প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন

Thursday, December 23, 2010

অদ্ভুত আঁধারে হেঁটে যায় একাকী যুবক by বাবুল হোসেইন

আষাঢ়ের আকাশ। পরিষ্কার এবং মেঘলা। পেঁজা মেঘগুলো উড়ে যায় এদিক সেদিক। সে এক দেখার মত দৃশ্য ! বারান্দায় বসে অহম দেখে বর্ষার বাড়ন্ত আকাশ। চাঁদটা মেঘের আড়ালে একবার লুকোয় পরক্ষণে আবার খলখলিয়ে হেসে উঠে আপন মহিমায়। চাঁদের মধ্যে বিষণ্ন এক পথিকের হেটে যাওয়া দেখে অহম। কেবল দৌড়াচ্ছে, শাদা শার্ট আর নীল জামা। অহম দেখে আর বিস্ময়ে অভিভূত হয়। সে বিশ্বাসই করতে পারে না। সে মাকে ডেকে আনে বারান্দায়। মাও দেখে বিস্মিত হন। একি! এ যে সত্যি সত্যি চাঁদের বুকে যুবকের হেঁটে যাওয়া। অহম ডিবে থাকে চাঁদের মগ্নতায়। বিষণ্ন পথিকের মত ক্লান্ত শ্রান্ত অহমও আবিষ্কার করে সেও কেবল হেঁটে যাচ্ছে। জনমভর। সারাটা জনম ধরে।......
বিষণ্ন দুপুরগুলোয় অহমরা আড্ডা দিত কোন এক শিমুলতলায়। আর সেই শিমুলের উড়াউড়ি দেখে অহম আবিষ্কার করত এক ধরনের সুখ সুখ ভাব। কি পবিত্র আর স্নিগ্ধ শিমুল তুলা। স্পর্শ করলেই যেনো নরম পরশ দেয়। আর কি শফেদ আর অপরূপ রূপ। অহমের বন্ধুরা বিশেষত সবুজ ওকে ক্ষেপাত খুব। বলত প্রকৃতি প্রেমিক। আর হবেই বা না কেন? জন্মের একটা ধারাতো অস্বীকার করা যায় না। তার পূর্ব-পুরুষের হাত ধরে তার জিনেও ঢুকেছে প্রকৃতিপ্রেম, লেখালেখি আরো কত কি। তার আগের প্রজন্মের অনেকেই নামকরা লেখক এবং গীতিকার ছিলেন। সেও পেয়েছে কিছুটা হলেও। তাই অহমও একদিন সিদ্ধান্ত নেয় পূর্বপুরুষের মত সেও লেখালেখিতে মনযোগ দিবে এবং তার ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিবে এই লেখালেখিকেই।

চাঁদের আলোয় অহম একধরনের বেদনাবোধ টের পায়। তার কেবলই মনে হয় এটা কি সে সত্যি সত্যি দেখেছে নাকি বিভ্রম। কেবলই বিভ্রম। সে ভাবতে থাকে, ক্রমশই ভাবতে থাকে। চাঁদের মধ্যে এক বুড়ি আছে, এরকম একটা মিথ সে শুনেছিল কোন এক শৈশবের দিনে, বিষণ্ন দুপুরে হয়তো নানী কিংবা দাদীর বিছানার পাশে বসে, সুপাড়ির লাল রসে ফাঁকা দাঁতের হাসিতে নানী কিংবা দাদী তাকে শুনিয়েছিলো সেইসব পুরোনো দিনের মিথ, তার মনে নেই। শুধু মনে আছে এইটুকু সে শুনেছিলো কারও কাছ থেকে।

অহম নিজেই হেঁটে যায় বিষণ্ন রাস্তায়। চারপাশের মেঘকণা তাকে সঙ্গ দেয়। তুমুল আড্ডা হয় মেঘেদের সঙ্গে। মেঘ তাকে আমন্ত্রন দেয় ওদের রাজ্যে বেড়াতে যাওয়ার। মেঘেদের বাড়ীতে কি শুভ্র বিছানা আছে কিংবা ওদের এমন অমায়িক আচরণ দারুন মুগ্ধ করে। অহম কথা দেয় মেঘেদের বাড়ীতে বেড়াতে কোন এক মেঘলা দিনে। তারপর শুনবে কি করে সারা আকাশ জুড়ে মেঘেদের দাপট, সেইসব কাহিনী কিংবা মিথগুলো।

তার মনে পড়ে কোন সুদূরের দিনে তার এক বন্ধু তাকে কথা দিয়েছিলো আসার। সে বেড়াতে গিয়েছিলো জঙ্গলে। সুন্দরবনে। অহমকে নিয়ে যাবার কথা ছিলো, কিন্তু যাওয়ার আগে অহম অসুস্থ্য হয়ে গেলে আর যেতে পারেনি তার বন্ধুর সঙ্গে। তারপর সেই বন্ধু একাই চলে গিয়েছিলো। আর ফির আসেনি। কথা ছিলো এসেই অহমকে দেখতে আসবে, কিন্তু আর আসতে পারেনি সেই বন্ধু। তারপর থেকে অহম একটু অন্যরকম হয়ে যায়। বিশাল একটা পরিবর্তন আসতে থাকে অহমের জীবনে। কেমন ঘোর লাগা একটা সময় আসে অহমের জীবনে। সবাই জানতো ব্যাপারটা, তাই শান্তনার বদলে সবাই অহমকে সঙ্গ দিয়েছে। ভালোবেসে কাছাকাছি থেকেছে। কিন্তু অহমের মনের ভিতরে যে পরিবর্তন হয়ে গেছে সেটা আটকাতে পারেনি কেউই। অহম কেবল স্বপ্ন দেখে বিষণ্ন শহর ছেড়ে পালাচ্ছে একাকী যুবক। তার স্বপ্নের মাঝে বারবার আসে একাকী যুবক। বারবারই সে শুধু যুবকের অবয়ব চিনে, যুবককে চিনে না। কিংবা ঐন্দ্রজালিক এক ধরণের ধাঁধাঁ তাকে চিনতে দেয়না, কে জানে? অহম কেবলই শুন্যতা অনুভব করে তখন। মাকে সে বলেছে এরকম সময়ে তার কি রকম লাগে। মা তাকে ভালো সাইকি দেখিয়েছেন। সেরকম কোন সমস্যাই নেই অহমের, ডাক্তার জানিয়েছে মাকে। অহম দিন দিন কেমন অদ্ভুদ আর বিষন্নতায় ডুবে যাচ্ছে। মা চিন্তিত হন ভীষণ রকম।

দিন যেতে যেতে এক সময় অহমের মা টের পান ছেলে তার শান্ত সুবোধ বালক। হৈহুল্লোড় আর আড্ডা ছেড়ে অহম কেমন চুপচাপ বসে থাকে পড়ার রাজ্যে। ডুবে থাকে দিনমান এবং রাত্তিরের সবটুকু সময়। মা শান্তনা দেন অহমকে। অহম মাকে আশ্বাস দেয়, বলে আমি ঠিক আছি মা। তুমি আমাকে নিয়ে একদম কোন চিন্তাই করো না, আমি পুরোপুরি ভালো আছি। সুস্থ্য আছি।

সেই যে বন্ধুটি চলে গিয়েছিলো অহমের জীবন থেকে, তারপর থেকে অহম কেবলই খুঁজতে থাকে তাকে। কঁচি মনে বারবার সেই বন্ধুটিকে চেয়েছে সে, বুঝতে পারেনি। তাই সে এরকম অদ্ভুদ আচরণ করেছে সবার সাথে। অথচ অহম নিজে ভিতরে ভিতরে কি শান্ত সুবোধ বালক। বন্ধুদের আড্ডার মধ্যমণি অহম নিজেকে সরিয়ে ফেলে সেসব থেকে। গুটাতে থাকে আপন আধারে। সেই থেকে অহমের পথ চলা কেবলই বিষণ্ন যুবকের সনে। একাকী নির্জনে। কোন এক সুদূরের পানে। পরিপূর্ণ যুবক অহম এখনো ভাবে আনমনে সেইসব দিনের কথা, স্মৃতি। তার বন্ধু তাকে দেখতে আসবে...অথবা সেও তো চলে যেতে পারতো তার বন্ধুর সাথে। সে কেবলই ভাবে কেন সে অসুস্থ্য হলো, কেন সে যেতে পারেনি তার বন্ধুর সঙ্গে। অথবা নিয়তিই কি তাকে বাঁচিয়েছিলো দূর থেকে। কিন্তু সে তো চায়নি তার বন্ধুর এরকম হারিয়ে যাওয়া। আর ফিরে আসবে না তার বন্ধু এরকম তো সে কখনো চায়নি। সে কল্পনাও করেনি তার বন্ধু আর ফিরে আসবে না। সে অপেক্ষায় ছিল, তার বন্ধুর ফিরে আসার। ফিরে এলে গল্প শুনবে সুন্দরবনের। ছবি দেখবে। দেখে মুগ্ধতায় হারাবে অহম। নিজেকে খুব গর্বিত ভাবে অহম, সে এবং তার বন্ধু সুন্দরবন দেখতে পেরেছে এই জন্য। বন্ধুদের মাঝে বলবে তারও কথা ছিলো যাওয়ার কিন্তু যেতে পারেনি অসুস্থতার জন্য। সে ছবি দেখে চিনে রাখবে সবগুলো স্পট যাতে আরেকবার গেলে সে সহজেই চিনে ফেলতে পারে।

অহম কান্নার মত গুমরে গুমরে উঠে মাঝরাতে। তার চেতনে অবচেতনে হেঁটে বেড়ানো বালক। তার জগৎ কেবলই গোলক ধাঁধাঁয় ঘুর পাক খায়। বিষণ্নতা বিছানো পথে সে কেবলই হারায় নিজেকে। আর প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করে অদ্ভুদ আঁধারে একাকী হেঁটে যায় বিষণ্ন যুবক। আর তাকে সঙ্গ দিচ্ছে অদ্ভুদ মেঘেরা, মেঘলা আকাশের চাঁদ আর শৈশবের দাদী কিংবা নানীর মুখে শুনা মিথ...যা তার পুরোপুরি মনে পড়ে না।

এখান থেকে

No comments:

Post a Comment

নির্বাচিত বিষয়গুলো দেখুন

Labels

মাসের পঠিত শীর্ষ দশ

 

জোনাকী | অনলাইন লাইব্রেরী © ২০১১ || টেমপ্লেট তৈরি করেছেন জোনাকী টিম || ডিজাইন ও অনলাইন সম্পাদক জহির রহমান || জোনাকী সম্পর্কে পড়ুন || জোনাকীতে বেড়াতে আসার জন্য ধন্যবাদ