে আসতো। ভূমধ্যসাগরের ক্রিট নগরী ধ্বংস হওয়াটা যেমন বিরাট রহস্য। প্রান্তের কাছে কুকুরের হাজির হওয়াটা সে রকম রহস্যময় মনে হতো। এখনও রহস্য! এ কুকুরটা যদিও প্রান্তের আগের শহরের লান্টুস নয়। কোনো মতেই নয়। তবু ওর মনে হয়, এ লান্টুসের বন্ধু।
লান্টুস আমার সঙ্গে আসতে পারেনি বলে ওর বন্ধুকে পাঠিয়েছে। আমাকে দেখে রাখার জন্য প্রান্ত বিড়বিড় করে।
৩.
আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সঙ্গে নেবে কুকুরবন্ধুকে, তা আগে থেকে ঠিক করা। এজন্য আজ আম্মুকে বন্ধুদের কথা বলে ছয়টা টোস্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছে। ওই তো দূর থেকে কুকুরটাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রান্ত একটু অবাক হয়। কুকুরটা যেভাবে গলা বের করে দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি কুকুরটার সঙ্গে গলা বের করে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা মুখ। প্রান্তেরই বয়সী। প্রান্ত একটু দাঁড়িয়ে যায়। তার মনে হয়, আজকের সব প্লান শেষ। কুকুরটা আর কি ওর সঙ্গে যাবে? তারপর প্রান্তের হঠাৎ অনেক হাসি আসতে থাকে। বন্যা হলে যেমন পানি থামতে চায় না, প্রান্ত এমন বন্যার মতো হাসির স্রোত বইয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়।
হাসি শুধু? সে অনেক অবাকও। চিত্রাহরিণ সুন্দরবনে হঠাৎ একটা মানুষ দেখে অবাক দাঁড়িয়ে থাকে না? তেমনি প্রান্ত গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকক্ষণ। কোনোমতেই সে বিশ্বাস করতে পারে না_ এ ববি।
_'তুই!' প্রান্ত বন্ধুর গলা জড়িয়ে ধরে।
ববি মিটিমিটি হাসে। প্রান্তের বাম হাতটা চেপে ধরে বলে, 'আয়'।
প্রান্তের মনে তখন অনেক আনন্দ। প্রান্তের মনে তখন অনেক প্রশ্ন। এই যে ববি চলে এলো তার পেছন পেছন, এ কীভাবে হয়? সে আগে যে শহরে থাকতো, ওখানের মগড়া নদী আর ববি। দু'জন প্রাণের বন্ধু। এজন্য ববিকে সে মনে করতে চাইতো না। মনে হলে যে কান্না চলে আসে!
এমন ভাবনার ভেতর ছিলো। ভাবনা থেকে বেরিয়ে প্রান্ত দেখে বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেছে। বাড়িরটার ভেতর একটা নীল অপরাজিতা গাছ। একটাই, তাতে গুনে গুনে চারটা ফুল। আগের শহরের আকাশ যেমন নীল ছিলো, এ ফুলগুলো তেমনি। ববি ওর হাত টেনে ধরে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। পেছন পেছন কুকুরটা। ঘরটা প্রান্ত একদম লক্ষ্য করেনি। তার আগেই বাড়িটার পেছনে চলে আসে। এসে শুধু অবাক নয়, বোবাও [মানে যে কথা বলতে পারে না] হয়ে যায়! এ কী? মগড়া নদী এখানে এলো কোত্থেকে! প্রান্তের মনে হয় সে খুশিতে একটি ফিঙে হয়ে যাবে। ফিঙে হয়ে লেজ নাড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে। এ কথাটা ববিকে বলতে গিয়ে দেখে ববি নেই! ববি নেই, কুকুরবন্ধুও নেই! সামনে মগড়া নদীটা আছে? প্রান্ত জানে না। জানার দরকার কী? প্রান্ত এক দৌড়ে বাড়িটা থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর পথটা ওকে স্কুলের বারান্দায় এনে ফেলে দেয়।
৪.
