‘সখিনা, চা নিয়ে আয়’
‘আনতাছি আফা’
‘শোন্, আজ আমার ফিরতে রাত হবে। সবকিছু দেখে শুনে, ঠিকমত রাখবি। আর সময়মত মেডিকেলে খাবার পাঠাস’
ফেন্সি চৌধুরী ওরফে ফরিদা চৌধুরী সমাজের সুশীল শ্রেণীর একজন নারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ মাস্টার্স করে এখন একটি প্রাইভেট ফার্ম এ আছেন। সেই সাথে জড়িত আছেন নানা সংস্হার সাথে।
স্বামী আশরাফ চৌধুরী ব্যবসায়ী, সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। অনেকদিন ধরে হার্ট এর রোগে ভুগছেন। ফেন্সি চৌধুরী সংস্হার কাজে এত ব্যস্ত থাকেন যে স্বামীর খোঁজ নেবারই সময় পান না। এইতো দু’দিন হল তার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত তিনি একবারও দেখতে যাওয়ার সময় পান নি। অবশ্য প্রতিদিন ফোন করে তার অবস্হা সম্পর্কে অবগত হন।
আজ তার খুব জরুরী একটা মিটিং আছে। সামনে ১৬ই ডিসেম্বর, তাই তার ব্যস্ততাও একটু বেশী। যেহেতু তিনি একটি সংস্হার প্রধান সেহেতু তার উপর অনেক দায়িত্ব। ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে তার সংস্হা কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যেমন-মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সভা করা, শোক সভা করা, শহরে র্যাুলী বের করা ইত্যাদি।
১৫ই ডিসেম্বর................সখিনার বাবা আজগর আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। ফেন্সি চৌধুরীর তলব পেয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন। ফেন্সি বেগম তার হাতে কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন-‘এটি ভাল করে পড়। কাল সভায় একথাগুলো তোমাকে বলতে হবে।’
১৬ই ডিসেম্বর...............সভায় আজগর সাহেবকে ডাকা হল। নরম চেয়ারে তাকে বসতে দেয়া হল। তারপর সভা শুরু হলে তাকে তার যুদ্ধের দিনগুলো সম্পর্কে বলতে বলা হল।
‘আপনাদের গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা কাদের মাধ্যমে ঢুকেছিল?’
‘আমগো গ্রামের যে মাতব্বর পন্টু শেখ আছিল, হ্যায় পাকিস্তানি সৈন্যগো লইয়া আমগো গ্রামে ঢুইক্যা হগল ঘরে আগুন জ্বালাইয়া দেয়। সব মাইয়া মানুষগুলানরে ধইরা লইয়্যা যায়।’
‘তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন রাজাকার পন্টু মোল্লা পাকিস্তানিদের সাহায্য করেছিল?’
‘পন্টু শেখ মোল্লা না। হ্যায় তো জীবনে মসজিদের ফাস দিয়াও হাডে নাই। হ্যারে মোল্লা কন্ ক্যা? হ্যায় আছিল আমনের মতন কিলিন সেভ। আর আছিল ঘুষখোর।’
এত বছর আপনি তার বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই?
কিভাবে বলব? সে তো অনেক প্রভাবশালী। তার সাথে কি আর আমি পারব? আমার টাকা ও নাই, জোর ও নাই। তাই কিছু বলতেও পারিনাই।
‘বেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কিছু বলুন।’
‘হা...হা...নিজের প্যাডের ভাতই ঠিকমত জুডে না, আমরা কি বিচার চামু? আর, আমাদের বিচার চাইতে হবে কেন? আপনারা আছেন কি করতে?
আমরা চাই তাড়াতাড়ি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বেবস্থা করা হোক।
এতক্ষন আপনারা যা জিগাইছেন তার উত্তর দিছি। এইবার আমার একটা কথার উত্তর দেন।
আপনার ভাই যুদ্বের সময় এই দেশেই ছিলনা। অথচ আপনার ভাই বলে, স্বাধীনতার 30 বছর পরে এসে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিলেন।
অথচ আমি তখন লাইনে দাড়াইনাই বলে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পেলামনা। এখন আমার কাছে 10 হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে।
আপনার ভাই ভাতা পাচ্ছে, তার পোলাপাইন ভাল চাকরী পাচ্ছে। আর আমার মেয়ে আপনার বাসায় চাকরানীর কাজ করছে।
এগুলির বিচার কার কাছে চাব?
সেদিন বিজয় দিবসের লাল সূর্য যখন বিদায় নিচ্ছিল পশ্চিম আকাশে, আজগর আলীর সাথে সখিনাকেও বিদায় নিতে হয়েছিল ফেন্সি চৌধুরীর বাসা থেকে।
এই হচ্ছে সত্যের পরিণাম। বাসায় চাকরানীর কাজ যাও বা ছিল, তাও চলে গেল!
Tuesday, December 14, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment