আমার স্কুল থেকে ফেরার জন্য সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। ফিরলেই দৌড়ে এসে ব্যাগটা নিয়ে টেবিলে রাখতে যেত। ছোট্ট আর গোলগাল শরীরটা নিয়ে তার আপ্রাণ প্রচেষ্টা, দাদার ব্যাগটা যে টেবিলে রাখতেই হবে! সরাসরি টেবিলটা তার আর নাগাল পেত না, আর তাই প্রথমে চেয়ারে উঠে তারপর টেবিলে। ততক্ষণে আমি হাত-মুখ ধুয়ে খেতে বসে যাওয়ায় ক্লান্তভাবে অথচ বীরদর্পে সামনে এসে এমন ভাব করত যে লঙ্কা জয় করে এসেছে। কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নয়, তবে যা চাইবে তা ওকে দিতেই হবে। এই ভরদুপুরে মা-বাবাকে ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরি দেখতে নিয়ে যাওয়া! মা-বাবা ওকে বেশি আদর করত বলে সেই ছোট্ট বয়সেই অভিমান করতে শিখেছিল বোনটি আমার। তার চাহিদা অনুযায়ী কাজ না করলে মিথ্যা বলে আমাকে ফাঁসাতেও দ্বিধা করত না। ভয়ে থাকতাম কখন যে আবার লাল টুকটুকে গাল দুটো আরও ফুলিয়ে মা-বাবাকে নালিশ দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করে। প্রতিমাগুলো দেখে তার হাজারো প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, দাদা, দুর্গাদেবীর ১০টা হাত কেন?... গণেশের ইঁদুরটা কি ওকে কখনো কামড়ায়নি?... সরস্বতী দেবী হাতের বীণাটি ওকে দেবে কি না...।’ আবার এমন সব আবদার করত যে লক্ষ্মী দেবী, কার্তিকের মতো তারও পেঁচা আর ময়ূর চাই-ই চাই। পূজার সময় বাবা যখন ওকে লাল টুকটুকে জামা ও জুতা কিনে দিতেন, তা পরেই দেখাতে নিয়ে আসত আমাকে। ঠিক যেন এক স্বর্গের পরির মতো লাগত ওকে, ওর তিড়িংবিড়িং নাচটি ছিল দেখার মতো। বাবা যখন আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে পূজা দেখতে বের হতেন, ওর অত্যাচারে আর পারা যেত না। এটা চাই, ওটা চাই। বিজয়া দশমীর পর প্রতিমা বিসর্জন হতো রাতে, মনটা অনেক খারাপ হতো ছোট্ট বোনটির। হয়তো মনকে প্রবোধ দেওয়ার জন্যই বলত, ‘দাদা, দেখিস দুর্গা দেবীর সিংহটা ঠিকই ওদের কামড়ে দেবে...!’
আদরের ছোট্ট বোনটি আমার এখন অনেক বড় হয়েছে। আগের মতোই এখনো ভালোবাসে আমাকে, তবে সেই শিশুসুলভ আচরণ আর করে না...। ছোটকালের পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো থাক না আমার মনের আর্কাইভে জমা হয়ে, যা আমি অনুভব করি অহর্নিশ। মনের স্মৃতিতে আদরের ছোট্ট বোনটিকে ছোট্ট করেই রাখি।
আদরের ছোট্ট বোনটি আমার এখন অনেক বড় হয়েছে। আগের মতোই এখনো ভালোবাসে আমাকে, তবে সেই শিশুসুলভ আচরণ আর করে না...। ছোটকালের পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো থাক না আমার মনের আর্কাইভে জমা হয়ে, যা আমি অনুভব করি অহর্নিশ। মনের স্মৃতিতে আদরের ছোট্ট বোনটিকে ছোট্ট করেই রাখি।
সূত্র : প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment