বড় আপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল!বাড়ি ভর্তি মানুষ-বাড়ি ভর্তি আনন্দ।
আমার মাথায় বাড়ি! ঠিক যেদিন আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচেছ, তার মাত্র তিন দিন আগে বড় আপার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল। এখন কী করি?
প্রচন্ড কান্না পাচেছ আমার। বড় আপার বিয়ের আনন্দ-ফুর্তি করব,না ঘরের দরজা বন্ধ করে শুরু করে দিব পড়াশোনা, নাকি ছাদে বসে হেরেগলায় কান্না শুরু করে দিব,কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। সামনে আমার বার্ষিক পরীক্ষা!এখন কী করি! কোনোটাই করতে ভালো লাগছে না আমার। মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। একদিকে বড় আপার বিয়ের আনন্দ আরেক দিকে পরীক্ষার পড়ার টেনশন। ছোটো-বড়ো সবাই হাসি হাসি মুখে কথা বলছে-কাজ করছে,শিশুরা আনন্দে ছোটাছুটি করছে,আর আমি? টেবিলে একগাদা বই নিয়ে বসে আছি। কিছুই ঢুকছে না মাথায়। বসে ভাবছি আর মাথার চুল টানছি। কী করব আমি?
চট করে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেল! আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
আমি তো হবু দুলাভাইয়ের বরাবর একটা এ্যাপ্লিকেশন লিখতে পারি!
কোনো কথা নেই,একটা লম্বা তা নিয়ে ঝটপট বসে পড়লাম এ্যাপ্লিকেশন লিখতে। একচোটে লিখে ফেললাম এ্যাপ্লিকেশনটা। লিখেই আমার এক ছোটো ভাইকে দিয়ে হাতেহাতে পাঠিয়ে দিলাম। সে গিয়ে হবু দুলাভাইয়ের হাতে এ্যাপ্লিকেশনটা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
হবু দুলাভাই মুচকি হাসি দিয়ে এ্যাপ্লিকেশনটা খুলে পড়তে লাগলেন...
‘মাননীয় হবু দুলাভাই
বিষয়ঃ বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই,আপনি জেনে অনেক খুশি হবেন যে,আমি একটা নামকরা স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে পড়ি। আমি এখন বার্ষিক পরীক্ষার পড়া নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছি। এখন ডান-বাও তাকাবার ফুরসতটুকুও আমার নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়,আমার বার্ষিক পরীক্ষার মাত্র ৩ দিন আগে আপনার সাথে আমার বড় আপার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আর এ জন্য বাড়িতে প্রতিবেশি ও আত্নীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। চলছে বিরাট অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি। বিয়ের আনন্দে মানুষের আনাগোনায় বাড়িটা গমগম করছে। এর সাথে যোগ হয়েছে শিশুদের বোমা-বাজির অত্যাচার। এদের রুখবে কে? যারা রুখবেন,আনন্দে তাদের মুখের হাসিটা কান পর্যন্ত লম্বা। এখন আমার কানে তুলো গুঁজেও রেহাই পাওয়ার জো নেই।
এ পরিস্থিতিতে আমার লেখাপড়ার যে কী অবস্থা আপনি তা অবশ্যই বুঝতে পারছেন। আমি বই নিয়ে একবার এই ঘরে তো আরেকবার ওই ঘরে যাই। কোথাও শান্ততিতে নেই। পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। অথচ এখন আমার দু‘চোখ বন্ধ করে লেখাপড়া করার কথা। আমি এখন না পারছি প্রাণখুলে আনন্দ করতে,না পারছি পড়ায় মন দিতে। দেখুন তো কেমন একটা সংকটের মধ্যে ডুবে আছি আমি!