ক্লাস শুরু হতে আরও ১০ মিনিট। পেছনের একটা বেঞ্চে প্রান্ত একা বসে আছে। ওর মাথা ভন ভন করছে। বুক করছে টিপটিপ। হাত দুটা এমনি এমনি কাঁপছে। তখন নিরঞ্জন এসে ওর পাশে বসে পড়ে। প্রান্ত অবাক। ওর তো সব অবাক আর অবাক হওয়া। নিরঞ্জন প্রান্তের হাত চেপে ধরে। ওর আরেক হাতে একটা টিফিন বক্স। প্রান্ত কিছু বুঝতে পারে না।
নিরঞ্জন বলে, 'তুমি তো আমার বন্ধু?'
প্রান্ত কী বলবে? মনে হয় কথা বললেই কান্না চলে আসবে।
নিরঞ্জন আবার বলে, 'তুমি আমার বন্ধু। ওই দিন তোমার সঙ্গে কেন কথা বলিনি, জানো?'
প্রান্ত উত্তর করে না।
নিরঞ্জন বলে, 'পরিচয়ের প্রথম দিন বন্ধুর জন্য কিছু নিয়ে আসতে হয়। বুঝলে?'
প্রান্ত আগের মতোই চুপচাপ।
তখন নিরঞ্জন টিফিন বক্সের মুখটা খুলে ফেলে। খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে দুটা সবুজ ঘাসফড়িং মুহূর্তে উড়ে যায়।
নিরঞ্জন বলে, 'এ দুটা আমার বাগানের। অনেক কষ্টে ধরেছি। তোমার জন্য।'
এমন ঘটনায় প্রান্ত হু হু করে হেসে ওঠে। ওর হাত কাঁপে না, বুক টিপটিপ করে না।
এদিকে প্রান্তের হাসির শব্দে ক্লাসের সব বন্ধুরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে।
প্রান্তকে এভাবে আসতে দেখে কুকুরটা উল্টো ঘুরে কয়েক পা এগোয়। তারপর থামে। তারপর মুখটা নিজের শরীরে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কুকুরের এমন লজ্জা দেখে প্রান্তর হাসি পায়। সে হৈ হৈ করে এসে একেবারে কুকুরটার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। এতে প্রথমে একদম জড়সড়। তারপর প্রান্তর পায়ের সঙ্গে ওর শরীর ঘষতে শুরু করে।
কুকুরের এমন আচরণে প্রান্তর অনেক ভালো লাগে। এতো এতো যে, সে তক্ষণি ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে আনে। তারপর আম্মু টিফিনের জন্য যে তিনটা ডিমের টোস্ট দিয়েছে_ তার থেকে একটা ছুড়ে মারে। কুকুরটা তা লাফ দিয়ে ধরে ফেলে। এতে প্রান্তর ভালো লাগে। ভালো লাগে বলে যে দুটি বাকি ছিলো, তাও কুকুরের মুখে ছুড়ে মারে। এ ঘটনায় প্রান্তের অনেক আনন্দ হয়, আবার অবাকও হতে হয়। সে খুব ভালোভাবে কুকুরটাকে দেখে। কিন্তু কোনোমতেই এটাকে লান্টুস বলে মনে হয় না।
২.
