মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান হলো পরিবেশ। মানুষসহ সব প্রাণীকুলের জন্য সুস্থ পরিবেশ আবশ্যক। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিত্সা—সবই কোনো না কোনো পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ভাষায়, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ওজোনস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত পরিমণ্ডলে বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, মাটি, বন, পাহাড়, নদী, সাগর মোটকথা উদ্ভিদ ও জীবজগত সমন্বয়ে যা সৃষ্টি তাই পরিবেশ। পরিবেশের সব উপাদান মহান আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ। মানুষের কল্যাণ ও স্বাভাবিক প্রয়োজনের তাগিদে এগুলো তৈরি করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এভাবে বর্ণনা করেছেন—‘তোমরা কি দেখ না, নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহতায়ালা তোমাদের কলাণে নিয়োজিত রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতগুলো পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন’ (সূরা-লোকমান : আয়াত-২০)। নিশ্চয় আমি সব জিনিস সৃষ্টি করেছি সুস্পষ্টভাবে ও সুনির্দিষ্ট পরিমাপ অনুযায়ী (আল-কামার : আয়াত-৪৯)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, তাদের জন্য একটি নির্দশন মৃতভূমি। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উত্পন্ন করি শস্য, তা তারা ভক্ষণ করে। আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর এবং প্রবাহিত করি ঝরনা, যাতে তারা ফল পায় (সূরা-ইয়সিন : আয়াত-৩৩)।
এ থেকে বোঝা যায়, পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক না রাখি তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মহানবী (সা.) কর্তৃক পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি ও ব্যবস্থা আমাদের দৃঢ়ভাবে ধারণ করা উচিত।
পরিবেশ আল্লাহর সৃষ্ট রহস্যাবৃত নেয়ামতগুলোর অন্যতম। জীব ও জড় উপাদানগুলোর পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলই হলো পরিবেশ। এ উপাদানগুলোর মধ্যে প্রাণী, উদ্ভিদ, আলো, বাতাস, মাটি, উত্তাপ প্রভৃতি অন্যতম। পরিবেশ হলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ওজোনস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত পরিমণ্ডলে বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, মাটি, বন-পাহাড়, নদী, সাগরসহ গোটা উদ্ভিদ ও জীবজগত সমন্বয়ে যা সৃষ্টি তাই পরিবেশ।
পরিবেশ আল্লাহর অস্তিত্ব বহন করে। সত্যান্বেষী ও অনুসন্ধানকারীদের জন্য হেদায়াতের দিকনির্দেশনা দেয়। যেমন আল্লাহ যদি সূর্যের আলো কমিয়ে দিতেন তাহলে পৃথিবী হয়ে উঠত বরফে আচ্ছাদিত। আর যদি সূর্যের আলো তীব্র করে দিতেন, তাহলে পৃথিবী হয়ে উঠত উত্তপ্তময় ও অগ্নিকুণ্ডের মতো, যা কোনোক্রমেই জীবজগতের অস্তিত্বের উপযোগী নয়। কিন্তু আল্লাহতায়ালা পরিবশেকে সব জীবের উপযোগী করে সুষম ভারসাম্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি প্রত্যেক বস্তুকে, সুষমভাবে ও পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি (সূরা-আল কাসার : আয়াত-৪৯)। পরিবেশ দু’ধরনের। একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যটি সামাজিক পরিবেশ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে পৃথিবীব্যাপী সব শ্রেণীর মানুষ খুবই সোচ্চার। মানুষের খেয়ালিপনা ও অদূরদর্শিতার কারণে প্রাকৃতিক যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে তা বিশ্ববাসীর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ফলে বায়ুতে বেড়েছে দূষণ, বেড়েছে তাপমাত্রা, আরও বৃদ্ধি পেয়েছে রোগ-শোক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য বিজ্ঞানীরা বন রক্ষা এবং বৃক্ষরোপণকে অন্যতম উপায় বলে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ গাছপালা, লতাপাতা, মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, মানুষ ও জীবের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত করে। এই বাস্তবতা বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) চৌদ্দশ’ বছর আগেই অনুভব করেছিলেন এবং সাহাবিদের সেই আলোকে দিকনির্দেশনাও দিয়েছিলেন। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য মলমূত্র, পচা-গন্ধ, নোংরা ও ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি এগুলোকে নাজাসাত বা নাপাকি বলে আখ্যায়িত করে ঘোষণা করেছেন পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ (আল-হাদিস)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা পবিত্র আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন (সূরা-আত তওবাহ : আয়াত-১০৮)। এছাড়া হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায় তবে সে চারাটি লাগাবে (আল-হাদিস)।
সামাজিক পরিবেশ : মানুষ সামাজিকভাবে বসবাস করবে—এটা পৃথিবীর একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা সম্ভব হবে সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সমতা, সাম্য, দয়ামায়া, ভালোবাসার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করার ফলে। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, মিথ্যা ও হানাহানিমুক্ত পরিবেশই সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার জন্য সহায়ক। সমাজের নানা অসঙ্গতি, জুলুম, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, সুদ, জুয়া, মিথ্যাচার সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর। এসবের বিরুদ্ধে রাসুল (সা.) মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। কখনও আবার কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনরা যখন দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে, তখন দুনিয়াতে একে অপরের প্রতি যে জুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন, মজুলমের বদ দোয়াকে ভয় কর। কেননা তার বদ দোয়াও আল্লাহর মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে রাখতে হলে পরিবেশকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা ও প্রিয় নবী (সা.) এ ব্যাপারে কখনও সতর্কবার্তা আবার কঠোর ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তার হেফাজত যেহেতু মুসলমানদের ঈমান-আকিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধায় ঈমান রক্ষার তাগিদে প্রতিটি মুসলমান সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ পৃথিবী সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল হয়ে উঠুক—এ কামনা করছি।