অথচ বড় আপার বিয়েতে আমারই সবচেয়ে বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার কথা।
জানেন? আগে থেকেই আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম,আপার বিয়েতে আমি হবো ভয়ংকর গেটম্যান। বরযাত্রীদের আটকে দেবো গেটে। আর গেটপাশ? ১০ হাজার টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তীর্থের কাকের মতো দাঁড় করিয়ে রাখব,আমি কারও অনুরোধে ঢেঁকিও গিলব না-গেটপাশও দেব না। এর জন্য যত কথা কাটাকাটি করতে হয় করব-যত ঝগড়া করতে হয় করব। এজন্য অবশ্য আমার প্রিপারেশনও ছিল। এসব আমি বড়দের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিলাম। কীভাবে চোপা করতে হয়, কীভাবে বরযাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় এবং কীভাবে অতিথিদের আটকিয়ে রেখে হাসিমুখে ষোলোআনা দাবি আদায় করতে হয়-এসবই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি।
তারপর দুলাভাইয়ের হাত ধোয়ানি পর্ব। হেভী উপহার-উপঢৌকন না পাওয়া পর্যন্ত হাতে পানি পড়বে না;এমনকি সাবান, পানি আর তোয়ালে পর্যন্ত ষ্পর্শ করতে দেবো না। শুধু কি তাই? আমি দুলাভাইয়ের এমনই সেবা-যত্ন করতাম যে তিনি আনন্দে গর্ব করে বন্ধুদের বলতেন,আহারে!আমার শালিকার সেবার কোনো তুলনাই হয় না,অপূর্ব!
প্রথম সেবাটা করতাম টয়লেটওয়াটার দিয়ে। কখন দুলাভাইয়ের টয়লেট পায় আমি সেই অপোয় ওঁত পেতে বসে থাকতাম। টয়লেট পাওয়ামাত্র আমি বদনা ভরে পানি দিতাম-সে পানিতে গুলিয়ে দিতাম লালমরিচের গুঁড়ো। আহা!তারপর দেখতাম দুলাভাইয়ের বাথডেন্স। কী মজা হতো তখন!অথচ পরীক্ষার আগে বিয়েটা হলে আমার সব পরিকল্পনা,সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকবে না। আপনি কি বুঝতে পারছেন,কত বড় কষ্ট আমার!
আপনিই আমার শেষ ভরসা!
আমি মনে করি আপনি অবশ্যই আমার সমস্যা আর কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবেন।
অতএব,
দয়া করে বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে পরীক্ষার পরের দিন ঠিক করার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি।
আপনার একান্ত অনুগত
হবু ...
সুমাইয়া!’
আনন্দের খবর হলো,হবু দুলাভাই আমার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন!!
আমার মাথায় বাড়ি! ঠিক যেদিন আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচেছ, তার মাত্র তিন দিন আগে বড় আপার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল। এখন কী করি?
প্রচন্ড কান্না পাচেছ আমার। বড় আপার বিয়ের আনন্দ-ফুর্তি করব,না ঘরের দরজা বন্ধ করে শুরু করে দিব পড়াশোনা, নাকি ছাদে বসে হেরেগলায় কান্না শুরু করে দিব,কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। সামনে আমার বার্ষিক পরীক্ষা!এখন কী করি! কোনোটাই করতে ভালো লাগছে না আমার। মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। একদিকে বড় আপার বিয়ের আনন্দ আরেক দিকে পরীক্ষার পড়ার টেনশন। ছোটো-বড়ো সবাই হাসি হাসি মুখে কথা বলছে-কাজ করছে,শিশুরা আনন্দে ছোটাছুটি করছে,আর আমি? টেবিলে একগাদা বই নিয়ে বসে আছি। কিছুই ঢুকছে না মাথায়। বসে ভাবছি আর মাথার চুল টানছি। কী করব আমি?
চট করে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেল! আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
আমি তো হবু দুলাভাইয়ের বরাবর একটা এ্যাপ্লিকেশন লিখতে পারি!
কোনো কথা নেই,একটা লম্বা তা নিয়ে ঝটপট বসে পড়লাম এ্যাপ্লিকেশন লিখতে। একচোটে লিখে ফেললাম এ্যাপ্লিকেশনটা। লিখেই আমার এক ছোটো ভাইকে দিয়ে হাতেহাতে পাঠিয়ে দিলাম। সে গিয়ে হবু দুলাভাইয়ের হাতে এ্যাপ্লিকেশনটা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
হবু দুলাভাই মুচকি হাসি দিয়ে এ্যাপ্লিকেশনটা খুলে পড়তে লাগলেন...