দু'জন এখন বন্ধু, গলাগলি ফ্রেন্ড। এ শহরে এসে প্রান্ত স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কুকুরটাই তার প্রথম বন্ধু। স্কুলে যাওয়ার পথে বন্ধুর সঙ্গে প্রান্তের দেখা হয়ে যায়। প্রতিদিন। একই জায়গায়। একটা বাসার গেটে মাথা বের করে কুকুরটা দাঁড়িয়ে থাকে। প্রান্ত অবশ্য বাসাটার নাম দিয়েছে জামিল স্যার। নতুন স্কুলের সবচেয়ে গম্ভীর স্যার হলেন জামিল স্যার। এ বাসাটাও তেমনি। এখানে কাউকে কোনোদিন দেখেনি সে। একতলা বাড়িটার ছাদে একটা কাপড় নড়ে উঠতেও কোনোদিন দেখা যায়নি। ফলে প্রান্ত ধরেই নিয়েছে এ বাড়িটা তার কুকুরবন্ধুর। ধরেই নিয়েছে এ বাসাটার নাম গম্ভীর বাসা।
কুকুরটা এভাবে বন্ধু হয়ে গেলেও স্কুলে প্রান্তের এখনও কোনো বন্ধু হয়নি। যে ছেলেটাকে প্রান্তের ভালো লেগেছে, তার নাম নিরঞ্জন। নিরঞ্জন নামটা শুনে প্রান্তের মনে হলো_ ওর একটা বাগান আছে। সে বাগান সবুজে ঘেরা। কেন মনে হলো? কোনো কারণ নেই। তবু মনে হলো। প্রান্ত নিজে নিজে ভেবেছে নিরঞ্জন বন্ধু হওয়ার পর দুই বন্ধু একসঙ্গে ওই বাগানে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু প্রান্তকে নিরঞ্জন একদম পাত্তা দিলো না। প্রান্তের মন খারাপ হলো। ওই ঘটনার পর আরও সাতদিন পেরুলো। কিন্তু কেউ প্রান্তের বন্ধু হলো না।
প্রান্ত এর আগে যে শহরে ছিলো, সেখানেও তার একটা কুকুরবন্ধু ছিলো। আর ছিলো একটা খরগোশ বন্ধু। বাড়ির গেট পর্যন্ত সাদা তুলতুলে খরগোশটা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। গেট থেকে বেরুলেই কুকুরটা। কোত্থেকে যে চলে আসতো। ভূমধ্যসাগরের ক্রিট নগরী ধ্বংস হওয়াটা যেমন বিরাট রহস্য। প্রান্তের কাছে কুকুরের হাজির হওয়াটা সে রকম রহস্যময় মনে হতো। এখনও রহস্য! এ কুকুরটা যদিও প্রান্তের আগের শহরের লান্টুস নয়। কোনো মতেই নয়। তবু ওর মনে হয়, এ লান্টুসের বন্ধু।
লান্টুস আমার সঙ্গে আসতে পারেনি বলে ওর বন্ধুকে পাঠিয়েছে। আমাকে দেখে রাখার জন্য প্রান্ত বিড়বিড় করে।
৩.
আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। সঙ্গে নেবে কুকুরবন্ধুকে, তা আগে থেকে ঠিক করা। এজন্য আজ আম্মুকে বন্ধুদের কথা বলে ছয়টা টোস্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছে। ওই তো দূর থেকে কুকুরটাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রান্ত একটু অবাক হয়। কুকুরটা যেভাবে গলা বের করে দাঁড়িয়ে থাকে, তেমনি কুকুরটার সঙ্গে গলা বের করে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা মুখ। প্রান্তেরই বয়সী। প্রান্ত একটু দাঁড়িয়ে যায়। তার মনে হয়, আজকের সব প্লান শেষ। কুকুরটা আর কি ওর সঙ্গে যাবে? তারপর প্রান্তের হঠাৎ অনেক হাসি আসতে থাকে। বন্যা হলে যেমন পানি থামতে চায় না, প্রান্ত এমন বন্যার মতো হাসির স্রোত বইয়ে গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়।
হাসি শুধু? সে অনেক অবাকও। চিত্রাহরিণ সুন্দরবনে হঠাৎ একটা মানুষ দেখে অবাক দাঁড়িয়ে থাকে না? তেমনি প্রান্ত গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকক্ষণ। কোনোমতেই সে বিশ্বাস করতে পারে না_ এ ববি।
_'তুই!' প্রান্ত বন্ধুর গলা জড়িয়ে ধরে।
ববি মিটিমিটি হাসে। প্রান্তের বাম হাতটা চেপে ধরে বলে, 'আয়'।
প্রান্তের মনে তখন অনেক আনন্দ। প্রান্তের মনে তখন অনেক প্রশ্ন। এই যে ববি চলে এলো তার পেছন পেছন, এ কীভাবে হয়? সে আগে যে শহরে থাকতো, ওখানের মগড়া নদী আর ববি। দু'জন প্রাণের বন্ধু। এজন্য ববিকে সে মনে করতে চাইতো না। মনে হলে যে কান্না চলে আসে!