এ থেকে বোঝা যায়, পরিবেশের যথাযথ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক না রাখি তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মহানবী (সা.) কর্তৃক পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি ও ব্যবস্থা আমাদের দৃঢ়ভাবে ধারণ করা উচিত।
পরিবেশ আল্লাহর সৃষ্ট রহস্যাবৃত নেয়ামতগুলোর অন্যতম। জীব ও জড় উপাদানগুলোর পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলই হলো পরিবেশ। এ উপাদানগুলোর মধ্যে প্রাণী, উদ্ভিদ, আলো, বাতাস, মাটি, উত্তাপ প্রভৃতি অন্যতম। পরিবেশ হলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে ওজোনস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত পরিমণ্ডলে বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, মাটি, বন-পাহাড়, নদী, সাগরসহ গোটা উদ্ভিদ ও জীবজগত সমন্বয়ে যা সৃষ্টি তাই পরিবেশ।
পরিবেশ আল্লাহর অস্তিত্ব বহন করে। সত্যান্বেষী ও অনুসন্ধানকারীদের জন্য হেদায়াতের দিকনির্দেশনা দেয়। যেমন আল্লাহ যদি সূর্যের আলো কমিয়ে দিতেন তাহলে পৃথিবী হয়ে উঠত বরফে আচ্ছাদিত। আর যদি সূর্যের আলো তীব্র করে দিতেন, তাহলে পৃথিবী হয়ে উঠত উত্তপ্তময় ও অগ্নিকুণ্ডের মতো, যা কোনোক্রমেই জীবজগতের অস্তিত্বের উপযোগী নয়। কিন্তু আল্লাহতায়ালা পরিবশেকে সব জীবের উপযোগী করে সুষম ভারসাম্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি প্রত্যেক বস্তুকে, সুষমভাবে ও পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি (সূরা-আল কাসার : আয়াত-৪৯)। পরিবেশ দু’ধরনের। একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যটি সামাজিক পরিবেশ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ : প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে পৃথিবীব্যাপী সব শ্রেণীর মানুষ খুবই সোচ্চার। মানুষের খেয়ালিপনা ও অদূরদর্শিতার কারণে প্রাকৃতিক যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে তা বিশ্ববাসীর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ফলে বায়ুতে বেড়েছে দূষণ, বেড়েছে তাপমাত্রা, আরও বৃদ্ধি পেয়েছে রোগ-শোক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য বিজ্ঞানীরা বন রক্ষা এবং বৃক্ষরোপণকে অন্যতম উপায় বলে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ গাছপালা, লতাপাতা, মানুষ ও জীবজন্তুর জন্য খাদ্য সরবরাহ করে, মানুষ ও জীবের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত করে। এই বাস্তবতা বা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) চৌদ্দশ’ বছর আগেই অনুভব করেছিলেন এবং সাহাবিদের সেই আলোকে দিকনির্দেশনাও দিয়েছিলেন। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য মলমূত্র, পচা-গন্ধ, নোংরা ও ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি এগুলোকে নাজাসাত বা নাপাকি বলে আখ্যায়িত করে ঘোষণা করেছেন পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ (আল-হাদিস)। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা পবিত্র আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন (সূরা-আত তওবাহ : আয়াত-১০৮)। এছাড়া হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায় তবে সে চারাটি লাগাবে (আল-হাদিস)।
সামাজিক পরিবেশ : মানুষ সামাজিকভাবে বসবাস করবে—এটা পৃথিবীর একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা সম্ভব হবে সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সমতা, সাম্য, দয়ামায়া, ভালোবাসার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করার ফলে। অন্যায়, অবিচার, জুলুম, মিথ্যা ও হানাহানিমুক্ত পরিবেশই সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার জন্য সহায়ক। সমাজের নানা অসঙ্গতি, জুলুম, রাহাজানি, চুরি, ডাকাতি, সুদ, জুয়া, মিথ্যাচার সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর। এসবের বিরুদ্ধে রাসুল (সা.) মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। কখনও আবার কঠোর ভাষায় হুশিয়ার করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনরা যখন দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে, তখন দুনিয়াতে একে অপরের প্রতি যে জুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন, মজুলমের বদ দোয়াকে ভয় কর। কেননা তার বদ দোয়াও আল্লাহর মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে রাখতে হলে পরিবেশকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা ও প্রিয় নবী (সা.) এ ব্যাপারে কখনও সতর্কবার্তা আবার কঠোর ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তার হেফাজত যেহেতু মুসলমানদের ঈমান-আকিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধায় ঈমান রক্ষার তাগিদে প্রতিটি মুসলমান সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ পৃথিবী সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল হয়ে উঠুক—এ কামনা করছি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ সূত্র : আমার দেশ
No comments:
Post a Comment