‘মাননীয় হবু দুলাভাই
বিষয়ঃ বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই,আপনি জেনে অনেক খুশি হবেন যে,আমি একটা নামকরা স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে পড়ি। আমি এখন বার্ষিক পরীক্ষার পড়া নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছি। এখন ডান-বাও তাকাবার ফুরসতটুকুও আমার নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়,আমার বার্ষিক পরীক্ষার মাত্র ৩ দিন আগে আপনার সাথে আমার বড় আপার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আর এ জন্য বাড়িতে প্রতিবেশি ও আত্নীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। চলছে বিরাট অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি। বিয়ের আনন্দে মানুষের আনাগোনায় বাড়িটা গমগম করছে। এর সাথে যোগ হয়েছে শিশুদের বোমা-বাজির অত্যাচার। এদের রুখবে কে? যারা রুখবেন,আনন্দে তাদের মুখের হাসিটা কান পর্যন্ত লম্বা। এখন আমার কানে তুলো গুঁজেও রেহাই পাওয়ার জো নেই।
এ পরিস্থিতিতে আমার লেখাপড়ার যে কী অবস্থা আপনি তা অবশ্যই বুঝতে পারছেন। আমি বই নিয়ে একবার এই ঘরে তো আরেকবার ওই ঘরে যাই। কোথাও শান্ততিতে নেই। পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। অথচ এখন আমার দু‘চোখ বন্ধ করে লেখাপড়া করার কথা। আমি এখন না পারছি প্রাণখুলে আনন্দ করতে,না পারছি পড়ায় মন দিতে। দেখুন তো কেমন একটা সংকটের মধ্যে ডুবে আছি আমি!
অথচ বড় আপার বিয়েতে আমারই সবচেয়ে বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার কথা।
জানেন? আগে থেকেই আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম,আপার বিয়েতে আমি হবো ভয়ংকর গেটম্যান। বরযাত্রীদের আটকে দেবো গেটে। আর গেটপাশ? ১০ হাজার টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তীর্থের কাকের মতো দাঁড় করিয়ে রাখব,আমি কারও অনুরোধে ঢেঁকিও গিলব না-গেটপাশও দেব না। এর জন্য যত কথা কাটাকাটি করতে হয় করব-যত ঝগড়া করতে হয় করব। এজন্য অবশ্য আমার প্রিপারেশনও ছিল। এসব আমি বড়দের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিলাম। কীভাবে চোপা করতে হয়, কীভাবে বরযাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় এবং কীভাবে অতিথিদের আটকিয়ে রেখে হাসিমুখে ষোলোআনা দাবি আদায় করতে হয়-এসবই ঠিক করে রেখেছিলাম আমি।
তারপর দুলাভাইয়ের হাত ধোয়ানি পর্ব। হেভী উপহার-উপঢৌকন না পাওয়া পর্যন্ত হাতে পানি পড়বে না;এমনকি সাবান, পানি আর তোয়ালে পর্যন্ত ষ্পর্শ করতে দেবো না। শুধু কি তাই? আমি দুলাভাইয়ের এমনই সেবা-যত্ন করতাম যে তিনি আনন্দে গর্ব করে বন্ধুদের বলতেন,আহারে!আমার শালিকার সেবার কোনো তুলনাই হয় না,অপূর্ব!
প্রথম সেবাটা করতাম টয়লেটওয়াটার দিয়ে। কখন দুলাভাইয়ের টয়লেট পায় আমি সেই অপোয় ওঁত পেতে বসে থাকতাম। টয়লেট পাওয়ামাত্র আমি বদনা ভরে পানি দিতাম-সে পানিতে গুলিয়ে দিতাম লালমরিচের গুঁড়ো। আহা!তারপর দেখতাম দুলাভাইয়ের বাথডেন্স। কী মজা হতো তখন!অথচ পরীক্ষার আগে বিয়েটা হলে আমার সব পরিকল্পনা,সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকবে না। আপনি কি বুঝতে পারছেন,কত বড় কষ্ট আমার!
আপনিই আমার শেষ ভরসা!
আমি মনে করি আপনি অবশ্যই আমার সমস্যা আর কষ্টগুলো অনুভব করতে পারবেন।
অতএব,
দয়া করে বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে পরীক্ষার পরের দিন ঠিক করার জন্য আপনাকে বিনীত অনুরোধ করছি।
আপনার একান্ত অনুগত
হবু ...
সুমাইয়া!’
আনন্দের খবর হলো,হবু দুলাভাই আমার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন!!
No comments:
Post a Comment