এমন ভাবনার ভেতর ছিলো। ভাবনা থেকে বেরিয়ে প্রান্ত দেখে বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেছে। বাড়িরটার ভেতর একটা নীল অপরাজিতা গাছ। একটাই, তাতে গুনে গুনে চারটা ফুল। আগের শহরের আকাশ যেমন নীল ছিলো, এ ফুলগুলো তেমনি। ববি ওর হাত টেনে ধরে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। পেছন পেছন কুকুরটা। ঘরটা প্রান্ত একদম লক্ষ্য করেনি। তার আগেই বাড়িটার পেছনে চলে আসে। এসে শুধু অবাক নয়, বোবাও [মানে যে কথা বলতে পারে না] হয়ে যায়! এ কী? মগড়া নদী এখানে এলো কোত্থেকে! প্রান্তের মনে হয় সে খুশিতে একটি ফিঙে হয়ে যাবে। ফিঙে হয়ে লেজ নাড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে। এ কথাটা ববিকে বলতে গিয়ে দেখে ববি নেই! ববি নেই, কুকুরবন্ধুও নেই! সামনে মগড়া নদীটা আছে? প্রান্ত জানে না। জানার দরকার কী? প্রান্ত এক দৌড়ে বাড়িটা থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর পথটা ওকে স্কুলের বারান্দায় এনে ফেলে দেয়।
৪.
ক্লাস শুরু হতে আরও ১০ মিনিট। পেছনের একটা বেঞ্চে প্রান্ত একা বসে আছে। ওর মাথা ভন ভন করছে। বুক করছে টিপটিপ। হাত দুটা এমনি এমনি কাঁপছে। তখন নিরঞ্জন এসে ওর পাশে বসে পড়ে। প্রান্ত অবাক। ওর তো সব অবাক আর অবাক হওয়া। নিরঞ্জন প্রান্তের হাত চেপে ধরে। ওর আরেক হাতে একটা টিফিন বক্স। প্রান্ত কিছু বুঝতে পারে না।
নিরঞ্জন বলে, 'তুমি তো আমার বন্ধু?'
প্রান্ত কী বলবে? মনে হয় কথা বললেই কান্না চলে আসবে।
নিরঞ্জন আবার বলে, 'তুমি আমার বন্ধু। ওই দিন তোমার সঙ্গে কেন কথা বলিনি, জানো?'
প্রান্ত উত্তর করে না।
নিরঞ্জন বলে, 'পরিচয়ের প্রথম দিন বন্ধুর জন্য কিছু নিয়ে আসতে হয়। বুঝলে?'
প্রান্ত আগের মতোই চুপচাপ।
তখন নিরঞ্জন টিফিন বক্সের মুখটা খুলে ফেলে। খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে দুটা সবুজ ঘাসফড়িং মুহূর্তে উড়ে যায়।
নিরঞ্জন বলে, 'এ দুটা আমার বাগানের। অনেক কষ্টে ধরেছি। তোমার জন্য।'
এমন ঘটনায় প্রান্ত হু হু করে হেসে ওঠে। ওর হাত কাঁপে না, বুক টিপটিপ করে না।
এদিকে প্রান্তের হাসির শব্দে ক্লাসের সব বন্ধুরা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে।
ছবি : রজত
সূত্র : সমকাল
No comments:
Post a Comment